প্রিয় আসক্তি পর্ব -০১+২

“আমাকে ছেড়ে যাবেন না তীব্র ভাই, আমি আপনাকে না দেখে থাকতে পারিনা, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, প্লিজ যাবেন না,,,,

কাঁদতে কাদতে তীব্রের হাত ধরে উপরোক্ত কথাগুলো বললো দীবা।

ঝাড়া মেরে দীবার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো তীব্র। হাত উঠিয়ে দীবার মুখের সামনে আঙ্গুল নাড়িয়ে শাসিয়ে বললো- আর যদি কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করার চেষ্টা করো তাহলে আমি নিষ্প্রভে’র কাছে তোমার নামে বিচার দিবো,

বন্ধুর বোন বলে বার বার তোমাকে রেহাই দিয়ে দিবো সেটা ভেবো না, তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে থাবড়িয়ে সোজা করে দিতাম। অসভ্য মেয়ে লজ্জা করেনা নিজের ভাইয়ের বন্ধুর দিকে নজর দাও, আবার দেখতে পেলেই বিরক্ত করো,

তুমি যাতে আমাকে আর বিরক্ত করতে না পারো, তার জন্য আমি চলে যাচ্ছি, অনেক দূরে,,,

কথাগুলো বলতে বলতে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে লাগলো তীব্র, সেই দিকে হাত বাড়িয়ে কান্না করতে করতে দীবা বলে উঠলো – আমাকে ছেড়ে যাইয়েন না তীব্র ভাই, আমি শেষ হয়ে যাবো, আমি জীব*ন্ত লা*শ হয়ে যাবো, যাবেন না তীব্র ভাই, যাবেন না প্লিজ,,,! যাবেন না তীব্র ভাইইইই,,,,,

ধর-পড়িয়ে উঠে বসে দীবা, বিছানার পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে তীব্রের নাম্বারে কল দেয়।

______

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তীব্র, বালিশের নিচ থেকে বিকট শব্দে বেজে উঠে তার ফোন। ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে কানে ধরে, বিরক্তি নিয়ে বলে – কে?

ওপাশ থেকে সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে দীবা, তীব্রের কন্ঠ শুনে এখন তার শান্তি লাগছে। কোনো কথা না বলেই কল কেটে দেয় সে। তারপর শান্তিতে চোখ বুজে নিয়ে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়।

এমন মাঝরাতে কে ফোন দিতে পারে ভেবে পাচ্ছে না তীব্র, তার উপর কোনো কথা না বলেই কল কেটে দিয়েছে, আশ্চর্য হয়ে মোবাইলের স্কিনে চোখ ভুলায়, স্কিনে জ্বলজ্বল করছে – “বন্ধুর বোন মানে আমারো বোন”-!

তীব্রের বুঝতে সময় লাগলো না কে কল দিয়েছিলো, কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এতো রাতে দীবা তাকে কল দিলো কেনো? আর কল দিয়েছেই যখন কোনো কথা না বলেই আবার কল কেটে দিলো কেনো?

পর মুহূর্তেই নিজের উপর বিরক্ত হয় তীব্র, সে এই বাঁদর মেয়ে কে নিয়ে ভাবতে চায় না, এই মেয়ে যে হারে বজ্জাত, তার ফোনে লুকিয়ে নিজের নাম্বার ‘জানু’ লিখে সেভ করেছিলো দীবানি, দীবানি কে কিছু না বলে নিজেই নাম চেঞ্জ করে ‘বন্ধুর বোন মানে আমারো বোন’ লিখে সেভ করেছে। আর কিছু না ভেবে ফোন জায়গা মতো রেখে দিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় তীব্র।

___________________

দীবানি হাসান, নাইম হাসান ও দিয়া হাসানের একমাত্র মেয়ে, ভাই নিষ্প্রভ হাসানের আহ্লাদের পরী। সবাই শর্ট করে দীবা বলেই ডাকে।

____________________

“দীবাহহহহ” দীবা উঠ আর কতো ঘুমাবি, স্কুলে যাবি না, সময় তো হয়ে যাচ্ছে–

পাঁচ মিনিট ধরে রান্না ঘরে নাস্তা তৈরি করতে করতে ‘দীবা-কে ডেকে যাচ্ছেন “দিয়া হাসান”, অবশেষে আর না পেরে কু*ন্তি হাতে নিয়ে ছুটলেন নিজের একমাত্র কন্যার ঘরে।

