প্রপর্ণ পর্ব ১২+১৩

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(১২)
#কুরআতুল_আয়েন

আনমনে শিউলি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো।ছুটির ঘন্টা দিয়েছে প্রায় মিনিট দশেক হবে।স্কুলে আসার আগে আম্মাকে কথা দিয়ে এসেছে এখন থেকে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরবে।স্কুল ছুটি হওয়ার পর আর দেরি করবে না।এই শর্ত টা মেনেই শিউলি স্কুলে এসেছে।শিউলির ভিতরে জ্বলন থাকলেও কষ্ট করে হলেও আম্মার দেওয়া এই শর্ত টা মেনে নিয়েছে।না হলে তো করিমকে একপলকও দেখার সুযোগ মিলবে না।মিনিট দশেকের মধ্যেই মনে হয় স্কুল টা কেমন ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।শিউলি সামনের মাঠটায় চোখ বুলিয়ে করিমের খোঁজ লাগালো।কিন্তু করিমের দেখা না পেয়ে মন গভীর রাতের মতো অন্ধকার ছেয়ে গেলো।অন্ধকার মন নিয়েই বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো।শিউলির পা’দুটো মনে হয় চলছে না।তাও কষ্ট করে বাড়ির পথের দিকে কদমে কদমে অগ্রসর হচ্ছে।তবে,বিপত্তি বাজলো!স্কুলের মাঝারি সাইজের মাঠ টা পেরিয়ে যাওয়ার আগেই করিমের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।যা শুনে পিছনে ফিরতে বাধ্য হলো শিউলি।একরাশ চমকপ্রদের মতো শিউলি পিছনে ফিরে করিমকে স্কুলের লাস্টের দিকের দেয়ালটায় আবিষ্কার করলো।সেখানের চারপাশটা জঙ্গলে ভর্তি।এমনকি ক্লাস গুলো ভাঙাচোরা হওয়ায় সেদিকটায় ক্লাস করানো হয় না।করিমকে দেখে শিউলির কিশোরী মনটা যেনো আনন্দে নেচে উঠলো।যে মনে আছে করিমের জন্য এক সীমাহীন অনুভূতি।করিম ইশারায় শিউলিকে ডাকছে।করিমের ইশারা পেয়ে শিউলি এক দৌড়েই চলে গেলো তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে।সবুজ আজকে স্কুলে না আসায় শিউলি যেনো আর একটু সাহস পেয়ে গেছে।মনে মনে ভেবে নিলো একটু দেরি হলে আম্মা তাকে কিছু বলবে না!আর যদিও কিছু বলে তাহলে বলে দিবে মেয়েরা তাকে জোর করে খেলায় নিয়েছে।সে অনেক না করেছিলো কিন্তু তারা তার কথা শোনে নি!

শিউলি করিমের কাছে যেতেই করিম শিউলি কে হেঁচকা টান দিয়ে স্কুলের দেয়াল টার সাথে চেপে ধরলো।শিউলি এমন একটা কাজের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।কতক্ষণ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো করিমের দিকে।সাথে বার কয়েক চোখের পলকও ফেললো।বুক তার অসম্ভব রকমের দুরুদুরু করে কাঁপছে।করিম কিছুক্ষণ শিউলির দিকে লালসাযুক্ত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইলো।শিউলির অবস্থা দেখে করিম মুখে একটা কামুক হাসি টেনে শিউলির কোমর টা নিজের শক্ত হাত দুটো দিয়ে চেপে ধরলো।এতে যেনো শিউলির শরীরটা কিছুটা কেঁপে উঠলো।করিম নিজের মুখটা শিউলির গলার ভাজে ডুবিয়ে দিলো।সিগারেট খাওয়া কালচে পোড়া ঠোঁট দুটো শিউলির ফর্সা গলার ভাজ টার চারপাশে খুব অবাধ্য ভাবে বিচরণ করতে লাগলো।শিউলি এমন পুরুষালি স্পর্শ নতুন পেয়েছে।যার ফলে,এমন স্পর্শ টায় তার অনুভূতি গুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।এক ভালোলাগাও কাজ করছে আবার খারাপ লাগাও কাজ করছে।তবে,নিজের থেকে করিমকে ছাড়তেও ইচ্ছা করছে না।করিম যেনো তার ঠোঁটের অবাধ্যতা আর একটু বাড়িয়ে দিলো,সেই সাথে তার শক্ত হাতের বিচরণও শুরু করলো শিউলির ছোট শরীরটায়।শিউলি আর না পেরে চোখ,মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।কোমল,মসৃণ হাত দুটো দিয়ে করিমের রঙবেরঙের লিনেন শার্টের কলার টা চেপে ধরলো।শিউলির জাপটে ধরায় করিমের শরীরের কামনার তেজ যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।করিম তার মুখটা শিউলির গলার ভাজ থেকে সরিয়ে আনলো,শিউলির দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে নিলো।শিউলির কাঁপাকাঁপি ঠোঁট গুলো দেখে নিজেকে ঠিক রাখা করিমের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।হুট করেই নিজের ঠোঁট দুটো শিউলির ঠোঁট ভাজে দিয়ে দিলো।শিউলি ছিঁটকে দূরে সরে যায়।হাত,পা তার জবাই করা মুরগির মতো থরথর করে কাঁপছে।

করিম খুব চটে যায় শিউলির আচরণে।শিউলির ছিটকে সরে যাওয়ায় মাথায় তার রাগ যেনো আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠতে শুরু করলো।চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে।শিউলি একবার সরু চোখে তাকালো করিমের দিকে।করিমের রক্তাক্ত চোখ দেখে ভয় পেয়ে গেলো।কিছুটা মিনমিনে গলায় বললো,

–“আমাকে এখন এই যেতে হবে করিম ভাই।আম্মা আমাকে সন্দেহ করে।আজকে কথা দিয়ে এসেছি এখন থেকে স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজার পর পরেই আমি বাড়ি চলে যাবো।এখন না গেলে আমাকে আর স্কুলে আসতে দিবে না।”

করিম নিজের রাগ টাকে যথাসম্ভব সংবরণ করে নিলো।শিউলির কথার উত্তরে মুখটাকে শক্ত করে বললো,

–“আইচ্ছা যাও।চাচি আবার অনেক চালাক।তোমারে আমি হারাতে চাই না।আর হুনো!এহন কয়েকদিন মন দিয়া পড়বা,চাচির কথামতোন চলবা।খুব ভালাভাবে থাকবা কয়েকদিন।চাচির মন থাইকা সন্দেহ টা দূরে রাহার চেষ্টা করবা।”

