#প্রিয়ংবদা
#ষোড়শ_পর্ব
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়
শারদ প্রভাত!ঘুমন্ত পৃথিবী তখনো হালকা কুয়াশার চাদরেতে ঘেরা।সবুজ ঘাসের ওপরে সেই কুয়াশা চাদর ছিটিয়ে দিচ্ছে মুক্তর মতো শিশির কণা।
প্রথম ভোরের লালচে প্রভায় সেই মুক্তো শিশির চমকে উঠছে হীরক খন্ডের ন্যায়!
হৃদিতা জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে গেল সেই নব্য দিবসের সূচনা!
নির্ঘুমে ক্রন্দনরত চোখদুটো ফুলে টুলে বেহাল অবস্থা! উশকো-খুশকো চুলের কোন বিন্যাস নেই!সব এমন ছন্নছাড়া!
হৃদিতা আজ আর বিছানা থেকে নামলো না। অন্য সব দিনগুলোর মতো বিছানা ঠিক করে, ফ্রেশ হয়ে অগোছালো চুলগুলো বাঁধলো না।
কেমন পাথরের মতো বসে রইলো চুপচাপ! ঘড়ির কাটা গিয়ে যখন একে একে সাড়ে আটের ঘরে থামলো, তখন গিয়ে মনটা কেমন কু ডাকলো টাপুর দেবীর।
মেয়েটা এখনো, বেরোচ্ছে না কেন?কিছু হলো কি? দুশ্চিন্তায় হলো মাতৃহৃদয়। ছুটে গেল মেয়ের ঘরের সামনে।
না! দরজা বন্ধ করেনি!চাপানো শুধি। কালরাতে খেতে ডাকতে এসে যখন দেখেছিলেন চেখ বুজে ঘুমোচ্ছে, তখন উনিই ভিড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন!
টাপুর দেবী দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকেন!হৃদিতা তখনও জানালার কাছে বসা,তবে এখন কপালটা জানালার গ্রিলে ঠেকিয়ে রেখে চোখের পলক বুজে নিয়েছে! টাপুর দেবী মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ডাকেন,
“হৃদ!মা!ওঠ?কলেজে যাবিনা?সাড়ে আটটা বাজে!ওঠ!”
হৃদিতা সাড়া দেয়না। টাপুর দেবী এবারটা ভয় পান। কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়েটার কপালে হাত দিতেই আৎকে ওঠেন খুব! মেয়েটার ভীষণ জ্বর!তিনি একপ্রকার চেঁচিয়ে ওঠেন,
“হৃদের বাবা!শুনছো!একবার এদিকে এসো না!হৃদের যে খুব জ্বর!”
.
মেঘকুঞ্জ!সকালের আবছা কুয়াশা যেন মেঘের মতোই ঘিরে রেখেছে তাকে!সেই মেঘের পরত ভেদ করে ভেতরে ঢুকছে সোনালী রোদ!শিশির ভেজা শিউলি গুলো শানবাঁধানো গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খুব অনাড়ম্বড়ে!
আদৃত সেদিকেই এগিয়ে গেল। খুব ধৈর্য নিয়ে খুটে খুটে কুড়িয়ে নিল সবকটা ফুল!তারপর সেগুলোকে রাখলো মাঝারি আকৃতির ফুলের সাজিটায়!
সুঁইয়ের ছিদ্রে সুতো ভরে খুব মনোযোগ দিয়ে জীবনের প্রথম বারের মতো গাঁথলো শিউলি মালা। প্রিয়তমাকে দিতে চাওয়া সেই উপহারটুকুর বিনিময়ে পরপর টানা পাঁচবার সুঁই বিঁধলো হাতে। তবে তাতে প্রেমিকহৃদয় টললো না। অনাভ্যস্ত হাতেই গেঁথে নিল মালাটি!শিউলির জন্য শিউলি!
আদৃত সেদিন আর কোন কাজেই গেলনা। সেই সকাল বেলা গিয়ে দাঁড়ালো হৃদিতার বাড়ির সামনের পাঁকা রাস্তার মোড়টায়! সকাল গড়ালো, ঘড়ির কাটা আবর্তন করে গেল যথারীতি! সূর্য মাথার ওপরে উঠলো একটা সময়! প্রখর তাপে শরীর ঘেমে সমনেয়ে এক,তবুও আদৃত এক পাও নড়লো না। ওভাবেই অপেক্ষা করে যেতে লাগলো কাতরভাবে!! তবে সেই কাতর প্রেমিকমন জানলো না, যে রমণীর তরে তার এই কাতরতা,এমন ব্যাকুলতা!সে নিজেই এখন প্রবল জ্বরে কাতর!
