প্রাণ_ভোমরা পর্ব ৪৬+৪৭

#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৪৬)

শ্রাবণের মুখ থমথমে। চোখের কোণে বিস্ময়টা খুব একটা ধরা পড়ছে না। মাথা নিচু করে থাকা মেয়েটার দিকে দৃষ্টি স্থির হতে বজ্রপাতের শব্দ হলো। তাৎক্ষণিক চোখ পড়ল মেঘে ঢাকা আকাশে। ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা শরীর ছুঁয়ে দিতে বলল,
” আপনি কি আরও কিছু বলবেন? ”

রিধি চট করে মাথা তুলল। অসহায় চাহনি ফেলে বলল,
” আপনি কি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন? ”

শ্রাবণ সেই চোখে তাকিয়ে থাকতে পারল না। দৃষ্টি বাইরে ফেলে বলল,
” এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। ”

রিধি অসহায়ত্ব ভুলে গেল। আচমকা বলল,
” আমি আপনার বাসায় থাকতে আসিনি। ”
” তাহলে? ”

শ্রাবণের দৃষ্টি নিজের দিকে পেয়ে খানিকটা ভয় কাটল রিধির। তার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
” ডিভোর্সের কাগজ কেন পাঠাননি সে কথা জানতে এসেছি। ”

শ্রাবণের ভ্রূযুগল কুঁচকে গেল। সন্দেহি চোখে তাকাল রিধির মুখে। অন্তর্নিহিত দৃষ্টি ফেলে বলল,
” মিথ্যে বলছেন। ”

রিধি ঘাবড়ে গেল। শ্রাবণের দৃষ্টির আড়াল হতে দরজার ভেতরে পা রাখল। একপা ছেড়ে আরেকপা তুলতে শ্রাবণ বলল,
” আপনি ভেতরে আসবেন না। ”

কথাটা উচ্চারণ করার মাঝে দরজার প্রস্থ বরাবর হাত রাখল শ্রাবণ। রিধি চাইলেও হাতের বাঁধা পেরোতে পারবে না। পেরোনোর চেষ্টাও করল না। জিজ্ঞেস করল,
” কেন? ”
” আপনি সেই অধিকার হারিয়েছেন। ”

রিধির চোখ অশ্রুসিক্ত হলো। অশ্রুপাত হওয়ার আগে নিজেকে সামলে নিল। বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” তাহলে ডিভোর্সের কাগজ দিন চলে যাচ্ছি। ”
” ডিভোর্স দিব বললেই হয়ে যায় না। উকিলের সাথে কথা বলতে হবে। ”
” তাহলে বলুন। ”

শ্রাবণ আশ্চর্য হয়ে বলল,
” এখন উকিল পাব কোথায়? ”

রিধি পাত্তাহীন স্বরে বলল,

” আমি কী করে বলব? হয় ডিভোর্স দিন নাহয় ভেতরে ঢুকতে দিন। ”

শ্রাবণের মুখের কঠিন ভাব ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। গম্ভীর স্বর ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। কঠিন চাহনিতে বার বার মায়া আর মুগ্ধতা ভর করতে চাচ্ছে। বিশ্বাসই করতে পারছে না এই গভীর রাতে, মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকারে রিধি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঘরে যাওয়ার জন্য আবোল-তাবোল বলছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ঝলকানো শুরু হয়েছে। হালকা বাতাস ভারী হয়ে এসেছে। শুকনো ময়লা উড়ে এসে রিধির চুলে আটকাতে খেয়াল করল মেয়েটা চাদর বা সোয়েটার জাতীয় কিছু পরেনি।

” চুপ করে আছেন কেন? ঠাণ্ডায় মেরে ফেলবেন নাকি? ”

শ্রাবণ আঁতকে উঠল। দরজা ছেড়ে একপা বাইরে এসে বলল,
” খবরদার আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না। অনেক সহ্য করেছি, আর করব না। ”

রিধি বড় বড় চোখে তাকাল। ঠোঁট টিপে হাসল। বলল,
” আরেকটু সহ্য করুন। ”
” না করব না। ”

রিধি বাচ্চাদের মতো আহ্লাদী সুরে বলল,
” একটু করেন? ”

শ্রাবণ রেগে গেল। রাগান্বিত স্বর বেরিয়ে আসতে গিয়ে আটকা পড়ল। ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে অসহায় কণ্ঠে বলল,
” আপনি কী চাচ্ছেন বলুন তো! ”

