প্রীতিলতা পর্ব -০৬+৭

#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#৬ষ্ঠ_পর্ব🍂

মেসেজটা দেখে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো। অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই 12 দিনে তোমার সামনে থেকেও যে কথাগুলো বলতে পারিনি এখন চলে যাওয়ার সময় তোমাকে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি।

সারাদিন তুমি তোমার মায়ের সাথে ছিলে। তাই আর তোমাকে বলার সুযোগ হয়নি। তাছাড়া সামনে থাকলেও যে কতটুকু বলতে পারতাম সেটার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না তাই এই পন্থাটাই অবলম্বন করলাম।

প্রীতি তোমাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম আসলাম ভাইদের বাসায়। তুমি জানো কিনা জানি না আসলাম ভাই আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। হঠাৎ তার অসুস্থতার কথা শুনে তোমার বাবা আর আমি সরাসরি গিয়ে হাজির হয়েছিলাম গ্রামে।

ভাগ্যক্রমে তখন তুমি গ্রামেই ছিলে। শীতকালে উঠোনে কালো সালোয়ার কামিজ পরিহিতা একটা কালো মকমলের চাদর গায়ে জড়ানো সরল সাদাসিধে মেয়ের প্রাণ খোলা হাসি দেখে তাকে আমার খুব মনে ধরেছিল।

আসলাম ভাইকে ওষুধ খাওয়ানোর শেষে তুমি নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিলে। তখন তোমার ব্যাপারে আসলাম ভাইয়ের কাছে সব কিছু শুনেছিলাম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করো তুমি। অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

পরে তোমার বাবার কাছে শুনলাম রমজান ভাই নাকি তার ছোটবেলাকার বন্ধু ছিল। একসাথে নাকি তোমার বাবা, আসলাম ভাই ও রমজান ভাই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তারপরে সকলের গন্তব্য আলাদা হয়ে গিয়েছিল।

আমি আর দেরি না করে তাদেরকে বলেই বসলাম তোমার কথা সাফোয়ানের জন্য। তোমার শ্বশুর বাবা প্রথমে একটু আপত্তি জানালেও পরবর্তীতে তার বিগড়ে যাওয়া ছেলেকে একটু পথে আনার জন্য আমার এই স্বার্থপরের মত সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম।

তোমার শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা ছিল বিধায় তুমি খুলনায় চলে এসেছিলে। কিন্তু আমরা তোমার পরীক্ষার পর বিয়ের পাকা কথা বলেই তবে খুলনায় পা রেখেছিলাম।

তারপরে শুরু হয়েছিল একপ্রকার যুদ্ধ। সাফওয়ানকেই বিয়ের জন্য রাজি করানো আমার কাছে এক প্রকার যুদ্ধের মতই লেগেছিল।ছোটবেলা থেকে আমাদের উপর ওর একটাই অভিযোগ আমরা শুধু ওর উপরে আমাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়েই আসছি।

এই ভুল ধারণাটা আজ পর্যন্ত ভাঙাতে পারিনি। যখনি কিছু বোঝাতে গিয়েছি তখনই উল্টো আরো বেশি ভুল বুঝেছে আমাদের। তার জন্য অবশ্যই আমি তোমার বাবাকে দায়ী করব।

তিনি সবসময় ছেলেদেরকে কঠোরতার মধ্যে দিয়ে মানুষ করেছেন। বড় ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে চেয়েছিলেন বড় ছেলে সেটা মুখ বুজে মেনেও নিয়েছে। কিন্তু ছোট ছেলে চেয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে, বিদেশে চলে যাবে কিন্তু তোমার বাবা চেয়েছিলেন ছেলেকে বিচারকের আসনে দেখতে।

একজন বাবার দিক থেকে ব্যাপারটা ভুল না হলেও একজন ছেলের দিক থেকে ভেবে দেখলে এক ধরনের জবরদস্তি বললে ভুল হবেনা।

নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে পড়াশোনা করেছিল ও রাগ অভিমান থাকলেও পড়াশোনায় সে গাফিলতি করেনি কিন্তু তার বাবার জেদের বসে আর প্র্যাকটিস করেনি। বাবার ছেলের মাঝে এই জেদ মান অভিমান আমি আজও ভাঙতে পারিনি।

