প্রিয়ন্তিকা পর্ব -১১+১২

#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১১|

বইপোকা লাইব্রেরীর সামনে এসে রিকশা থামে। প্রিয়ন্তি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটায়। এদিক ওদিক চেয়ে খুঁজে চলে মাহতিমকে। মিনিট খানেক পরই মাহতিমের মোটরসাইকল এসে থামে প্রিয়ন্তির ঠিক বরাবর। প্রিয়ন্তি দু কদম পিছিয়ে যায়। মাহতিম সজোড়ে ব্রেক কষে শুধরানোর ভঙ্গিতে বলে,

‘ ওহ, সরি,সরি। ব্যথা পেয়েছ কোথাও? ‘

প্রিয়ন্তি চোখ পাকিয়ে তাকায়। জামার নিচের ভাগ থেকে ধুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে বলে,

‘ না। শুধু মনে হয়েছে বালতি করে ধুলো ছিটিয়েছ। ‘

মাহতিম মৃদু হাসে। মোটরসাইকেল পার্কিং স্থানে রেখে নেমে দাড়ায়। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলে,

‘ প্রেমের ধুলো ছেটানোর চেষ্টা করেছিলাম বটে। তবে কই! আমাতে অন্ধ হলে না তো। ‘

‘ কখন হবও না। ‘

‘ হলে কি হয়? গায়ে ফোসকা পড়ে? আমি মানুষটা এতটাও খারাপ না। ট্রাই করে দেখতে পারো। ‘

মাহতিমের কথা শুনে প্রিয়ন্তি চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ঘৃণায় গা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে যেন। বলে,

‘ ছিঃ, ট্রাই করবে মানে? ‘

মাহতিম প্রিয়ন্তির কথার অর্থ বুঝতে পেরে যায় ক্ষনিকেই। ভুল জায়গায় সে ভুল কথা বলে ফেলেছে। প্রিয়ন্তি এসব ডিপ্লোম্যাটিক কথাবার্তায় ভীষন সেনসেটিভ। কখন কোন কথার কোন অর্থ বের করে ফেলে, বোঝা মুশকিল। এই যে এখন এক সাধারণ কথার অদ্ভুত অর্থ বের করে ফেলল! এসব ভেবে কিন্তু মাহতিম কথাটা বলেনি। মাহতিম থেমে যায়। প্রিয়ন্তির দিকে ফেরে দ্রুত বলে,

‘ আরে, আমি সেটা মিন করে বলিনি। ওকে, না বুঝে বলার জন্যে সরি। আর বলব না। এবার যাওয়া যাক। ‘

মাহতিম বড্ড করুন স্বরে সরি বলল। পুরো ঠোঁট উল্টে, মাথার চুল চুলকে, অসহায় ভঙ্গিতে মাহতিমের কথা বলার ধরন দেখে না চাইতেও হেসে ফেলল প্রিয়ন্তি। মাহতিম কেমন মাতাল চোখে সে হাসির পানে চেয়ে থাকল। মাথা ঝিম ধরে গেল। পায়ের পাতা মুচড়ে যেতে চাইল। হাত কাপছে স্পষ্ট লক্ষ্য করছে মাহতিম। মাহতিম কেমন করা চোখে নির্দ্বিধায় চেয়ে থাকল প্রিয়ন্তির হঠাৎ ফলিং স্টারের ন্যায় উদিত হওয়া হাসির পানে। মাহতিমের এমন নেশা নেশা চাওনি লক্ষ্য করতে পেরে প্রিয়ন্তি থতমত খেয়ে গেল। চট করে হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। ইতি ওতি চেয়ে বলল,

‘ দেরি হচ্ছে, চলো। ‘

মাহতিম মাথা নত করে দুবার ঝাঁকাল। স্বাভাবিক হবার ক্ষুদ্র চেষ্টা। পরিস্থিতি বড্ড বিদঘুটে ঠেকল। ক্ষুব্ধ অনুভূতির গন্ধ ছড়াল মনের আনাচে-কানাচে। মাহতিম বড়বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে হাত দিয়ে ইশারা করে সামনে,

