প্রিয় তুমি,পর্ব:১৩+১৪

#প্রিয়_তুমি
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৩

পূরব, সেহেরের বিয়ের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া শুরু করেছে ওর বাবা ইরফান আহমেদ। একমাত্র ছেলের বিয়েতে তিনি কোনো ত্রুটি রাখতে চান না। ডেকোরেশনের কাজ, গেস্টদের ইনভাইটেশন পাঠানো সব কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সাথে গরিব-দুঃখীদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে। ওটা মূলত পূরবের ইচ্ছে।
পূরবের বিয়ের জন্য কোনো কনভেনশন সেন্টার বুক করেননি ইরফান সাহেব। তাঁদের বাড়ির সামনের জায়গাটাতেই বিয়ের সব আয়োজন চলছে। এসব কাজে ইরফান সাহেবকে হেল্প করছে জিসান। পূরবের বিয়েটা মিটে গেলে মাসখানিক পরে ওর আর শেফার বিয়ের ডেট ঠিক করা হবে। আপাতত এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবছেনা ও!

ওদিকে সেহেরের কোনো অভিভাবক না থাকায় ইরফান আহমেদের সাথে কথা বলে ওর চাচাই সব দায়িত্ব নিলেন। সেহের মোটেও তা চায়নি। কিন্তু অনেক জোরাজুরির পর ওকে রাজি করানো গেলো। ওর চাচী ফোন করলেন৷ সবসময় তিনি সেহেরের খারাপ চেয়েছেন, এবার খুব ইচ্ছে অন্তত মেয়েটার বিয়ে তাদের বাড়ি থেকে হোক। নিজের হাতে সেহেরের বিয়ের কাজ করবেন। যদিও খুব অসুস্থ সেহেরের চাচী। ওনার এক কথা, সারাজীবন তো আর কিছু করতে পারেননি সেহেরের জন্য, শুধু অত্যাচারই করেছেন। এখন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। সেজন্য বিয়ের ঠিক তিনদিন আগে হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে নিজের চাচার বাড়িতে উঠেছে সেহের। বিয়ে উপলক্ষে সুমা আর শিলাও ওর সঙ্গে এসেছে। শেফা আর রিমি আসবে একদিন পরে। সন্ধ্যাবেলায় আলমিরাতে বিয়ের জন্য শপিং করে আনা কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখছিলো সেহের। ওকে সাহায্য করছে শিলা। আচমকাই পূরবের ফোন। কাজের মধ্যেও এই লোকের ফোন, দিনের মধ্যে নিয়ম করে তিনবার কথা না হলে পূরবের নাকি শান্তি লাগেনা। শিলাকে হাতের কাপড়টা ভাঁজ করতে দিয়ে সেহের ফোন রিসিভ করলো। পূরব ওর কথা শোনার আগেই কথা বলে উঠলো। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,

‘ঠিক এই মুহূর্তে তুমি কী করছো?’

এটা জানার জন্য ফোন করেছে? কী জ্বালা। ভালোবাসার লোকগুলো কী এভাবেই জ্বালাতে ভালোবাসে নাকি? সময়ে-অসময়ে তাঁদের জানতে ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষটি এই মুহূর্তে কী করছে? সেহেরের নাম না জানা এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো। ঠোঁটের কোণে উঁকি দিলো মুচকি হাসির রেখা। দোলনায় ঠেস দিয়ে বসলো। গাছের পাতায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো, ‘ঠিক এই মুহূর্তে আমি সেহের ভীষণ ইম্পোর্টেন্ট কাজে ব্যস্ত আছি। আমিতো আর আপনার মতো অকর্মা মানুষ নই। সব কাজ একাই সামলাতে হয়।’

‘ওয়েট ওয়েট। আই মিন তুমি বলতে চাইছো আমি কোনো কাজ করিনা? যা করো সব তুমি? মানে পুরো পৃথিবীতে একমাত্র কর্মঠ লোক, আর তোমার কর্মের দ্বারা পুরো পৃথিবীর মানুষ খেয়েপড়ে বেঁচে আছে? ওহ নো সেহের..তোমার এই লজিকটা আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি, তাঁরা মানবোনা।’

‘আপনার মানা না মানায় কিছু যায় আসেনা।।সব কাজ আমি একাই করতে পারি।’

