#প্রিয়ংবদা
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়
২৫ + ২৬
আশ্বিনের দ্বিতীয় দিন!শারদ অন্তরিক্ষ সেজে উঠেছে হালকা নীলিমায়!তুলো তুলো শুভ্র নীরদ ভেসে বেরাচ্ছে সেই সুবিশাল শূণ্যে!বাতাসে তখল শিউলির ঘ্রাণ ভাসছে, পিচঢালা রাস্তার দুধারে ফুটে উঠেছে সার সার কাশফুল!আশ্বিনী হাওয়ার তালে তারা দুলে উঠছে আপনতালে!
প্রকৃতিতে তখন সাজ সাজ রব!ক’দিন বাদেই মা আসবে, মা দূর্গার আমন্ত্রণেই যেন তাদের নবসাজের এত আড়ম্বর!
সেই একই কারণে পূজোর জন্য নারকোলের নাড়ু করতে বসেছিলেন টাপুর দেবী! গোটা নারকেল ফাটিয়ে তা ভালো করে কুড়ে চুলোয় চড়িয়ে দিচ্ছিলেন, দুধ-গুড়-চিনি মেখে। ভালো মতো নেড়ে নিয়ে পাক হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করেই হাতে গোল গোল করে পাকিয়ে বানাচ্ছিলেন নাড়ু!
হঠাৎই তার রান্নার মাঝেই বেল বেজে ওঠে তাদের বাড়ির!টাপুর দেবী হৃদিতার উদ্দেশ্যে হাক তোলেন,
“হৃদ!দরজাটা খুলে দিয়ে যা তো!দেখ কে এলো!আমার হাত জোড়া,নারকেলের পুর লেগে আছে।আয় জলদি!”
হৃদিতা তখন স্টাডিরুমে বসে মনোবিজ্ঞানের একটা চ্যাপ্টার নিয়ে ভাবনারত!অনেক আঁকিবুকি করেও তার মস্তিষ্কের অন্তঃস্থলে এখনো অবধি হিউম্যান ভিশন প্রসেসটা ঢুকছে না!রেটিনা কিভাবে কাজ করে, অন্ধকারে কিছুক্ষণ থাকলে কেন চোখ অন্ধকারেই দেখতে শুরু করে এসব নানান জটিল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে চিন্তা করেও তাদের সমাধান করে ওঠা যাচ্ছে না! হৃদিতা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে!
তারই মাঝে কানে আসে মায়ের ডাক। সে অলস ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে মাকে জবাব দেয়,
“যাই!”
হৃদিতা দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মল্লিকা দেবী ও আনন্দবাবু দাঁড়িয়ে আছেন! হৃদিতা অবাক হয়!বিস্মিত নয়ন উন্মিলিত করে চেয়ে রয় ক্ষণকাল!
মল্লিকাদেবী হালকা হেসে তাকে জিজ্ঞেস করেন,
“ভেতরে আসতে বলবে না?”
হৃদিতার ঘোর কাটে,বিস্ময় কাটিয়ে সরে দাঁড়ায় দরজার এককোণে,করে দেয় অতিথিদের ভেতরে প্রবেশের পথ!
ওনারা ভেতরে আসতেই হৃদিতা দরজাটা বন্ধ করে দেয়!তারপর ধীর পায়ে গিয়ে উপস্থিত হয় ড্রয়িংরুমে! মল্লিকা দেবী দাঁড়িয়ে আছেন সাথে আনন্দবাবুও!ঘাড় ফিরিয়ে বাড়ির এদিক সেদিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন দুজনেই!
টাপুর দেবী রান্নাঘর থেকেই চেঁচিয়ে ওঠেন,
“হৃদ!কে এলো?”
হৃদিতা মিনমিন করে জবাব দেয়,
“এদিকে এসো মা। আদৃতবাবুর বাবা-মা এসছেন!”
টাপুর দেবী চমকিত নয়নে তাকান।নারকেল লেগে থাকা হাত নিয়েই বেরিয়ে আসেন রান্নাঘর থেকে। মল্লিকাদেবী ও আনন্দবাবুকে দেখে সপ্রতিভ হেসে বলে ওঠেন,
“আপনারা?দাঁড়িয়ে আছেন কেন?বসুন!হৃদ,তুই বসতে বলিসনি কেন ওনাদের?কবে হবে বুদ্ধি তোর?”
