প্রাণস্পন্দন পর্ব ১+২

ক্ষীণ দৃষ্টিতে সামনে থাকা পুরুষটির দিকে চেয়ে আছে আয়েন্দ্রি।চটপটে দুই চোখে আজ ম্লানতা।উচ্ছলতায় তরতরিয়ে থাকা আয়েন্দ্রি আজ নিভে যাওয়া মোমবাতি।তারা সারা অঙ্গ ভয়,আতঙ্কে বিবশ হয়ে আছে।পরনে তার লাল বেনারশি।চোখে মোটা কাজল হতে চুঁইয়ে পড়ছে লালিমাভরা দুই অক্ষির নোনতা,স্বচ্ছ,শীতল জলের নহর।মাথায় দেওয়া ঘোমটার বাইরের অংশে ঝুলে আছে টিকলি।তার সরু,লম্বা ভ্রু জোড়া মাঝ বরাবর কুঞ্চিত।কপালের ঠিক মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে আছে ফিকে দুটো ভাঁজ।আয়েন্দ্রি কাঁদছে।কিন্তু তাতে শব্দের কোনো যোগান নেই।

দুরে কাউচে বসে আছেন আলফাজ সাহেব।ভদ্রলোক ভয়ে তটস্থ।নিজের মেয়ের এমন বেহাল দশায় মাথা চাপড়িয়ে আর্তনাদ করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।কিন্তু পারছেন না।ঠাঁয় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে গুঙিয়ে যাচ্ছেন।হু,হু করে ভেতর কান্না গলধ্বকরণ করছেন তিনি।তার পাশেই প্রাণহীন হয়ে বসে আছেন ঝুমা বেগম।স্বামীর মতোই অবস্থা তার।কিন্তু তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না।হয়তো কাঁদতে ভুলে গেছেন তিনি আর না হয় চোখের স্রোত শুকিয়ে গেছে।

ঘরের এককোণে কোনঠাসা হয়ে পড়ে আছে আরিশা আর আরাজ।আয়েন্দ্রির দুই সহোদর।প্রকম্পিত তারা।পনেরো বছরের আরিশা তার কলেজ পড়ুয়া ভাইয়ের দুই হাত বুকের সাথে চেপে ধরে বসে আছে।থরথরিয়ে যাচ্ছে তার শরীর।কান্না গিলে নিয়ে শুধু অশ্রুপাত করছে।
নব্য যুবা আরাজের লহু যেনো টগবগিয়ে তাকে ধিক্কার দিচ্ছে।বোনের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতেও ভাই হয়ে এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকায়।আরাজের মস্তিষ্কের নিউরণগুলো ফেঁপে উঠেছে।নব্য তরুনদের রক্তে থাকে দুর্দমনীয় স্পৃহা।কিন্তু আরাজ নিস্পৃহ।তার পক্ষে এমন অবস্থায় কোনো অসাধ্য কাজ করা সম্ভব নয়।

ভয়চকিত চোখে চেয়ে সমস্ত ঘরে অবস্থিত মানুষের গুমোট অবস্থার বিষয়টা খতিয়ে দেখছেন কাজী সাহেব।কিন্তু তার মেকি ভাব ওয়ালা দারুণ মস্তিষ্ক কিছুই ঠাওর করতে পারলো না।মোটা ধূসর রঙের খাতাটা খুলে কলম ধরে বসে আছেন।

আয়েন্দ্রির সামনেই অত্যন্ত শীতল,নমনীয় আর প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে চেয়ে আছে নিষ্প্রাণ।এই যে ভয়ে ব্যতিব্যস্ত মানষগুলো তার ভয়ে জড়িয়ে আছে তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই নিষ্প্রাণের।আসন পেতে নিরবধি চেয়ে আছে আয়েন্দ্রির অশ্রু বিসর্জিত দুই চোখে।নিষ্প্রাণ ফিকে হাসলো।অদ্ভুত মোহনীয় গলায় বললো—

“ধ্রুবতারা,বল না কবুল।কেন বসে আছিস?বল কবুল।”

আয়েন্দ্রি নাক টেনে নিলো।আর কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।নিষ্প্রাণ আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো।দুই হাতের অঞ্জলিতে আয়েন্দ্রি জলে সিক্ত মুখটা নিয়ে কাতর গলায় বললো—-

“কাঁদছিস কেন তুই?কাঁদিস না প্লিজ।প্লিজ,ধ্রুবতারা।”

