প্রথম প্রেম পর্ব ৩

#প্রথম_প্রেম
৩য় পর্ব।

রাজিবের জন্য বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে শাওন। রাজিবে হচ্ছে শাওনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। রাজিব তার পরিবার থেকে শুরু করে তার ভাই-ভাবীর সাথে তার সম্পর্ক সব জিনিসই জানে। আজকে রাজিবের সাথে উর্মির বিষয় নিয়ে আলাপ করবে, এজন্য দুজুনে দেখা করছে। শাওন রাজিব কে কল দিল। রাজিব কল কেটে দিয়েছে।

পার্কের চেয়ারে দশ মিনিট ধরে বসে আছে শাওন, তার এখন খুব বিরক্ত লাগছে।

এরমধ্যেই রাজিব এসে শাওনের পাশে বসলো, হাত এক ঠোঙা বাদাম।

শাওন বললো এতো দেরী?
– আর বলিস না, রাস্তায় জ্যাম…
– তোর অযুহাত বাদ দেয়, হাতে এটা কি?
– বাদাম।
– বাদাম কি মনে করে?
– বৃষ্টির জন্য আনতে আনতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। পার্কে ঢোকার আগেই বাদাম কিনে ফেলি।
– হুম, বুঝলাম। ওর কি অবস্থা?
– অনার্সে ভর্তি হয়েছে ইডেনে।
– ও তো ভালই ছিল ছাত্রী। ইডেনে কেন?
– রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিল। আমি যেতে দেইনি। গার্লস স্কুল আর গার্লস কলেজে পড়েছে। তাই আমাকে পছন্দ করে। এখন কম্বাইন্ডে গেলে আমাকে কি আর মনে রাখবে। আমি ওকে সত্যি করে চাই। তাই হারাতে চাইনা।
– কি যে বলিস!
– আচ্ছা বল, তোর বাচ্চা প্রেমিকার ব্যাপারে কি করবি?
– না। আমি এসবে একদম জড়াতে চাইনা। কারণ ছোট আপুর বিয়ে সামনে, অনেক প্রেশার।
– এই মেয়ে তোকে ছাড়বেনা, দোস্ত।
– আমি কি ওর মাকে ফোন দিব? সত্যি কথা ওকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু, ও অনেক ছোট। তাছাড়া ওর পরিবার আর আমাদের কি মিলে বল?
– না, ওর মাকে বললে উল্টো ঝামেলা হবে। তাছাড়া তোর ভাবী তখন তোকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ পেয়েই যাবে। পারলে মেয়েটাকে বুঝাতে চেষ্টা কর। কারণ তুই ভালো ভেবে, মেয়ের মাকে বলবি, আর পরে হিতে বিপরীত হবে। এই শহরে একা কোথায় থাকবি!
– ভালো লাগছেনা, আমার কিছুই।
– আরে, এসব মেয়েদের মোহ, কেটে যাবে। তুই যাস্ট ওকে কোন ভাবে ম্যানেজ দেয়।
– হুম।
– চল সামনে, চা য়ের দোকানে যাই।

শাওন এখন বাসায় যাওয়ার জন্য হাটছে। তখন ফোন বেজে উঠলো…

হ্যালো।
– আমি উর্মি। আমি কিন্তু এখন লিকুইড খাচ্ছি, আপনি বললে আমি রাতে ভাত খাবো।
-তুমি কি পাগল?
– হ্যা।
– ভাবী কোথায়?
– আম্মুকে ভাবী ডাকবেন না। আম্মু উদয় কে নিয়ে পরীক্ষায় গিয়েছে, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে৷ চলে আসবে। নানু আছে বাসায়। আপনার সাথে আর দুই মিনিট কথা বলতে পারবো। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে আম্মু রিকশা থেকে নামছে।
– উর্মি তুমি কেন এমন অবুঝ?
– আমি পাগল, অবুঝ, সব। এখন উত্তর টা দিন।
– তুমি খাও, কাল বিকেলে কথা বলবো।
– উত্তর কি হ্যা।
– তুমি খাও।
– আমি হ্যা ধরেই নিলাম। আর এখন থেকে আপনি শুধুই আমার।
– রাখছি।
– হুম।

বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, উর্মি এক বাটি নুডলস নিয়ে বৃষ্টি দেখছে। তার মনে হচ্ছে আজ আনন্দ ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের একজন।

তোফায়েল কবির মেয়েকে সাথে নিয়ে খাচ্ছেন, আর বলছেন কি হয়েছে মা তোর? এই অবস্থা হয়ে গেল?
– এখন আর সমস্যা নাই বাবা, এখন ভালো আছি।
– আমার একটা মাত্র মেয়ে, তুই ভালো না থাকলে কি আমাদের ভালো লাগে? রুনা, তুমি ও ওর দিকে খেয়াল রাখবে।
– আমি ভালো আছি বাবা।
– সাবধানে থাকবি মা।

মেয়েকে খুব আদর করেন তোফায়েল কবীর। মেয়ের চিন্তায় এই দুদিন কাজে মন লাগেনি একদম। আজ মেয়ের হাসি হাসি চেহারা দেখে তিনি বেশ শান্তি পাচ্ছেন।

উর্মি রাতের বেলা নানুর ফোন থেকে এস.এম.এস দিবে চিন্তা করলো। নানু গভীর ঘুমে আছেন, খালারা দেশের বাইরে থাকায় নানুর মোবাইলে সবসময় রিচার্জ করা থাকে।

উর্মি লিখছে,

শাওন,
এখন থেকে ভাইয়া ডাকবো না। রাগ করবেন না তো? কাল কি বাসায় আসবেন? না, আমি ছাদে আসবো। আমার খুব লজ্জা লাগছে।
আপনার উর্মি

শাওন এই এস.এম.এস পেয়ে কি উত্তর দিবে! বুঝতে পারছেনা। নিজের ও বেশ থ্রিলিং লাগছে। সেও কি মেয়েটার প্রেমে পরেছে?