‘ ল্যাডিস ফার্স্ট। ‘

প্রিয়ন্তি মাহতিমের এসব নাটক দেখে মুখ ভেংচায়। তবে অযথা কথা বাড়ায় না। এগিয়ে যায় সামনে। মাহতিম দ্রুতপদে প্রিয়ন্তির পাশে এসে হাঁটে।

লাইব্রেরীতে প্রিয়ন্তি বই দেখছে। কি কিনবে, লিস্ট করে এনেছে। দোকানদারকে বইয়ের নাম বলেছে। দোকানদার সেলফে বই খুঁজছে। মাহতিম এতক্ষণ শুধু ফাঁকফোকর খুজেছে কথা বলার। প্রিয়ন্তি এবার নিজে থেকেই কথা তুলল,

‘ কিছু বলবে বলেছিলে। বলো, শুনছি। ‘

মাহতিম এতক্ষণে আকাশের চাঁদ হাতে পায়। সহসা হেসে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘ বললে রাগ করবে না তো? ‘

প্রিয়ন্তি স্পষ্ট কণ্ঠে বলে,

‘ রাগের কথা বললে অবশ্যই রাগ করব। ‘

মাহতিম ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। মাহতিমের কথায় প্রিয়ন্তি রাগ করবে না, এটা তো রীতিমত আকাশ কুসুম চিন্তাভাবনা। প্রিয়ন্তি রাগ করবে, অবশ্যই রাগ করবে। প্রিয়ন্তির রাগকেও মাহতিম ভালোবাসবে। প্রিয়ন্তি রাগ করে বলেই তার ব্যক্তিত্ব মাহতিমের এত পছন্দ। এতদিন অবশ্য প্রিয়ন্তির রাগ সহ্য করার ক্ষমতা মাহতিমের
হয়ে গেছে। মাহতিম মাথার ঘন চুল খামচে ধরে। ভীষন নার্ভাস লাগছে। প্রিয়ন্তিকে কথাটা বলা ঠিক হবে কি না, প্রিয়ন্তি যেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, আবার না চ”ড় মেরে বসে। উফ! মাথা ধরছে মাহতিমের। প্রিয়ন্তি মাহতিমকে উশখুশ করতে দেখে নিজেই কথা বলে,

‘ পানি খাবে? ঘেমে যাচ্ছ। ‘

মাহতিম চট করে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলে। অতঃপর নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে চোখ মুখ বন্ধ করে ঝটপট বলে ফেলে,

‘ আমরা দুজন কি বন্ধু হতে পারি? ‘

প্রিয়ন্তির ভ্রু চপাট করে কুঁচকে যায়। বিস্ময় সহ্য করতে না পেরে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে উঠে,

‘ কি? ‘

মাহতিম চোখ খুলে। অসহায় ছেলেটির ন্যায় ঠোঁট উল্টে বলে,

‘ প্রেমিকা না হও, ভালো বন্ধু হতে তো দোষ নেই! তাছাড়া বন্ধু হলে আমি এসব পাগলামি আর করব না। কথা দিচ্ছি। তোমাকে পুরোটা না পাই, কিছুটা পেলেই আমি খুশি। প্লিজ প্রিয়ন্তিকা, এবার অন্তত ফিরিয়ে দিও না। ‘

প্রিয়ন্তি নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে মাহতিমের দিকে চোখ সরু করে চায়। মাহতিম একবুক আশা নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ,

‘ বন্ধু হলে এসব পাগলামি করবে না, সত্যি তো? ‘

‘ হ্যাঁ, তিন সত্যি। ‘

‘ এই যে বললে, কদিন পর সেটা ভুলে যাবে নাতো? ‘

‘ একদম না। ‘

‘ আমার আরেকটা শেষ শর্ত আছে। বন্ধু হলে সারাক্ষন ভালোবাসার নামে আমাকে অপ্রস্তুত করতে পারবে না। ‘

