#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_৭
____
আজ পহেলা ফাল্গুন,,,কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।গতকাল’ই কিয়ারা আপুরা ফিরে যাবে।তাই আজকে সে বায়না ধরেছে নিজেকে ফাল্গুনে’র সাজে সজ্জিত করে ঘুরতে যাবে। আপু ডিসাইডেট করেছে আজকে শাড়ি পড়বে সাথে আমাকে আর টায়রাকে ও শাড়ি পড়তে হবে।আমিতো মহা খু’শি,,কিন্তু মা আমাকে জীবনেও শাড়ি পড়তে দিবে না।তাই কিয়ারা আপু মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করিয়ে নিল।
_____
বর্তমানে আমি আর টায়রা আছি কিয়ারা আপুর রুমে, শাড়ি পড়তে এসেছি। কিয়ারা আপু রুমে নেই, আদিব ভাইয়ার রুমে গেছে ভাইয়াকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলতে,,সাথে রায়ায ভাইয়াকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে!
তখন থেকে বসে বসে আপুর জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু আপুর আসার নামগন্ধ নেই।কিছুক্ষন পর আপু ফিরে এসে নাচতে লাগলেন আর একটু পর পর মুখে হাত দিয়ে ল’জ্জা পাওয়ার মত করে রিয়েকশন দিচ্ছে।আপুর এসব অ্যাক্টিং দেখে আর সইতে না পে’রে জিজ্ঞেস করে’ই ফেললাম,
— কি হয়ে’ছে আপু? তুমি এমন করছো কেনো? আর তোমাকে বেশ খুশি খুশিও লাগছে! ব্যাপার কি?
আপু আমার কথা শুনে দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ল’জ্জামাখা কণ্ঠে বলতে লাগল,
— অবশেষে ভাইয়া রায়ায ভাইয়াকে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পেরেছে।
— হ্যা এটাতো খু’শির ব্যপার! কিন্তু তুমি এত ল’জ্জা পাচ্ছো কেনো?
— বারেহ! লজ্জা পাবো নাহ?আজকে প্রথমবার আমি রায়ায ভাই’য়ার সামনে শাড়ি পড়বো।আর উনি আমাকে দু’চোখ ভরে দেখবে।কথাটা বিড়বিড় করে বলল কিয়ারা আপু, কিন্তু আমি শুনে নিলাম।
আপু ভাইয়া’কে দেখানোর জন্য শাড়ি পর’বে? এই’রে! আপু কি আবার রায়ায ভাইয়াকে ভালো-টালো বাসে নাকি? চিন্তায় আমার কপালে ভাঁজ পড়ল, সাথে ভীষন রাগ ও লাগছে।
টায়রা আমাকে খোঁচা মেরে বলতে লাগল,
— বেলারে! আপু মনে হয় ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেলে।
— তো তুইও তো কম না।তুইও ওনার ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছিস সমান সমান।বলেই মুখ ভেংচি দিলাম।
আমার কথা শুনে টায়রাও লজ্জায় নুই’য়ে গেল আর বলতে লাগল,
— আমাকেও আজ আদিব ভাইয়া প্রথমবার শাড়ি পড়’তে দেখবে’।
এদের দুজনের ন্যাকামো সত্যিই আর নেয়া যাচ্ছে না’হ।তাই আর না পেরে বলে উঠলাম,
— তোমরা কি থামবে? আর রেডি হবে কখন এখন ঘড়িতে প্রায় তিনটা বা’জে।
আমার কথা শুনে এবার কিয়ারা আপুর হুশ এলো আর বলতে লাগল,
— তাই’তো চল চল তোরা দুজন এদিকে আয় আমি তোদের আগে শাড়ি পরিয়ে রেডি করে দেই।
কথাটা বলে আমাকে আর টায়রাকে রেডি করিয়ে দিয়ে আপু নিজে রেডি হতে বসে গেল।
____
নিজেকে আয়নায় দেখে চলছি সেই তখন থেকে।আজ যেন আমাকে বেশ অন্য’রকম লাগছে।শাড়ি পড়াতে বয়সটা যেমন হুট করে’ই বেড়ে গেল!হলুদ জমিনের লাল পাড়ের শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে’ছি আমি।ঠোঁ’টে লাগিয়েছি লাল লিপস্টিক, হাতে পড়েছি মুঠো মুঠো লাল রঙের কাঁচের চুড়ি, খোঁপায় বেলি ফুলের মালা দিয়ে সামনের দিকে চুল কার্ল করে ফেলে রেখেছি, কানে বড় বড় ঝুমকো আর হালকা মেকাপ ব্যাস।আজ যেমন এক ন’তুন আমি। কিয়ারা আপু আর টায়রা সবাই একই শাড়ি পড়েছি সাথে একই সাজ।
আমি আর টায়রা নিচে নামছি।টায়রা’তো লজ্জায় শেষ! এতো লজ্জায় কি আছে বুঝ’লাম না।তাই একটা খোঁচা মেরে বললাম,
— তুই কি তোর এই ঢং থামাবি এবার? নাকি দিব এক চ’ড়।
চড়ের কথা শুনে বেচারি মুখ ঝুলিয়ে রইল, আর আমি মিটিমিটি হাসতে লাগলাম।
গাড়ির সামনে তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে রায়ায আর আদিব।রায়ায আর সইতে না পেরে বলেই ফেলল,
— এজন্যই আমি মেয়েদের কোনো বিষয়ে জ’ড়াতে চাই না। তোর যাওয়ার হলে তুই যে’তি, আমাকে কেনো
জড়া’লি এই সবে ব্যাটা?
