প্রীতিলতা পর্ব -২৯ শেষ

#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২৮_তম_পর্ব🍂

বিছানা জুড়ে বিয়ের গর্জিয়াস লাল লেহেঙ্গা , গহনা সহ বিয়েতে সাজার জন্য মেয়েদের যাবতীয় শ্বাস সরঞ্জাম রাখা রয়েছে।

সকালে হাতমুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম সাফওয়ান রুমে নেই কিছুক্ষণ পর মিতা এসে বিছানার পরে এক এক করে বিয়ের শ্বাস সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখলো। বলতে গেলে একেবারে এলাহি কাণ্ড।

আমি অবাক হয়ে মিতাকে প্রশ্ন করলাম,

ওগুলো কি মিতা?

আপনার বিয়ের পোশাক আপু। আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন স্যার গিয়ে এই সমস্ত শাড়ি গহনা আপনার জন্য কিনে এনেছেন। এখন তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে গোসল করে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যে পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে আপনাকে সাজানোর জন্য।

আমি বিছানার কোনায় বসে বিছানার উপরে রাখা জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে ব্রেকফাস্ট এর প্লেটটা নিজের হাতে তুলে নিলাম। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। একদৃষ্টিতে ওই জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।

আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমি বিয়েতে লাল লেহেঙ্গা পড়বো, ভারী সাজগোজ। কিন্তু আমার আশা পূরণ হয়নি । বিয়েটা খুব তাড়াহুড়ো আর ঘরোয়া ভাবে হয়েছিল বলে বেনারসি আর কিছু হালকা গহনা পড়েছিলাম আমি বিয়েতে।

কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হবে। ভাবতেই চোখের কোনায় সুখের অশ্রু জমা হল। কোনরকমে নাস্তাটা করে চলে গেলাম সোজা গোসল করার জন্য।

_____🌺🌺______

প্রায় ২০ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হলাম আমি। বের হয়ে দেখলাম পার্লারের দুটো মেয়ে বসে আছে সোফা সেটের উপরে। আমাকে দেখে সালাম দিয়ে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো লেহেঙ্গা সেট টা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে চেঞ্জিং রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসতে বলল।

কিছুক্ষণ পর পুরো কমপ্লিট লাল কম্বিনেশন এর লেহেঙ্গা টা পড়ে চেঞ্জিং রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি। চুলগুলো পেছনে ছেড়ে দেওয়া , মুখে কোন মেকাপ নেই। ওড়নাটা বুকের উপরে দিয়ে রেখেছি আমি।

মেয়ে দুটো আমার কাছে এসে আউটফিটটা আরেকটু ঠিকঠাক করে দিয়ে বলল,

— স্যার বলেছে খুব হালকা মেকআপ করাতে। তার ওয়াইফ এমনিতেই খুব সুন্দর দেখতে। এখন তো দেখছি মেকআপেরও কোন প্রয়োজন পড়বে না। এভাবেই স্যারের সামনে নিয়ে গেলে স্যার মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।

আমি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে হাসলাম। মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে আমাকে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে বসিয়ে দিল। দ্রুত হাতে হেয়ার ড্রায়ার বের করে চুলগুলো প্রথম শুকিয়ে নিল। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল তাদের স্যারের নির্দেশনা পালন করতে।

প্রায় এক ঘন্টা পরে আমার সাজগোজ সম্পন্ন হল। মেয়ে দুটো এখন লেহেঙ্গার বড় ওড়নাটা মাথায় তুলে সেট করে দিচ্ছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে আজ নিজেকে চিনতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বেশ সাদাসিধে নরমাল পোশাক পড়তে পছন্দ করি আমি। কিন্তু বিয়ের সাজ প্রতিটা মেয়েরই স্বপ্ন থাকে। সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন আজ নিজের মধ্যে দেখে সত্যি চঞ্চল হয়ে উঠেছে আমার দুটো চোখ। নিজেকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। মনে হচ্ছে আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু না অতীতের স্বপ্নটা আজ বাস্তবায়ন হয়েছে।

______🌺🌺______

বাইরে বের হতেই একটি কালো গাড়ি কটেজের বাইরে পার্ক করা দেখলাম। ড্রাইভার বাইরে বেরিয়ে এসে বলল,

— চলুন ম্যাম আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।

আমি আশে পাশে তাকিয়ে সাফওয়ান কে খুঁজলাম কিন্তু তাকে পেলাম না। ড্রাইভার তা দেখে বলল,

স্যার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। শষ তার পর্যন্ত আমি আপনাকে পৌঁছে দেব। প্লিজ গাড়িতে উঠুন।

আমি মিতাকে আমার সঙ্গে যেতে বললাম। কিন্তু না ও আমাকে জড়িয়ে ধরে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানালো। তারপর বলল,

— আপনারা আর আবার আসবেন আমাদের এখানে। খুব শীঘ্রই আমাদের হয়তো দেখা হবে।

আমি মুচকি হেসে আরো একবার তাকে জড়িয়ে ধরে। গাড়িতে উঠে বসলাম হাত বাড়িয়ে মিতাকে বিদায় জানালাম। তারপর গাড়িটা স্টার্ট দিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মিতা চোখের আড়াল হয়ে গেল। দ্রুত গতিতে ছুটছে গাড়িটি। তার সাথে তাল মিলিয়ে ছুটছে আজ আমার হৃদপিন্ড । ইস এতটা নার্ভাস কেন লাগছে আমার।

বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়িটা একটা বড় মাঠের সামনে এসে থামল। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম খোলা মাঠ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। এবার কেন জানি আমার ভয় হতে শুরু করল। আমি এবং ড্রাইভার ছাড়া তো আর কেউ নেই এখানে। আমি বেশ গুটিশুটি মেরে বসলাম। তা দেখে ড্রাইভার বলল,