‘ এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে ভালবাসতে মানা করলে আমি শুনতে চাইলেও পারব না। ইউ আর ম্যাই অ্যাডিকশন, না? ‘

‘ ভালোবাসবে। তবে মনে মনে। বারবার কানের সামনে ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে প্যানপ্যান করতে পারবে না। ‘

মাহতিম চোখ বুজে শ্বাস ফেলল। অতঃপর চোখ খুলে হতাশ ভাবে বলল,

‘ ঠিকাছে, আমি রাজি। এবার বন্ধু হয়ে যাও, প্লিজ। ‘

প্রিয়ন্তি আবারও কিছু একটা ভাবল। অতঃপর বলল,

‘ ঠিকাছে, হলাম। ‘

মাহতিমের খুশি আর দেখে কে? মৃদু স্বরে জয়ী শব্দে চেঁচিয়ে উঠে। প্রিয়ন্তি দ্রুত মাহতিমকে সতর্ক করার ভঙ্গিতে বলে,

‘ আরে আস্তে, আস্তে। লাইব্রেরী এটা। ‘

মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে চুপ হয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে,

‘ সরি, মনে ছিল না। খুশী প্রকাশ করতে চেঁচিয়ে ফেলেছি। আর চেঁচাব না, প্রমিজ! ‘

প্রিয়ন্তি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বই কেনায় মন দিল। বই কিনে বইয়ের ভারী ব্যাগ হাতে নিলে মাহতিম সেটা জোড়পূর্বক নিজের হাতে নিয়ে নেয়। প্রিয়ন্তি দেখে। তথাপি কিছু বলে না। ছেলেটা খুশিতে পাগল হয়ে গেছে। চোখে মুখে খুশী উপচে পড়ছে। ভালো লাগছে দেখতে।

প্রিয়ন্তি রিকশা নিতে চায়। কিন্তু মাহতিম বাঁধা দেয়। বলে,

‘ আমার বাইক থাকলে রিকশা কেন? আমি সসম্মানে বাসায় পৌঁছে দেব তোমায়। ‘

প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। অতঃপর বলে,

‘ বাইক চালানোর সময় ডিসটেন্স রাখবে। মনে থাকে যেন। ‘

‘ হ্যাঁ, রাখব, রাখব। চলো তো এখন। ‘

মাহতিম প্রিয়ন্তিকে টেনে নিয়ে যায় মোটরসাইকেলের দিকে।

মাহতিম সত্যি মোটরসাইকেল চালানোর সময় বেশ দূরত্ব রেখেছে দুজনের মধ্যে। প্রিয়ন্তি এতে বেশ প্রসন্ন হয়েছে। মাহতিম একবার বলেছে, তার পিঠে ধরার জন্যে। নাহলে বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে প্রিয়ন্তি শুনেনি সে কথা। মাহতিমও আর জোড় করে নি। প্রিয়ন্তি যেভাবে চাইছে, সেভাবেই থাকুক না। আজ যা পেয়েছে, তাতে মাহতিম বড্ড সুখ সুখ অনুভব করছে।

ভাবনার মধ্যে হঠাৎ সামনে গাড়ি চলে আসে। মাহতিম সঙ্গেসঙ্গে ব্রেক কষে। বাইকের হঠাৎ ব্রেক কষায় প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত হয়ে খামচে ধরলো মাহতিমের শার্টের কাঁধের অংশ। অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রিয়ন্তির পাতলা ঠোঁট এসে ঠেকল মাহতিমের গালের খোঁচা দাড়িতে। মাহতিম এবং প্রিয়ন্তি দুইজনেই হতভম্ব হয়ে পরল। মাহতিমের মুখ ‘হা’ আকৃতি ধারণ করেছে। সে চোখ বড়বড় করে সামনে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ন্তি নিজেও বড্ড অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। কানের পেছনে চুল গুজে সোজা হয়ে বসে রইল। বুকের ভেতর অস্থির বোধ হচ্ছে। কি এক বিব্রতকর পরিস্থিতি! ইশ! চুমু তাও কি না সোজা গালে? উফ! লজ্জায়, অপমানে ম”রে যেতে ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তির।

