“প্রমত্ততা তুই পর্ব ১৩

#প্রমত্ততা_তুই
#আফসানা_মিমি
||১৩তম পর্ব ||

ঘুমন্ত পরীকে দেখেছো নিশ্চয়ই,
মনের গহীনে এঁকেছো প্রায়শই।
দগ্ধ করেছে হৃদয়ের গভীরে,
তাঁহার চাহনির বিমোহিতে।
কাজল কালো আঁখিযুগলে
হারিয়েছ নিশ্চয়ই প্রায়শয়ে।
তুলনা হয় না তোমার ঐ ভয়ংকর রুপে,
শত ললনার তফাতে।
– আফসানা মিমি

সাদা পালঙ্কের উপর টকটকে মানবি রুপে লাল গোলাপ শায়িত। বর্তমানে জারিফের বধূ সে। জ্বর, ক্লান্তিতে একদম নেতিয়ে পড়েছে। লাল টকটকে মুখখানা দেখে জারিফের এখন একটা নিষিদ্ধ কাজ করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পর মুহূর্তে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে জারিফ ফ্রেস হতে চলে গেল।
মিনিট দশেক পর একদম শাওয়ার নিয়ে বের হয় জারিফ। তখনও আয়না বিভোর ঘুমে। জারিফের মাথায় আয়নার আজকের করা কাজের প্রতিশোধ চেপে গেল। হাতের তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আস্তে করে খাটে আয়নার পাশে বসে যায়। এসি চালু থাকায় পুরো ঘর শীতল হয়ে আছে। জারিফ এবার তাঁর ঠান্ডা হাতখানা আয়নার গালে রেখে স্লাইড করতে থাকে ফলস্বরূপ আয়না ঠান্ডায় কিছুটা কেঁপে ওঠে। ব্যপারটা খুব মজার তাই জারিফ আরেকটু জ্বালাতন করতে উদ্যোগ নিলো ঠিক তখনই আয়নার ফোনের টুংটাং শব্দ হলো। নিষিদ্ধ কাজে সবাই আগ্রহী। অনুমতি ব্যতীত অন্যের ফোন ধরা ঠিক না তা জেনেও জারিফের ইচ্ছে হলো আয়নার ফোনের আওয়াজের উৎস দেখা। যেই ভাবা সেই কাজ। আয়নার ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ অপশন চালু করতেই কয়েকটা মেসেজ চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মেসেজগুলো ছিলো এমন,

‘ খুব বাড় বেড়েছে তোর তাই না! সেদিনকার রাতের কথা ভুলে গেলি এত জলদি? আমি ফিরে এসেছি আবারও। তোর দেহে আমার পক্ষ থেকে দেয়া আঘাত করতে। তখন ছিলি ছোট্ট কিশোরী কিন্তু এখন তো পরিপূর্ণ নারী। যাকে মনের ইচ্ছে মতো আদর করতে পারব। ভাবিস না, আগের মতো লুকোচুরি খেলতে দিবো না। গতবার তো তোকে না পেয়ে তোর বোনকে,,,,, থাক বললাম না।’

পাঁচ থেকে দশটা এমন নোংরা মেসেজ দেখে ঘৃণায় ফোন সামনের দেয়ালে ছুঁড়ে ফেলে দিল। রাগে জারিফের শরীর এখন কাঁপছে। জারিফ মনে মনে ভাবছে, আজকের বিয়ের বিষয়টা আয়নার কোনো প্ল্যান নয়তো! সেদিন আয়নার বড়ো বোন থেকে যতটুকু জেনেছি আয়নার এমন হওয়ার পেছনে এই মানুষটা দায়ী নয়তো! জারিফ আর ভাবতে পারছে না আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে জ্বরে ক্লান্তিতে মুখখানা শুকিয়ে আছে তাই আয়নার দিকে এগিয়ে গেল।
আয়নার পাশে শুয়ে কাঁধ ফিরিয়ে একমনে তাকিয়ে রইলো। এই প্রথম জারিফ আয়নাকে এতো নিকটে দেখছে। আয়নার গুন্ডিরুপের মধ্যেও একটা মায়া লুকিয়ে আছে যা বাহ্যিকভাবে বুঝতে পারবে না কেউ হয়তো কাছের মানুষেরা বুঝে যেমন জারিফ এখন বুঝতে পারছে। হঠাৎ-ই জারিফের মনে পড়লো আজ তাদের বাসর রাত। বিয়েটা যেমন পরিস্থিতিতে হোক না কেন বিয়ে তো বিয়েই। জারিফের মাথায় হঠাৎই দুষ্টু বুদ্ধি ধরা দিলো সে আয়নার আরেকটু কাছে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বলল