— ভয় পাবেন না ম্যাম। আমার যে নির্দেশনা দেওয়া ছিল আমি সেই নির্দেশনায় পালন করছি। এই পর্যন্তই আমি আপনার যাত্রা সঙ্গী ছিলাম। এবার অন্যভাবে আপনাকে যেতে হবে।

ভয় রীতিমতো আমার গলা কাঁপতে শুরু করল । কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম

— অ্ অন্যভাবে মানে…! ক্ কিভাবে যাব আমি? কোথায় যাব এখানকার রাস্তাঘাট তো কিছু চিনি না আমি।

ড্রাইভার আমাকে অভয় দিয়ে বললো আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না ম্যাম আপনি মাঠে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন স্যার আসছে।

তার পরেও আমার ভয় একটুও কমেনি।মনে মনে ভাবলাম বদ্ধ গাড়ির মধ্যে বসে থাকার চেয়ে খোলা মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো। কোন অসুবিধা হলে দৌড়ে পালানো যাবে।

চুপিচাপে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম দুহাতে লেহেঙ্গার ঘেরটা উঁচু করে মাঠের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশটা হালকা মেঘাচ্ছন্ন সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বড্ড কাছে টানে আমার আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চারিপাশা আবারো নজর গোলাম না সাফওয়ানের কোন দেখা নেই।

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর কেমন যেন হেলিকপ্টারের শব্দ কানে আসতে লাগলো খুব ক্ষীণ ভাবে। তাকিয়ে দেখলাম দূর আকাশে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই ভালোভাবে দেখতে পারলাম সত্যি একটা হেলিকপ্টার।

ধীরে ধীরে শব্দ প্রগাঢ় হতে লাগলো তারপর এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে আকাশ থেকে নেমে আসতে লাগলো হেলিকপ্টারটি আমার সামনের মাঠে। মাঠের চারপাশের গাছপালায় যেন ঝড়ের তান্ডব হতে লাগলো।হেলিকপ্টার ের পাখার দাপটে আমার ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল এত পরিমানের বাতাস হচ্ছিল যেন।

তার কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে হেলিকপ্টারের পাখা বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো এবং চারিদিকের কৃত্রিম প্রলয় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগলো তার কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি পড়া সাফওয়ান। চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস চুলগুলো উঁচু করে সেট করে রাখা। পায়ে নাগরায় জুতা।

বেশ দ্রুত পায়ে এসে আমার সামনে থামলেন। সানগ্লাসটা খুলে শেরওয়ানির পকেটে ঝুলিয়ে রেখে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে গাল বাকি হেসে বলল

— নট ব্যাড। ভালই লাগছে তোমাকে।

আমার ভারী রাগ হল। নাকের পাটা টা ফুলে উঠল রাগে। এতক্ষণ ধরে সেজেগুজে এসেছি যার জন্য তার মুখে শুধু এটুকুই প্রশংসা নট ব্যাড আর ভালই লাগছে। মুখ ভেঞ্চি দিয়ে বললাম,

— ইউ লুকিং সো জঘন্য।

সাফওয়ান চমকে উঠে বলল,

— কিহ…!

আমি দুটো হাত ভাঁজ করে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

— আমি এতক্ষণ সেজেগুজে এসে যদি শুধু নট ব্যাড আর ভালই লাগছে এমন কমপ্লিমেন্ট শুনি তাহলে তুমি তো কিছুই সাজগোজ করোনি, সেহেতু তোমাকে একদম জঘন্য লাগছে।

সাফওয়ান ভাবুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে শাহাদাত আঙ্গুল নাড়িয়ে বলল ,

— ইয়াহ লজিক আছে। তুমি এক কাজ কর ওকালতির কোর্সটা কমপ্লিট কর। তোমার ক্যারিয়ার একদম চকচক করছে।

আমি গাল ফুলিয়ে মাঠের অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সাফওয়ান হঠাৎ আমার ডান গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। তারপর মুখটা কিছুটা ডানের সরিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

— ইউ আর লুকিং ড্যাম গর্জিয়াস বিউটি কুইন। ইচ্ছা তো করছে এখনই কোলে করে নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকে যাই। যাবে নাকি।

আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলেন।

আমার এবার আরো বেশি রাগ হল। কোথায় সাহিত্যিকদের মতো একটু বউয়ের প্রশংসা করবে। তা না। উনি আছে ওনার ধান্দা নিয়ে। ধুর ভালো লাগেনা।

আমি লেহেঙ্গার ঘের অল্প উঁচু করে ধরে উল্টোপথে হাঁটা শুরু করলাম। তা দেখে সাফওয়ান আমার পেছন পেছনে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

— কি হলো তুমি উল্টো যাচ্ছ কেন?

— আমি যাব না তোমার সাথে আর বিয়েও করবো না তোমাকে। সারা জীবনে কুয়াকাটাই থেকে যাব আমি। এমন কচুর বর আমার দরকার নেই।

সাফওয়ান আমার দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে এসে বলল কি বললে তুমি? আমি তোমার কচুর বর। তুমি কি জানো এই গল্পের পাঠিকারা আমার উপরে ফিদা হয়ে বসে আছে। আর তুমি কিনা আমাকে কচুর বর বললে।

আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,

— তা জান না আপনার পাঠিকাদের কাছে। আমার কাছে এসেছেন কেন? তারাও একটু বুঝুক আপনি কি চিজ। জীবনটাই আমার তেজপাতা বানিয়ে ছেড়েছেন আপনি।

স্বপন এবার কোমরে দুই হাত বাঁধিয়ে আমার সামনে তাকিয়ে বলল,

— তাহলে সত্যিই তুমি যাবা না?

— না।

— সত্যি..!

