প্রিয়ন্তিকা পর্ব -০১

|১|
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভীষন জনপ্রিয় ছাত্রমুখ মাহতিমের গালে চপাট করে এক থা”প্পর বসিয়ে দিয়ে ক্রোধে কেঁপে উঠল প্রিয়ন্তি। মাহতিমের উজ্জ্বল রঙের গাল র’ক্তবর্ণ ধারণ করেছে। ব্যথা পেয়েছে নিশ্চিত। অথচ সবাইকে অবাক করে রেখে মাহতিম গালে হাত রেখে মৃদু স্বরে হেসে উঠল। প্রিয়ন্তির চোখের ভেতরখানাতে প্রবেশ করে ফেলার ন্যায় প্রবল মনোবাঞ্ছা নিয়ে বলল,

‘ সবসময় থা”প্পর না দিয়ে মাঝেমধ্যে চুমু দিলেও তো পারো, প্রিয়ন্তিকা। ‘

প্রিয়ন্তি তুমুল ক্ষোভে কেঁদে ফেলল এই বুঝি। এ নারী রাগ সহ্য করতে পারে না একদম। রাগ হলে চোখের কার্নিশে টলমল করে উঠে জলের চিহ্ন। ফোলা গাল দুটো র’ক্তের রঙে রাঙা হয়ে যায়। রূপবতী মেয়েদের রাগলে দারুন লাগে। প্রিয়ন্তির বেলায় যেন সেই আগুন রূপ উপচে পড়ে। তাই তো মাহতিম একবার নয়, বারবার প্রিয়ন্তিকে রাগিয়ে তোলে। প্রিয়ন্তির রাগান্বিত চেহারা মাহতিমের দ্বিতীয় পছন্দ। প্রথম পছন্দের কথা মাহতিম প্রিয়ন্তিকে বলে না কখনো। লুকিয়ে রাখে। নাহলে প্রিয়ন্তি লজ্জায় আর সামনে আসবে না মাহতিমের। লজ্জায় মাটির গর্ভে মুখ লুকাবে নিশ্চিত! মাহতিম হেসে উঠে নিজের লাগামহীন কল্পনায়! প্রিয়ন্তি এগিয়ে আসে। হাতের মুঠোয় মু’চড়ে ধরে মাহতিমের শার্টের কলার। মাহতিম ঘাড় সামান্য কাত করে প্রিয়ন্তির হাতের ভাঁজে ডুবে থাকা নিজের নতুন ইস্ত্রি করা শার্টের দিকে চায়। অতঃপর মৃদু হেসে বলে,

‘ ইস্ত্রি করা শার্ট। একটু আস্তে ধরো। ভাঁজ নষ্ট হয়ে যাবে, প্রিয়ন্তিকা। তুমি যদি নিজ হাতে আবার ইস্ত্রি করে দিতে চাও, তাহলে আরো নষ্ট করতে পারো। কোনো সমস্যা নেই। ‘

প্রিয়ন্তি রাগের ধকল আর সইতে পারছে না। সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। প্রিয়ন্তি সোজা মোদ্দা কথায় এলো। চোখ খিঁচে রাগ নিয়ে বলল,

‘ ঐ ছেলেদের মে’রেছ কেন? বারবার আমার লাইফে কেন ইন্টারফেয়ার করো? আমি তোমায় অনুমতি দিয়েছি আমার লাইফে প্রবেশ করার? তবুও কেন নিজের এই ফালতু অধিকারবোধ নিয়ে বারবার আমার সামনে এসে দাঁড়াও? ‘