রিধি সহজ স্বরে বলল,
” ঘুমাতে। ”

শ্রাবণকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল রিধি। শ্রাবণ পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
” রিধি, থেমে যান বলছি। আমার রুমে পা রাখবেন না। ”

রিধি থামল। ঘাড় বাঁকিয়ে শ্রাবণকে দেখল। দুষ্টুদের মতো হেসে বলল,
” রাখব। ”

বলেই ভেতরে ঢুকে গেল। শ্রাবণ ছুটে এলো। শাসানির সুরে বলল,
” ভালো হবে না বলছি। ”
” বাব্বাহ! আমাকে শাসাচ্ছেন দেখি।”

রিধি বসার জন্য প্রস্তুত হতে শ্রাবণ সাবধান করল,
” আমার বিছানায় বসবেন না। ”

রিধি বিছানার দিকে তাকাল এক বার। তারপর শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে টুপ করে বসে পড়ল। বলল,
” এই তো বসেছি। কী করবেন শুনি? ”

শ্রাবণ সাথে সাথে উত্তর দিল না। চুপ করে থাকলে রিধি বলল,
” কী হলো, বলুন অপরাধীর শাস্তি কী? ”
” কিছু না। ঘুমাতে এসেছেন, ঘুমান। ঘুম শেষ হলে চলে যাবেন। ”

কথাটা বলে নীরব চালে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে রিধি চটজলদি বলল,
” কোথায় যাচ্ছেন? আমি তো আপনার সাথে ঘুমাতে চাই। ”
” আমি চাই না। ”
” কেন? ”
” লোভ দেখিয়ে চলে যাবেন তাই। ”

রিধি বসা থেকে উঠে আসল। শ্রাবণের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলল,
” আর যাব না। ”
” বিশ্বাস করি না। ”
” সত্যি যাব না। ”

এ পর্যায়ে শ্রাবণ চোখ স্থির করল রিধির চোখে। বলল,
” বিশ্বাস করান। ”
” কিভাবে? ”
” আমি যা বলব তাই করবেন? ”
” হ্যাঁ। ”
” ভেবে বলুন। ”

রিধি খানিকটা সময় নিল। তবে কিছু ভাবল বলে মনে হলো না। চুপ থেকে বলল,
” ভেবেছি। ”
” বলুন, শ্রাবণ আমি তোমার কাছে থাকতে চাই। ”
” এইটুকুই? ”

রিধির কণ্ঠে সন্দেহ। সে ভেবেছিল কঠিন কিছু করতে দিবে। শ্রাবণ মাথা নেড়ে বলল,
” হ্যাঁ বলুন। ”

রিধি খুশি মনে বলল,
” শ্রাবণ আমি আপনার সাথে থাকতে চাই। ”

শ্রাবণ চটে গেল। বলল,
” বলেছিলাম না আপনি থাকবেন না? এখনই প্রমাণ পেলাম। ”

শ্রাবণের কথা রিধি বুঝতে পারল না। বোকা চোখে তাকিয়ে থাকলে শ্রাবণ আবার বলল,
” আমি বলতে বলেছি, শ্রাবণ আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। আপনি বলছেন, শ্রাবণ আমি আপনার সাথে থাকতে চাই। কত বড় চালাকি! ”

রিধি শ্রাবণের কথা বুঝার চেষ্টা করল। সেকেন্ড কয়েক গড়াতে সহসা বলল,
” শ্রাবণ আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। এবার হয়েছে? ”

শ্রাবণ সাথে সাথে জবাব দিল না। বিছানায় বসল। হাতের ইশারায় রিধিকে কাছে ডেকে বলল,
” এবার বলুন, আমি মেনে নিলাম তুমি আমার স্বামী আমি তোমার বউ। ”

রিধি বিস্ময় নিয়ে তাকালে শ্রাবণ বলল,
” বলবেন নাকি চলে যাব? ”

রিধির দিক থেকে উত্তরের অপেক্ষা না করে ঘড়ি দেখল শ্রাবণ। লম্বা হামি টেনে বলল,
” খুব ঘুম পাচ্ছে। রাত তো শেষ…”
“আমি মেনে নিলাম তুমি আমার স্বামী আমি তোমার বউ। ”

শ্রাবণের মুখ আর বন্ধ হলো না। ঐ অবস্থায় রিধির দিকে তাকাল। উত্তেজনায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। রিধির দিকে ঝুকে এসে বলল,
” সত্যি মেনে নিছেন? ”
” তারপর বলুন। ”

