#প্রীতিকাহন❤
#লেখনীতে_কথা_চৌধুরী❤
#পর্ব_৪১
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
সোবহানের মাথায় মূহুর্তেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। নিষ্পলক চোখে সে তাকিয়ে রইল নবাবের দিকে আর মুঠোয় বন্দি নবাবের হাত হঠাৎ-ই আলগা হয়ে গেল। এদিকে মিষ্টি স্তম্ভিত হয়ে আছে নবাবের কথায়। নিজের বাবার সম্মুখেও সে নবাবের বাহু আঁকড়ে একটা আশ্রয়ে যেন দাঁড়িয়ে ছিল। সে দাঁড়িয়ে আছে এখনও নবাবের ভরসায়, কিন্তু নবাবের শক্ত কথায় বাবার মতো মিষ্টির হাতের বাঁধন আলগা হয়নি। চোখে হাজারও প্রশ্ন নিয়ে যদিও বা অবাক হয়েছে সে, কিন্তু নবাবের ভরসায় এখন চমকিত নয়নে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি। মেয়েরা বোধহয় এমনিই হয়, কোনো ভরসার হাত পেলে তা শত আঘাতেও ছাড়তে রাজি হয় না।
“কী বলছিস এসব তুই?” আরমান ছেলেকে জিজ্ঞেস করল। এদিকে নিলয় আর জিসানও এগিয়ে এলো, কিন্তু পরিস্থিতির জন্য প্রশ্ন করতে চেয়েও চুপ হয়ে রইল।
বিস্ময়ে যেন কাঁপছে সোবহান সাথে কাঁপছে তার কণ্ঠও, “এসব কেন বলছ বাবা? তোমার বাবার কথা অনুযায়ী, মিষ্টি এখন তোমার স্ত্রী। বিয়ের তো একমাসও হয়নি। তাহলে কীসের জন্য আমার মেয়েটাকে কলঙ্কিনী করতে চাইছ? সোহেল ডিবোর্স দিতে পারে এই ভয়েই তো তুমি মিষ্টিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে। ওর সাথে যেন অন্যায় না হয়, সেজন্যই তো তুমি ওকে বিয়ে করেছিলে। তাহলে এখন তুমি নিজে কেন ডির্বোস চেয়ে ওর প্রতি অন্যায় করছ?” একজন পিতার করুণ বাক্যেও নবাব অটল থেকে বলল, “মামা, ন্যায়-অন্যায়ের কথা যদি বলেন তবে আমার মায়ের কথাও তো বলতেই হয়। আপনি রাজি হবেন না জেনে মা আমাকে বারংবার নিষেধ করেছিল মিষ্টিকে বিয়ে করতে। আমাকে যিনি জন্ম দিলেন, আমি তার কথা না ভেবেই মিষ্টিকে বিয়ে করেছি। কিন্তু এতে লাভ কী হলো?”
সবাই নির্বিকায় হয়ে আছে। দূরেই মিষ্টির মায়ের পাশে নিজের মাকে দেখতে পেয়েছিল নবাব। সর্বদা চটপটে স্বভাবের মিনারা ছেলের কাণ্ডে কেমন নেতিয়ে গেছেন। মায়ের অসুস্থ দেহ আর মলিন মুখে তাকিয়ে নবাবের হৃদয়ে ঝড় উঠেছিল প্রথম যখন বাড়িতে পা রেখেছিল সে। সেই ঝড়কে থামিয়ে সে এখন অবধি কীভাবে স্থির আছে তা তার অজানা। তবে ছোটো বয়সেই নবাব বুঝে গিয়েছিল, ছেলেদের শক্ত খুঁটির মতো নিজেকে তৈরি করতে হয়। কারণ একটা ছেলে না চাইতেও যে তাকে অনেক দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।
মিনারা ছেলের দিকেই তাকিয়ে আছে আর মায়ের চোখে চোখ রেখেই নবাব বলল, “আমার জন্য মাকে কষ্ট পেতে হলো। আমার কৃতকর্মে তাকে হাসপাতালে যেতে হলো। যার পায়ের তলে আমার জান্নাত, তাঁকে নতুন করে কষ্ট দিয়ে আমি মিষ্টিকে গ্রহণ করতে পারব না।” এই শুনে মিষ্টির হাত অবশ হয়ে গেল। ধরে রাখতে চেয়েও নবাবের বাহু তার হাতের মধ্য থেকে সরে গেল। একটা মূর্তির মতো মিষ্টি দাঁড়িয়ে রইল, যে কিনা অসার কিন্তু শোনবার ক্ষমতা আছে। মিষ্টির এমন পরিবর্তন নবাবের অবগত হলেও সে এমন ভাব করে আছে যেন অন্য কিছু দেখতে এবং বুঝতে অক্ষম।
“তোমার কথা ভুল নয় বাবা। তুমি ছোটো বলে আমিও রাজি হতাম না এমনকি মিষ্টিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরও মানিনি হয়তো আজকে সব না জানলে কোনোদিনই মানতাম না তোমাদের বিয়ে।” সোবহান নবাবকে বোঝাতে চাইল, কিন্তু কাঁধ ঝাঁকিয়ে নবাব বলল, “সেজন্যই বলছি মামা, যখন আপনাদের আপত্তি আছে আমাদের বিয়ে, সম্পর্ক এবং বয়স নিয়ে। তবে এই সম্পর্কের পরিণতিতে বিচ্ছেদ লেখা হোক।”
