#প্রেমজাল
পর্ব ২৫
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
রিমির নন্সটপ পকর পকর কথার মাঝে একবার নিজেকে আয়নায় পরখ করে নিলাম। উহু ডার্ক ম্যাট শেডে অতটাও খারাপ লাগছে না আমায়। হাতে ফোন নিয়ে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে রিমির কথা শুনতে শুনতে নিচে নামলাম। পরক্ষণে যা দেখলাম তাতে অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। হঠাৎ চোখ জোড়া যেন থমকে যায় সোফায় অবস্থানকৃত দুই ব্যক্তির অবয়ব দৃষ্টিপাত হতেই। সোফায় আয়েশ করে বসে আছে আয়ান এবং উনার পরিপার্শ্বে বসে আছে এক অপরিচিত রমনী। বলা বাহুল্য যে আজ উনাকে সুন্দর লাগছে। খুবই অতি মাত্রায়! সিক্রেট পুলিশ এজেন্ট হওয়ায় সচরাচর ফর্মাল গেটআপে না থাকলেও বর্তমানে খানিকটা বিবিধ রকম দেখাচ্ছে উনাকে।
আয়ানের গায়ে ডার্ক ব্লু জিন্স ও জ্যাকেটের সাথে সাদা গেঞ্জি, পায়ে স্পোর্ট কেডস এবং হাতে বরাবরের মতো ব্রান্ডের ডায়েল ঘড়ি পরিহিত আছে। অন্যান্য সময়ের মতো খোলা নয় বিধায় বাতাসে দোল খেয়ে চুলগুলো বারবার আছড়ে পড়ছে না কপালের কাছে। তবে সুন্দর ভাবে সন্তপর্ণে জেল দিয়ে সেট করা। চোখে মুখে তার এক ধরনের চাপা দুষ্টু হাসি। নিঃসন্দেহে মানুষটার ব্যাক্তিত্বে যে কোনো কেউ আকর্ষিত হয়ে বারংবার প্রেমে পরতে বাধ্য। হাহ!! একটা তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে সম্মুখে অগ্রসর হলাম। আপনমনে খুটিয়ে খুটিয়ে পরখ করতে লাগলাম তাদেরকে।
আয়ানের পারিপার্শ্বে লেপটে বসে থাকা মেয়েটার আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে পরনে অফ শোলডারের হাটু পর্যন্ত ফ্রক। তার সোনালী রঙের স্ট্রেট করা চুল খোলা থাকায় বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড্ডায়মান। হাতে চিকচিক করছে তার ডায়মন্ডের ব্যাস্লেট। আয়ানের সাথে গা ঘেষে বসায় মনের গহীন খানিকটা ব্যথিত হলেও মেয়েটার অতি মাত্রায় ন্যাকামি কণ্ঠ ও অঙ্গভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে রীতিমতো মানসিক অবস্থা বিকৃত হচ্ছে আমার। যদি পারতাম ঠাডায় দিতাম কানের নিচে দু’খানা। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, কে এই অতি অসহ্যকর রমনী?
আমার মনের কোণে উথাল-পাতাল ভাবনার ফোড়ন কেটে আচমকা দাদিমণির উত্তেজিত কণ্ঠে আমাদেরকে অর্থাৎ আমাকে ও রিমিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-‘ আহানা-রিমি এই হলো রিয়া। তোদের ছোট্ট ফুপিমণির মেয়ে। আর রিয়া, এই হলো আহানা আর রিমি’
‘রিয়া’ নামটা সম্বোধন করার সাথে সাথেই যেনো আমার বুকটা ধক করে উঠলো। রিয়া মানে? তাহলে এটাই কি সেই কাঙ্খিত রিয়া আপু? যার সাথে আয়ানের বিয়ে হবে বলে দাদিমণি আখ্যায়িত করেছিলো? তবে কি আমার সময় ঘনিয়ে এলো? এতো তাড়াতাড়ি আমার এই বাড়িতে স্থায়ত্ব কাল ফুরিয়ে এসেছে বলা যায়? এতোই কম সময় ছিলো আমার কাছে?