শ্রাবণ এক প্রশ্ন দ্বিতীয় বার করার সাহস পেল না। একটু সুখ সুখ অনুভূতি নিয়ে বলল,
” তুমি চাইলেই আমাকে জড়িয়ে ধরতে পার। চুমু খেতে পার। আমি বাঁধা দেব না। ”
” তুমি চাইলেই আমাকে জড়িয়ে ধরতে পার। চুমু খেতে পার। আমি বাঁধা দেব না। ”
“একটুও রাগ করব না। কথা বলা বন্ধ করব না। মুখ গোমরা করে থাকব না। খুশি হয়ে আমিও তোমাকে চুমু খাব। ”

রিধি কড়া চোখে তাকালে শ্রাবণ বলল,
” এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আমাকে স্বামী হিসেবে মানবেন আর ছুঁতে দিবেন না। এটা তো হবে না। অবশ্য অনুমতি ছাড়া ছোঁয়া যেতেই পারে। এতে আপনারই সমস্যা। দুঃখ পাবেন। কিন্তু আমি চাই আপনার মুখে দুঃখ না লেগে আনন্দ লাগুক। ”

রিধির চাহনির কোনো হেরফের হলো না। অগ্নি ঝরা দৃষ্টি নিয়ে চুপ করে থাকল। শ্রাবণ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল,
” আপনি বিশ্বাসের পরীক্ষায় ফেইল। আমি চললাম। ”

শ্রাবণ সত্যি সত্যি হাঁটা ধরল। দরজায় দাঁড়িয়ে আরেক বার রিধির দিকে তাকাল। তার দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হলো। আশ্বিনের রুমের দিকে পা বাড়িয়ে আবার ফিরে আসে। রিধির হাত ধরে অনুরোধের সুরে বলল,
” মেনে নিন না, প্লিজ। বউয়ের পাশে শুব অথচ ছুঁতে পারব না। এটা যে কতটা কষ্টের তা আমি এই কয় দিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। কত বার যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি, ভুল করতে গিয়েও নিজেকে সামলেছি তা যদি গুণতেন! ”
” তেরো বার জড়িয়ে ধরেছ। বত্রিশটা চুমু খেয়েছ। ”

শ্রাবণ রিধির হাত ছেড়ে দিল। হতভম্ব চোখে তাকালে রিধি হেসে ফেলল। বলল,
” ঘুমের ঘোরে কাঁদছিলাম বলে একজন পুরুষ মানুষের ছোঁয়া টের পাব না? ”
” তার মানে আপনি জেগে যেতেন? ”

রিধি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে শ্রাবণ বলল,
” তার পরেও আমার বাঁধন থেকে আলগা হোননি। তার মানে আপনি…”
” আমি একটু হাত, মুখ ধুব। বাইরে এত বাতাস! বালু উড়ে এসে পড়েছে শরীরে। ময়লা শরীরে ঘুমাতে অস্বস্থি লাগবে। জামাটা পালটে আসছি। ”

রিধি শ্রাবণের আলমারির পাল্লা খুলল। এখান থেকে যাওয়ার সময় সে কিছু থ্রি-পিস আর শাড়ি রেখে গিয়েছিল। সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তার মানে এখানেই যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছে। রিধির ভাবনা সত্যি হলো। ভাঁজ করে রাখা একটা শাড়ি নিয়ে গোসলখানায় ঢুকে পড়ল। দরজার বাইরে থেকে শ্রাবণ বলল,
” আপনি ইচ্ছে করে পালালেন। পালালে হবে না,রিধি। আমার উত্তর চাই। বের হয়ে দিবেন কিন্তু। ”

শ্রাবণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ হাঁটা-চলা করে বিছানায় বসল। আবার দরজার কাছে গিয়ে বলল,
” এত সময় নিচ্ছেন কেন? নিশ্চয় উল্টা-পাল্টা উত্তর সাজাচ্ছেন। আমি কিন্তু সত্যিটা শুনতে চাই। খবরদার উল্টা-পাল্টা কিছু ভাববেন না। ”

শ্রাবণের অপেক্ষা শেষ করে রিধি শাড়ি পরে বেরিয়ে আসল। শ্রাবণ এগিয়ে এসে বলল,
” সত্যি সত্যি বলুন জেগে থেকেও কেন আমার বুকে ঘুমিয়েছেন? চুমু নিয়েছেন? ”

