#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৫
#নন্দিনী_চৌধুরী
১৫.
সময়ের প্রহর গুনতে গুনতে আর সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফিরেছে। আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফিরার পর রোদেলা আরাভ থেকে শুরু করে সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে। আদ্রিয়ান জ্ঞান ফিরার পর চোখ খুলে সবার আগে রোদেলাকেই নিজের কাছে পায়। রোদেলাকে দেখে ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাঁসির রেখা ফুঁটে উঠে। রোদেলা আদ্রিয়ানের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
রোদেলা:এখন কেমন লাগছে আপনার?
আদ্রিয়ান আস্তে করে বলে,
আদ্রিয়ান:আগে কেমন ছিলাম জানি না। তবে তোমাকে দেখার পর এখন একদম সুস্থ লাগছে।
রোদেলা:আপনার সাথে আমার হিসাব আছে অনেক। আগে সুস্থ হোন তারপর সব উসুল করবো।
আদ্রিয়ান:আচ্ছা তাহলে তো আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে।
ওদের কথার মাঝে আরাভ আর আদৃতা আসে কেবিনে। আদৃতা এসে আদ্রিয়ানকে চেকাপ করে নেয়।
আদৃতা:সব অল রাইট আছে। আর কোনো সমস্যা নেই।
আরাভ:হার্টে বা অন্য কোনো সাইটে কোনো সমস্যা হবে না তো?
আদৃতা:আই হোপ হবেনা ইনশাআল্লাহ।
আরাভ:আদ্রিয়ান ইনি হলো ডাক্তার আদৃতা খান শাম্মি। তোর অপারেশনটা উনিই করেছেন।
আদৃতা নামটা শুনে চমকে গেলো আদ্রিয়ান। তার পুঁচকি বোনটার নাম তো ছিলো আদৃতা। আদ্রিয়ানের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছিলো সে তার বোনের। আদ্রিয়ান আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
আদ্রিয়ান:আমার বোনের নাম ও ছিলো আদৃতা। ধন্যবাদ ডাক্তার।
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চমকালো আদৃতা।
আদৃতা:আপনার বোন কোথায় এখন?
আদ্রিয়ান:জানিনা হয়তো মারা গেছে ছোট বেলায় তাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি।
আদৃতা:ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে রেস্ট নিন। আর কোনো দরকার পরলে নার্সকে জানাবেন সে আমাকে জানাবে।
রোদেলা:আমরা উনাকে বাসায় নিতে পারবো কবে?
আদৃতা:আজকে ও নিয়ে যেতে পারো। যদি বাসায় ফুল কেয়ার করতে পারো তাহলে।
রোদেলা:হ্যাঁ পারবো আমি।
আদৃতা:আচ্ছা তাহলে হাসপাতালে কথা বলে নাও। আমি আসছি।
আদৃতা চলে আসে আর আরাভ সব ফর্মালিটিস পূরন করার জন্য রিসিপশানে যায়।
মুন আদ্রিয়ানের জন্য স্যুপ পাঠাইছিলো। রোদেলা আদ্রিয়ানে ধরে বসিয়ে ফ্রেশ করে স্যুপ টা খাইয়ে দিলো। আদ্রিয়ানের আজ নিজেকে খুব হ্যাপি মনে হচ্ছে। আজ রোদেলা তার এতো খেয়াল রাখছে।
আদ্রিয়ান:এতো খেয়াল রাখছো কি শুধুই দায়িত্ববোধের জন্য নাকি ভালোবেসে?
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রোদেলা চমকে যায়। চমকে যাওয়া চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকায় সে।
আদ্রিয়ান:আমি জানি আরাভ তোমাকে সব বলেছে। এখন সেগুলো শুনে অনুতাপে এমন করছো নাকি ভালোবেসে?
