#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৩
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়, দীবা’দের এসএসসি পরীক্ষা অনেক দিন আগেই শেষ। কয়েকদিন পরে রেজাল্ট বের হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে তাহি ও দীবা দুজনেরই কোথাও ঘুরা হয়নি, তাই দীবা সিদ্ধান্ত নিলো তাহি কে নিয়ে আজ একটু শপিং এ যাবে, সাথে আশেপাশে কোথাও ঘুরবে। ফোন হাতে নিয়েই কল করলো তাহি’কে,, কল রিসিভ করতেই বললো – কি রে শয়তান ছেমরি কি করস?
ওপাশ থেকে তাহি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে, মানুষ ফোন দিয়ে কতো সুন্দর করে সালাম বিনিময় করে, আর এই মাইয়া,,, উফ সব বাদ দিয়ে ওপাশ থেকে তাহি বললো- কিছু না এইতো আকাশ দেখছিলাম, তুই কি করিস?
আমি বসে আছি, শুন না ইয়ার, যে জন্য কল দিয়েছি। আমার না ঘরে বসে বরিং লাগছে, চল আজ কোথাও ঘুরে আসি, সাথে কিছু শপিং ও করবো।
আমারো সেইম, তাহলে এটাই ফাইনাল, আমরা আজ ঘুরাঘুরি করবো আর শপিং করবো। তুই রেডি হয়ে তোর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাক, আমি আমার বাইক নিয়ে আধা-ঘন্টার ভিতরে আসছি।
আচ্ছা বলে কল কেটে, কালো ফতোয়া ও জিন্স পড়ে গলায় ওড়না পেছিয়ে রেডি হয়ে নিলো দীবা, বসার ঘরে এসে মাকে বলে বের হবে তখনই নিষ্প্রভের ঘর থেকে নিষ্প্রভ ও তীব্র বেরিয়ে আসে। অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে দীবা, মানে তীব্র কখন এলো? বজ্জাত লোক এসেছে অথচ থাকে একটা বার ও বলেনি। পরমুহূর্তেই নিজের ভাবনাতে উপহাসের হাসি হাসলো দীবা। তীব্র কেনো থাকে বলবে? কে হয় দীবা তার, দীবা ভালোবাসলেও তীব্র তো তাকে ভালোবাসে না। বরং দীবা তীব্রের আশেপাশে থাকলে বিরক্ত বোধ করে তীব্র।
দীবার সামনে নিষ্প্রভ এসে দাড়ায়, বলে- কিরে কোথাও যাচ্ছিস তুই?
হ্যা ভাইয়া ঘরে বসে বরিং লাগছিলো, তাই তাহি কে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি সাথে কিছু শপিং ও করবো। নিচে তাহি দাড়িয়ে আছে আমি যাই,
চল আমরাও যাবো।
তোমরা মানে?
মানে আমি আর তীব্র,
পাশ থেকে তীব্র বলে- কি জন্য ইয়ার, ঘুরুক না এরা, আমরা গিয়ে কি করবো?
নিষ্প্রভ তীব্রের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে- আরে ইয়ার তোর ভাবি ও তো যাচ্ছে, তোর ভাবির সাথে একটু সময় কাটাবো আরকি। আর দীবা আমার বোন আমার একটা দায়িত্ব আছে না, এভাবে একা-একা কিভাবে যেতে দিবো!
মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে তীব্র বলে- ঠিক আছে চল।
নিষ্প্রভ দীবার দিকে তাকিয়ে বলে- চল তারাতারি তাহি নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে।
তীব্র ও যাবে শুনে দীবার খুশি দেখে কে, ওর ইচ্ছে করছে নিষ্প্রভের গলা জড়িয়ে বলতে – তাংকু আমার ভাই, তুই পৃথিবীর সেরা ভাই। কিন্তু বলা যাবে না, নাহলে নিষ্প্রভ বুঝে যাবে, যে আমি তীব্র কে ভালোবাসি।
আমরা তিনজন গেইটের বাইরে এসে দেখি তাহি বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে, পড়োনে কালো শার্ট, কালো জিন্স, ও কালো জ্যাকেট, হাতে বাইকের চাবি,
তাহি’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিষ্প্রভ, তীব্রের ধাক্কাতে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে তাহি’র সামনে গিয়ে দাড়ায়।
নিজের সামনে নিষ্প্রভ কে দাড়াতে দেখে, ভ্রু কুঁচকে তাহি বলে- কী?