উর্মি আমার লিখেছে।

উত্তর দিন প্লিজ, আমি ওয়েট করে আছি। বুঝেন না কেন?

শাওন কি লিখবে বুঝতে পারছেনা,
শুধু লিখলো,
আগুন নিয়ে খেলা করা ঠিক না।

উর্মি এখন বেশ বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। সে ডাইরেক্ট কল দিয়েছে।

শাওন ফোন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে, এই মেয়ে কি সত্যি পাগল?

শাওন ফোন ধরতেই ফিস ফিস করে উর্মি বললো।

আমি আপনাকে পছন্দ করি, আমি আগুন নিয়ে খেলবো। কাল উদয়ের শেষ পরীক্ষা। নানু বিকালে ঘুমালে আমি ছাদে আসবো। আপনিও আসবেন, আর আসতেই হবে। প্লিজ কষ্ট দিয়েব না….

শাওন বললো কোন পাগলামি করবেনা, আমি আসবো। এখন ঘুমাও।
– আমার আজ সারারাত আপনার সাথেই ফিস ফিস করতে ইচ্ছে করছে।
– তুমি এখন ঘুমাও, রাখি।
– একটু রোমান্টিক হবেন প্লিজ। কাল বিকাল ৪ টায়, ছাদে….

রাতেই প্রায় দশটা এস.এম.এস দিল উর্মি। অনেক আবেগ ধরানো সে ম্যাসেজ পড়ে, রাতে একদম ঘুম হয়নি শাওনের। তবে কি সেও উর্মির প্রেমে পরেছে। কি বলবে আজ বিকালে।

রুনা ভাবীকে বললে তিনি অবশ্যই ভুল বুঝবেন, আর ভাবি কি এসে বললে, এই বাসা থেকে বিদায় নিতে হবে। কি যে ঝামেলায় পরেছে সে! আবার মেয়েটাকে যে তার বেশ ভালো লাগছে। কি করবে সে নিজেই যানেনা।

বিকালে সাদা একটা জামা পরে ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে উর্মি। তার কেন জানি আজ খুন লজ্জা লাগছে। এতো দিন কখনো এমন লাগেনি, কালকের এতো এস.এম.এস দেওয়ার পর যেন কেমন ঘোরেই কেটে যাচ্ছে দিন।

শাওন কালো টি শার্টি পরে ছাদে এসেছে। সেও বেশ লজ্জা পাচ্ছে, বুঝা যাচ্ছে।

কাছে এসে বললো কেমন আছ?
– ভালো।

উর্মি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে আরেক হাত ঘষছে, কোন কথা বলছেনা।

কি চুপ করে আছ? কেন?
– আপনার ই তো কথা বলার কথা।
– উর্মি, তুমি অনেক সুন্দর একটা মেয়ে। যেকোনো ছেলে তোমাকে ভালবাসবে। আমিও তোমাকে পছন্দ করি, কিন্তু…
– আজ কোন কিন্তু শুনতে আসিনি।
– রাগ কর কেন? আমি তো না করিনি। আমি তোমার প্রুপোজালে রাজি। কিন্তু আমার কিছু কথা তোমাকে মানতে হবে!
– কি?

তুমি আমার সাথে দেখা করবেনা, আজই আমাদের শেষ দেখা কিছুদিনের জন্য, ফোনে দিনে একবার দুই মিনিট কথা বলবে, নিজের পড়াশোনা ঠিকমতো করবে। দেখা করার জন্যে কোন পাগলামি করবেনা, ঠিক মতো খাবে। কেউ জানে না বুঝে৷ আমাদের মধ্যে কিছু আছে!
– দেখা করবো না কেন?
– আমাদের দেখা করার সময় হয়নি। তুমি এস.এস.সি পাশ কর, কলেজে যাও। আমি তো আছি। তোমার যদি তখনো আমাকে এইভাবে ভালো লাগে, আমরা তখন অনায়াসে দেখা করবো। বয়স কম তো! কলেজে গেলে শাওন কে আর ভালো লাগবেনা।
– আমি ওই টাইপের মেয়ে না।
– তাই যেন হয়, আজ আসি।
– চলে যাবেন?.
– হ্যা।

শাওন দ্রুত পায়ে হেটে ছাদের দরজা সামনে এসে বললো যাচ্ছি।

উর্মির মনে হচ্ছে, শাওন কে বলতে প্লিজ আরেকটু সময় থাকেন, আপনি এক মিনিট সামনে থাকলে আমার যে কি আনন্দ হয়, কেমনে বুঝাই! উর্মির আজ নাচতে ইচ্ছে করছে, এতো আনন্দ তার কোন দিনই লাগেনি। সে শুধু বলছে শাওন হোসাইন শুধুই উর্মির।

শাওন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর ভাবছে এই সম্পর্ক কি সত্যি কোন রুপ নেবে? তবে কালকের পর থেকে মনে হচ্ছে সে সত্যি এই মেয়েকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে। উর্মি কি তাকে সত্যি ভালবাসে? নাকি এটা মোহ? এর পরিনিতি কি ভয়াবহ হবে? আবার এই ভেবে ভালো লাগছে উর্মি নামের এই অপরুপা সুন্দর মেয়েটি তার জীবনের প্রথম প্রেমিকা। এলো মেলো চিন্তা,ভয় লাগছে এর পরেও যেন কেমন ভালা লাগা কাজ করছে
আবার এটা ও ভাবছে ঠিক হচ্ছে তো…..

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
০৫.০৭.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here