রোদেলা স্যুপের বাটিটা রেখে আদ্রিয়ানের বেডে বসলো। হুট করেই আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দিলো।
রোদেলা:আপনি অনেক খারাপ অনেক খারাপ। আপনি জেনে ইচ্ছা করে নিজেকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজকে আপনার কিছু হলে আমার কি হতো হ্যাঁ? আপনি না আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার ফন্দি করলেন কিভাবে? এই আপনার ভালোবাসা? জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি যখন ডাক্তার বলছিলো যে আপনি……। আপনি একটুও ভালোনা।
রোদেলা জোরে জোরে কান্না করতে করতে কথা গুলো বললো। আদ্রিয়ান রোদেলার পিঠে হাত আর একটা হাত মাথায় রেখে ওকে শান্ত করছে আর বলছে,
আদ্রিয়ান:নেশামই শান্ত হও প্লিজ। দেখো আমার তো কিছু হয়নি। দেখো আমিতো একদম ভালো আছি। আর তোমার সামনে আছি। প্লিজ এভাবে কান্না করো না। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। আদ্রিয়ানকি তার নেশামইকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে বলো?
আরে পাগলি সব কান্না এখন কাঁদলে নিজের বিয়ের টাইমে আর পানি পাবানা চোখে। তাই এখন আর কান্না করো না!
রোদেলার আদ্রিয়ানের কথা শুনে ধমক দিয়ে বলে,
রোদেলা:চুপ বেটা। চোখের পানি তখন না পেলে ধার করে এনে তারপর কান্না করমু। আপনার তা নিয়ে ভাবতে হবে না।
আদ্রিয়ানঃ না না ধার করা লাগবে না আমি বরং একটা বড় পানির টাংকি এনে আমাদের বিয়ের আসরে রাখবো। তুমি কান্না করার সময় পানি না পেলে পাইপ দিয়ে পানি তোমার চোখে দিবো আর তুমি কান্নার পানি পাবা। বলো বুদ্ধিটা ভালো না অনেক?
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হেসে দেয়। আদ্রিয়ান রোদেলার কপালে একটা উষ্ণ ভালোবাসা একেঁ দিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান:That”s Like My Queen. তোমার মুখে সবসময় এই হাসিটা দেখতে চাই বুঝলা? ভালোবাসি নেশামই।
রোদেলা:আমিও আপনাকে ভালোবাসি আদ্রিয়ান।
উহুম উহুম!!!
আচমকা কারো কাশির শব্দে আদ্রিয়ান রোদেলা চমকে গিয়ে দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো।
আরাভ:স্যরি স্যরি ভুল সময়ে চলে আসছি। কিন্তু তোর ডিস্টার্চ হয়ে গেছে। বাসায় যেতে পারবি তুই।
আদ্রিয়ান:আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর আরাভ রোদেলা আদ্রিয়ানকে নিয়ে বাসায় আসলো। সাথে একটা নার্স নিয়েছে ওরা আর রোদেলাতো আছেই আদ্রিয়ানের জন্য।
এদিকে,,,,
রিয়া আর রাফসান এসেছে একটা রেস্টুরেন্টে।
রিয়া রাফসান বসে ছিলো তখন তাদের সামনে একটা ছেলে আসলো। রিয়া তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
রিয়া:রাহুল!
রাহুল:বাহ্ বেশ ভালোই আছো। হবু বর কে সাথে নিয়ে আসছো নিজের প্রেমিক উফস স্যরি প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে দেখা করতে। ভালোই আছো কিন্তু আমার সাথে কেন এমন করলা রিয়া? আমি কি তোমাকে কম ভালোবেসেছিলাম বলো? তাহলে কেন আমার সাথে এমন করলে?
রিয়া:রাহুল তুমি ভুল বুঝতেছো আমাকে। আমার কথাটা আগে শুনো।
রাহুল:ব্যাস আর মিথ্যা শুনতে চাইনা। আমি এতোদিন তোমাকে ভুল বুঝেছি। কিন্তু এখন আমি তোমাকে সঠিকটাই বুঝতেছি।
রাহুল রিয়ার কথা শুনতে নারাজ। তাই রাফসান উঠে গিয়ে রাহুলের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
রাফসান:মিস্টার রাহুল আপনি হয়তো রিয়াকে ভুল বুঝে ওর কথাটা শুনতে চাইছেন না। কিন্ত আমার কথাটা তো শুনতে পারেন।
রাহুল:বলুন কি বলবেন?