—সত্যি।

— তিন সত্যি।

আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,

— ১০০ সত্যি।

সাফওয়ান শেরওয়ানির পকেট থেকে নিজের সানগ্লাস টা বের করে চোখে পড়ে নিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

— ওকে থাকো তাহলে আমি গেলাম।

আমার এবার মনের মধ্যে ভয় কাজ করা শুরু করলো,

— এ ব্যাটা সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে রেখে চলে যাবে না তো।

সাফওয়ান ঘুরে আমার পেছনে দিকে গিয়ে হঠাৎ কোলে তুলে নিলেন।

আমি মনে মনে বললাম,

— উফ আলহামদুলিল্লাহ। যাক এই ব্যাটা আমাকে নিয়েই যাবে তাহলে।

উপরে উপরে বললাম,

— কি হলো কথায় কথায় খালি কোলে নিচ্ছেন কেন? নামান আমাকে। আমি হেঁটে যেতেই পারবো।

সাফওয়ান উত্তর দিল,

— মাঠ পেরিয়ে ওই যে দূরে দেখছ গাছ পালায় ভরা জায়গা ওটা কিন্তু আসলে একটা জঙ্গল। রাতের বেলায় বাঘ মামারা তাদের পিকনিকের মাংস খুঁজতে এখানে আসে। তুমি তো হেঁটে যেতে চাইছিলে ওইখানে আমি না হয় তোমাকে কোলে করে পৌছে দিলাম।

ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। আমি চেয়েছি কিনা ওই জঙ্গলের মধ্যেই যেতে চাইছিলাম। সাফওয়ান হাঁটা শুরু করলে আমার হুশ ফিরল। তাকিয়ে দেখলাম সে সত্যি আমাকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে।

আমি তার কোলের মধ্যে লাফালাফি শুরু করে বললাম,

— এ্যাই না না আমি বাড়ি যাব। আমাকে দয়া করে বাড়িতে নিয়ে চলুন।আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকবো না। কী এমন বয়স আমার এখনই বাঘের পেটে যেতে চাই না আমি।

স্বপন আমার মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে সন্দিহান কন্ঠে বললেন,

— সিওর তো..!

— ওয়ান থাউজেন্ড পার্সেন্ট।

সাফওয়ান এবার উল্টো ঘুরে হেলিকপ্টারের দিকে যেতে লাগলেন ‌। আমি ঘর ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকিয়ে জঙ্গলটা আরেকবার দেখে নিলাম না বাবা সব জায়গায় জেদ করতে নেই।

সাফওয়ান উত্তর দিলেন একদম ঠিক বলেছ সব জায়গায় জেদ করতে নেই। তার ফল ভালো হয় না বাবু।

আমি তো মুখ ফুটে কিছু বলিনি। তাহলে কিভাবে জানলেন?

সাফওয়ানগাল বাকি হেসে বলল,

— তোমার মন এত জোরে জোরে কথা বললে না শুনে কোথায় যাব আমি তো আর বহেড়া নই।

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,

— হুহ ঢং।

সাফওয়ান হেলিকপ্টারের সিটে আমাকে বসিয়ে দিলেন। পাশে নিজেও বসলেন। প্রথমে আমার সিটবেল্ট এবং পরের নিজের সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে হেলিকপ্টার স্টার্ট দিতে বললেন।

প্রথমবার এমন আকাশ ভ্রমণ মনের ভিতরে একটা আলাদা রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সৃষ্টি করছে। আমি সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। সাফওয়ান আমার পাশে বসে আছে ফোনে কি যেন দেখছেন।

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

,— আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায় কুমড়া পটাশ?

ফোনের দিকে নজর রেখে বললেন,

— গেলেই দেখতে পাবে। আপাতত কোন প্রশ্ন করো না।

তাই এটুকু তো বলুন হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা কেন করলেন।

সাফওয়ান ফোনটা পকেটে ভরে রেখে বললেন,

— গন্তব্য খুব নিকটে নয় তাই। তাছাড়া আমি একটা ঘোড়ার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম তোমার যা ওজন হয়েছে। তুমি ঘোড়ার পিঠে উঠলে সে তৎক্ষণাৎ পটল তুলতো। তাই তাড়াতাড়ি হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করেছি।

আমি তার শেরওয়ানি ধরে কিছুক্ষণ ঝাঁকাঝাকি করলাম। পরের দিন করে হাতের উপর একটা কিল বসিয়ে দিলাম।

সাফওয়ান নিজের বাহাত বলতে বলতে বলল,

— কেন এত লাফালাফি করে নিজের এনার্জি লস করছে? যানো মাটি থেকে আমরা কতটা উপরে আছি। আরে ক্যাপ্টেন ও কিন্তু বেজায় রাগী। রেগে গেলে তোমাকে আর আমাকে একসাথে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে। চুপচাপ হয়ে বসে থাকো।

আমিও আর তার সাথে কোন কথা না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। আকাশটা সত্যি আজ বড্ড সুন্দর।

______🌺🌺_______

প্রায় দুই ঘন্টা জার্নির পর সাফওয়ান এর গন্তব্যে এসে পৌছালাম। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটাও একটি মাঠ। সাফওয়ানো হেলিকপ্টার থেকে নেমে এসে আমার ডান হাতের কব্জি ধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। চারিপাশ দেখে যায় বুঝলাম এটা একটা গ্রাম্য এলাকা। ইটের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গিয়ে সামনেই মেইন রোড।

সাফোয়ান হঠাৎ আমার পেছনে গিয়ে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার চোখ জোড়া বেঁধে দিলেন।

— কি করছেন? চোখ বেঁধে দিলেন কেন?

পেছনে দাঁড়িয়ে আমার দুই বাহু ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,

— এখন আর একটা কথাও বলবে না। যেখানে নিয়ে যাচ্ছি চুপচাপ সেখানে চল আমার সাথে। না হলে ফল কিন্তু ভালো হবে না।

সাফোয়ানের কন্ঠ টা কেমন যেন লাগছে আমার কাছে। কাঁপা কাঁপা গলায় আমি তাকে আবার প্রশ্ন করলাম,

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?