কথাটা বলে রায়ায সামনের দিকে তাকালো, আর তাকিয়ে’ই যেন নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলো!রায়াযের চোখ আট’কে গেল বেলা নামক কিশোরীতৈ।আজ প্রথম বেলাকে শাড়িতে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না রায়ায,,গভীর নয়নে তাকিয়ে রইল পনেরো বছর বয়সী কিশোরী’র দিকে।চো’খ ফেরানো যেন দায় হয়ে পড়েছে রায়াযের কাছে।
সামনের দিকে রায়াযকে এক-ধ্যানে তাকিয়ে থাক’তে দেখে আদিব রায়াযকে অনুসরণ করে সেই দিকে তাকা’য় আর সাথে সাথে তার দুচোখ আটকে যায় বেলা’তে। আদিবের সবকিছু কেমন ঘুর’তে লাগল।চোখ যেন ফেরাতে চেয়েও পার’ছে না।তার সাতাশ বছর জীবনে এই প্রথ’ম তার সাথে এমন ঘটনা ঘটছে। সে যেন ঘো’রের মধ্যে আছে।
তখনই ভাইয়া ভাইয়া ডাক শুনে দুজনে’র ধ্যান ভাঙলো।রায়ায সাথে সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো।আর আদিব নিজের চোখ নামিয়ে নিল।
— এই ভাইয়া সেই কখন থেকে তোদের দুজন’কে ডেকে চলছি, আর তোরা ‘হা’করে কোথায় তাকিয়েছিলি?
কিয়ারা আপুর কথা শুনে আদিব গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন,
— বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠ, এমনিতে’ই অনেক অপেক্ষা করিয়ে’ছিস।
কথাটা বলে একপলক বেলার দিকে তাকি’য়ে গাড়িতে ওঠে রায়াযের পাশে বসে পড়ল।পিছনে আমরা তিনজন বসে পড়লাম।রায়ায ভাই ড্রাইভ করছে আর আদিব ভাইয়া চোখের উপর হাত দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।
___
গাড়িটা একটা মেলা’র সামনে এসে থাকল। ফাল্গুন উপলক্ষে মেলা হবে সেই খবরটা আমিই কিয়ারা আপুকে দিয়ে’ছি। তাই আপুর কথা’তে রায়ায ভাই মেলায় নিয়ে এলেন যাক এক ঢিলে দুই পাখি।গাড়ি থেকে নেমে আমরা ছুটলাম মেলার দি’কে আর আমাদের পিছন পিছন বডিগা’র্ডের মত ছুট’ছে এঁরা দুজ’ন। সামনে আমরা তিন মহা’রাণী আর আমাদের পিছনে আমাদের দুই বডিগার্ড,, ভেবেই নিজে’কে বড্ড স্পে’শাল লাগছে।এতক্ষন আমরা তিনজন এসব বলছিলাম আর হাসাহাসি করছি’লাম।তখনই পিছন থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ শুন’তে পেলাম,
— পাবলি’ক প্লেসে এতো হাসাহাসি কিসের? মুখ বন্ধ রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকো।
রায়ায ভাইয়ার এমন গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আমরা আর কিছু বলতে পারলাম না।চুপ করে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম।
হঠাৎ করে আমার চুড়ির দোকানে’র দিকে চোখ পরাতে আমি সেদিকে দৌড় লাগাই, আমার দৌ’ড় দেখে টায়রাও দৌড় লাগায়! টায়রার সাথে আপু।চুড়ির দোকানের সামনে এসে আমরা সবাই চুড়ি দেখতে থাকি।তখনই রায়ায ভাইয়ার ধমক শুনে কেঁপে উঠি,
— সমস্যা কি তোর বেলা এভাবে দৌড় দিলি কেন?আর কিয়ারা তুমি ও কি এই দুইটার মত মাথামো’টা হয়ে গেলে?