আয়েন্দ্রি তার অক্ষিপল্লব অশিথিল করে রাখলো।তাকালো না নিষ্প্রাণের ওই সুশ্রী,ঘৃণিত মুখটার দিকে।নিষ্প্রাণ আকুতি ভরা কন্ঠে পুনরায় বললো—

“কী হলো?বল না কবুল।আমি তোর প্রাণ ধ্রুবতারা।আমি ফিরে এসেছি।একদম ভালো হয়ে ফিরে এসেছি।তোকে ভালোবাসতে ফিরে এসেছি।প্লিজ,কবুল বল ধ্রুবতারা।”

আয়েন্দ্রি চুপ করে রইলো।স্ফীত ধারায় নামতে লাগলো অক্ষিযুগলের ফোয়ারা।হুট করেই একটা দীর্ঘ চুমু খেলো আয়েন্দ্রির অধরে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রি জ্বলে উঠলো।সজোরে এক চড় বসিয়ে দিলো নিষ্প্রাণের গালে।নিষ্প্রাণ স্মিত হাসলো।অধর চড়িয়ে মৃদু হাসলো।অধর জোড়া প্রসারিত করে হাসির মাত্রা বাড়াতে থাকলো।বিস্তৃত অধরে ঘর কাঁপিয়ে হাসলো নিষ্প্রাণ।কেঁপে উঠলো কাজী সাহেবের অন্তরাত্মা।ভড়কে গেলো ঝুমা বেগম।আরাজ আর আরিশা স্তব্ধ হয়ে গেলো।

উন্মাদের মতো হাসতে থাকা নিষ্প্রাণ তার হাসি বন্ধ করে ক্রুর কন্ঠে বললো—-

“তুই তোর বাবা মাকে খুব ভালোবাসিস তাই না ধ্রুবতারা?তোর ভাইবোনদেরও?কিন্তু,কিন্তু আমি,আমি শুধু তোকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।দেখ,তাইতো আজ দুই বছর পরও আমি তোর কাছে ফিরে এসেছি।এতটা নিষ্ঠুর হোসনা ধ্রুবতারা।কবুল বল।কবুল বলে তুই আমার হয়ে যা।আমি সত্যিই ভালো হয়ে গেছি রে।তুই আমাকে আবার আগের নিষ্প্রাণ বানাস না।তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না।জানিস তো আমি প্রাণহীন।তাই কারো প্রাণ নিতে আমার বিন্দুমাত্র মায়া হয় না।কিন্তু তুই নিষ্প্রাণের প্রাণ।আমার হয়ে যা ধ্রুবতারা।আমি আমার জীবন পাল্টে নিবো তোর জন্য।একদম ভালো হয়ে যাবো।তোর প্রাণ হয়ে যাবো।”

অক্ষিপুট শিথিল করে তার উঠানামা করছে আয়েন্দ্রি।সামনে থাকা অতীব সুদর্শন কিন্তু ভয়ংকর,অতি নরম কিন্তু প্রকুপিত,মিষ্টভাষী কিন্তু হিংস্র পুরুষটিকে সহ্য হচ্ছে না আয়েন্দ্রির।কিন্তু ভাগ্য যে অসহায়।তার অসহায়ত্বের চরম বিপর্যয় আজ।আয়েন্দ্রি ভেঙে যাওয়া কাঁচের গুড়ো।যাকে নিষ্প্রাণ তার উত্তাপে বিগলিত করে নতুন রূপ দিতে চায়।কিন্তু তাতে নারাজ আয়েন্দ্রি।এই পুরুষটিকে সে ভালোবাসতে পারে না।কস্মিনকালেও না।

নিষ্প্রাণ অধৈর্য হয়ে উঠলো।তার শরীরের সমস্ত শিরা-উপশিরা বেয়ে খটমটিয়ে উঠলো শান্ত রক্তকণিকা।বসার ঘরের সমস্ত জিনিস এলোমেলো করে আরাজ আর আরিশার দিকে এগিয়ে যেতেই নিষ্প্রাণের কর্ণরন্ধ্রে ভেসে আসে সেই সুর।আয়েন্দ্রি তার নিষ্প্রভ গলায় বললো—

“কবুল।”

থমকে যায় নিষ্প্রাণ।চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘ শ্বাস টেনে নেয় বক্ষপিঞ্জিরায়।আবারো সেই চিকন,মনোহারীণি কন্ঠ।

“কবুল।”

নিষ্প্রাণের প্রাণ যেনো ক্রমশ তার ডালপালা মেলে বিচরণ করলো তার পুরো শরীরে।রক্তে রক্তে বয়ে চললো খুশির বার্তা।রুষ্ট,ক্রোধিত নিষ্প্রাণ ক্ষণপলেই শান্ত,সমাহিত হয়ে গেলো।আয়েন্দ্রি তার সুকন্ঠে পুনরায় জপ করে—

