#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_25
#Writer_TanhaTonu
সিদ্রাত আরশিকে রেডি হতে বলে একটা প্যাকেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।একটু পর বের হয়ে আসতেই আরশির চোখ জোরা সিদ্রাতের দিকে আটকে যায়।মুগ্ধ নয়নে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে আরশি সিদ্রাতকে।সিদ্রাত আরশির সামনে এসে বলে…
—”আরশি তুমি রেডি হওনি কেন?আমরা বেরোবো কখন?”
আরশি এখনো ওর ভাবনায়।ভাবনায় বিভোর হয়েই সিদ্রাতকে জিজ্ঞাস করে…
—”স্যার আপনি এই পাঞ্জাবি কোথায় পেলেন?আমার জামার সাথে কিনেছেন?”
সিদ্রাত মৃদু হাসে আরশির কথায়…
—”এখানে যেহেতু দু/একদিন থাকতে হবে সেজন্যই মলে গিয়েছিলাম।মূলত তোমার জন্য জামা আর আমার জন্য শার্ট আর প্যান্ট কিনতে।তখনি একটা শপে এই মেরুন কালার পাঞ্জাবিটা ঝুলানো ছিলো।পছন্দ হয়ে গেলো তাই নিয়ে আসলাম”
আরশি মুচকি হেসে বলল..
—”মাশা আল্লাহ..আপনাকে ভালো লাগছে পাঞ্জাবিটায়”
বিনিময়ে সিদ্রাতও হালকা হাসল আর বলল…
—”তো তুমি তো রেডিই হলে না?”
আরশি সিদ্রাতের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের পরনের লাল জামাটার দিকে তাকালো।তারপর কি যেনো ভেবে মনে মনে লাজুক হেসে বলল..
—”স্যার এই ড্রেস তো আজকেই এনেছেন..নতুনই।চেইঞ্জ করতে হবে না”
সিদ্রাতও আরশির ভাবনা বুঝতে পেরে মুচকি হাসল।পরে কি যেনো ভেবে ইচ্ছে করে বলল…
—”আচ্ছা এই পাঞ্জাবিটা তো শখ করে কিনলাম।এটা এখন চেইঞ্জ করে কালো শার্টটা পড়ি।কোনো স্পেশাল আয়োজন থাকলে এটা পড়া যাবে পরে”
আরশির মুখটা কালো হয়ে গেলো।বাস্তবিকই সিদ্রাতকে মেরুন পাঞ্জাবি আর হোয়াইট পাজামায় অনেক সুন্দর লাগছিলো।আর আরশিও খুশি হয়েছিলো কারণ আরশির ড্রেসের সাথে কালারটা অনেকটাই মিলে।আরশি বলল…
—”স্যার এটায়ই তো ভালো লাগছে।চেইঞ্জ না করলে হয়না?”
সিদ্রাত চোখে-মুখে দুষ্টুমি ফুটিয়ে বলল…
_”আরে রিলাক্স..তোমার জন্যও ব্ল্যাক ড্রেস আছে তো”
সিদ্রাতের কথাটার অর্থ বুঝতে আরশির কয়েক সেকেন্ড লাগল।বুঝতে পেরেই আরশির চোখগুলো রসগোল্লা হয়ে গেলো।লজ্জায় সাথে সাথে মুখটা ঘুরিয়ে ফেলল।ইশ ধরা পড়ে গেলো মেয়েটা!সিদ্রাত নিশব্দে হাসল…
আরশি উড়নাটা মাথায় স্কার্ফের মতো সেট করে সিদ্রাতের দিকে ফিরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।আরশির গাল দুটো এখনো লজ্জা রাঙা হয়ে আছে।সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”তো এই বেশেই যাবে?হালকা কাজলও তো দিলে না?”
