#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |৩২|
মাহতিম ইয়ান এক পাগলাটে প্রেমিকের নাম। মানুষটার সর্বস্ব জুড়ে একট মেয়ের নাম খোদাই করা ছিল। মেয়েটার চোখের দিকে একবার তাকালেই মাহতিম ইয়ানের মস্তিষ্ক থমকে যেত। মেয়েটার ঠোঁটের তিরতির কাপুনি তৃষ্ণার্ত করে তুলত মাহতিম ইয়ানের স্বত্বা। মাহতিম ইয়ান উন্মাদ ছিল প্রিয়ন্তি নামক মেয়ের তরে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা করে শেষ অব্দি জয় করেই নিয়েছে নিজের উন্মাদনাকে। আজ তাদের এক হবার দিন। মাহতিম বারান্দায় গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা। কেমন যেন সব অবিশ্বাস্য লাগছে। প্রিয়ন্তিকা আজ থেকে শুধুমাত্র মাহতিমের। মাহতিম যখন চাইবে, প্রিয়ন্তিকাকে মনখুলে ভালোবাসবে। প্রিয়ন্তিকাকে আগে ভালোবাসতে মাহতিমের জড়তা কাজ করত। এখন সেই জড়তার দুটো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রিয়ন্তিকা মনেপ্রাণে, ধর্মীয় ভাবে বৈধ হয়েছে মাহতিমের জন্যে। এই ব্যাপারটা যেন সব স্বপ্ন লাগছে তার কাছে। মাহতিম সিগারেট ধরাতে চাইল। কিন্তু পরমুহূর্তে প্রিয়ন্তির নারাজির কথা মনে করে সিগারেট ফেলে দিল। আজ থেকে মাহতিম সকল বদ অভ্যাস ত্যাগ করবে। কষ্ট হবে কিছুটা। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে দীর্ঘবছর বেচে থাকার জন্যে মাহতিম এই কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে নেবে। মাহতিমকে অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রিয়ন্তি ঘর থেকে বারান্দায় আসে। মাহতিমকে অন্যমনস্ক দেখে প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। লেহেঙ্গা সামলে এগিয়ে যায় তার দিকে। মাহতিমের কাঁধে হাত রাখতেই মাহতিম শেরওয়ানি হাতা দিয়ে চোখ মুছে দ্রুত পেছন ফেরে তাকায়। প্রিয়ন্তি নরম কণ্ঠে বলে,
‘ ঘুমাবে না? ‘
মাহতিম আগাগোড়া প্রিয়ন্তিকে দেখে। চোখ বুজে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে তাকায় প্রিয়ন্তির দিকে। তারপর বলে,
‘ আজ না ঘুমালে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে, প্রিয়ন্তিকা? ‘
প্রিয়ন্তি শুনে। মাহতিমের গভীর কণ্ঠে কথা শুনে কেঁপে উঠে মেয়েটা। প্রিয়ন্তি বলে,
‘ সারারাত সজাগ থেকে কি করবে? ‘
মাহতিম এগিয়ে আসে। দুহাতের আজলায় কোলে তুলে নেয় প্রিয়ন্তিকে। প্রিয়ন্তি আচমকা আক্রমনে ভয় পেয়ে খামচে ধরে মাহতিমের শেরওয়ানি কলার। মাহতিম প্রিয়ন্তির উন্মুক্ত কোমরে আঙ্গুল দিয়ে মৃদু চাপ দিয়ে বলে,
‘ সারারাত কাটানোর বেস্ট উপায় জানা আছে আমার। ‘
প্রিয়ন্তি কিছু বলবে তার আগেই মাহতিম ‘ শুসস..’ বলে উঠে। প্রিয়ন্তি চুপ করে যায়। মাহতিম নিজেদের রুমের দরজা খুলে উঁকি দেয়। বাইরে কেউ আছে কি না দেখে নেয়। বিয়ে বাড়ির মেহমান সবাই বাইরে বসে গল্প করছে। হয়ত আজ সারারাত তাদের গল্প চলবে। মাহতিম চিন্তায় পরে যায়। প্রিয়ন্তি অধৈর্য্য হয়ে বলে,
‘ দরজা খুললে কেন? কেউ আমাদের এরকম অবস্থাতে দেখলে লজ্জায় পরতে হবে। নামাও না আমাকে। ‘
মাহতিম কাউকে খুঁজে। একটু পর ভাবিকে পেয়ে যায়। চা নিয়ে এদিকেই যাচ্ছেন। মাহতিম ডাকে,
‘ ভাবি, ও ভাবি। ‘
নয়না পাশে তাকান। মাহতিমের কোলে প্রিয়ন্তিকে দেখে নয়না হা হয় যান। দ্রুত এদিকে এগিয়ে আসেন। মাহতিমের হাতের বাহুতে থাপ্পড় দিয়ে বলেন,
‘ নির্লজ্জ। বউ নিয়ে ঘরে ঢুক। যা করার দরজা বন্ধ করে কর। কেউ এভাবে তোদের দেখে নিলে..’