চাপা রাগ নিয়ে হৃদিতার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে,আবারো মল্লিকাদেবীদের বসতে অনুরোধ করেন।
হৃদিতা চুপসানো বদনে তাকায়! সে কি করবে বুঝতে পারছেনা। সেদিন যে দিদাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ওনার বাড়িতে ওনার ওপরেই এক প্রকার খবরদারি করে এলো, এরপর মল্লিকা দেবী কি তার ওপরে রেগে আছে,নাকি নেই সেই হিসেবটাই মেলাতে পারে না!
মল্লিকাদেবীরা আসনগ্রহণ করেন।টাপুর দেবী সেই ফাঁকে গিয়ে ধুঁয়ে আসেন বন্ধ হাতযুগল!মললিকাদেবীদের পাশের সিঙ্গেল সোফাটাতে বসে তিনিই প্রথম বাড়ান আলাপণের হাত!
“নমস্কার! আমি হৃদিতার মা!ওর বাবা তো অফিসে গেছে!আপনারা হঠাৎ, কিছু কি হয়েছে?”
আনন্দবাবু স্মিত হেসে জবাব দেন,
“না না,দিদি,কিছু হয়নি।ছেলের শশুড়বাড়ি,ঘুরতে আসতে পারিনা?তাছাড়া বাবা বিয়ের দিনক্ষণ সব ঠিক করে গেছে,আমরা তো কেউই আসিনি,আমি তো আমার পুত্রবধুটিকেও দেখিনি!তাছাড়া বেয়াই-বেয়ানের সাথে দেখা করার ইচ্ছে হলো,সেজন্য চলে এলাম। ক্ষমা করবেন না জানিয়ে আসার জন্য! ”
টাপুর দেবী প্রফুল্ল হাসেন।উত্তর দেন,
“ছি ছি,কি বলছেন?না জানিয়ে এসছেন তো কি?এটাও তো আপনাদেরই বাড়ি একপ্রকার।এসব বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না।
আপনারা বসুন,আমি হৃদের বাবাকে ডেকে পাঠাই,ও আসুক,সবার সাথে দেখা হয়ে যাবে!”
আনন্দবাবু উত্তর দিতে যাবেন,তার আগেই মল্লিকা দেবী বলে ওঠেন,
“না না দিদি। দাদাকে ব্যস্ত করার কোন দরকার নেই। দেখা তো হতেই থাকবে।কাজ ফেলে ওনাকে ডাকতে হবেনা। আপনার সাথেই গল্প করি!তাছাড়া যার সাথে দেখা করতে এসেছি সে তো আছেই,হৃদিতা!”
হৃদিতা চমকে যায়। মনে মনে ভীত হয়,তার সাথে দেখা করতে এসছে কেন তার জবাব খুঁজেও পায়না!
টাপুর দেবী মেয়েকে ডেকে বলেন,
“হৃদ!এদিকে আয়,অত দূরে দাঁড়িয়ে কেন তুই? ওনাদের প্রণাম কর!তোকে সব শিখিয়ে দিতে হবে নাকি এখন?সহবোধজ্ঞান ভুলে গেছিস?”
হৃদিতা মুখ কাচুমাচু করে তাকায়! ভীত নয়নে দুরুদুরু হৃদয়ে এগিয়ে যায় হবু শশুড়-শাশুড়ির দিকে। একদম তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হেলে গিয়ে প্রণাম করে পায়ে হাত দিয়ে! মল্লিকা দেবী মাথায় হাত রাখেন।আনন্দবাবু পায়ে হাত দেবার আগেই ধরে দাঁড় করিয়ে দেন, স্নেহসিক্ত কন্ঠে বলেন,
“পায়ে হাত দিতে হবেনা মা। আমি এমনিই আশির্বাদ করি!”
হৃদিতার ভয়ের সুতোটা কেটে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। সে হালকা হেসে মাথা দোলায়!
টাপুর দেবী ওনাদের বসতে বলে চলে যান রান্নাঘরে!যাবার আগে মেয়েকে আদেশের সুরে বলে যান,
“ওনাদের সাথে বসে গল্প কর!আমি আসছি!”
হৃদিতা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়!
টাপুর দেবী রান্নাঘরে ঢুকে যেতেই মল্লিকা দেবী হাতের ইশারায় বসতে বলেন হৃদিতাকে,একদম তার পাশে!
হৃদিতা বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে পগে!
মল্লিকা দেবী এবারে বন্ধুসুলভ কন্ঠে শুধান,
“নসেদিন তো খুব সাহস দেখিয়ে এলে হৃদিতা!আজ তবে এত ভয় পেয়ে আছো কেন?”
হৃদিতার চোখে আবারও খেলে যায় ভয়ের রেখা!সে মল্লিকা দেবীর পানে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে ওঠে,
“কই?না তো!”