কিয়ারা আপু অ মাথা নিচু করে বলতে লাগল,
— সরি ভাইয়া।
এবার রায়ায ভাইয়া টায়রার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
— তোকে কিছু বলছিনা বলে কি বা’গে পেয়ে বসেছিস? আদরে বাঁদর হয়েছিস!
টায়রা ভয়ে আর কিছু বলতে পারল না, মাথা নিচু করে রইল।
আদিব ভাইয়া এবার রায়ায ভাইয়াকে শান্ত করতে বলতে লাগলেন,
— রায়ায হয়েছে আর বকিস না ! তাছাড়া ওরা এখন ছোট,,,ইকটা-আকটু মজা করবেই। এখন এভাবে বকে ওদের মুড নষ্ট করি’স না। যাও তোমরা কেনাকা’টা শুরু করো।
আদিব ভাইয়ার কথা শুনে আমরা সবাই নিজেদের মতো এটা সেটা দেখতে লাগলাম1হঠাৎ করে আদিব ভাইয়া আমার হাতে এক ডালা চুড়ি ধরিয়ে দিল।এতে আমি একটু অবাক হই।কিন্তু পরবর্তীতে কিয়ারা আপু আমার হাতে চুড়ির ডালা দে’খে আদিব ভাইয়াকে বলতে লাগল,
— এই ভাইয়া ওকে একাই কিনে দিলি? আমাদের ও কিনে দে বলছি ভাইয়া!
আদিব ভাইয়া হেসে টায়রা আর কিয়ারা আপু দুজনের হতে দুটো চুড়ির ডালা দিয়ে বলল,
— তোদের জন্য ও নিতাম, কিন্তু তার সুযোগ আর তুই দিলি কোথায়? কুরি বুড়ি।
কিয়ারা আপু আদিব ভাইয়াকে একটা ভেংচি কেটে দিল।অপরদিকে টায়রা আমাকে খোঁচা দিয়ে বলতে লাগল,
— দেখ বেলা আদিব ভাইয়া আমাকেও আস্ত একটা চুড়ির ডালা কিনে দিল।
আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,
— হ্যা ‘তো এখন কি আমাদের সবাইকে তোর সাথে নাচতে হবে?
— নাচতে যাবি কেন? আরে বুঝতে পারছিস না কেন? এটা আমার প্রেমিক পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম উপহার!
তাই’তো! একবারও তো এটা ভেবে দেখলাম না।অতঃপর মাথায় একটা আইডিয়া খেলে গেল।তাই টায়রা আর কিয়ারা আপু দুজনকেই খোঁচা মেরে ফিসফি’সিয়ে বলতে লাগলাম,
— দেখলে আপু আদিব ভাইয়া কি সুন্দর আমাদের সবাই’কে চুড়ির ডালা কিনে দিল। কিন্তু রায়ায ভাই একটা সুতো পর্যন্ত দিল না। কিরে টায়রা তোর ভাই এতো কিপ্টে কেন?আমার সাথে কিয়ারা আপু ‘হ্যা’ এ ‘হ্যা’ মিলাতে লাগল।
টায়রা আমাদের মুখে নিজের ভাইয়ের বদনাম শুয়ে রে’গে বোম।আমি ভালো করেই জানতাম, রায়ায ভাইয়াকে নিয়ে কিছু বললেই ও রেগে আলু হয়ে যায়।ভাইকে খুব ভালোবাসে মেয়েটা, তাই ঠিক জায়গায় তী’র মারলাম।
— বেশি কথা বলবি না কিন্তু বে’লা। ভাইয়া মোটেও কিপ্টে না,,দাঁড়া।
কথাটা বলেই টায়রা রায়ায ভাইয়ার সামনে দাঁড়িতে কাচুমাচু করছিল।টায়রাকে দেখে রায়ায মুখ থেকে সিগা’রেটটা ফেলে বোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
— কি হয়েছে কিছু বলবি?
— ভাইয়া তুমি আমাদের কিছু কিনে দিবে না?
বোনের কথাটা শু’নে রায়ায বাঁজ পাখির ন্যায় একবার বেলার দিকে তাকাল, বেলা রায়াযের দিকেই তাকিয়ে ছিল।নিজের দিকে রায়াযের এমন চাহ’নি দেখে ঘাবড়ে গেল আর মনে মনে বলতে লাগল,
– এই রে! নিশ্চয়ই বুঝে গেলে এগুলো আমার কাজ!