“কবুল।”

কাজী সাহেব তার আটকে রাখা নিঃশ্বাস ফেললেন।তড়িঘড়ি খাতাপত্রের কাজ শেষ করে প্রস্থান করলেন।পিছু ফিরে তাকালেন না।যেনো ক্ষুধার্ত বাঘের থাবা থেকে মুক্তি পেলেন তিনি।

নিষ্প্রাণ চঞ্চল পায়ে আয়েন্দ্রির সামনে এসে বসে।আয়েন্দ্রি নির্বিকার চেয়ে আছে।হতজীব সে।নিষ্প্রাণ গালভর্তি হাসলো।কৃতজ্ঞতার সুরে বললো—

“থ্যাংকস ধ্রুবতারা।আজ থেকে শুধু তুই আমার।শুধু আমার।তোর সর্বত্র শুধু আমার অধিকার।এই নিষ্প্রাণের প্রাণ তুই।আমার জীবনের একমাত্র সত্য তুই। আমার আঁধার আকাশের ধ্রুবতারা তুই।এই পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোর পায়ে ভূলুণ্ঠিত করবো আমি।ভালোবাসবো তোকে আমি।আমার নতুন পৃথিবী সাজাবো তোকে নিয়ে।সেখানে শুধু তুই আর আমি থাকবো।আর কেউ না।”
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

একটা আলো ঝলমলে ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে থামে নিষ্প্রাণের ব্ল্যাক মার্সেডিজ।জানালা দিয়ে একবার বাড়িটির দিকে তাকায় নিষ্প্রাণ।তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে ম্লান মুখের অধিকারীণি আয়েন্দ্রিকে দেখে।মিষ্টি হেসে বললো—

“নাম ধ্রুবতারা।এইটা আমাদের বাড়ি।”

আয়েন্দ্রি নামলো না।সেভাবেই পাথরমূর্তির মতো বসে রইলো।গাড়ি থেকে নেমে আসে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রির দিকটায় গিয়ে আলগোছে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে তাকে।আয়েন্দ্রি যেনো নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে।এক যন্ত্রচালিত ডিভাইস সে।বাড়িটার সামনে এনে দাঁড় করায় আয়েন্দ্রিকে নিষ্প্রাণ।নিম্নদিকে পতিত অক্ষিযুগল প্রশ্বস্ত হয় আয়েন্দ্রির।ধীরে ধীরে চিবুক উঁচু করে তাকায় সে।আচম্বিত হয় আয়েন্দ্রি।রাতের আঁধারেও বাড়িটি ঝলমল করছে।এর দোতালায় কাঁচের বেড় দেওয়া খোলা বারান্দার দুই পাশে দুটো করে চারটা গোলক লাইট লাগানো।যত্ন সহকারে তার উপর ছাউনির ব্যবস্থাও আছে যাতে করে বৃষ্টিতে তা ভিজে না যায়।নিচ তলার দরজার বাইরেই করিডোর।তার দুই পাশে ফুলের টব দিয়ে ঘেরাও দেওয়া সেখানে কোনো রেলিং এর ব্যবস্থা করা হয়নি।দোতলা বারান্দার নিচের দিকে ঝুলন্ত লাইট যা বাড়ির সামনের দিকটা আলোকিত রাখে।বাড়িটির উত্তর -দক্ষিনে এক কাঠার মতো জায়গা ফাঁকা।তারপর থেকে বসত বাড়ি।বাড়িটির চারপাশে বাউন্ডারি।আর বাউন্ডারির ভেতরে বাইরে থেকে দেখা সম্ভব নয়।

বিস্ফোরিত নয়নে তা দেখতে থাকে আয়েন্দ্রি।সে যতটুকু জানে নিষ্প্রাণ একটা মেসে থাকতো।কিন্তু এই বাড়ি!
চকিতে বলে উঠে নিষ্প্রাণ–

“কীরে,কী দেখছিস এমন করে?এইটা আমাদের বাড়ি।আজ থেকে আমরা এখানেই থাকবো।”

হট করেই কোলে তুলে নেয় আয়েন্দ্রিকে নিষ্প্রাণ।হকচকিয়ে যায় যে।ভীতসন্ত্রস্ত আয়েন্দ্রি গলা আঁকড়ে ধরে নিষ্প্রাণের।নিষ্প্রাণ স্মিত হাসে।আবেগী গলায় বললো—

“সিঁড়ি বেয়ে উঠতে তোর কষ্ট হবে।”

বাড়ির সামনে যেতেই ওয়াচম্যান দরজা খুলে দেয়।ওয়াচম্যান তারিফ উপরের দিকে তাকালো না।নির্দ্বিধায় নিজের কাজ করলো।আড়চোখে একবার তারিফের দিকে তাকালো আয়েন্দ্রি।ছেলেটা কেমন অদ্ভুত !

