প্রেমনগর পর্ব ১৫

#প্রেমনগর
পর্বঃ১৫
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
নার্সটা আকাশ এবং অহনাকে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত অবস্থায় দেখেই দৌড়ে এসে হাফাচ্ছে। নার্স কোনো ভাবেই নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না। শুধু বড় বড় দম ছাড়ছে। নার্সের বয়স অল্প এবং অবিবাহিত। চোখটা বন্ধ করে সে কল্পনায় তার স্বামীকে ভাবছে। কিন্তু আর কত কল্পনা এবার তো বাস্তবে কাউকে চাই। নার্স করিডোরের এক কোনায় ওয়ালটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর হাফাচ্ছে।
.
রাফি তুলিকে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলো। করিডোরের মোড়ে এসে দাঁড়াতেই নার্সকে ওয়ালের দিকে হেলে ঝুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফি বলে ওঠে, আপনি এখানে এভাবে রয়েছেন কেন, আপনার কি শরীর খারাপ!
রাফির কথা শুনে নার্সটা এদিকে ঘার ঘোরায়। তার চোখ মুখ একেবারে লাল হয়ে রয়েছে। সে কিছু না বলেই আস্তে আস্তে হেটে চলে গেল।
.
রাফি আর তুলি রৌদ্রের কেবিনে এসে দেখলো রৌদ্র ঘুমাচ্ছে। তুলি রৌদ্রের বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসলো।
রাফিঃ তুমি কি এখানেই থাকবে?
তুলিঃ আপনে এহন যান। মেলা কষ্ট করছেন৷
রাফি হেসে বললো, না না কষ্ট কিসের।
তারপর রাফি এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে থেকে খুব আবেগ নিয়ে বললো, তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না যে!
.
তখনই রৌদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। রৌদ্র চোখ মেলে তাকায় । তুলি রাফিকে কিছু বলতে যাবে তখনই রৌদ্র আস্তে করে বলে ওঠে, তুলি!
তুলি এদিকে ফিরলো আর অস্থির হয়ে বলছে, আপনের এহন কেমন লাগতেছে?
রৌদ্রঃ তুমি বাসায় যাও নি?
তুলিঃ আমি আপনারে রাইখা কেমনে যাই কন!
রৌদ্রঃ আমি ভালো হয়ে যাবো এতো চিন্তা করো না।
রাফিঃ আমি তো ওকে বাসাতেই নিয়ে যাচ্ছিলাম। মাঝপথে গিয়ে হঠাৎ বললো, ও এখানেই থাকবে। তাই আবার নিয়ে আসলাম।
রৌদ্রঃ তুইও বাড়ি যাস নি!
রাফিঃ এভাবে রেখে কিভাবে যাই বল।
রৌদ্রঃ যা বাড়ি গিয়ে এবার বিশ্রাম কর। আমাকে নিয়ে এতো অস্থির হস না।
.
বাহিরে প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। অন্ধকার কেবিনে আকাশ আর অহনা দুইজন এক সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর নার্সটা তখনকার দেখা দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সে। ওখান থেকে আস্তে আস্তে হেটে সামনের দিকে এগিয়ে আসতেই বেখেয়ালবসত হাসপাতালের ম্যানেজারের সাথে ধাক্কা খেল।
.
ম্যানেজারের বয়স ত্রিশের কোঠায়। বিয়ে করেছে তিন বছর হলো। কিন্তু এখনো ছেলেপুলে হয়নি। ম্যানেজারের সাথে ঢাক্কা খেয়ে নার্সের শরীর আরও খারাপ হতে থাকে। ম্যানেজার ইবরাহীম তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নার্সের বুক ধুকপুক করছে আর চোখ ঘোলা হয়ে আসছে। হঠাৎ করে সে ম্যানেজারের বুকের কাছে মাথা এগিয়ে দিলো আর তারপর বুকে ঝাপিয়ে পরে জড়িয়ে ধরলো। ম্যানেজার বড় রকমের শকড খেয়েও সুন্দরী নার্সটা তার শরীরের সাথে আলতো ভাবে লেপ্টে রয়েছে দেখে সেও আর তাকে সরানোর ইচ্ছা মনের ভিতর আনলো না।
সেও দুই হাত দিয়ে নার্সটাকে জড়িয়ে ধরলো। সাথে সাথে নার্সের শরীরে বিদুৎ খেলে গিয়ে নার্সটা ম্যানেজারের মুখের দিকে তাকালো। নাহ আর পারছে না। নার্সের চোখের ভাষা বুঝতে বেশি দেড়ি হলো না ম্যানেজার সাহেবের।
.