নিজের চোখ ফিরিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল রায়ায,,বোনকে বলতে লাগল,
— আমার সাথে আয়।
চলবে ইনশাল্লাহ,,,#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_৮
ভাইয়া একেরপর এক এটা-সেটা ধরিয়ে দিচ্ছে হাতে!আমার ভুল ছিল টায়রা’কে রাগা’নো। এখন এর শাস্তি আমিই ভোগ করছি!
“ভাইয়া তখন শাড়ির দোকান থেকে আমাদের সবাই’কে দুটো করে শাড়ি কিনে দেন।কিন্তু সব গুলো ব্যাগ আমার হাতে ধরি’য়ে দেন।।কাউকে দিতেও পারছি না।ভাইকা বলেছে, ব্যাগগুলো যেন কেবল আমার হাতে থাকে।কারও হাতে গেলে খবর আছে! তাই ভয়ে করো হাতে দিচ্ছিনা।নিজেই বহন করে চলছি।আদিব ভাইয়া অনেকবার নিতে চাইছিল, আমিও খুশি মনে যেই দিতে যাবো অম’নি ভাইয়ার চো’খ রাঙানো দেখে আবার আদিব ভাইয়াকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি”
বর্তমানে আমার অবস্থা কাহিল।আমার পক্ষে এসব উঠানো আর সম্ভব হচ্ছে না।কিন্তু রায়ায ভাইয়াকে দেখ? সেই তখন থেকে এটা সেটা কিনে দিচ্ছে।পারলে মেলা*টা তুলে আমার কোলে দিয়ে দিয়ে, বলতে লাগেবে,
— যা এটা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় যা! আর জীবনে বলবি আমাকে কি’প্টে।
ভয়ে আমার জা’ন যাওয়ার উপক্রম! আমি আর না পেরে বলেই উঠলাম,
— ভাইয়া অনেক হয়েছে! আমাদের আর কিছু লাগবে না, তাই না আপু। কিরে টায়রা বল? ( টায়রাকে দিলাম এক চোখ রাঙানি)
— ভাইয়া আর কিছু লাগবে না, অনেক হয়েছে।
কিয়ারা আপু পূনরায় বলতে লাগল,
— কিছু ব্যাগ এবার আমাকে দে।অনেক’তো একা একা বহন করলি!
রায়ায রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে,
— আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না,, ব্যাগ বেলা’ই বহন করবে।
অতঃপর আপু আর কিছু বলল না।কিন্তু আমি আর সইতে পারছি না! কোথাও একটা বসা দরকার।কিন্তু ভাইয়াকে বললে ভাইয়া পুরো মেলা আরো দশ চক্কর কাটবে, যা ঘাড় ত্যাড়া! তাই কৌশলে খাটিয়ে বললাম,
— ভাইয়া তখন থেকে ঘুরেই চলছি। তাই আমাদের সবার এখন খুব ক্ষুধা লেগেছে। কিরে টায়রা, আপু তাইনা?
তারা দুজন আমার সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠল,
— হ্যা।
অতঃপর ভাইয়া আমাদের ফুচকা স্টলে নিয়ে গেল।
___
একেরপর এক ফুচকার প্লেট আমার হাতে দেওয়া হচ্ছে! আর আমি খেয়েই চলছি।কিন্তু আর পারছি না।তাই এবার ভাইয়াকে অনুরোধ সুরে বললাম,
— ভাইয়া মাফ চাই।আমার শিক্ষা হয়েছে, আমি আর কোনদিন আপনার সাথে লাগতে আসব না।
ভাইয়া আমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে নিজের বাক্য তুলে ধরলেন,
— আর কোনদিন বলবি আমাকে কিপ্টে?