রাফসান:এখানে বসুন। বসে কথা বলি।
রাহুল রাফসানের কথা মতো বসলো।
রাফসান রাহুলকে বলা শুরু করলো।
রাফসান: আমার আর রিয়ার বিয়ে আমাদের পরিবার দিতে চায়। আমি যেদিন রিয়াদের বাসায় যাই ওকে দেখতে ও আমাকে জানায় ও আপনাকে ভালোবাসে। আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন। কিন্তু রিয়ার বাবা আপনাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছেনা। কারন আপনি বেকার বলে। রিয়া আমাকে বলেছে আপনি ৪ মাস সময় চেয়েছেন ওর কাছে। তাই আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছি আমি রিয়াকে বিয়ে করতে রাজী তবে সেটা ৪ মাস পর। কারন ৪ মাস পর আমি না বরং আপনি যেনো রিয়াকে বিয়ে করতে পারেন।
আর তাছাড়াও আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি। আমিও তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তাই এই ছোট নাটকটা করা। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন?
রাহুল:হুম সব বুঝতে পারলাম। কিন্তু আপনি যাকে ভালোবাসেন সেকি জানে এসব?
রাফসান:না এখনো জানেনা। পাগলিটা ভাবছে আমি সত্যি রিয়াকে বিয়ে করবো। আসলে আমি তার মনের অনুভুতিটা জানতে চাচ্ছিলাম। যে আসলে সে ও কি আমাকে ভালোবাসে কিনা। আর আমি দেখলাম যে সে তো আমারো আগে থেকে আমাকে ভালোবাসে।
রিয়া:তোমার এভার মুনকে সব বলে দেওয়া উচিত। বেচারি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে।
রাফসান:হ্যাঁ বলবো। খুব তাড়াতাড়িই বলবো। আমিও ওকে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছিনা। আচ্ছা আজকে আমি উঠি। তোমরা সময় কাটাও।
রিয়া:আচ্ছা।
রাহুল:ধন্যবাদ।
রাফসান হালকা হেসে বেরিয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।
কাশু আর রুবা কলেজে এসেছে। নেক্সট উইক থেকে ওদের এক্সাম। তাই নোটস কালেক্ট করবে ওরা। রুবা ক্লাসে বসে ক্লাস করছে। কাশু একটু ওয়াশরুমে এসেছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ক্লাসে যাবে তখন ওকে টেনে কেউ পাশে ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে আসে। কাশফিয়া প্রথমে ভয় পেয়ে যায় এমন কাজে। পরে সামনে তাকিয়ে দেখে কাউসার দাঁড়ানো। কাউসারকে দেখে আরেক দফা অবাক হয় কাশফিয়া।
কাশফিয়া:আপনি?
কাউসার:হ্যাঁ,আমি। কেন অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি?
কাশফিয়া:এভাবে এখানে নিয়ে আসছেন কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে?
কাউসার:আমার বউকে আমি নিয়ে এসেছি সেখানে কার কি বলার থাকবে?
কাশফিয়া:বউ কিসের বউ। দেখেন বাজে কথা রাখুন আর আমাকে যেতে দিন।
কাউসার:যেতে দিবো কিন্তু আমার উত্তর তো পেলাম না।
কাশফিয়া:উত্তর কিসের উত্তর?
কাউসার:ঐ যে ঐটার?
কাশফিয়া:আমার কাছে কোনো উত্তর নেই আমাকে যেতে দিন।
কাউসার:ওকে তাহলে আমিও যেতে দেবোনা।
কাশফিয়া কিভাবে এখান থেকে যাবে বুঝতে পারছেনা হঠ্যাৎ কাশফিয়া চিৎকার দিলো।
“স্যারর!!!”
স্যার ডাকটা শুনে কাউসার ভয় পেয়ে যায়। আর কাশফিয়াকে ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কাউসার বুঝতে পারে কাশফিয়া মিথ্যা বলেছে। কাশফিয়া এই সুযোগে ভো দৌঁড়।
কাউসার:এর ফল আমি নিবো মিস চাশমিস।আমার উত্তর তো আমি নিয়েই ছাড়বো।
আদ্রিয়ানকে বাসায় আনার পর আরাভ বাসায় গেছে। রোদেলা রাফসানকে কল করে জানিয়েছে সে আদ্রিয়ানদের বাসায়। রোদেলা আদ্রিয়ানকে বাসায় এনে ফ্রেশ করিয়ে, খাবার খাইয়ে, মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তারপর রোদেলা নিজে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে আদ্রিয়ানের পাশে বসে থাকে।
#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_চৌধুরী
১৬.