রিয়া আপু চোখ সরু করে দাম্ভিক কণ্ঠে বলে উঠলো,
-‘ অহ আই গট ইট। অই যে পালক আনা মেয়েটার বোন এরা, তাই না?’
সবাই তার কথা বিব্রতবোধ করলো। কারণ আমাদের পরিবারের কেও সুপ্পু কে আলাদা করে কখনো বৈষম্যতার দৃষ্টিতে দেখে নি। আমার বাবা-মা দত্তক নেয় বিধায় বরাবরের মতো বড় আপু ভেবেই এসেছি। সাথে সকলে আমাদের বাড়ির বড় মেয়ে। সুপ্পু থাকলে নির্ঘাত অনেক কষ্ট পেতো। কিন্তু আকস্মিক ভাবে তখনি সুপ্পু ফোনে কথা বলতে বলতে দিড়ি দিয়ে নামলো। মুখশ্রী তে বিদ্যমান তার অমায়িক হাসি। হয়তো সে নিলয় ভাইয়া অর্থাৎ তার ফিয়ানন্সির সাথে কথা বলছে। সুপ্পু ফোন রেখে আমাকে ইশারা জিজ্ঞেস করলো কে এই মেয়ে? হয়তো সেও ‘রিয়া’ নামটার সাথে পরিচিত হলেও রিয়ার আপুর চেহারার সাথে পরিচিত নয়। তখনি রিয়া আপু ভ্রু কুচকে প্রশ্নসূচক চাহনি নিয়ে বলে উঠলো,
-‘ আ’ম রাইট?’
সাথে সাথে রিমি ত্যাজি গলায় বলে উঠলো,
-‘ ইউ আর এবসুলেটলি রং (You Are Absolutely Wrong). আপনার একমাত্র মায়ের একমাত্র বোনের একমাত্র ছেলের একমাত্র নানুমণির ছেলেদের একমাত্র বউ এর একমাত্র শ্বশুড় বাড়ির বংশধর আমরা’
রিয়া আপু এমন উত্তর প্রত্যাশা না করায় কিছুটা ভড়কে গেলো। সম্পর্কের হিসাব মিলানো তো দূরের কথা কোনটার পর কি বলেছে সেটাই তার বোধগম্য হলো না। আমি মুখে তাচ্ছিল্য হাসি টেনে ধরলাম। তখনি আয়ান দাঁড়িয়ে জ্যাকেটের কলা ঠিক করতে করতে রাশভারী কন্ঠে বললো,
-‘ আই থিংক উই আর গেটিং লেট’
রিয়া আপু আয়ানের কথা তাল মিলিয়ে বললো,
– ‘আ’ম অলসো। লেটস গো’ বলে আয়ানের বাহু জরিয়ে ধরলো।
হলরুমে আমি, সুপ্পু, রিমি, আয়ান, রিয়া আপু, দাদিমণি ছাড়াও গ্রাম থেকে আসা দু’জন মহিলা ছিলো। সেই দু’জন একটু দৃষ্টিকটু করে তাকাতেই আয়ান হাত ছাড়াতে ছাড়াতে রিয়া আপুর উদ্দেশ্য বললো,
-‘ রিয়া এটা তোমার লন্ডন নয়, এটা বাংলাদেশ। সো হেভ সাম ডিস্টেন্স’
আয়ানের কথায় রিয়া আপুর মুখটা রীতিমতো হুতুম পেচার মতো ধারণ করেছে। রিমি তো হে হে করে হেসেই দিয়েছে। রিয়া আপু মুখ ঝামটি দিয়ে বড় বড় পা ফেলে বাইরের দিকটায় অগ্রসর হলো।
দাদিমণি আর কিছু না বলে সেও বেরিয়ে যেতেই পিছু পিছু দু জন মহিলা সাথে সুপ্পু আর রিমি এগিয়ে চললো। আমিও তাদের সাথেই এগিয়ে গেলাম। হাটার তালে তালে বুঝলাম কারোর ছায়া মূর্তি আমার পিছু নিচ্ছে। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়েই হাটতে লাগলাম।
যখনি হলরুমের মেইন গেট অতিক্রম করবো আচমকা পিছন থেকে কারোর স্পর্শ আমার কোমর উপলব্ধি করতেই খানিকটা চমকে গেলেও জানা আছে আমার কে করছে। সে স্পর্শ বাজে ভাবে করেনি। তাই আমিও সুশীল ভাবে উনার হাত টা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হাটতে লাগলাম আপন মনে।
