প্রেমজাল পর্ব ৩৩+অন্তিম

#প্রেমজাল
#পর্ব ৩৩ [ ধামাকা পর্ব ]
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

-‘ আপনি এতোটা নিষ্ঠুর হলেন কীভাবে, আদ্র ভাই? আমার আর আমার মায়ের সাথে কি এমন শত্রুতা আপনার যে আপনি তাকে প্রাণে মেরে ফেললেন? কেনো করলেন এমন?’

-‘ হয়তো এর উত্তরের কিছুটা আমি জানি’

দরজার দিক থেকে আচমকা কন্ঠ স্বর ভেসে আসতেই আমরা সকলে সেই পানে দৃষ্টিপাত করি। আমি বিস্মিত!! সেই যে আর কেও না বড় কাকিমণি। বড় কাকিমণি এখানে কেনো? তাহলে কি বড় কাকিমণি জানতো আমার মায়ের খুন হয়েছে তাও আদ্র ভাই এর হাতে? বড় কাকিমণি কি আদ্র ভাই এর সাথে জড়িত? প্রাণ নাশের মতো অধম খেলায় মেতেছে তারা?

আমি ক্ষিপ্ত স্বরে বললাম,

-‘ বড় কাকিমণি!! তুমি?? তুমি জানতে আমার মায়ের খুন হয়েছে? কেনো বলো নি আমাকে? কেনো আমাকে এই দুনিয়াতে আসার আগেই মাতৃহারা করে দিলে? কেনো জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মায়ের অপমৃত্যুর খুনির ট্যাগ পেলাম? বলো!! উত্তর দাও আমাকে। আদৌ উত্তর আছে তোমার কাছে?’

বড় কাকিমণি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠলো। তার হাসির ধ্বনি আমার হৃদয়ে মাঝে ঘৃণা বীজ বপন করছে। ঘৃণার তীব্রতা যেনো তীর তীর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আয়ান মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলে উঠলো,

-‘ ছিঃ মামীমা!! তাহলে তুমিও বিশ্বাসঘাতকতা করলে। তাহলে তোমার আর মিস্টার আহনাফ আহমেদের মধ্যে পার্থক্য রইলো কোথায়? আমি তখন এতোও ছোট ছিলাম না যে কিছুই মনে থাকবেন না। সে সাজানো গোছানো সংসারকে ভেঙে চুরমার করে একজনকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল আর তুমি সেই জীবন্ত লাশকে মেরে ফেললে?’

আমি চমকে উঠলাম আহনাফ আহমেদ নামটা শুনে। আহনাফ আহমেদ যে আমার জন্মের পর থেকেই আমার সাথে জুড়ে আছে। তবুও তাকে দু’দন্ড দেখার মতো ভাগ্য আমার ছিলো না। আমি এতোটাই হতভাগি যে নিজের বাবার ছবি টুকুও দেখি নি। পরিবারের কেও কেনো আমার তার ছবি দেখাতে চায়নি কে জানে। সারাজীবন শুধু নামটাই শুনে গেছি। যদি পড়ালেখা না করতাম হয়তো সেটাও জানতাম না।

আমি কাপা কাপা কণ্ঠে বলে উঠলাম,

-‘ আ..আ..আহনাফ আহমেদ? বাবা? তার সাথে বড় কাকিমণি সম্পর্ক কি? তাদের মধ্যে কীসের পার্থক্য?’

-‘ তা না হয় মামীমা নিজেই বলুক’ বলতে বলতে আয়ান আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাতের বাধন খুলে ফেলে। বড় কাকিমণি আদ্র ভাই এর দিকে ক্রোধিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। আমি বড় কাকিমণির সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

আমি আহত গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

-‘ কি এমন ক্ষতি করে ছিলাম আমি তোমার? কেনো কেড়ে নিলো আমার মা কে?’

বড় কাকিমণি চোয়াল শক্ত করে আদ্র ভাই এর দিকে তাকানারত অবস্থাই বলতে শুরু করলো,

-‘ তুই না করলেও তোর মা আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে। আমার সংসার, আমার অধিকার এমনকি আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। বল তুই মেনে নিতে পারবি তোর আর আয়ানের মাঝে যদি কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আসে? সেটাও যদি সে ৩ মাসের গর্ভবতী হয়ে?’ বলে বড় কাকিমণি আমার দিকে তাকালো।

আমি নিস্তব্ধ!! প্রতিনিয়ত যেনো নতুন রহস্যের উদঘটন হচ্ছে। আমার মা বড় কাকিমণির সংসার, অধিকার, স্বামী কেড়ে নিবেই বা কেনো? একজন স্ত্রী কখনো তার স্বামীকে পর-নারীর সাথে ভাগ করতে পারে না। আমিও পারবো না কখনো।

বড় কাকিমণি আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবার বলতে শুরু করলো,

