#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে-মিথিলা মাশরেকা
#পর্ব-৩
জ্ঞান ফেরার পর প্রাপ্তর গানই আগে ইচ্ছের কানে ভেসে আসলো। চোখ মেলে অরিত্রা,রাকা,সাফোয়ান,মাহীনসহ কনসার্টের স্বেচ্ছাসেবী দলকে চোখে পরলো ওর। আস্তেধীরে উঠে বসলো। রাকা ওকে জুসের গ্লাস দিয়ে বললো,
-ইচ্ছে? এখন কেমন আছিস? এ্ এটা খা। বেটার ফিল করবি।
মুখের ভেতরের জ্বালাপোড়া আর গায়ে র’্যাশগুলো দেখে ইচ্ছের মনে পরলো কি ঘটেছিলো। মুখ দিয়ে শ্বাস ছেড়ে জুসটা কয়েকঢোকে শেষ করলো ও। ঝাল কমেছে কিছুটা। অরিত্রা বললো,
-ঝালে কেউ অজ্ঞান হয়,আজ প্রথমবার,চাক্ষুস দেখলাম। বাবা!
ইচ্ছে কিছুই বললো না। ও বোঝার চেষ্টা করছে,স্টেজে গান গাইছে কে। অরিত্রার কথা শুনে রাকা মনেমনে কয়েকটা গালি দিয়ে বলতে লাগলো,তুমিই খেয়ে দেখতে না হয় অরি! কেমন লাগে ওইটা খেতে। একনম্বরের শাঁকচুন্নি মেয়ে একটা! যেমন নাম,তেমন কাম! অরি! শত্রু! ওকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফোয়ান বললো,
-এক বোতলেই এই দশা? আরেক বোতলের কি হবে তাহলে? উমমম্… ওটা কে খাবে?
-কেনো? ইচ্ছে ম্যাডামের বান্ধবী আছে তো! রাকা ম্যাডাম!
মাহীনের কথা শুনে আতকে উঠলো রাকা। এবার মাহীনের দিকে তীক্ষ্মচোখে তাকালো ইচ্ছে। ওর চাওনি দেখে না চাইতেও খানিকটা ভয় পেয়ে গেছে মাহীন। এই মেয়ে প্রাপ্তর কলার ধরে ওকে চড় মেরেছে। ওর হকিস্টিকও ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। একটু থতমতো হয়ে বললো,
-ক্ কি ব্যাপার? আপনি আমার দিকে এভাবে তাকাতে পারেন না!
আধশোয়া থেকে ইচ্ছে উঠে দাড়ালো। জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে রাকাকে বললো,
-গিটার কোথায়?
-এখানে।
প্রাপ্ত গিটার হাতে দরজায় দাড়িয়ে। পাশে মিষ্টিও আছে। ওর হাতে গিটার দেখে জ্বলে উঠলো ইচ্ছের শরীর। হনহনিয়ে গিয়ে কেড়ে নিলো ও গিটারটা। চেচিয়ে বললো,
-তুমি আবারো কেনো আমার গিটার ধরেছো?
-প্রাপ্ত কারো অনুমতিও নেয়না,কারো কাছে জবাবদিহিও করে না।
-তা বলে কারো আবেগকে আঘাত করার কোনো অধিকারও তোমার নেই!
ইচ্ছের কথায় এবার একটু কপাল কুচকালো প্রাপ্ত। আবেগ বলতে কি গিটারকে বুঝালো ইচ্ছে? এই আবেগ শব্দটা শুনেই মাথা ফাকা হয়ে গেছে ওর। কি হলো,সহসা ইচ্ছের দুহাতের কনুইয়ের উপরে চেপে ধরলো প্রাপ্ত। নিজেও চড়া গলায় বললো,
-আমাকে আঘাত করার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?
ইচ্ছে নিজের হাতের দিকে তাকালো। অনেকবেশি জোরে চেপে ধরেছে প্রাপ্ত ওর হাত। ঝারা মেরে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। দাতে দাত চেপে বললো,
-অন্যায়ের শাস্তি দিয়েছিলাম জাস্ট। কিন্তু পরেরবার আর শাস্তি নয়,প্রতিত্তর দেবো। তৈরী থেকো সাদমান ইনাব প্রাপ্ত। ইচ্ছে ওর প্রিয় জিনিস হারানো যন্ত্রনায় যেভাবে পুড়ছে,তার চেয়ে কয়েকহাজার গুন বেশি যন্ত্রনায় পোড়াবো তোমাকে। প্রিয় হারানোর যন্ত্রনা! বি রেডি!