মাহতিমের বিস্ময় ভাব কেটে উঠল ক্ষণিকেই। সে ঠোঁট কামড়ে ধরে কৌতুক স্বরে বলল,

‘ পিঠ জড়িয়ে ধরতে বলেছিলাম শুধু। আর তুমি কি না সোজা চুমু খেয়ে বসলে, প্রিয়ন্তিকা? ইশ! বুকের ভেতর ছটফট করেছে যে। লোভ বাড়িয়ে দিলে কেন? এমনিতেই তোমাকে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আবার আজকে নিজে থেকে চুমু খেলে? কেন? মারার প্ল্যান করছ নাকি? ‘

প্রিয়ন্তি লজ্জায় বোধ হল মাটির সঙ্গে মিশে যায়। প্রিয়ন্তি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই সে বলল,

‘ প্রমিজ ভাঙচ তুমি। তোমার এই ফালতু বাইক থামাও। আমি আর যাব না এটায় করে। থামাও বলছি। ‘

মাহতিম বাইক থামালো না। বরং টিপ্পনি কেটে বলল,

‘ এখন সব দোষ আমার বাইকের? নিজেই তো চু…’

‘ চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথা বললে এক্ষুনি লা”থি দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দেব। ‘
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১২|

মাহতিম বাদাম খাচ্ছে। একটা একটা বাদাম হাতে তুলে আকাশের দিকে ছুঁড়ে ফেলে আবার মুখ দিয়ে সেটা ক্যাঁচ করে নিচ্ছে। ওয়াহিদ অলস ভঙ্গিতে পাশে বসে আছে। হঠাৎ হঠাৎ বিরক্তপূর্ণ চোখে মাহতিমের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা আওড়াচ্ছে। মাহতিমের নজরে ওয়াহিদের ভাবভঙ্গি সব চোখে পরছে। অথচ সে কেমন নিশ্চুপ হয়ে বাদাম খেলা উপভোগ করছে। ওয়াহিদ একসময় বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ প্রিয়ন্তিকে বন্ধু বানিয়ে সকল রাস্তা তুই বন্ধ করে দিলি? ওই মেয়ে তোকে বস্তা ভরে শর্ত দিল আর তুইও সব মুখ বুজে মেনে নিলি? গাধা তুই? ‘

মাহতিম শেষবারের ন্যায় বাদাম খেলে মুখে নিয়ে চিবুতে লাগল। মাহতিমের মোটরসাইকেলে তেল ভরা হচ্ছে। মাহতিম সেদিকে একবার চেয়ে আবারও মুখ ফেরাল ওয়াহিদের দিকে। অতঃপর মৃদু হেসে বলল,

‘ প্রিয়ন্তিকাকে কাছে টানার এর চেয়ে ভালো প্ল্যান মাথায় আসেনি। ‘

‘ তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিচ্ছিস না কেন? ‘

‘ কয়বার বলেছি, এমন করলে প্রিয়ন্তিকার মনে আর কখনোই জায়গা করতে পারব না। মেয়েটা আমাকে দেখলেই ঘৃণায় বমি করে বসবে।’

‘ বমি করুক। প্রেম করতে পারিস আর বমি পরিষ্কার করতে পারবি না? ‘

‘ ধুর শালা। বিষয়টা এমন না। আমি বমি বলতে ঘৃণার অতিরিক্ত পরিমাণ বুঝিয়েছি। ‘

‘ হ, আমার আর পরিমাণ বুঝে কাজ নেই। তোর প্রেমের পাগলামি দেখলে দেখবি আমি কোনদিন তোর মুখে বমি করে দিয়েছি। ওই মেয়ে তোকে ডিজার্ভই করে না। শুন, আমার কাছে একটা মেয়ে আছে। দেখতে খুব সুন্দর। প্রিয়ন্তির মত আগুন রাগ নেই। তোর সঙ্গে ভালো মানাবে। ট্রাই করবি? ‘

