#প্রেমনগর
পর্বঃ১৪
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
মেঘ বাইক নিয়ে রবিনের বাড়ি চলে গেল। তারপর রবিনকে সাথে নিয়ে শ্রাবনীর কাছে থেকে শ্যামপুরের সেই কবিরাজের ঠিকানা নিয়ে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো। বাইকের পিছনে বসে রবিন বলে উঠলো, তুই নীলার জন্য এতো উতলা হচ্ছিস কেন? নীলা তো তোকে সব সময় বিভিন্ন ভাবে অপমান করে৷
মেঘঃ এখন এসব কথা ছাড়। ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আগে শ্যামপুর গিয়ে খোঁজ করি ও ওখানে আজ গিয়েছিল কিনা।
.
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে মেঘ রবিনকে নিয়ে শ্যামপুর বাজারে গিয়ে পৌঁছালো। বাজারের দোকানদারদের কাছে শ্যামপুর কবিরাজের ব্যপারে জানতে চাইলে তারা কিছুই বলতে পারলো না।
.
নীলার বাবা আবারও আফতাব চৌধুরীকে ফোন করলেন।
নীলার বাবাঃ আপনার ছেলেকে বলুন ভালোয় ভালোয় আমার মেয়েকে ফেরত দিয়ে দিতে। নইলে আমি ওকে সারাজীবন জেলের ভাত খাওবো বলে দিলাম৷
আফতাব চৌধুরীঃ আপনি আপনার সীমা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন। এরপর আমার পুত্রের নামে আর একটাও উল্টো পাল্টা কথা বললে আপনার নামেই আমি কেস করতে বাধ্য হবো।
নীলার বাবা আরও রেগে গেলেন, আমি জানি ওই লম্পট ছেলেই আমার মেয়েকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। এরপর ওকে সামনে পেলে আমি ছিড়ে ফেলবো।
নীলার মা নীলার চিন্তায় অচেতন হয়ে গেছেন। উনার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত নীলার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। ভয়ে শ্রাবনীও মুখ খুলছেনা। শ্রাবনী মেঘকে কল করলো।
শ্রাবনীঃ হ্যালো মেঘ, নীলার কি কোনো খবর পেলে?
মেঘঃ না। আমি তো রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিনা। ওই কবিরাজের আস্তানায় যাব কিভাবে। এখানকার লোকেরাও তো কিছু বলছে না।
শ্রাবনীঃ একটু ভালো করে খোঁজ করে দেখো না!
.
তুলি রৌদ্রের কেবিনে রয়েছে। রৌদ্র ঘুমাচ্ছে। ডাক্তার কড়া ঘুমের মেডিসিনের ডোজ দিয়েছে। রাফি আবারও আসলো রৌদ্রকে দেখতে।
তুলি রাফিকে কেবিনের ভিতরে আসতে দেখে আস্তে করে বলে উঠলো, আপনে? এই সময়ে?
রাফি হেসে বললো, এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম আরেকবার দেখে যাই। ও তো ঘুমাচ্ছে।
তুলি মাথা নেড়ে বললো,হ!
রাফি তুলির প্রেমের টানেই বার বার এখানে আসছে। তখনই আফতাব চৌধুরী কেবিনের ভিতরে এসে রাফিকে দেখে বলে উঠলেন, বাবা তুমি?
রাফিঃ না মানে দেখতে আসলাম। এখন অবস্থা কেমন। ভাবলাম দেখে যাই।
.
আফতাব চৌধুরী রাফির পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, বড্ড ভালো ছেলে বাবা তুমি। আর আমার গুলো দেখো। সব কয়েকটা অবাধ্য। ওদের চিন্তায় চিন্তায় আমার জীবন শেষ! তোমার মতো ছেলের বাবা হওয়া তো ভাগ্যর ব্যপার।
রাফি মুচকি হাসলো।
আফতাব চৌধুরীঃ বুঝলে বাবা বড়ই টেনশনের ভিতরে আছি। এক ছেলে এই অবস্থা আবার আরেক ছেলের ওদিকে কোনো খোঁজ নেই। ওদের মা আবার ওদের চিন্তায় পাশের কেবিনে পরে আছে।
আফতাব চৌধুরী তখনই তুলির দিকে তাকালেন, আরে এই মেয়েটি আবার এখানে কি করছে। রাত হয়েছে। যাও বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করো।
রাফি সাথে সাথে চট করে বলে ফেললো, আমি ওকে বাড়িতে দিয়ে আসি!
আফতাব চৌধুরী আবার এদিকে ফিরে রাফির পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, ও হো! যাও বাবা যাও। দিয়ে এসো। খুবই ভদ্র ছেলে তুমি বাবা!
রাফি আবারও মাথা নিচু করে মুচকি হাসি দিলো।
তুলির ইচ্ছা করছিলো ওখানেই থাকতে কিন্তু মুরুব্বী মানুষ বলেছে তাই উনার কথা ফেলে দেওয়া যায় না।
.
রাফি তুলিকে নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে বের হয়ে একটা রিকশা নিলো। রাফি রিকশায় উঠে বসে আর তুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো, দাঁড়িয়ে আছো কেন উঠে এসো!