ঠোঁট কামড়ে নিষ্প্রভ বলে- আজ তুমি কালো পড়েছো, আজ আমিও কালো পড়েছি। দেখেছো আমাদের কতো মিল।
বিরক্তি নিয়ে তাহি বলে- সে তো কালো আমি সবসময়ই পড়ি, মাঝে মধ্যে অন্য কালারের পড়া হয়।
দীবার দিকে তাকিয়ে বলে- আর কতো দাড়িয়ে থাকবো চল।
হ্যা চল, আর ভাইয়া কিন্তু আমাদের সাথে যাবে।
কিহ! কিন্তু কেনো?
বাঁকা হেসে নিষ্প্রভ বলে- আমার বোনের একটা সেফটি আছে না, আমি ভাই হয় ওকে কিভাবে একা একা কোথাও যেতে দেই বলো, আমার তো একটা দায়িত্ব আছে।
দীবার দিকে তাকিয়ে তাহি বলে- এখন কোথায় যাবি?
আগে মার্কেটে চল শপিং করে নেই, পরে ঘুরাঘুরি করবো।
হালকা ধমক দিয়ে নিষ্প্রভ বলে- গাধী, শপিংয়ের ব্যাগ নিয়ে কি ঘুরাঘুরি করবি? আগে ঘুরাঘুরি কর, আসার সময় শপিং করবি।
ভাইয়ের কথা শুনে জিহ্ব কাটলো দীবা, ঠিকই তো শপিং ব্যাগ নিয়ে কি ঘুরাঘুরি করবে নাকি,
নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে বললো- চলো আগে ঘুরাঘুরি করি, তাহির দিকে তাকিয়ে বলে- চল।
নিজের বাইকে উঠে বসে তাহি, মাক্স পড়ে চোখে ব্লাক সানগ্লাস পড়ে নেয়। হেলমেট পড়ে দীবাকে ও একটা হেলমেট পড়িয়ে দেয়৷ অতঃপর বলে- কোনদিকে যাবো?
ততোক্ষণে নিষ্প্রভ ও তীব্র, নিষ্প্রভের বাইকে উঠে গেছে, হেলমেট লাগাতে লাগাতে নিষ্প্রভ বলে- আগে লেকের পাড়ে চলো।
ঠিক আছে বলে- বাইক স্টার্ট দিলো তাহি, নিষ্প্রভ ও বাইক স্টার্ট দিয়ে, তাহির সাথে সাথে যাচ্ছে।
হঠাৎ কিছু দূর গিয়ে তাহি বাইক থামিয়ে দীবার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়।
তাহিকে বাইক থামাতে দেখে নিষ্প্রভ ও বাইক থামায়, বলে- কি হয়েছে, থামলে কেনো?
তাহি’র দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে দীবা বলে- সরি ইয়ার, আমি কি করবো বল, যদি পড়ে যাই, তাই বার বার তোর কোমড় জড়িয়ে ধরি।
ভ্রু কুঁচকে নিষ্প্রভ বলে- তো? মেয়ে হয়েই তো আরেকটা মেয়ের কোমড়ে ধরেছে, তাতে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে?
আসলে ভাইয়া, তাহি’র সুরসুরি আছে!
কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে নিষ্প্রভ বলে- তাহলে এক কাজ কর, তুই আমার বাইকে চলে আয়, তীব্রের সাথে যা, আমি নাহয় তাহি’র সাথে,,,
নিষ্প্রভ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে – আমাকে কাঁধ ধরে বস বলে- বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় তাহি।
পিছন থেকে নিষ্প্রভ শব্দ করে হেসে উঠে, সাথে তীব্রও, হাসি থামিয়ে তীব্র বলে- কি ইয়ার তুই সবসময় মেয়েটার পিছনে লেগে থাকিস, আর একটু আগে কি প্রস্তাব দিচ্ছিলি? বেচারি নিশ্চয়ই লজ্জা পেয়েছে,
লজ্জা আর তাহি? ও লজ্জা পেতেও জানে? আমার মনে হয় জীবনে কোনো দিন লজ্জা পায় নি, সবসময় মুখকে অন্ধকার করে রাখে, আর শুধু রাগ দেখায়।
আরে ও ছোট থেকেই এমন মেবি, একটু গম্ভীর, কিন্তু ওর মন খুব ভালো। সবসময় নিজের সাধ্যের মধ্যে সবাইকে সাহায্য করে, কয়েকদিন আগেও দেখলাম রাস্তার পাশে এতিম শিশুদের খাবার বিতরণ করেছে।
হ্যা সেটা তো আমি জানি। আমার শ্যামা পাখির এরকম স্বভাবের জন্য আমি আরো ওর উপর দূর্বল হয়ে যায়,
আরে চল চল, ওরা আমাদের রেখে চলে গেলো তো।
আরে হ্যা, খেয়ালই ছিলো না, বাইক স্টার্ট দিয়ে রেইস বাড়িয়ে তাহির বাইকের কাছাকাছি আসে নিষ্প্রভ।
লেকের পাড়ে এসে বাইক থামায় তাহি, বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলে হাতে নেয়, তখনই কোথা থেকে একটা ছেলে এসে জড়িয়ে ধরে,,
ততক্ষণে নিষ্প্রভ ও চলে এসেছে, তাহি’কে কোনো ছেলে জড়িয়ে ধরেছে এটা দেখে নিষ্প্রভের বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয়, তাহি’র দিকে তাকিয়ে বাইক থামাতে গিয়ে তাহি’র বাইকের সাথে নিষ্প্রভের বাইকের ধাক্কা লেগে যায়, তাহি’র বাইকটি পড়ে যায়। বাইক পড়ার শব্দে জড়িয়ে ধরা ছেলেটিকে নিজের থেকে টান দিয়ে ছাড়ায় তাহি, ততোক্ষণে নিষ্প্রভ ও বাইক থেকে নেমে এসে দাড়িয়েছে। নিজের বাইকের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু চিৎকার করে তাহি বলে- মাই করলা.!
করলা? করলা শুনে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নিষ্প্রভ ও তীব্র, অতঃপর একসাথে হেসে উঠে, তীব্র অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে- সিরিয়াসলি তাহি, তুমি শেষ পর্যন্ত নিজের বাইকের নাম “করলা” রেখেছো?
সুযোগ বুঝে তীব্রের সাথে কথা বলার জন্য দীবা বলে- তাহি’র করলা ফেভারিট, তাই ও বাইকের নামও করলা রেখেছে।
মুহুর্তেই নিষ্প্রভ রেগেমেগে যায়, তাহির দিকে এগিয়ে গিয়ে, তাহি’র দিকে তাকিয়ে বলে- কে এই ছেলে? তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো কেনো?
একেতো নিজের ‘করলার ‘ অবস্থা নিষ্প্রভ খারাপ করে দিয়েছে, তার উপর সরি না বলে প্রশ্ন করছে, রাগে সহ্য করতে না পেরে নিষ্প্রভ কে ধাক্কা মারে তাহি’, ধাক্কা খেয়ে নিষ্প্রভ পড়ে নি, কিন্তু ওর বাইক পড়ে গেছে। সেটা দেখে তাহি বলে- টিট ফর টেট. অসভ্য ডাক্তার।
#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৪
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
তাহিকে যে ছেলেটা একটু আগে জড়িয়ে ধরেছিলো, সেই ছেলেটার কলার ধরে ঘুষি মারতে হাত উঠায় নিষ্প্রভ, কিন্তু তার আগেই তাহি টান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে ক্ষু*ব্ধ হয়ে বলে- আপনার সাহস কি করে হলো, ওর কলার ধরার?, কি করেছে ও, আপনি কেনো শুধু শুধু শাওন কে মারতে আসছেন?
শুধু শুধু মারতে চাইছি না, ও তোমাকে জড়িয়ে ধরলো কেনো? হুয়াই,
শাওন আমার ও দীবা’র স্কুলের ফ্রেন্ড, অনেক দিন পরে দেখা হয়েছে, তাই এক্সাইটেড হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো, তাই বলে আপনি মারামারি করবেন?
হ্যা করবো ওর সাহস কি করে হলো আমার শ্যামা পাখি কে জড়িয়ে ধরার.!