পূরব বাঁকা হেসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ঠিক আছে মানলাম। তুমি অসুস্থ হলে তো নিজের সেবা নিজেই কর‍তে পারো তাইনা? সারারাত জেগে থাকা থেকে শুরু করে হসপিটালে যাওয়াটা তো তুমি একাই করো। আর মাঝেমধ্যে হুটহাট চুমু তো তুমিই দাও তাইনা? এই অসম্ভব কাজগুলো তুমি পারো ভাবতেই আমার প্রাউড ফিল হচ্ছে। তোমার মতো কর্মঠ বউ পেয়ে সত্যিই আমি ধন্য।’

সেহের অভিমানী গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আপনি কী এমনই বেহায়া? আগেও এমন ছিলেন? আচ্ছা, কতজনের সঙ্গে আপনার আগে রিলেশন ছিল? ক’টা মেয়ে আপনাকে চুমু দিয়েছে?’

পূরব ওর অভিমান স্পষ্ট বুঝতে পেরে মজা করে বলল, ‘তা জেনে তোমার কী হবে? আমি সেলিব্রিটি মানুষ, কত মেয়ের চুমু খেয়েছি তা তো গুণে রাখিনি। তবে এদের মধ্যে বেস্ট ছিল একজনই। ওকে আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবোনা।’

সেহেরের চোখে জল টলমল করছে। শুধু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা বাকি। রাগ করে ফোন কেটে দিলো। পূরব একটা মেয়েকে চুমু খেয়েছে তাহলে সেহেরকে কেন বিয়ে করতে চায়? নাহ, ও যখন ওই মেয়েকে কোনোদিন ভুলতেই পারবেনা তাহলে সেহেরের ওকে বিয়ে করা উচিৎ হবেনা। অন্য কাউকে ভালোবাসবে আর সংসার করবে ওর সাথে তা কি করে হয়! সেহেরের দোলনায় মাথা এলিয়ে বসে রইলো। মৃদু হাওয়ায় ওড়না উড়ছে। ঠান্ডা বাতাস গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। এবার কেঁদেই ফেললো সে। কান্না শুনে সুমা, শিলা ছুটে এলো ওর কাছে। কারণ জিজ্ঞেস কর‍তেই সেহের কান্নারত কন্ঠে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, ‘আমি ওনাকে বিয়ে করবোনা৷ বিয়ে ক্যান্সেল করে দে সুমা।’

ওরা দুজন হতভম্ব। সুমা সেহেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পূরবকে ফোন করে বললো সেহের ওকে বিয়ে করবেনা। যা যা ঘটেছে তার সব বলতেই ও হু হা করে হেসে উঠলো। সুমা অবাক হয়ে বলল, ‘ভাইয়া আপনি হাসছেন? তার মানে আপনিও বিয়ে করতে চাননা?’

পূরব হেসে বললো, ‘তোমার গাধী বান্ধবীকে ফোনটা পাস করো।’

‘ও আপনার সাথে কথা বলতে চাইছেনা।’

‘ওকে বলো আমার সেই প্রিয় মানুষটা সেহের নিজেই।’

সুমা বুঝতে না পেরে বলল, ‘কীসের মেয়ে?’

‘কিছুনা। সেহেরের কাছে ফোন দিয়ে তোমরা চলে যাও। আমি বুঝিয়ে বলছি।’

অগত্যা সুমা সেহেরের হাতে জোর করে ফোনটা ধরিয়ে শিলাকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। সেহের পূরবের ফোন বারবার কাটতে লাগলো। একসময় বাধ্য হয়ে ধরলো। পূরব সবটা ওকে বুঝিয়ে বলতেই নিজের কাছে নিজেই বোকা প্রমাণিত হলো সে। রেগে বলল, ‘আমার সাথে এধরণের মজা একদম করবেন না চোরমশাই।’

পূরব বলল, ‘আমার প্রিয় বলতে তুমিই আছো। অনেক ভালোবাসি আমার প্রিয় তুমিটাকে।’

সেহের চোখ মুছে গভীর কন্ঠে বলল, ‘কখনো ভুলে যাবেন না তো? সেলিব্রেটিরা নাকি বিয়ের পর সব ভুলে যায়? এমন হলে আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাব!’

