প্রিয়দর্শিনী,পর্ব:৬+৭

#প্রিয়দর্শিনী
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_৬
🍁
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর একটা অনাকাঙ্ক্ষিত খবর শুনে যূথীর মাথায় বাজ পড়ল।সে ভাবতেও পারেনি গতকাল ভোরবেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনার রেশ ধরে এতকিছু হয়ে যাবে।
আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কাঁথা বালিশ ছুড়ে ফেলে যূথী রান্নাঘরে ছুটে গেল।লতিফা চাচী তাঁর প্রিয় গানের লাইন গুনগুন করে গাইছেন আর খুন্তি দিয়ে কড়াইয়ে কি যেন নাড়ছেন।
যূথী উদভ্রান্তের মতো বলতে লাগল,

‘ সজীব এসব কি বলছে চাচী?’তুমি নাকি আমাকে শহরে পাঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছো?’

লতিফা চাচী বিশ্বজয়ী হাসি দিলেন।কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মুখ গম্ভীর করে বললেন,

‘ আমি আর তোর চাচা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা তোর ভালোর জন্যই।এই কাজটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তাহলে আর এই অঘটন গুলো ঘটতো না।’

‘ চাচী চাচী চাচী..এসব কি বলছো তুমি!এ পর্যন্ত যা যা হয়েছে সবগুলোই এক্সিডেন্ট। এগুলোর সাথে আমাকে শহরে পাঠানোর কি সম্পর্ক?’

‘ আর যাতে কোনো এক্সিডেন্ট না হয় সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।অযথা চেঁচামেচি করো না।আমার কথার কোনো হেরফের হবে না তা আগেই বলে রাখলাম।’

যূথীর চেহারা বিষাদে ছেঁয়ে গেল।দুনিয়া উল্টে গেলেও সে শহরে যাবে না।যা হয় হোক।যেভাবেই হোক চাচীর মন গলাতে হবে।চাচীকে বুঝাতে হবে যে শহর নামক শব্দটাতে তাঁর এলার্জি আছে।

‘ দেখো চাচী ছোট থেকে আমি গ্রামে বড় হয়েছি।এখানের মাঠঘাট সব আমার পরিচিত।এখন যদি হুট করে শহরে চলে যাই আমি কি নিজেকে মানাতে পারব?ওখানের মানুষের চালচলন আচার ব্যবহার ভিন্ন রকম।এতকিছুর ভিড়ে আমি তো হারিয়ে যাব।’

‘ আমাকে কথার জালে ভুলাতে পারবে না তুমি।আমি যখন একবার বলেছি তোমাকে শহরের কলেজে ভর্তি করিয়ে দেব তখন এটাই ফাইনাল।’

যূথী ঠোঁট উল্টে প্রায় কেঁদেই দিল।অবস্থা সুবিধার লাগছে না।চাচী তুমি তুমি করে বলছে। এর মানে হলো তাঁর কোমলমতী চাচী এবার পাষাণ রূপ ধারণ করেছে।
শহরে যাওয়ার থেকে তো ভালো ছিল ওই লোকগুলো তাঁকে মেরে উঠোনে ফেলে চলে যেত।
মনের দুঃখ সামাল দিতে না পেরে সে রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে নিল।
তারপর নতুন উদ্যমে আবার চাচীর পেছনে ঘুরঘুর করতে লাগল।কখনো কেঁদে,কখনো চিল্লিয়ে আবার কখনো রাগ দেখিয়ে পাষাণ হৃদয়ী চাচীকে টলাতে চাইল।একবার বলল,

‘ কাল ঘুম থেকে উঠেই খোকনদের বাড়ির পুকুরে ঝাঁপ দেব আমি।তখন দেখব কি করে শহরে পাঠাও।’

এমন ভয়াবহ কথার উত্তরে যূথীকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে দিয়ে চাচী বলল,