ঘুমের মধ্যে মুখে শীতল কিছু অনুভব করতেই লাফিয়ে উঠে বসলো ‘দীবা’, হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে সারা ঘরে চোখ ভুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাউকে না দেখে আবারো চোখ বুজে খুলে বিছানার ডান পাশ দিয়ে নামতে যাবে, তখনই কারো আ*গু*ন চাহনির স্বীকার হয়।

মা-কে কু*ন্তি হাতে নিয়ে নিজের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেকি হাসলো দীবা’ হাসি হাসি ভাব মুখে ফুটিয়ে বললো- কি হয়েছে মা, তুমি এভাবে কু*ন্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন, আর আমার মুখে পানিই বা কেন ঢেলেছো?,

কথাগুলো বলতে বলতেই বিছানা থেকে নেমে গিয়েছে দীবা, অতঃপর তাকে আর পায় কে, একছুটে ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো!

দীবার এসবে মুটেও বিস্মিত হলেন না দিয়া হাসান, তিনি জানেন তার মেয়ে এমনই, কিছুক্ষণ বিরবির করে আবার কিচেনে চলে গেলেন দিয়া হাসান।

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে স্কুল ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিলো দীবা, তারপর টিভিতে সিরিয়াল দেখায় মগ্ন তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ‘আসছি মা’ বলে বেরিয়ে গেলো।

রিকশায় উঠে “তাহি”-কে কল দিয়ে বললো-আমি রিকশাতে আছি, তুই স্কুলের গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাক।

_______

রিশকা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে তাহি’র দিকে এগিয়ে গেলো দীবা। গিয়েই জড়িয়ে ধরলো, যেন কতোদিন পরে তাদের দেখা।কিন্তু তাদের প্রতিদিনই দেখা হয়, আর মোবাইলে তো কথা বলা আছেই। স্মিত হেসে তাহি ও দীবা’র পিঠে হাত রাখলো।

কিছুক্ষণ পরে ছাড়িয়ে বললো- কি রে দীবা আজ এতো লেইট করলি কেনো? তুই জানিস তোর জন্য দাড়াতে দাড়াতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে, এখন আমার পায়ের ব্যাথা সরানোর দায়িত্ব কে নিবে শুনি,

কানে হাত দিয়ে দীবা বললো- সরি আমার তাহি পাখি, আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে, আর তোর পায়ের ব্যাথা সরানোর জন্য আমি আমার ভাইকে কল করছি, ওয়েট-!

ফ্যাল ফ্যাল করে দীবা’র দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাহি, আসলে সে বুঝতে চেষ্টা করছে দীবা ঠিক কি বলেছে। যখনই বুঝতে পারলো তখনই দাঁত কিড়মিড় করে চোখ পাকিয়ে তাকায়,

তাহি’র তাকানো দেখে মেকি হেসে দীবা বলে- আরে দুস্ত আমি তো মজা করেছিলাম, আর কখনো দেরি হবে না প্রমিস।

কোনো কথা না বলে স্কুলের গেইট দিয়ে ডুকে যায় তাহি। দীবা ও তাহি’র পিছনে পিছনে স্কুলে ডুকে।

*****

ক্লাস শেষ করে স্কুলের পাশের একটি ক্যাফেতে গিয়ে বসলো তাহি ও দীবা। তখনই দীবার ফোনে কল আসে, এ সময় কে কল দিয়েছে দেখার জন্য দীবা’র সাথে তাহি ও ফোনের দিকে তাকালো। স্কিনে ভাইয়া নাম দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়।

ভাইয়ের ফোন দেখে তৎক্ষনাৎ কল রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দেয় দীবা, তারপর সালাম বিনিময় শেষ করে বলে- এই টাইমে তুই তো কল দিস না ভাই, আজ কি মনে করে এই সময়ে কল দিলি?

ওপাশ থেকে ‘নিষ্প্রভ বলে- আমি তোর স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছি, তোকে নিয়ে বাসায় যাবো, কোথায় তুই?