-‘ হ্যা তোর মা আনফিহাই আমার সাথে এমন করছে। আমার সংসার ভেঙ্গেছে। আমার স্ত্রীর অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমার স্বামী আহনাফকে নিজের করেছে। কি অবাক হচ্ছিস আহানা? হ্যা তোর জন্মদাতা পিতাই আমার স্বামী। আর ছেলে আদ্রিয়ান আহমেদের বাবা আহনাফ আহমেদ। এই সমাজের তথাকথিত সম্পর্ক অনুসারে আমি তোর সৎ মা। যাকে তুই ছোট থেকে বড় কাকিমণি বলিস সেই হলো তোর বাবার ১ম স্ত্রী।……(একটু থেমে) বিশ্বাস কর আহানা আমি জানতাম না যে আনফিহার মৃত্যুর জন্য আমারি সন্তান আদ্র দায়ী। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত জানতাম তোর ভুমিষ্ঠ হওয়ার দিন তোকে জন্ম দেওয়ার সময় প্রেসার নিচে নেমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্টে মারা যায়। তবে সেদিন আমার থেকে বেশি খুশি আর কেও হয়নি রে। ভেবেছিলাম আপদ বিদেয় হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর সংসার করার পর ৭/৮ বছরের ছেলে থাকতেও তোর বাবা তোর মাকে ঘরে তুলেছিলো। চালিয়ে ছিলো আমার অপর অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। আমার ছোট্ট সন্তানের অপর কিরূপ প্রভাব ফেলেছিলো তুই ভাবতে পারছিস? তোর মার কারণে আমার সাজানো গোছানো সংসার চুরমার হয়ে যায়। যেসময় আমার সন্তানের বাবার আদর-স্নেহ পাওয়ার কথা ছিলো সে তখন তার মায়ের অপর তারই বাবার মারধর দেখেছে। হয়তো এসবি ফলশ্রুত আদ্র সেদিন এমন ভয়ংকর পদক্ষেপ নিয়েছিলো। ঠেলে দিয়েছিলো আনফিহাকে মৃত্যুর কোলে।…….(একটু থেমে ককর্শ গলায়) আহনাফ বিশ্বাসঘাতক!! আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে। এই পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। এতো সম্পত্তি থাকার পরও আহনাফকে আমার বাপের বাড়ির থেকে আনা সব পুজিপাত এনে দিয়েছিলাম ব্যবসা করার জন্য। নিজের পায়ে ধার হওয়ার জন্য। নিজস্ব ভিত্তি তৈরি করার জন্য। কিন্তু সে কি করেছে জানিস? সব কিছুর প্রতিদান হিসেবে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সে ব্যবসায় উন্নতি করবে বলে আমার থেকে গোটা ৩ টা বছর দূরে রেখেছি। নিজের শখ-আহ্লাদ সুখ বিসর্জন দিয়েছিলাম। সে ৩ বছর ফিরে আসে আমার কাছে। তবে একা নয়, সাথে ছিলো তোর মা। তোর মায়ের পেটে তখন তুই একটু একটু করে বেড়ে উঠছিলি। পারিনি সেদিন তোর মাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে। সেই আমাকে তুই নিষ্ঠুর তকমা দিচ্ছিস? তোর বাবা-মা বেচে থেকেও মেরে ফেলেছিলো রে। জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছিলো। বুকের মাঝে হাহাকার নিয়ে দিন পার করছি। এমনো রাত গেছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছি। সবকিছুর সাক্ষী এই জাহানের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা এবং এই আদ্র।…… (একটু থেমে আহত গলায়) তবে সে আমার সন্তান বলে ছাড় পাবে সেটা হবে না। অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি সে পাবেই। শাস্তি পাবে তার বাবার মতো ধ্বংসের পথে চলার পরিণাম। তিন তিনটা মেয়ের জীবন নিয়ে ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠার পরিণাম’ বলে বড় কাকিমণি স্বজোরে আদ্র ভাইকে থাপ্পড় মারলো।

পরিপ্রেক্ষিতে গালে হাত দিয়ে আদ্র ভাই বলে উঠলো,

-‘ মায়ায়ায়া…’

বড় কাকিমণি চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,

-‘ একদম আমাকে মা ডাকবি না। আমি তোর মতো কুলাং’গার সন্তান পেটে ধরতে পারি না। বল তোর আর তোর বাবার মধ্যে তফাৎ কই? কথায় আছে পাপে বাপেরে ছাড়ে না। কিভাবে পারলি তোর বাবার ঘৃণিত পথে চলতে? হাহ!! একবারো ভেবেছিস আমি কীভাবে জানলাম এখানকার হদিস? কে দিয়েছে জানিস? রিয়া!! মনে রেখেছিস তো? নাকি প্রয়োজন নেই বলে ফেলনা জিনিসের মতো ছুড়ে দিয়েছিস? রিয়া!! এই রিয়া। সবাইকে নিয়ে ভেতরে আসো’

রিয়াসহ আরো কয়েকজন হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকলো। একজনকে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে ধরে রেখেছে দুই পুলিশ কন্সটেবল। তিনজন এসেই আয়ানকে স্যালুট করলো। সবার মধ্যে আমি তিন জনকে চিনতে সক্ষম হলাম। রিয়া আপু, তিথি আপু আর দূর্ঘটনা আঘাতপ্রাপ্ত শুভ্ররাঙা জামায় রক্তের দাগ সহিত রুহি নামের মেয়েটা। মাথায় এখনো তার ব্যান্ডেজ। হাতে তার একটা প্যাকেট।

আমি উত্তেজিত বশে বলে ফেললাম,

-‘ তিথি আপু তুমি?’

