প্রথম প্রেম পর্ব ৪

#প্রথম_প্রেম
৪র্থ পর্ব।

শাওন ভর দুপুরে, প্রখর রোদের মধ্যে, কোয়ার্টারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র টিউশনি থেকে এসেছে, কিন্তু উপরে উঠতে ইচ্ছে করছেনা, কারণ আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে উর্মি স্কুল থেকে ফিরবে। তাকে এক নজর দেখতেই এই দাঁড়িয়ে থাকা।

শাওন উর্মি মা কে দেখেই সালাম দিল, কেমন আছেন?
– ভালো আছি।
– কোথাও যাবা?
– না, মাত্র আসলাম।
– এই দেখো উর্মির কান্ড, বাসার নিচে আসলে মনে হয় ভূতে ধরে, দেখো কেমন দৌড়ে উঠে।
– ক্লান্ত বোধহয়।
– দৌড়ে উঠলে কি ক্লান্তি কমবে?

শাওন হাসছে, কিছু বলছেনা। কারণ তার ফোনে ভ্রাইভেট হচ্ছে, উর্মি কল দিচ্ছে। প্রতিদিন তার মা উঠতে উঠতে যে সময় পায় তখনই ফোন দেয় উর্মি। এই এক মিনিটেই তার শান্তি।

রুনা খানম সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন, শাওন ফোন ধরলো।
– হ্যালো মিস্টার কি?
– কি?
– এতো কি গল্প?
– তুমি যে দৌড়ে উঠো, তাই বলছেন।
– বললেনা যে, আপনার জামাইয়ের সাথে কথা বলতে এমন করে আপনার মেয়ে। এই সপ্তাহে দুইটা চিঠি দিবা প্লিজ?
– দেখি।
– তুমি দিবা৷ রাখছি।
– হুম।

গত দুইমাস ধরে এভাবেই দুই/এক মিনিট কথা বলে শাওন। আর সপ্তাহে শেষে এক লম্বা চিঠি। শাওন কখন যে, এই মেয়েকে পাগলের মতো ভালবেসে ফেলেছে জানেনা। ভার্সিটি তে কত মেয়ে দেখেছে, কাউকে উর্মির মতো মনে হয়না! উর্মি সত্যি সেরা।

শাওন প্রায়ই ভাবে, এই পাগল মেয়েটা কি আজীবন এভাবে ভালবাসবে? নাকি এটা তার কিশোরী বেলার মোহ। তবে, শাওন যে তাকে সত্যি ভালবেসে ফেলেছে।

শাওন ঘরে কলিংবেল দিতেই ভাতিজা এসে দরজা খুলে দিল। ভাবী বললেন তুমি কি খাবে? নাকি খেয়ে এসেছো?
– কেন ভাবী?
– আজকাল তো কত ট্রিট হয় পার্টি হয় তাই ভাবলাম। আর দেরী করে এলে তাই বললাম।
– না, খাইনি।
– নিচে কি করছিলে?
– এমনি।
– এমনি রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাক কেন? ভাতিজারে একটু অংক দেখালেই পার।
– জি ভাবি।

শাওনের প্রায়ই মনে হয়, এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে। ভাবী খাওয়ার আগে পরে প্রতিদিন একবার খোটা দেন। বিরক্ত লাগে, কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। টাকা পযসার সমস্যা যেমন আছে, তেমনি সমস্যা উর্মি। এই বাসায় না থাকলে কি রোজ উর্মি কে দেখা যাবে? এখন এই মেয়ে ছাড়া থাকা কল্পনা করা যায়না!

কথা নাই, দেখা নাই। এক মিনিটের কথায় কত শান্তি! এটাই কি ভালবাসা। এই বালিকা মেয়েটার প্রেমে যেন অন্ধ হয়ে আছে।

আজ, শাওন বাড়ী যাবে। তার মাকে দেখতে, কিন্তু এই প্রথম বাড়ী যেতে তার আনন্দ হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে সে তার শরীর নিয়ে বাড়ী যাচ্ছে, মন এই বাসায় পরে আছে, উর্মির জন্য।

উর্মির এই কয়েকদিন স্বপ্নের মতো লাগছে৷ সে শাওনের কথা মতো কখনোই দেখা করতে চায়নি, ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে চায়নি। ঠিকমতো পড়াশোনা করছে, সে শুধু শাওন কে চায়, আর কিছুই না।

আজ শাওন বাড়ী যাচ্ছে, উর্মির মন খুব খারাপ। সে জানালা দিয়ে দেখছে, শাওন পিঠে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, পিছন ফিরে দুইবার দেখেছে। কারণ সে জানে উর্মি তাকে দেখছে। উর্মি দুইচোখ দিয়ে পানি পরছে, এতো খারাপ লাগছে, বুঝানো যাবেনা।

বাড়ীতে গিয়ে সে কোন ভাবেই নেট পাচ্ছেনা, উর্মি কল দিবে নিশ্চয়ই দুপুর বেলা। না পেলে কত টেনশন করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে নেট আসে তখনো তো ফোন দেওয়া যাবেনা। তার বাসায় সমস্যা হবে! কত কিছু মেনে তার সাথে কথা বলতে হয়!