শিউলি মাথা দুলিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।স্কুলের মাঠটা সে এক দৌড়েই পার করে ফেলেছে।পিছন ফিরে করিমের পানে তাকানোর সাহস তার নেই।অবশ্য,তার বেপরোয়া মনটা তো একবার চেয়েছিলো করিমকে দেখার জন্য কিন্তু লজ্জার কারণে তাকাতে পারে নি।শিউলি প্রতিদিনকার মতো মাটির রাস্তা টা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।তবে তার ভাবভঙ্গি আজ একটু আলাদা।চোখে,মুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠেছে!সেই সাথে গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে।বারবার মনে হচ্ছে একটু আগের করিমের থেকে পাওয়া স্পর্শ গুলো যেনো সে স্বপ্নে পেয়েছে।পরক্ষণেই হাতে চিমটি কাটে শিউলি।মুচকি মুচকি হেসে বললো!উহুহু,স্বপ্ন নয় তো এইগুলো সত্যিই।শিউলি বিরবির করছে!’তার মানে!এটাই কি ভালোবাসার স্পর্শ।’

করিম স্কুলের উঁচু বারান্দার উপর লাফ দিয়ে উঠে বসলো।রঙবেরঙের লিনেনের শার্টের পকেট টা থেকে কাগজে মোড়ানো তিনটা সিগারেট বের করে নিলো।একটা ঠোঁটে চেপে ধরে দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে নিলো।শিউলির কথাগুলো মাথায় খেলছে তার।পরমুহূর্তেই মুখে পৈশাচিক হাসি টেনে বলতে লাগলো,

‘যা করার আমার খুব তাড়াতাড়িই করতে হইবো।না হলে চাচি আমার পথে বাঁধা হইয়া দাঁড়াইবো।শিউলি এহন আমার হাতে বন্দী।সুযোগ বুইজ্জা একদিন মনের বাসনা পূরণ কইরা ফেলমু।আহারে!চাচির লাইগা কষ্ট লাগতেছে।এক মাইয়ারে আমার থাইকা দূরে সরাইতে গিয়া আরেক মাইয়াই অনেক দূরে চইলা যাইবো।বেচারি শিউলি!মা’য়ের ভুলের শাস্তি পাইবো মাইয়াডা।’
————————–
ঘড়ির তিনবার টং টং টং আওয়াজে বুঝিয়ে দিলো মাঝরাতের নিস্তব্ধতা।রাত তিনটা বাজে বাহিরে তুমুল বৃষ্টি,সেই সাথে বাতাসের ঝাপটা।রুমের জানালার থাইগ্লাস টা খোলা।বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি গুলো ছিটকে গিয়ে বুরাগের রুমের ফ্লোরের মাঝখানটায় বিন্দু বিন্দু কণার মতো পড়ছে।রুমের আশেপাশের অনেক কিছুই বাতাসের তাড়নায় বৃষ্টির পানিগুলো ছুঁয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।এইরকম একটা বৃষ্টিমুখরিত পরিবেশে বুরাগ জানালার গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।তার কোমর অবধি বৃষ্টির পানির ফোঁটায় ফোঁটায় ভর্তি।এতে বুরাগের কোনো হেলদোল নেই।ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।তবে শুধু দাঁড়িয়ে নেই,বেলীর ভাবনায় মত্ত হয়ে আছে।কিছুতেই বেলীকে ছাড়া থাকতে পারছে না।রুমে ঢুকলেই সে কিছু একটার অভাব অনুভব করতে পারে।বুরাগ বুঝে নিয়েছে সে বেলীতে বাঁধা পড়ে গিয়েছে।তার মন শুধু চুপিচুপি বেলীকে চায়।কিন্তু,এখন বেলীর অনুপস্থিতিতে তার একাকীর সঙ্গী হিসেবে আছে সিগারেট।সাইড বক্সের উপর বিদ্যমান সিগারেটের স্ট্যান্ড টাই বলে দিতে পারবে বুরাগের সিগারেট খাওয়ার রেশ।বুরাগ ভাবতে থাকে রায়ানের কথাগুলো।নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করলো,সে কি আসলেই বেলীকে ভালোবাসে।কিন্তু,কোনো উত্তর আসে নি।বুরাগ দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বিছানার উপর থেকে ফোন টা নিয়ে নিলো।কোনো কিছু না ভাবেই রায়ানের নাম্বারে ফোন দিলো।

রায়ান বিছানার মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।হা করে ঘুমানোর ফলে মুখ বেয়ে থুতু গড়িয়ে পড়ছে।এইটা রায়ানের একটা শারীরিক সমস্যা।রায়েনের মাউথ আলসার আছে যার ফলে মুখে থুতু বেড়ে যায়।এই কারণেই ঘুমানোর সময় তার মুখ থেকে লালা বা থুতু পড়ে।বাহিরে বৃষ্টির সাথে সাথে রায়ানের ঘুমটা যেনো আরো জেঁকে বসেছে।কিন্তু,ফোনের ভনভন আওয়াজে রায়ান ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে উঠলো।শরীর টা কিছুক্ষণ মোচড়ামুচড়ি করে আবারও ঘুমাতে শুরু করলো।কিন্তু ফোনের শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ায় রায়ান বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আলতো করে থুতু টা মুছে নিলো।ফোনের আওয়াজ পেয়ে বলতে লাগলো,

‘কোন বালে!আমারে এতো রাতে ফোন দিছে।’

ফোন টা হাতে নিয়ে বুরাগের নামটা দেখে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো।সিরিয়াস হয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে গড়গড় করে বলতে লাগলো,

–“বন্ধু!কোনো সমস্যা?এতো রাতে তুই আমারে ফোন দিলি।”
পুনরায় কিছুটা সন্দেহ গলায় বললো,
–“আচ্ছা এতো রাতে কি করোস তুই।ভাবি তো নাই।এখন তো তোর ভোস-ভোস করে ঘুমানোর কথা।”

বুরাগ রায়ানের কথা শুনে খেঁকিয়ে উঠলো,

–“মুখে লাগাম লাগা শালা!”