—”ভালো লাগে না।এভাবেই চলুন।আর কাজল,লিপ্সটিক সব আমার পার্সে ছিলো।পার্সই তো জঙ্গলে রেখে এসেছি”
সিদ্রাত কিছু না বলে কাবার্ড থেকে সরাসরি আরশির পার্সটা এনে হাতে ধরিয়ে দিলো।আরশি পার্সটা দেখে তো জাস্ট অবাক।উচ্ছ্বসিত হয়েই বলল…
—”আপনি পার্সটা পেয়েছেন!উফফ আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না আমার কতটা ভালো লাগছে..পার্সটার কথা ভেবেই আমি আরও সিক হিয়ে যেতাম”
সিদ্রাত সন্দেহ নিয়ে বলল…
—”এরকম পার্স হাজারটা কিনে দেয়ার ক্ষমতা রাখে আঙ্কেল আমার জানামতে।তারপরও তুমি এটা ফিরে পাওয়ায় এতো খুশি?ধন-রত্ন আছে নাকি?”
সিদ্রাত কথাটা বলে ভ্রু নাচালো।আরশি ফিক করে হেসে দিলো।সিদ্রাতও হাসল।আরশি বলল…
—”এই পার্সটা আমায় নূপুর আপুর আম্মু গিফট দিয়েছিলো বার্থডেতে..”
—”ওহহ..ওকে হালকা কাজল আর লিপবাম ইউস করতে পারো।তারপর বেরোবো আমরা”
আরশি সিদ্রাতের কথা মতো হালকা কাজল আর একদম হালকা করে মেরুন কালার লিপ্সটিক দিলো।আরশির পার্সে সবসময়ই কয়েক কালারের লিপ্সটিক,আয়লাইনার,মেকাপ রিমুভার,মাশকারা থাকবেই..সাজগুজ প্রিয় বলে কথা মেয়েটা..
আরশি আয়নায় তাকিয়ে দেখল কি যেনো কমতি কমতি লাগছে।পরে কিছুক্ষণ ভেবে সিম্পলভাবে আয়লাইনার দিলো..ব্যাস!
—”স্যার চলুন”
সিদ্রাত আরশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।তারপর রুম থেকে বের হয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসে।রিসিপশনিস্টের কাছে চাবিটা দিয়ে যেতে নিলে রিসিপসনিস্ট বলে…
—”স্যার আজকের আবহাওয়াটা তেমন ভালো না।বৃষ্টি হবে ”
আরশির মুখটা ছোট হয়ে গেলো।সিদ্রাত চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল…
—”ঝড় হওয়ার পসিবিলিটি আছে?”
—”নো স্যার..বড় জোর মুষলধারে বৃষ্টি হবে।এরকমটাই আবহাওয়া অফিস বলেছে”
সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল…
—”চলো যাওয়া যাক”
আরশি অবাক হয়ে সিদ্রাতের দিকে তাকালো..
—”বৃষ্টি না হবে?”
—”হুম হোক..প্রবলেম কি?ঝড় তো হবে না।আর আমরা ক্যাব হায়ার করে যাবো।ইনশা আল্লাহ প্রবলেম হবে না।বৃষ্টি নামতে দেখলে দৌড়ে ক্যাবে চলে আসব”
আরশির ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল..
~~~~
ক্যাব থেকে নেমে আরশি অবাক হয়ে গেলো।চোখে-মুখে খুশি উপচে পড়ছে।অবাক হয়ে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাতের ঠোঁটের কোণায় হাসি…
—”পছন্দ হয়েছে?”
আরশি অতিরিক্ত খুশিতে আটকে আসা কন্ঠে বলল..
—”আমি ভাবতেও পারিনি আবারও জাফলং আসতে পারব..সত্যি এটা আমার কাছে কল্পনাতীত লাগছে।উফফ কি যে আনন্দ হচ্ছে!”