আবার ও সাফোয়ানের ফিসফিসানি কন্ঠ,

— হুসসস…! কিপ কোয়াইট। এন্ড কাম উইথ মি।
#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#অন্তিম_পর্ব🍂

বেশ অনেকটা সময় পর চলন্ত গাড়িটা এবার থেমে গেল। চোখে যেহেতু রুমাল বাধা আছে। তাই বুঝতে পারছি না গাড়িটা কোথায় এসেছে থেমেছে। তার কিছুক্ষণ পরে গাড়ির দরজা খোলার শব্দ পেলাম সাফওয়ান বোধহয় গাড়ি থেকে নেমেছেন। তারপর দরজা বন্ধের শব্দ কিছুক্ষণ পর আমার সাইটের গাড়ির দরজা খুলে আমার ডান হাত ধরে ধীরে সুস্থ নামলেন তিনি।

পেছন থেকে গাড়িটা চলে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম। এখনো তিনি আমার চোখের পর্দা টা সরলেন না। আবার আমি খুলতে চাইলেও তিনি বারবার হাত আটকে দিচ্ছেন। ব্যাপারটা আসলে কি হচ্ছে এটাই বুঝতে পারছিনা। তাই চুপচাপ তাকে অনুসরণ করছিলাম।

বেশ অনেকটা সময় তার পিছু পিছু হেটেই যাচ্ছি হেঁটেই যাচ্ছি আসলে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে আমাকে তিনি। আমি এবার অধৈর্য হয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম ,

— সেই কখন থেকে শুধু হেঁটেই যাচ্ছি হেঁটেই যাচ্ছি আর কত দূর সাফওয়ান?আমরা আসলে যাচ্ছিটা কোথায়?

কিন্তু প্রতিউত্তরে উনার সেই একই উত্তর:- গেলেই দেখতে পাবে।

ধুর ভাল লাগে না এমনিতেই ভারী লেহেঙ্গা এটা উঁচু করে হাঁটতে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝলাম মহাশয় এর পদযুগল থেমেছে।

আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম। চোখ যেহেতু বাধা সেহেতু নাসা ইন্দ্রিয় বড্ড সজাগ হয়ে গেছে। নাকে খুব সুন্দর ফুলের মিষ্টি গন্ধ লাগছে। একটা ফুলের গন্ধ নয় অনেকগুলো ফুলের সুবাস মিশ্রিত হয়ে খুব সুন্দর একটা মিষ্টি গন্ধ।

সাফওয়ান আমার হাত জোড়া ছেড়ে দিলেন। আমি আঁকড়ে ধরতে চাইলেও ধরতে পারলাম না তার হাতটা। তার আগে আমার পাশ থেকে সরে গেলেন তিনি। আমি হাতড়ে তাকে আশেপাশে পেলাম না। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একজোড়া হাত আমার কোমর জড়িয়ে ধরল।

এমন হঠকারী ঘটনায় আমি হকচকিয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি কোমরে জড়িয়ে রাখা হাতগুলো হাত দিয়ে ছড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলাম স্পর্শটা কেমন যেন খুব পরিচিত। সামনের মানুষটার মাথা আমার বুক বরাবর। তার মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমি তার মুখটা নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে খুশিতে বলে উঠলাম ,

— পুতুল সোনা!

তখনই পেছন থেকে কেউ আমার চোখের বাধন খুলে দিল। সামনে তাকিয়ে দেখলাম। আমার সামনের স্বয়ং পুতুল সোনা দাঁড়িয়ে আছে। সে আবার আমার মত লেহেঙ্গাও পড়েছে। মুখে লেপ্টে আছে এক চিলতে মিষ্টি হাসি।

ওকে আমার নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। কেন জানিনা এই মেয়েটার সবকিছুই আমার ভালো লাগে।এর স্পর্শ এর সম্মধন সবকিছু।

পুতুলকে জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায় সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে আছে। এখনো নির্দিষ্ট কোন পরিবার নেই। দুটো পরিবার মিলেমিশে এখন একটা পরিবার হয়ে গেছে। তাদের সবার মুখে লেপ্টে আছে তৃপ্তির হাসি। আর এই তৃপ্তিময় হাসির কারণ হতে পেরেছি এটাই আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।

মানুষ এমনি এমনি একটা জিনিস পাওয়া আর কষ্ট করে অর্জন করার আনন্দের মধ্যে অনেক তফাৎ থাকে। যে আনন্দটা আজ আমি উপভোগ করছি। নিশ্চয়ই কষ্টের পরে অপরিসীম সুখ থাকে। যেমন রাতের আধার কাটিয়ে দিনের সূর্য উদয় হয় সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্য তেমনি আমার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট আজ মুছে গিয়ে সেই জায়গাটা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।

আজ ভালবাসার মানুষটার হাতটাও আজ আমার হাতের মুঠোয় আবার পুরো পরিবারের দোয়াও আছে আমার মাথার উপরে। আর কি চাই এটুকু জীবনের জন্য। না চাইতেও আল্লাহ দুহাত ভরে আমাকে দিয়েছেন। তার জন্য তাকে কোটি কোটি শুকরিয়া।

মনে মনে এই সকল কথা ভাবতে ভাবতেই চোখে অশ্রু কনা জমা হলো। হঠাৎ পুতুল হাত বাড়িয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিল।

— কেদোনা প্রীতিলতা। চলো তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। এসো।

আমার ডান হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিল আরেক হাত দিয়ে সাফওয়ানের বাঁ হাতটা জড়িয়ে ধরল। লাল কার্পেট মোড়ানো রাস্তাটা দিয়েই হেঁটে আসতে লাগলাম আমরা তিনজন। সাফওয়ানের দিকে তাকাতে তিনি আমাকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলেন। বিনিময়ে আমিও হাসলাম। প্রাণখোলা মিষ্টি হাসি।