“তোর মাথা কি ঠিক আছে, নবাব? এত কিছু করার তবে কী দরকার ছিল যদি মিষ্টিকে তুই গ্রহণই করতে না পারিস?” আরমান আঁতকে উঠলেন যেন ছেলের কথায়। বাবার দিকে তাকিয়ে নবাব বললো, “তখন তো বুঝিনি বাবা, মা আমার সুখের চেয়ে ভাইয়ের সম্মানের কথা বেশি ভাববে।” সামান্য এই বাক্যে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মিনারা একপ্রকার খোঁচার আভাস পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন।
“না, না, যেখানে আমার মেয়ে শেষ হতে চলেছিল তাকে তুমি বাঁচালে, সেখানে সম্মানের কথা আসছে কেন? তাছাড়া বয়সে বড় কাউকে বিয়ে করা মোটেও অসম্মানের বিষয় নয়। আমাদেরও ধর্মে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বরং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আছে। তাই আমি একজন পিতা হিসেবে বলছি বাবা, তুমি আমার মেয়েকে গ্রহণ করো।” সোবহানের নিজের মেয়ের জন্য এমন আকুতিভরা কথা শুনে মিষ্টি চুপ থাকতে পারল না। এতটা সময় সে চুপচাপ ছিল, কিন্তু এখন নিজের বাবা তার সংসার তৈরি করতে একজনের কাছে মিনতি করবে তা মিষ্টি মানতে পারছে না। শক্ত চোয়াল আর টলমল করা চোখে বলে উঠল, “বাবা।”
“হ্যাঁ মা, তোকে সংসারে ঢুকানোর তালে ভুলে গিয়েছিলাম, তোর এতে সুখ হবে না-কি হবে না।” বলেই হাত বাড়িয়ে কেঁদে উঠলেন সোবহান। বাবার এমন আর্তনাদে মিষ্টিও ফুঁপিয়ে কেদে উঠে ঠাঁই নিলো বাবার বুকে।
“আমাকে ক্ষমা করিস মা। তোকে আমি কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি। তোর ভালো-মন্দও ঠিক করে দেখিনি।” সোবহানের কথায় মিষ্টির মুখ নড়ল না কেবল পিতার আদরে কান্না গাঢ় হতে লাগল।
“নবাব, ভাইজানের অনুরোধ উপেক্ষা করিস না। তোর মায়ের কথা চিন্তা করে নিজের এত বড়ো সর্বনাশ করিস না। তোর মায়ের বয়স হলেও আজও ভালো-মন্দ বুঝতে শিখল না।” নিজের স্ত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে দ্বিধা রাখলেন না আরমান। কারণ নিজের স্ত্রী সম্পর্কে তার যথেষ্ট ধারণা আছে। আরমান জানে, নিঝুম গভীরে চিন্তা করে কোনো কাজ করে না। চোখের সামান্য যা ভাসে তাই যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে এতে ভালো হওয়ার আশংকা অতি অল্পই বিদ্যমান থাকে।
নবাব কোনো কথা বলল না কেবল মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। বেশ কিছু সময় ভেবে নবাব তার বাবাকে বলল, “ঠিক আছে, আমি মামার কথা মেনে নিবো, কিন্তু সেখানে মায়ের অনুমতি থাকতে হবে। নয়তো…”
“নয়তো কী? আমার কোনো মূল্য নেই কারোর কাছে?” আচমকাই ফুঁসে উঠল মিষ্টি।
“মা রে, আমরা তো তোর ভালোর জন্য…” মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে সোবহান বললেন, কিন্তু এই মূহুর্তে নবাবকে মিষ্টির অন্যরকম লাগছে। বিয়ের পর সে যেই নবাবকে দেখছে। এখানে এসে সেই নবাবই এখন ভিন্নরূপে আবির্ভাব হয়েছে। এই নবাবের চেয়ে মিষ্টির কাছে পিস্তল হাতের নবাবকে বেশি নিরাপদ মনে হয়েছিল। তখনও তার মনে হয়েছিল, “ও আমার কোনো ক্ষতি চাইবে না।” কিন্তু সামনে দাঁড়ানো নবাবকে তো মিষ্টি চিনতেই পারছে না।
“আমার ভালো আমি আর দেখতে চাই না, বাবা। অনেক করেছ তোমরা আমার জন্য। আমার সংসার করার ইচ্ছে অন্তত এখন আর হচ্ছে না। যার যখন ইচ্ছে বিয়ে করবে, যখন ইচ্ছে ডিবোর্স দিবে। কেন বাবা? আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছি যে, মিনতি করে হলেও তোমরা আমাকে কারোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছ?”