তিথি আপু প্রতিত্তোরে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

-‘ হ্যা গো সতিন আমি’

অন্যসময় হলে হয়তো আমার গা জ্বলে যেতো কিন্তু আপাতত কিছুই হলো না। সেইদিনের গাইয়া মেয়েটাকে আজ চিনার কোনো জোয়ার নেই। একদম পরিপাটি অবস্থায় পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায়। রুহি নামের মেয়েটা এগিয়ে আসলো আমাদের দিকে। হাতে থাকে প্যাকেট আয়ানের হাতে তুলে দিয়ে বললো,

-‘ নিউ এস. সি. আই. রুহি স্যার। আপনার আমানত’

বলে আড়চোখে আদ্র ভাই এর দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্য হাসি টেনে তার দিকে এগিয়ে বললো,

-‘ কি আদ্র অবাক হচ্ছো? কি ভেবেছিলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নি? তাই তো আমাকে এতোটা কাছে নিয়েও দূরে ঠেলে দিয়েছো, তাই না? আমি সবসময় তোমাকে আমার প্রিয়জন ভেবেছি কিন্তু তুমি আমাকে? শুধু প্রয়োজন তাই না? কেনো এমন করলে? এতো নাটকের এতো মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কি পেলে? তুমি ভালো করেই জানতে আমি তোমার করা ড্রা-গস সাপ্লাই এর মতো ক্রাইম এর অনুসন্ধান চালাচ্ছি। তাই তো তুমি আমাকে তোমার প্রেমে তোমার জালে তোমার #প্রেমজাল এ ফাসালে, তাই নয় কি? যাতে তুমি সুযোগ বুঝে তোমার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ হাতিয়ে নিতে পারো কিংবা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারো। সব তোমার প্ল্যান মোতাবেক হলেও সেদিনের কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য সব পালটে যায়। ভুলবশত আমার নামের সাথে অন্য একজনের নাম গুলিয়ে ভুল মেইল আমাকে পাঠানো হয়। যেটা দেখে তুমি অবগত হও আমি এস. সি. আই. পদ লাভ করিনি। যার সাপেক্ষে আমি তোমার কাছে ফেলনা হয়ে গেলাম। আমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসলে আমাকে একা করে। তোমাকে হারানোর ধাক্কা না সইতে পেরে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে ডাক্তার কিছু টেস্ট করাতে দেয়। পরবর্তীতে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জানতে পারি আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি। আশার আলো ফুটে আমার মাঝে। কিন্তু আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েও সক্ষম হতে পারিনি। আর যেদিন পারলাম, সেদিন তো আমার সাথে সাথে আমাদের সন্তান.. নাহ আমার সন্তানকে অস্বীকার করলে। এককথায় প্রত্যাখান করলে আমাদেরকে। কিন্তু কথায় আছে না যে, রাখে আল্লাহ মারে কে? আমি সবকিছু হারিয়েও হারায়নি। আজ আমি এস. সি. আই. এর একজন এজেন্ট। সাথে করে কি নিয়ে এসেছি জানো? তোমাকে এরেস্ট করার চার্জশিট!! অতি সুরক্ষার সাথে পরোক্ষভাবে বিশস্ত মানুষ দ্বারা ধাপে ধাপে পাঠানো হয়েছে। যাতে তোমার মতো ক্রিমিনালরা সন্ধান পেয়ে গুম না করে ফেলে।……..(একটু থেমে) হাহ!! এবার তুমি পাবে তোমার অপ’কর্মের ফল। এতোগুলো মানুষের জীবন নিয়ে ড্রা’গস এর মতো বিষাক্ত নেশায় জড়ানোর শাস্তি। শুধু তুমি না সাথে তোমার বর্তমান প্রেমিকা মাধুরী। যে তোমাকে এইসব অসৎ কাজে সহায়তা করেছে’

তিথি আপু কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলে উঠলো,

-‘ সাথে পাবে এক বার নয় দু’দুই বার একটা মেয়েকে মলেস্ট করার শাস্তি। কতোটা লজ্জাজনক বিষয়। ছিঃ নিজের বোনকে কীভাবে নিজেই ধর্ষণ করার এবং করাতে চাওয়ার চেষ্টা করেন আপনি, মিস্টার আদ্রিয়ান আহমেদ?’

আদ্র ভাই হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

-‘ না!!! আহানা আমার নিজের বোন না। আমার সৎ বোন। ওর জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই আমার কাছে। ওর মায়ের জন্য আমি আমার মাকে কষ্ট পেতে দেখেছি। যদি আহানা পেটে না থাকতো তাহলে মা কখনো অই মহিলা আনফিহাকে ঘরে তুলতো না। আনফিহা এতোটাই ছলনাময়ী ছিলো যে সে বাবা দাদাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে উইল করায়। যেখানে বাবা-দাদার সব স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি মালিকানা নির্দিষ্ট একজন পাবে। তাহলে আমার মা এতো কষ্টের খেসারতে কি পাবে? আমি কি পাবো? হ্যা সত্যি যে আহানার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু ওযে আমার শত্রুর প্রাণ ভোমরা। আয়ান চৌধুরীর প্রাণ ভোমরা। আমি আয়ানের পিঠাপিঠি থাকলেও সবাই সবসময় আয়ানকে দেখিয়ে বলতো ওর মতো হো, ওর মতো কাজ কর, ওর থেকে শিখ!! সবসময় ওর সাথে আমাকে কেনো তুলনা করা হবে? ওর মূল্যবোধ আমি কেনো চলতে যাবো? হুয়াইইইই?? আগে থেকেই আয়ানের সাথে আমার ভালো বনতো না। আমার দু’চোখের বি’ষ হলো আয়ান। সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমার মাথায় যেনো জেদ চেপে বসলো। আয়ান এবরোড থেকে দেশে ফিরলো। গ্রামের বাড়ি স্বপ্নকুঞ্জ গেলো বেড়াতে। সেদিন মন চেয়েছিলো শা’লা কে মেরে পুতে দেই। আমি সুবর্ণ সুযোগ খুজতে লাগলাম। উঠে পরে লাগলাম আঘা’ত হানার জন্য। তবে মেরে ফেলে নয়। মারার হলে আগেই মারতাম। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে আমার ক্ষোভ মিটাতে চেয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে পেয়েও যাই। একরাতে একটা অনুষ্ঠানে আমরা পুরো পরিবার গিয়েছিলাম। সেরাতে অনুষ্ঠানে কিছু আচরণে বুঝতে পারি আয়ান এখনো ছোটবেলার মতো আহানার অপর দুর্বল আছে। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়। আয়ানের ক্ষতি না করে ওর কলিজার ক্ষতি হলে আয়ান তা কখনোই মেনে নিতে পারবে না। অপরিচিত বাড়ি, অপরিচিত পরিবেশ, অপরিচিত মানুষের ভীড়ে কে এমন করলো কেও বুঝতো না। আমার প্রতিশোধ নেওয়াও হতো ধরাও খেতাম না। তাই যখন আহানাকে একা একটা রুমে যেতে দেখলাম তখনি ঝাপিয়ে পরলাম। কিন্তু সফল হলাম না। তাই আবার মাধুরীকে ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম’