পূরব বলল, ‘মৃত্যু ছাড়া আর কোনোকিছু তোমাকে ভুলাতে পারবেনা আমার মন থেকে। এছাড়া আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।’

সেহের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওর কথায় সায় জানিয়ে বলল, ‘হুম।’

সারারাত এভাবে কথা বলতে বলতে কেটে গেলো। সম্পর্ক হওয়ার পরে আজ প্রথম সারারাত কথা হলো দু’জনের মধ্যে। ভোররাতের দিকে ঘুমাতে গেল দুজন। ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে উঠে পড়লো সেহের। চাচা বাজারে যাবেন, সব লিস্ট ওর চাচী নিজের হাতে করে দিলেন। সেহেরের চাচাতো দুই ভাই বউ নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। এক মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিয়ে খেতে এসেছে। তাছাড়া প্রতিবেশী আর কাছের আত্মীয়রা মিলে পঞ্চাশজনের মতো মেহমান হলো ওদের বাড়িতে।
মেহমানদের মধ্যে কেউ কেউ সেহের খুব প্রশংসা করলো আবার কেউ কেউ কটু কথা শোনাতেও পিছপা হলোনা। এত বড় মাপের একটা ছেলে কী দেখে এই এতিম মেয়েকে পছন্দ করেছে খোদা জানেন। তবে এসব কথা সেহেরের কর্ণগোচর হলোনা, আর হলেও সেহের পাত্তা দিতোনা। বিগত দিনগুলোতে ও একাই যুদ্ধ করে এতদূর এসেছে, আজ তাঁদের কথায় কেন ও পাত্তা দিবে? ওদের কথা শুনলে কষ্ট ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবেনা, তাই সেসব না শোনাই ভালো।

সারা বাড়িতে বিয়ের আমেজ। শেফা, রিমি ওরা এসে হাজির হলো বিকেলের দিকে। সেহের ভীষণ খুশি। এর মধ্যে পূরব দু-বার ফোন করে খোঁজখবর নিলো। ওর গায়ে-হলুদের আয়োজন করা হচ্ছে। সারা বাড়ি গেস্টে ভর্তি। মিনিট খানিক কথা বলে ফোন রেখে দিলো
সেহের। একটু পরে ওকে নিয়ে যাওয়া হলো। হলুদ দিয়ে গোসল করানো হলো। তারপর সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হলো। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে মানুষ কম থাকলেও জমকালো আয়োজন বলা চলে। দু-হাত ভরে মেহেদি, কাঁচা ফুলের গয়না আর হলদে-সোনালি শাড়িতে সেহেরকে অপূর্ব দেখাচ্ছিলো। ওর সাথে কালার কম্বিনেশন করে পূরবের পাঞ্জাবিটা কেনা হয়েছে। সুমা, শিলা, রিমি, শেফা সবাইকে সুন্দর দেখাচ্ছিল। ওরা সবাই মিলে এক বাটি হলুদ সেহেরের মুখে মেখে দিলো। সেহের রেগে গেল। পুরো ভূত বানিয়ে দিয়েছে ওকে। আচ্ছামত ধমক দিলো ওদেরকে। শেফা ওর চেহারা দেখে হাসতে হাসতে অনেকগুলো ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলো পূরবকে।

পূরব এত এত মানুষের মাঝখানে দম ফেলার জো পাচ্ছেনা। তার নানা বাড়ি, দাদা বাড়ির লোকজন, বাবার বন্ধুরা, ওর বন্ধুরা, তাছাড়া পরিচিত সব ব্যবসায়ী, ডিলারসহ ব্যবসার খাতিরে তৈরি হওয়া সব লোকজন এসেছে। হঠাৎই ফোনে সেহেরের মিষ্টি ছবিটা দেখে ওর খুব ভালো লাগলো। গালে হলুদ ভর্তি। চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা ওর থেকে। আরও একবার নতুন করে ওর মায়ায় ডুবে গেলো পূরব, নতুন করে আবার ভালোবেসে ফেললো প্রিয় তুমিটাকে। আর একটা দিন, তারপর সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ওর জীবনে পদার্পণ করবে এই মেয়েটি। কত ভালোবাসে সেহেরকে, তা যদি সেহেরকে বোঝাতে পারতো! আর কয়েকটা ঘন্টা, তারপর সারা জীবনের জন্য বাঁধা পড়বে একে-অপরের সাথে।

ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। সাজানো গোছানো একদম ভালো হয়নি!
চলবে..ইনশাআল্লাহ!