একপলক সবার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ইচ্ছে। হাত মুঠো করে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো প্রাপ্ত। প্রচন্ড রাগে কাপছে ও একপ্রকার। এই মেয়েটার সাহসে প্রতিবার অপমানিত হতে হয়েছে ওকে। শেষ কথাগুলোতে সতর্ক করে দিতে গিয়ে আরেকদফায় নিজেকে সাহসী প্রমান আর প্রাপ্তকে অপমান করে গেলো ও। মিষ্টি অবস্থা বুঝে উঠেও বরারের মতো নিজের করনীয়টাও বুঝলো না। প্রাপ্তকে নিয়ে সবসময়ই ভয়ে থাকে ও। কিন্তু এখন ইচ্ছে যা বলে গেলো,যেভাবে বলে গেলো,তাতে ওই বা কি করবে,সেটা ভেবেও ভালোরকমের চিন্তা হচ্ছে মিষ্টির।
•
‘ইনিশা! উই ইনিশিয়েট ইউর ড্রিম’
স্থাপত্য,নকশায় একধাপ এগিয়ে থাকা দেশের প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রগুলোর মাঝে,এক অন্যতম নাম। এ অফিসের প্রাত্যহিক কর্মদিবস,সকাল আটটা থেকে রাত আটটা। রাত সর্বোচ্চ দশটাও হয় কোনোকোনো দিন,কারোকারো জন্য। তার উর্ধ্বে নয়। এখন রাত আড়াটা। অন্ধকারচ্ছন্ন বহুতল অফিস ভবনটির এগারো নম্বর ফ্লোরে এখনো আলো জ্বলছে। রুমের ঠিক মাঝখানে আগুনও জ্বলছে। লিখন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তার বসের সামনে। হাতদুটো মুষ্ঠিবদ্ধ করে সামলাচ্ছে নিজেকে। তার অক্লান্ত মেধা,শ্রমের ফল শেষ হয়ে যাচ্ছে ওরই চোখের সামনে। ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে লিখনের শরীর। ইচ্ছে করছে সামনে বসে মদ গিলতে থাকা শিক্ষিত জানোয়ারটিকে ওই আগুনেই জ্বালিয়ে দিতে। তবুও কিছু বলতে পারছে না,করতে পারছে না ও। শুধু দুহাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলো।
নেশায় বুদ হয়ে থাকা নিজাম টলোমলো চোখে লিখনের দিকে তাকালো। পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার কথা ওর লিখনের এতোদিনে করা এই সব প্রেজেন্টেশন পোড়াতে। তবে তা হচ্ছে না। লিখনের আফসোসের পরিবর্তে রাগী চেহারাটায় একদমই মজা পাচ্ছে না ও। লিখনকে নিজাম অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলো প্রমোশনের জন্য। রাতারাতি প্রমোশন দেবে বলে। তবে শর্ত ছিলো, এই পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য লিখনকে স্বস্ত্রীক আসতে হবে। সেদিনের ইভেন্টে এসেছিলো লিখনের বউ। হলুদ শাড়ীতে আসা মেয়েটির দু দন্ডের বেখেয়ালিপনায় জন্য তলপেট কিছুটা দৃশ্যমান হয়। আর তা চোখে পরার পর থেকেই তাকে রাত্রীযাপনে চাই বলে প্রতিজ্ঞা করে বসেছে নিজাম। কিন্তু আজ যখন দেখলো,লিখন একাকী অফিসে এসেছে,রাগে ওর সব প্রেজেন্টেশন আর নকশা নিজেহাতে জ্বালিয়ে দিয়েছে ও। তারপরও কোনো আফসোস নেই লিখনের। উল্টো রাগ ওর চেহারায়। নিজাম উঠে দাড়িয়ে বললো,
-এগুলো রশিদের প্রেজেন্টেশন ছিলো। চুরি করে এগুলো তুই নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছিলি। ইনিশা থেকে তোকে বরখাস্ত করা হলো!
লিখনের ভাবান্তর হলো না। যাতে আরো রাগ হলো নিজামের। ড্রয়ার থেকে চেইকবই টা নিয়ে কিছু একটা লিখে বললো,
-আমার কাছ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা নিয়েছিলি তা ফেরত দিসনি। সে দায়ে জেলে যেতে হবে তোকে!
লিখন তখনও চুপ। নিজাম একটু থেমে বাকা হেসে বললো,
-তুই জেলে গেলে বাসায় রুবা একা। তাইনা রে লিখন?
এতোক্ষনে চোখ তুলে তাকালো লিখন। রাগে চোখ ভরে উঠেছে ওর। সামনে থাকা জঘন্য মানুষটাকে খুন করবার ইচ্ছা জাগছে ওর। হাতের মুঠো আরো শক্তিতে মুঠো করার আগেই কেউ ঘুষি লাগিয়েই দিলো নিজামকে। লোকটা এমনিতেও মাতাল ছিলো। আর সেই ঘুষিতে টেবিলে গিয়ে পরেছে একদম। লিখন বিস্ময়ে নিজামের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকালো।
হালকা নীল রঙের শার্ট,কালো প্যান্ট,ইন করা,হাতে মোটা চেইনের ঘড়ি,একেবারে ফর্মাল লুকে দাড়ানো সুদর্শন এক যুবক। বয়স সাতাশ আটাশ হবে হয়তো। গায়ের রঙ বেশ উজ্জ্বল। চোখে চশমা পরিহিত ছেলেটার চেহারায় যেনো নিস্পাপ শব্দটা স্বর্নাক্ষরে লেখা। অফিসের কেবিনের আলোর চেয়ে,ফ্লোরের কাগজের আগুনের অল্পবিস্তর আলোতে ছেলেটাকে বেশ লাগছে দেখতে। লিখনের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,
-এইধরনের পশুবেশী মানুষদের মারার জন্য এতো সময় নিতে নেই। নইলে তুমি মারার আগেই অন্যজন এই সওয়াবের কাজ করে দেবে। বুঝেছো?