মল্লিকা দেবী সুস্নিগ্ধ হাসেন।হৃদিতার মাথায় একবারের তরে বুলিয়ে দেন স্নেহের পরশ।তারপর পূর্বের চেয়েও বেশি বন্ধুসুলভ আওয়াজে প্রশ্ন করেন,
“আমার এলোমেলো সংসারটা গুছিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ হৃদিতা!তোমার এ ঋণ কখনো শোধ করার নয়!তুমি না থাকলে হয়তো ভাঙা সংসারটা আর জোড়া লাগতো না কখনোই!তোমার মতো করে কেউ বোঝাতেই পারতো না!বোঝানোর জন্য আবারও ধন্যবাদ!
তুমি কি আমার বন্ধু হবে হৃদিতা?সাধারণ বৌমা-শাশুড়ির সম্পর্কের উর্ধ্বে গিয়ে আমার বন্ধু হবে?এমন একজন যে আমার সব ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে,একদম সেদিনের মতো!আমি যার কাছে নির্দ্বিধায় সবটা ভাগ করে নিতে পারবো,হাসি,কান্না,সুখ,দুঃখ সবটা!
হবে তেমন বন্ধু? মা আর আমার সম্পর্কটা নামেমাত্র বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল হৃদ।আদতে আমি তো কখনো মায়ের বন্ধু হয়ে উঠতেই পারিনি।কোথাও একটা খাঁত রয়ে গিয়েছিল ঠিকই!নইলে কি আর নিজের ভুল বুঝেও রাজ্যের সংশয়ের ভীড়ে পৃষ্ট হয়ে এতগুলো বছর মানুষটাকে সংসারহীনা রাখতে পারতাম?পারতাম না।
তবে আমি চাই তোমার আমার সম্পর্কে এই খুঁতটুকু না থাক।এবারে অন্তত খাঁটি বন্ধুত্বের স্বাদটুকু পেতে চাই!
তুমি কি হবে হৃদিতা আমার বন্ধু? ”
হৃদিতা বিস্মিত হয়!তবুও মনের কোথাও একটা বয়ে যায় শান্তির স্রোত!সে স্নিগ্ধ হেসে জবাব দেয়,
“হবো দিদার বৌমা!আর সরি সেদিনের আচরণের জন্য! তবে আপনাকে ওভাবে না বললে হয়তো আপনি যেতেন না। জোড় না করলে হয়তো সংশয় কাটতো না!”
মল্লিকা দেবী আদরমাখা স্পর্শ বোলান হৃদিতার গালে।প্রসন্ন হেসে বলেন,
“এক্ষুনি না আমার বন্ধু হতে রাজি হলে।তুমি কি জানোনা?বন্ধুত্বে নো সরি নো থ্যাঙ্কস!”
হৃদিতা হেসে ফেলে!দুষ্টুমি করে বলে ওঠে,
“ওপস!মিসটেক।আর হবে না!”
মল্লিকাদেবীও হেসে ফেলেন এবার।
আনন্দবাবু পাশ থেকে গোমরা মুখে বলে ওঠেন,
“বাহ্,খুব ভালো!শাশুড়ী-বৌমার মিল হয়ে গেল,আর আমি আটি হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি!”
মল্লিকা দেবী ফোঁড়ন কেটে বললেন,
“আমরা যে আম-দুধ ছিলাম,সেটা কে বললো তোমাকে?”
আনন্দবাবু গাল ফুলিয়ে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ হ্যাঁ!বুঝলামই তো!ছেলের বৌকে আগেই নিজের দলে করে নিল।দলভারী করলে আরকি!
ভালো ভালো!করো।
কি আর করার?
তোমরা সবাই থাকো সুখে,আগুন জ্বলুক আমার বুকে!”
মল্লিকা দেবী হেসে ফেলেন।হৃদিতা হাসি চেপে শশুড়মশাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“মন খারাপ কেন করছেন আঙ্কেল?আমার কাছে দিদার বৌমার মতো,আপনিও ইকুয়ালি ইম্পর্টেন্ট!ডোন্ট বি আপসেট!”
হৃদিতার কথা শুনে আনন্দবাবু বিস্তর হাসেন। বলেন,
“তাহলে আঙ্কেল বলছো কেন?আমি তো বাবা হবো!বাবা বলো!”
হৃদিতা হাসে,সায় জানিয়ে বলে,
“আচ্ছা, বাবা!”