রিধি উত্তর দিল না। চুল খোঁপা করতে করতে বিছানার দিকে এগিয়ে আসল। শ্রাবণ একই প্রশ্ন আবার করলে রিধি বিরক্ত চোখে তাকাল। বলল,
“তুমি সান্ত্বনা দিয়েছ, আমি নিয়েছি। এখানে দোষের কী আছে? তাছাড়া বুকটা তো আমার স্বামীরই ছিল। অন্য পুরুষের না তাই না? ”

শ্রাবণ চুপ করে গেল। মনে মনে হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। সেই সময় রিধির ফোন বেজে উঠল। রিধি শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে পার্স থেকে ফোন বের করে কানে ধরে সালাম দিল। ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসল না। কতক্ষণ চুপ থেকে আগ্রহবশত নাম্বারটা দেখল। তার ধারণা ছিল বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। এখন দেখে অপরিচিত নাম্বার। রিধির কপালে ভাঁজ পড়ে। শ্রাবণের থেকে একটু সরে এসে জিজ্ঞেস করল,
” কে বলছেন? ”

এবারও কোনো উত্তর আসল না। রিধি ভারি অসন্তুষ্ট হয়। রাগ ধরা পড়ে চোখে, মুখে। কঠিন স্বরে দুটো কড়া কথা শুনানোর উদযোগ নিতে শ্রাবণের হাতের স্পর্শ পড়ে পেটে। খোঁপার চুল আলগা করে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” বলুন, শ্রাবণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। ”

রিধি লাজুক হেসে শ্রাবণের বুকের সাথে আরেকটু মিশে যেতে ফোনের ওপাশ থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
” কেমন আছো, রিধি? ”

অপরিচিত নাম্বারে অপরিচিত কণ্ঠে নিজের নাম শোনে অবাক হলো সে। তাৎক্ষণিক প্রশ্ন করল,
” কে বলছেন? ”
” আমি। ”
” আমি কে? ”
” তোমার নীরব। ”
” নীরব! ”

রিধির মুখ থেকে নামটা উচ্চারণ হতে শ্রাবণ থমকে গেল। পৃথিবী থেকে যেন দূরে কোথাও ছিটকে পড়ল। এই এতক্ষণে খেয়াল করল রিধি কারও সাথে ফোনে কথা বলছে। ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করল,
” কার সাথে কথা বলছেন? ”

রিধি শ্রাবণের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,
” আমি একটু আসছি। ”

কথাটা বলতে বলতে বারান্দার দিকে চলে গেল। শ্রাবণ স্পষ্ট বুঝতে পারল রিধি নির্জন ও একান্ত সময় চাচ্ছে। তবুও বারান্দায় ছুটে গেল সে।
#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৪৭)

” তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছ? ”

রিধির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল নীরব,
” এখন কি এটা জানা জরুরি? ”
” জরুরি নয়? ”
” না। ”
” তাহলে জরুরি কী? ”

ওপাশে নীরবতা। সেকেন্ড কয়েক পর নীরবই বলল,
” যেটা অনেক আগে করার কথা ছিল সেটা করা। ”

নীরবের কথার ভাবার্থ ধরতে পারল না রিধি। প্রশ্ন করল,
” মানে? ”
” আমরা বিয়ে করছি, রিধি। আজকেই। ”
” আমরা বলতে? ”
” তুমি আর আমি। ”

রিধির ভেতরটা কেঁপে উঠল। শিরদাঁড়া বয়ে ছুটল ভারী তুষারপাত! কয়েক মুহূর্তের জন্য বরফ জমা পাথরের মতো শক্ত হয়ে থাকল। হাত-পায়ের জোর হারিয়ে ফেলতে ফোন পড়ে যাচ্ছিল কান থেকে। সেই সময় নীরব বলল,
” চুপ হয়ে গেলে যে বিয়ে করবে না আমাকে? ”

রিধি কণ্ঠ টেনে টেনে বলল,
” আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, নীরব। ”
” জানি। ”

রিধি আকাশ মাপের বিস্ময় নিয়ে সুধাল,
” তুমি জানো? ”
” হ্যাঁ। সাথে এটাও জানি তোমাদের মধ্যে কিছু ঠিক নেই। হয়তো স্বামী- স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কটাও তৈরি হয়নি। আর যদি হয়েও থাকে আমার কোনো আপত্তি নেই। ধরে নিব ওটা আমার ভুলের শাস্তি। ”