লিখন নিরবে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। নিজাম টেবিল থেকে মুখ তুলে ঠোটে আঙুল ছোয়ালো। কেটে রক্ত ঝরছে। ওকে কেউ ঘুষি ছুড়েছে ভেবে চরম রাগ হলো ওর। টেবিলে বারি মেরে ঘুরে উঠে বলতে যাচ্ছিলো,
-আজ তোকে…
লিখন খেয়াল করলো,ছেলেটাকে দেখেই নিজাম থেমে গেছে তৎক্ষনাৎ। যতোটা তেজ নিয়ে ও বলতে শুরু করেছিলো,ততোটাই নুইয়ে বিস্মিত চেহারায় তাকিয়ে আছে ও ছেলেটার দিকে। যেনো এ কাকে দেখছে ও! ছেলেটা শান্তদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজামের দিকে। ডানহাতে বা হাতের হাতাটা ভাজ দিতে দিতে এগুলো সে। এগিয়ে একদম নিজামের সামনে দাড়িয়ে গিয়ে বললো,
-কিছু বলছিলি নিজাম?
-র্ রা রাকীন? ত্ তুই এখানে?
বিস্ফোরিত চোখে মানুষটাকে আরেকবার পরখ করে নিলো লিখন। এই তবে রাকীন শাফায়াত? ইনিশা’র ফাউন্ডার রাজীব মাহমুদের একমাত্র ছেলে রাকীন শাফায়াত? এই ছেলেই বাবার এতোবড় সাম্রাজ্যে এক সাধারন কর্মচারীর মতো কাজ করে চলেছে তবে? নিজামের কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটলো রাকীনের ঠোটে। টেবিলে রাখা গ্লাসের পানিটা একদম মুখে ছুড়ে মারলো ও নিজামের। চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে ভেজা চেহারায় হাত বুলালো নিজাম। মাথা ঝারা মারলো বারকয়েক। রাকীন বললো,
-নেশা কেটেছে?
…
-অফিসে রাত আড়াইটায় এসে তুই রাষলীলা বসাতে চাইবি,বাবার তিলতিল করে গড়া এই ইনিশায় অপবাদ লাগানোর ধান্দা খুজবি,আমি থাকতে তা কি করে হতে দেই বল? চলে এলাম তাই!
-দ্ দেখ ভাই…
-বড়কাকা,কাকী মারা যাওয়ার পর বাবা কোনোদিনও কোনোকিছুর কমতি দেয়নি তোকে নিজাম। ইনিশা’র এতোবড় একটা জায়গায় জায়গা করে নিয়েছিস নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতায়। আজ এতোনিচু চিন্তাটা মাথায় আনতেও লজ্জা করলো না তোর?
নিজাম মাথা নিচু করে চুপ রইলো। ইনিশা তে আজ অবদি রাকীনের অগোচরে হয়নি কিছুই। ছেলেটা এই নতুননতুন জয়েন করা লিখনকেও নখদর্পনে রাখবে,ভেবে দেখেনি ও সেটা। ঘুষিটা বেশ জোরেই দিয়েছে। রাকীন লিখনের দিকে এগিয়ে বললো,
-তুমি কি চাও? ওকে কি শাস্তি দেবো? পুলিশকে বলবো? নাকি রাজীব মাহমুদকে?
-রাজীব কাকাকে কিছু বলিস না রাকীন! আর হবে না কোনোদিন এমন! প্লিজ কিছু বলিস না রাজীব কাকাকে!
তৎক্ষনাৎ রাকীনের পায়ে পরে গিয়ে নিজাম আহাজারির মতো করে বললো। সবে জয়েন করলেও,লিখন জানে রাজীব মাহমুদের শাস্তির ধরন। পুলিশকে বললে যদি মানহানির মামলায় জেল হয়,রাজীব মাহমুদ জানলে ওর ফাসির ব্যবস্থা করে দেবে নির্ঘাত। কোনোকাজে কোনোরুপ অন্যায় সহ্য করতে পারেন না ভদ্রলোক। রাকীন বললো,
-লিখনের পা ধর নিজাম। ওকে বল ও কি চায়।
হুড়মুড়িয়ে লিখনের পা জড়িয়ে ধরলো নিজাম। বললো,
-আমাকে ক্ষমা করে দাও লিখন! মাফ করে দাও প্লিজ! দয়া করো! আর কোনোদিন হবে না এমন! কোনোদিনও না!