‘ সূর্যের প্রখর তাপে পুকুরের পানি শুকিয়ে অর্ধেকেরও কম হয়ে আছে।কাল ছোট বাচ্চগুলোর সাথে কাঁদা ছুড়াছুড়ি খেলে আসিস।আনন্দ পাবি।’

যূথী হাল না ছেড়ে পুনরায় বলল,
‘ আমার পায়রাগুলো তো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।অবলা প্রাণী দুটোকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।ওরা একবেলা আমাকে না দেখলেই পাগল হয়ে যায়।

‘ পাগল হলে হবে।সারাদিন তো খাঁচায় বন্দী।তাই পাগল হলেও কোনো সমস্যা নেই।’

‘ চাচী আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে?কষ্ট হবে না তোমার?আমার মাসুম চেহারা তোমার চোখে ভাসবে না?আমার কথা মনে পড়লে রাতে তোমার ঘুম আসবে?’

‘ প্রথম কয়েকদিন তো কষ্ট হবে।কিন্তু কোনো ব্যাপার না।সামলে নেব আমি।এখানে রেখে তোকে নিয়ে কোনো আশংকায় থাকতে পারব না আমি।’

শেষপর্যন্ত হাল ছেড়ে দিল যূথী।চাচীকে তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরানো অসম্ভব। এখন শুধুমাত্র একটা উপায় আছে।চাচীর পায়ে পড়ে কাঁদাকাটা করা যায়।কিন্তু এটা খুবই বিশ্রি ব্যাপার হবে।সাথে ভীষণ হাস্যকর।

সারদিন যূথী মন খারাপ করে রুমে বসে রইল।মাঝখান দিয়ে শেফালী এসে একবার দেখা করে গেছে।সব শুনে শেফালী খুশিতে প্রায় গদগদ।সে বলল,

‘ তুই কেমন মেয়ে রে!শহরে পড়তে যাওয়ার জন্য সবাই পাগল হয়ে থাকে।আর তুই?গ্রামে কাঁদাজলে সাঁতার কাটার চিন্তা ভাবনা করিস।আমাকে যদি আমার বাপ-মা এমন সুযোগ অফার করত তাহলে আমি নাচতে নাচতে চলে যেতাম।’

শেফালীর কথার উত্তরে যূথী চোখমুখ পাকিয়ে রামধমক দিয়েছে।এরপর শেফালী আর কিছু বলার সাহস পায় নি।

__________________________

সন্ধ্যায় যূথী নিজের রুমে বসে ড্রয়িং করছিল।মন ভালো না থাকলে সে নানা জিনিস আঁকিবুঁকি করে।এই ছোট্ট রুমটা তাঁর এক আলাদা দুনিয়া।এখানে সে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে।রুমের মধ্যখানে সিঙ্গেল বেডের উপর দু তিনটে টেডিবিয়ার রাখা।বেডের পাশে পড়ার টেবিল।সেখানে বইখাতার স্তূপ। কলেজের মোটা মোটা বইয়ের ফাঁকফোকরে দু-তিনটে রঙিন ডায়েরিও নজরে পড়ে।এগুলো ভেতর হাজারো কবিতা, গল্প ঠাসা।সবই যূথীর নিজের হাতে লেখা।রুমের সাদা দেয়ালে ঝুলছে পেন্সিলে আঁকা কতগুলো নারীমূর্তির ছবি।কোনোটাতে কলসী কাঁখে মেয়ে আবার কোনোটাতে দোলনায় দোদুল্যমান কিশোরী কন্যা।মন ভালো না থাকলে যূথী কবিতা,গল্প এবং আঁকাআকি করেই সময় কাটায়।আজ যেহেতু মন খারাপের একটি বিশেষ দিন তাই অনেক ভেবে চিন্তে ড্রয়িং করাটাই বেছে নিল।

একপর্যায়ে রুমে সজীবের আগমন যূথীর কাজে ব্যাঘাত ঘটাল।ওকে দেখতে পেয়েই যূথী দাঁত খিচিয়ে বলল,