হুট করে মিনারা এসে মিষ্টির পাশে দাঁড়াতে সবাই চমকে গেল। সবাইকে আরও চমকে দিতে মিনারা আচমকাই বলে উঠলেন, “মিষ্টি, তুই কারোর কাছে বোঝা নস মা। আমি অবুঝের মতো রাজি হইনি বলে আমার ছেলের সংসার ভেঙে দিবি?”
“ফুপি, তোমার ছেলে যেমন তোমার কথা ভাবে, মেয়ে হিসেবে আমাকেও আমার বাবার কথা ভাবা উচিত।”
“হ্যাঁ, সেটাই ভাবার জন্য বলছি। আমরা নতুন করে তোদের এক করে দিতে চাই।” হঠাৎ মিনারার কথা শুনে নবাব আপত্তি করল, “কিন্তু মা…” প্রচণ্ড একটা শব্দে নবাবের কথা থেমে গেল আর ভয়ে আঁতকে উঠে মিষ্টির কান্না চাপা পড়ল।
কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই চাপা ক্রোধে মিনারা নিজের ছেলের গালে চড় বসিয়ে দিলেন। এতে নবাবের দৃষ্টি মাটিতে গিয়ে স্থির হলো আর মিনারা বলে উঠল, “আজ অবধি কাউকে মানুষের মতো ভালোবাসতে পারলি না তুই? মিষ্টিকে ভালোবেসে ক্রিমিনালের খাতায় নাম তুললি আর মাকে ভালোবাসিস সেটা প্রমাণ করতে বউকে তালাক দিবি? ভাবলি কী করে তোর সুখের কথা আমি ভাবব না আর ভাবিনি? ভাইজান তোকে অনেক ভালোবাসেন, সেই ভালোবাসা যেন বিলীন না-হয় তাই মিষ্টিকে বিয়ে করতে বারণ করেছিলাম। ওর মতো মেয়ে আমার ঘরের বউ হলে আমি কি নারাজ হবো?” এই বলে স্বামীর দিকে তাকালেন মিনারা। আরমান নিজের স্ত্রীর হঠাৎ পরিবর্তনে হতভম্ব হয়ে গেছেন। আর মনে মনে আবিষ্কার করলেন, “এক জন্মে স্ত্রীলোককে বোঝার সাধ্য কারোর নেই।”
পূর্ণ দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলেন মিনারা, “মাকে আজ-কাল খোঁচা দিতেও শিখে গিয়েছিস, না রে?” এই শুনে হঠাৎ-ই নবাব বেসামাল হয়ে গেল। হৃদয়ে যখন উথলে উঠল ব্যথার জল, তখন তা সামলে নিতে মাকে জড়িয়ে বলে উঠল, “মাআআআ…”
“ছাড় আমায়। একদম জড়িয়ে ধরবি না তুই।” কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে মিনারা নবাবকে এসব বললেও নিজেও ছেলেকে আলিঙ্গন করে কাঁদছে মন ভরে।
শুরু থেকে চুপচাপ নিঝুম এখনও নীরবতা আঁকড়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন। পরিস্থিতি এখন হাতের নাগালে হলেও মিষ্টি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে হঠাৎ মায়ের ওপর চোখ পড়ল মিষ্টির। এতেই মিষ্টি মায়ের কাছে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, “ও মা, কেমন আছ তুমি? আমি এসব কিছু জানতাম না মা। বিশ্বাস করো মা, আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাইনি।”
স্বস্তির নিশ্বাস হৃদয় থেকে যেন বেরিয়ে এলো নিঝুমের। গর্ভের সন্তানকে ঠিকঠাক ফিরে পেয়ে সে-ও কান্নায় কিঞ্চিৎ ভেঙে পড়ল। কিন্তু সর্বদা কঠিন পরিস্থিতিতে অটল থাকা নিঝুম বললেন, “তোর কোনো দোষ নেই মা, নবাবেরও নেই। তাই এসব ভেবে কষ্ট পাস নে।” মিষ্টি কেঁদেই চলেছে। তাই নিঝুম আবার বলল, “আমার মিষ্টি আজ ছোটোটি নেই রে। সে এবার সত্যি আমায় ছেড়ে চলে যাবে।”
“মা, তুমি কি আমার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছ?”