#প্রিয়_তুমি
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৪

হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হলো বেশ রাতে। পূরব অনুষ্ঠান শেষে নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে ফ্রেশ হতে গেলো। বিয়ে করায় যে কত প্যারা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সবার সাথে রোবটের মতো আচরণ কর‍তে ওর বিরক্ত লাগছে, পুতুলের মতো সবার কথা শুনে শুনে চলতে হচ্ছে। তার উপর মিডিয়ার উটকো ঝামেলা। গায়ে হলুদে এসেও তাদের একটাই প্রশ্ন পূরব কবে মডেলিংয়ে যোগ দিচ্ছে। ও কোনোমতে ওদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে শাওয়ার নিয়ে পূরব বেরিয়ে এলো। গায়ে টি-শার্ট আর ট্রাউজার চাপিয়ে জিসানকে ফোন করে ঘরে খাবার দিয়ে যেতে বললো। খানিক পরেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে খুললো। দেখলো জিসান প্লেটে করে ওর প্রিয় বিরিয়ানি আর কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছে। ক্ষিধের চোটে পূরব তাড়াহুড়ো করে খেতে বসলো। জিসানকে জিজ্ঞেস করলো, ‘খেয়েছিস? নাকি কামলা খেটে মরছিস?’

জিসান বন্ধুর কথা শুনে হু হা করে হেসে বললো, ‘বন্ধুর বিয়েতে কামলা খাটতেই হয়। আমার বিয়ের সময় তুই কামলা খাটবি। শোধবোধ হয়ে গেলো না!!’

‘হুহ। বিয়ে করছি কি তোর বিয়েতে কামলা খাটার জন্য নাকি? আমার এত ঠ্যাকা পড়ে নাই। তবে একটা কাজ করে দিতেই পারি, নো প্রবলেম।’

জিসান উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোন কাজ?’

পূরব আয়েশ করে বলল, ‘তোর বাসর রাত মাটি করার কাজ। অবশ্য এই কাজটা তুই চাইবিনা জানি, তবে আমি তো করবোই।’

জিসান বড়বড় চোখ করে বলল, ‘মীরজাফর গিরি করবি? তাও আমার সাথে? তোর খারাপ লাগবেনা?’

‘এখানে খারাপ লাগার কী আছে? বাসর হবে আর তা ইফরাজ পূরব পন্ড করবেনা তা কী করে হয়?’

জিসান কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল, ‘তোর সাথে এরকম করার কোনো চিন্তাই করিনি আর তুই??’

‘তুই চিন্তা কর বা হাজারো, লক্ষ্য, কোটি প্ল্যান বের করতে পারিস। তাতে আমার বাসর কিছুতেই মাটি হবেনা।’

জিসান বলল, ‘জীবনে কোনোদিন প্রেমট্রেম করিনাই শুধু এই বাসর রাতটার জন্য। আর তুই আমার সাতাশ বছর ধরে দেখা স্বপ্নটার মধ্যে পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য বসে আছিস? এমন তুই?’

‘প্রেম করার সাথে এর কী সম্পর্ক? আর সাতাশ বছর ধরে বাসর করার স্বপ্ন দেখছিস মানে? ও মাই গড জিসান, তুই কী জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই এডাল্ট বিষয়গুলো বুঝে গিয়েছিলি? পেন্ডাকালীন বয়সেও তুই বাসরের স্বপ্ন দেখতিস? ছিহ! ইউ নো হোয়াট জিসান? তুইতো একটা বিরল প্রজাতির প্রাণী, তোকে তো ফ্রান্সের জাদুঘরে রেখে আসা উচিৎ!’

জিসান অবাক হয়ে বলল, ‘কী বলছিস তুই? মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি আবার?’