তাই আমার ছেলেটার জন্য এমন একটি প্রাণ খোলা, ভদ্র, মার্জিত স্বভাবের একটি বুদ্ধিমতী মেয়ে চেয়েছিলাম যে আমার ছেলেটার ভরসা জয় করে নিয়ে তার সকল ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেবে। আমার ছেলেটার ঢাল হয়ে দাঁড়াবে এসে।

অবশেষে আমার কথা ফেলতে না পেরে বিয়ের জন্য মত দেয় সে। বিয়ে করে আনে তোমাকে বাড়িতে। আমি জানি তোমাদের মাঝে কিছু ঠিক নেই। আমার ছেলেটা তোমাকে মেনে নিতে পারিনি তাই বলে এটা মনে করো না ও তোমাকে ঘৃণা করে বা অপছন্দ করে। ও তো শুধু ওর বাবার সাথে প্রতিদ্বন্দিতার খেলায় নেমেছে।

মা হয়ে বলছি আমার ছেলেটা উপরে যতই কঠোরতা আর রগ চটা ভাব দেখাক না কেন ভেতরটা কিন্তু নরম।

তুমি যেদিন ছাদে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে। সেদিন তোমাকে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসার সময় ওর মধ্যে তোমার জন্য আমি অস্থিরতা উপলব্ধি করেছিলাম। তোমার বাবা ওকে অনেক কটু কথা শুনিয়েছেন সবকিছু মুখ বন্ধ করে সহ্য করে নিয়েছিলো। আমি থাকতে চেয়েছিলাম তোমার পাশে আমাকেও ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

সেদিন আমার মনে কিঞ্চিৎ আশার সঞ্চার হয়েছিল যে পাথরের বুকে একদিন ফুল নিশ্চয়ই ফুটবে শুধু একটু বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন। সেই পরিচর্যটা একমাত্র তুমিই করতে পারো।

তোমার মনে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে বারোটা দিন তাহলে তোমার সাথে এমন পরের মত আচরণ করেছি কেন আমি। খোলাখুলি ভাবে কথা কেন বললাম না তোমার সাথে?

তোমার সাথে যে আমার শাশুড়ি বৌমার সম্পর্ক মা। একটা জড়তা ভাব থেকেই যায়। যা থেকে সরাসরি ভাবে এতগুলো কথা আমি তোমাকে বলতে পারিনি ।

তুমি হয়তো আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো এক ছত্রভাবে শুধু নিজের ছেলের কথাই চিন্তা করছি। তোমার কথা কেন চিন্তা করছি না।

একটা কথা মনে রেখো ওর মধ্যেই তোমার মঙ্গল নিহিত রয়েছে। তোমার স্বামী ঠিক থাকবে তো তোমার পুরো পৃথিবী ঠিক থাকবে। পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় মনে হবে।

আর যেদিন তুমিও আমার মত সন্তানের মা হবে সেদিন তুমিও বুঝতে পারবে মায়েরা কেন স্বার্থপর হয়।

তাই অনেক ভরসা করে তোমার কাছে অনুরোধ করছি এখপ্রকার সাহায্য চাইছে বলতে পারো। আল্লাহ সহায় হলে পারলে তুমি পারবে। মা বাবার ছেলের মধ্যে মান অভিমানের দেয়ালটা ভেঙে দিতে।

ভালো থেকো মামনি। আর পারলে স্বার্থপর মাকে ক্ষমা করে দিও। আল্লাহ হাফেজ।

_________🌺🌺__________

কুয়াশাচ্ছন্ন কৃষ্ণবর্ণ আকাশ, উত্তরে হাওয়া, এ যেন শীতের আগমনী বার্তা। গায়ে চাদরটা আরো ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি রেল স্টেশনে । হঠাৎ বা দিক থেকে ট্রেনের শব্দ কানে আসলো। একটা ট্রেন প্লাটফর্মের দিকে এগিয়ে আসছে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

মস্তিষ্ক হঠাৎ তড়িৎ গতিতে প্রশ্ন করে উঠলো।আচ্ছা মেয়েদের কি কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য হয়েছে….?

মন তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো,

— হ্যাঁ আছে তো। স্বামীর বাড়ি। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত স্বামীর বাড়ি হচ্ছে মেয়েদের আসল ঠিকানা। কারণ শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত স্বামী হয় একটি মেয়ের সারা জীবনের সঙ্গী।

বাহ মস্তিষ্ক আর মনের দারুণ যুদ্ধ বেধেছে তো…..!