কিন্তু আয়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে আবার আমার কোমড় আকড়ে ধরলো। আমি পিছন ফিরে তীক্ষ্ম নজর নিক্ষেপ করায়েও তার কোনো হেলদুল হলো না। সে আমার কোমড় চেপেই ধরে আছে। আমি নিজেকে যথাযথ শান্ত রেখে চোয়াল শক্ত করে উনাকে বললাম,
-‘ মি. চৌধুরী এটা আপনার বেডরুম না যে, যা ইচ্ছা করবেন। এটা পারলিক প্লেস। সো হেভ সাম ডিস্টেন্স’
আয়ানের আমার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না। তার ভাবমূর্তি এমনি প্রকাশ পায়। আমি আবারো উনার হাত কোমড় থেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে উনি আমাকে এক হেচকা টান দিয়ে তার সাথে মিশিয়ে নিলো। আমি হতভম্ব! আয়ান এমন একটা কাজ করবে ভাবতে পারি নি। খানিকটা বাহুতে রীতিমতো ব্যথাও করছে।
-‘ বেশি উড়াউড়ি করতে দেখলে একদম ডানা ঝেটে খাচায় বন্দী করে রেখে দিবো’
আয়ানের সম্পূর্ণ কথা আমার কোনো মতো কর্ণপাত হতেই উনি আমাকে ছেড়ে অতি দ্রুত প্রস্থান করলো। আমি যেনো বেকুব বনে গেলাম। হলো টা কি? আমার উনার উপর রাগ ঝাড়ার কথা কিন্তু তা হলো কই? উল্টো মহাশয় আমাকে ছোট্ট খাটো হুমকি দিয়ে গেলো। আমিও পণ করে নিলাম এই আয়ান চৌধুরীকে যদি হেন্সতা না করি তাহলে আমার নাম আহানা আহমেদ না, হুহ!! রাগে গজগজ করতে করতে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
ইতিমধ্যে সবাই দুই গাড়ীতে উঠে পরছে। শুধুমাত্র আদ্র ভাই গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র ভাই আলতো হেসে আমাকে গাড়িতে বসতে ইশারা করলো। আমিও সাত-পাচ না ভেবে বসে পরলাম। বস্তেই জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম এক জোড়া হাসোউজ্জ্বল দম্পতি বাইকে করে আমাদের গাড়ি ওভার টেক করে চলে গেলো। পিছন থেকে মেয়েটার সোনালী চুলগুলো অবিন্যস্ত হয়ে উড়ছে।
আমার সাথে সাথে হয়তো এটা অনেকেই খেয়াল করেছে। দাদিমণি তো উতফুল্লতার সাথে গদগদ করতে করতে বলেও ফেললো,
-‘ সুহার বিইয়া হওয়ার পর শুভক্ষণ দেইখা আয়ান-রিয়ার টাও দিয়া দিমু।
আমি মুখে তাচ্ছিল্যতার হাসি টেনে জানালায় হেলান দিয়ে বাইরের দৃশ্যের দিকে নজর দিলাম। কেও হয়তো কখনো বুঝতে পারবে না ‘আয়ান-রিয়ার’ নামক ছোট্ট শব্দ আমার এই ছোট মনটাকে কতটা বিষিয়ে তুললো। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা অশ্রুকণা ত্যাগ করলো নিজ গন্তব্যে।
#প্রেমজাল
পর্ব ২৬ [ বোনাস পর্ব ]
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