সমতল থেকে একটু উঁচুতে বাড়িটি।নিষ্প্রাণ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বিগলিত গলায় বললো–

“ভয় পাস না ধ্রুবতারা।এখন তো আমি তোর স্বামী।এই বাড়িটি একদম আমাদের স্বর্গনীড় হবে।এইখানে হবে তোর আর আমার বাসর।আজ তোকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসবো।আদর করবো তোকে।এই দুই বছর তোর থেকে দুরে থেকে কতটা পিপাসার্ত আমি তুই জানিস না।তোর ভালবাসার সুধায় আজ সে পিপাসা মেটাবো আমি।”

গলায় জড়িয়ে রাখা হাতে খাঁমচি মেরে উঠে আয়েন্দ্রি।গা ঘিনঘিন করে উঠে নিষ্প্রাণের কথায় তার।আলতো হাসে নিষ্প্রাণ।মোলায়েম গলায় বললো—

“মেরে ফেলবি আমাকে?তার আগে তোর ভালোবাসায় তো সিক্ত হতে দে।”

দরজার সামনে এসে থামে নিষ্প্রাণ।মালেশিয়ান কাঠের দরজার উপরিয়াংশে একটা কোটর করা।যা লক করা।নিষ্প্রাণ কোল থেকে নামায় আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রির লাল বেনারসি অগোছালো হয়ে আছে।নিষ্প্রাণ পকেট থেকে একটা ছোট চাবি বের করে সেই লক খুলে।সেখানের একটা সুইচ চাপ দিতেই সেখানে থাকা ইলেকট্রিক ডিভাইস থেকে লেজার বেরিয়ে নিষ্প্রাণের রেটিনা স্কেন করতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজাটা খুলে যায়।বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তা আবলোকন করতে থাকে আয়েন্দ্রি।আয়েন্দ্রিকে ভেতরে নিয়ে আসে নিষ্প্রাণ।

আয়েন্দ্রি যেনো কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।বিশাল ড্রয়িং রুম যেনো দিনের আলোর মতো ঝলমল করছে।একপাশে কাউচ রাখা দুই সেট।অপরপাশে অত্যন্ত নান্দনিক ডিজাইনের ডিভান।দেয়াল জুড়ে বিশ্ব সেরা চিত্রকরদের চিত্রকর্ম।উত্তরের দেয়াল ঘষে বক্রাকৃতির সিঁড়ি।দক্ষিন দিকে ডাইনিং আর কিচেন স্পেস।আয়েন্দ্রি রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকে সব।তৎক্ষণাৎ আলতো করে শাড়ির ফাঁক গলিয়ে আয়েন্দ্রির কোমর জড়িয়ে ধরে নিষ্প্রাণ।নিষ্প্রাণের স্পর্শেই যেনো সম্বিৎ ফিরে পায় আয়েন্দ্রি।ছোটার চেষ্টা করতেই নিষ্প্রাণ বলিষ্ঠ হাতের চাপ প্রয়োগ করে আয়েন্দ্রির উদরে।আয়েন্দ্রি রাগে ফুঁসলে উঠে।দুই হাতের খামচি বসাতে থাকে নিষ্প্রাণের হাতে।তাতে কিঞ্চিৎ বিচলিত নয় নিষ্প্রান।চেপে ধরে নিজের সাতে আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রির পিঠ ঠেকে নিষ্প্রাণের তপ্ত,দৃঢ় বক্ষস্থলে।আয়েন্দ্রির কাঁধে চিবুক রাখে নিষ্প্রাণ।সাবলীল গলায় বললো—

“তুই একটুও বদলাসনি।এখনো সেই রাগ!কিন্তু বিশ্বাস কর,এই দুই বছরে তুই কিন্তু আরো বেশি সুন্দরী হয়েছিস।যাকে বলে পাগল করা সুন্দরী।আমাকে পাগল করেছিস তুই ধ্রুবতারা।
আমি নিজ হাতে আমাদের বাসর ঘর সাজিয়েছি।তোর প্রিয় বেলি ফুল দিয়ে।সারা বিছানায় গোলাপের পাঁপড়ি ছড়িয়েছি।তোর প্রিয় হার্টশেপ বেলুন আর গন্ধরাজ দেয়াল জুড়ে।সেখানে তুই আর আমি থাকবো।আজ তোর উপর শুধু আমার অধিকার থাকবে।তোর প্রেমে মত্ত হবো আমি।”