আয়ান বাকা হাসি দিয়ে বললো,

-‘ ব্রো তোর আইডিয়া কিন্তু সলিড ছিলো। কিন্তু চোর যতই চালাক হোক না কেনো ভুল তো করেই। তুই আহানার সাথে ধস্তাধস্তি করার সময় তোর ঘড়ি খুলে নিচে পরে যায়। তোর ধরা পরে যাওয়ার মূল ও অন্যতম কারণ হলো এটাই। আমি সবার অগোচরে ঘড়িটা তুলে নেই এবং পরে তিথিকে হস্তান্তর করি। তিথি অই গ্রামের মেয়ে তাই কার হতে পারে তা বের করার দায়িত্ব তাকেই দেই। যেদিন সুহাকে দেখতে আসে স্বপ্নকুঞ্জে, সেদিনের রাতে তিথি আমাকে সব প্রমাণসহ দেয় যে এই ঘড়ির আসল মালিক তুই আদ্র। আর বাকি রইলো মাধুরী? তুই আমার এলাকায় এসে আমাকেই বাজিমাত দিতি?’

আমি এদের কথায় বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছি। মাথায় আমার আকাশ ভেঙ্গে পরার উপক্রম। মানুষ কতোটা পথভ্রষ্ট হলে এসব করতে পারে। হায় ইয়া আল্লাহ মাবুদ সবাইকে হেদায়েত দান করো। আর কতো রহস্য এরা এদের বুকের পাজরে লুকিয়ে রেখেছে কে জানে?

রিয়া আপু সিক্ত কন্ঠে আদ্র ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললো,

-‘ সবার উত্তর যখন দিলে তখন আমার উত্তর টাও দাও। আমি তোমার কি এমন করেছি বলো? আমার জীবনটা ছারখার করে কেনো দিলে?’

আদ্র ভাই রিয়া আপুর থেকে মুখ পাশ ফিরিয়ে নিলো। রিয়া আপুর চোখ পানিতে টলমল করছে। রিয়া আপু চোখ মুছে আদ্র ভাই এর কলার চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ বলো আদ্র? কেনো করলে এমন? উত্তর দিচ্ছো না কেন? আমাকে কেনো ঠকালে তুমি? আমি তো তোমার সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম। আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ তাই না? আমাকে রেখে তুমি পর-নারী আসক্ত হলে? রুহিকে নয় তুমি তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ নষ্ট করতে ব্যবহার করেছো। কিন্তু মাধুরী? আমাকে কীসের শাস্তি দিলে তুমি?……(একটু থেমে) তুমি শুধু রূপের প্রেমে পরে কাওকে কাছে টানো নি, সাথে মন থেকে ভালোবাসার একজন কে হারিয়েছো চিরতরে’ বলে রিয়া আপু কলার ছেড়ে ধাক্কা দিলো।

আদ্র ভাই চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো,

-‘ এনাফ ইজ এনাফ!! কি মাধুরী? হ্যা? মাধুরী কে? মাধুরী আর আমি জাস্ট বিজনেস পার্টনার। আমি মাধুরীকে ড্রা’গস এনে দিতাম। সেটা মাধুরী ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের কাছে সাপ্লাই দিতো। দেটস ইট!! আমি তোমাকে ঠকাতে চাইলে কখনো বিয়ে করতাম না,রিয়া। আর এতোক্ষণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও না। আর রুহি? কে বলেছে রুহি আমার সন্তানের মা? আমার সন্তানের মা হওয়ার যোগ্যতা শুধু তুমি রাখো। কারণ আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে কখনো আপন করে কাছে টানিনি!….
#প্রেমজাল
পর্ব ৩৪ [ অন্তিম পর্ব ]
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