লিখন খানিকটা বিমুর্ত। রাকীন বললো,
-নির্ভয়ে বলো লিখন। তুমি কি চাও? আমি বলছি,সেটাই হবে। তোমাকে,তোমার স্ত্রীকে অপমানের জবাব তোমার মনমতোই হবে।
লিখন একটা ছোট শ্বাস ফেলে বললো,
-পা ছাড়ুন স্যার।
-না! আগে বলো তুমি আমাকে…
-ক্ষমা করলাম। সরুন আপনি।
নিজাম সরে গেলো। রাকীন বললো,
-এতো সহজে ছাড় দেওয়াটা কি উচিত হলো তোমার লিখন?
লিখন মৃদ্যু হেসে বললো,
-জ্বী স্যার! কারন আমি চাইনা ওনার কৃতকাজের জন্য রাজীব স্যার এতোটুকো কষ্ট পান,বা অপমানিত হোন। আর বিনিময়ে শুধু আপনি আমাকে কথা দিন,ভবিষ্যতে ইনিশার কোনো সদস্যকে যেনো আমার মতো বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়। আপনি কথা দিলেই এটা সম্ভব,জানি আমি। তাই এটাই চাইলাম। দ্যাটস্ ইট!
লিখনের জবাব শুনে তৃপ্তিতে মাথা উপর নিচ করলো রাকীন। কৃতজ্ঞতাস্বরুপ সুন্দরমতো একটা হাসি দিয়ে,আসছি স্যার বলে বেরিয়ে গেলো লিখন। তারপর নিজামের দিকে তাকালো রাকীন। বললো,
-কি কি ডকুমেন্টস্ পুড়িয়েছিস?
গরগর করে পুরোটা বলে দিলো নিজাম। সবটা শুনে রাকীন বললো,
-রাফের সফটকপি অবশ্যই তোর কাছে। দ্বিতীয়বার তৈরী করে যাতে লিখন না জমা দিতে পারে। এখানে রাখলে আমার চোখে পরবে। তাই ওগুলো বাসায়ই রেখেছিস। রাইট?
রাকীনের যুক্তি দেখে কিছু সময় থেমে রইলো নিজাম। রাকীন আবারো উত্তর চাইতেই মাথা উপরনিচ করলো ও। রাকীন বললো,
-এই মুহুর্তে বাসায় যাবি তুই। আর বাসায় গিয়ে পুরোটা সেন্ড করবি আমাকে। ওর প্রেজেন্টেশন আমি কভার করবো। আর এই ড্রাংক সিচুয়েশনে তোকে বাবা যেনো না দেখে। গট ইট?
মাথা আরো জোরে নাড়ালো নিজাম। ইশারায় ওকে বেরিয়ে যেতে বললো রাকীন। নিজাম চলে গেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে থাইগ্লাসের জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালো রাকীন। পকেটে দুহাত গুজে তাকিয়ে রইলো রাতের শহরের দিকে। ভাবতে লাগলো ওর অবদানটুকো নিয়ে। এভাবেই নিজের কাজ,অন্যের পরিবর্তে কাজ,অন্যের ভুল শুধরানো নিয়েই চলছে ওর ইনিশার ক্যারিয়ার। কিন্তু বিদেশের সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্জিনিয়ারিং পাশ তো ও শুধু ইনিশার জন্য করে নি! পেশার মাঝে প্যাশনকে কবে খুজে পাবে,আদৌও পাবে কিনা,কে জানে? আলতো করে গ্লাস ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তাতে মাথা ঠেকালো রাকীন। শীতল হাওয়া চেহারায় লাগতেই চোখ বন্ধ করে নিলো ও। ম্যাসেজের শব্দ কানে আসলেও চোখ মেললো না। অনুভব করত লাগলো মাঝরাতের এই স্নিগ্ধ বাতাসকে। আচমকাই মনে হলো,তাতে যেনো কারো গাঢ় প্রশ্বাসসহিত সংবাদ পাঠানো,”অজানা কোনো প্রেমজোয়ারে গা ভাসিয়ে,তোমার প্রেমনোঙরের অপেক্ষায় আছি প্রিয়। বেশি অপেক্ষায় রেখো না! রেখো না খুব বেশি অপেক্ষায়…”
#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে-মিথিলা মাশরেকা
#পর্ব-৪
-সবে কয়েকদিন হলো দেশে ফিরেছো। এখনই রাত দুটো বাজে বাসায় ফিরতে শুরু করেছো ইচ্ছে? এটা বিদেশের তোমার সেই রঙিন পৃথিবী না ,যে যখন খুশি,যেভাবে খুশি চলবে! এখানে রাত দুটো অবদি কোনো ভদ্রঘরের মেয়ে বাসার বাইরে থাকে না! এটা বুঝতে হবে তোমাকে! নেক্সটদিন থেকে সন্ধ্যের আগেই সব ঘোরাঘুরি শেষ করে বাসায় ফিরবে তুমি। বুঝেছো?