সিদ্রাত হাসে আরশির কথায়।অতঃপর বলে…
—”গতকাল যখন জাফলংয়ের মাটিতে পা রেখেছিলে তখনই তোমার আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখে বুঝেছিলাম এই জায়গাটা তোমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে..তাই আজ আমার পক্ষ থেকে ছোট খাট একটা সারপ্রাইজ এটা”
আরশি মুগ্ধ নয়নে সিদ্রাতের কথাগুলো শুনে।এতো সারপ্রাইজড ও কখনো হয়নি।আরশি এটা ভেবেই অবাক যে মানুষটা কত সহজে ওর মন ভালো করে দিচ্ছে…
আরশি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে সিদ্রাতের ডাকে…
—”ব্রিজে যাবে না?”
আরশি উচ্ছ্বসিত ফেইস নিয়ে মাথা ঝাঁকায়।সিদ্রাত মৃদু হেসে আরশিকে নিয়ে ঝুলন্ত ব্রিজটায় উঠে।এই ব্রিজটায় উঠলে আরশির নিজেকে খুবই হালকা মনে হয়।অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে এটা ভেবে যে নীল আর সবুজের মাঝখানে ও দাঁড়িয়ে আছে….
দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে প্রকৃতি বিলাস করছে।আরশি পুরোপুরি প্রকৃতিতে ডুবে গিয়েছে আর সিদ্রাত ডুবেছে প্রকৃতি বিলাসীতে।সিদ্রাতের কাছে মনে হচ্ছে এ যেনো এক ছোট্ট খাটো লাল টুকটুকে পরী যে প্রকৃতি বিলাস
করতে এখানে নেমে এসেছে…
বৃষ্টি আসার আগের আলামত সব শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম থেকেই আকাশ মেঘলা ছিলো।আর এখন অল্প আওয়াজে মেঘও ডাকছে।সাথে তো আছেই ঠান্ডা বাতাস।অবস্থা ভালো না দেখে সিদ্রাত বলল…
—”আরশি বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।চলে যাবে এখন?”
আরশির যেতে মন চাচ্ছে না।তাই ও বলল…
—”স্যার প্লিজ আর কিছুক্ষণ থাকি”
আরশির এমন মায়াভরা কন্ঠের বিপরীতে সিদ্রাত কিছু বলতে পারল না।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো যেটার জন্য দুজনের কেউই প্রস্তুত ছিলো।এতো বৃষ্টির কারণে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুজন ভিজে একাকার হয়ে যায়।আরশি করুণ চোখে তাকায় সিদ্রাতের দিকে।সিদ্রাত লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলে…
—”যা ভেজার তা তো ভিজেই গেলাম।আর কী তাহলে?”
আরশি হালকা হেসে বলল…
—”এতোক্ষণ তো প্রকৃতি বিলাস করেছি।এখন না হয় বৃষ্টি বিলাস করি”
সিদ্রাতও মুচকি হাসল।আরশি সম্মতি পেয়ে বৃষ্টি নিয়ে মেতে উঠল।পুরো জায়গাটা নীরব।মাত্র দুজন নর-নারী এই বিশাল প্রকৃতির মাঝে…
আরশির হঠাৎ চোখ গেলো সিদ্রাতের দিকে।সিদ্রাত দূর-দূরান্তের পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।ওর ডার্ক রেড ঠোঁটগুলোতে বৃষ্টির পানি লেগে মোহনীয় লাগছে।আরশির কেমন যেনো লাগছে সিদ্রাতকে দেখে।বৃষ্টিতে ভিজে শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।সুঠাম দেহের এই ফর্সা বডিবিল্ডারকে আরশির কাছে খুবই এট্রাক্টিভ লাগছে।দুজন একদম ঘেষে দাঁড়িয়েছিলো এতক্ষণ আর এখনো আছে।কিন্তু এই বিষয়টা আরশি আগে খেয়াল করেনি।ইচ্ছে করে আরশি আরেকটু ঘেষে দাঁড়িয়ে কেমন যেনো মাদকতাময় কন্ঠে সিদ্রাতকে ডাকল…
—”স্যার..”