‘ যা ভাগ্ এখান থেকে।তোর এই বাঁদরমুখো চেহারাটা দেখতেই আমার রাগ উঠে যাচ্ছে। ‘

সজীব কতক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল।বিনা কারণে আপু তাঁকে এভাবে বকল এটা সে মানতে পারছে না।তাই এবার নিজেও চোখ পাকিয়ে বলল,

‘ আমি বাঁদরমুখো হলে তুমি কি? তুমি তো হংসমুখী।শান্তদের বাড়িতে যে কালো কুচকুচে হাঁসটা আছে না যে সারাদিন প্যাঁকপ্যাঁক করে তুমি তো একদম ওইটার মত দেখতে।’

‘ থাবড়া খেতে না চাইলে লেজ গুটিয়ে পালা।তোর উপর এমনিতেই রাগ উঠে আছে।ওখানে যে বেগুনি রঙের ডায়েরিটা পড়ে আছে ওটার মধ্যে তুই সিংহের মাথা গরুর মাথা এঁকে রেখেছিস কেনো?আমার ডায়েরিতে হাত দেওয়ার সাহস কে দিল তোকে? মানে মানে কেটে পড় এখান থেকে। নাহলে ওই সিংহের মাথা আমি তোকে পানিতে চুবিয়ে খাওয়াব।’

‘ স..সরি আপু।লক্ষী আপু আমার রাগ করে না।আমি বোধ হয় ভুলে এঁকে ফেলেছি।আমি তো তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম।সোফার রুমে মা আর নিশান ভাইয়া বসে আছে।মা বলল তোমাকে যেন ডেকে দেই।’

কথাটা বলেই সজীব জান নিয়ে বেরিয়ে গেল।সে বুঝে গেছে আজ তাঁর আপু প্রচন্ড রেগে আছে।পান থেকে চুন খসলেই পিঠে সপাং সপাং মারবে।

যূথী খাতা পেন্সিল ফেলে উঠে দাঁড়াল।নিশান নামটা শুনতেই তাঁর বুকটা ঢিপঢিপ করছে।মুহূর্তেই ভোরবেলার সেই কাহিনী মনে পড়ে গেল।কি পরিমাণ রেগে গেছিল নিশান ভাইয়া। এরপর তো উনার সাথে আর দেখাই হয়নি।
গুটিগুটি পায়ে যূথী হাজির হলো ড্রয়িংরুমে। ওকে দেখতে পেয়ে লতিফা চাচী বলল,

‘ বস এখানে।তোর শহরে ভর্তি হওয়া নিয়ে এতক্ষণ নিশানের সাথে কথা বললাম।সে বলল ওর চাচাত বোন মনীষা যে কলেজে পড়ে তোকে সেখানেই ভর্তি করিয়ে দিবে।’

যূথী চোখের কোণা দিয়ে একবার নিশানের দিকে তাকিয়ে আবার সাথে সাথেই দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলল।কারণ লোকটা তাঁর দিকেই তাকিয়ে।যদিও এখন চেহারায় কোনো রাগ নেই তবুও তাঁর কেমন যেন ভয় লাগছে।সে মিনমিন করে জিজ্ঞেস করল,

‘ শহরে গিয়ে থাকব কোথায় আমি?’

‘ কেনো?নিশানদের বাড়ি আছে না?নীলু আপাকে চিনিসই।তাঁদের সাথে থাকবি,লেখাপড়া করবি।যখন কলেজে ছুটি পাবি চলে আসবি গ্রামে।আপার সাথে আমি কথা বলে রেখেছি।’

যূথী এই পর্যায়ে বিকট এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
‘ না। আমি কারো বাড়িতে থাকতে পারব না।আমি..আমি হোস্টেলে থাকব।অনেক মেয়েরাই তো থাকে হোস্টেলে।আমিও….’