আনন্দবাবু খুশি হন।মল্লিকা দেবী বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে ওঠেন,
“আর আমি?আমিও তো তবে মা হবো!”
হৃদিতা ভ্রু কুচকে বলে,
“বাট ইউ আর মাই ফ্রেন্ড!আর বন্ধুদের যে কোন নামেই ডাকা যায়। আমি আপনাকে দিদার বৌমা বলেই ডাকবো!হিহি!”
মল্লিকা দেবী হেসে সম্মতি জানিয়ে বলেন,
“আচ্ছা! ডেকো!”
কথোপকথনের মাঝেই টাপুর দেবী ফিরে আসেন।হাতে খাবারের ট্রে,তাকে সাজানো গুড়-চিনির নাড়ু,ছানার সন্দেশ,আর মালপোয়া!”
সেগুলোকে সেন্টার টেবিলের ওপরে নামিয়ে রেখে বলে ওঠেন,
“নিন!সামান্য আয়োজন।না করবেন না দয়া করে। হৃদের বাবা ফিরে যদি শোনে,আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি ছিল তবে ভীষণই রাগ করবেন!”
মল্লিকা দেবী স্নিগ্ধ হাসেন।বলেন,
“এসব কি বলছেন দিদি?এত কিছু করেছেন,এসব সামান্য হয় কিকরে?আর আমরা না করবো না। প্রথম ছেলের শশুড়বাড়িতে এলাম,ভালো করে খেয়েই যাব!বেয়াইবাড়িতে নো কম্প্রোমাইজ! ”
টাপুর দেবী হাসেন।আনন্দবাবু হাতে তুলে নেন একটা নাড়ু!সেটাতে এককামড় বসাতেই মললিকা দেবী হৃদিতাকে বলে ওঠেন,
“হৃদিতা!তুমি নাও মা!”
হৃদিতা মাথা নেড়ে না করে, বলে,
“আমি এখন খাবো না দিদার বৌমা। আপনারা খান!”
টাপুর দেবী মেয়েকে চাপা ধমক দিয়ে বলেন,
“এই মেয়ে!দিনদিন ভয়ানক অসভ্য হচ্ছো তুমি! দিদার বৌমা আবার কেমন ডাক হ্যাঁ?আন্টি,কাকিমা অথবা মা ডাকো!”
হৃদিতা ঠোঁট উল্টে ফেলে। মুখভার করে দাঁড়িয়ে রয় মায়ের বকুনি শুনে।মল্লিকা দেবী বাঁধা দিয়ে বলেন,
“আহা দিদি!ওকে বকছেন কেন?বকবেন না। ডাক,সে তো প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত নির্বাচন তাইনা। মন থেকে যে সম্বোধনে ডাকতে ভালো লাগে সেটার মাঝেই অনেক সম্মান,ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।জোড় করে সম্মানের ডাক ডাকাতে পারলেও মনে যদি তা না থাকে, তবে অযথা সে ডাক যে নিরর্থক।
ওর আমাকে “দিদার বৌমা” ডাকতে ভালো লাগে। ও সে মতোই ডাকুক না!আমি এতেই আমার প্রতি ওর ভালোবাসা,শ্রদ্ধা খুঁজে পাই!
ওর যদি কখনো মন থেকে “মা” ডাক আসে,তবে সেদিন নাহয় ও নিজে থেকেই ডাকবে!তার আগে এসব নিয়ে ওকে বকাঝকা করার দরকার নেই।
আমি চাইনা ও ওর মনের বিরুদ্ধে যাক!”
হৃদিতা মুগ্ধ নয়নে তাকায় তার শাশুড়ী রুপী মহিলাটির দিকে!মন থেকে উপচে পড়ে সেই রমণীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।তার মনে হয়, দিদা যে এত কিছুর পরও ওনাকে ভালোবেসে গেছেন তা এমনি এমনি নয়!কারণ ছিল বলেই বেসেছেন।অন্যের প্ররোচনায় একটা ভুল করে ফেলেছিলেন,সে ভুল শুধরে নিতে নিয়েছেন প্রচুর সময়ও,তবুও ওনার মনটা খাঁটি। এটাই কারণ দিদার ওনাকে ভুল না বোঝার, ওনাকে ভালোবাসার,স্নেহ করার!
হৃদিতা স্বস্তিতে হাসে।আদৃতের কাছে নিজ মনে অগুন্তিবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে, এত সুন্দর একটা পরিবার তাকে দেবার জন্য, এত ভালোবাসার জন্য!
