প্রেমময় আসক্তি❣️পর্ব ১৩+১৪

#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৩.

অপারেসন থিয়েটারে বাহিরে চেয়ারে বসে আছে রোদেলা। রোদেলার ঠিক সামনে বসে আছে আরাভ। রোদেলার পাশে বসে আছে রুবা,মুন,কাশফিয়া। রাফসান এখনো জানেনা আদ্রিয়ানের এই অবস্থার কথা।

রোদেলা সেই যে চুপ করে বসে আছে তো বসে আছে। আদ্রিয়ানের শরীলের রক্ত এখন তার হাতে শুকিয়ে গেছে। রোদেলার সাদা জামা আদ্রিয়ানের রক্তে লাল হয়ে আছে। রোদেলার নিজেকে কেমন শুন্য লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলছে সে। আদ্রিয়ান এখন ঠিক থাকলে তাকে এখন কত জ্বালাতো। কত ভাবে ভালোবাসার আবেদন করতো। কিন্তু হায় এখন সেই লোকটাই জীবন-মরন যুদ্ধ করছে!

আদ্রিয়ানের অপারেশন করছে এক বিশেষজ্ঞ হার্ট সার্জন। আজকে সকালেই সে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছে। আরাভ আর সে দুজনেই বন্ধু। আরাভ চেয়ারে বসে আছে মাথা নিচু করে। আজ খুব অসহায় লাগছে। বন্ধুটার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তার। আরাভ রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,

আরাভ: রোদেলা।

রোদেলার আরাভের ডাকে তার দিকে তাকায়। আরাভ রোদেলাকে বলে,

আরাভ: আদ্রু যখন প্রথম বাংলাদেশে আসে তখন ও আমার কাছে সিলেটে আসে। আমি দেশে আসার পর সিলেটে ছিলাম প্রায় ৬মাস। আদ্রিয়ানকে খুব জোর আর অনুরোধ করে বাংলাদেশে আনি। আদ্রিয়ান বাংলাদেশে আসার পর ওকে আমিই রিসিভ করি। সিলেটে আমি যেখানে থাকতাম সেখানেই ওকে নিয়ে গেছিলাম। একদিন সকাল বেলার আমার ডিউটি ছিলো। আদ্রিয়ান সকালে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। আদ্রিয়ান জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখবে তাই। আদ্রিয়ানের গাড়ি মাঝ রাস্তায় নস্ট হয়ে যায়। আদ্রিয়ান যখন গাড়ি থেকে নেমে কোনো মেকানিককে খুঁজবে তখন সে দেখা পায় এক নারীর। এক মোহময়ী সুন্দর নারী যার পরনে একটা ব্লাক রেড মিশানো স্কার্ট ও একটা লেডিস টপস। এক হাত ভর্তি কালো চুরি আর কাঁধে ব্যাগ। আদ্রিয়ান সেদিন প্রথম দেখায় নারীটার মায়ায় পরে যায়। নিজের অজান্তেই তার ছবি তুলে নেয় তার ফোনে। সেদিন আদ্রিয়ান মেকানিক তো পায়নি কিন্তু একজন রমণীকে পেয়েছিলো। আদ্রিয়ান বাসায় আসার পর থেকে দেখতাম কি জানি ভাবতে! পরে কারণ জানতে চাইলে আমাকে সেই মেয়ের ছবিটা দেখায়। এরপর থেকে রোজ মেয়েটার জন্য ওই রাস্তায় অপেক্ষা করতো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান! যার জন্য মেয়েরা সব পাগল, যার জন্য মেয়েরা পাগলের মতো করে। সেই আদ্রিয়ান, কারো জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতো! জাস্ট একবার দেখার জন্য। এভাবে আড়াল থেকে মেয়েটাকে দেখতে দেখতে সব কিছু জানতে লাগলো মেয়েটার ব্যাপারে। সব তথ্য জোগার করলো মেয়েটার। মেয়েটার নাম, ঠিকানা, পরিবার, ক্লাস সব ইচ এন্ড এভ্রিথিং। আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেছিলো, ও যে ভালোবেসে ফেলেছে এই মেয়েটাকে। আদ্রিয়ান মেয়েটার প্রতি সব সময় নজর রাখতো। একদম নেশায় আসক্ত হয়ে গেছিলো মেয়েটার প্রতি। দেখতে দেখতে আদ্রিয়ানের আবার সিডনি চলে যাবার সময় হয়ে যায়। আর আমার ঢাকা যাবার। আদ্রিয়ান এখানে মেয়েটার জন্য তার লোক রেখে যায় যাতে মেয়েটার কোনো সমস্যা না হয়। এরপর আদ্রিয়ান সিডনি চলে যায় আর আমি আসি ঢাকা। আদ্রিয়ান সিডনিতে যাওয়ার পর শুনে মেয়েটার বিয়ে ঠিক হচ্ছে সেটা শুনে আদ্রিয়ান আমাকে কল দেয় আর সেদিন আমি ফিল করলাম আদ্রিয়ান কতটা ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে। আদ্রিয়ান পর পর ওই মেয়ের দুই বিয়ে ভেংগে দেয়। আদ্রিয়ান কোনোভাবেই মেয়েটাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারতোনা। তবে আদ্রিয়ান কোনোদিন মেয়েটার সামনে আসেনি। ওর একটাই কথা ছিলো সঠিক সময় হলেই ও মেয়েটার সামনে যাবে। এর মাঝে মেয়েটা ঢাকা চলে আসে। আদ্রিয়ান চাইতোনা মেয়েটা ঢাকা আসুক। কারন আদ্রিয়ানের কিছু শত্রু জানতে পেরেছিলো মেয়েটার কথা। আদ্রিয়ান তাই তাড়াহুড়া করে দেশে আসলো মেয়েটাকে সেফ রাখার জন্য।
আদ্রিয়ান নিজের থেকে বেশি মেয়েটাকে ভালোবাসে। যেদিন অই মেয়েটার একটা ছোট এক্সসিডেন্ট হয় আর আমার হাসপাতালে মেয়েটাকে ও পাগলের মতো ছুঁটে নিয়ে আসে। সেদিন অপারেশন থিয়েটারের অপর সাইডে দাঁড়িয়ে অনেক কেঁদেছিলো আদ্রিয়ান। ওর একটাই ভয় ওর নেশামই ওকে ছেড়ে চলে না যায়! আদ্রিয়ান একটাই ভয় ছিলো জীবনে আর সেটা তার নেশামই। সব জেনে তার নেশামই যদি তাকে মেনে না নেয়। ভালোনাবাসে তাহলে কি হবে!
আদ্রিয়ান ওই একটা মেয়ের জন্য ২য় অন্য কোনো মেয়ের কথা ভাবতোনা। সে এক নারীতেই আসক্ত থাকতে চায়।