আয়নার সন্নিকটে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে রুহি। চক্ষুর নিম্নস্তরে কালচে ভাব ধারণ করেছে। চুলগুলো উশকো খুশকো হয়ে গেছে যত্নের অভাবে। পেটটা তার পূর্বের হতে খানিকটা বিবর্ধিত লাগছে। রুহি মৃদু হাসে। পরম আবেশে আলতো ভাবে তার পেটে হাত বুলায়। তার এই পেটেই তো ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে তারই অনাগত সন্তান। আজ থেকে যে এই সন্তানের জন্যই সংগ্রাম করতে হবে। নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলবে। রুহি আর তার পিছনে ফেলে আসা ভয়ংকর অতীতের দিকে ফিরে তাকাবে না। এমনকি ফিরে তাকাবে না তারই ভালোবাসার মানুষের দিকেও। রুহি তার মুখে তাচ্ছিল্য হাসি টানে “ভালোবাসা” শব্দটার প্রতি। অতি আবেগ প্রবণ হয়ে তার কাছে ভালোবাসা শব্দটি হয়ে উঠেছে কলঙ্ক। এই কলঙ্ক কখনো ঘুচানো সম্ভব নয়। ভাবতেই রুহির দম হয়ে আসে প্রগাঢ়৷ সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজেকে শান্ত রাখার বৃথা চেষ্টা করতে থাকে। আর যাই হোক অতীতের ছায়া সে তার ও তার অনাগত সন্তান এর অপর কুপ্রভাব ফেলতে দিবে না। আজকে থেকে শুরু করতে চলেছে নতুন এক অধ্যায়। নতুন এক জীবন!! মন দিবে তার কাজে। আবারো ব্যস্ত নগরীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করবে। একজন আদর্শ মা ও নাগরিক হয়ে উঠবে একদিন।
আচমকা কলিংবেল বাজায় কিঞ্চিৎ চমকালো রুহি। পরবর্তীতে মনে পরলো তার একটা কুরিয়ার ডেলিভারি আসার কথা। সে এগিয়ে যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলে আশস্ত হয়। হ্যাঁ সে তার কাঙ্খিত জিনিস এসেছে। এখন ঠিকঠাক মতো আসল জায়গায় পৌছে দিতে পারলেই হয়। এতো মানুষের এতো দিনের সাধনা এতো মানুষের আর্তনাদ পরিশেষে সফলভাবে সমাপ্তি হবে।
রুহি কুরিয়ার রিসেভ করে দরজা লক করে ভেতরে আসে। ফটাফট সন্তপর্ণে গুছিয়ে নেয় তার প্রয়োজনীয় জিনিস তার হ্যান্ডব্যাগে। সাথে নিয়ে নেয় সদ্য কুরিয়ার আসা প্যাকেটটা এবং তার আইডি কার্ড। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা এস.সি.আই (SCI – Secret Crime investigator) রুহি। যার অধিকারত্বের মাত্র কয়েক ঘন্টা হয়েছে কেবল। সকালবেলাই হাতে পেয়ছে সে। নামটা দেখেই তার মুখে রহস্যময়ী হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। তার প্রথম কাজ হলো কুরিয়ারে একটা প্যাকেট আসবে তা নিজ গন্তব্যে পৌছানোর জন্য অবগত হয়েছে। নিজ থেকে সাফল্য তাকে হাতছানি দিচ্ছে। যে সে মোটেও হারাতে চায় না। সর্বত্র পরিপাটি করে রওনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
——————-
