প্রিয়োসিনী পর্ব -০৮

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৮
ইসরাকের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নওরিন।ইসরাক ছাদ থেকে দ্রুত পায়ে নেমে ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
নওরিন কবার দরজায় বাড়ি দেয়,
-দরজা খুলুন
ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই।
-কি হলো?আমি ভেতরে যাবো তো।
ইসরাক এবারও কোনো সাড়া দেয় না।নোহা তাদের পিছু পিছু আসে।নওরিনকে বলে
“দাভাই রাগ করেছে।চলো আমার ঘরে চলো।আমার সাথে থাকবে”

নওরিন নোহার ঘরে যায়।নোহা বিছানায় ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে।নওরিন এপাশ ফুরে শোয়। ঘুম আসছে না তার।উঠে জ্বানালার কাছে যায়।
বাহিরে খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে।নওরিনের চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
অতীতে ডুব দেয় নওরিন….

____________

“নওরিনের বাবা মা ৪ ছেলে মেয়ে নিয়ে গ্রামেই থাকতেন।শহরে এতো খরচ চালানো সম্ভব ছিলো না।একটা সময় নওরিনের বড় ভাই পরিবারের দায়িত্ব নেই।ছোট্ট একটা ব্যবসা করতো সে।ব্যবসা আস্তে ধীরে ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে।পাড়ি জমায় শহরে।গ্রামেই নওরিনের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়।বছরের মাঝা মাঝি নওরিন শহরের একটা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হয়।
নওরিন স্বভাবতই বেশ শান্ত ছিলো।একটু ছুয়ে দিলেই নুয়ে পড়তো।মাঝামাঝি সময় ভর্তি হওয়াতে বন্ধুত্ব করতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো। আবার একা একা সময় কাটিয়ে দেওয়ার মতো মেয়েও নওরিন না।এভাবে শহরে বেশ বিষাদময় সময় কাটতে থাকে নওরিনের।

এমন সময় নওরিনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় ইশা।ইশা সিকদার বাড়ির মেয়ে।প্রভাব প্রতিপত্তির অভাব নেই।তবে ইশার মাঝে আগেও বিন্দুমাত্র অহংকার ছিলো না।এখনো নেই।আস্তে আস্তে ইশা আর নওরিনের বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে।

ইশা রোজ গাড়িতে যাওয়া আসা করতো আর নওরিনকে দিয়ে যাওয়া নিয়ে যাওয়া করতো তার ছোট ভাই।
একদিন স্কুল হাফ আওয়ারেই শেষ হয়ে যায়।নওরিনের কপালে চিন্তার ভাজ বাড়ি যাবে কিভাবে…
ইশা নওরিন কে জোড় করে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।
নওরিন ভায় পাচ্ছিলো।এভাবে গাড়ি করে আসাটা তার বাবা ভালো চোখে দেখবে না।শহুরে মানুষদের বাবা একদম পছন্দ করেন না।
বাড়ির সামনের বড় রাস্তায় গাড়ি আসতেই নওরিন চেচিয়ে উঠে,
-ড্রাইভার আঙ্কেল গাড়ি থামান….
ড্রাইভিং ছিটে বসে থাকা লোকটা দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে।সানগ্লাস খুলে নওরিনের দিকে মুখ তুলে তাকায়,
-ইউ কি বললা।
নওরিন একটু হেসে বলে
-গাড়ি থামাতে বলেছি আমি তো এখানেই নামবো…
-তুমি আমাকে ড্রাউভার বলছো।তার উপর আবার আঙ্কেল!আমাকে তোমার আঙ্কেল মনে হচ্ছে?
-হু আপনি তো ড্রাইভারই…এতটুকু বলেই নওরিন মাথা নিচু করে নেই।

পাশ থেকে ইশা হো হো করে হেসে উঠে….
-নওরিন ওনি ড্রাইভার না আমার কাজিন,আমান ভাইয়া।তোরও ভাইয়াই হবে আঙ্কেল না
নওরিন লজ্জা পায়
-সরি ভাইয়া।
সেদিনই আমান নওরিনকে প্রথম দেখেছিলো।
নওরিন দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
-ছি কি লজ্জা।