* এবার কি ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে মরার ইচ্ছা জেগেছে মনে।

আহা আবার সেই কন্ঠ…..! শিরদাঁড়া দিয়ে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেল। সারা শরীর হালকা কেঁপে উঠলো।

আমি পিছনে ফিরে মেকি হেসে বললাম,

— আগ্গে না। তবে মরতে পারি একটা শর্তে।

সাফওয়ান ভ্র ু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল

— কি শর্ত।

আমি আবারও সেই শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বললাম,

— যদি আপনিও আমার সাথে ঝাপ দেন তাহলে বিনা দ্বিধায় আপনার সাথে আমিও ঝাঁপ দেব।

এখানে আবার দুজন মরার উপর ডিসকাউন্ট চলছে।

দাঁতে দাঁত চিপে নিজের রাগটা সংবরণ করার চেষ্টা করছে সাফওয়ান। আবার বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন ও। নির্ঘাত গালাগালি দিচ্ছেন। কারণ প্রশংসা পাওয়ার মতো তো কিছু বলিনি। ভয় হচ্ছে এখন যদি সত্যি সত্যি ধাক্কা মেরে রেলের পাতের উপরে ফেলে দেয়।

কিন্তু এদেখি সব ভুল ধারণা। পুরো উল্টো হয়ে হাঁটা শুরু করে দিলেন সাফওয়ান।

— এটা কি হলো। আরে আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন। আরে আমাদেরকে ফেলে চলে যাচ্ছেন কেন।

দ্রুত দৌড়ে প্লাটফর্মে গেলাম। গিয়ে দেখি পুতুল বসে পপকর্ন খাচ্ছে। ওর হাতটা শক্ত করে ধরে টানতে টানতে সাফওয়ানের পেছনে দৌড়াতে লাগলাম।

— উফ্ কি হয়েছে প্রীতিলতা?

— তোর ভাই আবার ক্ষেপেছে পুতুল সোনা।

পুতুল দৌড়াতে দৌড়াতে নিজের কপাল চাপড়ে বললো,

— উফ ও তুমি আবার ভাইয়াকে ক্ষ্যাপাতে গেলে কেন?

— আমি কি জানি তোর ভাই কথায় কথায় ক্ষেপে যায়। আর তোর ভাই এমন কেন রে?

— প্রীতিলতা এটা আমি কিভাবে বলি বল? আমি তো ওর পরে জন্মেছি।

— হুম তাও ঠিক। এখন কথা কম বলে পা দ্রুত চালা।

সিরিয়াসলি আই হ্যাভ এ গভীর কনফিউশন। এটা আদৌ মানুষ নাকি জিন ভূত। একটা মানুষ এত দ্রুত হাঁটতে পারে কিভাবে? আমরা দৌড়েও তার সাথে তাল মিলাতে পারছি না।
#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#৭ম_পর্ব (প্রথম খন্ড)🍂

সাকলাইন ভাইয়া আর ভাবি এখান থেকে সোজা ভাবির বাপের বাড়িতে গেছেন। ভাবির মা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কয়টা দিন ওখানে থেকে আসবেন তারা। স্টেশন থেকেই সোজা চলে গেছেন গাড়ি ঘুরিয়ে।

থাকার মধ্যে স্টেশনে রয়ে গিয়েছিলাম শুধু আমি সাফওয়ান আর পুতুল। মেসেজ আসার কারণে আমি ওদের পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে আবার মহাশয় যখন ক্ষেপে গেলেন তখন পুরো স্টেশন দৌড় করালো। আমাকে আর পুতুলকে।

তখন দৌড়ে এসে বাইরে বের হয়ে দেখি মহাশয় গাড়িতে উঠে বসছেন সবে। আমার ভারী রাগ হলো ঠোঁট ফুলিয়ে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে সামনে থাকা চুল গুলো উড়িয়ে দিলাম। কি বদমাইশ ছেলেরে বাবা…! পুরো স্টেশন দৌড় করিয়ে ছাড়লো আমাকে।

পুতুল আমার হাত ছেড়ে দিয়ে গাড়ির সাইড গ্লাসে গিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে বলল,