আমি মাথা নেড়ে বোঝালাম জীবনে আর না।অতঃপর আমার জন্মের মেলা ঘুরা হয়ে গেল।তাই এবার বাড়ির দিকে প্রস্থান করতে চাই।তাই বলে উঠলাম,
— আমার পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব না! বাড়িতে যেতে চাই আপাদত।
আমার কথায় বাকি সবাই সায় জানালো।পেট নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে খুব, যা খাওয়া খাইয়েছে। বাপরে!তাই সত্বর বাড়ি ফেরা আবশ্যকতা
—
বাড়ি ফিরেছি সেই কখন,, অগুনতি ব্যথা পেটে অনুভব হওয়ায় চুপটি করে শুয়ে রয়েছি।রাত এখন প্রায় এগারোটা বেজে দশ মিনিট। তখনই টায়রা এল রুমে, এসে বলতে লাগল,
— বেলা চল ছাদে যাই।
— এখন ভালো লাগছে না, তুই যা।
— চল’তো ।বলেই আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
ছাদের সিড়িতে এসে টায়রা বলল,
— তুই যা আমি আসছি,,উপরে কিয়ারা আপু আছে ভাইয়ারা ও আছে টিনা-মিনা ও আছে।আমি বরং যুথিকে দিয়ে কিছু বানিয়ে ওকে সাথে নিয়ে আসি।
আমি ঘাড় কাৎ করে সায় জানিয়ে পা বাড়াই সামনের দিকে।ছাদে এসে কাউকে না পেয়ে যেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম,অমনি কেউ পিছন থেকে আমার দুচো’খ একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল।ভয়ে আমি যেই চিৎকার দিব সহসা আমায় নিজের কোলে তুলে নিলেন কেউ।ভয়ে আমি আগন্তুক ব্যক্তির বক্ষের দিকের কাপড় টেনে ধরলাম আর বার বার বলতে লাগলাম,
— কে আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? নামা’ন বলছি!কিন্তু সে আমাকে কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগল।
__
আগন্তুক আমাকে আলগোছে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। আমি তখন থেকে চিৎকার করে জানতে চাইছি,
— কে আপনি! কথা কেন বলছেন না?
অগন্তুক আমার কথার জবাব না দিয়ে সহসা আমার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল।অতঃপর আমার অধমাঙ্গ নিজের পায়ের ঊর্ধ্বভাগে রাখলেন। তার এমন কাজে আমি ইষৎ কেঁপে উঠলাম,
— কি করছেন কি? আমার পা ধরেছেন কেনো আপনি? ছাড়ুন বলছি।
কিন্তু সেই অগন্তুক আমার কথার জবাব না দিয়ে আমার বাঁ অধমাঙ্গে একখা’না নূপুর জড়িয়ে দিয়ে! আমার অধমাঙ্গে নিজের ওষ্ঠের উষ্ণ ছোঁয়া এঁকে দিলেন।মৃগী রোগীর মত আমার দেহ কম্পন দিতে লাগল।।যখন তার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করলাম সহসা নিজের চোখের উপর থেকে কাপড়টা টেনে খুলে নিলাম।
একি আমি বাগানে কি করছি! ঈষৎ কেপে উঠে আমি ভিতরের দিকে দৌড় লাগালাম।দরজা খোলা! আমি দৌড়ে ড্রইংরুমে গিয়ে হাঁপাতে লাগলাম,,, ডান পাশের সোফায় দিকে আঁখি ঘোরাতেই চম’কে উঠলাম। একি! আদিব ভাইয়া এখানে কি করছে! আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা পেয়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।ভাইয়া আমাকে দেখে একগাল হাসি উপহার দিয়ে বলতে লাগলেন,
— একি বেলা তুমি এখানে কি করছো?
উনার দিকে তাকিয়ে আমি কেঁপে কেঁপে বলে উঠলাম,
— আপনি এখানে কি করছেন ভাইয়া? আর কখন থেকে এখানে বসে আছেন?
— আমি তো সবে মাত্র এখানে এলাম। কেনো বলতো?
এতে যেন আমি আরো চমকে উঠে ভাইয়ার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আমার এমন দৃষ্টি দেখে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলতে লাগলেন,
— কি হয়েছে বে’লা? এমন ভয় পাচ্ছো কেনো? সবাইতো ছাদে তুমি এখানে কেনো?
ভাইয়ার এমেন কথা শুনে আমার ভয় যেন আরো তরতর’ করে বেড়ে গেল।
চলবে ইনশাল্লাহ,,,#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_৯
__
অদৃশ্য ভয়ে বেলার সর্বসত্তা বারং’বার কেঁপে কেঁপে উঠছে।
কে ছিল তখন? এসব ভাবনায় মত্ত বেলার মস্তিষ্ক তখনই মৃদু ধাক্কা দিয়ে বেলাকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনে আদিব। সহসা ধাক্কায় ঈষৎ কেপে উঠে আদিবের দিকে তাকিয়ে নিজের ওষ্ঠ নেড়ে বলতে লাগে,
— সবাই না উপরে? তাহলে আপনি এখানে কি করছেন।
— ছাদে নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না। তাই হাঁটতে হাঁটতে নিচে নেমে এলাম, ইম্পর্টেন্ট কল ছিল তো তাই ধরতেই হলো। চলো উপরে যাওয়া যাক।
— টায়রা কোথায়? ও কি উপরে?