প্রেমিকপুরুষের অপেক্ষার অবসান আর তার করা হয়ে উঠলো না!
ঘড়ির কাটা যখন দুপুর দেড়টার ঘরে যাবার প্রস্তুতি নিল, ঠিক তখন আদৃতের মনে হলো,হৃদিতার হয়তো কিছু একটা হয়েছে! এমন মিড টাইমে কলেজ অকারণে মিস করার মতো মেয়ে সে না!
আদৃত আর কিছু ভাবলো না। ছুটে চলে গেল হৃদিতার বাড়ির পথে!তার প্রিয়তমার সাথে সাক্ষাৎ না করে আজ সে যাবে না, একদম না!
.
ভাদ্রের উত্তপ্ত দুপুর!সেই দুপুরের উত্তাপের চেয়েও বেশি উত্তপ্ত রায়বাড়ির পরিবেশ! থমথমে মুখে মেয়ের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ঋতমবাবু ও টাপুর দেবী! চোখমুখ থেকে ঠিকরে পড়ছে দুশ্চিন্তা! হঠাৎ জ্বর কেন হলো মেয়েটার?
ডক্টর বোস হৃদিতাকে ভালো মতো চেকআপ করে নিয়ে ঋতমবাবুর দিকে তাকালেন। কান থেকে স্টেথোস্কোপটা নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন,
“তেমন কোন ভয় নেই ঋতম!সিজনাল জ্বর!তবে ও বেশ অনিয়ম করছে মনে হচ্ছে। ঠিকঠাক মতো ঘুম আর খাওয়াদাওয়া কিছুই হচ্ছে না। এজন্যই শরীরটা বেশি দুর্বল হয়ে গেছে। আর দুর্বলতার জন্যই ইমিউন সিস্টেম হঠাৎ ফিভার দ্বারা আক্রান্ত হলো!
ওর প্রতি একটু কেয়ার করবি!দেখেশুনে রাখবি,আর কটা মেডিসিন দিচ্ছি সেসব নিলেই দুদিনে ঠিক হয়ে যাবে।
টেনশন নিস না।
আজ তবে আমি আসি!”
ঋতমবাবু ঘাড় নাড়িয়ে এগিয়ে যান ডক্টর বোসের পিছু পিছু। ওনাকে দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে টাপুর দেবীকে ডাকেন,
“হৃদের মা?একটু দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যাও না!আমি মোড়ের ফার্মেসীর দোকানটা থেকে প্রেসকিপশনের ওষুধ গুলো নিয়ে আসি।
মেয়োকে দেখে রেখ। পারলে কপালে একটু জলপট্টি দিয়ে দাও!”
টাপুর দেবী বেরিয়ে আসেন। মাথা নেড়ে সায় জানিয়েই উঠিয়ে দেন দরজার সিটকিনি!
ঋতমবাবু বেরিয়ে পড়েন!কাঁচা রাস্তাটা পেরিয়ে মোড়ের সামনে পৌঁছতেই আদৃতের সাথে দেখা হয় ওনার।
উনি খবাক নয়নে খানিকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্নাত্মক চাহুনী নিক্ষেপ বলে ওঠেন,
“আরে আদৃত যে!কি ব্যাপার?এদিকে যে হঠাৎ!কোন দরকারে?”
আদৃত যেন পড়ে গেল অথৈ সমুদ্রে। হঠাৎ ঋতমবাবুর সাথে দেখা য়ে যাওয়ায় চট করে কোন উত্তর পেলনা দেবার মতো! কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে উত্কর দিল,
“না মানে,আঙ্কেল! আসলে এমনিই একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম এদিকটায়। এদিকের পরিবেশটা তো খুব প্রিয় আমার।তাই আরকি!আবব আপনি আজ এখনো বাড়িতে আঙ্কেল, অফিসে যাননি?”