সিদ্রাত পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়েই বলল..
—”বলো”
—”একটু এদিকে তাকান না”
সিদ্রাত আরশির দিকে তাকাতে চাচ্ছে না।কারণ ও জানে একটা ভুল হয়ে যাবে এখন তাকালে।ভুল যেনো না হয় সেজন্যই তো দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে রেখেছিলো।মেয়েটা কি বুঝে না বৃষ্টির পানিতে শুধু ছেলেদের শার্টই শরীরে লেপ্টায় না..মেয়েদেরও শরীরের ভাজ বুঝা যায়!
সিদ্রাতের কোনো জবাব না পেয়ে আরশি সিদ্রাতের কাঁধে হাত রাখল।আরশি এখন এমন একটা ঘোরের মাঝে আছে যে নিজের কাজ-কর্ম সম্পর্কে কোনো হিতাহিত জ্ঞানই নেই ওর।সিদ্রাত না চাইতেও আরশির দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।আরশির চোখে গুলো একদম ছোট হয়ে অাছে।সিদ্রাতের কাছে স্পষ্ট এই চোখজোরা এখন নেশায় ছেয়ে গিয়েছে।সিদ্রাত আবারও অন্যদিকে মুখ ঘুরাতে নিলে আরশি সিদ্রাতকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে সিদ্রাতের বুক বরাবর নাক ঘষতে লাগে।সিদ্রাত হাজার চেষ্টা করেও নিজেলে সামলাতে পারছে না।ও বুঝতে পারছে আরশির আহবানে ওর ভিতরের সিদ্রাতটাও বেসামাল..
সিদ্রাতের হাতগুলো অটোমেটিক্যালি আরশির কোমরে চলে যায়।আরশির শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে।ও আরও গভীরভাবে সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে।সিদ্রাতও আরশিকে জড়িয়ে ধরে ওর কোমরে স্লাইড করতে থাকে আর কাঁধ বরাবর গলার পাশে মুখ ডুবিয়ে কিস করতে থাকে।আরশি যেনো সেকেন্ডে সেকেন্ডে কেঁপে উঠছে….
দুজন একে-অপরে এতোটাই মগ্ন যে তাদের কোনো কিছুর পরোয়া নেই..তাদের মাঝের সম্পর্কটারও না…
এক পর্যায়ে দুজন দুজনের অধরজোরাকে নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়।ভালোবাসার গভীরতম স্পর্শ দুজনই এঁকে দিতে থাকে দুজনের অধরজোরায়।অধরজোরায় ভালোবাসার এতো গভীর স্পর্শ পাওয়া শেষ হলেই আরশি আবারও সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে আর হাপাতে থাকে।সিদ্রাতও আরশিকে জড়িয়ে ধরে ঘন ঘন শ্বাস নেয়।আরশি চোখ জোরা বন্ধ করে অত্যন্ত মায়া মিশ্রিত কোমল কন্ঠে বলে….
—”ভালোবাসি স্যার..অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।এই স্কুলে আসার আগে থেকে ভালোবাসি।প্লিজ আমায় ছেড়ে চলে যাবেন না…”
আরশি এত টুকু বলে বিড়াল ছানার মতো সিদ্রাতের বুক মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে।সিদ্রাতও আরশির মুখটা উঁচু করে কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে আর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।আরশিও পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে থাকে….
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_26
#Writer_TanhaTonu
অনেক্ষণ আরশি সিদ্রাতের বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে।এর মাঝে বৃষ্টিও একদম কমে আসে।হঠাৎ মেঘ গর্জনে সিদ্রাতের হুশ আসে।আরশি ভয়ে সিদ্রাতকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।সিদ্রাত ধীর কন্ঠে বলে….