– বোম্বাইমরিচ, আজ আমাদের বাসর রাত। এমন একটা রাতে তুমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো! এটা ঠিক না বউ।

জারিফের কথাগুলো আয়না শুনলে হয়তো এখনই রোম্যান্স করা শুরু করতো কিন্তু আফসোস আয়না এখন আরামে ঘুমাচ্ছে যেন কতো বছরের ঘুম আজ ঘুমাচ্ছে। কালকের কথা কালই হবে তাই অতীতের কথা না ভেবে বর্তমান সময় আঁকড়ে ধরতে শিখো। জারিফ আয়নার ঘুমের সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। একটানে আয়নাকে নিজের বক্ষবন্ধনীতে নিয়ে এসে শক্ত করে ধরে রাখল। ঝগড়া করতে করতে কখন যে এই গুন্ডি মেয়েটারপ্রতি দুর্বলতা অনুভব করল তা নিজেও জানে না জারিফ।
মুচকি হেসে আপনমনে বলল।

– আমার লাল টকটকে বোম্বাইমরিচ।

———–

নাইট ক্লাবে একের পর এক বেয়ারের প্যাক গিলে যাচ্ছে জারিন। চুলগুলো এলোমেলো দেখে মনে হচ্ছে রেগে রুডচন্ডি হয়ে আছে। মাথা থেকে ঝর ঝর করে পানি ঝড়ছে। একধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে জারিন।

– আমি তোকে ছাড়বোনা আয়না। আমার কাছ থেকে আমার জারিফকে কেড়ে নিয়েছিস এর প্রতিদান তোকে দিতেই হবে। জারিফ শুধু আমার। একবার, দুইবার, তিনবার, শত শত বার বিয়ে করুক না কেন আমার আমারই থাকবে। আর তার জন্য আমি এমন হাজারো আয়নাকে শেষ করতে পারি।

– সাহায্য লাগবে?

কারো কণ্ঠস্বর শোনায় মাথা তুলে উপরে তাকায় জারিন। কুচকুচে কালো জ্যাকেট পরিহিত সামনের লোকটা। মুখে মাক্স এবং মাথায় টুপি পরা। জারিন মাথাকে এদিক-সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল লোকটিকে।

– আমাকে বলছেন?

লোকটি এবার জারিনের পাশে খালি চেয়ারটায় বসে বলল ।

– হ্যাঁ আপনাকে বলছি। আয়নার শত্রুকে বলছি।

জারিন মুখ শক্ত করে লোকটিকে উত্তর দিল।

আয়নার শত্রু আমি না কিন্তু আয়না আমার শত্রু। ওকে কেঁটে পিসপিস করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেও আমার শান্তি হবে না। এই মেয়েটার জন্য আমার জীবন শেষ। আমার জারিফ আমার থেকে দূরে একে আমি সহজে ছাড়বো না।

– আপনার এই অবস্থা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। আপনি জানেন না নাকি! আয়না হচ্ছে সেই মেয়ে যে তার প্রিয়জনের জন্য নিজের জান দিতেও প্রস্তুত এবং জান নিতেও হাত কাঁপবে না আর আপনি কিনা ইঁদুর হয়ে বিড়াল কে মারার চেষ্টা করছেন? আপনি জানেন আয়না সকল মারে এক্সপার্ট ক্যারাটে থেকে শুরু করে বক্সিং সবকিছুতেই পারদর্শী। আয়নার এলাকার বড় বড় নেতারাও আয়নাকে ভয় পায়। নিজের আত্মরক্ষা নিজেই করতে পারে আর আপনি কিনা সেই মেয়েকে মেরে ফেলতে পারবেন, আপনি!