পূরব বাঁকা হেসে বলল, ‘কাল বিয়ে। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে, তুইও শুয়ে পড়। আর দিন গুণতে থাক, কীভাবে তোর বাসর পন্ড করি। গুড নাইট মাই সুইট এন্ড ইয়াং বয়।’

জিসান বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। পূরব খাওয়া শেষে মোবাইল স্ক্রল করতে কর‍তে শুয়ে পড়লো। জিসানও ওর ঘরে চলে গেলো। তারপর ফোন লাগালো শেফাকে। কয়েকবার ট্রাই করার পরেও কেউ ধরলোই না। তাই জিসানও আর চেষ্টা না করে ঘুমিয়ে পড়লো।

ওদিকে হলুদের আয়োজন শেষ করে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো সেহের। সুমা, শেফা ওরাও গোসল সেরে ঘুমে মগ্ন। ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই সেহেরের ফোন বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলো পূরবের কল। সেহেরের ঘুম পাচ্ছে, তাই কোনোমতে কলটা রিসিভ করে মিনিট পাঁচেক কথা বললো৷ কথা বলার অবস্থায়ই সেহের ঘুমিয়ে পড়লো। পূরব অবাক হলো। পরক্ষণেই হেসে খুন। কী এক মেয়েরে পাল্লায় পড়েছে সে,হবু বরের সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। পূরব ফোন কলের ওপাড় থেকে সেহেরের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো। পৃথিবীর আর কেউ কী জানতো, ওদের এই মিষ্টি ভালোবাসার কথা? বোধহয় জানতোনা। শুধু এই অন্ধকার রাত আর সময়ই সাক্ষী হয়ে রয়েছিল এই মুহূর্তটার৷

আজ বিয়ের দিন। সকাল থেকেই সব আয়োজন শুরু। বরের বাড়ি থেকে বিশাল অঙ্কের গেস্টরা আসবে, সব হাই প্রোফাইলের লোকজন। সকাল থেকেই বাড়ির পেছনের উঠোনে বাবুর্চিরা কয়েক পদ রান্নার আয়োজন শুরু করেছে। এ কাজে তাঁদেরকে সাহায্য করছে সেহেরের চাচা। ওর চাচী ভেতরের ঘরে মেহমানদের জন্য নাস্তা তৈরি করছেন৷ তিনি এখন একটু সুস্থ। সেহেরকে সকাল সকাল ঘুম থেকে তুলে তিনি খাইয়ে দিয়েছেন। তারপর আবার নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়েছেন।

বেলা গড়াতেই সেহেরকে সাজাতে বসলো শেফারা। লাল রঙের ওয়েডিং লেহেঙ্গা, ভারী গয়না আর মেকআপে ওর শ্যামরঙা চেহারাটা দ্যুতি ছড়াচ্ছিলো। জীবনে কোনোদিন এভাবে সাজেনি সেহের। সাজতে ইচ্ছে হতো একটা সময়ে, কিন্তু চাচীর অত্যাচারে কোনদিন যে সেই ইচ্ছেটা মরে গিয়েছিল বুঝতেই পারেনি। সেজন্য এত সেজেও ওর কোনো অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছেনা। আজ নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই চিনতে পারছেনা সেহের। এতো আটা-ময়দা মাখানোর কী প্রয়োজন ছিল? সবার সামনে যেতে, বিশেষ করে পূরবের সামনে এভাবে যেতে তো লজ্জায় মরেই যাবে। ওদিকে ওর অবস্থা দেখে রিমি আরও লজ্জা দিতে শুরু করেছে। বললো, ‘তোকে দেখেতো ভাই চিনতেই পারবেনা। তোকে এই সাজে যা লাগছেনা দোস্ত…সসসসস পূরব ভাইয়া না হার্ট অ্যাটাক করে!!’

সেহের ধমকে বলল, ‘চুপ কর।’

‘উফ কী লাগছে রে তোকে। খেয়ে ফেলতে মন চাচ্ছে আমারই, পূরব ভাইয়ের না জানি কী ইচ্ছা হয়। আয় তোর সাথে ছবি নিই।’

‘আমি ছবি তুলব না।’

‘বললেই হলো? একমাত্র বিয়ে আর তুই ছবি নিবিনা? পাগলের মতো কথা বলিস না তো।’ সুমা বললো।