— ওই ভাইয়া। তুই আমাদেরকে এইভাবে দৌড় করালি কেন? ব্যথায় আমার পা টনটন করছে।

সাফওয়ান মুখে কোন কথা না বলে গাড়ির দরজার লক খুলে দিলেন। পরে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— গাড়িতে উঠে বসো না হলে বাকি রাস্তাটুকু তোমাদের দুজনকে হেঁটে যেতে হবে।

পুতুল রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

— ভাইয়া আমি তোর চুল ছিঁড়ে দেবো।

আমি পেছন থেকে পুতুলের পিঠে টোকা দিয়ে চোখ দিয়ে গাড়িতে উঠে ইশারা করলাম। না এ ব্যাটার কোন ভরসা নেই। যদি সত্যি সত্যি তাই করে। কথা না বাড়িয়ে আমি আর পুতুল একসাথে গাড়িতে উঠে বসলাম। সাফওয়ানো গাড়ি স্টার্ট দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

_________🌺🌺________

গাড়ি এসে থামলো “সুখনীড়”ভিলার সামনে। সাফওয়ান দুইবার গাড়ির হর্ন দিতেই দারোয়ান চাচা এসে গেট খুলে দিলেন। তারপর স্মুথলি বাড়ির পার্কিং লটে গিয়ে গাড়ি থামালেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে বাড়ির পথ খুব বেশি দূর নয় ২০ মিনিটের রাস্তা।

এটুকু পথ আসতে আসতেই পুতুল আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। গাড়ি পার্কিং লটে সুন্দর করে পার্ক করে রেখে সাফওয়ান গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে পুতুলকে ডাকতে লাগলেন। এ মেয়ে প্রচন্ড ঘুমকাতুরে।

তাই শত ডাকাডাকির পরেও চোখ মেলে তাকালো না। বাধ্য হয়েই সাফওয়ান আবার ওকে কোলে নিল। আমিও গাড়ি থেকে বের হয়ে দরজা লাগিয়ে তাদের পেছনে পেছনে আসতে লাগলাম। মেইন ডোর বেল বাজাতে রহিমা খালা এসে দরজা খুলে দিলেন।

সাফওয়ান পুতুলকে নিয়ে সোজা দোতলায় চলে গেল। রহিমা খালা বলল,

— পুতুলকে ডাকার প্রয়োজন নেই। বড় ম্যাডাম আর সাহেবের সাথে পুতুল খেয়ে নিয়ছিল। ও আর এখন খাবেনা ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। আমি বরং তোমাদের জন্য খাবার গরম করছি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। খেয়ে নেবে।

আমি সম্মতি জানিয়ে উপরে চলে এলাম। সাফওয়ান রুমে নেই তারমানে সে পুতুলের ঘরেই আছে। আমি এই ফাঁকে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঢিলেঢালা কুর্তি আর ধুতি পায়জামা পড়ে বের হয়ে এলাম। ওড়না টা বিছানার উপর রেখে পাশে বসে পড়লাম।

কাজ চোরা মেয়ে আমি। অনেকদিন পরে আজ একটু কাজ কর্মের চাপ বেশি থাকায় একেবারে হাঁপিয়ে গেছি। নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না। অলস ভঙ্গিতে হেঁটে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলাম। মাথা থেকে পাঞ্চক্লিপটা ছাড়িয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিলাম চুলগুলো আঁচড়ে নিবো বলে।

যতই ক্লান্ত থাকি না কেন চুল বেনী করে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না। চিরুনি হাতে নিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করেছি এমন সময় মহাশয়ের আগমন।

আমি তার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম। আয়নায় চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে হঠাৎ আয়নায় ভেসে ওঠা একটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়লো আমার।

সাফওয়ান আলমারি থেকে টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করছিল। কিন্তু হাতে কি যেন একটা হয়েছে। ক্ষত চিহ্নের মতো। আমি উঠে গিয়ে তার পেছনে দাঁড়াতেই সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

বিরক্তিটা আমার মুখটা কুঁচকে গেল। এক ঝলক দেখে ভালোই বুঝেছি হাতটা ভালই কেটেছে কিন্তু কেটেছে কিভাবে?

