#প্রথম_প্রেম
৯ম পর্ব।
সাড়ে ছয় টা থেকেই, নানু ডাকছেন উর্মিকে, কিন্তু উর্মির ঘুম যেন ভাংছেই না। এখন ঘড়িতে সাতটা বাজে প্রায়, কিন্তু সে এখনো ঘুমাচ্ছে।
নানু বেশ বিরক্ত হয়ে জোড়েই ডাকলেন, কি রে উর্মি? এতো ঘুমিয়ে থাকিস কেন? তোর মা ফোন দিয়ে বলছে, তোর বাবা নিতে আসছে, রেডি হ, স্কুলে যাবিনা?
উর্মি বেশ ভয় পেয়ে উঠেছে, ভেবেছে হয়তো নানু সব বুঝে গিয়েছেন। উর্মি আস্তে করে বললো জি নানু?
– তুই কেমনে এতো ঘুমিয়ে থাকিস?
– কেন নানু?
– কখন থেকে ডাকছি।
– হ্যা, উঠছি, রেডি হ।
– হুম।
উর্মি ওয়াশ রুমে গিয়ে ভাবছে নানু কি বুঝেন নি তবে? নাকি আরও কিছুক্ষণ পরে বুঝবে!
উর্মি তার নানুকে বললো আমি কি তোমার ফোন থেকে আব্বুকে কল করতে পারি?
– কর,
– হুম, নানু, ফোনে ব্যালেন্স নাই বলছে।
– বলিস কি? কাল কে তিনশো টাকা রিচার্জ করেছি।
– কথা বলেছিলে হয়তো!
– হতে পারে। কিন্তু, এতো তাটাতাড়ি। তুই কি কাউকে কল করেছিস!
– আমি আবার কাকে কল দিব?
– আচ্ছা, বাদ দেয়। তুই কি নাশতা খাবি? বুয়া রুটি বানাচ্ছে।
– তোমার বুয়া চলে এসেছে?
– এটা ছুটা বুয়া৷ তুই বুঝবিনা।
উর্মির রাতের কথা গুলি কানে বেশি বাজতেছে, আহারে! কি সময় ছিল গত কাল রাত। সত্যি স্বপনের রাত ছিল।
শাওনের আজ মনে হচ্ছে সত্যি রাত টা দারুন ছিল৷ এতো আনন্দে সময় কেটেছে টের পায়নি দুজন। এই মেয়ের কথায় জাদু আছে, কি যে মায়া ভরা কন্ঠ!
উর্মির বার বার মনে হচ্ছে নানু হয়তো বুঝে গিয়েছেন!
স্কুলে থেকে ফিরে আজ উর্মি পরিবেশ শান্ত দেখে খুশি, আর আরেক কারণেও মহা খুশি! কারণ বান্দবী সাইয়ারার কাছ থেকে আজ দারুন এক বুদ্ধি শিখে এসেছে। সাইয়ারা বলেছে প্রতিদিন বিকাল ৪ টায় সে ফোন দিবে, দিয়ে বলবে, আন্টি উর্মি কে দেন, তারপরেই সে কেটে দিয়ে শাওন কে কল দিতে বলবে। আহা” বেশ হবে। শাওন কে অবশ্য সাইয়ারা সব জানিয়ে দিবে। কিন্তু সাইয়ারা বলেছে কখনো ইপশিতা কখনো নীরা এরকম একেকদিন একেকজন কল দিবে, আর এই সময় মা একটু বিছানায় শুয়ে থাকেন, তাই বসার ঘরে রাখা টেলিফোনে শাওন যখ৷ন কল দিবে, কলের টিউন খুব একটা শুনতে পারবেন না!
উর্মি চারটার অপেক্ষা করছে, কি যে ভালো লাগছে। আহা! এতো দিন পর এমন বুদ্ধি পেয়ে।
সত্যি চারটার সময় টেলিফোনে কল দিয়ে উর্মি কে চাইলো সাইয়ারা।
উর্মি ফোনের কাছে আসতেই রুনা খানম বললেন সাইয়ারা কল দিয়েছে। কথা বল!