প্রিয়ন্তি লজ্জায় হতভম্ব। এই পাগল ছেলের জন্যে আরো কত কিছু যে সহ্য করতে হবে প্রিয়ন্তিকে। মাহতিম এসব শুনে না। সে নিজের মত করে বলে,
‘ ভাবি, রাস্তা খালি করে দাও। ছাদে যাব। ‘
নয়না প্রশ্ন করেন, ‘ এত রাতে ছাদে গিয়ে কি করবি? ‘
‘ ছাদে বাসর করব। উফ, ভাবি। এত প্রশ্ন কেন করছ। একটু হেল্প করো না। প্লিজ! এতসময় ওকে কোলে নিয়ে হাত ব্যথা করছে আমার। ‘
নয়না বুঝতে পারেন, মাহতিম কথা শোনার মত ছেলে নয়। মাহতিম কথা শুনেছে কখনো, এরকম রেকর্ড নেই আদৌ। সবসময় বেপরোয়া এই ছেলেকে নিয়ে বাসার সবাই বেশ ঝামেলা পোহায়। নয়না চোখ রাঙান মাহতিমকে। তারপর চায়ের ট্রে নিয়ে এগিয়ে যান বসার ঘরে। সবাইকে কি সব বলেন। শোনা গেল না। একটু পর সবাই যার যার মত করে নিজেদের ঘরে ঢুকে গেল। ঘরে ঢুকেই এদের গল্পের আসর আবার শুরু হয় গেল। সবার হাসাহাসির শব্দে কানের পোকা বের হয়ে যাবার উপক্রম। মাহতিম পা টিপেটিপে এগিয়ে যায় সামনে। নয়না দরজা খুলে দেন। এক গোছা চাবি মাহতিমের প্যান্টের পকেটে রেখে দিয়ে বলেন,
‘ দরজার চাবি রেখে দিলাম। দ্রুত আসবি। ‘
মাহতিম সুন্দর করে হাসে। চোখের ইশারায় ধন্যবাদ জানিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠে যায়।
ছাদের উঠে প্রিয়ন্তি দেখে আগে থেকেই ছাদে মাদুর পেতে রাখা। মাদুরের উপর কতগুলি সাদা রঙের কুশন। আজ আকাশে এক মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। ঈষৎ লাল রঙা চাঁদ প্রিয়ন্তির চোখে খুব সুন্দর লাগে। মাহতিম মাদুরের উপর আস্তে করে প্রিয়ন্তিকে নামিয়ে দেয়।
নিজেও এসে প্রিয়ন্তির পাশে বসে। অতঃপর আচমকা প্রিয়ন্তির কোলে নিজের মাথা রেখে শুয়ে পরে। প্রিয়ন্তি চমকে যায়। মাহতিম প্রিয়ন্তির হাত উঠিয়ে তার মাথায় রাখে। আদুরে কণ্ঠে আবদার করে,
‘ চুল টেনে দাও না, প্রিয়ন্তিকা। ‘
প্রিয়ন্তি অবাক হয়। কি করবে কি করবে ভেবে না পেয়ে দ্বিধা নিয়ে মাহতিমের চুলে হাত রাখে। আলতো হাতে চুল টেনে দিতে থাকে। মাহতিমের চুল ভীষন ঘন এবং কালো। প্রিয়ন্তির এমন চুল টেনে দিতে ভীষন আরাম লাগছে। প্রিয়ন্তি মাহতিমের চুল দেখে মনেমনে কয়েকবার ‘ মা শা আল্লাহ ‘ বলে ফেলেছে।
মাহতিমের প্রিয়ন্তির কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তির নরম হাত তখনো বুলিয়ে যাচ্ছে মাহতিমের চুল। একসময় মাহতিম বলে,
‘ জানো প্রিয়ন্তিকা। আমার স্বপ্ন ছিল, তোমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখার। কখনো ভাবিনি, এই স্বপ্ন পূরন হবে। অথচ আজ দেখো। আমার সারাজীবনের স্বপ্ন আমার কাছে আজ সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে। ‘
প্রিয়ন্তি চুপ করে বসে থাকে। কথা বলে না। আরো একবার দ্বিধায় জড়ায়। মাহতিম ছেলেটাকে কি প্রিয়ন্তি একবার আবার ভালোবাসার চেষ্টা করবে?