—”আরশি হোটেলে ফিরে যাওয়া উচিৎ আমাদের।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।এখানে আর থাকা ঠিক হবে না”
আরশির ভীষণ লজ্জা লাগছে সিদ্রাতের বুক থেকে মুখ তুলতে।ঘোরের মাঝে আজ কত কিছু বলে দিলো..কত কিছু করেও ফেলল যা কোনোদিন করতে পারবে ভাবাটাও কল্পনাতীত ছিলো।কিন্তু এখন ঘোরটা কেটে গিয়েছে।ভীষণ লজ্জা লাগছে তাকাতে মানুষটার দিকে।কিস করার মোমেন্টটা বারবার চোখের সামনে ভাসছে যা লজ্জাবতীর লজ্জা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে…
—”আরশি কি হলো?চলো আমার সাথে..”
আরশি সিদ্রাতকে ছেড়ে দিয়ে একটু সরে এসে দাঁড়ালো।মাথাটা নিচু করে রাখলেও সিদ্রাত আরশির লজ্জায় রক্তিম হওয়া মুখখানা স্পষ্ট দেখতে পারছে।মৃদু হেসে আরশির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ক্যাবের উদ্দেশ্য হাঁটা দিলো।আরশি সিদ্রাতের ধরে রাখা হাতটার দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসল।দুজন ক্যাবে উঠতেই ক্যাব স্টার্ট দিলো।শরীর ভেজা থাকায় আরশির অলরেডি শীত লাগা শুরু হয়ে গিয়েছে।ক্যাবও চলমান থাকায় ঠান্ডা বাতাস আরশির ভিতরটাকেও কাঁপিয়ে তুলছে।আরশির হাতগুলো অলরেডি কাঁপা শুরু হয়ে গিয়েছে যা সিদ্রাতের চক্ষুগোচর হয়নি।সিদ্রাত আরশির সাথে একদম ঘেষে বসে ওকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।আরশি এমন একটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।লজ্জায় নেতিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল…
—”স্যার,,কি করছেন?”
—”জাফলংয়ে যা হয়েছে তার থেকে নিশ্চয়ই কমই করছি!চুপ করে বসে থাকো।শীত কম লাগবে”
আরশি লাজুক হাসল সিদ্রাতের বুকে মুখ গুঁজে।সিদ্রাতের শরীর থেকে মিষ্টি একটা স্মেল আসছে।আরশি এই স্মেলটা আগেও পেয়েছে সিদ্রাতের শরীর থেকে তবে এতোটা তীব্রভাবে না।আরশি সিদ্রাতের শরীরের স্মেলটা নিতে নিতে ঘুমিয়ে পড়ল।বুকে ভারী নিশ্বাস অনুভব করে সিদ্রাত ভ্রু কুচকে আরশির দিকে তাকালো।এতো কম সময়ের মধ্যে আরশিকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে হেসে ফেলল।আরও চল্লিশ মিনিট পর ওরা হোটেলে এসে পৌঁছালো।আরশির এতো সুন্দর ঘুমটা ভাঙাতে ইচ্ছে হলো না সিদ্রাতের।তাই আরশিকে কোলে নিয়েই রুমে গেলো।শরীর ভেজা থাকায় সোফায় শুইয়ে দিলো।ওয়াশরুমে গিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর রিসিপশনে ফোন দিলো…
~~~~~~~~~
আরশির ঘুমটা কিছুটা হালকা হতেই ও নড়ে-চড়ে উঠল।আরও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল।প্রায় দশ মিনিট পর আরশির ঘুম পুরোপুরি চলে গেলো।ও আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসতেই নিজেকে বেডে আবিষ্কার করল।হামি দিয়ে নিজের দিকে তাকাতেই দেখল ওর শরীরে একটা ব্রাউন কালার ফতুয়া আর ব্ল্যাক কালার প্লাজো।আরশির চোখগুলো রসগোল্লা টাইপ হয়ে গেলো।ও হুড়মুড়িয়ে উঠে সামনে তাকাতেই দেখল সিদ্রাত সোফায় ঘুমিয়ে আছে।ঘুমন্ত মুখটা একদম স্নিগ্ধ লাগছ।বিকালের কথা মনে করে আরশি ব্লাশড হলো আর লাজুক হাসল।পরক্ষণেই ভাবল…