“না রে মা। আগের কথা আর টানিস নে। তুই খুশি হলেই আমার সব কষ্টের মরণ হবে রে মা।”
সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে এমন বোধ করে আরমান সোবহানকে বললেন, “ভাইজান, এবার সবাইকে নিয়ে ভেতরে চলেন। ওরা জার্নি করে এসেছে। একটু বিশ্রাম নিক। বাকি কথা পরেও বলা যাবে।”
সম্মতি জানাতে সোবহান বললেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, সবাই ভেতরে চলো।” বলেই সোবহান আর আরহাম হাঁটতে শুরু করল। মিষ্টি আর নিঝুম চলে গেছে খানিক আগেই। এদিকে নবাবকে ছেড়ে মিনার বললেন, “চল বাবা।”
“তুমি যাও মা, আমি আসছি।”
“ঠিক আছে।” নিঝুম চলে যেতেই নিলয় এসে নবাবের পিঠে চাপড় মেরে বলে উঠল, “দোস্ত, তুই এত ভালো অভিনয় শিখলি কবে রে?” জিসানও সায় দিলো, “ঠিক বলছিস।”
“শালা, চুপ কর। প্রথমটুকু অভিনয় হলেও শেষেরটুকু আসল। মায়ের কাছে অভিনয় করলে ওপরওয়ালা অখুশি হবেন।”
“সে যা-ই বলিস না কেন দোস্ত? বাপ পাইছস পুরা সেই লেভেলের। আঙ্কেল যদি এতটা সাহায্য না করত। তাহলে পুরা বাংলাদেশের চক্কর দেওয়া তোমার পক্ষে কোনোদিনই সম্ভব হইতো না। তাছাড়া লামিয়াও তো কম করে নাই। এমন পিচ্চি মাইয়া কী সুন্দর কইরা রুমালে ক্লোরোফর্ম লাগায় দাঁড়ায় ছিল বিয়ার দিন। আমি আর জিসান ছাড়াও তিনজনে তোরে অনেক সাহায্য করছে দোস্ত। এক তোর বাপ, দুই তোর ছোট মামার মেয়ে লামিয়া আর তিন…” নিলয়কে থামিয়ে নবাব বলল, “চুপ কর শালা। এখন এতসব কথা কে বলছে তোকে বলতে? যা হয়েছিল সব ভুলে যা। আগের কথা নতুন করে তুলে আমার সর্বনাশ করিস না।”
” তা না-হয় বাদ দিলাম। কিন্তু দোস্ত, মিষ্টির বাপ যদি ডির্বোসের জন্য রাজি হইতো, তাইলে?” নিলয়ের কথা শুনে নবাব হঠাৎ হেসে উঠল নিঃশব্দে। তার রহস্যময় হাসিতে অন্য কিছুর ইঙ্গিত আছে যা নিলয়ের বুঝতে দেরি হলো না।।
.
বিয়ের দিন নবাব যেই ফাঁকা গুলি করেছিল, তার জন্য থানায় তাকে জবাবদিহি করতে হবে। যদিও আরমানের পরামর্শে লাইসেন্স আছে এমন পিস্তল ব্যবহার করেছিল, কিন্তু ধার করা পিস্তলের জন্য তো জবাবদিহি করতেই হবে। তাই আরমান ছেলেকে আজকেই থানায় গিয়ে দেখা করতে বলেছে। তবে এতে জহির সাহায্য করবেন বলে আগেই আশ্বস্ত করেছিলেন।
এতসব ঝামেলার পর সবাই মোটামুটি ক্লান্ত তবুও সকলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আগামী কাল নবাব এবং মিষ্টিকে পুনরায় এক করে দেওয়া হবে। তবে সেটা ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
“ভাইজান, আজকে তবে আমরা যাই। কালকে বিকালে না-হয় ঘরোয়া আয়োজনে ওদের এক করে দেওয়া হোক।” সোবহানের উদ্দেশ্যে আরহাম সেটা বলতেই মিনারা বলে উঠলেন, “হ্যাঁ ভাইজান, বেশি দেরি করা উচিত নয়। তাছাড়া এখন কোনো বড়ো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক সেটা আমরা চাইছি না। এক-দুই বছর বাদে না-হয় সেটা করা যাবে।”
স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে সোবহান জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কী মতামত?”