এরপর নওরিন কখনো আর ইশার গাড়িতে উঠে নি।ইশা হাজার জোড়া জুড়ি করলেও নয়।আমানের সাথে বার কয়েক দেখা হলেও এড়িয়ে চলতো।
এলাকায় আমানের নামে বেশ বদনাম রয়েছে।যা কারোরই অজানা না।যখন যা ইচ্ছে তাই করতো।প্রেমিকারও অভাব ছিলো না ছেলেটার।

ছোট বেলায় আমানের বাবা-মা না থাকায় ইমতিয়াজ সিকদার আমানকে অতিরিক্ত ভালোবাসতেন।কখনো ফুলের টোকাও দিতেন না।আমানের সব আবদার ছিলো শিরোধার্য।

আজ মেজো ভাই নওরিনকে নিতে আসতে পারবে না।নওরিনকে একা একা বাড়ি যেতে হবে।বাবা অবশ্য রিক্সা ভাড়ার টাকা দিয়ে দিয়েছে সঙ্গে কড়া গলায় বলে দিয়েছে,
“এদিক সেদিক কোথাও যাবি না রিনি স্কুল শেষে সোজা বাড়ি চলে আসবি।শহুরে ছেলে পুলে একদম নচ্ছার ”

নওরিন স্কুল থেকে বার হয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।একটাও রিক্সা নেই।যে দুই একটা আছে তারা যেতে চাইছে না।এরই মাঝে আকাশ কালো হয়ে আসে।আকাশ ভেঙ্গে চারদিক ঝুম দিয়ে বৃষ্টি নামে।নওরিন দাড়িয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।গ্রাম থেকে আশার পর থেকে সে বন্দী।শহুরে দেয়াল গুলো তার কারাগার মনে হতে থাকে।

নওরিনের পাশে এসে দাড়ায় একটা কালো গাড়ি। ইশা যেই গাড়িতে করে আসতো এটা সেই গাড়ি। কিন্তু ইশা তো আজ আসে নি।

আমান গাড়ির কাচটা খুলে দিয়ে নওরিনকে ইশারায় ডাকে।নওরিন গুটি গুটি পায়ে আমানের কাছে যায়।
-ভিজছো কেন?ঠান্ডা লাগবে না?
-সরি ভাইয়া
-স্কুল তো অনেক্ষন ছুটি হয়েছে এখনো দাড়িয়ে আছো কেন?
-সরি ভাইয়া
-বাড়ি যাবা না?
-সরি ভাইয়া।
আমান ভ্রু কুচকে তাকায় নওরিনের দিকে,
-সরি ছাড়া আর কিছু বলতে পারো না?
-সরি আর সরি বলবো না

আমান হেসে উঠে,
-চলো তোমায় বাড়ি পৌছে দেই
-না না লাগবে না আমি একাই চলে যাবো।
আমান ইশারা করে পেছনে দেখতে বলে।নওরিন পেছনে তাকাই শুকনা ঢোক গিলে। স্কুলের পাশের গলিতে কতোগুলো ছেলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নওরিনকে দেখছে।চোখ দিয়ে যেন গিলে খাবে….

নওরিন এদিক সেদিক তাকায়।কোথাও কোনো রিক্সার অস্তিত্ব নেই।
আমান গাড়ির সামনে দরজা খুলে দেয়।
নওরিন ঠ্যাই দাড়িয়ে হাত মুচরাচ্ছিলো।
আমান ধমকের স্বরে বলে উঠে…
-উঠোনা কেন?উঠো…
নওরিন মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।গায়ে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে।সামনে সে বসবে না।লজ্জা লাগে!

আমান পেছনের দরজা খুলে দেয়,
নওরিন উঠে বসে।আমান নওরিনের দিকে একটা তোয়ালে এগিয়ে দিতে দিতে বলে
-তুমি তো দেখছি আমায় সত্যি সত্যি ড্রাইভার বানিয়ে ছাড়বে….
নওরিন চুল মুছতে মুছতে প্রশ্ন করে
–ইশা তো আজকে আসে নি ভাইয়া আপনি হটাৎ এদিকে এলেন যে?
আমান মুচকি হেসে লুকিং গ্লাস দিয়ে নওরিনকে দেখতে থাকে।এদিকে নওরিনের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।সে বাহিরে দেখছে।বৃষ্টির পানি ভিজিয়ে দিচ্ছে ইট পাতরে মোড়ানো পথটা।

আমান পড়াশোনার জন্য ঢাকায় শিফ্ট করে। সেদিনই ছিলো তার চলে যাওয়ার দিন।মাঝে মাঝে আমান বাড়ি আসলে নওরিনের সাথে বার কয়েক দেখা হতো চোখাচোখি হতো তবে তেমন কথা বার্তা হতো না বললেই চলে।