—”আমার ড্রেস কি তাহলে স্যার চেইঞ্জ করেছে?ইয়াক..ছি ছি..আসতাগফিরুল্লাহ..মাথাটা আমার শেষ।হয়ত রিসিপসনিস্ট কোনো মেয়েকে দিয়ে চেইঞ্জ করিয়েছে”
আরশি নিজের ভাবনা দেখে নিজেই আনমনে হাসল।আবার বিকালের ঘটনাটা মনে উত্থাল-পাতাল ঢেউ তুলল।সেই সাথে হাজির হলো বহু ভাবনা…
—”উনি কি আমাকে ভালোবাসে?ভালো না বাসলে আমি যখন উনাকে ভালোবাসার কথা বলেছি তখন দুই/তিনটা চড় দিতো।চড় না দিলেও মিনিমাম বুঝাতো যে উনি আমায় ভালো বাসে না।এভাবে কি নীরব থাকত?তাহলে কি আমি ধরে নিবো নীরবতা সম্মতির অর্ধেক!! ইয়া আল্লাহ..কেইস তো এখানে ফিফটি ফিফটি ব্যাপার।অর্ধেক যদি সম্মতিময় হয় তাহলে আর অর্ধেক তো অসম্মতিও হতে পারে।ভালো বাসলে উনি তেমন পজিটিভ কোনো সাইনও দিলো না কেন?আমি কি এখন আবার জিজ্ঞাস করতে পারব নাকি এ ব্যাপারে।মরেই যাবো লজ্জায়।তখন তো এক্সিডেন্টলি বলে ফেলেছিলাম সব…ধূর নীরবতা সম্মতির অর্ধেক না হয়ে একান্ন হলেই হতো।তাহলে আমাকে আর এতো ভাবতে হতো না।আর কেমন খারুচ!ইচ্ছে করে পজিটিভ নেগেটিভ কোনো সাইন না দিয়ে আমায় ঝুলিয়ে রাখছে…হুহ”
আরশি সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটল।বেড থেকে উঠে সিদ্রাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর খোচা খোচা দাঁড়িওয়ালা গালটায় হাত বুলালো।মুচকি হেসে মোবাইলে টাইম দেখে বারান্দায় চলে এলো।রাত নয়টা আটাশ বাজে সবে…
সিদ্রাত পজিটিভ নেগেটিভ কোনো সাইন না দিলেও আরশির মনের ভিতর সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে।লজ্জায় রেঙে যাচ্ছে মন রাজ্যটা…চোখ বন্ধ করে সিদ্রাতের মুখটা কল্পনা করতেই ভালোবাসার স্রোত বয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গে।লজ্জা,ভয়,ভালো লাগা,সুখ..সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি আরশির মনটাকে রাঙিয়ে দিচ্ছে…
বৃষ্টি এতক্ষণ থেমে থাকলেও আকাশটা মেঘলাই ছিলো আর সাথে ছিলো মেঘের মৃদু ডাক।এখন আবারও ইলশেগুঁড়ি শুরু হয়েছে।আরশি বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে মৃদু আওয়াজে গান ধরল…..
আগুনের দিন শেষ হবে একদিন
ঝরনার পাশে গান হবে একদিন
এ পৃথিবী ছেড়ে চল যায়
স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে সীমাহীন
হৃদয়ে জ্বলছে যে বহ্নি
সে একদিন তারা হয়ে জ্বলবে
জোৎস্নায় নীল হবে অমনি
সেই আলোর পথ ধরে চলবে
সে যাত্রায় কেন হায়
ভয় হয় নিশিদিন
জোনাকির গান বুঝি থামল
চাঁদনীতে লুকালো আড়ালে
শিশিরে স্নান করে ভোর হয়
তুমি এসে দুটি হাত বাড়ালে
এ ভূবন যে নূতন
এ স্বপন চিরদিন
আরশি গান শেষ করে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে পাশে তাকাতেই চমকে গেলো।সিদ্রাত আরশির দিকেই তাকিয়ে আছে।আরশি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।নিচু স্বরে বলল…
—”অব্..ঘুম,, ভে ভেঙে গিয়েছেএ,,?”
সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”ঘুমের মধ্যেই কানে একটা মধুর সুর ভেসে আসছিলো।বুঝতে পারছিলাম কোনো পরী গুন গুনাচ্ছে।সেই গুন গুন তীব্র হতেই ঘুম ছুটে গেলো।গুনগুনের উৎস খুঁজে বারান্দায় আসতেই দেখলাম আমাদের পিচ্চি আরশি মনের সুখে গান গাচ্ছে”
আরশি লাজুক হেসে ভিতরে চলে যেতে নিলো।সিদ্রাতের কথায় আবারও দাঁড়িয়ে পড়ল…
—”আরশি..আমরা আগামীকাল ঢাকা ব্যাক করছি।প্লিজ আজ একটু কষ্ট করে জামা কাপড়গুলো গুছিয়ে নিও।জামা-কাপড়ের সাথে আমি ছোট্ট একটা ট্রলি ব্যাগও কিনেছি। ওটাতেই আমাদের ড্রেসগুলো নিয়ে নিও।ট্রলিটা কাবার্ডের ভিতরেই আছে…”
আরশি লাজুক হেসে “আচ্ছা” বলে ভিতরে চলে গেলো।দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।এতো সুখ এর আগে কখনো হয়নি।সিদ্রাতের ছোট ছোট কথায়ও যেনো অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।লজ্জায় কান,গাল গরম হয়ে যাচ্ছে।সিদ্রাতের সামনে যেতে মন চাচ্ছে না।বাসায় হলে আগামী সাতদিন হয়ত সিদ্রাতের আশেপাশেও যেতো না।অথচ এখন একই রুমে থাকতে হচ্ছে।আরশির চোখের সামনে সিদ্রাতের ফেইসটা ভেসে উঠল।আরশি লাজুক হেসে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল….
~~~~~~~~
পরের দিন দুপুর দুইটায় ওরা ঢাকা এসে পৌঁছায়।আরশির আম্মু আর সিদ্রাতের আম্মু বসে গল্প করছিলো আরশিদের রুমে।আরশিকে দেখে আরশির আম্মু আরশিকে জড়িয়ে ধরে গালে মুখে চুমু এঁকে দিয়ে বলল…
—”ইশ বাচ্চাটা আমার..কত্তগুলো দিন ধরে দেখি না সোনাটাকে।স্বার্থপর মেয়ে মাকে একটা ফোনও দিলি না”
আরশি ওর আম্মুর গালে চুমু দিয়ে বলল…
—”আম্মু সিলেট যাওয়ার এই দুইদিন মাত্র ফোন দেইনি।এছাড়া যাওয়ার আগের দিনও না তোমায় ফোন দিলাম।হুহ..তোমার কিছু মনে থাকে না”
সিদ্রাতের আম্মু হেসে বলল…
_”রাবিয়া মেয়েকে পাঁচদিন ধরে না দেখেই পাগল হয়ে গিয়েছিস।তো বিয়ে দিয়ে আরেক বাড়িতে পাঠানোর পর থাকবি কি করে?এজন্যই তো বলি ঘরের পাশে বিয়ে দে মেয়েকে”
আরশির আম্মু সিদ্রাতের আম্মুর ইশারা বুঝে মুচকি হাসল।কিন্তু আরশি বুঝল না।মনে মনে বলল…
—”ঘরের পাশে,,বাড়ির পাশে..কিছুই না।আমি তো তোমার রুম থেকে দুই রুম সামনের রুমটা দখল করব আন্টি…”
আরশি মনে মনে ভেবে লাজুক হাসল।সিদ্রাতের আম্মু বলল…
—”আচ্ছা তোরা থাক।আমি যাই।সিদ্রাতটাও তো এসেছে।ছেলেটা আমার হয়ত ক্লান্ত।শরবত বানিয়ে দেই গিয়ে”
সিদ্রাতের আম্মু চলে গেলো।আরশির আম্মু হাসল।
আরশি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর কি যেনো ভেবে সিদ্রাতের বারান্দায় উঁকি দিলো কিন্তু সিদ্রাতকে দেখতে পেলো না।মৃদু হেসে খেতে চলে গেলো।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।দশ মিনিট পর ধপ করে চোখটা খুলে আবারও বারান্দায় গিয়ে সিদ্রাতের বারান্দার দিকে তাকালো।সিদ্রাত হেসে হেসে ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে।আরশি মুখটা কুচকালো।কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে কিনা তা সিউর হওয়ার জন্য কানটা খারা করল…
—”আরে রাহা..লিসেন টু মি প্লিজ..”