— হ্যা সবে মাত্র উপরে গিয়েছে হয়তো।
— ওহ ।
কথাটা বলে সমান তালে অধমাঙ্গ মিলিয়ে ব্যগ্র পায়ে উপরে উঠলাম দুজন।সিড়িতে দেখা হয়ে গেল টায়রার সাথে। সহসা নিজ চিত্তের বাক্য ব্যক্ত করেন,
— কোথায় ছিলি তুই? তোকে উপরে এসে পেলাম না।তাই খুঁজতে পা বাড়ালাম এমনি তুই এসে উপস্থিত।
আমার শ্রুতিপথে নিজ ওষ্ঠ এনে বলতে লাগলেন,
— আদিব ভাইয়া তোর সাথে কেনো? কোথায় ছিলি এতক্ষন বল!
কথাটা কর্নগোচর হতেই, কিছু বলতে নিব।তখনই আদিব ভাইয়া নিজ বাক্য জ্ঞাপন করলেন,
— ফিসফিসিয়ে কথা পরে হ’বে।আগে উপরে চলো।
অতঃপর পা বাড়িয়ে উপরে চললাম।উপরে এসে সবাই বসে আড্ডায় মেতে উঠলাম।টায়রাকে রায়ায ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে ব্যক্ত করল,
— ভাইয়া আরও পরে আসবে।
অজ্ঞতা উগ্র চিত্তে বসে রইলাম।অকস্মাৎ কিয়ারা আপু বলে উঠে,
— চলো সবাই একটা গেম খেলি।
টায়রা বলে ওঠে,
— কি গেম?
— ট্রুথ এন্ড ডেরায়? টিনা-মিনা, যুথি খেলা বুঝিস তো তোরা?
যুথি বলে উঠে,
— আপু আপনি বুঝায় দেন। তাহলে আমরাও বুঝবো।যুথির সহিত টিনা-মিনা মাথা উপর নিচ নাড়ায়
— ভাইয়া রায়ায ভাইয়ার কতক্ষনে আসে কে জানে? চল আমরা শুরু করি।
অতঃপর আদিব ভাইয়া নিজ ব্রক্ষতালু নেড়ে সায় জানিয়ে নিজেও খেলায় যোগদান করে।
—
একটা বোতল ঘোরাতে ঘোরাতে এসে থামে কিয়ারা আপুর সমীপে।সঙ্গে সঙ্গে আমি চিল্লিয়ে ওঠে ব্যক্ত করতে থাকি,
— কি নিবে আপু ট্রুথ না ডেয়ার?
আপু আপন চিত্তে ভাবনায় বিভোর হয়ে বলে ওঠে,
— ট্রুথ নেই।
আমি সকলকে থামিয়ে দিয়ে বলতে থাকি,
— আমি জিজ্ঞেস করি। আচ্ছা আপু তুমি কাউকে ভালোবাসো?
আপু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে তো একবার আদিব ভাইয়ার দিকে তাকায় অতঃপর মাথা পতিত করে বলে উঠে,
— হ্যা।
সতর্ক আঁখি পল্লব ঝাপটে নিয়ে কিয়ারা আপন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে স্বাভাবিক।সহসা শিথিল কণ্ঠে আদিব বলে উঠে
— ভালোবাসতেই পারিস! এতে এতো ঘাব’ড়ানোর কি আছে।
নিজ ভাইয়ের এমন অদৃঢ় বাক্য কর্নগোচর হতে কিয়ারা কিঞ্চিৎ চমকে ভাইয়ের দিকে তাকায়। আদিব বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,
— ভালোবাসা দোষের না।কিন্তু ভালোবাসলে সঠিক মানুষকে বসতে হবে নতুবা তুমি নিজেই পস্তাবে।
আপু মাথা নেরে সায় জানাল।পূনরায় খেলা আরম্ভ হলো।এবার বোতল ঘুরে এসে পরল আমার সামনে।তখনই কিয়ারা আপু বলে ওঠে,
— এবার আমার পালা চাঁদু! কোথায় যাইবা তুমি?
এইরে!আপু মনে হয় আমাকে একটা বড় সাইজের বাঁশ দিয়ে ছাড়বে।তাই চঞ্চল চিত্তে ভীত নিয়ে বলে উঠলাম,
— আমি ডেয়ার নিলাম।
আমার কথা কর্নপাত হতেই আপু শয়তানি হাসি দিয়ে ব্যক্ত করতে লাগলেন,
— যাহ! খুব বেশি কঠিন না তুই আমার প্রাণপ্রিয় ভাইয়াকে গিয়ে প্রপোজ কর!
আপুর কথা শ্রবণপথ স্পর্শ করতেই ঈষৎ চমকে আপুর দিকে তাকালাম।অতঃপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি নিজেই চমক আঁখিতে চেয়ে আছেন।আমি কিছু বলতে নিব তখনই আপু থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— তাড়াতাড়ি কর। আর শোন বলবি,, I love you, Will you marry me?