কথাটা বলেই বুঝতে পারল সামনের দুইজন ব্যক্তি তাঁর দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ করে নিজেকে এলিয়েন এলিয়েন মনে হচ্ছে। আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিল কে জানে!কার মুখ এত কুফা!
কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল সে তো ঘুম থেকে উঠে আয়নায় প্রথমে নিজের মুখই দেখেছিল।

চলবে…

#প্রিয়দর্শিনী
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_৭
🍁
যূথী কাঁদকাঁদ চেহারা নিয়ে দুই হাত কচলে যাচ্ছে। তাঁর সামনের সোফায় নিশান এবং লতিফা চাচী বসা।লতিফা চাচীর মুখ হতাশাগ্রস্ত। যূথীকে নিয়ে তাঁর চিন্তার শেষ নেই।মেয়েটা কোনো কথা শান্ত হয়ে শুনতে চায় না।বড্ড জেদি।
লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘ নিশানদের বাড়িতে থাকতে তোর কি সমস্যা আমাকে বুঝা।কেনো এমন গোঁ ধরে আছিস।’

চাচীর প্রশ্নে যূথী পড়েছে মহাবিপদে।নিশান ভাইয়ার সামনে এই প্রশ্নটা করলে সে উত্তর দিবে কিভাবে যেখানে প্রশ্নটা উনার বাড়ি সম্পর্কিত?এদিকে নিশান ভাইয়া আবার তাঁর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।কি একটা বাজে পরিস্থিতি।
আমতাআমতা করে বলল,

‘ উনারা সবাই হাই সোসাইটির মানুষ। উনাদের চলাফেরা, কথাবার্তার সাথে আমি মানিয়ে নিতে পারব না।পদে পদে বিপদে পড়তে হবে আমায়।তাই হোস্টেলে থাকাই যুক্তিযুক্ত। ‘

লতিফা চাচী যূথীর দিকে নির্লিপ্ত চাহনি দিলেন।মেয়েটা ইচ্ছে করেই এমন ঝামেলা তৈরি করছে।এসব কি ভিত্তিহীন কথা বলা শুরু করেছে এখন!

‘ নিশান দেখলি এই মেয়ের কান্ড!ওর যন্ত্রণায় আমার পাগল পাগল লাগে।একটু বুঝা ওকে।আপন মানুষদের বাড়ি ছেড়ে সে কেনো হোস্টেলে গিয়ে উঠবে।ওকে বুঝা একটু। ‘

লতিফা চাচী বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন।যূথী মুখ কালো করে বসে রইল।অন্যদিকে নিশানও চুপচাপ বসে মোবাইল টিপছে।
চোখ তুলে এটা দেখার পর রাগে যূথীর গা জ্বলে উঠল।চাচী তো উনাকে বলে গেল বুঝাতে। তা না করে উনি মোবাইলের চালাচ্ছেন। বিষয়টা খুবই অপমানজনক।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর যূথী নিজেই বলে উঠল,

‘ আপনি বললেও আমি শুনব না।আমি আমার ডিসিশনে অটল।আমি হোস্টেলেই থাকব।’

নিশান নিরুত্তর। এবার যূথীর আগের চেয়েও বেশি অপমান বোধ হল।সে যে কিছু একটা বলেছে এটা যেন উনি শুনতেই পায় নি।তাই এবার কিছুটা জোরে জিজ্ঞেস করল,

‘ আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’

‘ পাচ্ছি। চিল্লাতে হবে না।শোনো যূথী তোমার যেখানে ইচ্ছে হয় তুমি সেখানে থাকবে।তুমি চাইলেই কিন্তু আমাদের বাড়িতে থাকতে পারো।আমার হিসেবে এটাই ভালো।শহরের কিছুই চেনো না জানো না হুট করে হোস্টেলে উঠলে নানা রকম সমস্যায় ভুগবে।এখন সিদ্ধান্ত তোমার।কারণ বড়রা কিছু বললে সেটা তো তুমি সহজে মানতে চাও না।ঘাড়ের একটা রগ ত্যাড়া কিনা।’

শান্ত ভঙ্গিতে বলা নিশানের কথাটা শুনে যূথী দমে গেল।উনি তাহলে এখনো তাঁর উপর রেগে আছে।হঠাৎ করেই কেনো জানি তাঁর নিজেকে অসহায় লাগছে।কেউ যখন তাঁর উপর দীর্ঘক্ষণ রাগ করে থাকে তখনই তাঁর এটা মনে হয়।
সে নিচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ আপনি ভোরবেলার ঘটনাটা নিয়ে এখনো আমার উপর রেগে আছেন নিশান ভাইয়া!’