ডাক্তার ভাইয়া গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে ক্যামেরা তাক করে কিছু সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত ক্যাপচার করে নিচ্ছেন। যেমন কিছুক্ষণ আগে আমি পুতুল আর সাফওয়ান যখন একসাথে হেটে আসছিলাম তখন বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছেন তিনি।

পরিবারের কাছে এসে দাঁড়াতে মামনি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন প্রথমে। তার চোখ জোড়াও আজ ছল ছল করছে। কৃতজ্ঞতা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কপালে চুমু দিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আমাকে ভেতরে নিয়ে আসেন। পিছনে পিছনে সবাই আসলো।

ভেতরে ঢুকে বুঝতে পারলাম এটা একটা হোটেল। নিচের প্লেস টা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । বিভিন্ন রঙের ফুল লাইট দিয়ে পুরো সেন্টারটাকে সাজানো হয়েছে।

মামনি, আম্মু, বড় ভাবি আমাকে নিয়ে দোতালায় উঠতে গেলে সাফোয়ান বাধা দিয়ে বলে,

— একটু ওয়েট করো তোমরা এখনো একটা কাজ বাকি আছে।

সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

— কী কাজ?

তখনই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন কাজী সাহেব। সাফওয়ান সেদিকে এগিয়ে এগিয়ে তাকে সোফায় বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

আব্বু আমি আবার প্রীতিকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। সবার সামনে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার যে প্রীতিকে যখন বিয়ে করেছিলাম তখন আমার এই বিয়েতে মত ছিল না। অনেকটা নিজের উপরে জোর খাটিয়ে করেছিলাম বিয়েটা। কিন্তু এখন … তাই চিন্তা করলাম নতুন জীবনটা শুরু করার আগে সবার সম্মতি নিয়ে আমি আবার প্রীতিকে বিয়ে বাড়িতে তুলতে চাই।

দীর্ঘ কয়েক বছর পর ছোট ছেলের মুখে সেই আদর মাখা ডাক শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন সাখাওয়াত সাহেব। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সাফওয়ানো বাবাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরলেন। দীর্ঘদিনের মান অভিমানের পালা বুঝি এবার সমাপ্তি ঘটলো।

কান্না ভেজা কন্ঠে সাখাওয়াত সাহেব বললেন,

— আমি মনে করেছিলাম তুমি হয়তো বিয়েটা সেড়ে এসেছো। তাই তোমাদের বরণ করার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে আছি আর বৌভাতের আয়োজন করেছি তবে ব্যাপার না পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত আছে। বিয়েটা এখনই হবে।

সাফওয়ান মুচকি হেসে বললেন,

— আমাদের আম্মু আব্বু ছাড়া কিভাবে বিয়ে করতে পারি আমরা? বিয়ে তো শুধু মাত্র দুটি মানুষের মধ্যে হয় না, দুটো পরিবারের মধ্যে হয়।

কথাটা বলে আর চোখে আমার দিকে তাকানোর সাফওয়ান। আমি কৃতজ্ঞতা ভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

বাবা মুচকি হেসে সাফয়ান এর পিঠ চাপড়ে চোখের পানি টুকু মুছে নিয়ে ছেলের হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলেন। মামনি আর আম্মু আমাকে নিয়ে গিয়ে অপজিটের সোফায় বসিয়ে দিলেন। পুতুল সেই যে আমার হাত জোড়া আঁকড়ে ধরেছে এখনো ছাড়েনি। আমার পাশেই বসেছে সে।

আমার দুই বাবা কাজী সাহেবের দুই পাশে বসেছে। আমার ভাই প্রীতম বসেছে সাফোয়ানের পাশে। ভাবি ফল মিষ্টি খেজুর আর শরবত সবকিছু এনে টেবিলের উপরে সাজিয়ে রাখলেন। কাজী সকল পেপার রেডি করে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।এমন সময় সায়েম ভাইয়া এসে বললেন,

— এক এক মিনিট।

হঠাৎ এমন ভাবে থামিয়ে দেওয়ার সবাই সায়েম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

— কি হয়েছে সায়ে ম?

— কেউ এসেছে তোমাদের সাথে দেখা করার জন্য।এই যে ট্যান ট্যানাআআআআ….

মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করলেন খালামনি। তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সাইমা। সাইমাকে দেখে প্রথমে আমি কিছুটা অবাক হলাম। ভিতরে হালকা অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল আমার। কিন্তু পরবর্তীতে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে সেই অস্থিরতা কমলো। মানুষটা এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো যে সে আমার সাথে আছে।

খালামণিকে আসতে দেখে সবাই যেন অবাক হয়ে গেল তার থেকেও দ্বিগুণ অবাক হলো যখন দেখলো তার পেছনে সায়মা দাঁড়িয়ে আছে। খালাম্মা নিয়ে এসে সায়েমের পাশে দাঁড়ালেন।

সায়েম চোখ দিয়ে ইশারা করলে খালামণি সাফওয়ানের পাশে গিয়ে বসলেন। সাফোয়ানকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। তারপরে সবার উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে মেয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। মামনি গিয়ে খালামনিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

— অতীতে যা হয়েছে সবকিছু ভুলে যা। তুই যে এসেছিস আমি খুব খুশি হয়েছি। দুই হাত ধরে ছেলে আর ছেলের বউকে দোয়া কর। তারা যেন ভবিষ্যতে খুব সুখী হয়।

অবশেষে পুরো পরিবারের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো আবারো বিয়ের সম্পন্ন হল। কবুল বলার মুহূর্তে আমার গলা কাঁপছিল। মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছিল সেই প্রথম দিনের মত। গলা কাঁপছিল। তারপরে আম্মু আব্বুর দিকে তাকিয়ে আবার কবুল বলে আমার প্রিয় মানুষটিকে আপন করে নিলাম। আর সাফোয়ান..!