ঋতমবাবু বিমর্ষ চোখে চাইলেন, তদাপেক্ষা বিমর্ষ কন্ঠে বললেন,
“না বাবা!আসলে হৃদের আজ সকাল থেকেই হঠাৎ ভীষণ জ্বর এসেছে বুঝলে। ওর মা সকাল থেকে বডি স্পঞ্জ করে, জলপট্টি দিয়ে, মাথায় জল ঢেলেও সে জ্বর নামার নাম নেই!সেই যে শুরু থেকে ১০৩° তে গিয়ে থামলো, এখনো তাই!হঠাৎ এত জ্বর কেন এল সেটাই বুঝলাম না। পরে ডক্টরকে ডাকলাম। ও এসে দেখে গেল মাত্র।
সেসব ওষুধ আনতেই যাচ্ছি! ”
আদৃত চমকে তাকালো!”হৃদের জ্বর”দু শব্দের এই বাক্যটাই পৃথিবীর সবচেয়ে তিক্ত বাক্যের তকমা পেয়ে গেল মুহুর্তেই!খনিক ফ্যালফ্যালে শুণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঋতমবাবুর মুখপানে।তারপর খুবই করুন কন্ঠে শুধালো,
“আমি একটু দেখে আসি আঙ্কেল? ”
ঋতমবাবুর অভিজ্ঞ চোখ আদৃতের চোখে মুখে কেমন যেন বিষাদের ছাপ দেখতে পেলেন। ওনার হুট করেই মনে হলো, “হৃদের জ্বর” এই সত্যিটা তাদের মতো আদৃতের কাছেও তিক্ত,ভীষণ অপ্রিয়।
কিন্তু পরক্ষণেই কৌতুহলী মন প্রশ্ন সাজালো,
“হৃদ তো আমাদের আপন, তার কষ্ট সইতে না পারাটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক। তবে আদৃত?তার সাথে তো হৃদের কোন সম্পর্ক নেই! তবে?তবে কিসের এত বিষাদ ছেলেটার চোখে!যেন জীবনের প্রিয়দের মাঝে অন্যতম প্রিয় কারো অসুখ করেছে!”
ঋতমবাবু কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে ভাবলেন, আর যখন ভাবনা তার ফল দিল তখন তিনি চমকিত চোখে আদৃতের দিকে তাকালেন, আদৃতের চোখেমুখে তখন বিষাদের ছায়া,নিদারুণ অনুরোধ! ঋতমবাবু আগুপিছু না ভেবেই শুধালেন,
“তুমি কি হৃদকে পছন্দ করো আদৃত?
না মানে খারাপ ভাবে নিও না সরাসরি জিজ্ঞেস করার জন্য, তবে আমার সিক্সথ সেন্স বলছে ইউ বোথ লাইক এন্ড লাভ হৃদ!অ্যাম আই রাইট ইয়াং ম্যান?”
আদৃতের চোখেমুখে কোনরুপ লুকোচুরির ছাপ পাওয়া গেলনা। অত্যন্ত সপ্রতিভ সাবরে সে প্রত্ত্যুত্তর করলো,
“ইয়েস আঙ্কেল, ইউ আর রাইট!আই লাভ হৃদ!”
ঋতমবাবু হালকা হেসে বললেন,
“বাড়ি গিয়ে বসো আদৃত। আমি মেডিসিন নিয়ে ফিরে এ নিয়ে কথা বলবো!”
আদৃত মাথা নাড়লো। বাধ্য ছেলের মতোই চলে গেল ওনাদের বাড়ির পথে!
ঋতমবাবু নিজের মনেই হেসে বলে উঠলেন,
“হৃদ!অবশেষে তোর জীবনসাথীকে পেয়ে গেলিই তুই মা!সুখী হ!আদৃতের চোখে তোর জন্য যে ভালোবাসা দেখেছি তা মিথ্যে হতে পারেনা!কখনো না!”
.
আদৃত গিয়ে কলিংবেল চাপতেই দরজা খুললেন টাপুর দেবী।দু হাত ভেজা! সম্ভবত জলপট্টি দিচ্ছিলেন!আদৃতকে দেখে সপ্রতিভ হাসলেন। কোমরে গুঁজে রাখা আচলটা ছাড়িয়ে নিয়ে তাকে হাত মুছতে মুছতে বললেন,
“এসো বাবা,ভেতরে এসো!”
আদৃত ভেতরে ঢুকলো!টাপুর দেবী আবারো বলে উঠলেন,
“উনি ফোন করে জানালেন অবশ্য আমায়,বললেন তুমি আসবে!এসো বসো!আসলে হৃদটার হঠাৎ জ্বর আসাতেই একটু দুশ্চিন্তায় তো সবাই!তোমায় চা দিই বাবা?”