এতোটুকু বলে আরাভ একটু থামলো। উপস্থিত সবাই আরাভের কথা শুনে অবাক। কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে, তাদের জানাছিলোনা। আরাভ আবার বলতে লাগে,

আরাভ: আদ্রিয়ান ছোট থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি। ছোট বেলায় আন্টি আর শাম্মি মারা যাওয়ার পর। আদ্রিয়ান একদম গম্ভীর হয়ে গেছিলো। ওতোটুকু ছেলে যার খেলেধুলে বেড়ানোর বয়স, সে সেই বয়স থেকে ম্যাচিউরদের মতো চলাফেরা শুরু করে। আদ্রিয়ান এই জায়গায় এসেছে শুধু মাত্র নিজের চেষ্টায়। আদ্রিয়ান মাফিয়া হলেও সে কোনো নির্দোষকে মারেনি কোনোদিন। সব দোষীদের সে মেরেছে। আর একদিন ও এখান থেকে বেড়িয়ে আসবে যেদিন ও ওর মা বোনের খুনিকে ধরতে পারবে। আদ্রিয়ানের নেশামই অন্য কেউনা, তুমি রোদেলা! আদ্রিয়ান তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। ওর ভালোবাসাটাকে পায়ে ঠেলে দিওনা। আমার বন্ধুটা তাহলে মরে যাবে রোদেলা। ওর এই দুনিয়ায় কেউ নেই আপন। ওকে তুমি দূর করে দিওনা।

আরাভ কথাটুকু বলতে গিয়ে কান্না করে দেয়। আরাভ আদ্রুকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসে। সেই ভাই আজ ওর এই অবস্থায় ও কিভাবে মানবে এটা।