আয়েন্দ্রি কাঁদলো না। গত দুই বছরে একবারও ভাবেনি এই ধ্বংসাত্মক মানুষটা আবার তার জীবনে ফিরে আসবে।নিষ্প্রাণ বেপরোয়াভাবে ছুঁতে থাকে আয়েন্দ্রিকে।ঘৃণায় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আয়েন্দ্রির সকল অনুভূতি।নিষ্প্রাণ পেছন দিকে হেলিয়ে আবারো কোলে তুলে নেয় আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রি নির্বিকার।যেনো সে কোনো খেলনা যাকে নিয়ে খেলছে নিষ্প্রাণ।

বেডরুমে আসতেই আয়েন্দ্রির বিস্ময় যেনো সাত আসমান ছুঁলো।এমনটাই চেয়েছিলো আয়েন্দ্রি।এমন করেই সাজতে চেয়েছিলো।কিন্তু স্বামী নামের পুরুষটি ছিলো অন্যকেউ।
আয়েন্দ্রিকে বিছানায় বসায় নিষ্প্রাণ।গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে থাকতে আপাদমস্তক আয়েন্দ্রিকে।আয়েন্দ্রি অপ্রস্তুত হয়।শাড়ি টেনে নিজের নিষিদ্ধ জায়গাগুলো ঢাকার চেষ্টা করে।ফিচেল হাসে নিষ্প্রাণ।ঠেস মারা গলায় বললো—

“কী লুকাস আমার কাছ থেকে?এখন তো তোর সবটা আমার।সে অধিকার অর্জন করেছি আমি।”

নিষ্প্রাণ এগিয়ে আসে আয়েন্দ্রির কাছে।তার পদ্মকোমল ওষ্ঠাধর চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করছে নিষ্প্রাণকে।ধুরন্ধর নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির ঠোঁট আঁকড়ে ধরে।এইবার আর আয়েন্দ্রি পূর্বের ন্যায় চড় মারতে পারলো না।কারণ নিষ্প্রাণ আগেই আয়েন্দ্রির দুই হাত চেপে ধরেছে নিজের হাত দিয়ে।মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের রক্ষার্থেও সুবিধা করতে পারলো না আয়েন্দ্রি।গভীর আশ্লেষে আয়েন্দ্রির অধরসুধা শুঁষে নিতে থাকে নিষ্প্রাণ।রাগে অগ্নিশর্মা আয়েন্দ্রি অবিশ্বাস্য কাজ করে বসে।সজোরে এক লাথি মেরে বসে নিষ্প্রাণের বুকে।ঘটনার আকস্মিকতায় দুরে ছিঁটকে পড়ে নিষ্প্রাণ।
ফুঁসে উঠে মুখ খুলে আয়েন্দ্রি—

“জানোয়ার!একদম ছুঁবি না তুই আমাকে।নরপশু,খুনি,পাগল একদম কাছে আসবি না আমার।”

হঠাৎ এমন ধাক্কার বেগ সামলাতে পারেনি নিষ্প্রাণ।এক কাত হয়ে পড়ায় কনুই ঠেসে যায় মেঝেতে।কনুইর নিচে হালকা ঘঁষে সোজা হয়ে বসে নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রির উগ্রমুর্তিতে যেনো ভীষণ মজা পেলো নিষ্প্রাণ।অবশ্য তাকে কথা বলার জন্যই এমন আচরণ নিষ্প্রাণের।মেয়েটার কন্ঠস্বর শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে নিষ্প্রাণ।ফুঁসতে ফুঁসতে আবার বললো আয়েন্দ্রি—

“তুই এলি কী করে এখানে?জানোয়ার!তোকে জেল থেকে ছাড়ালো কে?
কেন তোকে ওরা ফাঁসি দিলো না?খুনি!

পৈচাশিক হাসে নিষ্প্রাণ।মেঝেতে দুই হাতের ভর দিয়ে ঘাড় কাত করে আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো—

“পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই যে নিষ্প্রাণ মুনতাসিরকে তার ধ্রুবতারার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারে।”

ভীত চোখে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে আয়েন্দ্রি।বাতাস কাঁপিয়ে হাসতে থাকে নিষ্প্রাণ।

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here