বাসায় ঢোকার সময়ই এসব কথা শুনে পা থেমে গেলো ইচ্ছের। কাধে থাকা গিটারের ব্যাগের ফিতা শক্তমুঠোয় ধরলো ও। কথাগুলো শাষন হলে খুশিখুশি মেনে নিতো ও। কিন্তু এ কথাগুলো ওকে কন্ট্রোল করার উদ্দেশ্যে বলা। সেটা বক্তা,ও দুজনেই খুব ভালোমতোন জানে। অন্যসময় হলে এই ভদ্রমহিলার একটাএকটা শব্দের জবাব দিতো ইচ্ছে। কিন্তু আজ কিছু না বলেই পা বাড়াচ্ছিলো ঘরের দিকে। নিজের কথায় কোনো প্রতিত্তর না পেয়ে অবাক হলেন নাফিজা বেগম। তার জানামতে,এই মেয়ে তার কথার জবাব না দিলে দম আটকে মারা পরবে। তবুও আজ জবাব কেনো দিলো না? ইচ্ছের হাতে থাকা গিফটবক্সে নজর গেলো তার। কি এমন আছে ওই বক্সে,যে ইচ্ছে তাকে প্রতিত্তর করলো না? ওই বক্সে কি ইচ্ছের এতো খুশি হওয়ার কিছু থাকতে পারে? তড়িঘরি করে এগিয়ে এসে বললেন,
-তোমাকে কিছু বলেছি ইচ্ছে!
…
-গিয়ে ছিলে তো কনসার্টে। পেমেন্ট চেইকের পরিবর্তে গিফটবক্স নিয়ে ফিরছো। তা কোন ফ্যান কি গিফট করলো তোমাকে,আমিও তো শুনি? রাত দুটো অবদি তাকেই সময় দিয়ে আসলে বুঝি?
এটুকো শুনে সিড়িতে আরেকবার থামলো ইচ্ছে। বেশ বুঝতে পারছে ভদ্রমহিলা অকারন ঝামেলা তৈরী করতে চাইছে। এসব কথায় ইচ্ছে রিয়্যাক্ট করলেই সে নওশাদ সাহেবকে বলতে পারবে,ইচ্ছে বেয়াদবি করেছে তার সাথে। তারপর ওরই বাবা ওকে ভুল বুঝবে। এমনটাই হতো এতোগুলো বছর হলো। বিদেশ থেকে ফেরার পর তা আবার শুরু হয়েছে। তাই এসবে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছে ইচ্ছে। পেছনদিক না তাকিয়ে বললো,
-তোমার এসব ননসেন্স শোনার মুডে আমি এখন নেই এস এম। জবাবের মুডও নেই। রুমে যাচ্ছি। বাকিটা সকালে শুনিয়ে দিও।
ইচ্ছে সিড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। আরেকদফায় অবাক নাফিজা বেগম। আজ এতোগুলো বছরে প্রথমবার ইচ্ছে বললো ওর জবাব দেওয়ার মুড নেই। আবার বললো বাকিটা পরে শুনিয়ে দিতে। মাথায় জট পাকাতে লাগলো বেশকয়েক প্রশ্ন। পা চালিয়ে উনিও নিজের রুমে চলে গেলেন। নওশাদ সাহেব তখন ঘুমে আছন্ন। আস্তেধীরে গিয়ে স্বামীর পাশে শুয়ে পরে হঠাৎই ইচ্ছে বলে চেচিয়ে উঠে বসলেন নাফিজা বেগম। ধরফরিয়ে উঠে বসলেন নওশাদ সাহেব। আবছা আধারে স্ত্রীকে অস্থিরভাবে শ্বাস নিতে দেখে আগে টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলেন। পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কি হলো নাফিজা? ঠিক আছো তো তুমি? কি হয়েছে?
নাফিজা বেগম অস্থিরচিত্তে বললেন,
-ই্ ইচ্ছে!
-হ্যাঁ। কি হয়েছে ইচ্ছের? এমন করছো কেনো তুমি?
-ই্ ইচ্ছেকে নিয়ে আমি বাজে স্বপ্ন দেখিছি নওশাদ! ম্ মেয়েটা এখনো ফিরলো কি না,কে জানে! তোমাকে কতো করে বললাম ওকে যেতে দিও না কনসার্টে। শুনলে না। রাত দুটো বাজে নওশাদ! আমার ভয় হচ্ছে মেয়েটার জন্য!