-‘ এনাফ ইজ এনাফ!! কি মাধুরী? হ্যা? মাধুরী কে? মাধুরী আর আমি জাস্ট বিজনেস পার্টনার। আমি মাধুরীকে ড্রা’গস এনে দিতাম। সেটা মাধুরী ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের কাছে সাপ্লাই দিতো। দেটস ইট!! আমি তোমাকে ঠকাতে চাইলে কখনো বিয়ে করতাম না,রিয়া। আর এতোক্ষণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও না। আর রুহি? কে বলেছে রুহি আমার সন্তানের মা? আমার সন্তানের মা হওয়ার যোগ্যতা শুধু তুমি রাখো। কারণ আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে কখনো আপন করে কাছে টানিনি!! আর ইউ হেয়ার রিয়া?….(একটু থেমে) যা আমার মার সাথে হয়েছে, সেটা কি করে আমার স্ত্রীর সাথে করতে পারি? আমি হয়তোবা রুহির সাথে প্রতারণা করেছি। ওকে আমার #প্রেমজাল এ টেনে এনেছি। তবে আমি কখনো ওর সাথে ইন্টিমেন্ট করি নি। আর যেখানে করিনি সেখানে আমার সন্তানের মা হয় কি করে? আমি শুধুমাত্র রুহির থেকে প্রমাণ হাতিয়ে নেয়ার জন্য মিথ্যা প্রেমের নাটক করি। তবে একটা সত্য যে, আমি রুহিকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য আমার সাথে বেড শেয়ার করতে বলেছিলাম। ভালোবাসার দোহাই দিয়ে ভালোবাসার প্রমাণ চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘনিষ্ঠ হয়নি। ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ক্যামেরা এংগেল চেঞ্জ করে অপ্রীতিকর ছবি তুলেছি। আই রিপিট আমি তাকে আপন করে কাছে টেনে নেয়নি। জানো রুহির সাথে শারীরিক সম্পর্ক কে করেছে? জানতে চাও সবাই? ( জোরে চিৎকার করে ) এই লোকটা’ বলে আদ্র ভাই তার থেকে দূরে থাকা হ্যান্ডকাপ পড়া লোকটার দিকে ইশারা করলো। লোকটা হেলে দুলে পরে যাচ্ছে। পুলিশ কন্সটেবল ধরে রাখতে রাখতে ব্যাকুল।

আদ্র ভাই আবার বলতে শুরু করলো,

-‘ এই হচ্ছে কাঙখিত আহনাফ আহমেদ!! অবাক লাগছে? সে তার মেয়ে বয়সির মেয়ের সাথে এমন করেছে? মানতে কষ্ট হয়েছে? কিন্তু এটাই ভয়ংকর সত্যি। এই লোককে এখন আমার বাবা বলতে ঘৃণা লাগে। এই লোক বাবা ডাক শুনার যোগ্যই নয়। এই লোক মদ্যপানে এতোই নেশাক্ত, যে সে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পরে। আমি ছবি তুলে বেরিয়ে আসার পর এই লোক মদ খেয়ে রুহির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়। পরদিন এই লোক আমাকে ফোন করে আসতে বলে। সেদিন মনে হয়েছিলো আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে এই আহনাফ আহমেদকে বাচাতে আমি রুহির পাশে শুয়ে পরি। তাই রুহির হয়তো মনে হয়েছে যে আমি তার সন্তানের বাবা। শুধু তাই নয় এই লোকই আমাকে অন্ধকার জগতে নিয়ে গেছে এবং সেই আমাকে রুহির কাছে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। এমনকি কানাডায় গেলে সেখানে ড্রা’গসের নেশা ধরায়। তখন আমার জীবনে রিয়া আসে। আমি ওকে বিয়ে করি। রিয়া আমাকে ড্রা’গস থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলেও ড্রা’গস জগত থেকে পারি নি। আর পারার কথাও না। কারণ এই জগতে কেও একবার গেলে ফিরত আসতে পারে না। এখন কথা হচ্ছে রিয়া আমার বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার পরও কেনো আমি তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। এই কারণটার পিছনেও আহনাফ আহমেদ দায়ী। সে আমাকে বাধ্য করেছে রিয়াকে দূরে সরিয়ে অন্যের হাতে তুলে দিতে। কারণ ড্রা-গ’স ব্যবসা করতে গিয়ে সে মোটা অংকের টাকা ব্যাংক থেকে মূলধন হিসেবে তুলে তার ভার আহনাফ আহমেদের সারাজীবনের পুজিপাত দিয়েও কুলানো সম্ভব নয়। দেশের কড়া আইনের কারণে ড্রা-গ’স ব্যবসা ডুবে গেছে। সাথে তার মূলধনও। আগেই বলেছি আনফিহা দাদাকে দিয়ে উইল করিয়েছিলো। যাতে কখনো আমার আর তার সন্তান অর্থাৎ আহানার মাঝে দ্বন্দ্ব না হয়। উইলটা ছিলো সম্পূর্ণ ভাগ্যের অপর। সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা হবে আমার বা আহানার সন্তান। যে কিনা সবার আগে এই দুনিয়া ভুমিষ্ঠ হবে। সেটাও সে যখন ১৮ বছর হয়ে যাবে। সেই সুবাদে মিস্টার আহনাফ আহমেদ কানাকড়িও পাবে না। আর আমাদের বংশধরের উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত, এত সময় তো আর ব্যাংক দিবে না। তাই এই আহনাফ আহমেদ আয়ান-রিয়ার বিয়ের চিন্তা ভাবনা করে। আয়ানের সাথে রিয়ার বিয়ে হলে রিয়ার নামে আয়ানের সম্পত্তি এসে যাবে। চৌধুরী বাড়ির সম্পত্তির মূল্য ব্যাংক থেকে তোলা টাকার কাছে কিছুই না। ………(একটু থেমে) যদিও আয়ান-রিয়ার বিয়ের কথা আহনাফ আহমেদ, রিয়া আর আমার মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো। আমি রিয়াকে কনভেনস করে দাদিমণিকে বলতে বলি যে সে আয়ানকে পছন্দ করে এবং তাকে বিয়ে করবে। রিয়া আমার কথা মতোই কাজ করে। কারণ ব্যাংকে টাকা ফিরত না দিলে আমিও ফেসে যেতে পারি। অনেকের কৌতুহল জাগতেই পারে যে এতোদিন বাবা…নাহ মিস্টার আহনাফ আহমেদ কোথায় ছিলো? সে তার তৃতীয় বার বিয়ে করা বউ এর সাথে থাকে। হ্যা সে আনফিহা আন্টির পর আরেকটা বিয়ে করেছে। হাহ!! এখন দীর্ঘ তাদের ১০ বছরের সংসার। যদিও আমি কিছুদিন আগেই জেনেছি। আশা করি সবার উত্তর পাওয়া শেষ’ বলে আদ্র ভাই রিয়ার আপুর দিকে এগিয়ে গেলো।