মাহতিম হঠাৎ করে প্রিয়ন্তির কোলে মাথা ঘুরায়। মুখ গুঁজে দেয় প্রিয়ন্তির পেটে। প্রিয়ন্তি হতভম্ব হয়ে যায়। চুল টেনে ধরে মাহতিমের। মাহতিম ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,
‘ প্রিয়ন্তিকা! ‘
প্রিয়ন্তি কেঁপে উঠে। এমন আবেগঘন কণ্ঠে আদৌ কি কেউ ডেকেছিল তাকে? কথা বলার সময় মাহতিমের ঠোঁট স্পর্শ করে প্রিয়ন্তির উন্মুক্ত পেট। প্রিয়ন্তি অনুভূতির আঁচড়ে কেমন মুচড়ে যায়। মাহতিমের চুল টেনে ধরে সরিয়ে দিতে চায় নিজের থেকে। মাহতিম সরে না। বরং প্রিয় মানুষের সঙ্গে আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে,
‘ তুমি কি আমায় ভালোবাসে বিয়ে করেছ নাকি বাধ্য হয়ে? ‘
প্রিয়ন্তি থমকে যায়। আচমকা প্রিয়ন্তির ছটফটানি থেমে যায়। মাহতিমের চুলে বুলিয়ে যাওয়া হাত নেমে আসে ক্রমশ। মাহতিম প্রিয়ন্তির কোল থেকে মাথা তুলে। চোখ ছোটছোট করে চায় প্রিয়ন্তির দিকে। তার চোখে রয়েছে আশা। প্রিয়ন্তি মাহতিমের ওই কাতর চোখে চায়। দেখে অনেককিছু। প্রিয়ন্তির দুনিয়া তোলপাড় হয়ে যায়। আর চেয়ে থাকতে পারে না। ঢোক গিলে। অন্যদিকে চোখ সরিয়ে শুধু এইটুকু বলে,
‘ আমার সময় লাগবে। ‘
মাহতিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চুপ করে প্রিয়ন্তির কোল থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে। দুই হাঁটু বুকের সাথে চেপে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। ভাবছে সে কিছু একটা। প্রিয়ন্তি কি করবে ভেবে পায় না। আস্তে করে মাহতিমের কাছে ঘেঁষে সে। মাহতিমের কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বলে,
‘ আই অ্যাম সরি! আমি বারবার তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু আমি নিরূপায়। প্লিজ। ভুল বুঝ না। আমি সত্যি চেষ্টা করছি সবকিছু মেনে নেবার। ট্রাই টু অ্যান্ডারসট্যান্ড। ‘
মাহতিম কিছু বলে না। কিছুক্ষণ চুপ থাকে। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চেয়ে থাকে নির্নিমেষ। অতঃপর মাহতিম আচমকা পাশ ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ন্তিকে। প্রিয়ন্তি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। মাহতিম প্রিয়ন্তির ঘাড়ে ঠোঁট চেপে বিড়বিড় করে কতগুলো কথা আওড়ায়। যা শুনে প্রিয়ন্তির নিঃশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে যায়। হাঁপরের মত উঠানামা করতে লাগে বুক।
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |৩৩|
আজ সকাল সকাল মাহতিম গোসল সেরে নিয়েছে। এত ভোরে গোসল করার কারণে আপাতত সে শীতে কাপছে। শীতের কারণে কোমরে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে, অন্য টাওয়াল দিয়ে গা ঢেকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। প্রিয়ন্তি তখন ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাতে খুলে রাখা গহনা থেকে অল্প কিছু গহনা পরে নিচ্ছে। প্রিয়ন্তি গোসল করে নি দেখে মাহতিম অবাক হল। হেঁটে এসে প্রিয়ন্তির পেছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ গোসল করো নি? ‘
প্রিয়ন্তির গহনা পড়া শেষ। নতুন বউ হিসেবে একটু সাজগোজ না করলেই নয়। প্রিয়ন্তি চোখে হালকা করে কাজল দিতে দিতে বলল,