আরে আমি আর তাহি তো ক্যাফে তে এসেছি মাত্র, ফুচকা না খেয়ে যাবো না, তুই বরং বাসায় চলে যা,

ফুচকা খেতে হবে না আজ, জলদি আয় আমি দাড়িয়ে আছি,

আচ্ছা তুই ওয়েট কর আমি আসছি। কল কেটে দিয়ে তাহির দিকে তাকালো দীবা, ফোন লাউডে থাকাতে সব শুনতে পেয়েছে তাহি, কোনো কিছু না বলেই ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। দীবা ও তাহির পেছনে পেছনে যেতে লাগলো।

স্কুল গেইটের সামনে এসে ‘ নিষ্প্রভ’ কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, দীবা’র দিকে তাকিয়ে – আমি আসছি ফোনে কথা হবে- বলে দীবা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে হেটে চলে যায় তাহি।

লম্বা শ্বাস ছেড়ে দীবা ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যায়,

একটা কল আসায় ফোনে কথা বলতেছিলো নিষ্প্রভ, কথা বলা শেষ হলে নিজের পাশে তাকায়, দীবা’কে একা দেখে দীবা’র পিছনে চোখ ভুলায় ‘নিষ্প্রভ’, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে না পেয়ে বোনের দিকে তাকায়।

ভাইয়ের তাকানো’র মানে বুঝতে পেরে দীবা বলে- তাহি চলে গেছে।

বোনের কথা শুনে মলিন হাসে নিষ্প্রভ, যাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে এলো, সে’ই তার আসার খবর শুনে চলে গেলো।

ভাইয়ের ব্যথিত মুখের দিকে তাকালো দীবা, বললো- চল ভাইয়া, আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি।

কিছু না বলে রিকশা দাঁড় করিয়ে বোনকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো নিষ্প্রভ। যেতে যেতেই মনে মনে বলে নিষ্প্রভ- প্রেয়সী যতো ইগনোর করার করো, তবে একদিন এমন সময় আসবে যেদিন তুমিও আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার সঙ্গ পাওয়ার জন্য, আমার মতোই ছটপট করবে। আমার প্রতি আসক্ত হবে, আমাকে হারানোর ভয়ে তোমার চোখ ছলছল করবে,

বর্তমানে আমি তোমার কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় একজন ব্যক্তি, কিন্তু একদিন ঠিকই আমি তোমার কাছে তোমার “প্রিয় আসক্তি” হবো-!

চলবে,,,,,
#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০২
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)

রাত সাড়ে এগারোটা, ডিনার শেষ করে নিজের রুমের বেলকনিতে গিটার নিয়ে বসে আছে তাহি। পোড়নে ব্লাক জিন্স ও শুভ্র টি-শার্ট, তাহি সমসময়ই জিন্স,শার্ট বা টি-শার্ট এসব পড়ে অব্যস্ত।আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে গিটারে টুং টাং আওয়াজ করছে সে। তাহি বরাবরই এমন, একা সময় কাটাতে ভালোবাসে। হঠাৎ ওর মনে হলো বেলকনিতে কিছুর শব্দ হচ্ছে, গিটার রেখে উঠে দাড়িয়ে বাহিরে বেলকনির নিচে তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেলো। বেলকনি দিয়ে মই দিয়ে উঠছে দীবা, নিচে নিষ্প্রভ দাড়িয়ে আছে।

বেলকনির কাছে এসে দীবা বলে- আরে তাকিয়ে কি দেখছিস আমাকে উঠা,বলেই হাত বাড়িয়ে দেয়।

তারাতারি দীবার হাত ধরে টেনে উঠালো তাহি।

কিছু বলবে তার আগেই দীবা বলে- যা বলার পরে বলিস আগে ভাইয়া কে উঠা, বেচারা সব কিছু একা একা নিয়ে উঠতে পারছে না।

আবারো বেলকনির নিচে তাকায় তাহি, ততোক্ষণে নিষ্প্রভ মই দিয়ে উঠে আসছে, তাহির কাছাকাছি এসেই হাতে থাকা ব্যাগ গুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলে- এগুলো নাও শ্যামা পাখি, এগুলো রেখে হাত বাড়িয়ে দাও আমি উঠবো।

ব্যাগ গুলো সাইডে রেখে নিষ্প্রভের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় তাহি,
তাহি’র বাড়ানো হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের হাত রাখে নিষ্প্রভ, অতঃপর বেলকনিতে উঠে আসে।

নিজের রুমের মধ্যে এক কোণায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে ভাই-বোনের কান্ডকারখানা দেখছে তাহি। হঠাৎই দীবা ও নিষ্প্রভ একসাথে বলে উঠলো–

ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ____ হেপি বার্থডে তাহি পাখি!