সায়মন এভার রোদেলাকে বলে,

সায়মন: বেয়াদবি নিবেননা মেডাম। তবে আমাদের স্যার অনেক ভালো মনের একজন মানুষ। এইযে আমাকে দেখছেন, আমাকে উনি রাস্তা থেকে এনে এখানে জায়গা দিয়েছেন। আমাকে পড়াশুনা করিয়েছেন। নিজের কম্পানিতে জায়গা দিয়েছেন। আমার পরিবার দেখাশুনা উনি করেন। আমার বড় বোনের বিয়ে হচ্ছিলোনা টাকার অভাবে। সেই বিয়েও উনি দিয়েছেন। আমাদের এই মাফিয়া দলের কাউকে সে নিজ হাতে ক্ষুন করতে দেয়নি। সব ক্ষুন নিজ হাতে করেছে। আমারাতো শুধু খবর এনে দেই আর কয়েকটা মাইর দেই কিন্তু আসল কাজ সব স্যার নিজ হাতে করে। স্যার আপনার জন্য আসলে অনেক পাগল। নাহলে ভাবুন কেউ কাউকে কতটা ভালোবাসলে তার মতো একটা পুতুল বানিয়ে ঘরে রাখতে পারে! হ্যাঁ, স্যার সিডনির বাড়িতে আপনার মতো দেখতে একটা পুতুল বানিয়ে এনেছেন। সেটাকে দিন রাত দেখেন আর সেটার সাথে কথা বলতেন।
স্যার আপনাকে এতোটাই ভালোবাসেন আপনার আশেপাশে যাতে কেউ না আসে তাই আমাদের আপনার গার্ড করে রেখেছিলেন। আর আজকের এই গুলি স্যারের না আপনার লাগার কথা ছিলো। হ্যাঁ, মেডাম। স্যার জানতো আজকে আপনার উপর আক্রমণ হবে। তাইতো আপনাকে ফুল সেফলি তার সাথে বের করেছিলেন। এইযে ড্রেস আপনি পরে আছেন এটায় বুলেট প্রুফ দেওয়া আছে। তাই গুলি আপনার লাগতোনা। আমরা স্যারকে কত করে বলেছিলাম স্যার আপনিও লাগিয়ে নিন কিন্তু স্যার শুনেননি। স্যারের কথা ছিলো এটাই,

“আজ আমি যদি এই গুলি দিয়ে আহত হই তাহলে আমার শত্রুপক্ষ কিছুটা হলেও দমে যাবে।”

মেডাম আপনি খেয়াল করবেন গুলি যখন চলেছিলো স্যার কিন্তু আপনাকে পিছনে করে নিজে সামনে চলে এসেছিলো। আর গুলি ওনার গায়েই লাগে। আমরা তার পিছনে থাকার পরেও আমরা কিছু করে উঠার আগেই সব হয়ে গেলো। স্যার আপনার জন্য নিজের জীবন দিতেও পিছ পা হবেন না। তিনি এতোটাই ভালোবাসেন আপনাকে! স্যার এর আগেও দুবার গুলিতে আহত হয়েছিলো। একবার আমাকে বাঁচাতে আর একবার একটা বাচ্চাকে বাঁচাতে। স্যারের মতো মানুষ খুব কম হয় মেডাম! খুব কম।

রোদেলা সবার কথা শুনে চুপ হয়ে আছে। এবার মুন বলা শুরু করলো,

মুন: সেদিন যখন তুই রাস্তায় পরেছিলি। তোর মাথা থেকে রক্ত পরছিলো। সেদিন উনিই তোকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। সেদিন আমি ওনার চোখে তোকে হারানোর একটা ভয় দেখেছিলাম। প্রথমে আমি সেটা এতো গুরুত্ব না দিলেও পরে তার তোর প্রতি এতো অস্থিরতা আমাকে বুঝিয়েছিলো, সে তোকে ভালোবাসে। এমনকি সেদিন, যেদিন তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা, সেই সময় সে তোকে পাগলের মতো খুঁজেছে। তোকে যেদিন কোলে করে ঘুমন্ত অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসেন উনি, ওনার চোখে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম একটা কষ্টের ছাপ। ওনার ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই রে রোদেলা। উনি সত্যি তোকে খুব ভালোবাসে।

রুবা: হ্যাঁ। রোদেলা এতো পাগলের মতো ভালোবাসার মানুষটাকে তুই দূরে ঠেলে দিসনা। উনি তোকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। তাতো তুই ওনার সবা কাহিনী জেনে বুঝতে পারছিস। এতো ভালোবাসার মানুষটাকে হাতছাড়া করিস না। পায়ে মারিয়ে দিসনা তার ভালোবাসা।

কাশু: রোদেলা একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এতো কিছু করতে পারে তুই ভাব। জিজু তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসেরে। তোর জন্য একজন পার্ফেক্ট জীবন সজ্ঞী আমাদের আদ্রিয়ান জিজু।