“——–
—”উফফ না..আরে আমি তো ওইদিনই চলে আসতাম”
“——
—”আরে না একটু সমস্যায় পড়ে গিয়েই তো আটকে গিয়েছিলাম..”
“——-
—” ওকে ওকে আমি আজ রাতেই আসব।রেডি হয়ে থাকবি কিন্তু।”
“—–
—” হাহা..লঙ ড্রাইভ!আজ আমি সারা রাত ঘুমাবো”
“—–
—” এতো রিয়েকশন কোথা থেকে আসে?হোয়াটেভার..তোর কথাই রইল জানেমান…লঙ ড্রাইভেই নিয়ে যাবো তোকে”
“জানেমান” ওয়ার্ডটা শুনে আরশির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ওপাশ থেকে মেয়েটা কি বলেছে তা না শুনলেও সিদ্রাতের কথাগুলো প্রথম থেকেই শুনে ও ভিতরে জ্বলছিলো।আর এখন ত “জানেমান” কথাটা শুনে রাগে-দুঃখে আরশির চোখ দিয়ে পানি চলে এলো।
সিদ্রাতের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রইল।সিদ্রাত এখনো আরশিকে দেখেনি।কথা বলার এক পর্যায়ে সিদ্রাত আরশির দিকে তাকালো আর আরশির চোখে পানি দেখে ভ্রু কুচকালো।ফোনের ওপাশে থাকা রাহাকে বলল…
—”রাহা আমি তোকে পরে ফোন দিচ্ছি।রাখ এখন”
রাহা কিছু বলার আগেই সিদ্রাত ফোনটা কেটে আরশিদের বারান্দার বরাবর তাকালো।আরশি মুখ ঘুরিয়ে নিলো।সিদ্রাত লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল…
—”ফোনের ওপাশে থাকা মেয়েটা রাহা যাকে তুমি আমার সাথে স্কুলে দেখে মুনের কাছে নালিশ করেছিলে।এন্ড রাহা..আমার খালাতো বোন,ফ্রেন্ড প্লাস এক বাচ্চার মা..”
আরশি সিদ্রাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সিদ্রাত কেন এটা বলেছে বুঝতেই লজ্জা পেয়ে দৌঁড়ে ভিতরে চলে গেলো।
সিদ্রাত লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলল…
—”ইফ ইউ ইভার ওয়ান্ট নৌ হোয়াট এ ওইমেন’স মাইন্ড ফিলস,ইমাজিন অ্যা ব্রাউজার উইথ থাউজ্যান্ড ট্যাবস ওপেন্ড অল দ্যা টাইমস….কথাটা পুরোপুরি সত্য”
চলবে…
এই গল্পে আরশির একাধিক রূপ তুলে ধরা হবে।আশা করি শেষ পর্যন্ত সবাই পাশে থাকবে;ধৈর্যসহ পড়বে
চলবে…