চমকে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালো তাহি, মানে আজ তার জন্মদিন ছিলো অথচ তার একদমই মনে ছিলো না। বিস্মিত দৃষ্টিতে সামনে দাঁড়ানো দুই মানব মানবির দিকে তাকিয়ে থাকে।
একে-অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, তাহি’কে টেনে এনে নিজের সামনে দাঁড় করায় দীবা। সাথে নিয়ে আসা ব্যাগ থেকে একটি রেপিং পেপারে প্যাক করা বক্স এগিয়ে দেয়। তারপর জড়িয়ে ধরে বলে- হেপি বার্থডে মাই তাহি পাখি, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোকে। অবশেষে তুই ষোলো বছরে পা রাখলি।

আই এম জাস্ট অবাক ইয়ার, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমার জন্মদিন। আমাকে তো তুই চমকে দিয়েছিস।

আমি না, তোকে চমকে দেওয়ার আইডিয়া টা ভাইয়ার ছিলো। সেই তো এতো রাতে আমাকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। আমি ভেবেছিলাম তোকে সকালে স্কুলে উইশ করে দিবো।

আড় চোখে নিষ্প্রভের দিকে তাকালো তাহি। নিষ্প্রভ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। যার কারণে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়, আর সেই সুযোগটা নিয়েই চোখ মারে নিষ্প্রভ। চোখ বড় বড় হয়ে মুখ হা করে এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে নিষ্প্রভের দিকে তাকালো তাহি, আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বললো – “অসভ্য ডাক্তার”,

কিন্তু কথাটা দীবা ও নিষ্প্রভের দুজনেরই কানে এসেছে। দীবা তো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। আর নিষ্প্রভ সে তো ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি চেপে রেখেছে।

হাতে গিফট নিয়ে তাহি’র সামনে এসে দাড়ালো নিষ্প্রভ, গিফট বক্স বাড়িয়ে দিয়ে পরম আদুরে ভঙ্গিতে বললো- হেপি বার্থডে শ্যামা পাখি, তোমার ষোলো বছর পূর্ণ হয়েছে মানে আমার হওয়ার পথে তুমি এক দাপ এগিয়ে গিয়েছো।

কোনো কিছু না বলে চুপ করে নিষ্প্রভের হাত থেকে গিফট বক্সটি নেয় তাহি।

ততক্ষণে ব্যাগ থেকে কেক বের করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে দীবা, অতঃপর কেক কাটা শেষ করে, পার্টি স্প্রে হাতে নেয় দীবা ও নিষ্প্রভ। বেচারি তাহি কি জানতো এদের মনে মনে এতো প্যাঁচ? সামনে ফিরবার সুযোগ হয়নি, দুই ভাই -বোন মিলে স্প্রে করে সাদা ভূত বানিয়ে দিয়েছে তাকে। অতঃপর আর তাদের পায় কে দুজনই বেলকনির দিকে ছুটে গেলো, দীবা আস্তে আস্তে নেমে গেছে ততোক্ষণে, নিষ্প্রভ মইয়ে পা রাখবে তখনই তাহি বেলকনিতে উপস্থিত হয়। নিষ্প্রভের দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে।
তাহি’র চাহনি দেখে নিষ্প্রভ মোটেও ভয় পেলোনা, বরং দূরত্ব গুছিয়ে তাহি’র কাছাকাছি এসে দাড়ালো, দু-হাতে তার শ্যাম পাখির মুখ মন্ডল ধরে বললো- আর কয়েকটা বছর, আমি পুরোপুরি ডাক্তার হয়ে যাই, তখন তোমাকে একেবারে নিজের করে নিবো। তুমি না চাইলেও জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো। আসছি, ভালো থেকো, নিজের খেয়াল রেখো।

ক্ষুব্ধ হয়ে নিষ্প্রভের হাতের মাঝ থেকে নিজেকে মুক্ত করলো তাহি। রাগী স্বরে গম্ভীর কন্ঠে বললো- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার? কে হোন আপনি আমার? হুটহাট আমাকে এভাবে স্পর্শ করবেন না, নাহলে সেটা আপনার জন্য খুব খারাপ হবে। আর আপনি তো জানেন আমি কেমন?