একের পর এক জুয়েলারি উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখছে সবাই। সারা শপিং মলের জুয়েলারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দোকানিদের ডেস্কে। দোকানিরা তাদের অরনামেন্টস (Ornamnets) দেখাতে দেখাতে ক্ষ্যান্ত। একজনের ডিজাইন পছন্দ হয় না আরেকজনের কোয়ালিটি পছন্দ হয় না। নিজস্ব পরিচিত দোকানের সুবাদে সবাই খুটিয়ে খুটিয়ে সময় নিয়ে দেখছে। আর আমি এসব দেখতে দেখতে রীতিমতো বিরক্ত!! আমার যে কিছুই পছন্দ হয় না। আবার এতো দামি জিনিস আমার পোষাবেও না। যেখানে খেতে গেলেই দু’কথা শুনতে পিছ পা হই না সেখানে আমার পছন্দ করে কিছু নেওয়াই মানে বিলাসিতা। আবার দায়ভার নিচ্ছে আদ্র ভাই আর মিস্টার আয়ান চৌধুরী। একদিকে বড় কাকিমণির জন্য আদ্র ভাই এর থেকে নেওয়া যাবে না। আরেকদিকে দ্যা আয়ান চৌধুরী!! হাহ!! তার দেওয়া কোনোকিছুই আমি নিবো না। তার কষ্টে এমনিতেই আমি ভরপুর। অন্যকিছু আর তার থেকে আশা করি না।
পাশে ফিরতেই অনাকাঙ্কিত তীব্র চোখ জোড়ার প্রখর দৃষ্টি নিবদ্ধ আমার দিকে অনুধাবন করলাম। কাচের ডেস্কে এক হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। আচমকা আমাদের এভাবে চোখাচোখি হবে তাতে আমি একদমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি উনার আশেপাশে থাকতে ইচ্ছুক নই। থাকুক সে তার রিয়াকে নিয়ে। তার ভালোবাসাকে নিয়ে।
আমি উনার উলটো দিকের অদূরের দিকে অগ্রসর হলাম। যেখানে সুপ্পু, রিমি, নিলয় ভাইয়ারা শাড়ি দেখছে। আমি হাটার সাথে সাথে খেয়াল করলাম কারোর ছায়া মূর্তি পিছন থেকে আমার অনুসরণ করছে। উফফফ!!!! এই ছেলের সমস্যা কি হ্যা?
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কেও সামনে আসায় খানিকটা ভড়কে গেলাম। আচমকা কারোর উপস্থিতি আশা একদমি করেনি। সম্মুখে থাকা অবয়ব দেখে আমার মানসিক বিকৃত ঘটলো। এই লোকটাকে আমার মোটেও পছন্দ না। আমার কলেজের ম্যাথ টিচার। রিয়ান স্যার!! কেমন জানি গায়ে পরা টাইপ। চলাফেরাও ভালো না। চরিত্রটাও খানিক অনবরে। অনেকের কাছে শুনেছি মেয়েদের নাকি আজেবাজ ভাবে স্পর্শও করে। এক মেয়েকে নাকি কুপ্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেও কোনো প্রমাণ দিতে পারে নি। তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমারও এই লোকের ভাব ভঙ্গি বেশি সুবিধার মনে হয় না। আমি যতটা পারি সবসময় অবজ্ঞা করে চলি। কিন্তু এখন তো আমরা পরস্পর সম্মুখে। চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারি না। সামনে থাকা অবস্থানকৃত লোকটার গলা আমার কর্ণপাত হতেই জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলাম।
রিয়ান স্যার তার দাত কেলিয়ে ঠোট প্রসারিত করে বললো,
-‘ আরে আহানা যে। কেমন আছো? আমি তোমাকে কিছুদিন আগে মেসেজ দিয়েছিলাম। আবার আমি খেয়াল করেছি লাস্ট কয়েকটা ক্লাস ধরে তো তোমার কোনো হুদিসই নেই। কি ব্যাপার হ্যা? বিয়ে টিয়ে করলে ফেললে নাকি?’