সবাই নিশ্চুপ!! একের পর এক ভয়ংকর সত্যের সম্মুখীনে উপস্থিত সবাই হতভম্ব। রিয়া আপুর মুখ উপচে পরছে চোখের পানি। আদ্র ভাই সন্তর্পণে তা মুছে দিলো। রিয়া আপুর গাল তার দু’ হাতে আকড়ে ধরে মোলায়েম কন্ঠে বলে উঠলো,

-‘ আমি অনেক খারাপ তাই না? হ্যা আমি অনেক খারাপ। আমার মতো খারাপ মানুষকে আর তোমার দেখতে হবে না। এই খারাপ আমিটাকে কি একটু জরিয়ে ধরবে?’

বলতেই রিয়া আপু তৎক্ষনাৎ জরিয়ে ধরলো আদ্র ভাইকে।

আদ্র ভাই রিয়া আপুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,

-‘ আমি নিজহাতে একটা খুন করেছি। হাজার ছেলে-মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি। তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। আমার বেচে থাকার আর কোনো অধিকার নেই। আমাকে মাফ করে দিও। আর…..পারলে আমাকে ভুলে যেও। ভালো থেকো প্রিয়তমা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি’

বলেই আদ্র ভাই তার কোমরের পিছনের দিকের থেকে গোজা রিভয়েলবার বের করে নিজেই নিজের মাথায় পর পর ৩টা গুলি করলো। চারপাশে তার রক্ত ছিটকে পরলো। রিয়া আপু কান্না করতে করতেই আদ্র ভাই এর লাশ নিয়ে মাটিতে বসে পরে।

কিছু মানুষ অনেকটা ঠান্ডা স্বভাবের হয়। তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ঠান্ডা মাথায় ধীরহস্তে কাজ করে। আগের থেকে নিজেদের মাথায় সবকিছু গুছিয়ে এটে রাখে। শীতল মস্তিষ্কের মানুষরা ভিতর ভিতর ভয়ংকর হলেও বাইরে থেকে একদম সাদামাটা সহজসরল মনে হয়। এরা অনেকটা মাইন্ড ড্রাইভার্টের ন্যায় হয়। সাইকোলজির অনুসারে, অনেক সময় অতিরিক্ত রহস্য বা সত্য লুকিয়ে রাখতে রাখতে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র কাজ করতে সক্ষম হয় না। পরিশেষে নিজেই নিজেকে শেষ করার পরিকল্পনা করে। সেরকম হয়তো আদ্র ভাইও ছিলো।

ঘটনা এতো দ্রুত গতিতে হয়েছে কে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।

মাধুরী ও মিস্টার আহনাফ আহমেদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। আদ্র ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

—————–

সকালের মৃদু আলোর সম্মোহনের এক ফালি রশ্মি আমার চোখে বিরাজমান হতেই আড়মোড়া দিয়ে উঠলাম আমি। উঠতে গিয়ে যেনো পারলাম না। কারোর বলিষ্ঠ বাহুদ্বয়ের বেষ্টনীতে আষ্ঠেপৃষ্ঠে নিবদ্ধ আমি। অনাবরত ‘দ্রিমদ্রিম’ শব্দ কর্ণপাত হচ্ছে। ঘুমের ঘোরেই আলসেমি ডিঙিয়ে আস্তে আস্তে মুখ উচু পিট পিট করে চোখ খুললাম। আয়ান ঘুমে নিমগ্ন!! আমার চোখ জোড়া যেনো থমকে গেসে তার মায়া ভরা মুখমন্ডলে। ইশস!! ঘুমালে কতটাই না নিষ্পাপ বাচ্চা লাগে। যেনো দুনিয়ার সমস্ত মায়া তার কাছে আবদ্ধ। আর জেগে থাকলে অনন্ত জলিলেরও বাপের বাপ, হুহ!! আজ প্রায় ৩ মাস হতে চললো আমাদের বিয়ে হয়েছে। এখনো ঠিক আগের মতোই কেয়ারিং। প্রতিদিন সকালে উঠে দেখি আমাকে জরিয়ে ধরে আছে। আমাকে কোনো অভাব বুঝতে দেয় না। সবসময় আগলে আগলে রাখে। কিন্তু আমি সবসময় ইচ্ছা করে ঝগড়া করি। তবুও উনি হাসি মুখে সহ্য করে নেয়। ইদানীং আমার শরীর বেশি একটা ভালো থাকে না। একটু কাজ করলেই ক্লান্ত হয়ে উঠি। এমনকি খেতেও তেমন একটা ভালো লাগে না। বলতে গেলে একদম অরুচি এসে গেছে। কিছু একটা খেলেও খানিক পরে গিয়ে বমি করে দেই। মাঝে মাঝে মাথাও ঘুরায়। আমি একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আমি টুপ করে উনার গালে চুমু দিয়ে উঠতেই আচমকা আয়ান আমায় টান দিয়ে উনার বুকের অপর ফেলে দিলেন। আমি নিস্তব্ধ!! চোখ মুখে একরাশি মৃদু হাওয়া বইতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। আমি ক্ষণিকের মধ্যেই চোখ সরিয়ে নিলাম।

-‘ কি ব্যাপার মিসেস আয়ান চৌধুরী?’