সময়ের স্রোতে এখন আদ্রিয়ান একদম সুস্থ। রোদেলা দিন রাত এক করে আদ্রিয়ানের সেবা করেছে। আদ্রিয়ান সুস্থ হবার আগ পর্যন্ত রোদেলা আদ্রিয়ানের বাসায় ছিলো। আদ্রিয়ান এখন আবার আগের মতো অফিস, রোদেলা, তার কাজ সব কিছুতে সময় দিচ্ছে।
রোদেলার মা-বাবা ঢাকায় আসছে। রোদেলা আর আদ্রিয়ানের বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। এই মাসের শেষের দিকে আদ্রিয়ান-রোদেলার বিয়ে হবে। এখন আদ্রিয়ান আর রোদেলা একদম চুটিয়ে প্রেম করছে।
সকাল সকাল আজকে কলেজ অফ। পরিক্ষা শেষ এখন কলেজ অফ। মুন নাস্তা বানাচ্ছে তখন রাফসান রান্না ঘরে এসে মুনকে বললো,
রাফসান: মুন শুনো।
রাফসানের ডাক শুনে মুন থমকে গেলো আসতে করে জবাব দিলো,
মুন: জ্বি বলুন।
রাফসান:আজকে বিকালে রেডি থেকো। তোমাকে নিয়ে মার্কেটে যাবো। আসলে রিয়ার জন্য কিছু জিনিস কিনবো। আমিতো মেয়েদের জিনিস পত্র তেমন বুঝিনা। তুমি আমাকে হেল্প করবা।
রাফসানের কথা শুনে মুন ভিতরে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। তবুও মিথ্যা হাসি মুখে রেখে মুন যাওয়ার সম্মতি দিলো।
বিকালে,,,,,
মুন রাফসানের কথা মতো রেডি হলো। রাফসান ওকে বলেছে নীল শাড়ি পরতে ও সেটাই পরেছে। নীল শাড়ি, দুইহাতে নীল চুড়ি, কানে দুল আর চুল গুলো খোলা। কিছুক্ষন পর রাফসান কল দিতেই মুন নিচে নামে। মুনকে দেখে রাফসানের তো জান যায় যায় অবস্থা। রাফসান আসতে করে বলে,
“মাশাআল্লাহ আমার বউটাকে দেখতে তো একদম পরীর মত লাগতেছে। কারো নজর যেন না লাগে।”
মুন গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। রাফসান মুনকে ইশারা করে গাড়ির সামনের সিটে বসতে বললো। মুন রাফসানের ইশারা মতো সামনের সিটে এসে বসলো। কিন্তু সমস্যা মুন সিট বেল্ট বাঁধতে পারেনা। রাফসান সেটা জানে তাই সে বেধেঁ দিলো মুনের সিট বেল্ট। তারপর গাড়ি চালানো শুরু করলো।
৪ ঘন্টার মাথায় তারা এসে পৌছালো একটা রিসোর্টে। মুন বুঝতে পারছেনা রাফসান এখানে কেন তাকে নিয়ে এসেছে। রাফসান গাড়ি থেকে নেমে মুনের সাইডের দরজা খুলে দিয়ে ওকে বাহিরে আসতে বললো। মুন বাহিরে আসার পর রাফসান ওর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। রাফসান মুনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সবাই এক সাথে চিল্লিয়ে বলে উঠে,
“হ্যাপি বার্থডে মুন”
মুন সবাইকে এক সাথে দেখে চমকে যায়। আজকে যে তার জন্মদিন সেতো সেটাও ভুলেগেছিলো। রোদেলা, কাশু, রুবা এসে মুনকে জরিয়ে ধরলো।
রোদেলা: স্যরিরে মুনু। ভাইয়ার প্ল্যান ছিলো তোকে এভাবে সারপ্রাইজ দেওয়ার। তাই আগে উইস করিনি।
রুবা: হ্যাঁ সব ভাইয়ার প্ল্যান।
কাশু: রাগ করিস না প্লিজ।
মুন: সব বুঝলাম।
রাফসান: এখন কেকটা কাটো।
এরপর মুন কেকটা কাটলো। একে একে সবাই মুনকে গিফটস দিলো। হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেলো আর কিছু রজ্ঞিন লাইট অন হয়ে গেলো। মুন কিছু বুঝে
উঠার আগে রাফসান ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলো। মুন এটা দেখে আরো অবাক হলো।
রাফসান মুনের সামনে একটা রিং ধরে ওকে প্রপোজ করলো,
রাফসান: জানিনা কিভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়। কিভাবে নিজের মনের অনুভুতি তোমাকে বলে বুঝাবো। যখন তোমাকে প্রথম দেখতাম আমাদের বাসায় তখন একটা আলাদা অনুভুতি হতো নিজের মাঝে। তবুও তখন সেই অনুভুতিকে পাত্তা দিতাম না। কিন্তু যত সময় যেতে লাগলো অনুভুতি আরো প্রখর হচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম আমি এক চঞ্চল রমোণীর প্রেমে পরে যাচ্ছি। কিন্তু তখন বয়সটা কম তাই সেভাবে তাকে বুঝতে দিতামনা। তারপর ধীরে ধীরে সেই রমণী বড় হলো। এক আলাদা মায়া তার চেহারায় পেতাম আমি। তবে তখনো জানতাম না, সেও কি আমার জন্য একই অনুভুতি অনুভব করে কিনা!