একের পর এক চমক প্রদর্শন করেই চলছে কিয়ারা আপু,
— তাড়াতাড়ি যা আর ভাইয়া তুই উঠে দাঁড়া। রুলস ইজ রুলস। সো তাড়াতাড়ি করো। আর তুই বেলা হাঁটু মুড়ে বসে প্রপোজ করবি কিন্তু।
আদিব ভাইয়া এতক্ষনে উঠে দাঁড়িয়েছে,, বোঝায় যাচ্ছে কিয়ারা আপুর উপর ক্ষিপ্ত উনি।
আমি ক্ষীণ পায়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম।উনার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লাম।
__
রায়াযের কাজ সবে শেষ হলে সে উদ্যত হয় ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।ছাদে এসে তার আঁখি জোড়া আটকে যায় আদিব বেলার উপরে।
বেলা আদিবের সমীপে হাঁটু মুড়ে বসে নিজ বাক্য ব্যক্ত করে উঠে,
— I Love You আদিব ভাইয়া,, Will Marry Me.?
ক্ষণিক কালে সকলে হাত তালি দিয়ে উঠল।সহসা এমন দৃশ্য সহ্য হলো না,, তৎক্ষণাৎ স্থান প্রস্থান করে নিজ রুমের দিকে আপন অধমাঙ্গ বাড়িয়ে হেঁটে চলল রায়ায।
কিয়ারা চিৎকার করে উঠে বলতে লাগল,
— জোস হয়েছে মাইরি বেলা,,,, বসে পর পূনরায় খেলা শুরু করি।কিন্তু ভাইয়া রায়ায ভাইয়া এখনো এলো না কেন? তুই ভাইয়াকে ফোন লাগা নয়তো ডেকে আন।
— আচ্ছা দেখছি।
কথাটা বলে আদিব নিজ ফোন থেকে রায়াযের নাম্বারে ডায়াল করে,,কিন্তু ফোন পিক হচ্ছে না।তাই বার কয়েক ফোন লাগানোর পর রয়ায ফোন পিক করে বলে উঠে,
— আর একটাও ফোন দিবি না। ঘুমাবো এখন আমি।
কথাটা বলেই রায়ায ফোন কেটে দেয়।
— কিন্তু… যাহ! দিল তো ফোন কেটে।ব্যাটার আবার কি হলো?
আদিব পুনরায় ফোন লাগলে, ফোন অফ পেয়ে অন্তরালে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সকলকে বলতে লাগে,
— অনেক হয়েছে! এসব খেলা-ধুলা এসব রাখো এখন। যাও সকলে নিজ নিজ রুমে গিয়ে ঘুমাও।রাত প্রায় একটার কাছাকাছি।
অজ্ঞতা সবাই ছাদ প্রস্থান করে নিজ নিজ রুমে ফিরে গেল।
বেলা নিজ রুমে এসে আপন চিত্তে বিড়বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে গেল ।
___
সকালে প্রচুর শোরগোল শুনে ঘুম ভঙ্গ হলো বেলার। হাতে ব্রাশ নিয়ে নিচে নামল। নিচে গিয়ে কাঙ্খিত মানুষগুলোকে পেয়েও গেল।মোটামুটি সকলের উপস্থিতি লক্ষ্য করলেও দেখা মিলন না কেবল রায়াযের।দীর্ঘ এক শ্বাস ত্যাগ করে বেলা ফট করে সকলের সাথে বসে পড়ল। তাকে দেখে আদিব এক অগভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের আঁখির পলক ঝাপটে অন্যথায় চোখ সরিয়ে নিল। বেলা গিয়ে চিল্লিয়ে উঠল,
— এইইইই! কি ব্যাপার তোমরা সবাই এতো সকাল সকাল এখানে কি করছো?তোমরা কখন থেকে এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছ? আমাকে ডাকোনি কেনো?
— মনটা আমার আজ বড্ড খারাপ বেলা।
— কেনো আপু কি হয়েছে তোমার?
কিয়ারা বেলাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিজের ব্যথিত মনোভাব ব্যক্ত করে,
— আজকে চলে যাচ্ছি জানিস না? আবার কবে না করে দেখা হয় কে জানে?
কিয়ারার মুখে সামান্য কিছু বাক্য শ্রবণ হতেই বেলার চিত্ত সহসা বিষিয়ে গেল। হৃদয়ে আঁধার নামিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠল,
— আমার ও মনটা খারাপ হয়ে গেল আপু,, আর কিছুদিন থেকে যাও না!