আর টাপুর দেবী ঈশ্বরের চরণে শতবার প্রণাম জানান
তার মেয়েটির জীবনে এমন একটা পরিবার এনে দেবার জন্য।
তাদের অবঅতমানেও যে মেয়ের সুখে কোন কমতি পড়বে না তা বুঝে মাতৃহৃদয় প্রসন্ন হয়,বুক থেকে নেমে যায় বিশাল চিন্তার বোঝা।
মেয়ের আগাম ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অগাধ শান্তির রেশ বয়ে যায় তার সর্বাঙ্গে!
.
নদীর স্রোতে বাঁধ দেয়া যায়, তবে বাঁধা দেয়া যায়না সময়কে!তার বয়ে চলা অনিবার্য!তাকে নাতো বেঁধে রাখার উপায় আছে আর নাতো আটকাবার। সে তো আপন নিয়মেই বয়ে চলে ভবিষ্যতের এক পাতা থেকে অন্য পাতার দিকে!
দেখতে দেখতে হৃদিতার বিয়ের সময়ও চলে এসেছে!চোখের পলকেই কেটে গেছে আঠারোটা দিন।
এই ক’দিনে হৃদিতা আরো ভালো করে চিনেছে সেনবাড়ির প্রতিটা মানুষকে! বুঝেছে তার প্রতি আদৃতের প্রণয়ের গাঢ়ত্ব!প্রতিক্ষণে নিজের কালো-অবহেলিত জীবনটাকেই দিয়েছে সর্বাধিক সুখী নারীর উপাধি।
কাদম্বিনী দেবীর মুখে একবার সে শুনেছিল,
“ভগবান যা করেন,মঙ্গলের জন্যই!”
হৃদিতাও এখন বিশ্বাস করে কথাটা!ছোট থেকে তার গাত্রবর্ণ নিয়ে সকলের থেকে এত আঘাত পেয়েছিল বলেই হয়তো ভগবান তার ঝুরিতে এতটা সুখ রেখেছেন।সেই কষ্টের উপলব্ধিগুলো করেছিল বলেই হয়তো,আজ ভালোবাসার উপলব্ধিগুরো তার কাছে এত মধুর,এত স্নিগ্ধ!
আজ হৃদিতার আইবুড়ো ভাত!বিয়ের আগে,বাবার বাড়িতে শেষবারের মতো ঘটা করে খাওয়া।কাল তো বিয়ে! সারাদিন উপোস!আর তো বাবা-মার সাথে এমন করে খেতে বসা হবে না তার,ভাবতেই মনটা কেঁদে উঠলো!
টাপুর দেবী তা দেখে মেয়েকে এক হাতে আগলে নিয়ে বললেন,
“কাঁদেনা মা!কাঁদতে নেই,আজ শুভদিন না?তাছাড়া তুই তো ফাইনাল পরীক্ষা না হওয়া অবধি আমাদের কাছেই থাকবি!তাহলে আর কান্নাকাটি কিসের বলতো!নে খেয়ে নে তো!তোর জন্য তোর সব পছন্দের পদ রেঁধেছি!
ভাত,মুগডাল,গোল গোল করে আলুভাজা,কাতলামাছের ঝোল,সর্ষে ইলিশ,আমড়ার টক!
নে শুরু কর তো!”
হৃদিতার কান্না তবুও থামলো।নিঃশব্দে চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো একের পর এক রঙহীন জলবিন্দু!
ঋতমবাবু মেয়ের পাশেই বসে ছিলেন।তাকে কাঁদতে দেখে তিনি এবারে ব্যাথিত কন্ঠে বরলেন,
“কাঁদিস কেন হৃদ?কাঁদবিনা একদম!তোকে কাঁদতে দেখলে কি বাবা-মার ভালো লাগে বলতো!তোর চোখের জল আমাদের সহ্য হয়না,তা কি তুই বুঝিস না?
আর কাঁদার কি আছে?বিদায় যদি হয়ও,তবুও তো সমস্যা নেই।আদৃত যথেষ্ট ভালো ছেলে।বুঝদারও।তোর মন খারাপ হলে ওকে বলবি,ও ঠিক দিদিয়ে যাবে তোকে আমাদের কাছে।
ব্যাস!আর চিন্তা কেন?
এবারে নে তো মা!খেয়ে নে!আর নো কান্নাকাটি!”
হৃদিতা বাবার কথা শুনে একটু শান্ত হলো।হালকা হেসে মুখে তোলে খাবারের প্রথম গ্রাস!মনে মনে ভেবে যায়, মেয়েদের শশুড়বাড়ি চলে যেতে হবে,এই নিয়মটার চেয়ে বিষাদময় প্রথা হয়তো বর্তমান সমাজে আর কিছু হয়না,কিছুইনা!