মাহতিমের ভেতর ভেতর রাগে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। অথচ সে কেমন স্বাভাবিক হেসে যাচ্ছে। অথচ মাহতিমের রাগ পানি মানে না। রাগে চারপাশ ল’ন্ড’ভন্ড করে দেবার রেকর্ড আছে তার। তাই পরিবারের লোকেরা সবসময় মাহতিমের রাগ সম্বন্ধে সচেতন থাকে। তার আশেপাশের মানুষ এমন কিছু করে না, যে কারণে মাহতিমের রাগের তা”ণ্ডব শুরু হয়। অথচ প্রিয়ন্তির বেলায় মাহতিম একদম স্বচ্ছ পানির ন্যায়। কোমল, শান্ত এবং হাস্যোজ্জ্বল। মাহতিম চাইলেও প্রিয়ন্তির উপর নিজের রাগ ঝাড়তে পারে না। সে শক্তি বোধহয় আল্লাহ মাহতিমকে দেন নি। প্রিয়ন্তি কাছে এলে মাহতিমের হাত পা কাঁপে। মনের ভেতর তু”ফান শুরু হয়ে যায়। শরীরের লোমকূপ উত্তেজনায় সোজা হয়ে যায়। কথাগুচ্ছ কেমন যেন এলোমেলো, বি”ধ্বস্ত হয়ে পরে। বিধাতা বোধহয় মাহতিমের মধ্যে প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসার ক্ষমতা দিয়েছেন, অথচ রাগ করার এতটুকু ক্ষমতা দেন নি। তাই তো প্রিয়ন্তীর বেলায় মাহতিমের যত বেহায়াপনা, আহ্লাদীপনা! প্রিয়ন্তি মু’চড়ে ধরা কলার হাতের ভাঁজে আরো একটু শক্ত করে ধরে। মাহতিমের ধ্যান ভেঙে যায়। প্রিয়ন্তি বলে,

‘ তুমি যে কাজ করলে ভালো করলে না। যাদের মেরেছ, জানো তারা কে? এ কলেজের নেতা সদস্য। ওদের দলনেতা আমাকে শা’সিয়েছে। তোমার কারণে যদি ওদের কেউ আরো একবার আমাকে শা’সায়, তবে তোমার কলার আমি টেনে ছিঁ”ড়ে ফেলব। মনে রেখো। ‘

প্রিয়ন্তি মাহতিমের কলার ছেড়ে দেয়। প্রিয়ন্তির এখনের কথা শুনে মাহতিমের ভ্রু বাজেভাবে কুঁচকে গেছে। সে প্রিয়ন্তির হাত টেনে ধরে। প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে চায়। মাহতিম শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,

‘ কে শা”সিয়েছে? নাম বলো তাদের। ‘

প্রিয়ন্তি নিজের হাত জোড়পূর্বক মাহতিমের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলে,

‘ কেন? যাতে তুমি এদের আরো মা”রতে পারো? তুমি না জীবনে শুধরাবে না মাহতিম! তোমার থেকে শুধরানোর আশা করা আমার সবচে বড় ভুল! তুমি কি ভেবেছ, তুমি এই মা”রপিট করে কি আদৌ আমার ভালোবাসা পেয়ে যাবে বলে মনে করো? কখনো না। আই হেইট ইউ, আই জাস্ট হেইট ইউ। ‘

মাহতিম মৃদু হেসে বলে,

‘ আই লাভ ইউ টু। ‘
‘ অসহ্য! ‘

প্রিয়ন্তি বিড়বিড় করে কিছুক্ষণ মাহতিমকে গা’লাগা’লি করে ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেল ক্যাম্পাস ছেড়ে। মাহতিমের রাগ কমেনি। বরং বেড়ে মস্তিষ্কের উপর চড়ে গেছে। ওই শালার বাচ্চারা প্রিয়ন্তিকাকে শা”সিয়েছে? তার প্রিয়ন্তিকাকে? এদের কলিজা কত বড় হয়েছে, দেখতে হচ্ছে। শালাদের মে”রে মাটিতে পুঁ”তে না দিয়েছে, তবে তার নাম মাহতিম ইয়াদ না। মাহতিম নিজের মুখমন্ডল দুহাতে ঘষে আড়চোখে আশেপাশে তাকাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই বেশ উৎসুক চোখে মাহতিমের দিকে চেয়ে আছে। যেন ভীষন মজা পেয়েছে তারা। মজার বিষয় হবে না কেন? সবসময় আলাদা ভাব নিয়ে রাজা হয়ে চলা মাহতিমের গালে কেউ থা”প্পর দেবার সাহস করেছে, তাও সে একজন কি না মেয়ে! মেয়ে কেইস মাহতিমের বেলায় বড্ড অসম্ভব বলে জানত এতদিন। অথচ আজ সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দিল প্রিয়ন্তি নামের এক সাধারণ মেয়ে। মাহতিম দর্শকের দিকে চেয়ে বলল,