তারপর শাওনের দিকে এগিয়ে গিয়ে আঙুল তুলে শাসিয়ে বললো- আজকের মতো ছেড়ে দিলাম, ভবিষ্যতে আমার শ্যামা পাখি’র থেকে দূরে থাকবে, মাইন্ড ইট।
শাওন ছেলেটি অপরাধী সুরে বললো- স্যরি ভাইয়া, আমি এক্সাইটেড হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম, ভাবিনি এতো কিছু হবে,
তাহি’র দিকে তাকিয়ে বললো- সরি ইয়ার আমি সত্যিই ইচ্ছে করে কিছু করিনি, ক্ষমা করে দিস, আসি।
বলেই শাওন চলে গেলো।
দীবা তাহি’র হাত টেনে নিয়ে গিয়ে লেকের পাড়ে বসালো,
তীব্র ও নিষ্প্রভ’কে টেনে নিয়ে লেকের পাড়ের এক জায়গায় বসালো।
এভাবেই আধা ঘন্টা কেটে গেলো। নিষ্প্রভ দীবা কে ইশারা করলো ওর জায়গায় আসতে, দীবা তাই করলো। নিষ্প্রভ উঠে গিয়ে তাহির পাশে বসলো। আর দীবা তীব্রের পাশে।
– তাহি সোনা, রাগ করেছো? স্যরি তোমার সাথে আমার কাউকে সহ্য হয়না। কিন্তু আমি শাওন কে মারতে যাওয়ার জন্য স্যরি বলবো না, কারণ ও অপরাধ করেছে, তোমাকে ছুয়েছে। আর বাকি সব কিছুর জন্য স্যরি। তোমার বাইক আমি ইচ্ছে করে ফেলে দেইনি। শাওনের সাথে তোমাকে দেখে, হুস ছিলো না। ব্রেক কষতে গিয়ে ধাক্কা লেগে গেছে।
তাহি কিছু বললো না, একইভাবেই লেকের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিষ্প্রভ তাহির মৌন ভাবে থাকা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
অপরদিকে,
দীবানির উপর বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্র। আর দীবা তীব্রের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসফুস করছে। আসলে দীবার রাগের কারণ হলো- নিজের ফোনে চার্জ ছিলোনা বলে, তীব্রকে বলেছিলো ওর ফোনটা দিতে, সে ছবি তুলবে। যদিও তীব্র প্রথমে দিতে চায়নি, পরে দীবার অনুরোধে দিতে বাধ্য হয়। দীবা যখন তীব্রের ফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত তখনই তীব্রের ফোনে একটা কল আসে। দীবার হাতে তীব্রের ফোন থাকায় দীবা কল রিসিভ করে কানে ধরে, কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলেছিলো- হ্যালো তীব্র জানু, কোথায় তুমি, আমি তোমার বাসায় তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷ প্লিজ বেবি তারাতারি বাসায় চলে আসো। ব্যাস এতোটুকু শুনে রাগে দীবা কলটা কেটে দেয়। কল লিস্টে চোখ পড়ায়, তার নিজের নাম্বার সেভ করা ‘বন্ধুর বোন মানে আমারোও বোন’ সেটা ও চোখে পড়ে, যাতে দ্বিগুণ রেগে যায় দীবা।
কটমট দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকিয়ে নাম পরিবর্তন করে ‘বন্ধুর বোন মানে আমার বউ’ লিখে সেভ করে। তারপর তীব্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে – কে মেয়েটা? যে আপনার বাসায় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!
-আমার কাজিন রিয়া, তোমার মতোই সবসময়ই আমাকে বিরক্ত করে।
– আমি বিরক্তি করি, আর সেই বিরক্তি আপনাকে সহ্য করতে হবে, আমি দীবা যতদিন আছি ততোদিন আপনাকে বিরক্ত করবো। কিন্তু ওই মেয়ে কেনো আপনাকে বিরক্ত করবে? তাকে বলে দিবেন, আপনার বউ আছে, ওকে?
– কার বউ, কিসের বউ? আমার বউ আসবে কোথা থেকে আমি তো বিয়েই করিনি।
– করেন নি করবেন। আর কিসের বউ মানে, আমি আপনার বউ। আপনার ভবিষ্যত বউ৷ আপনাকে বিরক্ত করার অধিকার শুধু আমার, আর কারো না। তাই আপনার ওই কাজিনকে বলে দিবেন আমার কথা আপনার বউ আছে। তাতেও যদি আপনার পিছু না ছাড়ে তাহলে আমি নিজে গিয়ে ওই শাঁকচুন্নির মাথার চুল কেটে দিয়ে আসবো।
-ধমকে উঠে তীব্র, তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, রাগী স্বরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে- কে আমাকে বিরক্ত করে আর কে করেনা সেটা আমি বুঝবো, তুমি আমার বিষয়ে কথা বলার কে? বউ? বিয়ে হয়েছে তোমার সাথে আমার? নাকি আমি কখনো তোমাকে বলেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, বলেছি কখনো?