আমি আমতা আমতা করতে করতেও শেষ পর্যন্ত কিছু বলতে পারলাম না। আসলে এই লোকটার সাথে কথা বলতেই বেখাপ্পা লাগে।
-‘ আহি..’
আকস্মিক ভাবে পিছন থেকে চির পরিচিত কণ্ঠ আমার কর্ণগোচর হতেই আমি থমকে গেলাম। কণ্ঠ ও নাম দু’টোই আমার পরিচিতি হলেও সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো। এই “আহি” নামটা আমাকে বড্ড টানে যে। ছোট বেলায় সবসময় আয়ান আমাকে “আহি” বলেই সম্বোধন করতো। মনে হয় “আহি” নামটায় গভীর কিছু লুকিয়ে আছে। প্রায় ১০ বছর পর এই নামটা শুনায় কিছুটা চমকিয়ে উঠেছিলাম।
-‘ আমি তোমায় ডাকছিলাম, আহি’
পিছন থেকে পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো আয়ান।
আমি মৌনতা কাটিয়ে উঠতে পারলাম না।
রিয়ান স্যার অবাকসূচক কণ্ঠে বললো,
-‘ এটা কে আহানা? তুমি সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলো নাই তো? তোমার হাজবেন্ট?’
আয়ান থমথমে গলায় স্মিত হেসে বললো,
-‘ হাজবেন্ট হলে কি পর পুরুষের সাথে কথা বলতে দিতাম? হাত ধরে থাকতাম’ বলে আয়ান আমার হাত জোরালো ভাবে ধরলো। মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার হাতের সব হাড় ভেঙ্গে চুরমার হলো। ব্যথায় কুকড়ে উঠলাম। এতো দানবের মতো কেও হাত ধরে?
আয়ান একটু থেমে আবার বললো,
-‘ সবসময় আগে পিছনে ঘুরতাম। এককথায় পারলে আমার সাথে বেধেই রেখে দিতাম’
আমি এতোক্ষণ রিয়ান স্যার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। বুকে একটু সাহস সঞ্চয় করে উনার দিকে তাকাতেই বুকটা ধক করে উঠলো। সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। উনার চোখ রীতিমতো লালচে ভাব ধারণ করেছে। আমার আর দ্বিতীয় বার তাকানোর সাহস হয়ে উঠলো না।
রিয়ান স্যার এবার আরোও চওড়া হাসি দিয়ে বললো,
-‘ হ্যা হ্যা একদম ঠিক। আহানার কি বয়স হয়েছে নাকি? এখনো কচি’
এই “কচি” শব্দ শুনতে দেরি আমার হাত আরো প্রবলভাবে চেপে ধরতে দেরি হলো না। ব্যথার তীব্রতায় “আউ” করে উঠলেও আমার গলায় সব দলা পাকিয়ে গেলো। এই লোকটা এতো আমার ব্যাপারে এতো এগরোসিভ কেনো? আমি কি তার ব্যাপারে নাক গলাই? যতই দূরে সরতে চাইছি ততই আকড়ে ধরছে। আমি তো চাই না কারোর সম্পর্কের দেয়াল হতে! তাহলে?
হঠাৎ সম্মুখবর্তী থেকে নিলয় ভাইয়া রিয়ান স্যারকে ভাই বলে সম্বোধন করতে আরো খানিকটা ঝটকা খেলাম।
পরে পর্যায়ক্রমে জানা গেলো সম্ভবত তার কাজিন হিসেবে ভাই হলো আমার ম্যাথ টিচার রিয়ান স্যার। উফ!! মানে এখন অনুষ্ঠান চলাকালীন বাড়িতেও এই আয়ানের সাথে সাথে “রিয়ান” নামক লোককে সহ্য করতে হবে? ধ্যাত!!
#চলবে…