২৬.
২১শে আশ্বিন!নিশিথের কৃষ্ণতমসা কেটে গিয়ে চারিদিকে ফুটতে শুরু করেছে রবিকরের প্রভা!সদ্য ভোরের ধুসবরাঙা আকাশটা জুড়ে মুখর হয়ে উড়ছে কত-শত বিহঙ্গ!সেই আলো-আঁধারির মাঝেই মল্লিকাদেবী ও কাদম্বিনী দেবী বেরিয়ে এসেছেন তাদের বাড়ির পাশের বাঁধানো পুকুরপাড়ে।
গঙ্গানিমন্ত্রণ শেষে গায়ে হলুদের জল ভরে নিলেন বড় পিতলের কলসে!
মল্লিকা দেবী শাশুড়ীমায়ের উদ্দেশ্যে বলেন,
“মা!আদৃতের গায়ে হলুদ হলে তো সেই হলুদ হৃদিতার বাড়িতে পাঠাতে হবে তাইনা?ও বাড়িতে গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে কে যাবে?”
কাদম্বিনী দেবী উঠে সিড়ি ভেঙে উপরের দিকে পা বাড়ান।পিছু পিছু আসেন মল্লিকা দেবীও!রাস্তায় এসে কাদম্বিনী দেবী উত্তর দেন,
“তোমার বাবা আর দিদিভাই যাবে ক্ষণ!চিন্তা করোনা!”
মল্লিকা দেবী সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন!
তারপরে দ্রুত পা চালিয়ে চলে আসেন বাড়িতে!আদৃত কে তখন বাগানে এনে দাঁড় করিয়েছে অন্বেষা! গায়ে একটা সাদা ধুতি আর মোটা লাল গামছা!কুয়াশা পড়া শীতল ভোরে ঠকঠকিয়ে কাঁপছে সে।কিন্তু কিছু করার নেই!বিয়ের আচার,মানতে তো হবেই!
কাদম্বিনী দেবী নাতির সামনে এসে দাঁড়ান। আগে থেকে বেটে রাখা কাঁচা হলুদের বাটিটা পাশ থেকে তুলে নেন হাতে!মল্লিকা দেবীর উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন,
“বৌমা,বাড়ির ভেতর থেকে, রত্না, জয়া আর আলোকে ডেকে নিয়ে এসো তো!পাঁচজন সধবা লাগবে!”
মল্লিকা দেবী তাই করেন!বাড়ি থেকে ডেকে আনেন সকলকে!আদৃত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ঠাম্মির প্রতি!
মানুষটার মাঝে কোন বিভেদজ্ঞান নেই। নইলে বাড়িতে যারা কাজ করে,তাদেরকে নিজের নাতির বিয়েতে এঁয়ো করে কে ডাকে?
সকলে চলে এলে নিয়মমতোই হলো আদৃতের গায়ে হলুদ।একে একে সকলে গায়ে হুলুদ ছুঁইয়ে মাথায় ঢেলে দিল পুকুর থেকে আনা জল।
কাদম্বিনী দেবী আদৃতের হলুদমাখা মুখটি পানে তাকিয়ে হেসে বলে উঠলেন,
“আজ থেকে তোমার আইবুড়ো নাম ঘুচলো দাদুভাই!সুখী হও!”
.
সকালের আলোটা যখন আরো কিছুটা ফুটলো,রোদের ঝলমলে রশ্মি এসে লুটোপুটি খেল হৃদিতার ঘরের মেঝেতে ঠিক তখনই হৃদিতাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন আশুতোষবাবু ও অন্বেষা! ড্রাইভারকে দিয়ে একে একে গায়ে হলুদের তত্ত্ব গুলো বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি এলেন ভেতরে।ঋতমবাবু দরজাতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।তাদের দেখামাত্র দুহাত জোড় করে বলে উঠলেন,
“নমস্কার মেসোমশাই!আসুন ভেতরে আসুন।
অন্বেষা মামণি,এসো তুমিও ভেতরে এসো!
আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো!”
আশুতোষবাবু সপ্রতিভ হাসেন!অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলেন,
“না না,ঋতম!সমস্যা কিসের!
এটাও তো আমারই আরেক ছেলের বাড়ি!নিজের বাড়িতে হেসে আবার সমস্যা কি?”
ঋতমবাবু সন্তুষ্টিতে হাসেন!আশুতোষবাবু তার হাতে হলুদের বাটিটা ধরিয়ে দিয়ে বলেন,
“দিদিভাইয়ের গায়ে-হলুদটা করে নাও তাড়াতাড়ি! গোধুলী লগ্নেই কিন্তু বিয়ে!”