‘ হ্যাঁ রেগে আছি।কারণ তুমি আমার কথা অমান্য করেছো যেটা আমার একদমই পছন্দ নয়।বারবার বলার পরেও তুমি আমার কথা ইগনোর করেছো এটা মনে পড়লেই আমার রাগ বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুন।’

যূথীর মুখটা আরো বিবর্ণ হয়ে গেল।সে তো ভেবেছিল নিশান ভাইয়া রাগ করে থাকলেও ফর্মালিটি করে বলবে যে না রাগ করিনি।কিন্তু উনি তো সরাসরি মুখের উপর কথাটা বলে দিলেন।

‘ আমি সত্যিই সরি ভাইয়া।প্লিজ রাগ করে থাকবেন না।’

নিশান এবার মোবাইল রেখে সোজা হয়ে বসল।তাঁর সামনে বসা এই মেয়েটা বাইরে থেকে চঞ্চল হলে কি হবে ভেতর থেকে যে এক্কেবারে বোকা তা সে ভালোই বুঝে গেছে।

‘ এই টপিকটা এখন বাদ দাও।শোনো তুমি আামদের বাড়িতে থাকতে চাও না এটা নিয়ে কেউ জোর করবে না তোমায়।আমি খালামণিকে বলব বুঝিয়ে কেমন?তুমি যেখানে থেকে কম্ফোর্ট ফিল করবে সেখানেই থাকবে।’

কথাটা বলে নিশান বের হয়ে গেল।যূথী বসে রইল মন খারাপ করে।সে যা চাইছিল সেটা তো হচ্ছেই তবুও কোনো এক অজানা কারণে তাঁর মনটা বিষন্ন হয়ে আছে।

____________________________

পরদিন সন্ধ্যাবেলা হিমেশ এবং অনিক বাইরে উঠোনে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।হিমেশ কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে অনিককে জ্বালিয়ে মারছে।অনিকের চেহারায় কপট রাগের চিহ্ন।তবে মনে মনে সে বেশ আনন্দিত।

ওদের আড্ডার মাঝে যূথী হাজির হলো।তাঁর হাতে চা ও নাস্তার ট্রে।ওদের সামনে এসে মিষ্টি হেসে বলল,

‘ কেমন আছেন ভাইয়ারা?আপনাদের সাথে তো ভালো করে পরিচয় হয়নি এখনো?’

হিমেশ এবং অনিক যূথীর ব্যবহারে মুগ্ধ। মেয়েটি নিজে থেকে এসে ওদের সাথে পরিচিত হতে চাইছে এটা ওদের খুব ভালো লেগেছে।

হিমেশ সৌজন্যের সাথে উত্তর দিল,

‘ আমরা ভালো আছি যূথী।তুমি কেমন?পড়ালেখা কেমন চলছে?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আমার কিন্তু আপনাদের সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’

‘ তাই?তাহলে বলে ফেলো।’

যূথী সর্তকতার সাথে আশেপাশে তাকাল।তারপর গলার স্বর নামিয়ে বলতে লাগল,

‘ সেদিন যে লোকগুলো অ্যাটাক করেছিল ওদের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল বলুন তো!আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল নাকি?’