সেবার ইশার ১৪ তম জন্মদিন ইশা আর নওরিন একসাথে সেলিব্রেট করে।তবে বাড়ির বাহিরে।সিকদার বাড়িতে বাহিরের লোকজন ঢোকা বারণ।আমান নওরিনকে সেদিন একগুচ্ছ বেলীফুলের মালা কিনে দিয়েছিলো।
নওরিন বেশ খুশি হয়েছিলো সেদিন।নওরিন সেটা হাতে বেধে বার বার নাকের কাছে এনে শুকে দেখছিলো গন্ধটা।অন্তর আত্না ভরিয়ে দিচ্ছে।ভুবন ভুলানো সুগন্ধ।আর আমান অপলকভাবে তাকিয়ে ছিলো নওরিনের দিকে।যেন চোখ সরাতেই ভুলে গেছে সে।ঠোটের কোণে তৃপ্তির হাসি।

ইশা মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে। মনে মনে কিছু একটা আন্দাজ করতে থাকে সে।
“এইসব হতে দিলে চলবে না।কিছু একটা করতে হবে…”
ইশা মনে মনে কথাটা বলে।নওরিন ইশার হাত ধরে টানছে।
-চল ঐটাতে উঠি।
পার্কে রাখা উচু এক নাগরদোলার দিকে ইশারা করে।

-চল উঠিনা।
ইশা বুকে থুতু দেয়
-ভয় লাগে।
-চল না উঠি।
-না মাথা ঘুরে। মরে যাবো আমি।
পাশ থেকে আমান বলে উঠে,
-চলো আমি উঠিয়ে দিচ্ছি।
নওরিন এক পাও চলছে না।
-কি হলো চলো।
-না
-কেন?(ধমকের সুরে)

নওরিন চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।
আমান আর কিছু বলে না।

ইশা আর নওরিন আজ সারাদিন ঘুরবে।ইশা নওরিনের বাবা-মায়ের কাছ থেকে পার্মিশন নিয়ে নিয়েছে।
একটা রেস্টুরেন্টে তিনজন বসে ছিলো।সেখানে হটাৎ ই একটা ছেলের আগমন হয়।পেছন থেকে নওরিনের দিকে চোখদুটো চেপে ধরে।
-ওমা কে?
-(…)
-বলছোনা কেন কে?
নওরিন চোখ ছাড়িয়ে নেয়।সামনে তাকিয়ে দেখে সাগর।নওরিনের মেজো খালার ছেলে।
সাগরের সাথে নওরিনের সম্পর্কটা একটু অন্যরকম।সরাসরি কেউ কাওকে কিছু না বললেও মনে মনে দুজন দুজনকে বড্ড পছন্দ করতো।

নওরিন একগাল হাসে।বুকে থুতু দেয়
-সাগর ভাইয়া তুমি।
-এতো ভয় কেনো পাস ভীতুর ডিম একটা
-কোই না তো!
-এখানে কি করিস?
-ঐ যে ঐটা আমার বেস্টু ওর সাথে ঘুরতে এসেছি।
সাগর ভ্রু কুচকে তাকায়,
-খালা জানে?
নওরুন অপরাধীর মতো মাথা নেড়ে বলে,
-হু জানে তো।কিন্তু রেস্টুরেন্টে এসেছি জানলে বকবে।মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে।
সাগর হেসে নওরিনের গালটা টেনে দেয়।
নওরিনের ভয়ার্ত মুখ দেখতে খুব ভালো লাগে সাগরের।
–আচ্ছা ঠিক আছে থাক।আমি খালাকে কিছু বলবো না।কোনো সমস্যা হলে ফোন দিস।দরকার পরলে জানাস এসে নিয়ে যাবো।আমি কাছেই আছি।