ছবিটবি তোলা শেষ হতেই সেহেরের চাচাতো বোন অনু এসে জানালো বরপক্ষ এসে গেছে৷ শুনেই সেহেরের হাত-পা কাঁপতে লাগলো। পূরবের কাজিনরা সবাই ওকে দেখতে এলো। ভাবি ভাবি করে জান বের করে ফেলার জোগাড়। সেহের লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলো। ওর প্রতিবেশীরা কানাঘুষা করে বলতে লাগলো, ‘এতিম মাইয়াটা রাজকপাল লইয়া দুনিয়ায় আইছে। কী ভাগ্য দেখছো? কত বড়লোকের পোলা রাজি হইছে ওরে বিয়ে করতে।’

এসব শুনতে পেলোনা সেহের৷ পূরবের কাজিনদের সাথে কথা বলে ওর ভালোই লাগলো। সবাই বেশ ফ্রি-লি কথা বলছে। আর পূরবের অবস্থা বেশ শোচনীয়। বেচারা ওয়েডিং শেরওয়ানি পরে স্বস্তি পাচ্ছেনা। গরমে ঘেমে মুখচোখ লাল হয়ে গিয়েছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল এটাই শেষ, আর কোনোদিন ফ্যামিলি গেদারিং করবেনা। এমন কোনো অনুষ্ঠানে ও যোগ দিবেনা৷ এত গরম?? মনে হচ্ছে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মাংসপেশি। আর এতক্ষণ লাগছে কেন? বিয়ে করতে এসেছে বিয়ে করে ও ওর বউ নিয়ে চলে যাবে, সেখানে এত লোককে দেখাতেই বা হবে কেন? উফ শিট..

যখন ওর সামনে আস্ত একটা খাসির ডিশ সাজিয়ে ওকে খেতে বলা হলো তখন পূরবের চরম রাগ উঠলো। কিন্তু বাবার দিকে চেয়ে রাগ সামলে সবার সাথে একসঙ্গে খাওয়া শুরু করলো। বিয়ের সময় যে নিজেকে পুতুল হয়ে থাকতেহয় তা আরো একবার প্রুফ হলো। যাইহোক, সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রোল করা রেজিষ্ট্রেশন খাতায় নিজের সাইন আর তিনবার “আলহামদুলিল্লাহ কবুল” বলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

সেহের নিজেও জানেনা হঠাৎ ওর এতো কান্না কেন পাচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে৷ অথচ শত কষ্টেও ওর চোখে পানি আসেনা। আজ সামান্য একটা সাইন করার সময় ওর হাত কাঁপছে, কবুল বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছে। এটাই বোধহয় মেয়েদের জন্য সবচেয়ে কষ্টের সময়। একসময় নির্বিঘ্নে বিয়ের পর্ব শেষ হলো। অতঃপর বিদায়ের পালা৷ পূরব হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এবার কোনোমতে নিজের বৌকে নিয়ে বাড়ি ফির‍তে পারলেই হয়।

বিদায়ের সময় সুমা, শেফা, রিমি, শিলা সবার চোখে জল। তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড আজ অন্য কারোর বউ হয়ে গিয়েছে। চাচা-চাচী আড়ালে চোখ মুছলেন৷ সবার মুখ থমথমে। এই বিষন্ন সময়টাতে সেহেরের মন খারাপ হয়ে এলো। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো। আশ্চর্যের বিষয় গাড়িতে কোনো ড্রাইভার নেই। ড্রাইভ করছে স্বয়ং পূরব। ও আজ তার প্রিয়তমার দিক থেকে চোখই সরাতে পারছেনা। এই মেয়ে এত সেজেছে কেন? ওকে পাগল করে দিচ্ছে একেবারে! শক্ত করে সেহেরের হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে অন্য হাতে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বলল, ‘আমিতো আছি। একদম কাঁদবেনা।’

সেহের বলল , ‘কাঁদছিনা তো।’

‘মিথ্যা বলবেনা। তাহলে এখমই চুমু খেয়ে ফেলব।’

দিনদিন মন্তব্য কমছে। আর টেনে লম্বা করে লাভ নেই।
ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। সাজানো গোছানো একদম ভালো হয়নি!
চলবে..ইনশাআল্লাহ!

1 COMMENT

  1. At first there was no progress but now it is better ❣️to continue 💓 we need more story just like that ✍️✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here