‘ দেখো যূথী এটা তো স্পষ্ট যে তুমি যখন চিৎকার দিয়েছিল তখন ক্রিমিনাল তোমায় চিনে ফেলেছে।এখন সে ইতিমধ্যে খবর পেয়ে থাকবে যে ওকে ধরার জন্য চারদিকে পুলিশ সিআইডি ঘুরছে।সে ভাবছে তুমি যেহেতু ওকে দেখে নিয়েছো তাহলে পুলিশরা তোমার জবানবন্দি থেকে অনেক কিছু জেনে যাবে।গ্রামের কেউই তাঁকে চিনে না কারণ সে বাইরের লোক।এখন একমাত্র তুমিই তার চেহারা দেখেছো। তাই বুঝতেই পারছো কেনো লোক পাঠিয়ে অ্যাটাক করেছে।কিন্তু সে তো জানে না আমরা অনেক আগেই খবর পেয়ে গেছি যে কে খুন করেছে।

‘ তাহলে ওকে ধরছেন না কেনো?’

‘ এত সোজা নয়।ওরা হলো পেশাদার খুনি।ঝামেলা আছে অনেক।’

যূথী ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। এসব কি ঝামেলায় জড়িয়ে গেল সে।শুধুমাত্র এই কারণে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহর যেতে হবে।জীবনটাই বেদনার।যূথী ওদের সামনে নাস্তার ট্রে ধরে বলল,

‘ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ‘

ওরা দুজন হাত বাড়িয়ে প্লেট হাতে নিল।হঠাৎ অনিক বলে উঠল,

‘ যূথী সেদিন রাস্তায় যে তোমার সাথে গোলগাল চেহারার মেয়েটা দেখেছিলাম ওর নামটা জানতে চাইছি।বলবে?’

অনিকের ঠোঁটে মুচকি হাসির রেখা।হিমেশ খাওয়া বন্ধ করে হালকা ধমক দিয়ে বলল,

‘ অনিক্কা তুই শেষমেষ ওই মেয়েকে নিয়েও তদন্ত করা শুরু করলি?যে কাজে এসেছিস সে কাজে মন দে।নিশান স্যারের কানে তোমার গুণের খবর পৌঁছে গেলে কেলেংকারী হবে কিন্তু। ‘

‘ তুমি ব্যাটা চুপ থাকো।নিরামিষ কোথাকার।জীবনে এখনো একটা প্রেম করতে পারলা না।তোমার সাথে থেকে আমিও করি নাই।কিন্তু এবার করব।নিরামিষের খাতা থেকে নাম কেটে আমিষের খাতায় নাম তুলব।’

যূথী এতক্ষণ চুপ করে ওদের বাক্যালাপ শুনছিল।নিমিষেই বুঝে গেল অনিক কার কথা বলছে।শেফালী যদি এই খবর জানতে পারে তাহলে খুশিতে পাগল হয়ে নির্ঘাত একটা ভয়াবহ কান্ড ঘটাবে।
যূথী হালকা কেশে বলল,

‘ ভাইয়ারা নিরামিষ আমিষ বন্ধ করে ঝেড়ে কাশুন তো!কাহিনী কি আমায় বলুন।সেই মেয়ের নাম জেনে আপনারা কি করবেন?’

‘ আপনারা নয়।শুধুমাত্র আমি জানতে চাইছি।আমার নাম জানো তো?আমি অনিক।এবার দয়া করে সেই সুন্দরী কন্যার নামটা বলে দাও। ‘

‘ বলব বলব।এত তাড়া কিসের।কিন্তু এমনি এমনি তো কোনো কিছু পাওয়া যায় না ভাইয়া।আগে আমার একটা শখ পূরণ করুন।তারপর শুধু নাম নয় একেবারে সব রাস্তা ক্লিয়ার করে দেব আমি।’

‘ যূথী সুযোগ পেয়ে বাঁশ দিচ্ছো নাকি?তোমার কি এমন শখ যেটা আমাকে পূরণ করতে হবে?’

‘ আপনাদের হাতে সেদিন যে অস্ত্র দেখেছি সেটা আমি একবার নিজের হাতে নিয়ে দেখতে চাই।আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। প্লিজ পূরণ করে দিন না।’

যূথীর কথা অনিক হাসবে না কাঁদবে বুঝতে না পেরে ক্যাবলাকান্তের মত দাঁড়িয়ে রইল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here