একদিন সেই রমণী জানতে পারে, আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে। সেদিন আমি তার চোখে আমাকে হারানোর ভয়-বেদনা দেখেছিলাম। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম আমি একাই শুধু না সেও আমার মতো অনুভুতি রাখে।
আমি আজ বিনা কোনো সংকোচে আমার মনের কথা তোমাকে বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি মুন। নিজের সবটা দিয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসবো। আমার বাকিটা জীবন আমি তোমার হাত ধরে চলতে চাই মুন। ধরবে কি তুমি আমার হাত। হবে কি আমার জীবনের পথচলার সাথি।”
____
রাফসানের কথা শুনে মুন অবাক বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। মুনকে চুপ থাকতে দেখে রিয়া ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
রিয়া: তোমার রাফসান তোমারি আছে মুন। তাকে তোমার থেকে কেড়ে নেওয়ার সাদ্ধ কারো নেই। আমি তো রাফসানকে শুধুই বন্ধু ভাবি। রাফসান না থাকলে আমার আর রাহুলের এক হবার আশা থাকতো না। তোমার রাফসান তোমাকেই ভালোবাসে। সে তুমি ছাড়া নিজের স্ত্রী হিসাবে অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারেনা। তোমার ভালোবাসা সার্থক মুন। তাই আর কোনো পিছুটানের চিন্তা করোনা। গ্রহন করে নেও ভালোবাসা।
রিয়ার কথা শুনে মুন রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসান খুব আশাভরা নয়নে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে। মুন সযত্নে আংটির জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। রাফসান খুশি হয়ে পড়িয়ে দেয় আংটিটা মুনের হাতে।
আর সবাই খুশিতে হাত তালি দেয়। রাফসান উঠতেই মুন রাফসানকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আর রাফসান পরম আদরে মুনকে বুকে নেয়। সবাই ওদের আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে দিতে অন্য সাইডে চলে যায়।
রুবা, কাশু লাইটিং সাইডে যায়। রিয়া রাহুল বাহিরে। আর রোদেলা, আদ্রিয়ান সুইমিংপুল সাইডে আসে।
রোদেলা আর আদ্রিয়ান হেঁটে হেঁটে কথা বলছে।
রোদেলা: আজকে আমি অনেক খুশি। ফাইনালি ভাইয়া আর মুন এক হলো।
আদ্রিয়ান: হুম। তবে এখনো একটা জোরা বাকি আছে।
রোদেলা: জোরা কোন জোরা?
আদ্রিয়ান: আরাভ-রুবা।
রোদেলা: কিহ!!!!
আদ্রিয়ান: আস্তে! আস্তে! এভাবে কেউ চিল্লায়? লোকে শুনলে কি বলবে!
রোদেলা: আরাভ ভাইয়ার সাথে রুবা! কিভাবে কেমনে হইলো?
আদ্রিয়ান: আরে পাগল। আরাভ পছন্দ করে রুবাকে। রুবা ওকে পছন্দ করে কিনা জানিনা।
রোদেলা: আপনি কিভাবে জানলেন?
আদ্রিয়ান: আরাভ আমার বন্ধু কম ভাই বেশি। তাই ওর সব কিছুই আমি জানি।
রোদেলা: বাহরে আপনারা দুই বন্ধু আমাদের দুই বান্ধুবির পিছনে পরলেন কেন? হু?