নীরবের শেষ কথাগুলো মস্তিষ্কে সাড়া ফেলল না রিধির। প্রথম কথা ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি এসব জানলে কীভাবে? ”

নীরব ভীষণ ব্যস্ত স্বরে বলল,
” সব বলব,রিধি। ফোনে নয়, সামনাসামনি। তুমি তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চটজলদি বেরিয়ে আসো। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। ”

রিধি আরেক দফা অবাক হলো। বিস্ময় ঝরে পড়া কণ্ঠে সুধাল,
” অপেক্ষা করছ বলতে? কোথায় আছো তুমি? ”
” তোমার বাড়ির সামনে। ”

রিধি তাড়াতাড়ি বলল,
” আমি বাড়িতে নেই। আমি তো..”

রিধির কথা টেনে নিয়ে নীরব বলল,
” আমি তোমার শ্বশুরবাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। ”

একটু আগে জমে আসা শরীরটা মুহূর্তেই সক্রিয় হয়ে উঠল। বিস্ময়ের পরিবর্তে ভয় জেঁকে বসেছে তনুমনে! থরথর করে কাঁপছে হাত- পা। হঠাৎই পানির তৃষ্ণা পেল ভীষণভাবে।

” আচ্ছা, কিছু নিয়ে আসতে হবে না। শুধু তুমি আসলেই হবে। বাকি সব আমি সামলে নিব। ”

রিধি কিছু একটা বলতে চাইল। নীরব থামিয়ে দিয়ে শান্ত ও গভীর স্বরে বলল,
” আমার হাতে এই রাতটুকুই সময় আছে, রিধি। কী ফেলে তোমার কাছে ছুটে এসেছি তা যদি বলতে পারতাম! ”

নীরবের এই কথাগুলো রিধির অন্তরের কোমলতম ও নিগূঢ় প্রদেশে স্পর্শ করে এলো। ফোনটাকে শক্ত করে চেপে বলল,
” কী ফেলে এসেছ? ”
” এটাও নাহয় সামনে এসে শুনবে। শুধু এইটুকু জেনে রাখো। যা ফেলে এসেছি তা আর ফেরত পাওয়ার নয়। ”
” কেন? ”
” তোমাকে ফেরত নিতে এসেছি বলে। ”

রিধিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীরব দ্রুত বলল,
” বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রিধি। তাড়াতাড়ি আসো। এবার না এই বৃষ্টি আমাদের আটকে দেয়! ভয় লাগছে খুব। আজকাল সব কিছুতেই ভয় পেয়ে যাই। ”

রিধি আর কিছু বলতে পারল না। নীরব কল কেটে দিয়েছে। কান থেকে ফোন নামিয়ে পাশে ঘুরতে আত্মা কেঁপে উঠল! কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
” আপনি এখানে? আমি তো বলেছিল…”

রিধি কথা শেষ করার পূর্বেই শ্রাবণ রুমের ভেতর চলে গেল। ছোট্ট টেবিলে পড়ে থাকা পার্স নিয়ে এসে রিধির হাতে দিয়ে বলল,
” যাও। ”

রিধি চকিত চোখে তাকাল। সচকিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” কোথায় যাব? ”

সঙ্গে সঙ্গে ভূমি কাঁপিয়ে হুংকার ছাড়ল,
” বেরিয়ে যাও। ”

রিধি ভয়ে ছিটকে উঠল। দু’কদম পিছিয়ে গেল। হাত থেকে ফোন আর পার্স পড়ে গেল অসাবধানতায়। ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে!

শ্রাবণ কঠিন চোখে তাকাল। চোখ থেকে যেন লাভা গলে গলে পড়ছে! পূর্বের কথাটাই আবার বলার জন্য উদ্যত হতে পেছন থেকে অন্য একটি গলা ভেসে এলো,
” শ্রাবণ? কী হয়েছে, বাবা। চিৎকার করছিলি কেন? ”

শ্রাবণ পেছন ঘুরে। বাবার দিকে এক পলক চেয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সঙ্গে সঙ্গে। ছেলের এই ভয়াবহ চেহারায় আঁতকে উঠলেন লোকমান সাহেব। আতঙ্ক ফুটে উঠল চোখে, মুখে। তন্মধ্যে চোখ পড়ল রিধির উপর। সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন,
” বউমা, তুমি কখন এলেন? ”

এই একটি কথাই শ্রাবণের চেপে রাখা রাগটাকে উগলে দিল। সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চিৎকার করে বলল,
” কে তোমার বউমা? এখানে কোনো বউমা নেই। ”