আমি উনার কথায় বিস্মিত!! হঠাৎ উনি ঘুম থেকে উঠে যাবে তা আমি মোটেও প্রত্যাশা করি নি। আনমনেই ঠোট কামড়ে শুকনো একটা ঢোক গিললাম।

-‘ এভাবে কি দেখছিলেন? আমার ঘুমের ফায়দা নিয়ে আবার আমার ইজ্জত টিজ্জত লুটে নেন নি তো?’

মানুষ কতোটা লাগামহীন হলে আমার মতো অবলা নারীকে এসব বলতে পারে,হুহ। খুবই বিপ’দ জনক লোক!!

আমি মুখ হাত দিয়ে হামি দিতে দিতে উনার সামনে থেকে সরে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললাম,

-‘ আপনি কোন চকলেটের খনি শুনি? আমার কি খেয়ে আর কোনো কাজ নেই যে আপনার ফায়দা তুলে লুটে নিবো?’

আমি উঠে সরে আসতে দেরি আয়ানের আমাকে টান দিতে দেরি হলো না। আমি ধারাম করে বিছানা পরে গেলাম। উনি মুচকি হাসি আমার উপর উবু হলেন। আমি খানিকটা ভড়কে গেলাম। শুকনো একটা ঢোক গিলে চর্তুদিকে চাহনি চঞ্চল রাখলাম। নিশ্বাস আমার খুব দ্রুত গতিতে ওঠা নামা করছে।

-‘ আসো তোমাকে একটা কিস করি ৷ শুনেছি মেয়েদের কিসে নাকি মিষ্টি থাকে আর মিষ্টি খেলে শরীরে অনেক ক্যালোরি পাওয়া যায় সাথে এনার্জিও’

কথাটা শোনা মাত্রই আমি ফটাফট উনাকে ধাক্কা মেরে দূরে সরে এসে বললাম,

-‘ আপনি এতো লুইচ্ছা হলেন কবে থেকে? আপনার দিন কাল এতোই খারাপ চলে যে চেয়ে চেয়ে নিতে চান’ বলে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলাম।

আয়ান আমার দিকে আসতে আসতে বললো,

-‘ হ্যা গো বউ’

আমি চারদিকে চাহনি চঞ্চল রাখলাম। “বউ” শব্দটা শুনে কেমন জানি এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে। সারা শরীর রীতিমতো কাপছে।

উনি আমার হাত উনার হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করলো। আস্তে আস্তে আমার মুখের দিকে এগোতে লাগলো। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমার ঠোটের মাঝে উনার ঠোটের ছোয়া পেতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।
.
.
.
.
.
.
৬ বছর পর ~~~

এক নয় দুই নয় গোটা ছয় ছয়টা বছর পেরিয়ে গেছে সেদিনের পর। বদলে গেছে অনেক কিছু। যে যার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে। মিস্টার আহনাফ আহমেদ গ্রেফতার হওয়ার কিছু সময় পর জানা যায় সে এই দুনিয়ার কিছুদিনের মেহমান। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে অনেক দূরে। তার লিভার ক্যান্সার হয়েছিলো। দিন রাত অতিরিক্ত মদ্যপানের ফল৷ সে আমার বাবা? ভাবতেও গা ঘিন ঘিন ধরে আমার। আর আদ্রিয়ান আহমেদ? তার ঠিকানা এখন অন্ধকার ছোট্ট মাটির ঘরটি। সেদিন হাসপাতালে নেওয়ার পথেই শেষ নিস্বাস ত্যাগ করে। তার সেই অন্ধকার ছোট্ট ঘরটিকে প্রতিনিয়ত পাহারা দিচ্ছে রিয়া। হাতে পায়ে তার লোহার শিকল। নেই তার আর আগের মতো লাবণ্যতা। চোখের নিচে কালো দাগে ঢাকা পরে গেছে। সোনালী চুলগুলো উশকো-খুশকো হয়ে ময়লার আস্তরণ জমেছে। রিয়া এখন একজন মানসিক রোগী। যখন জানতে পারে আদ্র এর সাথে সাথে তার মধ্যে থাকা ২ মাসের থাকা ছোট্ট প্রাণটাও তাকে একা করে ছেড়ে গেছে তখনি তার পাগলামির বেগ আরো বেড়ে যায়। আদ্র এর কবরের সামনে বসে কান্না করতে করতে বলে,

-‘ এমন কেনো করলে আদ্র? কতবার তোমাকে বলেছিলাম। কম কি আর বুঝিয়েছিলাম? কেনো আমাকে একা করে চলে গেলে? কথা দিয়েছিলে সারাজীবন আমার সাথে থাকবে। তাহলে কেনো চলে গেলে? আজ আমাদেরও সুখি একটা সংসার থাকতো। আমি, তুমি আর আমাদের সন্তান নিয়ে জীবনটা পার করে দিতাম অনায়সে। কেনো আল্লাহ আমার শেষ ভরসা, আমার সন্তানটাকেও কেড়ে নিলো বলতে পারো?’

