প্রথম প্রেম পর্ব ৫

#প্রথম_প্রেম
৫ম পর্ব।

মুন্নি তাদের বসার ঘরে বসলেন, রুনা খানম হাতের বাজার রাম্নাঘরে রেখে, চায়ের পানি চুলায় দিয়ে নিজে আবার বসার ঘরে এলেন।

কেমন আছেন ভাবী?
– অবেলায় আপনাকে এসে ডিস্টার্ব করলাম।
– আপনি তো একদম ই আসেন না, ভালো করেছেন এসেছেন।
– সময় পাইনা ভাবী, আমার দুই ছেলে আবার দেবর আছে। তাদের সব দায়িত্ব আমার! ভাবী, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, তবে একটা কথা বলতাম।
– জি, অবশ্যই বলুন।
– সত্যি কথা কি, উর্মি খুব সুন্দর একটা মেয়ে, তাছাড়া ভিকারুননিসায় পড়ে, ভালো ছাত্রী। তার ভবিষ্যত কত উজ্জ্বল। আসলে…
– ভাবী প্লিজ বলুন।
– আমি তো ওকে স্নেহ করি। আর সে বাচ্চা একটা মেয়ে, কত আর বয়স হবে বড় জোর ষোল! কিন্তু ওতো ভুল পথে হাঁটছে ভাবি?
– আপনার চোখে ভুল কিছু পরলে, আপিনি আমাকে বলুন। আমি বাচ্চাদের প্রশ্রয় কম দেই।
– আমার দেবর শাওনের প্রতি ওর দূর্বলতা আছে। শুধু ওর না, শাওন ও তার প্রতি দূর্বল। উর্মি বাচ্চা মেয়ে, শাওনের কি উচিত হলো ওকে প্রশয় দেওয়া বলুন ভাবী।
– হুম।
– ভাবী, জীবনে অধিক শখ করতে পারলাম না এই পরিবারে বিয়ে হয়ে। আব্বার জামাই দেখে পছন্দ হলো তাই বিয়ে। ঠিক আছে ও একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কিন্তু ওর পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। নিজের শ্বশুড় বাড়ী তবুও বলি, আমার আরেক দেবর ছোট এক চাকরি করে, ননদ দুইজন, বড় জন বাচ্চা নিয়ে বাড়ীতে থাকে, জামাই যশোরে, ছোট চাকরী করে। আপনার ভাই সংসার টানে আমার শ্বাশুড়ি সহ মানুষ পাঁচজন। তাছাড়া শাওনের খরচ আমাদের দিতে হয়। ড্রয়িং রুমে খাট কি ভালো লাগে? তাও রেখেছি শাওন থাকবে এজন্য! আপনার ভাই এসব শুনলে মেরেই ফেলবে, তাই বলিনি। ভাইদের জন্য জীবন দিয়ে দিচ্ছে। ভাবী আপনি উর্মি কে সাবধান করবেন ভাবী।
– জি, ধন্যবাদ ভাবী। আসলে আমার মেয়ে যে, এতো বড় হয়ে গিয়েছে, যে প্রেম-ভালবাসা বুঝে গিয়েছে। আমি এটা ভাবিনি। আপনি বসুন, আমি চা নিয়ে আসছি।
– না, ভাবী চা খাবো না। প্লিজ রাগ করবেন না, নিজের মনে করি তাই বললাম।
– আরে না, আপন ভেবে বলেছেন এজন্য খুশি হয়েছি।
– আজ উঠি।
– না, বসুন প্লিজ। আমি চায়ের পানি দিয়েছি তো চুলায়!
– না, শাওন টিউশনি তে যাবে, ভাত না খেয়ে কি যাবে? সব তো আমারই করতে হয়! আসি ভাবী।
– চা টা খেয়ে গেলে ভালো হতো।
– অন্য আরেক দিন, আজ আসি।