সে তো আজ লজ্জা ভুলে গিয়ে গড়গড় করে কবুল বলে দিয়েছেন তিনবারের জায়গায় চারবার। তা নিয়ে আরো একবার হাসাহাসি হল পরিবারের মধ্যে। আর পুরো সময়টাকে ক্যাপচার করলেন।

সায়েম ভাইয়া অবশেষে ফ্যামিলি ফটো তোলার জন্য স্ট্যান্ডে ক্যামেরা বাঁধিয়ে রেখে টাইমার সেট করে সবাই এসে বসে পড়লেন আমাদের পাশে। সায়মা প্রথমে ইতস্তত করছিল। পরে মামনি গিয়ে তাকে ট্রেনে পাশের সোফায় বসিয়ে দিলেন। ব্যাস একের পর এক বেশ কিছু পারিবারিক মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হয়ে গেল।

______🌺🌺______

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কাজী সাহেব বিদায় নিলেন। সবাই যে যার কাজে লেগে পরলো। আমাকে উপরের দোতলার একটি রুমে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দিয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আবার পার্লারের মেয়েরা এসে বউ ভাতের জন্য সাজাবে আমাকে। পুতুল আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বালিশে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছি। পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

এমন সময় দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো সাইমা। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিল। আমি ওকে দেখে সোজা হয়ে বসলাম। বিছানার পাশে বসার জন্য ওকে জায়গা করে দিয়ে বসার জন্য অনুরোধ করলাম। ও কোন কথা না বলে সেখানে চুপচাপ বসে পড়ল। তারপর বেশ অনেকক্ষণ নিরবতা।

তাই আমি এবার মুখ খুললাম তাকে বললাম,

— কেমন আছো সাইমা?

প্রতিউত্তরের ও আমার দিকে চাইল। তারপরে চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল ,

— ভালো।

তারপর আমি আর কোন কথা খুঁজে পেলাম না চুপচাপ রইলাম অপেক্ষা করলাম সায়মা কি বলে তা শোনার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর সে নিজে থেকেই বলে উঠলো

— সরি ভাবি।

তার মুখে ভাবি ডাক শুনে আমি চমকে উঠলাম। আমি তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,

— সরি কিসের জন্য?

সে মাথা নিচু রত অবস্থায় উত্তর দিল,

— তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য। তুমি আমাকে মাফ করে দাও আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি শুধু তোমার সাথে না। এই পুরো পরিবারের সাথে। অনেক বড় ভুল করেছি আমি। নিজের করা সেই ভুলের খেসারত এখনো আমি দিচ্ছি।

আর থ্যাঙ্ক ইউ আমার সম্মান বাঁচানোর জন্য। আমি জানি সেদিন ওই বদ্ধ রুমে আমি তোমার সাথে যেটা করেছি সেটা অনেক বড় অন্যায় ছিল ভুল ছিল কিন্তু তারপরেও তুমি কাউকে সেটা বলনি। তার জন্য আমি অনেক কৃতজ্ঞ তোমার কাছে। পারলে ছোট বোন মনে করে আমার এই অপরাধ ক্ষমা করে দিও।

[শেষ উক্তিটা সায়মা হাত জোড় করে বলল] আমি তার হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে বললাম,

— আমি কিছু মনে রাখিনি। অমন আচরণ তুমি কেন করেছিল সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু তুমি আসল নকলের পার্থক্যটা বুঝতে পারোনি।

সায়মা কান্নারত অবস্থায় বলল,

— তার খেসারত তো এখন দিচ্ছি। আসলে সময় থাকতে মানুষের মূল্য বুঝতে হয়। আর ভালবাসলে একজনকেই বাসতে হয়। আমি আসলে সাফওয়ান ভাই কে ভালোইবাসিনি। যেটা বেসেছ তুমি। তাইতো তোমার ভালোবাসার জয় হয়ে গেল। অর্জন করেছ সেই মানুষটাকে। আর আমি কিনা তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম।

আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম ,

— থাক ভুলে যাওয়া পুরাতন সব কথা। জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। সে তার আপন গতিতে চলে। নিশ্চয়ই তোমার জন্য কোন উত্তর জীবনসঙ্গিনী অপেক্ষা করছে। শুধু সবুর কর। সবুরের ফল সুমিষ্ট হয়।

আর বারবার এটা মনে করার কোন দরকার নেই যে আমি তোমার উপরে রেগে আছি। আমি তোমাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি কারণ যে কারণে রাগটা করব তোমার উপরে, সেই কারণটা একান্ত আমার হয়ে গেছে।

_______🌺🌺______

রিসেপশন পার্টিটা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে পুরো। চারিদিকে কত শত অচেনা মুখ। ভিতরে ভিতরে খুব নার্ভাস ফিল করছি আমি কিন্তু সাফওয়ান এক মুহূর্তের জন্য আমার হাত ছাড়েননি। খুব মিষ্টি হাসি দিয়ে সবার সাথে পরিচিত করে দিচ্ছে আমাকে।

কিছুটা দূরে তাকিয়ে দেখলাম আম্মু আব্বু মামনি বাবা দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে। আর প্রীতম পুতুলের হাত ধরে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাইয়া ভাবি পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অতিথি আপ্যায়নের জন্য। আর সায়েম ভাইয়া অনেকক্ষণ ধরে দেখছি একটা মেয়ের দিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে আবার সুযোগ বুঝে ফটো তুলছে। যাক তার পেছনে লাগার একটা টপিক পেয়ে গেছি।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়ার পর ক্যামেরাম্যান আসলো ফটো সেশন এর জন্য। আমার এবং সাফওয়ান এর কিছু কাপল পিক তোলা হলো। তারপরে পুরো পরিবারের সাথে কিছু সুখময় মুহূর্ত। পুতুল আর আমি একসাথেও বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছি।

স্টেজের সোফা সেটের ওপরে বসে আছে আমি আর সাফওয়ান। কিছুক্ষণ পর রেপিং পেপারের মোড়ানো বড় একটা গিফট নিয়ে হাজির হলেন পুতুল আর প্রীতম। আমার আর সাফনের সামনে তুলে ধরে বলল,

— এটা আমাদের দুজনের পক্ষ থেকে তোমাদের বিয়ের গিফট ।উফ ধরো ধরো অনেক ভারি।

আমি আর সাফোয়ান একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হেসে গিফট টা হাতে নিয়ে আমি তাকে বললাম ,

— বাব্বাহ এতো ভারী গিফট!কী আছে এতে পুতুল সোনা?