শাওনের ছোট আপু, রিতা ভাইয়ের পাশে বারান্দায় বসে বলছেন,
কি রে শাওন তুই এই ভাবে মন মরা হয়ে আছিস?
– এমনি আপু
– প্রেম পরেছিস নাকি?
– কি যে বলিস?
– বুঝি! তাই বললাম৷ তুই তো আমাকে সব বলিস বল?
– আরে! না।

এদিকে উর্মি বার বার ফোন বন্ধ পেয়ে, অস্থির হয়ে আছে। সে সজিব সাহেবের বাসায় গিয়ে বেল দিল।

শাওনের ভাবী মুন্নি বললেন, আরে উর্মি! আসো, আসো।
– কেমন আছেন আন্টি?
– ভালো আছি। কত দিন পরে, তুমি তো একদম আসো না।
– সময় পাইনা আন্টি।
– তুমি তো টেনে?
– জি।

উর্মি কোন ভাবেই শাওনের কথা বলতে পারছেমা। উর্মি তাদের বসার ঘরে বসেছে, এই রুমের সিংগেল খাটে শাওন থাকে। উর্মির মনে হচ্ছে তার চেয়ে ঘরের পর্দার ভাগ্য ভালো। পর্দা তো শাওন কে প্রতিদিন দেখে।

উর্মির লজ্জা ভেঙে বললো আন্টি, এই খাটে কে থাকে?
– তোমার শাওন আংকেল।
– ওহ, উনি কি ভার্সিটিতে?
– না, বাড়ীতে গিয়েছে, ২/৩ দিনের মধ্যে চলে আসবে।
– আন্টি আজ আসি।
– বসো, খালি মুখে যাবে নাকি?
– না, আন্টি। এমনি আসছি।

উর্মি বাসায় এসে কত কিছু ভাবছে, মুন্নি কি বুঝে গেলেন কি না? তার এতো তাড়াতাড়ি উঠে আসা উচিত হয়নি। আর শাওন ও কি, সে ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।

বাড়ী থেকে আসার পর উর্মির একটাই কথা, সে একবার ছাদে আসবে। শুধুমাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য। তার শাওন কে দেখার জন্য মন অস্থির লাগছে।

শাওন বার বার বললো না, পরে যদি কেউ দেখে ঝামেলা হবে। কিন্তু উর্মি বলছে আলাদা হয়ে উঠলে কেউ দেখলে ও সমস্যা হবেনা। শেষ পর্যন্ত শাওন রাজি হলো। কিন্তু উদয় এখন সিক্সে উঠায়, সে স্কুলের বাসে করে চলে যায়, উর্মি কে নিয়ে শুধু যাওয়া আসা করেন, রুনা খানম। বাকি সময় বাসায় থাকেন।

তাই রুনা খানম ঘুমানোর পর, উর্মি ছাদে গেল, গিয়ে দেখলো শাওন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।

শাওন কাছে এসে বললো, তোমাকে আমি চিঠি দেই, কথা বলি, দূরে থেকে দেখি। তবে কেন আজ দেখতে হবে?
– তুমি অনেক পাথর হ্রদয়ের। বাড়ীতে কি অন্য কেউ আছে? যে কারণে ফোন অফ করে রেখেছিলে।
– হুম ছিল!
– শোনো, এসব বললে আমি ওই মেয়েকে খুন করবো।
– আচ্ছা এখন যাও।
– তুমি এমন কেন?

শাওন দেখলো তার ভাবী ছাদে আসছেন, উর্মি উল্টো দিকে হয়ে কথা বলছে। শাওন সাথে সাথে কথা চেঞ্জ করে বললো হ্যা আমার এক ছোট ভাই ফিজিক্স পড়ায়, তোমাকে দেখানোর জন্য বলবো।

উর্মি কিছু বলার আগেই, মুন্নি কাছে এসে বললেন, ফোন রেখে ছাদে কি করছো? আম্মা ফোন দিচ্ছেন।
– ওহ তাই নাকি।

কেমন আছ উর্মি?
– ভালো আছি আন্টি। আমার ম্যাথে আর ফিজিক্সে সমস্যা হচ্ছে তাই আংকেল কে বলছিলাম।
– ওহ। আচ্ছা কথা বলো, আমি যাই।
– না আন্টি আমিও যাবো।
– চলো।

মুন্নি যে, সন্দেহ করেছেন তা বুঝে গেল শাওন। কারণ এই মহিলা তাকে এক ফোটা ও দেখতে পারেনা। এই উর্মির বোকামির জন্য এমন হলো।

উর্মির ভয়ে হাত পা কাঁপছে, উনি কি তার মাকে বলে দিবেন? তবে কি হবে?

উর্নি স্কুলে যাওয়ার পর রুনা খানম যখন ঘরে ঢুকছেন, তখন মুন্নি দরজা থেকে বের হয়ে বললেন ভাবী কি এখন ব্যস্ত?
– না ভাবী।
– তাহলে আসি একটু?
– জি।

শাওন তখন ঘরেই ছিল, ভাবীর এভাবে যাওয়া দেখে, শাওন সব বুঝে গেল। কারণ ভাবী সহজে কারো বাসায় যেতে চান না, নিশ্চিত বড় ধরনের ঝামেকা হতে চলছে…

উর্মি আজ বাসায় আসার পর কি হবে? ভাইজান শুনলে কি করবেন? চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে শাওনের….

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
০৮/০৭/২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here