দুইজনই আস্তে আস্তে দুইজনের মুখ কাছে আনতে থাকে। নার্সটা আগে থেকেই ম্যানেজারকে পছন্দ করতো কিন্তু ম্যানেজার বিবাহিত হওয়ার কারণে কোনো দিন বলতে সাহস পেতো না। আজ কোথা থেকে যে এতো সাহস সঞ্চয় হলো কে জানে। সবই হয়েছে ওই অহনার কেবিনে ঢুকতে গিয়ে। কিন্তু ম্যানেজার যে এতো সহজে তাকে আগলে নেবে আগে জানলে কবেই কতো কি হয়ে যেতে! দুইজনই মুখ কাছে আনতে আনতে পাগলের মতো চুমা চুমি করতে শুরু করে। একদম কামড়া কামড়ি অবস্থায় সেটা চলে যায়। নার্স এবং ম্যানেজার ওভাবেই চুমাচুমি করতে করতে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
মেঘ কবিরাজের আস্তানা খুঁজে পেয়েছে। ররিনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই কোথা থেকে যেন ধোঁয়া চোখে মুখে এসে লাগতে শুরু করে তারপর দুইজনেরই কাশি শুরু হয়। আস্তানাটা জঙ্গলের ভিতরে একটি পুরনো পোড়ানো বাড়িতে। চারপাশে মশাল জ্বলছে৷ ধোঁয়ার মধ্যেই দেখতে পেল কালো পোশাকে কেউ সামনে বসে আছে আর তার চারপাশে আগুন জ্বলছে। সে হঠাৎ করে আওয়াজ করে উঠলো, ফুঁ ফুঁ ফুস…..ফুস…!
তার হাতে একটি লাটি। লাটি দিয়ে সামনে কয়েকটা বারি দিলো এবং মুখ দিয়ে বিভিন্ন রকমের আওয়াজ করতে থাকলো। সেগুলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ধোঁয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং সামনের সব ধোঁয়াশা আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। মেঘের কেন যেন মনে হচ্ছে নীলা আজ এখানেই এসেছিলো কারণ ভিতরে ঢোকার আগে নীলার এক জোড়া ঝুমকো দুলের মতো ওটার একটা পরে থাকতে দেখেছে। নীলার ওই দুল জোড়া ছিল খুব প্রিয়। প্রায় সময়ই পরতো। তাই মেঘ সেটা খেয়াল করেছিলো। ওটার একটা পরে থাকতে দেখে মেঘ দুলটা কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে।
.
মেঘ আর রবিন দুইজন এবার দুইজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কালো পোশাক পরা দাড়িওয়ালা বুড়োর মতো লোকটা হুংকার দিয়ে ওঠে, কি চাই!!
মেঘ ভনিতা না করে সরাসরি বলে ফেললো, নীলা নামের মেয়েটি এখন কোথায়?
.
রাফি চলে যাওয়ার পর রৌদ্র তুলির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পরে। তুলি খুব সহজ সরল আর আবেগ প্রবন একটা মেয়ে। রৌদ্র তাকে বিপদ থেকে বাঁচতে এসে নিজেই বিপদে পরে তার এরকম অবস্থা হয়েছে। দৃশ্যটা আরেকবার ভেবে তুলির চোখ ছল ছল করে উঠলো। তুলি রৌদ্রের দিকে তাকয়ে তারপর নিজের শাড়ির আচঁল দিয়ে রৌদ্রের মুখ মুছে দিলো। হঠাৎ করে রৌদ্র জেগে গিয়ে তুলির হাতটা সাথে সাথে ধরে ফেললো৷ রৌদ্র চোখ খুলে তাকায়। রৌদ্রকে তাকাতে দেখে তুলি লজ্জায় তার চোখটা নিচের দিকে নামিয়ে নিলো কিন্তু তার ডানটা হাতটা রয়ে গেছে রৌদ্রের হাতে।
.
রৌদ্র কিছু না বলে তুলির দিকে চেয়ে আছে। তুলি আস্তে আস্তে চোখ উপরে তুলে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই রৌদ্রের চোখে তার চোখ পরলো। লজ্জায় তুলি আবার চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নেয়। তুলির মুখ দিয়ে এবার আস্তে করে বেড়িয়ে এলো, ওমন বেশরমের মতো তাকায় রইছেন ক্যান? ছাড়েন আমার হাতটা ছাড়েন!
রৌদ্রঃ কাঁদছিলে কেন?
.
রাফি বাড়ি ফেরার জন্য বৃষ্টিতে ভিজে মাঝ রাস্তা পর্যন্ত গিয়েও তুলির কথা ভুলতে না পেরে আবারও হাসপাতালে চলে এসেছে। তুলির প্রতি প্রেম যেন তাকে পাগল করে তুলেছে। তুলিকে এক সেকেন্ডের জন্যও যেন চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না৷ ভেজা অবস্থার জন্য রাফি ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই ওখানে ভিতর থেকে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলো।
.
চলবে….
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here