সাগর চলে যায়।নওরিন সেদিকেই তাকিয়ে আছে।মুখে এক অদ্ভুত হাসি।তৃপ্তির হাসি
ইশা পাশ থেকে ডেকে উঠে,
-কে এটা আগে তো বলিস নি?
-মেজো খালার ছেলে।
-ওহ্ শুধু মেজো খালার ছেলে নাকি অন্যকিছু। তোর কি লাগে?
ইশা হোহো করে হেসে উঠে,
নওরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়।
কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ। নওরিন মাথা তুলে তাকায় শব্দের উৎসের দিকে।আমান হাত দিয়ে কাঁচের গ্লাস চেপে ধরেছে।গ্লাসটা শব্দকরে ভেঙ্গে যায়।হাত দিয়ে গল গল করে রক্ত পড়ছে।নওরিনের চক্ষু চড়ক গাছ।
ইশা কেঁপে উঠে,”আমান ভাইয়া”
আমান টেবিলে একটা বাড়ি দেয়।সব কিছু নিচে ছুড়ে ফেলতে থাকে।নওরিন ভয়ে চুপসে গেছে।দুইকদম পিছুতে নিলে আমান খপ করে নওরিনের হাত টা ধরে ফেলে।আমানের হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে,সেটা নওরিনের হাতে লাগছে।ভয়ে কাঁপছে নওরিন।
–আ..আমি রক্ত ভয় পাই

–আমার জিনিসগুলো আমি কখনো কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না প্রিয়োসি….দরকার পড়লে তোমায় তুলে নিয়ে গিয়ে ঘরে তালা বন্ধ করে রাখবো।আমায় তুমি চেনো না।।নিজের প্রিয়োসিকে অন্যের সাথে দেখে হিংসার অনলে জ্বলে ছাই হবো এমন পুরুষ আমি না,দরকার পরলে প্রথমে তোমায় শেষ করবো তারপর নিজে শেষ হয়ে যাবো।আমাদের গল্পটার ইতি আমি এভাবেই টেনে দেবো…আমি তোমাকে….।
-ভাইয়া ভয়…

নওরিন সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

তারপর বেশ কিছুদিন নওরিন স্কুলে যায়নি।
তারপর….
___________

“কি হলো বউ বরের ঘর ছাড়া এখানে কি করছো।চলো আমার ঘরে চলো”

ইসরাকের কন্ঠ শুনে নওরিন পেছন ফিরে তাকায়।পেছনে তাকিয়ে দেখে ইশা দাড়ানো…নওরিন এদিক সেদিক খোঁজে।ইসরাক নেই।
নওরিন একটু হেসে বলে
-কি করে পারিস বলতো..?আমি তো সত্যিই সত্যিই ওনি ভেবেছিলাম।
ইশা হাসে…
-তোরটা সবচেয়ে বেশি পারি করে দেখাবো? তোর মতো করে কথা বলবো নাকি বল?

নওরিন জোর করে হাসার চেষ্টা করে।
-না থাক।এতো ট্যালেন্ট নিয়া ঘুমাস কেমনে!

নওরিন ওয়াশরুমে যায়।চোখে মুখে পানি দেয়।শরীর থর থর করে কাঁপছে তার।ভয়ে।আমান নামটাই তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়।নামটা শুনলেই যেন তার অন্তর আত্না পর্যন্ত কেপে উঠে।

নওরিন বেরুতেই ইশা নওরিনের হাত ধরে টানতে থাকে।
–এই শাঁকচুন্নির সাথে কি করিস আমার ঘরে চল।ওখানে থাকবি।
নওরিন অসহায় মুখ করে তাকায়।
নোহা লাফ দিয়ে উঠে পরে,
–আমার সব কিছু নিয়ে তোর টানা টানি না করলেই কি চলে না?
-তোর!তোর মানে কি?নওরিন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেই ৫হাজার বছর আগে থেকেই ও আমার বেস্টু।তোর নিজেরটা তুই নিজে খোঁজে নে।
নোহা মুচকি হাসে,
-তাই নাকি?তো পাঁচ হাজার বছর আগে কি তোরা ডাইনোসরের রূপে বেস্টু বেস্টু খেলছিলি?

ইশা বোকা বনে যায়।নওরিন হাসে।কি অদ্ভুত মায়াবী হাসি।

ইশা নওরিনকে টেনে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নোহা উঠে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজাটা লক করে দেয়।

নওরিন ইশার ঘরের দিকে যেতেই মাঝ পথে ইসরাক তার পথ আটকে দাড়ায়।
ইশা মুখ বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,
-কি চাই?
-কথায় কথায় এভাবে মুখ বাকাস কেন?কবে যেন দেখবি মুখ ওভাবেই আটকে গিয়েছে।আর সোজা হবে না।
-সামনে থেকে সর ঘরে যাবো
-না আমার ওটা চাই….