উর্মি কল ধরেই বললো কি রে কেমন আছিস! রুনা খানম মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। এবং যথারীতি শাওন ফোন দিল। কিন্তু শাওনের কথা বেশি কথা বললেই রুনা খানম বুঝতে পারবেন। তাই সে দুই মিনিট কথা বলবে।
উর্মি রাজী হয়ে গেল, তবুও ভালো দুই মিনিট কথা হবে।
শাওন তেমন কোন প্রেমের কথা বলতো না, বার বার একই কথা বলতো! পড়াশোনা করবে প্লিজ! তাহলে কেউ যদি জানেও, তবুও আমাদের সম্পর্কের উপর খারাপ কথা বলবেনা! তোমার সাথে যোগাযোগ না হলেও মনে রাখবে আমি আছি, এবং থাকবো…
এভাবেই প্রায় দিন সময় বদলে বদলে একেকজন ফোন দেয়৷ আর কথা বলতে থাকে উর্মি। এদিকে, এস.এস.সি পরীক্ষার আর দুই মাস বাকি, উর্মি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে, কারণ সে শাওন কে খুব খুব ভালবাসে। তাই সে সব কিছুর সাথে পড়াশোনা ঠিক রাখছে।
আজ ও নানু এসেছেন, উর্মি কে নিতে। কারণ তিনি আজ একা, বুয়া আজ ছুটিতে। উর্মির মা বার বার বললেন পরীক্ষা সামনে, কিন্তু নানু বলছেন একটা রাতে কিচ্ছু হবেনা। তিনি নিজেই থাকতেন, কিন্তু এতো বড় বাড়ী দারোয়ানের কাছে ফেলা আসতে চাইছেন না!
উর্মি যথারীতি বাসায় এসে৷ নানু ঘুমানোর পর, নানুর ফোন দিয়ে যখনই কথা বলা শুরু করেছে, তার মিনিট দশ পরে নানু এসে বললেন কি রে তুই মোবাইল নিয়ে এখানে কি করছিস?
উর্মি একদম ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে বললো আরে, আমার বান্দবী কে কাল একটা নোট আনার কথা জানাচ্ছিলাম। এদিকে কথা বলতে বলতে শাওন কে ম্যাসেজ দিল সাইয়ারাকে ম্যাসেজ দিতে যে, সে যেন বলে কেউ ফোন দিলে তার সাথেই কথা বলছিল, উর্মি।
এদিকে দেয় আমার ফোন,
– তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা! উর্মি ফোন কল এস.এম.এস ডিলিট করে দিল, কথা বলে বলেই।
– দেয়, আর এদিকে আয়।
এই উর্মি, আমার তোর মায়ের মা, বুঝিস?
– কি?
– তুই কেন কথা বলছিলি বল? কার সাথে?
– সাইয়ারার সাথে, ইউ ক্যান কল হার।
– আমি ইংরেজি বুঝি! আমি ম্যাট্রিক পাশ। তোর মা-খালাদের চিঠি প্রেম ধরেছি, আর তুই রুবাইয়াত পারভীন কে ঠকিয়ে দিতে চাইছিস! মোবাইলে ব্যালেন্স দেখা,ম্যাসেজ দেওয়া বুঝিনা, প্রেম পিরিতি বুঝি।
– নানু৷ প্লিজ।
– কোন প্লিজ না, আর তোর মায়ের এতো লজ্জা কেন? খালি আমারে বলে, আম্মা উর্মি থাক৷ তুমি আসো। আরে, এটা বলেনা কেন! আমার মেয়ে প্রেম করছে, তুমি সাবধানে রেখো।
– নানু, তুমি সাইয়ারা কে কল দাও।
– লাগবেনা।
– না, তুমি দাও।
– লাগবেনা, তুই যা৷ ঘুমা। আর আমার মোবাইল ধরবি না, যা।
উর্মির এক মিনিটে মাথা আউলা হয়ে গিয়েছে, ইশ কেন যে কথা বলতে গেল আজ। কেন আজ এই মহিলার বাসায় এলো। এই হাসি খুশি মহিলা এতো চালাক, একদম বুঝা যায়না!
শাওন ও এস.এম.এস পেয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে, কি হবে উর্মির? তার মা কি সব জেনে যাবেন? সামনে উর্মির পরীক্ষা! তাছাড়া হয়তো মারামারি করবেন। চিন্তায় শুধু ছাদে ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে শাওন!
উর্মির ও একদম ঘুম আসছেনা, কেন যে নানু আজ এই সময়ে উঠলেন? তিনি কি সব তার মেয়েকে বলে দিবেন? কি হবে তখন! ইশ চিন্তায় মাথা পাহল হয়ে যাচ্ছে…
চলবে…
আন্নামা চৌধুরী।
২৫.০৭.২১