মাহতিম বাদাম খাওয়া বন্ধ করে ওয়াহিদের দিকে সূক্ষ চোখে তাকাল। ভেতর ভেতর রাগে ফুসে উঠছে সে। তবুও বেশ শান্ত স্বরে বলল,

‘ কি বললি? প্রিয়ন্তিকার মত রাগ নেই? ‘

‘ না, একদম শান্ত শিষ্ট মেয়ে। এককথায় শান্তির মা। ‘

মাহতিম আবার বাদাম খেতে লাগল। বাদামে টুকুর-টাকুর আওয়াজ করে দাঁত বসাতে বসাতে বলল,

‘ মামা, তাহলে হচ্ছে না। আমি প্রিয়ন্তিকার আগুন আগুন রাগকেই বেশি ভালোবাসি। উফ! ওর রাগী চেহারা একবার দেখলেই আমার হার্টবিট মিস করে। ওসব তুই বুঝবি না। কারণ তুই একটা আনরোমান্টিক গর্দভ। ‘

ওয়াহিদ ক্ষেপে গেল। বসা থেকে দাড়িয়ে মাহতিমের চোখে চোখ রেখে বলল,

‘ আমি আনরোমান্টিক? নিপা যদি আজ আমার হইত তাহলে আমি আর ও এতদিনে বিয়ে করে বাচ্চার মা বাবা হয়ে যাইতাম। তুই কি করসস ভালোবেসে? শুধু চড় থাপ্পড়ই খাইলি সারাজীবন।’

মাহতিম কথা বলে না আর। ওয়াহিদকে কে বোঝাবে, প্রিয়ন্তিকার চড় থাপ্পড় খাবার অজুহাতে সে প্রিয়ন্তির হাতের ছোঁয়া পায়। এটাই বা কম কিসের?

‘ ভাই, তেল ভরা শেষ। ‘

পেছন থেকে কথাটা শুনে মাহতিম ওয়াহিদের কাধে হাত এক সেকেন্ডের জন্যে রেখে চলে যায় সামনে। তেলের টাকা দিয়ে ওয়াহিদকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে বসে। ওয়াহিদ ঠিকঠাক বসতে বসতে বলে,

‘ ভাই, এবার বাইক ঠিকঠাক মত চালাইস। পায়ের ভাঙ্গা হাড় এখনও ভালো করে জোড়া লাগে নাই। ‘

মাহতিম কথাটা সম্পূর্নই অগ্রাহ্য করে বলে,

‘ ওয়াহিদ, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?’

‘ কেন, বাসায়। ‘

মাহতিম মৃদু হাসে। বলে,

‘ না, আমরা এখন পেটাতে যাচ্ছি। লিমনের লোকেদের ধরে রেখেছি একজায়গায়। এদের পিটিয়ে লিমনের সকল ইনফো বের করে মেন্টালি টর্চার করব একে। অনেক হয়েছে মারামারি, আর প্রতিশোধ। এখন এমন করে টর্চার করব যেন শালার বাচ্চা আর কাউকে মুখ ফুটে বলতে না পারে কিছু। কিছু করা তো দূরের কথা। ‘

ওয়াহিদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। মাহতিকের উদ্দেশ্য বুঝতে এটুকু বিলম্ব হল না ওয়াহিদের।