ঋতমবাবু সম্মতিসূচক হাসেন।আশুতোষবাবুদেরকে ভেতরে বসতে বলে আস্বস্ত কন্ঠে বলেন,
“আপনি চিন্তা করবেন না মেসোমাশাই,সব ঠিকঠাকই হবে!আচ্ছা, বসুন,আমি টাপুরকে বলি একটু মিষ্টিমুখ করে তারপর যাবেন!না করবেন না!”
আশুতোষবাবু ঘাড় দুলিয়ে সায় জানান।
ঋতমবকবু চলে যায় রান্নাঘরে স্ত্রীকে অতিথি আপ্যায়নের কথা বলতে।
অন্বেষা দাদুর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“দাদু,তুমি বসো!আমি একটু হৃদের সাথে দেখা করে আসি!প্লিজ!”
আশুতোষবাবু স্নিগ্ধ হেসে অনুমতি দেন।
অন্বেষা চলে যায় হৃদিতার ঘরের দিকে।
ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে হৃদিতা বিছানায় বসে কিছু ভাবছে!পরণে গাঢ় গোলাপী পেড়ে হলুদ শাড়ি!কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িতে মেয়েটাকে খুব মানিয়েছে, একদম পুতুলের মতো।অন্বেষা হৃদিতার দিকে এগিয়ে যায়। কাঁধে হাত রেখে ডাকে,
“হৃদ!”
হৃদিতা চোখ তুলে তাকায়! ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে একটুকরো হাসি।অন্বেষা নিজের চোখের কাজল হাতের আঙুলে ভরে লাগিয়ে দেয় হৃদিতার কানের পিঠে।
হৃদিতা হালকা হেসে বলে,
“নজর কাটাচ্ছো?আমাকে কে নজর দেবে?কালো মেয়েরা কারো নজরে পড়ে না অনু!”
অন্বেষা প্রতিবাদী কন্ঠে প্রত্ত্যুত্তর করে,
“অন্য কারো নজরে পড়ে কি হবে?দাভাইয়ের নজরে তো পড়েছো,এই অনেক!আর কারো নজরে পড়ার কথা ভাবলে না দাভাই পুরো বিনা ডিটারজেন্টে ধুঁয়ে দেবে!”
অন্বেষার কথায় হৃদিতা হেসে দেয়!তাল মিলিয়ে হাসে অন্বেষাও। হৃদিতার ছেড়ে রাখা চুলগুলোকে হাত বুলিয়ে তা একটু ঠিক করে দিয়ে বলে ওঠে,
“বাইরে চলো, তোমার গায়ে হলুদের তত্ত্ব এসে গেছে হৃদ। আমার দাভাইয়ের গাঁয়ে ছোঁয়ানো হলুদ মেখে আজীবনের তরে তার হয়ে যাবার সূচনা করো!জলদি চলো।দেরী করোনা!”
হৃদিতা লাজুক হাসে।তারপর অন্বেষার হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়, বেরিয়ে আসে বাইরে।
বাগানে এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়ে কলাগাছে ঘেরা মন্ডপের দিকে।হৃদিতা সেখানেই রাখা পড়ির ওপরে গিয়ে দাঁড়ায়!
টাপুর দেবী মেয়েকে বরণ করে নেন একবার!তারপরে আশেপাশের চারজন প্রতিবেশিনী এঁয়োকে ডেকে সেরে ফেলেন গাত্রহরিদ্রার যাবতীয় নিয়মাদি!মেয়ের কপোলদ্বয়ে হলুদ ছুঁইয়ে দেন খুব যত্নে।কলসের জল মাথায় ঢেলে সম্পন্ন করেন সকল বিধান।
তারপর হৃদিতাকে পিড়ি থেকে নামতে বলে সামনে রাখা মাটির দিয়া গুলোয় পায়ের গোড়ালি দিয়ে চাপ দিয়ে তা ভেঙে ফেলতে বলেন, সাথে উচ্চারণ করতে বলেন,
“আজ থেকে আমার আইবুড়ো নাম ঘোচালাম!”
হৃদিতা সে মতোই সবটা করে!সকল নিয়মাচারের মাঝে অন্বেষা বেশ ক’টা ছবি তুলে ফেলে হৃদিতার!ক্লিক,ক্লিক!