রুনা খানমের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷ নিজের মেয়ে কবে এতো বড় হয়ে গেল তিনি বুঝতেই পারেন নি। আর শাওন এতো নম্র ভদ্র একটা ছেলে, যাকে আংকেল ডাকে, সে কিনা তার সাথে অন্য সম্পর্ক জড়াতে চাচ্চে! তাছাড়া মুন্নি খানম নিশ্চয়ই এসব কোয়ার্টার অন্য দের বলে বেড়াবেন, এটা উনার খুবই প্রিয় কাজ।

বুয়া এসে কলিং বেল দিচ্ছে, রুনা খানম খুলে দিয়ে, নিজের রুমে বসে আছেন। তোফায়েল সাহেব শুনলে কি বলবেন! ভাবতেই ভয় লাগছে। আর উর্মিকে তো মেরে ফেলতেই ইচ্ছে করছে।

উর্মি স্কুল থেকে বেড়িয়েই বললো আম্মু আজ আমার ম্যাথ ক্লাস টেস্টের খাতা দিয়েছে টুয়েন্টি পেয়েছি আউত অফ টুয়েন্টি। আজ তুমি পিজ্জা খাওয়াবা, প্লিজ আম্মু আজ বিকালে আমরা পিজ্জা খেতে যাই।
– দেখা যাবে, বাসায় চল।
– তুমি এমন করে মুখ করে আছ কেন?
– আর শোন, আমি আর তুই একসাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠবো তুই আগে আগে উঠবি না৷ আমার বিরক্ত লাগে।
– তোমার মতো আস্তে আস্তে উঠতে আমারও বিরক্ত লাগে।
– বেশি কথা বলবিনা, রিক্সায় উঠ।

উর্মি এখন বুঝতেছেনা, হঠাৎ মায়ের এই আচরণ কেন? তবে কি মুন্নি আন্টি সব বলে দিয়েছেন। তাই হয়তো হবে, ভয়ে উর্মির চেহারা লাল হয়ে গিয়েছে। কি হবে আজ বাসায় গিয়ে!

যথারীতি বিল্ডিং এর নিচে শাওন দাঁড়িয়ে পেপার পড়ছিল, রুনা খানম কে দেখে সালাম দিল, তিনি উত্তর নিয়ে বললেন ভর দুপুরে দাঁড়িয়ে কেন শাওন? সব কাজ সময় আর পরিবেশ বুঝে করতে হয়, না হয় তো সমস্যা।
– জি।

উর্মি ভয়ে আজ শাওনের দিকে তাকাতেই পারছেনা। সে আজ আস্তে আস্তে মায়ের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, শুধু পিছন দিকে একবার তাকিয়ে ইশারা দিল আজ ফোন দিবেনা।

শাওন একদম শিউর হলো কেন ভাবী আজ গিয়েছিলেন উর্মিদের বাসায়। শাওনের মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দ্রুউ জমছে,৷ সে নিজে বাসার দিকে না গিয়ে কোয়ার্টারের উলটা দিকের চায়ের দোকানের দিকে যেতে লাগলো, চিন্তায় অস্থির লাগছে।

দরজা বন্ধ করেই রুনা খানম বললেন তুই এখানে বস, উদয় আসার আগেই তোর সাথে আমি কথা বলবো!
– মা ক্লান্ত লাগছে, মুখ হাত ধুয়ে নেই।

রুনা খানম রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সোজা মেয়ের গালে চড় বসিয়ে দিলেন। আর বললেন ছাদে গিয়ে প্রেম করা হচ্ছে! তোকে কতদিন বলেছি ছাদে যাবি না, এই ছাদে কেউ যায়না, কেন ছাদে গিয়েছিস?
– মা, আমি এমনি গিয়েছি।
– শাওনের সাথে তোর কি? এই বেয়াদব মেয়ে তুই না শাওন কে আংকেল ডাকিস।
– আমার কিছু নেই মা।
– আবার মিথ্যা বলছিস, আমি তোর ড্রয়ারে এই ছেলের চিঠি পেয়েছি, আবার উত্তর দেয় কথার! এই তোদের দুই জনের জন্য বাপের বাড়ী যাওয়া, আত্নীয় স্বজন, অনুষ্ঠান সব বাদ দিয়েছি। শুধু তোদের জন্য সারাদিন দৌড়াই। আর তুই প্রেম করছিস চাল চুলাহীন এক ভবঘুরে ছেলের সাথে। এই তোর বয়স কত? হ্যা?