‘ না, বিকেলে করব। এখন শীত লাগছে। ‘
মাহতিম বাঁকা চোখে চেয়ে বলল,
‘ তুমি এভাবেই আজ রুমের বাইরে যাবে? ‘
প্রিয়ন্তি কাজল দেওয়া বন্ধ করে ভ্রু কুচকে আয়না দিয়ে মাহতিমের দিকে চেয়ে বলল,
‘ কেন? কি হয়েছে? আমি তো মোটামুটি নতুন বউয়ের মতই সেজে রুম থেকে বের হচ্ছি। এখন কি আবার আবার নতুন করে কনে সেজে ঘর থেকে বের হতে হবে? ‘
মাহতিম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ল। বসে থাকা প্রিয়ন্তির দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল,
‘ তোমার সেন্স অব হিউমার ভালো। কিন্তু মাঝেমধ্যে এটাকে কাজে লাগাও না কেন? ‘
প্রিয়ন্তি বাঁকা চোখে তার বাম ঘাড়ের পাশে ঝুঁকে থাকা মাহতিমের দিকে তাকাল। প্রিয়ন্তি বুঝতে পারছে না, মাহতিম আসলে কিসের কথা বলছে। প্রিয়ন্তি প্রশ্ন করল,
‘ মানে? ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলো না কি হয়েছে। ‘
মাহতিম আবারও আগের ন্যায় গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ অ্যাজ ইউ নো। আমাদের গতকাল বাসর রাত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে কিছু না হলেও বাইরের মানুষ সেটা জানে না। বাসর রাতে কিছু হওয়া নরমাল, কিছু না হওয়াটাই এবনরমাল। বাইরে দাদু আছেন, দাদুর বোন আছে, আরো কিছু বৃদ্ধ মহিলা আছেন। তুমি যদি এখন ভেজা চুলে বাইরে বের না হও, তারা সেটাকে ভালো চোখে দেখবে না। তিল থেকে তাল বানাবে। শেষ অব্দি লজ্জাটা তুমিই পাবে, আমি না। সো….’
প্রিয়ন্তির চোখ বড়বড় হয়ে এল। মাহতিম যে কথাগুলো এত সহজে স্বাভাবিভাবে বলে ফেলল, প্রিয়ন্তি ততটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারল না কথাগুলো। লজ্জা লেগেছে বটে তবে লজ্জার চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে।
মাহতিম নিজের মত করে এসব কথা বলে মৃদু হেসে সরে এলো। গা থেকে টাওয়াল খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে প্রিয়ন্তির ঠিক পাশে দাড়াল। আয়নার দিকে তাকিয়ে ভেজা চুল ঝাড়তে লাগল। মাহতিমের ভেজা চুল থেকে পানির ফোঁটা ছিটকে পরতে লাগল প্রিয়ন্তির চোখেমুখে। তাতেই চোখ মুখ কুঁচকে গেছে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তি উঠে দাঁড়াল। মাহতিমের থেকে কিছুটা সরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ সিরিয়াসলি মাহতিম। এই যুগে এসব চিন্তা কে করে? যুগ পাল্টেছে। সবার মানসিকতাও পাল্টেছে। বিয়ের পরের দিন সকালে গোসল না করা এখন আর মানুষ খারাপ চোখে দেখে না। ‘
মাহতিম ঘুরে তাকাল। সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তি আঁতকে উঠল। মাহতিমের গৌড় বর্ণের প্রশস্ত বুক মেলে রাখা প্রিয়ন্তির সামনে। এতক্ষণ ভেজা গায়ে মাহতিমকে লক্ষ্য করেনি প্রিয়ন্তি। কিন্তু এখন ভুলবশত চোখ পরাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রিয়ন্তির জন্যে। বুকের ভেতর নিজের অজান্তেই ধড়ফড় করছে। প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে উত্তর পাবার আশা নিয়ে মাহতিমের দিকে চেয়ে রয়। মাহতিম এগিয়ে আসে। দুহাত বাড়িয়ে প্রিয়ন্তির ঘাড়ে রাখে গলা জড়িয়ে ধরে। মাহতিমের এমন কাছে আসায় প্রিয়ন্তি থতমত খেয়ে যায়। ভেজা গায়ে, অর্ধ পোশাকে মাহতিমকে নিজের এতটা কাছে দেখে সারা অঙ্গ শিরশির করে উঠে প্রিয়ন্তির। তবে মুখের মধ্যে নিজের এই অস্থিরতা প্রকাশ করে না প্রিয়ন্তি। স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। মাহতিম বুঝায়,