আদ্রিয়ান: কারন তোমরা হচ্ছো মধুর চাক। মধু বেয়ে বেয়ে পরে তোমার থেকে তাই পরছি তোমাদের উপর।
রোদেলা: 😒😒
আদ্রিয়ান: কি হলো? মুখ বাঁকা করো কেন?
রোদেলা: কিছুনা চলুন চলুন।
আদ্রিয়ান আর রোদেলা কিছুক্ষন ঘুরে রাফসানদের কাছে আসলো। সবাই রাতের ডিনার করে একেবারে তারপর বাসায় আসলো।
৪দিন,,পর,,,,
দেখতে দেখতে রাহুল একটা ভালো জব পেয়েছে। ৪মাস সময় ঘনিয়ে আসছে। রাফসান রেডি হচ্ছে মা বাবাকে বলার জন্য। তারা বাসায় আসছে দুইদিন হলো। এর মাঝে আজকে রোদেলাদের একটা দাওয়াত আছে। কলেজের মাহিন আর তিথির বিয়ের দাওয়াত। তিথি রোদেলাদের ক্লাসমেট। আর মাহিন তাদের সিনিওর। কলেজের অনেকজনকে দাওয়াত করছে তারা। প্রেমের বিয়ে তাদের। অনেক স্ট্রাগল করে আজ তারা এক হচ্ছে। রোদেলা,মুন,কাশু রেডি হয়ে চলে আসে সেন্টারে। সেন্টারে এসে ওরা তিথির কাছে যায়। বেশ কিছু ছবি তুলে গল্প করে। স্টেজে বসে কাশুর চোখ গেলো সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকা কাউসারের দিকে। কাউসার আজকে ব্লাক কালারের পাঞ্জাবি পরে কাশু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে কাশুও আজলে ব্লাক ড্রেস পরছে।
কাউসার কথা বলতে বলতে নজর গেলো কাশফিয়ার দিকে। কাউসার কাশফিয়াকে দেখে একটা চোখ টিপ দিলো। কাশফিয়া সেটা দেখে লজ্জায় তাড়াতাড়ি চোখ ঘুরিয়ে নিলো। দেখতে দেখতে তিথি-মাহিনের বিয়ে হয়ে গেলো। তিথির বিদায়ের সময় সে অনেক কান্না করছিলো। বিয়ে বাড়ি থেকে আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো।
রোদেলারা বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে।
আরো ১দিন পর,,,,
আজ থেকে রোদেলা আদ্রিয়ানের বিয়ের তোরজোর শুরু হয়েগেছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব কিছু।
রাফসান এখনো ওর আর মুনের কথা বলতে পারেনি। রোদেলার বিয়ের পর বলবে ভেবে নিয়েছে।
রোদেলারা শপিং করতে বেরিয়েছে। একটা গাড়িতে রোদেলা, আদ্রিয়ান। অন্য গাড়িতে মুন, রাফসান,কাশু রুবা।
আদ্রিয়ান ড্রাইভ করছে আদ আড়চোখে রোদেলাকে দেখছে।
রোদেলা: এতো দেখার কিছু নাই। আমি ফুরিয়ে যাচ্ছিনা যে এখনি দেখে রাখতে হবে।😒
আদ্রিয়ান: নিজের জিনিস দেখতে কারো অনুমতি আর সময় লাগেনা।
রোদেলা নিজের ব্যাগ থেকে একটা মরিচ বের করে আদ্রিয়ানের মুখের সামনে ধরে বলে,
রোদেলা: সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালান নাইলে এই মরিচ খাইয়ে দিবো।
আদ্রিয়ান: What🙄!
রোদেলা: হুহ। এটা নাগা মরিচ খাইলে আর দুনিয়ায় থাকবেন না হু। একদম মহাআকাশ ঘুরে আসবেন।
আদ্রিয়ান: তোমার পার্সে মরিচ কি করতে রাখছো?🙄
রোদেলা: আরে বইলেন না অনেক সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বখাটে জ্বালায়। তাই তাদের সাথে তর্ক না করে ঠুস করে এই মরিচ মুখে ঢুকিয়ে দেই ব্যাস কাম খাতাম, পেসা হাজাম।🤭
আদ্রিয়ান রোদেলা কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
“ইয়া আল্লাহ কবে না জানি আমাকেও এই নাগা খাইয়ে মারে।”
#চলবে
#চলবে
😐