উর্মি ভয়ে কিছু বলছেনা, উর্মি সব চিঠি তালা দিয়ে রাখে, চাবি তার সাথেই থাকে, ওহ গত সপ্তাহের চিঠি তালা দেওয়া হয়নি! এতো বড় ভুল কেন হলো!

উর্মি তুই আমার একমাত্র মেয়ে৷ তুই কোন পরিবারের মেয়ে তুই জানিস তো? তোর দুই চাচ্চু ডাক্তার, তোর বাবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তোর ফুপি পি.এইচ.ডি করছে। তোদের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিজে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আর তুই কিনা প্রেম করে বেড়াচ্ছিস তের খালামনি মাস্টার্স পাশ করে চাকরি করছে এখনো বিয়ে করেনি আর তুই! আমি শাওন সমন্ধে কিচ্ছু বলবোনা, তার পরিবারের অবস্থা তো কি! তুই জানিস না। আমি এতো পছন্দ করতাম ছেলে টাকে৷ আর সে কিনা! আমার পিচ্চি মেয়ের সাথে! ছিঃ
আজ তোর আব্বু আসুক আমি সব বলবো , দেখি সে মেয়ের কি ব্যবস্থা নেয়। আর ফোনের আশ পাশে যদি তোকে দেখি, একদম শেষ করে দিব।

যা, তুই এখন। আমার চোখের সামনে থেকে। না হয় আমি তোকে মেরেই ফেলবো।

রুনা খানম সারাদিন ভেবেছেন তিনি মেয়েকে বকা-ঝকা ইয়ে দিয়ে বুঝাবেন, কিন্তু কেন জানি শেষ মহুর্তে রাগ কন্ট্রোল করতে পারলেন না!

উর্মি তার মা বাথরুমে গোসলে যেতেই ফোন দিল শাওন কে!

শোনো, খুব ঝামেলায় আছি। আম্মু সব জেনে গিয়েছে। আমি তোমাকে ভালবাসি৷ আর আমার প্রান থাকতে আমি অন্য কারো হবোনা। শুধু তুমি কথা দাও, যতই ঝামেলা হোক, তুমি আমার থাকবা? প্রমিস কর।
– প্রমিস করলাম। আর তুমি খাওয়া দাওয়া করবে, এবং পড়াশোনা করবে। পাগলামি কিচ্ছু করবেনা। আমি আছি!
– রাখছি।

রাতের বেলা তোফায়েল সাহেব শুনে বললেন আমার
তো মনে হচ্ছে এখনই ছেলে টাকে ঘাড় ধরে বিদায় দেই। বেয়াদব!
– শোন, দোষ তোমার মেয়ের।
– রুনা, মেয়ের দোষ আছে, তার বয়স কম তাই বলে…
আমার প্রেশার বেড়ে গিয়েছে রুনা। এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। আমি কাল সজিব সাহেবের বাসায় যাবো। সে তার ভাই কে যেন কন্ট্রোলে রাখে, মেয়ের দায়িত্ব আমার…
– তুমি…
– প্লিজ কিচ্ছু আর বলোনা, আমার মাথা কাজ করছেনা, আমার এইটুকু মেয়ে প্রেম করে! সকাল হউক দেখো কি করি!

উর্মি সব শুনছে নিজের রুম থেকে। ইর্মির চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে সজিব আংকেল শাওন কে এমনি দেখতে পারেনা, আন্টি তো তাহলে ঈদ আনন্দ পাবে যদি শাওনের চলে যাওলা লাগে। শাওন এই কোয়ার্টার ছেড়ে চলে যাবে নাকি! চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে উর্মির, কিছুই ভালো লাহছেনা……

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
১১.০৭.২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here