সেদিনের কথা ভুলেনি মাহতিম। লিমনকে শান্তি দেবে সে। তবে মাঝপথে প্রিয়ন্তির শর্তের কথাও মাথায় রেখেছে সে। মাহতিম ভেবে রেখেছে, এখন থেকে এমনভাবে কাজ করবে যেন সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে। মাহতিম প্রিয়ন্তির আড়ালে সকল মারামারি করবে। কিন্তু প্রিয়ন্তি জানতেও পারবে না কে করেছে এসব। মাহতিম নিজের অকল্পনীয় বুদ্ধিতে নিজেই গর্বিত। আজকাল প্রিয়ন্তির ভালোবাসা তাকে বুদ্ধিমান করে দিচ্ছে। প্রিয়ন্তির ভালোবাসায় নিশ্চয়ই ম্যাজিক আছে।
________________________________
সম্পূর্ন নীরব এক রাস্তা বেছে নিয়েছে মাহতিম। সেই রাস্তার মধ্যে চারজন উঠতি বয়সী ছেলেকে বাঁশ দিয়ে পে’টাচ্ছে। অদূরে ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে সঙ্গেসঙ্গে ‘চিকু, চিকু, চিকু ‘ বলে সাংকেতিক আওয়াজ করবে সে। যেন মাহতিম আওয়াজ শুনলে সতর্ক হয়ে যেতে পারে।

ছেলেগুলোকে ভীষন নির্দয় হাতে একের পর এক বাশের আঘাত করে যাচ্ছে মাহতিম। মাহতিমের গৌড় বর্নের চেহারা রাগে রক্তিম। কাপছে তার প্রশস্ত দেহ। হাত চলছে ক্রমাগত। ছেলেগুলোকে মেরেও তার শান্তি হচ্ছে না। যখনই চোখের সামনে প্রিয়ন্তির গলার আঁচড়ের দাগ ভেসে উঠছে, আরো জোড়ে আঘাত করে বসছে সে। বাঁশ ফেলে এবার পা দ্বারা লাথি লাগল ছেলেদের। ছেলেরা বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছে। এমন দোষ আর করবে না বলে আকুতি জানাচ্ছে। মাহতিম ক্লান্ত হল একসময়। ছেলেদের শেষবারের ন্যায় পা কর্তৃক আঘাত করে রাস্তার ফুটপাথে বসে পড়ল। আঙ্গুল দিয়ে কপাল, গলার ঘাম মুছে আগুন চোখে চাইল রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ছেলেদের পানে।

ছেলেগুলো হামাগুড়ি দিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পরল মাহতিমের পায়ের উপর। মাহতিম তাদের দিকে তাকাল। ছেলেগুলো বলতে লাগল,

‘ আমরা প্রিয়ন্তি দিদিরে কিছু করি নাই, সত্যি কইতাছি দাদা। ওই লিমন ভাই এসব করেছে। আমরা নির্দোষ, দাদা। বিশ্বাস করেন। ‘

মাহতিম কিছুক্ষণ থেমে অতঃপর বলল,

‘ সত্য বলছিস প্রুভ করতে পারবি? ‘

ছেলেগুলো সঙ্গেসঙ্গে বলে উঠল,

‘ হ ভাই পারমু। কি করতে হবে কন। এক্ষুনি করে দিচ্ছি। ‘

‘ লিমনের কিছু ইনফো দিবি আমারে। ইনফো বলতে গোপন তথ্য। ‘

তারপরের অংশ মাহতিম ছেলেদের কানেকানে বলে দিল। ছেলেগুলোর মুখের রক্ত বোধ করি শুকিয়ে গেছে। তারা ঢোক গিলে বলল,

‘ ভাই, এমন নাউজুবিল্লাহ মার্কা কাজ করলে লিমন ভাই আমাদের ধইরা পিটিয়ে মাইরা ফেলবে। ‘

মাহতিম বাঁশ হাতে নেওয়ার ভান করে বলল,

‘ তাহলে লিমন কেন, আমিই মাইরা ফেলি? ‘

ছেলেগুলো পরল বিপাকে। কোনো উপায় না পেয়ে অগ্যতা বলল,

‘ করমু ভাই। আপনি যা বলবেন তাই করমু। আমাগো দুইদিন সময় দিয়েন। আমরা আপনারে সকল তথ্য জোগাড় কইরা পাঠাইতাসি। ‘

মাহতিম হাসে। বিজয়ের হাসি!

#চলবে
/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here