আদৃত হালকা হেসে উত্কর দিল,
“না না আন্টি!আমি ঠিক আছি। চা টা কিছু লাগবেনা। আমায় নিয়ে অত ব্যস্ত হবেননা।
আমি একটু হৃদকে দেখতে এসছি!আঙ্কেলের সাথে রাস্তায় দেখা,বললেন হুট করেই জ্বর বাঁধিয়েছে!সেজন্যই!”
টাপুর দেবী আবারও প্রশস্ত হাসলেন। তার হৃদিতার ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন,
“এসো আমার সাথে! ”
আদৃত অনুসরণ করলো!হৃদিতার ঘরে গিয়ে বসতেই কলিংবেলটা বেজে উঠল আবারো।টাপুর দেবী ব্যস্ত হয়ে চেঁচালেন,
“যাই!”
তারপরে আবারো আদৃতের দিকে ফিরে সহাস্য কন্ঠে বললেন,
“তোমার আঙ্কেল এলো বুঝি। তুমি একটু বোসো বাবা!আমি আসছি!”
আদৃত সম্মতি জানালো চোখের পলক ফেলে! টাপুর দেবী চলে যেতেই হৃদিতার মাথার ওপরে হাত রেখে খুব আস্তে কাতর স্বরে ডাকলো,
“হৃদ!”
হৃদিতা চকিতে তাকালো!জ্বরের ঘরো চোখ মেলে রাখা দায়!নিজের দেহের উত্তাপ জ্বালিয়ে দিচ্ছে নিজেরই চোখজোড়া, তবুও হৃদিতা চাইলো!তার বহুকাঙ্ক্ষিত সেই কন্ঠে আরো বেশি আকাঙ্ক্ষিত সম্বোধন তাকে চোখ মেলে তাকাতে বাধ্য করলো! হৃদিতা প্রথমটায় ভেবে নিল ঘোর!সে জ্বরের ঘোরে আদৃতকে হ্যালুসিনেট করছে। তাই ভেবে সে ফিচেল হেসে বলে উঠল,
“আজ কেন আবার আমার কল্পনা হয়ে এলেন আদৃতবাবু?কালতো কত নিষ্ঠুরভাবে এড়িয়ে গেলেন আমাকে!একটিবার ফিরেও তাকালেন না!কালো মেয়ের ওপর থেকে মোহ কেটে গেছে তাইনা?”
আদৃত মৃতু হাসলো, জ্বরের ঘোরেই যে উল্টোপাল্টা বকছে তা বুঝতে পেরে উত্তর দিল,
“আপনার থেকেই তো শিখেছি হৃদ!হুটহাট কাউকে এড়িয়ে যেতে হয়,কিকরে, সেসব তো আপনার কাছেই শেখা!”
হৃদিতাও হাসে!প্রায় বুজে আসা চোখে উত্কর দেয়,
“কল্পনার আপনিও দেখি ঝগড়া করেন আদৃতবাবু,সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপান!আপনি কেন মিথ্যে বললেন আমাকে?
প্রথম দিনগুলো,তখন তো এড়িয়ে যেতাম লজ্জায়,যদি আমার চোখ পড়ে বুঝে নিতেন আমারসুপ্ত অনুভুতি!
কিন্তু দিদার অসুস্থতার দিনের পর থেকে এড়িয়ে গেছি অভিমাণে!প্রথম প্রথম মিথ্যে বলার জন্য ঘৃণা জন্মেছিল আপনার ওপরে!তবে তা ক্ষণস্থায়ী হয়ে দীর্ঘস্থায়ী হলো সেই অযাচিত অভিমানটাই।
কতবার সেই অভিমান কাটিয়ে আপনার নাম্বারটাতে কল করতে চেয়েছি, কিন্তু শেষ অবধি পারিনি!
তবে, আপনিও তো অভিমাণ ভাঙানোর চেষ্টা করেননি!তাহলে?”
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনলেন ঋতমবাবু ও টাপুর দেবী!
টাপুর দেবী কিছু বলতে নেবেন তার আগেই ঋতমবাবু ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
“এখান থেকে চলো হৃতের মা!ওদের একা থাকতে দাও কিছুক্ষণ!তোমার মেয়ের জ্বর সারানোর আসল মেডিসিন এসে গেছে। এখন আর সত্যিই চিন্তা নেই!”
টাপুরদেবী মুচকি হেসে ঘাড় নাড়ান। খুব সন্তর্পণে সরে যান দরজার সামনে থেকে, পাছে আদৃত তাদের দেখে ফেলে অস্বস্তিতে ভোগে!