রুবা: জিজু🙄?
কাশু: হু জিজু। রোদেলা আর জিজুর বিয়ে হলে আদ্রিয়ান তো আমাদের জিজুই হবে🥰।
রুবা: 😒তুই সব সময় এক লাইন বেশি বুঝিস। এখনো ওদের মাঝে কিছু ঠিক হলোনা ও আসছে বিয়ে নিয়ে!
মুন: এই থাম তোরা।

ওদের কথার মাঝে ওটির লাইন বন্ধ হলো। সবাই লাইট অফ হতে দেখে উঠে দাঁড়ালো। ওটির ভেতর থেকে একটা মেয়ে বের হলো। দেখতে আরাভ আদ্রিয়ানদের বয়সি মেয়েটা। আরাভ মেয়েটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

আরাভ: ডাক্তার আদৃতা, আদ্রিয়ান?
আদৃতা: দেখুন মিস্টার আরাভ, পেসেন্টের বুকে দুটো গুলি লেগেছে। অনেক ব্লিডিং হয়েছে। তাও আমরা যথেস্ট ব্লাড দিয়েছি। মাঝখানে তো আশাই ছিলোনা ওনার জন্য। তবে এখন আমরা আশা রাখি। ২৪ঘন্টার ভেতরে জ্ঞান না ফিরলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে অথবা সে মারাও যেতে পারে। জ্ঞান ফেরার চান্স আছে ১০%। আর ডাক্তারদের কাছে ১০% মানে অনেক কিছু। যেখানে ০% ছিলো আশা সেখানে এখন ১০% আশা আছে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

কথাটা বলে ডাক্তার আদৃতা চলে আসলো। আর রোদেলা পাথরের মতো আবার বসে রইলো। বাকিরা আশাহত চোখে তাকিয়ে রইলো।
#প্রেমময়_আসক্তি ❣️
#পর্ব_১৪
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৪.

আইসিউ কেবিনের বেডে শুয়ে আছে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের পাশের চেয়ারে বসে আছে রোদেলা। এমন একটা দিন তো আদ্রিয়ান তার পাশে বসে ছিলো আর সে ছিলো আদ্রিয়ানের জায়গায়। আদ্রিয়ানের চোখে ছিলো তাকে হারানোর ভয়। আর তার চোখে আজ অনুতাপ, কান্না, হারানোর ভয় সব আছে। রোদেলা আসতে করে আদ্রিয়ানের একটা হাত নিজের দুইহাতের মাঝে নিলো। রোদেলার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,

রোদেলা: “কতটা পাগল আপনি আমার জন্য। একবারও নিজের জীবনের কথা ভাবলেননা! শুধু আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবনটা দিয়ে দিতে চাইলেন। একবারও কি ভেবেছেন, যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা কিভাবে থাকবো? জানেন আদ্রিয়ান ভালোবাসার মতো সুপ্ত অনুভুতি আমার মনে কোনোদিন আসেনি। কারন আমি সেরকম কোনো ছেলের প্রতি হেল ছিলোনা। তবে আপনাকে দেখার পর একটা আলাদা কিছু অনুভব করেছিলাম আমি। তখন আমি জানতাম না আপনি একজন মাফিয়া। যেদিন আপনাকে ওই ছেলেটাকে মারতে দেখলাম সেদিন এক ধাক্কায় সব এলোমেলো লাগছিলো আমার। একজন মাফিয়াকে আমার ভালো লাগছিলো এটা ভেবে আরো খারাপ লাগছিলো। যখন আপনি আমার কাছে এসে নিজের ভালোবাসার কথা বলছিলেন ইচ্ছা করছিলো আমিও তাতে মন বসাই কিন্তু আপনার কাজের কথা মনে হলে সেটা পারিনি। আপনি ওইদিন আমাকে বাসায় নিয়ে যখন এই পথে আসার কারন জানালেন সেদিন আমি নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন আপনাকে জরিয়ে ধরে আমার শান্তনা দিতে ইচ্ছে করছিলো তবুও কেন জানি পারছিলাম না।
তবুও আপনার পাগলামো ভালোবাসা সব আমার কাছে ভালোলাগতো। শুধু ভয় লাগতো আপনার কাজের জন্য। এই কাজযে কতটা ভয়ানক কাজ। আপনাকে যদি আমার থেকে নিয়ে যায় এই ভয় আমাকে আপনার কাছে যেতে দিতোনা।