– না বলেন নি, কিন্তু একদিন ঠিকই আপনি আমাকে ভালোবাসবেন। আমাকে বিয়ে করে বউ বানাবেন।
– স্বপ্ন দেখতে থাকো, দেখো দীবা এখনো সময় আছে আমার পিছু ছেড়ে দাও। তুমি আমাকে কখনো পাবে না।
– কেনো পাবোনা, আপনি শুধু আমার।
-তোমাকে কিছু বলে লাভ নেই, থাকো তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে। তুমি যতোই চেষ্টা করোনা কেনো, কখনো আমাকে নিজের প্রতি দূর্বল করতে পারবে না৷ আর কখনো আমার আশেপাশে আসার চেষ্টা ও করবে না। বেহায়ার মতো আমার পিছু ঘোরা ছেড়ে দাও, সামান্য লজ্জাবোধ থাকলে কখনো আর আমার সামনে দাড়াবে না। বলেই তীব্র নিজের ফোন নিয়ে উঠে গেলো।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে দীবা’র, এতো অপমান কখনো করেনি কেউ, তীব্রের হাজার বারণ সত্যেও শুনেনি। বার বার বেহায়ার মতো ঘুরতো এই বুঝি তীব্র তাকে কখনো মেনে নিবে। তাকে ভালোবাসবে। কিন্তু দীবার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেলো। হয়তো কখনো পূরণ হবে না!
তাহি’র ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় দীবা। চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ায়। পিছু ফিরে তাহির দিকে থাকায়। তাহি ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়তো কিছুটা বুঝতে ও পেরেছে। দীবা’র হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে যায় তাহি। দীবা বলে- কোথায় যাবো?
কেনো, তুই না বললি শপিং করবি।
ওহ আচ্ছা, চল তাহলে।
তাহি ও দীবা বাইক দিয়ে শপিংমলের দিকে গেলো। তীব্র ও নিষ্প্রভ ও বাইক নিয়ে তাদের পিছনে গেলো।
ইন শপিংশল,,
একের পর এক কাচের চুড়ি দেখে পছন্দ করছে দীবা। মেয়েটা এসবের প্রতি খুবই আসক্ত। আর তাহি? সে তো শার্ট প্যান্ট ও লেডিস ক্যাডস পছন্দ করতে ব্যস্ত। তার ধারা কি কখনো চুড়ি শাড়ি কিনা হবে? পড়া তো দূরে থাক।
দীবা’র দিকে তাকিয়ে আছে তীব্র। মুখ দেখে বুঝতে পারছে, মেয়েটি তার কথায় কষ্ট পেয়ে কেঁদেছে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। বলাবাহুল্য দীবা খুবই স্ট্রং পার্সোনালিটির। আর তাহি? সে তো দীবা কেও ছাড়িয়ে। যেমন স্ট্রং পার্সোনালিটি তেমনই রাগী ও গম্ভীর।
ঘুরে ঘুরে সবকিছুতে চোখ ভুলাতে ভুলাতে, একটা সাদা পাথরের কাজ করা শুভ্র শাড়িতে চোখ আটকে যায় নিষ্প্রভের। কোনো কিছু না ভেবেই শাড়িটি কিনে নেয়। সাথে কাঁচের শুভ্র রাঙা চুড়িও। সে জানে তাহি শাড়ি পড়েনা। কিন্তু তবুও কিনেছে। বিয়ের পড় পড়তে বলবে।
আরেকটা শাড়ির দিকে চোখ যায় নিষ্প্রভের, সেটাও শুভ্র রঙের কিন্তু, কালো রঙের পাড় ও কালো পাথরের কাজ করা। শাড়িটির দিকে একবার ও চুড়ি দেখতে থাকা দীবার দিকে একবার থাকালো। তার বোনটাকে এই শাড়িতে খুব মানাবে। তাই এটাও কিনে নিলো। তারপর শাড়িটি দীবার সামনে গিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো। শাড়ি দেখে দীবা খুশি হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। নিষ্প্রভ হেসে বলে- আরে পাগলি বোন ছাড়। শাড়ির সাথে যা কিছু দরকার সব পছন্দ কর। জুতা চুড়ি অর্নামেন্টস যা তোর প্রয়োজন।
দীবা খুশি মনে সবকিছু পছন্দ করতে শুরু করলো৷ কে বলবে একটু আগে এই মেয়ে প্রিয় মানুষের অপমান জনক কথায় চোখের জ্বল ফেলেছে?
চলবে, ইনশাআল্লাহ
চলবে,,,,,
[