লোকমান সাহেব তাজ্জব বনে গেলেন। চোখের সামনে ছেলের বউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাচ্ছেন। অথচ ছেলে বলছে বউমা নেই। তাহলে কি তার চোখে সমস্যা হলো? খানিকটা সন্দেহে জড়িয়ে পড়লেন লোকমান সাহেব। সেই সময় শ্রাবণ বাবার দিকে এগিয়ে আসল। কাঁধ চেপে ধরে দরজার দিকে ঘুরিয়ে বলল,
” তুমি রুমে যাও, বাবা। ”

তিনি কিছু বলার চেষ্টা করলে শ্রাবণ অনুরোধের সুরে বলল,
” দয়া করে রুমে যাও, বাবা। একটা কথাও বলবে না। ”

লোকমান সাহেব দম ছাড়লেন। ছেলের অনুরোধের কাছে পরাজিত হয়ে নিজ রুমে ঢুকলেন। শ্রাবণ বাইরে থেকে ছিটকানি লাগাচ্ছিল সেই সময় রিধি উৎকণ্ঠায় বলল,
” বাইরে থেকে লাগাচ্ছেন কেন? বাবা বের হবেন কিভাবে? ”

শ্রাবণ পেছন ঘুরে ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,
” আপনি এখনও যাননি? ”

প্রশ্নটা করেই রিধির কনুই চেপে ধরল শ্রাবণ। রিধির দিক থেকে কোনো জবাব গ্রহণ করল না। টেনে মূল দরজার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল,
” একটা মানুষকে আর কত অপেক্ষা করাবেন? যান, চলে যান। ”

রিধি আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। নীঃশব্দে দরজার বাইরে পা রাখতে একটা প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পেল। কিছু ভেঙেছে বোধ হয়। কেমন ঝনঝন শব্দ হলো!

_______________
শ্রাবণ বাতি নিভিয়ে বিছানার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে। পেট ডাবিয়ে প্রলম্বিত নিশ্বাস টানছে। মুষ্টিবদ্ধ ডান হাতটা ঘন ঘন মৃদু আঘাত করছে মেঝেতে। কী আটকাতে চাচ্ছে সে? রাগ নাকি কান্না? পারছে কী? বুকের তলদেশ থেকে যেন সুনামী হানছে! রাগ, কান্না দুটোর একটাও বুঝি নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। প্রবল বেগে ভেতরটা গুঁড়িয়ে বাইরে হানা করতে বরফের ঠাণ্ডা স্পর্শ পড়ল হাতের পিঠে। শ্রাবণ চমকে হাত সরিয়ে নেয়। অন্ধকারে সামনে তাকিয়ে থাকে। একটি নারী ছায়া অস্পষ্ট হতে হাতে কোমল ছোঁয়া অনুভব করে। সেই সাথে কোমল কণ্ঠ,
” আঘাতটা আমাকে করতে পারতেন তাহলে নিজে ব্যথা পেতেন না। ”
” আপনি এখনও যাননি? ”

রিধি অন্ধাকারেই ঠোঁট একপাশে টেনে হাসল। শ্রাবণের হাতে বরফের ছোঁয়া দিতে দিতে বলল,
” আপনি নীরবকে চিনেন? ”

শ্রাবণ উত্তর দিল না। রিধিও উত্তরের অপেক্ষা না করে বলল,
” আমিও চিনি না। এমন একটা অপরিচিত মানুষের কাছে নিজের বউকে ছেড়ে দিতে ভয় করল না? সে যদি আমাকে পাঁচার করে দিত? বেচে দিত? অথবা নিজেই..”
” কী সব বলছেন? ”

শ্রাবণ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
” যাকে ভালোবাসেন তাকে এত অবিশ্বাস করছেন? ”

রিধি বসা থেকেই বলল,
” ভালোবাসা? কে বলল আমি তাকে ভালোবাসি? আমি বলেছি? ”
” না। ”
” তাহলে এ কথা কেন বললেন? ”
” আপনি নীরবকে ভালোবাসেন না? ”

রিধি সরাসরি উত্তর দিল না। একটু ঘুরিয়ে বলল,
” একটা মানুষ, যার মুখটা দেখিনি কখনও, কণ্ঠ শুনিনি কখনও, ছুঁয়ে দেখিনি কখনও, তাকে কি ভালোবাসা যায়? ”
” তাহলে পাগলামি করেছেন কেন? ”
” না বুঝেই। ”
” না বুঝেই দুই বছর প্রেম করেছেন? অদ্ভুত লাগছে না? ”