__________🌺🌺___________

আমি চিরুনি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার টেনে ফাস্ট ইনবক্স বের করে সাফওয়ান এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হলেন তিনি।

দেখে মনে হচ্ছে গোসল করেছেন। আজব মানুষ! এখনো পুরোপুরিভাবে ঠান্ডা না পড়লেও রাতের দিকে ভালোই ঠান্ডা পড়ে। এই রাতে ঠান্ডার মধ্যে কে গোসল করে? একমাত্র উনিই করে।

এই 12 দিনে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি উনি যখনই বাহিরে থেকে এসেছেন, তখনই গোসল করেছেন। উনার এই হাইজেনমেন্টেইন ব্যাপারটা আমার দারুন লাগে। বলতে গেলে পুরো মানুষটাকেই আমার ভালো লাগে।

উনার দিকে তাকিয়ে এ সমস্ত ভাবার মাঝে আবার উনি আমার কে সাইড কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেলেন। না আমি যে একজন মানুষ এই ঘরে আছি, উনার সামনে সোফায় বসে আছি।উনি কি তা চোখে দেখতে পান না নাকি অনুভব করতে পারেন না?

আমি এমন অদ্ভুত মানুষ জীবনে দেখিনি।
শুনেছি বিয়ের পর পুরুষ মানুষ নাকি সব সময় বউয়ের চারপাশে ঘুরঘুর ঘুরঘুর করে। আর একে দেখো।

আমি নির্লজ্জের মত সারাদিন তার পেছন ঘুরঘুর ঘুরঘুর করছি কিন্তু কোন পাত্তাই পাচ্ছিনা। সঙ্গে সঙ্গে আমার মন বিদ্রোহ করে বলল,

*কিসের নির্লজ্জতা হে মেয়ে? ওখানে যে দাঁড়িয়ে আছে। সে সম্পর্কে তোমার স্বামী হয়। তোমার একমাত্র বৈধ সম্পদ। তাকে ভালবেসে তার পেছনে ঘুরঘুর করা নির্লজ্জতা নয়। বরং এটা তার প্রতি তোমার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

আমি উঠে ওনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। চুলের ব্রাশ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন,

— কী?

—আপনার হাত কাটল কি করে?

চুলে ব্রাশ করা থেমে গেল। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললেন,

— কিছু না, গাড়ির গ্লাসে লেগে কেটে গেছে।

আমাকে কি আপনার পুতুল মনে হয়। বুঝিয়ে দেবেন বুঝে যাব। গ্লাসে লেগে বুঝি এতটা কেটে যায়।দেখে তো মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। স্টেশনে যাওয়ার সময় তো আপনার হাতে কোন আঘাত ছিল না এমনকি আপনি যখন আমার উপর রাগ করে চোখের আড়াল হয়ে গেলেন, তার আগেও তো আপনার হাত ঠিক ছিল তাহলে।

কথাটা বলতেই সাফওয়ান কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আরো খেয়াল করলাম কি যেন ভাবতে ভাবতে মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তাই। কিঞ্চিত রাগ ফুটে উঠলো তার মুখে।

— কিছু না। তাছাড়া আমি আপনাকে কেন এত কৈফিয়ত দিবো?

— হাহ তাও ঠিক। আচ্ছা আপনাকে কৈফিয়ত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এখন এখানে চুপচাপ হয়ে বসুন।

— কেন?

—আপনার হাতে মেডিসিন লাগাবো।

— রাখবে না।

— সেটা আপনাকে বুঝতে হবে না। আমাকে বুঝতে দিন এখানে চুপচাপ হয়ে বসুন।

তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে সোফায় বসিয়ে দিলাম। পরে ফার্স্ট এইড বক্স খুলে ক্ষতটা আগে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর ঔষধ লাগিয়ে দিতে দিতে

তার দিকে নজর পড়তেই দেখলাম সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মুচকি হেসে বললাম,

— কী সৌভাগ্য আমার ,মহাশয়ের দেখি তার স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন।তা কী বলতে চাইছেন বলে ফেলুন।

তৎক্ষণাৎ সাফওয়ান শীতল কন্ঠে সতর্কবাণী শোনালেন,

— ” এবার থেকে যখন বাইরে বের হবেন। বোরকা পরে বের হবেন। বোরকা ছাড়া আপনাকে যেন বাইরে হতে না দেখি…..!”

চলবে…..❣️

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here