‘ সার্কাস হচ্ছে এখানে? যাও নিজের কাজে যাও। ‘

মাহতিমের কথা শুনে সবাই ভয়ে সুরসুর করে যার যার ব্যাগ, ছাতা হাতে নিয়ে কেটে পরল সে জায়গা থেকে। মাহতিম পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেটে জ্বা”লালো। সেটায় সুখ টান দিতে দিতে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেল। প্রিয়ন্তিকে শা”সানো ছেলেদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে হচ্ছে। এরা কারা? এদের মা’রলে কতো কেজি হাড্ডি পাওয়া যাবে, রক্তের ঘনত্ব সব পরখ করতে হবে। তার প্রিয়ন্তিকার চোখে চোখ রাখার সাহস এদের চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে।
_______________________________
‘ তুই আসলেই বিরাট গর্দভ, প্রিয়। ছেলেটা তোকে ভালোবাসে। ওকে এভাবে সবার সামনে অপমান না করে তোর চলে নি? ‘

নিপা বেশ বিরক্তি নিয়ে বলল। তার খারাপ লেগেছে প্রিয়ন্তির ব্যবহার। আজকাল সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া অর্থাৎ বালুর মধ্যে সূঁচ খুঁজে পাওয়া। এ শহরের সবাই মিথ্যা ভালোবাসতে জানে। সত্যি ভালোবাসা কজনের কপালে জুটে? সত্যি ভালোবাসাকে আগলে রাখতে হয়! নাকি প্রিয়ন্তির মত পায়ে ঠেলে দিতে হয়? প্রিয়ন্তি হচ্ছে পৃথিবীর সবচে বোকা এবং নির্বোধ মেয়ে। তাকে দিনরাত থা”প্পড় দিয়ে ভালোবাসার সংজ্ঞা বুঝালেও সে বুঝবে কি না সন্দেহ। প্রিয়ন্তির রাগ এখনও কমে নি। সে বলল,

‘ হ্যাঁ, তোদের কথামত তার কোলে গিয়ে বসে থাকি। পা ধরে বলি, জনাব তুমি আমায় ভালোবেসেছ বলে আমি ধন্য। এমন ভালোবাসা আমি সাত জনম তপস্যা করেও পেতাম না। এখন আমার কি করা উচিৎ, বলো। তোমার পা ধরে বসে থাকব নাকি তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী চুমু খাব? এটাই বলা উচিত ছিল আমার? ওই ছেলেকে আমি দু চোখে দেখত পারিনা। ও আমায় ভালোবেসেছে। এটা নিশ্চয়ই আমার দোষ না। আমি বলিনি ভালোবাসা খারাপ। কিন্তু ভালোবেসে বেহায়ামির একটা লিমিট আছে। সে সেই লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। ‘

নিপা আর কথা বলল না। কারণ প্রিয়ন্তির এখন রাগের মেজাজ। মেজাজ ঠিক হতে সময় দেওয়া উচিৎ তাকে। রাগ কমলে নিজেই বুঝতে পারবে। তবে আদৌ বুঝবে তো? সেটাই সন্দেহ! কারণ মাহতিমকে প্রিয়ন্তি কত অপছন্দ করে এটা প্রিয়ন্তির সকল বন্ধুরাই জানে। প্রিয়ন্তিকে এ নিয়ে অনেক বুঝিয়েছে তারা। তবে প্রিয়ন্তি কারো কথা শুনতে নারাজ প্রায়। এখন তাই নীপা এবং বাকিরা বুঝানোর চেষ্টাও করে না। কি লাভ অপাত্রে জল ঢালার। মাহতিমের
জন্যে মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে। সে কি দুর্ভাগ্য নিয়েই না জন্মেছে। ভালোবেসেছে এক পাষাণ হৃদয়ের নারীকে। যার মনে ঘৃ’ণা ব্যতীত আর কোনো অনুভূতি নেই।

#চলবে
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here