নওরিনের দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বলে।
নওরিন একটা শুকনা ঢোক গিলে ইশার হাত জড়িয়ে ধরে।
-চলো সুন্দরী আমার ঘরে চলো।আজ তোমাকে খেয়ে ফেলবো।অনেক ক্ষুধা লাগছে।
-ছেড়ে দে শয়তান।
ইসরাক আর কোনো কথা বলে না।নওরিনকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের হাটা ধরে।পেছনে ইশা ওভাবেই তাকিয়ে আছে।জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ঘরে চলে যায়।

ইসরাক নওরিনকে ঘরে এনে ছেড় দেয়।
-দরজা খুললেন কেন?এ ঘরে আনলেন কেন?আমাকে ডাকলেন কেন কি চাই?
-তোমাকে চাই।আজকে তোমাকে আমার প্রয়োজন।কাছে আসো একটু আদর করি!!

নওরনের কোমর জরিয়ে ধরে ইসরাক নিজের দিকে টেনে নেয়।আজকে ইসরাকের স্পর্শে নওরিনের অস্বস্তি হচ্ছে না।বরং অন্যরকম লাগছে।
ইসরাক নওরিনের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
নওরিন ইসরাককে ধাক্কা দেয়।ন্যাক্যা ন্যাক্যা করে বলতে থাকে,
-উফ ছাড়ুন তো।সবসময় জোর করে শুধু।

ইসরাক নওরিনকে ছেড়ে দেয়।বালিস নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
নওরিন বোকার মতো সেখানেই বসা,
-ছেড়ে দিতে বললেই ছেড়ে দেবেন নাকি?
যদিও নওরিন কথাটা আস্তে বলেছিলো তবু কথাটা ইসরাকের কানেও যায়। মুচকি হাসে কিন্তু থামে না।আজ রাতে সে ভুলেও নওরিনের ধারের কাছে যাবে।
ভালোবাসার এগুনে একটু পুরুক।তবে তো বুঝবে ভালোবাসার মর্ম কি

——–

সকালে শিউলি পারভিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নওরিনের….
-ও বউ ৯ টা বাজতে চললো আর কতো ঘুমাবা?
নওরিন হন্তদন্ত হয়ে উঠে পড়ে।
-এতো বেলা হয়েছে
-হো,ইসরাক বাবা সেই কখন বেরিয়েছে।চলো নিচে চলো।তোমার শ্বাশুড়ি ডাকে।
-ফ্রেশ হয়ে নেই।

নওরিন রেডি সেডি হয় নিচে আসে।জিনাত সিকদার টেবিল গুচ্ছাছিলেন!
নওরিন ব্যাগ হাতে বেরুতে নিলে আটকে দেন,
-কোথাও যাও
-ক্লাস আছে আম্মা
-কিসের ক্লাস?জামা কাপড় ছেড়ে কিছু খেয়ে রান্না ঘরে আসো।তুমি না বাড়ির একমাত্র বউ।আগে সংসার সামলাবে তারপর পড়াশুনা।

নওরিন মাথা নিচু করে নেয়।

-কি হলো খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছো কেন।
–আমার ক্লাসটা খুব জরুরি।
-দেখো বউ আমি তোমায় পড়াশুনা বন্ধ করতে বলছিনা শুধু বলছি সংসারের কাজ শেষ করে তারপর যা খুশি করবা।কিন্তু আগে সংসার।সকাল সকাল উঠে রান্না বান্না করে তারপর যাবা কেমন।

নওরিন মাথা নাড়ে।নওরিন কাঁদো কাঁদো মুখে ঘরে চলে যায়।
গুটি গুটি পায়ে আবার রান্না ঘরে আসে।

শিউলি পারভিন হাসে।শুধু হাসে।

জিনাত সিকদার নওরিনের হাতে হাতা খুন্তি তুলে দিয়ে কেটে পড়েছে।সংসারের যাতাকলে না পড়লে কিভাবে শিখবে।আর কতোদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরবে।কিন্তু রান্না বান্নার ক্ষেত্রে নওরিন একে বারে ঢেরস।

দুপুরের খাবারের যেকোনো একপদ নওরিনকে রাঁধতে হবে।ইচ্ছে মতো যেকোনো কিছু।আর সকালের চা নাস্তার দায়িত্ব শুধু নওরিনের। কাজগুলো শেষ করে তবেই সে কলেজ যেতে পারবে।