–“তুই উল্টা মাইন্ডে ধরোস কেন।আমি কিন্তু পজিটিভলি বলছি।”

–“তোর পজিটিভলি কথাবার্তার অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে নেগেটিভলির কথাবার্তার মান-ইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে।সব লুটে নিবি তুই।”

রায়ান বড়সড় একটা হাই তুলে বললো,

–“আগে ক!এতো রাতে কেনো ফোন দিলি।তোর ঘুম নাই দেইখা কি আর মানুষ ঘুমাবে না।একদম মেইন পয়েন্টে ফোন দিয়ে দিলি শালা।বাহিরে বৃষ্টি আর এদিকে আমি কাঁথা মুড়িয়ে ঘুম আহহা্!কিন্তু,তুই একদম বারোটা বাজাই দিলি।”

বুরাগ জানালা গ্রিল ভেদ করে বাহিরের তুমুল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।এখনো আগের মতোই বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।কমার যেনো নামেই নিচ্ছে না।

রায়ান ফোনের অপাশে বুরাগের কোনো আওয়াজ না পেয়ে বললো,

–“বন্ধু ঘুমাই গেছোস!ভালোই আমারে সজাগ করে দিয়ে নিজে ঘুম।”

বুরাগ গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,

–“ঘুম আসছে না।”

রায়ান হাসতে হাসতে বললো,

–“তোরে এখন আমার কাছে মেয়ে লাগতাছে।মেয়েদের মতো বিষন্নতা নিয়ে বলছিস ঘুম আসছে না।বুঝছি ভাবিরে মিস করতাছোস।”

বুরাগ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বললো,

–“আচ্ছা রায়ান!মানুষের জীবনে কি দ্বিতীয় বার প্রেম হয়?প্রথম ভালোবাসা ভুলে গিয়ে আরেকজন কে ভালোবাসা যায়?”

–“জীবনে শুধু প্রথম প্রেমেই শেষ প্রেম হয় না।মানুষের জীবনে প্রেম শুধু একবার না দ্বিতীয় বারও আসে।প্রেম,ভালোবাসা এক ধরণের অনুভূতি।কিন্তু,প্রথম প্রেমের থেকে দ্বিতীয় বা শেষ প্রেমকে অনেকেই স্বার্থকতার পাতায় তুলে রেখেছে।কারণ,প্রথম প্রেমে যা খুঁজে পাওয়া যায় না তা দ্বিতীয় বা শেষ প্রেমে খুঁজে পাওয়া যায়।দ্বিতীয় বা শেষ প্রেম স্মৃতির লাস্ট পাতায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে।সেখানে প্রথম প্রেমের সূচনা থাকলেও শেষের পাতায় কিন্তু দ্বিতীয় বা শেষ প্রেমেই জায়গা করে নেয়।”

বুরাগ কিছুটা হাসফাস করে বললো,

–“কিন্তু,স্নিগ্ধাকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না।ওর মুখের প্রতিচ্ছবি আমি আমার মন থেকে কিছুতেই মুছতে পারছি না।অন্যদিকে বেলীকে ছাড়া আমার ভিতর টা শূন্যতায় ভরপুর।”

রায়ান মুচকি হাসি টেনে বললো,

–“একটা প্রাণী বা পাখিকে লালিতপালিত করার পর তাকে ভুলা যায় না।মনের ভিতর জায়গা করে নেয়।আর সেখানে স্নিগ্ধা হলো একটা মানুষ।তোর কিশোর,যুবকের সঙ্গী,ভালোবাসা।তাকে তো ভুলা কিছুতেই সম্ভব না।তবে,স্নিগ্ধা তোর মনের বইয়ের সূচনাতে থাকলেও শেষ পাতায় তার কোনো অস্তিত্ব নেই।শেষ পাতা জুড়ে শুধু ভাবি আছে।সূচনা যেমনেই হোক না কেন সমাপ্তি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

বুরাগ রায়ানের কথা সম্পূর্ণ কর্ণপাত করেই ফোনটা কেটে দিলো।বুকে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিটাকে উপভোগ করতে লাগলো আর সেই সাথে তার মনের শেষ পাতার অস্তিত্ব বেলীকে অনুভব করতে লাগলো।

বুরাগের ফোন এইভাবে কেটে দেওয়ায় রায়ান কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।ফোনটা বালিশের নিচে রেখে বিরবির করতে লাগলো,

‘হুট করে মাঝরাতে ফোন দিলো আবার হুট করে কথা শেষ হওয়ার আগে কেটে দিলো।সবই একদম আচমকা আচমকা!’
————————–
ভরদুপুরের কড়া রোদ।সূর্যের তাপ টা বেলীর মাথার মাঝ বরাবর এসে পড়ছে।কলেজ থেকে বাড়ির পথে ফিরছে।সকালে আব্বার সাথে সাইকেলে করে গিয়েছে।একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় আব্বা তাকে নিতে আসে নি।হেঁটে হেঁটেই বাড়ি ফিরছে।গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে যতোটা সম্ভব খুব দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে বেলী।সামনেই একটা ঝোপঝাড় পড়ে।তার কয়েক কদম পার হলেই তাদের বাড়ি।এই ঝোপঝাড় টাকে বেলীর কাছে এক অন্ধকার গুহা মনে হয়।চারপাশের ঝোপঝাড় গুলো রাস্তাটাকে কেমন সরু করে রেখেছে।যার ফলে,আরো ভয়ংকর লাগে বেলীর কাছে।রাস্তাটার সামনে এসে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে নিলো বেলী।চারপাশ জনমানবশূন্য।দুপুরের দিকটা এই জায়গা টা নির্জন নির্জলা হয়ে থাকে।বুকে থুতু দিয়ে বেলী সাহস করে এগিয়ে গেলো।একপ্রকার দৌড়েই হাঁটছে সে।কিন্তু,রাস্তাটা যেনো শেষ হবার নয়।কিছুটা আগাতেই বেলীর ওড়নাতে টান পড়লো।এমন হওয়ায় বেলী ভয়ে জমে গিয়েছে।তার উপর ঝোপঝাড়ের পাশে রাস্তাটায় শুকনো পাতাগুলো মচমচে শব্দ করে উঠছে।পাতার মচমচে শব্দ টাই বলে দিয়েছে এইখানে কারোর উপস্থিতি আছে।বেলী ভয়ে পিছনে ফিরে তাকালো।পিছনে নিজের কলাপাতা রঙের ওড়না টার কোণা করিমের হাতে ধরা রাখা অবস্থায় দেখে বেলীর বুকটা অজানা এক ভয়ে ভর করে উঠলো।বেলীর হাত পা অসাড় হয়ে আসছে।শরীরের শিরা উপশিরায় যেনো রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