-আচ্ছা শান্ত হও তুমি। ইচ্ছে ঠিক আছে। তুমি জানো ও কেমন। এভাবেই চলাফেরা করে অভ্যস্ত ও। কিছুই হবে না ওর। রিল্যাক্স।
নওশাদ সাহেব পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন স্ত্রীকে। দুচুমুক খেয়ে গ্লাস সরিয়ে দিলেন নাফিজা বেগম। বললেন,
-কিভাবে পারো তুমি এভাবে থাকতে নওশাদ? আমার তো প্রতিনিয়ত ভয় হয় তোমার মেয়েকে নিয়ে। আর তুমি…
-আমাদের মেয়ে নাফিজা। ইচ্ছে আমাদের মেয়ে।
নাফিজা বেগম থামলেন। মনের মধ্যে থাকা কোনো এক হিংস্র সত্ত্বা যেনো জ্বলে উঠে বলছে,আমার মেয়ে না ও! পেটে ধরিনি ওকে আমি! বরং ওর জন্য যাকে পেটে ধরেছি,সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ইচ্ছেকে কষ্ট দিলেই শান্তি মিলবে সে সত্ত্বার। অন্যকিছুতে না। নাফিজা বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
-হ্যাঁ! আমাদের মেয়ে!
নওশাদ সাহেবও মৃদ্যু হাসলেন। বললেন,
-ওকে নিয়ে এতো ভেবোনা। ঘুমিয়ে পরো। গুড নাইট।
মাথা নেড়ে শুয়ে পরলেন নাফিজা বেগম। স্ত্রীর গায়ে ঠিকঠাকমতো চাদর জরিয়ে দিয়ে নওশাদ সাহেব নিজেও শুয়ে পরলেন। তবে চোখ বন্ধ করতে কষ্ট হচ্ছে নাফিজা বেগমের। এই বাড়ি,গাড়ি,টাকা পয়সা সব অস্বীকার করে,অভিমান করে তার নিজের মেয়েটা চলে গেছে। মনে পরতেই বুকজুড়ে হাহাকার চলে তার। এরমাঝেই গিটারের টুংটাং। টের পেলেন,প্রতিরাতের মতো আজও পাশেই নিজের ঘরের ব্যালকনিতে বসেছে ইচ্ছে। বাবাকে জানান দিচ্ছে,বাসায় এসেছে সে। বালিশ খামচে রইলেন নাফিজা বেগম। তার নিরব আহাজারিতে এই গিটারের সুর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ছাড়া আর কিছুই নয়!
ইচ্ছে ব্যালকনির দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কোলে গিটারটা নিয়ে বসেছে। গিটারে কোনো এক সুর তুলতে তুলতে,একধ্যানে তাকিয়ে আছে পাশের দেয়ালের দিকে। ওখানে ওর ভাঙা গিটারের প্রতিটা টুকরা অতিযত্মে লাগানো। এমনভাবে সাজিয়ে লাগিয়েছে,তাতে ‘মা’ শব্দটা স্পষ্টতর। ভাঙা গিটারের তারটা একটা বেশ পুরনো পেন্সিলে পেচিয়ে পাশেই ঝুলিয়ে দিয়েছে। একটা সাদা ওড়না গিট দেওয়া পাশের বেতের দোলনায়। ইচ্ছের মাথার উপর আকাশ ভর্তি তারা ঝিকিমিকি করছে। সামনে থাকা রাতের শহরও মিটমিট আলোতে সজ্জিত। কোনোদিকে চোখ গেলো না ইচ্ছের। মৃদ্যু বাতাসে সাদা জর্জেটের ওড়নাটা উড়ে এসে গালে লাগতেই চোখ আবেশে বন্ধ করে নিলো ইচ্ছে। গাইতে লাগলো,
Will you ever come and find me(ii)
Will you ever be mine?
Need you now,oh hold me closer(ii)
Stop the wheels of time…
When I,close my eyes
You’re here, by my side(ii)
All I ever really need is your love
Nothing I could say would ever be enough
Stay a little longer with me,hmm hmm
Won’t stay a little longer with me?
Just stay a little longer with me,hmmm
Won’t stay a little longer with me…
চোখের কোনা বেয়ে জল গরালো ইচ্ছের। গিটারের সুর ছেড়ে ফুপিয়ে কেদে বলে উঠলো,
-মা…
হুহু করে কাদতে লাগলো ইচ্ছে। পেছন থেকে কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে কান্না হিচকিতে পরিনত হলো ওর। নওশাদ সাহেব এসে ওর পাশে বাবু হয়ে বসলেন। ইচ্ছের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। ইচ্ছে নিজেকে সামলে নিতে লাগলো আস্তে আস্তে। কান্না শেষ করে শুধু নাক টানতে লাগলো একসময়। নওশাদ সাহেব অসহায়ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলেন এতোক্ষন। একসময় বলে উঠলেন,
-তোর এস এম,তোর স্টেপ মম কেনো তোর মা হতে পারে না ইচ্ছে? কি দোষ করেছে সে?
ইচ্ছে চোখ তুলে বাবার দিকে তাকালো। কিছুক্ষন নিরবে তাকিয়ে থেকে,উঠে দাড়িয়ে গিটারটা নিয়ে ঘরের এককোনে দেয়ালে ঠেস দিয়ে রেখে বললো,
-আই উইশ,তোমাকে বুঝাতে পারতাম বাবা।
-ইচ্ছে…
-ঘুমোও গিয়ে। একা থাকতে চাই।
-মা রে….