ভয়ে নওরিনের বুক কাঁপছে। রান্না তো সে পারে না।চা করতে পারে। কিন্তু দুপুরের রান্নার কি হবে।
নওরিন চোখ মুখ অন্ধকার করে ইউটিউব ঘাটছিলো।কিছু একটা বানাতে হবে নয়তো কলেজ যেতে দেবে না।

নোহা এসে নওরিনের হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়।
-এভাবে রান্না হয় নাকি?দাও আমাকে দাও।
নোহা ফ্রিজ থেকে ছোট মাছ বার করে আলু পেয়াজ দিয়ে ঝাল বানিয়ে দেয়।
দাভাই ছোট মাছ খেতে খুব ভালো বাসে।

——–

ইসরাক সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে নওরিনের দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়।ইসরাক হাতে ফুচকা নিয়ে এসেছে।

নওরিন সেগুলো খুলে প্লেটে সাজিয়ে নেয়।নওরিন ইশাকে ডাকতে চাইলে ইসরাক থামিয়ে দেয়।চোখ রাঙ্গিয়ে বলে উঠে,
সব গুলো তুমি একাই খাবে।
নওরিন একটা মুখে নিতেই থেমে যায়।উফ প্রচুন্ড ঝাল।ইসরাক নওরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।মুখে শয়তানি হাসি।
নওরিন বেশ বুঝতে পেরেছে সে ইচ্ছা করে এমন করেছে।রাগে হা জ্বলছে তার।
একে একে সব গুলো ফুচকা মুখে পুড়তে থাকে।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
ইসরাক থামিয়ে দেয়।নওরিন কথা শুনার পাত্রী না।
ইসরাক নওরিনর ঠোঁটে চুমু খায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ইসরাক নিজেও জানে না সে কেন নওরিনের সাথে এমন করলো।কিন্তু সে করেছে।
এদিকে নওরিন চাইলেই না খেয়ে থেমে যেতে পারতো কিন্তু সেও থামেনি।
ইসরাক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে নওরিনকে…
-অনুভব করতে পারছো নওরিন?
-কি
– ভালোবাসাটা?
-কোথায়
-এই তো এখানে….

ইসরাক নওরিনের হাতটা নিজের বুকের উপর রাখে।
নওরিন ছিটকে দূরে সরে আসে।
-ঝাল খাইয়ে ভালোবাসা অনুভব করাচ্ছেন!এটা বুঝি বুড়োখোকাদের ভালোবাসা প্রকাশের স্টাইল।
-এটা শাস্তি।পরপুরুষের সাথে কথা বলার শাস্তি…এরপর এমন করলে মুখ পুড়িয়ে দিবো।
নওরিন শুকনা ঢোক গিলে।

দরজর আড়াল থেকে সবকিছু দেখছিলো নোহা।এটা হবারই ছিলো।তবে সে চায় না এমন কিছু হোক।

_______
রাতে ছাদে বসে আছে নোহা আর ইসরাক।নোহা ইসরাকের কাঁধে মাথা রাখে।দাভাইকে সে বড্ড ভালোবাসে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে দাভাই তাকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছে।
-দাভাই আমার জন্মদিনের উপহার কিন্তু চাই নি
-হু।কি চাস বল?এক্ষুনি দিয়ে দেবো।
-পরে।
একটু থেমে ঢোক গিলে,
-দাভাই…
-হু….
-সত্যি করে বলো তুমি নওরিনকে ভালোবাসো?
ইসরাক একটু থামে।
–আসলে দুই দিনে মায়া পরে গিয়েছে।
-দুইদিনে না দুই বছরে…আমান ভাই কোথায়?বেঁচে আছে তো?জানো তো দাভাই পাগলা ষাঢ়কে বিশ্বাস করা যায় তবে পাগলা প্রেমিককে না।

ইসরাক নোহার প্রশ্নে একটু বিচলিত হয়।উঠে দাড়ায় ছাদের কার্নিশে হাত রাখে।
অতীতের পাতা হাতরাতে থাকে….
নওরিনের প্রতি অনুভুতি টা কি শুধু দুই দিনের!
——-

দিনটা ছিলো শুক্রবার।ইসরাক অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরছে।সব বন্ধুদের সাথে ছোট্ট একটা টুর দেওয়ার জন্য…..

চলবে…..

(আজকে দয়া করে কেউ বলবেন না ছোট হইছে।গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here