করিম শিস বাজাতে বাজাতে বেলীর ওড়না টা হাতে নিয়েই এগিয়ে গেলো।করিম বেলীর দিকে কিছুক্ষণ নিষ্পলক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইলো।করিমের সে পলকে আছে বেলীর জন্য এক আকাশ সমান ভালোবাসা।

বেলীর শুধু ভয় হচ্ছে এই নির্জলা এক পরিবেশে করিম যদি তার সাথে খারাপ কিছু করে ফেলে।যে ছেলে বাড়ির সবার অগোচরে গোসলখানায় মুখ দিতে পারে তার জন্য এই জায়গা টা তো বেশ সুবিধারই একটা জয়গা।বেলী ওড়নাটা টান মেরে নিতে গিয়েও বাঁধা খেলো।করিম যেনো তার হাতের সর্বশক্তি দিয়ে ওড়নাকে চেপে ধরে আছে।বেলী কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

–“আমার ওড়নাটা ছাড়ুন।আমাকে যেতে দিন।অসভ্যতামি করবেন না একদম আমার সাথে।”

করিম ওড়নাটা আরো একটু শক্ত করে ধরে নিলো।বেলীর আর একটু কাছে গিয়ে বললো,

–“অসভ্যতামি করতাছি না তো শুধু তোমারে একটু দেখতে চাইতাছি।”

বেলী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–“এইটা অসভ্যতামি না তাই তো!এমন একটা নির্জন জায়গায় একটা মেয়ের ওড়না ধরে রেখেছেন সেটা আপনার কাছে অসভ্যতামি না?আপনার কাছে সেইটা আম-দুধ হলেও,আমার কাছে এইটা সম্মানের ব্যাপার।আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে একটু বুঝার চেষ্টা করুন।এখন যদি এইভাবে আমাকে আর আপনাকে কেউ দেখে তাহলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।আমার ওড়না টা ছাড়ুন।”

বেলী ওড়না টা টানাটানি করছে।নিজের শরীরের জোর দিয়ে ওড়না টা টানছে।বেলীর এমন টানাটানি দেখে করিম রেগে যায়।রেগে গিয়ে বেলীর হাতটা জোরে চেপে ধরে বললো,

–“তোর শরীর চাইছি আমি?তোরে একটু দেখতে চাইছিলাম।এতেই এতো টানাটানি করতাছোস।আর,যদি এই ঝোপঝাড়ে নিয়ে তোর শরীর নিয়ে খেলতাম তাহলে বা কি করতি।”

বেলী সারা শরীর ঘিনঘিন করছে।করিমের কথা শেষ হতেই বেলী সাহস করে করিমের গালে সটান করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।হাত টা ছাড়িয়ে ওড়না টা টান মেরে নিয়ে নিলো।চোখে তার পানি টলমল করছে।ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,

–“তুই একটা জানোয়ার।এমনকি জানোয়ারের থেকেও খারাপ।”

বেলী ওড়নাটা মুঠো করে ধরে দৌড়ে চলে গেলো।চোখের কার্ণিশে পানি বাঁধা মানছে না।

করিম নিষ্পলক চেয়ে আছে বেলীর যাওয়ার দিকে।মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে মনে মনে ভাবতে লাগলো,

–“তোমার এই থাপ্পড় ডা আমি ভালোবাসার স্পর্শই ভাইবা নিলাম।তবে,তোমার এই থাপ্পড় ডার জন্য শিউলির অবস্থা আরো করুণ হইয়া যাইবো।তোমার আর তোমার আম্মার এক একটা ভুলের জন্য শিউলির অবস্থা আরো করুণের দিকে যাইতাছে।ভাবছিলাম শিউলিরে বাঁচাইয়া রাখমু এখন মন আমার উল্টাই গেছে।শিউলিরে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই দুনিয়া থাইকা পগারপার কইরা দিমু।এতে অত্যন্ত তোমার আর তোমার আম্মার তেজ একটু কমবো।”
#উপন্যাস_প্রপর্ণ(১৩)
#কুরআতুল_আয়েন

–“তোর অফিস দেখানোর জন্য আমারে এইখানে বসাইয়া রাখছোস?”

বুরাগ চেয়ার নিয়ে হেলছে আর দুলছে।রায়ানের দিকে একবার তাকিয়ে নিলো।ফোনে চোখ গুজে রেখেই বুরাগের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মেরেছে।রায়ানের মতিগতি দেখে বুরাগের যেনো পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–“বাহির হ!আমার কেবিন থেকে।শালা!ফোন টার দিকে চোখ দিয়ে রাখছোস।আমার দিকে একটু দেখ,আমি কি একটা অবস্থার মধ্যে আছি।”

রায়ান এবার একটু নড়েচড়ে বসলো।ফোন টা পকেটে গুজে রেখে দিলো।চেয়ার টায় হেলান দিয়ে পেটের কাছে হাত দুটো ভাজ করে রেখে দিয়েছে।কিছুটা আমোদিত গলায় বললো,

–“সেই এক ঘন্টা ধরে তোরে দেখতেছি।কই তুই তো ঠিকই আছোস।কোনো পরিবর্তন হলে না বুঝতাম তোর অবস্থা টা।যেমন ধর এই এক ঘন্টার মধ্যে যদি তুই ছেলে থেকে মেয়ে হইতি তাহলে তোর অবস্থার ব্যাখ্যা দিতে পারতাম।কিন্তু তুই তো আগের মতোই আছোস।”

বুরাগ সরু চোখে তাকালো রায়ানের দিকে।কিছুটা কর্কশ গলায় বললো,

–“তোরে আমার আশেপাশে সহ্য হচ্ছে না।তুই বিদায় হ!অন্তত আমার সামনে এক সপ্তাহ আসবি না।”

–“এমন করতাছোস কেন?আচ্ছা!এখন সিরিয়াস মুড নিয়েই কথা বলবো।”

বুরাগ কিছু বলে না চুপ করে বসে আছে।এসির বাতাসেও যেনো তার মনের প্রশান্তি মিলছে না।এসির বাতাস টা ঠান্ডা থেকে কেমন একটা গরমে পরিণত হচ্ছে।জোরে শ্বাস নিলে এসির বাতাস টা ঠান্ডা অনুভব হয় আবার ছেড়ে দিলে যেই লাউ সেই কদু।
রায়ান নিজেকে ঠিক করে আরো একটু আয়েসি ভঙ্গিতে বসে পড়লো।একটা হাই তোলে বুরাগের দিকে তাকালো।দুপুরের এই সময়টাতে রায়ানের চোখে ঘুমেরা সবসময় উঁকিঝুঁকি দেয়।পাশে রাখা সোফাটা যদি আর একটু লম্বা হতো তাহলে কখন গিয়ে শুয়ে পড়তো।কিন্তু,এইটা এখন কিছুতেই সম্ভব না।ছোট সোফা তো আর টেনে লম্বা করা যাবে না।বলতে গেলে এখন কল্পনা ছাড়া আর কিছুই করার উপায় নেই।রায়ান বুরাগের দিকে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আবারও বললো,