কিন্তু আজ আজকে কি হচ্ছে দেখুন সেই আপনি আমাকে একা রেখে যাওয়ার ফন্দি আঁটছেন। আপনি না বলেছিলেন আমাকে একা রেখে কোনোদিন যাবেননা। তাহলে এখন যেতে চাচ্ছেন কেনো? নাকি আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন! এতোদিন আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি সেই জন্য। আচ্ছা শাস্তি দিন। কিন্তু আমাকে এভাবে একা রেখে চলে যেয়ে শাস্তি দিয়েন না। আমি আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? আমাকে একা করে দিয়েন না। আমি থাকতে পারবোনা আপনাকে ছাড়া। আপনি কিন্তু প্রমিস করেছিলেন আমাকে একা রেখে যাবেন না। আমাকে আগলে রাখবেন। আমি ভালোবাসি আপনাকে। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। হ্যাঁ, আদ্রিয়ান আমি ভালোবাসি আপনাকে। ফিরে আসুন আপনার রোদেলা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে দেখুন।

রোদেলা কান্না করে দেয় কথা গুলো বলতে বলতে থাকে। একজন নার্স এসে রোদেলা বাহিরে যেতে বলে। আরাভ এসে রোদেলাকে বাহিরে নিয়ে যায়। রাফসান হাসপাতালে এসেছে সে এসে সব শুনে অবাক আর কষ্ট দুটোই পেয়েছে। রাফসান রোদেলাকে নিয়ে যেতে চাইলে রোদেলা জানায় যে, যাবেনা।
তাই রাফসান মুন, রুবা আর কাশুকে নিয়ে গেলো।হাসপাতালে
আরাভ, রোদেলা, সায়মন, জন থেকে গেলো।

আদৃতা হাসপাতাল থেকে মাত্র বাসায় আসলো। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হাসপাতালে গেছিলো সে। আরাভ কল দিয়ে জানিয়েছিলো একটা এমার্জেন্সি আছে। তাই সোজা এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতালে গেছে।

আদৃতা বাসায় এসে সোফায় বসলো। সার্ভেন্টস কে ডেকে এক গ্লাস পানি চাইলো। সার্ভেন্টস এসে তাকে পানি দিয়ে গেলো। আদৃতা পানি খাচ্ছে তখন একজন লোক সিড়ি দিয়ে নেমে আসলো আর আদ্রিতাকে বললো,

মিস্টার আশরাফ: অবশেষে বাবার প্রতি রাগ কমলো তাহলে?
আদৃতা পানি রেখে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,

আদৃতা: রাগ কমা বাড়ার কিছু নেই। আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই এসেছি। আবার ইচ্ছা হবে চলে যাবো।
মিস্টার আশরাফ: আমার প্রতি তোমার এতো রাগ কেনো? তুমি আজ পর্যন্ত আমাকে একবারের জন্য বাবা বলে ডাকোনি। কিসের রাগ তোমার আমার প্রতি।
আদৃতা: আপনি ভুলে গেলেও আমি ভুলবোনা মিস্টার খান। আপনি আমার মাকে আমার থেকে আলাদা করেছেন। আমার ভাইয়াকে আমার থেকে আলাদা করেছেন। আমার মাকে আমার চোখের সামনে মেরে ফেলেছেন। আমি এগুলো কোনোদিন ভুলবোনা। আপনাকে আমি বাবা বলে কোনোদিন মানিনি মানবোনা। যে বাবা জন্মের পর কোনোদিন এসে একটা খোঁজ নেয়নি, যে স্বামী একজন স্ত্রীকে সম্মান ভালোবাসা দেয়নি। যে বাবা তার বড় সন্তানকে অবহেলা করেছে তার মতো বাবা থাকার থেকে না থাকাই ভালো। আমি আজোও জানিনা আমার ভাইয়া কোথায় আছে। আদৌ সে এই দুনিয়ায় আছে কিনা তাও জানিনা। আমি আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা। আর একটা কথা আমি আগামীকাল আমার বাসায় উঠবো। আপনার এখানেও আমি আর থাকবোনা। অনেক খেয়েছি আপনার পাপের টাকায়। তখন অসহায় ছিলাম যাওয়ার কোনো জায়গা ছিলোনা। কিন্তু এখন আমি একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ। নিজের মতো থাকতে পারবো।

আদৃতা আর কথা বারায়না সোজা নিজের রুমে চলে যায়। আর মিস্টার আশরাফ রাগে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে।