সেগুলো ঝটপট পাঠিয়ে দেয় আদৃতের নাম্বারে। আদৃত ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিল। হঠাৎ বোনের নাম্বার থেকে মেসেজ এসছে দেখে, তাতে ক্লিক করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক হলদে পরীর মুখাবয়ব! হলদে শাড়িতে হলুদমাখা গালে মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে থাকা সেই হলদে পাখিটির প্রেমেই আরেকবার পড়ে যায় আদৃত। বুকের ঠিক বাঁ-পাশটায় হাত রেখে বলে ওঠে,
“এই মেয়েটা আমায় মেরেই ফেলবে!”
.
গায়ে হলুদের নিয়ম শেষেই বিদায় নেন আশুতোষবাবুরা।হৃদিতা ঘরে ঢুকে একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে, হালকা খয়েরী রঙা একটা শাড়ি পড়ে।মাথার চুল তখন ভেজা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তেই শুনতে পায় মেসেজ টোন বাজার আওয়াজ। হৃদিতা ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়! চুলে আরও দুবার তোয়ালে চালিয়ে তা মেলে দিয়ে আসে ব্যালকনিতে!ব্যালকনির দরজাটা না চাপিয়েই চলে আসে ঘরে ভেতর। স্বর্ণতুল্য রোদে মাখামাখি হয়ে যায় হৃদিতার বিছানার চাদর,ঘরের দেয়াল,মেঝে সব!ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বসে পড়ে বিছানায়! ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে অন করতেি চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিজেরই হলুদসাজের একটি ছবি।
নাম্বারটা আদৃতের!
ঠিক ছবিটা নিচেই একটা বড় মেসেজ,চিঠির আঙ্গিকে লেখা,হৃদিতা পড়তে শুরু করে,
“এই যে হলদে পাখি,
হলুদসাজে তোমায় কেমন লাগছিল তার বর্ণনা দিতে চাইলেও পারবো না জানো তো!
তবে এটুকু জেনে রাখো, নিকশ কালো রাতের শেষে যেমন ভোরের সূর্য প্রথম কিরণ ছড়ায়,তোমার এই হলুদাভ রুপও তেমন আমার দীর্ঘ ছাব্বিশ বছরের প্রেমহীন জীবনটায় ছড়িয়ে দিয়েছে প্রণয়ের আলো!
তোমার কাছে আমার কেবল একটিই চাওয়া আমার জীবন থেকে এই প্রণয়ালোক কখনো সরিয়ে নিওনা,কখনো আমাকে আবার ডুবিয়ে দিওনা অপ্রেমের অন্ধকারে!
আমার হলদে পাখি হয়ে সারাজীবন ছড়িয়ে দিও তোমার হলদে দ্যুতি আমার জীবনে,লাল-নীল প্রেমের ব্যাথাগুলোকে প্রশমিত করো সেই প্রণয়আভায়!
ভালোবাসা হলদে পরী!আমার হৃদয়ের সব ভালোবাসা তোমার জন্য।
আর শোন,আজ সন্ধ্যেয় কিন্তু তুমি একেবারে আমার হবে, আমার প্রেমে বাঁধা পড়বে!
আমার জন্য সাজাবে কিন্তু নিজেকে!লাল টুকটুকে বেনারসী পড়ে বউ সাজবে,কপালে আঁকবে চন্দন,খোপায় বাঁধবে গাজরা,তোমার টুকটুকে বধূবেশ দেখে আমি মুগ্ধ হবো,তারপর,আবারো আরও একবার নতুন করে প্রেমে পড়বো!
তুমি কিন্তু সেজে থাকবে!ভালোবাসি হৃদ।
পত্রান্তে,
তোমার আদৃতবাবু! ”
হৃদিতা আবেশে চোখ বুজলো,প্রতিটা শব্দ রন্ধ্রে রন্ধ্রে খেলিয়ে দিল প্রণয়ের ঢেউ!বন্ধ চোখের সীমানায় বাসা বাঁধলো শত রঙিন স্বপ্ন!বুকের ভেতর ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ালো ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি!
আদৃতের বলা সেই “তুমি” ডাকটাও অনুভূতিগুলোকে পৌঁছে দিল তুঙ্গে!
হৃদিতার হঠাৎ ভীষণ সুখে দমবন্ধ হয়ে এলো।মন আনচান করে উঠলো, অপেক্ষায় কাতর দুটো আঁখি প্রতিক্ষা করে গেল গোধুলী বেলার, কনে দেখা আলোয় বধূবেশে আদৃতের চোখে চোখ রাখার!তার সীমাহীন ভালোবাসায় বাঁধা পড়ার!
#চলবে!
[