–“তোর প্রতিদিনের এইসব প্যাঁচাল ক্যাঁচাল আমার ভালো লাগে না বুঝছোস।একবার মাঝরাতে ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙাস,আবার এক ঘন্টার মতো অফিসে বসাইয়া রাখোস।তার থেকে ভালো তুই তোর রাগ টাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ভাবিরে আনতে যা।দেখবি তুইও ভালো থাকবি সাথে আমিও একটু মানসিক ভাবে সুস্থ থাকবো।”

বুরাগ দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বললো,

–“আমিও তাই ভাবছি।বেলীকে নিয়েই আসবো।ওকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।আর বেশিদিন থাকা পসিবল না।তাই ভাবছি আজকে রাতেই রওনা দিবো।”

রায়ানের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।বুরাগের কথার তালে বলতে শুরু করলো,

–“যাক বুঝলি তাহলে তুই ভাবিকে ভালোবাসিস।আহারে!বন্ধু আমার পিরিতের জ্বালায় থাকতে পারতাছে না।”

–“বেলীকে ভালোবাসার অনুভূতি গুলো তোর দ্বারাই বুঝেছি।না হলে এইভাবেই থাকতে হতো।ভালোবাসা আর বাহিরে প্রকাশ হতো না আকাশ ভাঙা ঝুম বৃষ্টির মতো।”

–“ভাবিরে বলবি কবে তোর মনের কথা?”

বুরাগ ফোসফাস করে বললো,

–“তোর ভাবিরে আর একটু কষ্ট দিবো আর সাথে শাস্তিও বরাদ্দ করা আছে।আমাকে এই কয়েকদিনে কম কষ্ট দেয় নি।যেগুলো কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো।তার কাজের প্রাপ্য হিসাব টা তাকে পেতেই হবে।”

বুরাগের কথায় রায়ান দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলো।কিছুটস রস মিশিয়ে বলতে শুরু করলো,

–“বন্ধুর তো দেখি পিরিতের আগুনে জ্বলতাছে।কতোটুকু জ্বলতাছো দেখি তো!দ্বিগুণ নাকি তিনগুণ?”

–“তোরে দেখাবো কেন?যার জন্য জ্বলতাছি তারেই দেখাবো এবং,তারেও পোড়াবো।তবে আমার ভিতরের জ্বলন দ্বিগুন বা তিনগুণ ও না এক লাফে দশগুণে চলে গিয়েছে।”

রায়ান চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বুরাগের কথায় মুচকি মুচকি হাসছে।বুরাগ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।সামনের জানালা টার দিকে এগিয়ে গেলো।সাদা-গোলাপি মিশ্রিত পর্দা টা ঠেলে দু’পাশে এক করে দিয়ে জানালার থাইগ্লাস টা খুলে দিলো।খুলে দিতেই বাহির থেকে আসা ঠান্ডা,শীতল বাতাস টা বুরাগের চোখেমুখে এসে ধাক্কা খেয়ে তা এসি যুক্ত কেবিনটায় গিয়ে পড়ছে।বুরাগ জানালাটার পাশের দেয়ালটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে চেয়ে রইলো।মাঝেমধ্যে দূরের বিল্ডিং যুক্ত আবছা আবছা গাছপালা গুলোর দিকেও তাকালো।বুরাগ প্রকৃতির একটা সুর পাচ্ছে।যা বাতাসের দাপটে নিয়ে আসছে বুরাগের কান অবধি।বুরাগ প্রকৃতির লীলাখেলা উপভোগ করছে সেই সাথে বিরবির করে বলতে লাগলো,’আমি আসছি বেলী রাণী!খুব ভুগিয়েছো
আমাকে।এবার না হয় আমার জন্য তুমিও একটু ভুগবে।’
————————–
বেলী নিজের ঘরের টেবিলের সামনে বিদ্যমান কাঠের চেয়ার টায় বসে আছে।একপ্রকার মনমরা হয়েই আছে।কয়েকদিন পর তার কলেজে পরীক্ষা আছে।কয়েক সপ্তাহের মতো কেটে গিয়েছে।বেলীর পড়ায় কোনো মন বসছে না।ভেবেছিলো,সে চলে আসার পর বুরাগ তার খোঁজ নিবে।পরক্ষণেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,আমার কেনো খোঁজ নিতে যাবেন উনি!উনার মনে তো আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।বেলীর কাছে তার জীবনটা খুবই কঠিন লাগছে।সাথে ভাগ্য টাকেও নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে।বুরাগকে ভালোবেসে একদম ভুল করে ফেলেছে সে!আর কিছু না ভেবেই তপ্ত একটা শ্বাস ফেলে পড়ায় মনোনিবেশ করলো।আর সিদ্ধান্ত নিলো নিজেকে যতোটা সম্ভব ঠিক রাখবে।

জাবেদা দিনদিন অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন।কখনো ছোট মেয়ের আচরণে তো আবার কখনো বড় মেয়ের মতিগতি পর্যবেক্ষণ করে।জাবেদা ইদানীং লক্ষ্য করছেন বেলীকে।বেলীর মনমরা হয়ে বসে থাকাতে যেনো উনি আরো কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন।জাবেদা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,কি হয়েছে তা বেলীর কাছে খোলসা করে জানবেন।উঠোন পেরিয়ে যখন ঘরের দিকে রওনা দিবেন তখনি বাড়ির রাস্তা টার পাশে করিমকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলেন।করিমের সাহস দেখলে জাবেদা ভয় পেয়ে যান।তার উপর বুনির বিয়ের দিনের ঘটনা টার পর থেকেই উনি আরো ভয় পান করিমকে।জাবেদা খুব বিচক্ষণ মানুষ হলেও অপবাদ জিনিস টা উনার কাছে জমের মতো মনে হয়।অপবাদ জিনিস টা ঠিক নিতে পারেন না।তাও যদি এইগুলো উনার ফুটফুটে দুটোর মেয়ের নামে হয়।