হ্যাঁ জানি তুমি কেমন, তুমি রাগী,গম্ভীর, কম কথা বলো, রাস্তা- ঘাটে কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করলে পেটানো আরম্ভ করো। তো? তাতে কি আমি তোমাকে ভয় পাই? আমার তো এই দস্যি রানী’কেই চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার সবকিছু-কে ভালোবাসি। তুমি শুধু আমার, আমার একান্ত আসক্তি, আমার সবচেয়ে “প্রিয় আসক্তি”-!

আর দাড়ালো না নিষ্প্রভ বেলকনি দিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবে নিচে নেমে গেলো।
দুই ভাই বোন মিলে গেইট টপকিয়ে বাইকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্য চলে গেলো।

রাগে শরীর জ্ব*লছে তাহি’র, একেতো তাকে ভূত বানিয়েছে, তার উপর বড়ো বড়ো ডায়লগ মেরে গেলো। রেগে দেয়ালে ঘুষি দিলো, কিন্তু পরে নিজেই হাতের যন্ত্র*নায় ছটপট করতে করতে অনেক কষ্টে ফ্রেশ হলো, ব্যান্ডেজ করে ব্যাথার ঔষধ খেয়ে, নিষ্প্রভ-কে মনে মনে কয়েকশো টা গালি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

_______

মাঝ রাত হয়ে গেছে, তীব্র বুয়েটের স্টুডেন্ট, ল্যাপটপ এ বেশি ক্লাস করা হয় তার, একটা প্রজেক্টের কাজ করতে করতে মাঝ রাত হয়ে গেছে, সাথে মাথা ব্যাথা ও করছে। সবকিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে পেইন কিলার খেয়ে নিলো। বিছানায় শরীর এলানো মাত্রই চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করলো, কিন্তু তার ঘুমের বারোটা বাজাতে বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠলো।

বিরক্তি সূচক শব্দ করে ফোন হাতে তুলে নেয় তীব্র, স্কিন জ্বলজ্বল করছে “বন্ধুর বোন মানে আমারো বোন” নামটা দেখেই মনের অজান্তেই হেসে দিলো তীব্র। কল রিসিভ করে কানে ধরলো। কিন্তু কিছু বললো না,

ওপর পাশ থেকেও শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে, নীরবতা ভেঙে দীবা বললো- কেমন আছেন ইন্জিনিয়ার সাহবে? শরীর মন সব ভালো তো?

এতো রাতে কি এসব বলার জন্য ফোন করেছো? মানে আমাকে বিরক্ত না করলে তোমার ভালো লাগে না তাই না?

না, আপনাকে বিরক্ত না করলে আমার ঘুম আসে না। আর ঘুম না হলে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। নিজের ভালো তো পাগলেও বুঝে, আর আমি তো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। তাই তো আপনাকে বিরক্ত করে তারপর ঘুমোতে যাই।

বজ্জাত মাইয়া, সামনে পাইলে থাবড়িয়ে সোজা করে দিতাম

আরে ঐ ফকি*ন্নির পোলা, তুই আমারে থাপ্পড় মারবি? একবার সামনে আয় দেইখা নিমু তোরে,

কিহ.! আমি ফকিন্নির পোলা? আচ্ছা তুমি তো বড়লোকের মাইয়া তাহলে তুমি এই ফকিন্নির পোলার সাথে কথা বলো কেনো, খুব তো ভালোবাসি বলে পিছু ঘুরো।

জিহ্ব কেটে তওবা তওবা করে নিজের গালে চড় মারে দীবা, সে এটা কি বললো, অপরাধী গলায় বলে- ইন্জিনিয়ার সাহবে স্যরি, আসলে আপনি তো জানেন আমি বেশি ড্রামা সিরিয়াল দেখি, তাই এমন করে বলেছি। প্লিজ আপনি মাইন্ড কইরেন না।

ফাজিল মেয়ে ফোন রাখো, আর কখনো আমাকে কল দিবে না তুমি। দিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে,,

ওপাশ থেকে দীবা নেকা কান্নার অভিনয় করে বলে-

“অন্তরেতে দাগ লাগাইয়া রে বন্ধু আমার হইলানা,
কলিজা পুড়াইয়া গেলা রে ইন্জিনিয়ার সাহেব আমার রইলানা-!

মহা বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিলো তীব্র, মাথার মধ্যে বালিক চেপে ধরে শুয়ে পড়লো। এই মেয়ে তাকে শান্তিতে ঘুমোতে দিবে না।

চলবে,,,,,,

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here