তুলি মাথা নিচু করে আছে। রাফি তুলিকে ওঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। তুলি রাফির হাত না ধরেই একাই রিক্সায় উঠে পরলো।
.
আফতাব চৌধুরী বাড়িতে ফোন করে জানতে পারলেন, মেঘ বাড়িতে নেই। কোথায় আছে কেউ বলতে পারলো না। উনি এবার চিন্তায় পরে গেলেন। নীলা নামের মেয়েটিকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় কোনো ভাবে তার ছেলে আবার জড়িত নয় তো। নীলার বাবা মেঘের নামে কেস করেছেন। এদিকে রৌদ্রের এই অবস্থা। টেনশনে উনার পেশার বেড়ে গেল। আর বুকে ব্যথা শুরু হলো। উনি কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ সেখানে পরে গেলেন। পাশেই শাশুড়ি মনিরা বেগমের কেবিন থেকে বের হতেই অহনা শশুড়ের এভাবে পরে যাওয়ার দৃশ্যটি দেখে দৌড়ে এগিয়ে এলো।
অহনাঃ বাবা! বাবা আপনার কি হলো?
আফতাব চৌধুরী অচেতন হয়ে গেছেন। উনাকেও ধরে একটি কেবিনে ভর্তি করা হয়।
.
অহনা হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছে আর একা একাই বলে যাচ্ছে, কি একটা বাড়িতে আমার বিয়ে হলো, শশুড় শাশুড়ি দেবর বাড়ির সকলেই হাসপাতালে ভর্তি! আর আমার স্বামী! উনি আছেন উনার হাসপাতালে নাইট ডিউটি নিয়ে! কি কপাল আমার! আচ্ছা উনি কোনো রোগীর প্রেমে ট্রেমে পরে যায় নি তো? বাড়ির সকলে হাসপাতালে ভর্তি আর উনার এদিকটা নিয়ে কোনো চিন্তায়ই নেই??
অহনার মাথা গেল আউলা হয়ে। অহনা আর এক সেকেন্ডও দেড়ি না করে আকাশকে কল করলো৷
আকাশঃ হ্যাঁ জান বলো।
অহনাঃ বাবা যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সেই খবর কি পেয়েছো??
আকাশঃ কি বলো? কখন কিভাবে হলো?
অহনাঃ এ্যাই সত্যি করে বলো তো তুমি এখন কার সাথে আছো?
আকাশঃ আজকে আমার নাইট ডিউটি পরেছে জান।
অহনাঃ না। নিশ্চয়ই কোনো মেয়ের সাথে আছো তুমি। আর তাই বাড়ির কোনো খবরই তুমি রাখছো না। কেন গো আমাকে দিয়ে কি তোমার হচ্ছে না??
আকাশঃ এসব তুমি কি বলছো জান!
অহনাঃ বলো আমি কি তোমায় সুখ দিতে পারিনি। বলো কি নেই আমার!
আকাশঃ জান তুমি শান্ত হও। এসব উল্টো পাল্টা কথা কেন বলছো?
অহনা কাঁদতে কাঁদতে চেচাতে থাকে, শান্ত হবো মানে? আমি তোমায় সব দিয়েছি আকাশ!! তবু অন্য মেয়ের মধ্য কি এমন দেখলে যা আমার মধ্য নেই? কেন এমন করলে আকাশ!! কেন!! আমি তো সব ভুলে শুধু তোমায় ভালোবেসেছি আকাশ! কেন করলে! কেন!!
আকাশঃ জান??
ভয়ে আকাশ এখন ঘামতে শুরু করেছে। এই বুঝি অহনার মাথা গেল খারাপ হয়ে। অহনার কথা শিথিল হয়ে আসতে থাকে,কেন করলে আকাশ! কেন!!
আকাশ শুধু অহনার বলা এই কথাটাই বার বার শুনতে পাচ্ছে। তারপর হঠাৎ একটা শব্দের আওয়াজ পাওয়া যায়। ব্যস অহনার আর কোনো কথা এবং সাড়া শব্দ কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
আকাশঃ হ্যালো হ্যালো!! অহনা??জান?? কি হলো তোমার?
.
অহনা চিল্লাচিল্লি করতে করতে করিডোরেই মাথা ঘুরে পরে গেছে। দুইজন নার্স এইদিক দিয়েই যাওয়ার সময় অহনাকে পরে থাকতে দেখে ওকে ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করালো।
নার্স গুলো একজন আরেকজনকে বলছে,রোগী হইলো একজন আর একজন রোগী দেখতে আইসা পরিবারের বাকি তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হইয়া গেল! অনেক অদ্ভুত ঘটনা দেখছি কিন্তু এমন আজব ঘটনা আগে দেখি কখনো দেখি নাই।
.
মনিরা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফিরেই উনি শুনতে পেলেন উনার স্বামী এবং ছেলের বউও অহনাও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই খবর শোনার সাথে সাথে উনি টেনশনের চাপ সহ্য করতে না পেরে আবারও জ্ঞান হারালেন৷
.