করিম কিছুটা হিরো স্টাইলে এসে দাঁড়ালো জাবেদার সামনে।জাবেদাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কতক্ষণ চোখ দিয়ে দেখে নিলো।পরমুহূর্তেই লম্বা একটা সালাম জানালো।জোর গলায় বললো,

–“কেমন আছেন চাচি?বাড়ির সবাই ভালা নি।হুনলাম বেলী আইছে।”

জাবেদা যেটার ভয় পাচ্ছিলেন সেটাই হলো।করিমকে এই সময় উনাদের বাড়িতে দেখেই বুঝে নিয়েছেন বেলীর আসার সংবাদ করিমের কানে গিয়েছে।অবশ্য,এইটা তো আর লুকিয়ে রাখা যায় না।কারোর না কারোর মুখ থেকে তো জানবেই।কিন্তু তাই বলে যে একদম বাড়িতে চলে আসবে তা নিতান্তই ভাবনার বাহিরে ছিলো।জাবেদা শাড়ির আঁচল টা ভালো করে টেনেটুনে নিয়ে ঠিক করে নিলেন।করিমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে জবাবে বললেন,

–“এইখানে কেন এসেছো তুমি।কি মনে করো তুমি নিজেকে?চেয়ারম্যানের ছেলে হয়েছো বলে যা খুশি তাই করবে,এইটা ভেবে থাকলে একদম ভুল ভেবেছো।চলে যাও এইখান থেকে।”

–“যাহ্ শালা!মা আর মাইয়া দুই জনেই আমারে ভুল বুঝে।ওইদিন যখন বেলীর ওড়না ধইরা টান দিলাম তহনও আপনার মাইয়া আমার লগে সাহস দেহাইলো।থাপ্পড় মাপ্পড় মাইরা ওড়না টাইনা লইয়া গেলো।এহন আপনার লগে একটু দেহা করতে আইলাম আর আপনেও এইরাম আচরণ করতাছেন চাচি।”

জাবেদা আঁতকে উঠলেন করিমের কথা শুনে।এমনকি খুব রাগও হলো উনার বেলী এই কথাটা সম্পূর্ণ লুকিয়ে গেছে তাই।উনি গরম চোখে করিমের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন,

–“এখনই বের হ এইখান থেকে।এই বাড়ির আশেপাশে যেনো তোকে আর না দেখি।”

জাবেদা তড়িঘড়ি করে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।জাবেদার যাওয়ার দিকে করিম কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে শিস বাজিয়ে জায়গায় পরিত্যাগ করলো।

জাবেদা ঘরে ঢুকেই বেলীকে জোর গলায় ডাকলেন।বেলী তখন টেবিলে বসে পড়ায় মনোনয়ন করতে ব্যস্ত।আম্মার জোর গলার আওয়াজ পেয়ে বেলী দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।দরজার কাছে যাওয়ার আগেই জাবেদা ঘরে ঢুকে দরজা টা একটু চাপিয়ে রাখলেন।বেলীকে কিছু বলতে না দিয়েই উনি বেলীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন,

–“করিম রাস্তায় তোর ওড়না ধরে কবে আটকিয়ে রেখেছিলো ছিলো রে?”

বেলী শুকনো একটা ঢোক গিললো।এই কথাটা ইচ্ছা করেই আম্মার থেকে এড়িয়ে গিয়েছিলো সে।আম্মাকে মূলত আর তার জন্য চিন্তায় রাখতে চায় না,তাই তো ওই দিনের রাস্তার ঘটনা টা চাপিয়ে গিয়েছে।কিন্তু আজকে আম্মার মুখে এমন একটা প্রশ্ন শুনে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছে।জাবেদা বেলীর উত্তর না পেয়ে আবারও বলতে শুরু করলেন,

–“কি হলো বল?কবে তোর সাথে এমন করেছে করিম।তোকে তো তোর আব্বা দিয়ে আসেন আর নিয়ে আসেন।তাহলে করিম কীভাবে সুযোগ পেলো তোর ওড়না ধরার।”

বেলী অবাক চাহনি নিয়ে তাকালো আম্মার দিকে।আম্মার কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে।আম্মার কথায় রয়েছে সম্পূর্ণ সন্দেহ।নিজের একটা ভুলের জন্য এখন তাকে তার আম্মাও সন্দেহ করছে।ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,

–“আম্মা তুমি আমাকে সন্দেহ করছো!”

জাবেদার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।রাগের মাথায় কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছেন তা ভেবেই উনি এখন নিজেকেই বকাবকি শুরু করে দিয়েছেন।উনি তো বেলীকে কোনোমতেই সন্দেহ করতে পারেন না।বেলীর উপর সম্পূর্ণ ভরসা আছেন উনার।বেলীকে ধরে নিজের বুকে টেনে নিলেন।বেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,

–“আমাকে ভুল বুঝিস না মা!আমি রাগের মাথায় এমন একটা কথা বলে ফেলবো তা একমুহূর্তের জন্যও ভাবিনি।তোকে আমি বিশ্বাস করি বেলী।আমার খুব ভয় হয় তোকে আর শিউলিকে নিয়ে।তোদের কিছু হলে আমি কিছুতেই ঠিক থাকতে পারবো না।”

বেলী আম্মার বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো।আম্মার কথার কর্ণপাত করেই আম্মার উপর থেকে অভিমান সরে গিয়েছে।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

–“যেদিন আব্বা আমাকে বাড়ি নিয়ে আসে নি ওইদিনই করিম আমার সাথে এই আচরণ টা করে।ঝোপঝাড়ের সরু রাস্তাটা দিয়ে আমি আসছিলাম তার কিছুক্ষণ পরেই করিম আমার ওড়না টা টেনে ধরে।ওড়না টা ছাড়াতে নিতেই অনেক আজেবাজে কথা বলে যেগুলো আমার সহ্য হচ্ছিলো না তাই আমি থাপ্পড় মেরে দেই।”

জাবেদা বেলীকে আর একটু আগলে নিলেন।মুখটা তোলে কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন,

–“যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস।ওর সাথে এটাই করা উচিত।তবে,যা হবে সব তুই আমাকে বলবি।যতোদিন তুই এইখানে আছিস ততদিন তুই কিছুতেই শান্তি পাবি না।তার উপর তুই ওকে থাপ্পড় মেরেছিস।তার ভিতরে তো আরো জ্বলতে শুরু করেছে।”