“আমার কোনো মতামত নেই। মেয়ের সুখ দেখলেই আমার শান্তি।” নিঝুমের নির্বিকার উত্তর।
“দেখো মিষ্টির মা, তুমি আমাকে বোঝালেও তুলে নিয়ে বিয়া করাটা আমি মানতে পারিনি, কিন্তু এখন আমার আপত্তি নেই।” স্বামীর কথায় নিঝুম কোনো জবাব দিলেন না বরং মাথা নুইয়ে চুপটি করে রইলেন মৃদু অভিমানে।
“চুপ করে আছ কেন?” সোবহান আবারও জিজ্ঞেস করতেই তেমন ভঙ্গিতে নিঝুম বললেন, “বললাম তো আমার কোনো মতামত নেই।” পুরনায় একই উত্তরে সোবহানের চোয়াল শক্ত হলো। নিঝুম যে অভিমানে এমনটা বলছে তা সোবহান স্পষ্টত বুঝতে পারছে আর এ-ও বুঝতে পারছে নবাবকে মেয়ের জামাই হিসেবে নিঝুম কোনোদিনও আপত্তি করবেন না। তাই সোবহান তার বোন আর বোন জামাইকে বললেন, “কালকে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান হবে আর এরপর না-হয় ভবিষ্যতে ভেবে দেখা হবে। আশা করি এতে আর কারোর আপত্তি হবে না।”
মায়ের পাশে বসে থাকা নবাব হঠাৎ নিচু গলায় মাকে বলল, “মা, আমি একটু মিষ্টির সাথে দেখা করে আসছি। এরপর থানায় যাব।”
“ঠিক আছে।” অনুমতি পেয়ে নবাব হাঁটতে শুরু করল মিষ্টির রুমের দিকে।
দরজা খোলা রুমে উঁকি দিয়েই দেখতে পেল নবাব, উঁচু হাঁটু দুই হাতে আঁকড়ে বিছানায় বসে আছে মিষ্টি। এখনও বোরকা খোলেনি সে অথচ সেই কখন রুমে এসেছে। মুখের হিজাব খুলে একটা সুতি ওড়নায় মাথা ঢেকে রেখেছে। এত দৌড়ঝাঁপ, কান্নাকাটি আর চিন্তায় মিষ্টির মুখটা অসম্ভব মলিন আর কালচে দেখাছে। কষ্টের তীর বুকে এসে বিঁধলেও নবাব এক চিলতে সুখ খুঁজে মনে মনে আওড়াল, “অবশেষে তোমায় পেলাম মিষ্টি। তোমায় পেলাম আমি আমার করে তাও সারাজীবনের জন্য।”
নবাব হুট করে বিছানায় বসতেই চমকে উঠল মিষ্টি, কিন্তু সে কিছু বলার আগে নবাব জিজ্ঞেস করল, “এই মিষ্টি, রাগ করে আছ?” হঠাৎ অভিমানে চোখ নামিয়ে মিষ্টি পাল্টা প্রশ্ন করল, “রাগ করার আমি কে?”
হালকা হাসল নবাব, “কেন? নবাবের রানী তুমি, বুঝলে?” আচমকা মিষ্টি কেঁদে উঠল নবাবের প্রতি জমিয়ে রাখা অভিমান নিয়ে। এতে চমকে নবাব জিজ্ঞেস করল, “একি! কাঁদছ কেন?”
কেঁদে কেঁদে মিষ্টি নবাবকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমাকে ডিবোর্স দিবে– এটা বলার আগে আমার কথা একবারও ভাবলে না নবাব?”
“এই মিষ্টি, আমার নিউরন যার উদ্দীপনা বহন করে, যার স্মৃতি সংরক্ষণ করে; তাকে আমি কী করে ভুলব গো?”
“তাহলে এমন কেন…” মিষ্টিকে থামিয়ে দিয়ে নবাব নরম কণ্ঠে বলল, “আগে সবাই মিলে নতুন করে আমাদের এক করে দিক এরপর সবটা বলব তোমায়। এখন আমি যাচ্ছি। থানায় গিয়ে একটু জবাবদিহি করতে হবে গুলি ছোঁড়ার অপরাধে।” এই বলে নবাব বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলে মিষ্টি বিচলিত হলো, “এই…”
চলবে…