এদিকে মেঘ আর রবিন শ্যামপুর বাজারের এক বৃদ্ধ দোকানির কাছে কবিরাজের আস্তানার ব্যপারে কিছুটা জানতে পেরে ওই পথেই বাইক নিয়ে এগোতে থাকে। জায়গাটা খুব নির্জন। পিচ ঢালা রাস্তা এবং দুই পাশে ঘন জঙ্গল। নীলার জন্য মেঘের চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে। মেয়েটার সত্যি সত্যি কোনো বিপদ হলো না তো?
আর ওদিকে পুলিশ মেঘকে ধরার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওকে একবার ধরতে পেলেই এবার সোজা রিমান্ডে নেওয়া হবে। কাল নীলা বাবা নীলার কথা শুনে ভুল করেছেন। মেঘকে তখনই ধরে পুলিশে দেওয়া উচিত ছিলো। তাহলে আজকে এই ঘটনা হয়তো ঘটতো না। নীলার নিখোঁজ হওয়ার ব্যপারে উনি পুরোপুরি মেঘকে দোষী কেরছেন।
.
অহনার চিন্তায় অস্থির হয়ে আকাশ গাড়ি নিয়ে দ্রুত এই হাসপাতালে ছুটে এলো। অহনা কেবিনের ভিতরে পাগলামো শুরু করেছে। একা একাই চিল্লাচ্ছে আর জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করছে। ডাক্তার এসে অহনাকে দেখে গেলো। উনি নার্সকে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, অহনাকে একটা ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিতে। নার্স ইঞ্জেকশন আনতে কেবিনের বাহিরে চলে গেল। তখনই আকাশ অহনার কেবিন খুঁজে পেয়ে ভিতরে ঢুকে পরে। অহনা বেডে বসে আছে। আকাশ সেদিকে ছুটে যায়। ছুটে গিয়ে অহনার হাত ধরে বলছে, জান? জান তোমার কি হয়েছে! তুমি ঠিক আছো?
আকাশকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। অহনা এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ করেই অহনা আকাশেকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আকাশের ঠোঁটে চুমু দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, তুমি! তুমি কার প্রেমে….
অহনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ সাথে সাথে উত্তর দিলো, আমি তো শুধু তোমার প্রেমেই পরে আছি!
অহনার মাথা এলোমেলো হয়েছিলো৷ এই কথা শুনে আহনা একটু শান্ত হলো। অহনা আবারও আকাশের ঠোঁটে চুমু দেয়। আকাশ অস্থির হয়ে আছে। অহনার চুমু দেওয়াতে আকাশ আরও পাগল হয়ে গেলো। আকাশ এগিয়ে এসে অহনাকে আরও ভালো ভাবে জড়িয়ে ধরে৷ দুইজনই দুইজনের প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। আকাশ অহনাকে জড়িয়ে ধরে গাড় ভাবে লিপ কিস করতে শুরু করে। অহনাও আকাশের শার্ট শক্ত করে আকারে ধরে আছে।
.
রিকশায় রাফির সাথে তুলির বার বার গা ঘসা লাগছিলো। তুলি রাফির থেকে সরে সরে বসছে। একবার জ্যামে পরে ঝাকুনিতে তুলি রিকশা থেকে পরে যেতেই রাফির তুলি বাহু ধরে তুলিকে পরে যাওয়া থেকে আটকালো। রাফির মনে তুলির জন্য প্রেমের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। আর তুলির মনে রয়েছে রৌদ্রের জন্য চিন্তা। হঠাৎ করে সে বলে উঠলো,আমি বাড়ি যামু না! আমারে হাসপাতাল লইয়া চলেন।
রাফি অবাক হয়ে বললো, কেন? এখনি তো ওখান থেকে আসলে। এখন আবার ওখানে যাবে কেন?
তুলিঃ আমি উনারে ফালাইয়া বাড়ি গিয়া কি করমু? আমি শান্তি পামু না! উনি কষ্ট পাইতাছে।আমার লাইগাই তো এমডা হইছে। এহন উনারে চোক্ষের দেখোনো আমার শান্তি। আমারে হাসপাতাল লইয়া চলেন।
.
নার্স অহনার জন্য ঘুমের ইঞ্জেকশন নিয়ে কেবিনের দরজার কাছে এসে দাড়াতেই খেয়াল করলো কেবিনের ভিতরের লাইট অফ করা,একি এখানে আবার লাইটটা কে অফ করলো?
কেবিনের ভিতরে উকি দিতেই নার্স দেখতে পেল ভিতরে অন্ধকার আর বাহির থেকে জানালা দিয়ে যে টুকু হালকা আলো আসছিলো সেটুকু আলোয় বোঝা যাচ্ছিলো রুমের ভিতর দুইজন একে অপরের সাথে আলিঙ্গনে রয়েছে আর চুমাচুমি করছে এবং তারা কাপড় খুলতেও শুরু করেছে। এটা দেখার সাথেই নার্স জিব্বাহতে কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে দিল এক দৌড়।
.
চলবে….