পুতুল কপাল চাপড়ে বলল,

— উফ এই মেয়েটাকে নিয়ে যে আমি কি করি। তুমি তো কিছুই বোঝনা প্রীতিলতা। গিফট পেলে বুঝি কেউ প্রশ্ন করে কি আছে গিফটের ভিতরে? গিফট খুলে দেখতে হয় বোকা মেয়ে।

উপস্থিত সবাই পুতুলের এমন পাকা পাকা কথা শুনে হেসে দিল। আমি মুখটা ইনোসেন্ট বানিয়ে তাকে বললাম কি আর করা যাবে বল পুতুল সোনা তোমার প্রীতিলতা তো এমনই বোকা। ওর দ্বারা চালাক হওয়া হবে না। তার থেকে বরং গিফট টা খুলে দেখে আমার পুতুল সোনা আমার জন্য কি এনেছে।

রাপিং পেপারটা আস্তে আস্তে খুলে ফেললাম প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম ফটো ফ্রেমের মত কিছু একটা হবে। কিন্তু আমি তো খুলে অবাক ।বিভিন্ন সাইজের কয়েক টা ফটো ফ্রেমগুলো সাজানো।

পুতুলকে কোলে নিয়ে বাসার বারান্দায় বসে ছবি তুলেছিলাম। তার বেশ কিছু মুহূর্ত প্রথম ফ্রেমের মধ্যে বন্দি আছে।

দ্বিতীয় ফ্রেমে আমার আর সাফওয়ানের বিশেষ কিছু মুহূর্ত। ফটো ফ্রেমের একদম মাঝখানে বেশ বড় করে আটকানো আছে সেই ছবিটা যেটা দোলনায় বসে আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এছাড়া বিয়ের ছবি। কিন্তু আরও একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল সেটা হচ্ছে সেদিনের ছবি সাফওয়ান বাড়ির ছাদে হাস্যজ্জল ভাবে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উঁচু করে ধরেছিলেন আমাকে। এই ছবিটা কে তুলল?

আরেকটি ফ্রেমে পুরো পরিবারের সাথে কিছু আনন্দময় মুহূর্ত। উপহারটা সত্যি এক কথায় অসাধারণ হয়েছে। এত সুন্দর একটা গিফট ভেবে রেখেছে আমার জন্য আমার পুতুল সোনা। আনন্দে জড়িয়ে ধরলাম ওকে।

পুতুল আমার গালে টুক করে একটা চুমু দিয়ে বলল,

— এরকম সব সময় হাসি খুশি থাকবে তুমি প্রীতিলতা। হাসিখুশিতেই তোমাকে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে।

আমি পুতুলের কপালে চুমু দিয়ে বললাম,

— তুমি থাকতে প্রীতিলতা কে কখনো কোনো দুঃখ কষ্ট ছুঁতে পারবে না পুতুল সোনা। এভাবে সারা জীবন আমার পাশে থেকো। আমি সারা জীবনে এমন পুতুলের প্রীতিলতা হয়ে থাকতে চাই।

_______🌺🌺_______

ফুলে সাজানো বিছানার মাঝখানে বসে আছি আমি। কিছুক্ষণ আগে ভাবি আমাকে রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছেন। বুকের মধ্যে কেমন যেন ধীরিম ধীরিম শব্দ হচ্ছে। গতকালের থেকেও বেশি নার্ভাস ফিল করছি আমি। গতবার বাসর ঘরে যখন বসেছিলাম সাফওয়ান তো সারারাত এ ঘরমুখ হননি।

কিন্তু এবারের ব্যাপারটা ভিন্ন। তাই আরো বেশি নার্ভাস ফিল করছি। রীতিমতো হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে আমার। অন্য সময় সাফোয়ানের মুখের উপর অনেক কথাই বলেছি। যেগুলো ভাবতেও এখন লজ্জা লাগছে। কি জানি আজ কি বলে খ্যাপাবেন আমাকে।

এরমধ্যে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলেন সাফওয়ান। শেরওয়ানি ওর মাথায় পাগড়ি পরিহিত পুরুষটিকে আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে। এক নজর তাকিয়ে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। নিজের শাড়িটা দুহাতে খামছে ধরলাম। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলেন আমার কাছে।

মুখটা আরো নিচে নামিয়ে নিলাম যার ফলে আমার থুতনি গিয়ে বুকের উপরে স্পর্শ করল। বেশ অনেকক্ষণ কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি মুখ তুলে তাকালাম দেখলাম তিনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর নজর আমাকে নিবদ্ধ। আমি তাকাতেই তিনি শব্দ করে হেসে উঠলেন।

বিছানায় আমার পাশে বসে পাগড়ি টা খুলে খাটের পাশে বক্সের উপরে রেখে বললেন,

— কি ম্যাডাম। এতদিনে এত সাহস দেখালেন। আজকে সব ফুস করে হাওয়া হয়ে গেল। আপনাকে কিন্তু এভাবে মানায় না। মিস ভয়ঙ্করীতে কিন্তু আপনাকে বেশি মানায়। ক্যারেক্টার চেঞ্জ করুন। নিজের ফর্মে ফেরত আসুন।

উফ এই আজাইরা বেটা রোমান্টিক মোমেন্টের বারোটা বাজিয়ে দিল। ঘোমটাটা মাথার উপর থেকে তুলে দিয়ে বললাম,

—ঠিকই আছে। আমি একটু বেশি ভেবে ফেলছিলাম। কিন্ত কুমড়া পটাশ তো কুমড়ো পটাশ ই । কোথায় দুই একটা ভালো কথা বলবে। তানা এসেই পেছনে লাগতে শুরু করে দিয়েছে।

বলে মুখটা ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর সা ফোন উঠে দাঁড়িয়ে আমার মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,

— আপনার অভিযোগ শেষ হয়েছে ম্যাডাম। তাহলে আমার কিছু কথা আছে। তার আগে উঠে দাঁড়াও।

আমি তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

— কেন?