এ পর্যায়ে রিধি উঠে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করল,
” কে বলেছে আমি প্রেম করেছি। ”
” করেননি? ”
” না। আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসিও বলিনি। তার আগেই তো! ”

রিধি নিজের কথা শেষ করল না। শ্রাবণ এগিয়ে এসে বলল,
” সেজন্যই বুঝি এত বছর পর সে আপনাকে নিতে এসেছে? প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই অথচ পাগলামিতে একজন আরেকজনের চেয়ে সেরা! ”

রিধি শ্রাবণের দিকে ঝুকে এসে ফিসফিস ভঙ্গিতে বলল,
” পাগলামি করার মতো বোধ হয় কিছু একটা আছে। প্রথমে আমি করেছি এখন সে করছে। মজার ব্যাপার কী জানেন? ”
” কী? ”
” আমি প্রতিশোধ নিতে চলেছি। ”
” মানে? ”

রিধি শ্রাবণের কাছ ঘেষে দাঁড়াল। গলার দুই পাশে হাত রেখে দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল,
” আপনাকে ভালোবেসে তাকে কষ্ট দিতে চলেছি। ”
” আপনি আবার আমার মন নিয়ে খেলতে চাইছেন? ”
” না, পরীক্ষায় পাশ করতে চাইছি। আপনার নেওয়া পরীক্ষায় নয়, সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষায়। কুমোর যেমন মাটিকে পুড়িয়ে শক্তপোক্ত বানায়? স্বয়ং আল্লাহও এই পরীক্ষায় আমার মনটাকে পুড়িয়ে শক্তপোক্ত করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এত বড় সুযোগ হাত ছাড়া করি কিভাবে বলেন তো? ”
” মানে? ”

রিধি শ্রাবণের প্রশ্নের উত্তরে বলল,
” আমি একটুও রাগ করব না। কথা বলা বন্ধ করব না। মুখ গোমরা করে থাকব না। বরঞ্চ খুশি হয়ে আমিও তোমাকে চুমু খাব। ”

রিধি আর্জি পেশ করেই শ্রাবণের ঠোঁটে হালকা চুমু খেয়ে বলল,
” এই যে এভাবে। ”

______________
ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙল রিধির। ঘুম ঘুম চোখে ফোন খুঁজে কানে নিল। ভার স্বরে বলল,
” হ্যাঁ, আম্মু। বলো। ”

তারপর কয়েক সেকেন্ড নীরবতা। ঘুম ফেলে বিস্ফারিত কণ্ঠে বলল,
” কী বলছ? আমি এখনই আসছি। ”

রিধি তাড়াহুড়ায় উঠতে গিয়েও পারল না। শ্রাবণের বাঁধন থেকে আলগা হতে না পেরে সমানে ধাক্কাতে শুরু করল। ধাক্কাধাক্কিতে শ্রাবণের ঘুম ভেঙে যায়। মুখ তুলে বলল,
” কী হয়েছে? ”
” আমাকে এখনই বাসায় যেতে হবে। ”
” মানে কী? তুমি না আমার কাছে চলে এসেছ? ”

রিধি কপট রাগ নিয়ে বলল,
” চলে এসেছি কী কথা? ঐ বাড়ির সম্পর্ক নষ্ট করে এসেছি নাকি? তোমার হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছি। ”
” করিনি? ”

রিধি রাগ চোখে তাকাল। শ্রাবণ খানিকটা দমে গেল। সেই সুযোগে উঠে বসল রিধি। বিছানা ছেড়ে গোসল করতে চলে যায়।
শ্রাবণ থম মেরে বসে আছে। কী হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। জিজ্ঞেস করার সময়ও পাচ্ছে না। এর মধ্যে রিধি বেরিয়ে আসে। ফোন তুলে চলে যেতে নিলে ওড়না টেনে ধরল শ্রাবণ। কাতর স্বরে বলল,
” সত্যিই চলে যাচ্ছো? ”

রিধি ওড়না ছাড়িয়ে বলল,
” হ্যাঁ। ”
” আবার কবে আসবে? ”
” নিশ্চিত বলতে পারছি না। ”
” আমি যে তোমার সাথে সময় কাটাব বলে ছুটি নিলাম? ”