আদৃতা নিজের রুমে এসে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে যায়। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। আদৃতা বারান্দায় গিয়ে বসলো। আদ্রিতার গলার লকেটটা খুলে হাতে নিলো। লকেটটাতে দুটো ছবি আছে একটা ওর মায়ের আর একটা ওর ভাইয়ার। ওরা যখন ছোট ছিলো তখন ওর মা ওদের দুই ভাইবোনকে এই লকেটটা দিয়েছিলো। ওর ভাইয়ার লকেটে ওর আর ওর মায়ের ছবি আর আদ্রিতার লকেটে ওর ভাইয়ার আর মায়ের ছবি। আর ওদের মায়ের কাছে যেই লকেটটা ছিলো সেটায় ওদের দুই ভাই বোনের ছবি ছিলো। আদৃতা লকেটটা নিয়ে একটা চুমু দিলো। চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো তার। আদৃতা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

আদৃতা: তুমি কোথায় আছো ভাইয়া? আমার কথা কি তোমার মনে পরেনা? আমাকে কি তুমি মিস করোনা? ছোট থাকতে তো আমাকে কত জ্বালাতে। কতো খেলতাম আমরা। ভাইয়া এমন কেন হলো আমাদের সাথে। সব এলোমেলো করে দিলো লোকটা। আমি কোনোদিন তাকে মাফ করবোনা। কোনোদিন না।

আদৃতা উঠে রুমে আসলো। তখন ওর ফোনে কল দেয় হাসপাতালের নার্স। নার্স তাকে কল করে জানিয়েছে আদ্রিয়ান কিছুটা রেস্পন্স দিচ্ছে। আদৃতা সেটা শুনে বলে সকাল পর্যন্ত দেখতে। কল কেটে আদৃতা আদ্রিয়ানের কথা ভাবতে লাগলো।

আদৃতা: আজকের ওই লোকটাকে দেখে কেমন অনেক কাছের মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো উনি আমার কত যুগ কাছের। কিন্তু ওনাকে আমি আজই মাত্র দেখলাম।

সকালে,,,,

মুন রান্না ঘরে রান্না করছে। রোদেলা আর আরাভের জন্য নাস্তা নিয়ে যাবে হাসপাতালে।
রুবা ডাইনিং টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছে তখন দরজায় কলিং বেল বাজলো। রুবা গিয়ে দরজা খুলে দেখে রিয়া দাঁড়ানো।

রিয়া: রাফসান আছে?
রুবা: জ্বি। ভিতরে আসুন আপু।

রুবা রিয়াকে ঘরে আসতে বলে। রিয়া ঘরে এসে সোজা রাফসানের রুমে চলে যায়। রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে মুন। বুকের মাঝের হাহাকার আবার শুরু হচ্ছে তার। মুন নিজ মনকে শান্ত করতে বলে,

“হায়রে মন কস্ট পাসনা। ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এর তো কথা নেই। থাকনা কিছু ভালোবাসা আড়ালে, থাকনা কিছু চাওয়া অপূর্ন। সব চাওয়াকি পুর্ন হয়। থাকনা ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো সাথে সুখি।
সেতো ভালোই আছে।”

মুন রান্না করে খাবার নিয়ে রুবা আর কাশুকে নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে।

এদিকে,,,

রিয়া: রাফসান রাহুল আসতেছে।
রাফসান: কবে?
রিয়া: আগামীকাল।
রাফসান: আচ্ছা তুমি চিন্তা করোনা। আমি আছিতো।
রিয়া: তোমাকে আমি যত দেখি অবাক হই। কিভাবে পারছো বলতো এসব?
রাফসান: জানিনা। আমি হাসপাতালে যাবো এখন।
রিয়া: আচ্ছা ঠিক আছে।

মুন এসে দেখে রোদেলা বসে আছে আদ্রিয়ানের পাশে আর আরাভ অপরপাশে বসে আছে। আদৃতা কিছুক্ষনের মাঝে আসছে জানিয়েছে। আদ্রিয়ান অনেকটা রেস্পন্স করছে। সবাই আশা রাখছে ২৪ ঘন্টার মাঝেই জ্ঞান ফিরার। মুন এসে রোদেলার আর আরাভকে খাবার দিলো। জুঁই সকালে এসেছিলো আবার বাসায় গেছে দুপুরের খাবার সে নিয়ে আসবে।

কিছুক্ষনের মাঝে আদৃতা আসলো। এসে আদ্রিয়ানকে চেকাপ করলো। আর আশা দিলো জ্ঞান ফিরবে খুব তাড়াতাড়ি।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here