ইচ্ছে হেডফোন কানে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসলো। নওশাদ সাহেব বুঝলেন,তার বলা আর একটা বর্নও কানে তুলবে না ইচ্ছে। চুপচাপ বেরিয়ে আসলেন ঘর থেকে। বাবা বেরিয়ে গেলে কান থেকে হেডফোন নামিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে কান্না সংবরন করলো ইচ্ছে। ফলে রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লাগলো আবারো। মায়ের রেখে যাওয়া শেষ চিহ্নটা একটা রাস্তার গ্যাংস্টার এসে এক মুহুর্তে শেষ করে দিলো! মনেমনে একপ্রকার প্রতিজ্ঞা করে বসলো ইচ্ছে,এই প্রাপ্ত নামের মানুষটাকে অপ্রাপ্তির যন্ত্রনায় নিঃশেষ করে দিয়ে,তবেই থামবে ও! তার আগে নয়!
•
খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বইয়ে মুখ গুজে বসে আছেন সাদিক সাহেব। বয়স,দৈহিক গঠন সবদিক দিয়ে বেশ আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব এই পঞ্চাশোর্ধ মানুষটার। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তিনি। ভার্সিটিতে তার গুরুগম্ভীর রুপেই সবাই পরিচিত। কিন্তু বাসায় সে তার ছেলেমেয়ের কাছে এক বটের ছায়া! বৃহৎ আদরবলয়! তার পাশেই পেট চেপে ধরে বসে আছে পিয়ালী। সামনে এসএসসি পরীক্ষা বলে বেশ অনেকরাত অবদিই জেগে পড়তে হয়েছে ওকে। কোথায় খেয়েদেয়ে সুখের একটা ঘুম দেবে,তা না এক নবাবপুত্তুরের জন্য বসেবসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে। অবশ্য কেউ জোর করেনি অপেক্ষা করতে। সাদিক সাহেব চশমার উপর দিয়ে চোখ তুলে তাকালেন মেয়ের দিকে। ওর বেহাল দশা দেখে আবারো বইয়ে মন দিয়ে বললেন,
-খেয়ে নিলেই তো পারো।
-তুমিও তো খেয়ে নিলেই পারো।
-খেয়ে ঘুমোতে যাও পিয়ালী। অনেক রাত হয়েছে। এভাবে থাকলে,খুদা,নির্ঘুমে অসুখ করবে।
-সেইম টু ইউ। আমার খিদে নেই। ঘুমও পায়নি। অসুখও হবে না।
শব্দ করে বইটা টেবিলে রাখলেন সাদিক সাহেব। পিয়ালী নির্ভয়ে,শান্তদৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো। সাদিক সাহেব বেশ রাগী গলায় বললেন,
-আজকে আসুক এই ছেলে! আজকে তার একদিন কি আমার একদিন!
পিয়ালী বিরক্তি নিয়ে মাথা খাবার টেবিলে ঠেকালো। ছেলে বাড়ি ফেরার আগে এই আগ্নেয়গিরির মতো রাগ,আর ঘরে ঢুকলেই আইসক্রিমের মতো গলে যাওয়াটা সাদিক সাহেবের অভ্যাস। এরমাঝেই শার্টের কলারের কাছের বোতাম একহাতে খুলতে খুলতে ধীরস্থিরে বাসায় ঢুকলো প্রাপ্ত। সাদিক সাহেব ওর ঘর্মাক্ত চেহারা দেখেই সবেমাত্র বলা কথাটা ভুলে গেলেন যেনো। এগিয়ে গিয়ে নরম গলায় বললেন,
-কিরে বাবা? এভাবে ঘেমেছিস কেনো? হেটে আসলি? বাইক নিয়ে যাসনি?
বাবার স্বর শুনে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রেখেই হাসলো পিয়ালী। সব রাগ হাওয়া ওর বাবার। মাথা না তুলে বললো,
-তোমার ছেলের গায়ের ঘামগুলো বোতলজাত করে রাখো বাবা! কতো মুল্যবান সেগুলো! প্রফেসর সাদিকের রাগকে গলিয়ে দেয় বলে কথা!
প্রাপ্ত একপলক বোনের দিকে তাকিয়ে বাবাকে হতাশভাবে বললো,
-খেয়ে নিলেই পারো বাবা।
কিছুটা অন্যদৃষ্টিতে তাকালেন সাদিক সাহেব। পিয়ালীর সাথে দুষ্টুমি না করে প্রাপ্ত আজকে এভাবে কথা বলছে দেখেই কিছুটা অন্যরকম লাগলো তার। বললেন,
-কোনোদিনও খেয়েছি? যে আজ খাবো? কিন্তু তোর চোখমুখ এমন কেনো দেখাচ্ছে? কি হয়েছে প্রাপ্ত?
-এবার আমি খিদেয় মরেই যাবো বাবা! ছেলের উপর পরে স্নেহবর্ষন করিও! আগে খেতে দাও!