রিধি স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। পর মুহূর্তে ভ্রূ কুঁচকে বলল,
” কত দিনের? ”
” দু’দিন। ”
” তাহলে তুমিও আমার সাথে চলো। ”

সমাধান বাতলে রিধি হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। শ্রাবণ পেছন থেকে বলল,
” আরে, আমাকে তৈরি হওয়ার জন্য পাঁচ মিনিট সময় তো দিবে! ”
” এক মিনিটও দেওয়া যাবে না। আমার ভাই দেবদাস হয়ে যাচ্ছে! ”

কথাটা শেষ করে রিধি থামল। আঁতকা কিছু মনে পড়ছে এমন ভঙ্গিতে পেছন ঘুরল। শ্রাবণের কাছে ছুটে এসে বলল,
” তুমি কি আমাকে তুমি করে বলছ? ”

রিধির আকস্মিক প্রশ্নে শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। আড়ষ্ট স্বরে বলল,
” হ্যাঁ। ”
” কেন? আমার কাছে অনুমতি নিয়েছ? ”

শ্রাবণ থতমত খেল। নিজেকে সামলে পাল্টা প্রশ্ন করল,
” অনুমতি নিতে হবে? ”
” অবশ্যই নিতে হবে। ”

শ্রাবণ চুপ করে গেলে রিধি বলল,
” অনুমতি চেয়ে লাভ নেই। আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করার অনুমতি দেওয়া হবে না। কখনই না। তুমি সব সময় আমাকে আপনি করেই বলবে। ”
” কেন? ”
” পরে বলব। এখন সময় নেই। ”

রিধি হুট করেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শ্রাবণের হাতে শার্ট ধরিয়ে টানতে টানতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল।

_______________
” তুই ভ্রমরকে ভালোবাসিস না? ”

রিধির হঠাৎ প্রশ্নে হৃদ্যের বুকের গভীরে কোথাও ধাক্কা লাগল। এক ধাক্কায় চুরমার হয়ে যাচ্ছে যেন সব! হৃদ্য মুহূর্তকাল সময় নিল নিজেকে সামলাতে। তারপর সহজ স্বরে বলল,
” না। ”
” ওকে বিয়ে করতে চাস না? ”

এ পর্যায়ে আপুর পাশ থেকে উঠে আসল হৃদ্য। অন্য দিকে ঘুরে বলল,
” না। ”
” তোরা এত দিন প্রেম করিসনি? ”
” না। ”

রিধি ক্ষেপে গেল। বসা থেকে দাঁড়িয়ে শক্ত স্বরে বলল,
” প্রেম করিসনি, ভালোবাসিসনি, বিয়ে করতে চাস না। তাহলে চাস কী? এত বছর দুজন এক সাথে মেলামেশা করছিস কোন সম্পর্কে? শুধুই বন্ধু? ”
” ভ্রমর আমার বন্ধু নয়। ”
” তাহলে ছোট বোন? ”
” না। ”

রিধি প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলল,
” তাহলে কী? ভ্রমর তোর কী হয়? তোদের সম্পর্কের নাম কী? ”

হৃদ্যের দিক থেকে উত্তর আসার পূর্বেই ভারী কিছু পড়ার শব্দ হয়। সকলেই চমকে ওঠে। সচকিত দৃষ্টিতে পেছন ঘুরতে দেখে ভ্রমর ভেঙে যাওয়া ফুলদানির টুকরো তুলছে। হৃদ্য দৌড়ে আসে। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সুধায়,
” তোর লাগেনি তো? ”

ভ্রমর উত্তর দিল না। সজল চোখে চেয়ে থাকে হৃদ্যের মুখপানে। ভ্রমরের হাত থেকে পোড়ামাটির ধারাল টুকরোগুলো নিজ হাতে নিতে গিয়ে লক্ষ্য করে ভ্রমর শাড়ি পরে আছে। হলদে-সোনালি রঙের শাড়ি জড়ানো মেয়েটার দিকে বিমুগ্ধ দৃষ্টি ফেলে মনে মনে বলল, ‘ ও আমার পুষ্পরানি, ফুলপরি, আমার প্রাণ-ভোমরা! শরীরের সাথে প্রাণের যে সম্পর্ক। পুচকির সাথে মি.প্রতিবেশীর সেই সম্পর্ক।’

চলবে

[রি-চেইক করা হয়নি। কিছু ভুল পেলে কমেন্টে জানাবেন।]
চলবে

[ আমি যত দূর ভাবি তত দূর কেন লিখতে পারি না😭]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here