বেলী ভয় পেয়ে যায়।রাগের মাথায় থাপ্পড় মেরেছে ঠিকই কিন্তু এইসব ভাবনা একদমই ভুলে গিয়েছে।এখন তো করিম ওকে ছেড়ে কথা বলবে না।আবার যদি খারাপ কিছু করে ফেলে ওর সাথে।ভাবতেই বেলীর শরীরের ভাজে ঘামের রেখা জন্ম নিতে শুরু করলো।

শিউলি অনেক উশখুশ করছে।ঘরের জানালা দিয়ে করিমকে আম্মার সাথে কথা বলতে দেখেছে।কিন্তু,দূর থেকে তাদের কথোপকথনের আগামাথা কিছুই বুঝে নি।শিউলির খুব ইচ্ছা করছে আম্মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে করিমের সাথে কি কথা হয়েছে।কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠছে না।কয়েকবার ঘর থেকে বের হয় তো আবার ঘরের ভিতর গিয়ে চুপ করে বিছানায় ঠেস দিয়ে বসে থাকে।অস্থির মন এতে কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।তাই সাহস করে এগিয়েই গেলো উঠোনের দিকে।
উঠোনের পাশেই জাবেদা মাঠির চুলোয় ভাত বসিয়েছেন।বাড়ি আনন্দে গমগম করছে।বাড়িতে নতুন কোনো অতিথি আসলে তো গমগম করবেই।রেশমি দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা।কয়েকদিন ধরেই বমি হচ্ছিলো আর সেই সাথে মাথা ঘুরানি।কালকে সকালেই শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন রেহানা আর সুমনা।রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।রেহানা তো আনন্দে আত্নহারা।দাদি হবেন উনি।কাল থেকেই রেশমির খেয়াল রাখা শুরু করে দিয়েছেন।উনাকে দেখলে মনেই হবে না উনি রেশমিকে দেখতে পারতেন না।তামিমও বাবা হওয়ার খবর শুনে আজকেই রওনা দিয়েছে বাড়ি আসার জন্য।সুমনা গিয়েছেন একটু বাপের বাড়ি।সবুজ থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু সুমনা অনেক জোর করে নিয়ে গিয়েছেন।প্রায় অনেকদিন হলো বাপের বাড়ি যাচ্ছেন তাই সবুজকেও নিয়ে গেলেন।তাই সব কাজ জাবেদা একা হাতেই সামলাচ্ছেন।অবশ্য,এতে উনার কোনো সমস্যা নেই।

শিউলি গুটিগুটি পায়ে জাবেদার পাশে গিয়ে বনের আড়ালে থাকা পিঁড়িটা টেনে গিয়ে বসে পড়লো।সামনে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে নিয়ে আমতাআমতা করে বললো,

–“আম্মা একটা কথা বলি তোমাকে?”

জাবেদা চুলোতে লাকড়ি ঠেলে দিলেন।মাথাটা নিচু করে চুলোর আগুনটা দেখে নিলেন।শিউলির দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় চুলোতে মন বসালেন।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

–“বল।অনুমতি নিচ্ছিস কেন।আমি শুনছি।”

–“আম্মা করিম ভাই কেনো এসেছিলো আমাদের বাড়িতে।না মানে হঠাৎ করেই আসলেন তো তাই আর কি।”

জাবেদা এতো কথা বাড়ালেন না।তবুও উনার মনে একটু খটকা লাগছে শিউলির কথা শুনে।তাও বাহিরে প্রকাশ না করে গম্ভীর গলায় বললেন,

–“তা তোর না জানলেও চলবে।ছোট আছিস ছোটর মতোই থাক।এইসব চিন্তা মাথায় না এনে পড়াশোনায় মন দে।”

শিউলি রাগে পিঁড়ি ছেড়ে উঠে পড়লো।ধপাধপ্ পায়ে উঠোন পেরিয়ে চলে গেলো।জাবেদা শিউলির যাওয়ার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন।শিউলির এইভাবে রেগে যাওয়া টায় কিছুতেই কোনো কিছু আঁচ করতে পারছেন না।
————————–
রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়েছে।বেলী নিজের ঘরে বসে বসে পড়ছে।জাবেদাও ঘরের সব কিছু দেখে নিচ্ছেন।দরজা,জানালার ছিটকিনি ঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা তা দেখে নিলেন।এতোক্ষণ বেলীর কাছেই বসে ছিলেন।বেলীর পরীক্ষার সামনের দিনগুলি থেকে শেষ পর্যন্ত জাবেদা বেলীর সাথেই থাকেন।সব কিছু ঠিক রেখে আবারও বেলীর ঘরের দিকে রওনা দিবেন কিন্তু তার আগেই দরজার কড়া আঘাতের জন্য উনি কিছুটা ভয় পেয়ে যান।আচমকা এমন একটা ঠান্ডা পরিবেশে এইভাবে কড়া আঘাত টা যেনো প্রচন্ড ভয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছে।বেলীর ঘর টা কোণার দিকে হওয়াতে বেলীর ঘর পর্যন্ত আওয়াজ টা পৌঁছায়নি।সিমেন্টের দেয়াল টায় টাঙানো পুরোনো ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে সময় টা দেখে নিলেন।এগারোটার উপরে বাজে।গ্রামে এই সময় টা মানে মাঝরাতের কাছাকাছি।দরজায় আবারও কড়া আঘাত হচ্ছে।জাবেদা এবার অনেকটাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যান।কপালে,নাকে মুখে ঘামের যেনো আস্তরণ তৈরি হচ্ছে।শাড়ির আঁচল টা দিয়ে ঘাম গুলো মুছে নিলেন।ঘরের লাইট টা জ্বালিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন।কিছুটা সাহস টেনে বললেন,”কে এতো রাতে”।
দরজার অপাশ থেকে কারোর কন্ঠের আওয়াজ আসে নি তবে দরজার কড়া আঘাত শব্দ টা আবারও আসছে।হয়তোবা দরজার আওয়াজে জাবেদার গলা শুনতে পায় নি দরজার অপাশে থাকা ব্যক্তিটি।জাবেদা সাহস জুগিয়ে দরজাটা অর্ধেক খুললেন।দরজার হালকা ফাঁকা দিয়ে দরজার বাহিরে বুরাগকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়ে গেলেন।এতোরাতে বুরাগকে এইখানে একদমই আশা করেন নি।তাড়াতাড়ি করে দরজা খোলে দিলেন।
বুরাগ এতোক্ষণ খুবই বিরক্ত হচ্ছিলো।এক তো দরজা খুলতে দেরি হচ্ছিলো তার উপর মশার কামড়।ভেবেছিলো রাতে রওনা দিবে কিন্তু বেলীকে দেখার জন্য সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে দিয়েছে।দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে শ্বাশুড়ি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সালাম জানালো বুরাগ।
জাবেদা খুব লজ্জা পাচ্ছেন।উনি বুঝতে পেরেছেন এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় বুরাগকে মশা কামড়িয়েছে।দরজা থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বুরাগকে ভিতরে আসতে বললেন।