হৃদিতার কথা শুনে আদৃত খুব নরম স্বরে বলে ওঠে,
“আমি যে আমার হৃদের অভিমাণ বুঝিনি, তাকে আগলে রাখিনি,তার আদর আদর অভিমানটুকু ভাঙানোর চেষ্টা করিনি,তারজন্য হৃদের প্রেমিকপুরুষ সরি!খুব করে সরি!
হৃদ কি পারেনা তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আরেকটিবার ভালোবাসার সুযোগ করে দিতে!”
হৃদিতা দুর্বল হেসে জবাব দেয়,
“কেন পারবেনা!খুব পারে!তবে আপনি যে হৃদের কল্পনার আদৃত,আদৃতবাবু!বাস্তবের আপনি তো কখনো এমন করে বলেন না!তাহলে সুযোগটা কিকরে পাবেন?কল্পনাকে কি সুযোগ দেয়া যায়! ”
আদৃত হাসে। হঠাৎই মাথা নুঁইয়ে করে বসে এক নিষিদ্ধ কর্ম!ঠেঁট ডাবিয়ে চুমু আঁকে হৃদিতার কপালে। জ্বরের তাপে কপাল তখন ভীষণ গরম। সেই গরম ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়েই কেঁপে ওঠে আদৃত। এত জ্বর উঠেছে বুঝতেই পারেনি!
কেঁপে ওঠে হৃদিতাও!চোখ মেলে পিটিপিট করে তাকায় আদৃতের মুখপানে!তারপরে ছলছলে চোখে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি বাস্তব আদৃতবাবু?”
আদৃত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।উপহার দেয় এক দুর্বোধ্য হাসি!সেই হাসিতেই হৃদিতার সবটুকু কষ্ট,সব জ্বালা,সব যন্ত্রণা যেন মিলিয়ে যায় দুর অজানায়!মনের মাঝে ভর করে প্রগাঢ় প্রশান্তি।
পরক্ষণেই আদৃতের আরো দুটি হৃদয়কাঁপানো অধর স্পর্শ নিজের উত্তপ্ত কপোল যুগলে আবিষ্কার করে লজ্জায় মিঁইয়ে যায় হৃদিতা!
আদৃত জলপট্টির বাটিটা থেকে ভেজা কাপড়ের টুকরোটা তুলে নিয়ে বসিয়ে দেয় হৃদিতার কপালে। অদ্ভুতভাবেই বেশ ক’বারেই উত্তাপ কমে আসে কিছুটা। হৃদিতার মনে হয়, মনের শান্তিই মুখ্য। মন যখন শান্ত হয়,তখন যে শরীরে কোন কষ্টই দীর্ঘক্ষণ বাসা বাধতে পারেনা, তা স্পষ্টত প্রমাণিত আজ!
হৃদিতার শরীরের তাপ খানিকটা কমে এলে আদৃত টেম্পারেচার চেক করে। কিছুটা কমেছে, তবুও অনেক!১০২°!
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“এবারে আমি আসি!আঙ্কেলকে বলি তোমার মেডিসিন গুলো দিয়ে দিতে। খেয়ে একটু ঘুমোও।
ভয় নেই, আর এড়াবো না। সে সাধ্যই নেই আর! ”
হৃদিতা লাজুক হাসে। আদৃত যেতে গিয়েও যায় না। ফিরে এসে আবারো দাঁড়ায় হৃদিতার সামনে। পকেট থেকে কাগজে মুড়িয়ে রাখা শিউলি মালাটা বের করে খুব ধীনে,অতি যত্নে!সারাদিনের পরে সব ফুলই কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছে। চাপ লেখে ছিড়ে পড়েছে পাপড়ি!আদৃত তাই এগিয়ে দেয় হৃদিতার দিকে। হৃদিতা তাকায় একবার।
তারপরে প্রসারিত হেসে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি গেঁথেছেন!”
আদৃত হালকা হেসে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে!হাসে হৃদিতাও!দুর্বল হাত বাড়িয়ে নিয়ে নেয় লুটিয়ে পড়া মালাটাই। খুব করে ঘ্রাণ নেয় নাকের কাছে এনে!ভীষণ মিষ্টি। ফুল নেতিয়ে গেলেও সুগন্ধটুকু মিইয়ে যায়নি ভেবেই হাসে!আদৃত সে হাসি দেখে শান্তি পায়!দু চোখ ভরে কেবল দেখে যায়, এক ম্লান শিউলিকে অপর এক ম্লান শিউলির আহ্লাদ!
#চলবে!
[