‘ তুমি, আমি, ভাইয়া, ভাবি এই যুগের হলেও, আমাদের দুই যুগ আগের হলেন দাদু। এই যুগের সঙ্গে নিশ্চয়ই দুই যুগ আগের মানুষের মানসিকতার তুলনা চলে না। তারা বিয়েতে সাধারণত এসবই দেখে। বুঝো না, আগের মানুষ। সংস্কার, কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা এসব তাদের মধ্যে একটু বেশি। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আমার কথা মানো। নাহলে এমন লজ্জায় পড়তে হবে, আমার বুক ছাড়া কোথাও মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না। ‘
প্রিয়ন্তির অস্থিরতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছ। মাহতিমের ভেজা হাতের স্পর্শ প্রিয়ন্তির ঘাড়ে লাগতেই প্রিয়ন্তি কেমন যেন ঝিম ধরে যায়। এ কেমন অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে প্রিয়ন্তির সঙ্গে? আগে এমন কখনো হয়নি। একদম নতুন এই অস্থির অনুভূতি প্রিয়ন্তির কাছে ভালো লাগছে না। প্রিয়ন্তি নত কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে,
‘ আ-আমার থে-থেকে স-সরে দা-দাঁড়াও মাহতিম। ‘
মাহতিম ভ্রু কুচকে তাকায়। পরপরই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। বাম চোখ টিপে বলে,
‘ কেন? কিছু হয় নাকি? ‘
প্রিয়ন্তি লজ্জায় থতমত খেয়ে যায়। মাহতিমের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে। মাহতিম দু পা পিছিয়ে আবারও হাসতে থাকে। প্রিয়ন্তি রাগান্বিত চোখে একপল সেদিকে চেয়েই শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। মাহতিম তখনো প্রাণখুলে হেসে যাচ্ছে।
________________________
সত্য সত্য প্রিয়ন্তি গোসল করে মাথায় শাড়ির আঁচল তুলে ঘর থেকে বেরিয়েছে। মাহতিম তখন বসার ঘরে বসে বিয়েতে আসা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল। প্রিয়ন্তিকে ভেজা চুলে দেখে ওয়াহিদের চোখ ছানাবড়া। সে মাহতিমের একটু কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করল,
‘ ভাই, প্রথমদিনেই ছক্কা মারলি? প্রিয়ন্তি ছুঁইতে দিল? হায় আল্লাহ। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ভাই। একটা চিমটি দে আমারে। ‘
মাহতিম বাঁকা চোখে ওয়াহিদের দিকে চায়। বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ শালা, আগের দিন গেছে। এখন ও ভাবি হয় তোর। ওকে নিয়ে অশ্লীল কথা ছাড় এখন। ‘
ওয়াহিদ হাসি চেপে রেখে ঠোঁটে আঙ্গুল দেয়। মাহতিম মাথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই আবারও খিলখিল করে হেসে উঠে ওয়াহিদ। মাহতিম চমকে উঠে তাকায়। ওয়াহিদকে বেকুবের মত হাসতে দেখে মাহতিম তেড়ে আসে। ওয়াহিদ সরি, সরি বলেও আবারও বেহায়ার মত হাসতে থাকে। মাহতিম ওয়াহিদের পিঠে কয়েক ঘা বসিয়ে উঠে চলে আসে সেখান থেকে। সবসময় এই ওয়াহিদ ওর পিছু লাগে। খচ্চর একটা।