টানা কয়েক ঘন্টা বসে থাকতে থাকতে বেলীর কোমর ধরে গিয়েছে।তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘর জুড়ে হাঁটতে লাগলো।হাত গুলো মোচড়ামুচড়ি করে ব্যথা সরানোর চেষ্টা করছে।দরজার ক্যাটক্যাট আওয়াজ পেয়ে বেলী তেমন একটা পাত্তা দিলো না।ভেবে নিয়েছে আম্মা এসেছে।

বুরাগ দরজা ঠেলে রুমে ঢুকেছে।বুরাগ ভেবেছিলো বেলী এখন ঘুমিয়ে আছে।সে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেলীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়বে।এতোদিনের কষ্ট গুলো কমাবে বেলীকে কাছে পেয়ে।কিন্তু টেবিলের উপর বেলীর বই দেখে বুঝে নিয়েছে বেলী এখনো ঘুমায়নি।মুখটা কিছুটা গম্ভীর করে দরজা টা শব্দ করে লাগিয়ে দিলো।

দরজা লাগানোর শব্দে বেলী চট করে পিছনে ফিরে তাকালো।পিছনে ফিরে বুরাগকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।বুরাগকে এখন এই সময় দেখবে তা কখনোই ভাবতে পারে নি বেলী।বুরাগের চোখের দিকে তাকালো।কেমন একটা গম্ভীর চোখ দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিলো বেলী।

বুরাগ চেয়ার টা বেলীর দিকে ফিরিয়ে বসে পড়লো।জুতা,মোজা খুলছে আর বেলীর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে।কালো একটা জামা পড়ে আছে বেলী।ফর্সা শরীর টাতে কালো জামাটা একদম ফুটে উঠেছে।বেলীকে সদ্য এক কালো গোলাপ মনে হচ্ছে বুরাগের কাছে।তার উপর আবার গলায় ওড়না নেই।বিছানার এক কোণায় পড়ে আছে।গোল গলা হওয়ায় বেলীকে যেনো আরো আকর্ষণীয় লাগছে।জুতা,মোজা খোলে ব্যাগ থেকে ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।যাওয়ার আগে রাগ দেখিয়ে নিজের ব্যাগ টা বিছানার উপর ঢিল মেরে রেখে গিয়েছে।

বেলী মুখ ভেঙচি মেরে বিছানার উপর থেকে ব্যাগ টা সরিয়ে আলমারির ভিতর রেখে দিলো।বিছানাটা গুছিয়ে দিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।সামনে বই খোলে রেখেছে কিন্তু মন পড়ে আছে বুরাগের উপর।

বুরাগ কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।বেলী মাথা ঘুরিয়ে পিছনে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে।অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।বাহির থেকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আসছে।বেলী উঠে গিয়ে এলোমেলো পায়ে লাইটের কাছে এগিয়ে গেলেই বুরাগ কঠিন গলায় বললো,

–“অনেক কষ্ট করে এসেছি একটু ঘুম দরকার।লাইট যেনো না জ্বালানো হয়।”

বেলী বিরবির করে বলতে লাগলো,’কে বা আসতে বলেছিলো।’

ঘর অন্ধকার হওয়ায় বেলী আস্তে পায়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে।বুরাগের দেখে একটু দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো।
বুরাগ একপাশ হয়ে শুয়ে আছে আর বেলী অন্যপাশ হয়ে শুয়ে আছে।দুজনেই পিঠ মুখোমুখি করে রেখেছে।বুরাগ রাগে ফেটে যাচ্ছে।একটুও বেলীকে কাছে পাচ্ছে না।খুব উশখুশ করছে বেলীকে জড়িয়ে ধরার জন্য।কিন্তু,কেন জানি পারছে না।অনেকক্ষণ এইভাবে থাকার পর আর না পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো।বেলীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে জড়িয়ে ধরলো।বেলীর গলায় মুখ ডুবিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।

এমন হওয়ায় বেলীর শরীর টা আপনাআপনি শক্ত হয়ে যায়।অনেকদিন পর বুরাগের স্পর্শ পেয়েছে।হুট করেই বুরাগের উপর অভিমান যেনো অনেক বেড়ে গিয়েছে তাই বেলী নিজেকে ছাড়ার জন্য অনেকটা নড়াচড়া করা শুরু করে দিলো।নিজেকে বুরাগের থেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে।কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।বুরাগ বেলীর নড়াচড়া দেখে মুখ টা তোলে কিছুটা ধমক দিয়ে বললো,

–“এইভাবে শুয়ে থাকবে একদম নড়চড় করবে না।যখন আমি আরেকটা বিয়ে করবো তখন তুমি মুক্তি পাবে।নতুন বউ আনার আগ পর্যন্ত ঠিক এইভাবেই আমার সাথে থাকবে।”

বেলী বুরাগের দিকে করুণ চোখে তাকালো।অন্ধকার হলেও আবছা আবছা আলো আসছে খোলা জানালা টা দিয়ে।এই আলোতেই দুজন দুজনের মুখ দেখতে সক্ষম।বুরাগ কিছুক্ষণ বেলীর চাহনিটার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বেলীর গলার ভাজে মুখ গুজে দিলো।

বুরাগের কথা শুনেই বেলীর চোখ দুটো ভরে আসলো।বুরাগের মুখে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা শুনে বেলী নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।গলা ছেড়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু,বুরাগের সামনে কিছুতেই কান্না করতে পারছে না।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা যাকে বলে বৃথা চেষ্টা।

বুরাগ চোখ দুটো বন্ধ করে রাখলেও বেলীর নাক টানার শব্দ টা ঠিকই শুনতে পাচ্ছে।মিটিমিটি হাসছে আর মনে মনে আওড়াচ্ছে,’কাঁদো বউ আমার একটু কাঁদো।আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছো তুমি।এবার তুমি একটু কষ্ট পাও।’

চলবে..
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here