প্রাপ্ত বাবাকে ইশারায় বসতে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। একটা অফ হোয়াইট টিশার্ট আর নেভি ব্লু ট্রাউজার পরে নিলো। রুম থেকে বেরিয়ে দেখে বাবা,বোন খেতে বসে গেছে। সাদিক সাহেব পিয়ালীকে খাইয়ে দিচ্ছেন। প্রাপ্তকে দেখে উনি খাবার মাখাতে মাখাতে বললেন,
-আজকে লাউ চিংড়িটা খুব মজা হয়েছে। তাইনা পিয়ালী?
-ইয়াপ!
ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে পাশের চেয়ার টেনে বসে গেলো প্রাপ্ত। সাদিক সাহেব পরের লোকমা ওর মুখে তুলে দিয়ে বললেন,
-দেখতো খেয়ে! রুই আর ডালও রেধেছি। তবে আগে এটা টেস্ট কর!
প্রাপ্ত তৃপ্তি নিয়ে খেতে খেতে বললো,
-আপনি অধ্যাপনা ছেড়ে সাদিকস্ কিচেন খুলে বসুন জনাব! ইটস্ ইয়ামিয়েস্ট!
সাদিক সাহেব ভাব নিয়ে হেসে বললেন,
-দেখতে হবে তো! বাপটা কার!
-ইয়াহ্! পিয়ালীর বাবা বলে কথা!
পিয়ালীর মাথায় চাটি লাগালো প্রাপ্ত। বললো,
-কিচেনে গেছিস কোনোদিন? এসেছে শেইফ সাজতে! বাবা কথাটা দিয়ে প্রাপ্তর বাবা বুঝিয়েছে!
-এসেছে ক্রেডিট নিতে! আর রইলো কথা কিচেনে যাওয়ার? আমি কেনো যাবো কিচেনে? এখন তো বাবা খাওয়াচ্ছে। তুই তো কোনোদিন খাওয়াবি না রেধে। তবে ভাবি আসুক! সব উশুল করে নেবো!
-কিন্তু পিয়ালী,তোর ভাবি যদি রান্না না জানা কোনো মেম হয়? তখন?
হেসে দিলো পিয়ালী। সাথে সাদিক সাহেবও। কিন্তু বাবার কথা শুনে খাবার চিবোতে থাকা মুখ আপনাআপনি থেমে গেলো প্রাপ্তর। পিয়ালীর সাথে করা দুষ্টুমির হাসিটাও নেই আর ওর ঠোটে। মুহুর্তেই ইচ্ছের চেহারা ভেসে উঠেছে ওর সামনে। গ্লাসের পানি শেষ করে কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো,
-আর খাবো না বাবা। ঘুম পেয়েছে।
পিয়ালী,সাদিক সাহেব দুজনেই বুঝলো প্রাপ্তর মনে এই মেমসাহেবের উল্টো প্রতিচ্ছবি আকা। তাই এই আলোচনা পছন্দ হয়নি ওর। সাদিক সাহেব বললেন,
-ডোন্ট ওয়ারী প্রাপ্ত,আমি এটলিস্ট তোমার অপছন্দের কাউকে বউমা করে আনার জন্য কোনোদিন বলবো না তোমাকে!
প্রাপ্ত মুচকি হেসে বললো,
-জানি বাবা!
সাদিক সাহেব হাত ধুয়ে উঠে দাড়ালেন। তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে বললেন,
-দেন? নিজেকে বুঝতে শেখো। তাতেই হবে। আর দুদিন পর ডিপার্টমেন্ট থেকে ট্যুরে যাচ্ছি। সোলার এনার্জী নিয়ে আলাদা কিছু করার প্লান আছে আমাদের। গ্রামের নাম ভাদুলগাঁও। একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায়। তোমাদের ছেড়ে প্রথমবার এতোদুর যাবো। কিভাবে থাকবো জানিনা,তবে ইটস্ আ মাস্ট প্রাপ্ত!
বাবার কথায় মন খারাপ করে ফেললো পিয়ালী। কিন্তু প্রাপ্ত মাথা নেড়ে আশ্বস্ত করলো বাবাকে। বাবা ছাড়া ওরা দুজনই অসম্পুর্ন। তবু কিছুই করারও নেই। সবাই নিজনিজ ঘরে চলে গেলো। রুমে ঢুকে প্রাপ্ত চিৎ হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়। মনটা হঠাৎই এলোমেলো লাগছে ওর। অস্থির লাগছে অকারনে। সারাদিনে যা যা ঘটেছে,সবকিছুর সাথে অপরিচিত ও। জীবনের নতুন ঘটনাগুলো বড় অদ্ভুত! আর তারচেয়ে বড় কথা,যা কিছু নতুন,যা কিছু প্রথমবার ঘটে,নিয়তি তাতে অবশ্য অবশ্যই ব্যতিক্রম কিছু লিখে রাখে যে!
#চলবে…
#চলবে…
! ❤ ]