বলতে বলতে আনমনে হেসে উঠে রিয়া। এমনি তার স্বভাব হয়ে ওঠেছে। হঠাৎ কেদে কেটে অস্থির হয়ে যায় আবার হাসিতে মেতে উঠে। মাঝে মাঝে সে তার পেটে হাত দিয়েও কথা বলতে থাকে।

অন্যদিকে মাহিন আর তিথি লন্ডন শিফট হয়ে গেছে। তাদের একটা ফুটফুটে মেয়েও আছে। ভারী মিষ্টি দেখতে। অহ হ্যা রুহিরও একটা মেয়ে আছে। রুহির কলিজার টুকরো তার মেয়ে। সে তার মেয়েকে নিয়েই নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। এখন অনেক বড় পদে আছে। সুহানা আর নিলয়ের কোল জুড়ে এসেছে “নিহান”. খুব তাড়াতাড়ি তাদের মাঝে নতুন এক অতিথি আসছে। মানে তারা ৩ জন থেকে ৪ জনে পরিণতি হবে।

আর দ্যা গ্রেট আয়ান চৌধুরী? আজ আয়ানের ছোট্ট পরী আহানিয়ার যে জন্মদিন। তার মেয়ে মাশাল্লাহ অনেক বড় হয়ে গেছে। এবার তো তাকে স্কুলেও ভর্তি করানো হয়েছে। প্রতিদিন আয়ান ওকে সযত্নে রেডি করিয়ে স্কুলে নিয়ে যায়। নিয়ম করে দুই গালে-কপালে চুমু খায়। আহানিয়াও তার পাপা গালেও দিয়ে দেয়। আজ আহানিয়ার কাছে অনেক স্পেশাল দিন। শুধু তার জন্মদিন নয় বলে। তার পাপা তাকে বলেছে, আজ তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে। গত ৫ বছর ধরে এই দিনটাতেই আয়ান একটা জায়গায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আজ একটু হয়তো তাড়াতাড়ি যাবে। সাথে যাবে তার ছোট্ট রাজকন্যা আহানিয়া।

আয়ান আর আহানিয়া এগিয়ে আসছে। সবসময়ের মতো হয়তো আজও আয়ানের হাতে একগুচ্ছ বেলী ফুলের মালা। আহানিয়া তার ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে তার পাপার হাত ধরে রেখেছে। চারপাশে তার চোখ চঞ্চল। হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না কোথায় এসেছে সে।

আয়ান সন্তর্পণে বেলী ফুলের মালা সামনে থাকা বেড়ার ছোট্ট বিছানায় জরিয়ে দেয়। তার চোখের কার্নিশ বেয়ে খসে পরে দু’ফোটা অশ্রুকণা। আয়ান মোলায়েম কণ্ঠে বিড়বিড় করতে বলতে থাকে,

-‘ আমার আহানিয়া একদম তার মায়ের মতো মায়াবতী দেখতে হয়েছে। কে জানতো এই মায়াবতী আহানিয়াকে জন্ম দিতে গিয়ে তুমি আল্লাহর এতো প্রিয় হয়ে যাবে? তুমি তোমার মায়ের মতো স্বার্থপরের ন্যায় সবাইকে একা করে চলে আসবে? এমন হলে জানলে আমি কখনো পিতৃত্বের স্বাদ নিতে চাইতাম না। তোমার মতো আমার ছোট্ট পরীটাও মাতৃহারা হয়ে গেছে। তবে তার পাশে তুমি ছাড়া বাকি সবাই আছে, আহি। তাকে আগলে রাখার জন্য তার পাপা আছে। মনে মনে কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম সুখে শান্তিতে খুনসুটি ভালোবাসায় আমার প্রিয় মানুষটার সাথে আমার আহির সাথে সারাজীবন কাটাবো। আমার জীবনে যে সেই কাঙখিত মানুষটাই নেই, কাটাবো আর কি করে? জানো প্রিয়তমা? মনের প্রফুল্লয়ার হাসৌজ্জ্বল চাহনিতে একগাদা ভুলভাল অনুভূতি উগরে দিলেই প্রেম হয়না। বরং অব্যক্ত হাজারটা ছেড়া টুকরো খন্ড-বিখন্ড অনুভূতি বুকের ভেতর দম আটকে পড়ে থাকলেও প্রেম হয়। প্রেম অনুভব করার জিনিস, সবাইকে কৈফত দেওয়ার নয়। তাই হয়তো এই অনুভব করতে গিয়ে বলা হলো না কতোটা ভালোবাসি তোমাকে প্রিয়তমা। জানো প্রিয়তমা, প্রেম হলো অনেকটা জালের মতো। কখনো নিজে থেকে জরিয়ে যায় আবার কখনো অন্য কেউ এসে জরিয়ে দেয়। আমি যে তোমার প্রেমে, তোমার বুনন করা জালে, তোমারি #প্রেমজাল এ আটকে গেছি। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও যে পায় না। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হয় আমার তোমাকে ~ “ভালোবাসি !! অনেক বেশি ভালোবাসি” কিন্তু সম্ভব না। ইহকালের সব মায়া ত্যাগ করে যে তুমি পরকালে পাড়ি জমিয়েছো অনেক আগেই। আমি নাহয় পরকালটা তোমার সাথে কাটালাম। তবে আমি এখনো তোমার #প্রেমজাল এ আবদ্ধ’

আর আহানিয়া? আহানিয়া তার পাপার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আধো আধো গলায় বলে উঠে,

-‘ পাপা তুমি অলেক পচা। তুমি লা বললে মাম্মালের কাচে নিয়ে যাবে। মাম্মাল কই?’

আয়ান তার চোখের জল সুক্ষ্মতার সাথে মুছে নিয়ে স্নিগ্ধ হাসি হেসে বলে,

-‘ তোমার মাম্মাম যে অনেক দুষ্টু মামনি। আমাকে তার #প্রেমজাল এ ফাসিয়ে এই যে এই মাটির নিচে লুকিয়ে শুয়ে আছে’

আহানিয়া কি বুঝলো কে জানে? আহানিয়া হেসে কুটি কুটি।

——-(সমাপ্ত)——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here