প্রাপ্তি পর্ব -০১

“সমস্যা কি আপনার? পথ আটকে দাড়িয়ে আছেন কেন?”__ অত্যন্ত বিরক্তির সহিত প্রশ্নবাক‍্য ছুড়ে দিল সামনে দাড়ানো লোকটিকে হুমায়রা!

“কেন পাখি, তুমি এমন কর কেন?”__ ভাবলেশহীন উত্তর লোকটির।

হুমায়রার যেন গায়ে জ্বলন ধরেছে এমন অনুভূত হচ্ছে শরীরে! সে লোকটার ‘পাখি’ সম্বোধন একদমই সহ‍্য করতে পারে না। অসহ‍্য লাগে! কি বিশ্রি ‘পাখি’!

হুমায়রা ফুসে উঠল! গনগনে কন্ঠে বলল,
“খবরদার পাখি ডাকবেন না! খুব খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার নাম আছে হুমায়রা, আপনি কেন পাখি ডাকবেন?”

“কি খারাপ হবে পাখি? আদর করে পাখি বলে ডাকি তুমি সাপের মত অমন ফোসফোস করো কেন পাখিইই?”__পূনরায় আবারও ভাবলেশহীন জবাব তার।

হুমায়রা কন্ঠের তেজ সামান্য নেভালো! নিচু কন্ঠে তেজ মিশিয়ে বলল,
“পরবর্তীতে যদি আমার পিছু নিয়েছেন বা রাস্তা আটকে দাড়িয়ে থাকেন এতদিন যা করিনি এবার সেটাই করে দেখাব! মনে রাখবেন। __বলেই গটগট শব্দ তুলে দ্রুত সে স্থান প্রস্থান করল হুমায়রা।

হালকা বাতাস লাগল দন্ডায়মান যুবককে শরীরে হুমায়রার লম্বা হিজাবের দোলায়। যুবক মুচকি হাসলো। বিরবিরিয়ে আওরালো,
“তোমার ওই তেজে এই নিষ্পাপ যুবক সেই কবেই ঝলসে গিয়েছে সে খবর রাখো নিষ্টুর যুবতি? তোমার প্রেমে এমন মাতোয়ারা হয়েছি যে, পূর্বের আমির সাথে বর্তমানের আমির কোন মিল খুজে পাই না! কি জাদু করেছো পাখি?”

শব্দ করে ফোন বেজে উঠল তার, পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরল! ওপাশ থেকে কি বলল কে জানে! শুধু তাকে বলতে শোনা গেল,
“তোরা থাক আমি দু মিনিটেই আসছি।”
বলেই আর দাড়ালো না, বাইকে চেপে সেকেন্ডেই ধুলো উড়িয়ে জায়গা প্রস্থান করল প্রেমে পাগল অতীব সুদর্শন যুবকটি। তার এই মুচকি হাসিটুকু কোন রমনীর চক্ষুগোচর হলে র্নিঘাত প্রেমে পড়ে যেত। কিন্তু, নিষ্ঠুর হুমায়রা তাকে বুঝছে না! কবে বুঝবে আল্লাহ্ ভালো জানেন!
_______________________________
হুমায়রা অষ্টাদশি কন‍্যা, স্বদ‍্য যৌবন প্রাপ্তা রমনী। মা-বাবার আদরের এবং বড় সন্তান। এইচএইসসি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।

আর হুমায়রার পথ আটকে রাখা যুবকটা আর কেউ না এক ব‍্যর্থ প্রেমিক। যে রোজ তার ভালোবাসার কথাগুলো গোছালো, অগোছালো ভাবে ব‍্যাক্ত করেই যাচ্ছে কিন্তু, নিষ্ঠুর হুমায়রা পাত্তা দিচ্ছে না। বড়ই বেদনার!

সে পণ করেছে হুমায়রাকে রাজী করিয়েই ছাড়বে। জীবনের প্রথম অনুভূতি তার হুমায়রা পাখি, হাল না ধরে কি ছেড়ে দেওেয়া যায়। তাই সে দুনিয়ার সব একদিকে এবং তার পাখিকে পটানোর চিন্তা একদিকে রেখে এগিয়ে চলছে। দেখা যাক সে কতটা সফল হতে পারে..!

এই এলাকার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হেমন্ত হুমায়ুন। নামটা কিছুটা সেকেলে কিন্তু তার আম্মাজান একসময় হুমায়ুন আহমদের দারুণ ভক্ত ছিলেন তাই, একমাত্র ছেলের নামের সাথে হুমায়ুন নামটা জুড়ে দিয়েছে। সে এবার মাস্টার্স ২য় বর্ষে পড়াশোনা করছে। ভার্সিটির সিনিয়র ব‍্যাচ।

বিকালে হুমায়রার প্রাইভেট থাকে আইসিটি বিষয়ের। তাই তার প্রাইভেট পড়ে বাড়িতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। সে বাসায় গিয়ে বোরকা, হিজাব খুলতে খুলতে মাগরীবের আযান দিয়ে দেয়।

দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী হুমায়রা আসরের নামাজটা আযানের আগেই পড়ে! ওয়াক্ত তো আগেই হয়ে যায় কিন্তু আযানের সাথে নামাজ পড়তে গেলে প্রাইভেট যেতে আবার দেরি হয়ে যায়। তারপর মিনিট দশেক হাটার পরে বান্ধবী রিতু আর মাহীর দেখা মিলে! আরও মিনিট পাচেঁক পথ অতিক্রমে প্রাইভেট সেন্টারে পৌছায়।

তিন রাস্তার মোর বাধে তিন বান্ধবী তিনদিকে রওনা দেয়। তিনজনের বাসা তিনদিকে। হুমায়রার একা আসতে হয়। আর প্রায় সন্ধা সন্ধা হয়ে আসাই রাস্তায় জনমানবের অস্তিত্ব কমে আসে।রাস্তার এক পাশে পার্ক অপরপাশে আম বাগান। সেই আম বাগানের একপাশে ঘাপটি মেরে থাকে হেমন্ত হুমায়রার আগমনের। যদিও এটা হুমারার ধারণা। কারণ, হেমন্ত রাজার ন‍্যায় বাইকের উপর বা ঝুলিয়ে বসে আর হাতে চাবি নাড়িয়ে চলে অনবরত। কখনও বা সাথে ছোট ভাইদের রাখে।

অংকে হুমায়রা বড্ড কাঁচা। আজ আইসিটির ৩য় অধ‍্যায়ের “সংখ‍্যা পদ্ধতি ও ডিজিটাল ডিভাইস” থেকে অংক স‍্যার করতে দিলে পারেনি সে। স‍্যার শক্ত কন্ঠে দু চারটে বকা এবং সর্তক করতেও ভুলেননি। সেই থেকে হুমায়রার মুখ থমথমে হয়ে আছে। মেজাজ আজ বহু ডিগ্রী উপরে অবস্থান করেছে তার। তারপর আবার হেমন্ত আপদ।

তাই তো ক্রোধের বশে শক্ত কন্ঠে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। যদিও এ নিয়ে অপরাধ বোধ বা সামান্য খারাপ লাগার ছিটে ফোটাও নেই হুমায়রার।
হেমন্তর ওপর রাগ ঝেরে শান্তি লাগছে এখন। বিন্দাস মুডে বাড়ির পথে হেলেদুলে হেঁটে চলছে সে।
______________________________

#প্রাপ্তি__(০১)
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি (লেখনীতে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here