কথাটা বলে নিজ ব্রক্ষতালু কিয়ারার কাঁধে রাখল। বেলার মুখের বুলিগু’লো শুনে কিয়ারার আপন চিত্তে ঘনঘটার আঁধার নেমে এল।বুক ভরা দুঃখ নিয়ে বলে উঠল,
— নারে অনেকদিন’তো হলো, তার উপর এতদিনে ভাইয়ার নাকি অফিসে অনেক কাজ জমে গেছে।তাই যেতেই হবে।
— আদিব ভাইয়া আর কিছুদিন থেকে যান নাহ!
টায়রার বলা কথাটা কর্ণপাত হতেই আদিব নিজ স্থান ছেড়ে দাড়িয়ে একপ’লক বেলার মুখপানে নিজ আঁখি মেলে তাকিয়ে রাশভারি কণ্ঠে নিজ বাক্য ব্যক্ত করে উঠল,
— আর নয়! নিজে যেচে আপন সর্বনাশ ডেকে আনতে চাইছি না আমি আর।
কথাটা বলেই আদিব প্রস্থান করে তার এহেম কথার শেষ-শুরু কিছুই না বুঝে সকলে সেদিক আঁখি মেলে চেয়ে রয়।
___
বেলা টায়রা সেই তখন থেকে নিজেদের পরিপাটি করে বসে আছে স্কুলে যাওয়ার অভিলাষে।কিন্তু এই ভয়ঙ্কর মুষলধারে বৃষ্টির জন্য বাহিরে পা রাখতে পারছে না।
“আজকে রায়ায এখন অবধি নিচে নামেনি। নাস্তার সময়ও যখন তার দেখা মিলল না।অতঃপর রাজিয়া বেগম নিজ ছেলের এহেম কাণ্ডে দ্রুত ছেলের রুমের সামনে এসে শঙ্কিত কণ্ঠে ছেলেকে ডাকতে লাগল,
— রায়ায,,রায়ায বাবা আমার দরজা খোল।তুই তো এতবেলা অবধি শুয়ে থাকিস না তাহলে আজকে কি হলো। দরজা খোল বাবা।
এতো ডাকার পরও যখন নিজ ছেলের দর্শন মিলল না, তখন রাজিয়া বেগম চিৎকার করে উঠলেন।অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে সকলকে ডাকতে লাগলেন। তার এহেন চিৎকার চেঁচা’মেচিতে সকলে আঁতকে উঠে তড়িঘড়ি করে উপরে উঠে এলেন।
মায়ের এমন গগনবিদারী চিৎকার কর্নগোচর হতেই হতভম্ব হয়ে রায়ায নিদ্রা থেকে লাগিয়ে উঠে দ্রুত নিজ কক্ষের দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই রাজিয়া বেগম সহসা নিজ ছেলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।মায়ের দুই আঁখিতে এমন অশ্রুধারা দেখে নিজেকে আর সামাল দিতে পারল না রায়ায,, মাকে বারংবার প্রশ্ন করতে লাগল,
— কি হয়েছে মা? তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো?
রাজিয়া বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের মুখপানে তাকিকে ব্যক্ত করতে থাকে,
— বাবা তোর কি হয়েছে? সেই তখন থেকে ডেকে চলছি তুই দরজা কেন খুলিস নি?
মা-ছেলের কথপোকথনের মধ্য দিয়ে দুই চাচি এসে ভাসুরের ছেলেকে জাপটে ধরলেন।কারণ রায়াযই তাদের ছেলে। হ্যা! গর্ভে ধারণ করেনি কেউ, তবুও তারা এই ছেলের মা।,, দুজনেই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
— কি হয়েছে বাবা তোর? তুই দরজা কেনো খুলছিলি না? দেখ আপার কি অবস্থা হয়েছে( রাজিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে)।
— কিচ্ছু হয়নি আমার। আমি একদম ঠিক আছি।
— তাহলে ডাকছিলাম যে সাড়া’ কেন দিলি না।
রায়ায মায়ের মুখপানে তাকিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠে,
— ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম মা তাই হয়তো এমন হয়েছে। ”
বেলা আর টায়রা দুজন যখন আপন চিত্তে সোফায় বসে পা নাড়িয়ে যাচ্ছিল তখন কালো পাঞ্জাবি পরিধানে এক সুদর্শন যুবকের শৃঙ্গে বেলার নয়ন জোড়া আটকে গেল।বলিষ্ঠ দেহে কালো পাঞ্জাবিটা বেশ মানিয়েছে।চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে বেলার।পুনরায় প্রেম প্রেম ভাব খেলে গেল বেলার সর্বাঙ্গে।
চলবে ইনশাল্লাহ,,,