সাফান অধৈর্য হয়ে বললেন,

— বড্ড বেশি প্রশ্ন করো। বলছি উঠে দাঁড়াতে দাড়াও নারে বাবা।

বলে আমার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এরপর আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন বাইরের দিকে। আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম,

— এ সকাল থেকে শুধু টানা হেঁচড়ার উপরেই আছি আমি। এখন আবার কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?

সাফওয়ান আমার ঠোঁটের ওপরে এক আঙ্গুল দিয়ে বললেন,

— আস্তে কথা বলো না রে বাবা। না হলে বাড়ির সবাই টের পেয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি পা চালাও ছাদে যাব।

কথাটা বলে নিজেই টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো আমাকে। বেশ দ্রুত পায়ে ছাদের দরজায় এসে দাঁড়ালাম আমরা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। ঝিরঝির করে বাতাস বইছে।

আমি চারিদিকে নজর বুলিয়ে সাফওয়ানের দিকে তাকালাম। তিনি মুচকি হেসে আমার বা হাতটা ধরে ছাদের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালেন।

একি কি করছেন? আকাশের অবস্থা তো তেমন ভালো নয়। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যে ছাদে টেনে আনার মানে কি?

সাফওয়ান আমার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলল,

— আমার ভালবাসাটা যেখান থেকেই শুরু হয়েছিল প্রীতিলতা। এখানে উদযাপন করবো না তা কিভাবে হয়।

আমি উৎসব দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার কথাগুলো শুনছি।

তিনি আবার বলতে শুরু করলেন,

— এমন একটা বৃষ্টিমুখর রাতে আমি আমার প্রেয়সী কে ছাদের কার্নিশ বরাবর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। যে তার দুঃখ বিলাসে ব্যস্ত ছিল। মনের মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতির সঞ্চার হয়েছিল সেদিন। আর যি পরবর্তীতে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।

সেদিন যখন আমার বুকের উপরে ঢলে পড়েছিলে কিছু মুহূর্ত যেন মনে হয়েছিল আমার হৃদপিণ্ড ছাড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর আগে এমন অনুভূতি আমার হয়নি কখনো। তোমাকে নিয়ে উন্মাদের মত সিঁড়ি থেকে নেমেছিলাম আমি। আমার মস্তিষ্ক সেদিন আমার কথা শুনেনি। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো সেদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল আমার বিরুদ্ধে।

কেন জানি খুব করে চাইছিলাম একবার চোখ মেলে তাকাও আমার দিকে। তবে হয়তো এই অস্থিরতা কমবে আমার। তারপর যখন মাঝরাতে তোমার জ্ঞান ফিরলো। ইচ্ছে তো করছিল বুকের সাথে জড়িয়ে নেই। কিন্তু ওই যে আমার ইগো। সে অতটা এগোতে দেয়নি আমাকে। তাই ওভাবে ধরে তোমাকে শুধু পানি খাইয়ে ছিলাম। ওই রাত্রে তোমার জন্য যা যা করেছিলাম সবগুলোই মন থেকেই করা ছিল।

কথাগুলো বলতে বলতে কখন জানি ছাদের কার্নিশের পাশে চলে এসেছে আমরা দুজন। সবকিছু কেমন যেন একের পর এক মনে দৃশ্যপটে ভেসে উঠতে লাগলো। আমি ঘুরে রাতের শহর দেখতে লাগলাম। এর মধ্যে হঠাৎ ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো। আমি ঘুরে পিছনের দিকে যেতে গেলে ই সাফওয়ানের বুকের সাথে ধাক্কা লাগে সে আমাকে ওইভাবে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখে। থুতনিটা কাঁধের উপরে রেখে বলেন,

— এখান থেকেই আমাদের সম্পর্কের শুভ সূচনা হয়েছিল। আজ আবারো সেই বর্ষণমুখর মুহূর্ত। আমাদের জীবনের অতীতের সকল গ্লানি ধুয়ে মুছে আগামীর নব সূচনা করব আমরা।

আনন্দে আমার অশ্রু আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল । আমি তার বুকে মাথার পিছন থেকে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃষ্টির কনা গুলো সত্যি আমার সকল মন খারাপে ধুয়ে মুছে সব করে দিচ্ছে। ভেতর থেকে কেমন যেন খুব হালকা অনুভব করছি আমি।

সাফও নেবার হঠাৎ হাত ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। দুহাতে কোমর পিছিয়ে ধরে তার দিকে টেনে নিলেন। আমাদের মধ্যে এক ইঞ্চিও দূরত্ব নেই যেন। নাকে নাক ঘষে বেশ জোর গলায় বললেন,

প্রীতিলতা তুমি পদ্য
পাতা ঝিমঝিমানো গদ্য
তোমার আমার সন্ধি,
একি ছকেতে বন্দি।

কথাটা শেষ করেই আমার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে করে নিলেন।আমিও ভেসে গেলাম তার ভালবাসার অনন্ত মায়ায়। এভাবেই পূর্ণতা পেয়েছেন আমাদের ভালোবাসা।

#সমাপ্ত🌺

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here