লোকটির কথা শুনে জারিন ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। আয়না তার ভাবনার চেয়েও আরও বেশি ডেন্জারাস এই কথা ভাবে কাঁপা কাঁপা গলায় লোকটিকে বলল।

– এখন কি উপায় কিভাবে আয়নাকে শেষ করব?

– আয়নাকে শেষ করার প্রয়োজন নেই। ওকে শুধু আমার হাতে দিয়ে দিন।

লোকের কথায় যায় আবার প্রশ্ন করল।

– আপনি কি জানেন! আজ আয়না আর আমার ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে?

– কি?

জারিনের কথায় লোকটি অবাক হয়ে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ রেখে সামনে থাকা কাঁচের টেবিলটায় জোরে আঘাত করে যায়।

– এটা হতে পারে না। আয়না শুধু আমার আর কারো না তার সবকিছুর উপর আমার অধিকার থাকবে দেহ-মন সবকিছু।

– আপনি আয়নার কি হন?

লোকটা এবার রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল।

– সময় হলে জানতে পারবে এখন বলো তুমি আমার সাথে হাত মেলাবে কিনা?

লোকের কথায় যায় একটু ধাতস্ত হল। কেননা জারিন বেশ বুঝত পেরেছে সে আয়নার পাগল। আয়নাকে পেতে হলে যেকোনো বিপদের সম্মুখীন হতে পারবে এবং অনেক কিছু করতে পারবে।

– ঠিক আছে আমি রাজী।

——-

ভোর সকালে কারোর তপ্ত নিঃশ্বাস আয়নার ঘারের কাছে টের পায়। মানুষটি আয়নাকে পেছন থেকে কোলবালিশ বানিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আয়নার এখন ইচ্ছে হচ্ছে ঠাটিয়ে দিতে মানূষটার কানের নীচে। কত বড়ো স্পর্ধা সে আয়নাকে স্পর্শ করে! আয়না ভাবছে সে নিজের কক্ষে অবস্থান করতে আর বাহিরের কেউ এসে তার সাথে খারাপকিছু করতে যাচ্ছে। আয়না পেছনে ফিরে যেই না মানুটিকে আঘাত করতে যাবে ঠিক তখনই আয়না জারিফকে দেখে অবাক হয়ে যায়। পরমুহূর্তে মনে পড়ে সে বিবাহিত এবং বর্তমানে অবস্থান করছে জারিফের কক্ষে। লজ্জায় আয়নার মরি মরি অবস্থা। আয়না জারিফের মুখোমুখি হয়ে শুয়ে আছে ফলে জারিফের ভারী নিঃশ্বাস আয়না অনুভব করতে পারছে। আয়না জারিফের কাছাকাছি এসে প্রথমে নাকের সাথে তার নাক ঘসলো। এতে করে জারিফ কিছুটা নড়েচড়ে আয়নাকে আবারো কোলবালিশ বানিয়ে ফেলল।

জারিফের স্পর্শে আয়না কেঁপে উঠলো। আয়না যতই শক্ত মনের মানুষ হোক না কেন সে তো একজন মেয়ে। কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ চেষ্টা করল কিন্তু জিম করা ঐ শক্তিশালী জারিফের বাঁধন থেকে এক বিন্দু পরিমাণ নড়তে পারেনি। আয়নার নড়াচড়ার জারিফ ঘুমের মধ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করে।

– উফ বোম্বাইমরিচ, ঘুমাতে দাও। সারারাত পুরো বিছানা দখল করে ঘুমিয়েও কি শান্তি হয়নি? আমি এখন ঘুমাবো নড়চড় করলে রোম্যান্স করব।
জারিফের এমন লাগামহীন কথা শুনে আয়না অবাক হয়ে রইলো। আয়না মনে মনে ভাবছে এটা কি আদৌও জারিফ যে কিনা এমন লাগামহীন কথা বলছে? আয়না কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসি দিয়ে জারিফের কানে ফিসফিসিয়ে বলল।

– চলুন রোম্যান্স করি জামাই সাহেব।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here