প্রেমরোগ পর্ব -২৯+৩০

#প্রেমরোগ-২৯
#তাসনিম_তামান্না

তপ্ত দুপুর ঝলসানো গরমে ঢাকার একটা রেস্টুরেন্টে টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে দুই মানব মানবি। এসি শীতল হাওয়ায় ও ঘামছে রিদ। কঠিন্য আঁখি জোড়া দিয়ে ঝড়ছে অভিমানের অশ্রু কিন্তু সেটা গড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে না। তবুও ক্রোধে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল
” কি হলো কথা বলছেন না কেনো? ”
” এসব তোমাকে কে বলল? ”
” সে যে-ই বলুক। আপনি একবার আমার সাথে কথাটা শেয়ার করতে পারতেন এভাবে নিজের মধ্যে রেখে গুমরে গুমরে না ম রে আমাকে বলতেন আমি একেবারে মে রে দিতাম ”
রিদ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল
” আন্টি চায় না তোমার সাথে আমার কিছু হোক তাই আমি ও… ”
” লাইক সিরিয়াসলি তাই আপনিও চান না। এই আপনার ভালোবাসা? আম্মু কি বলছে। আপনার মতো জামাই সবাই চান তিনি ও চায় কিন্তু শুধু আপনার বাবা-মা নেই। একটু বোঝালেই মা বুঝতো এতোটাও অবুঝ নয় আমার আম্মু। তার মেয়ের খুশির জন্য হলেও এটা মেনে নিতো। ”
” তুমি খুশি হবে আমার সাথে তোমার বিয়ে হলে ”
” খুশি না হওয়ার কি আছে? খুশি হতে গেলে দুইটা ভালোবাসা পূর্ণ মন লাগে। তাহলে সারাজীবন একসাথে থাকা যায় ”
” বাস্তবতা এমন নয়। টাকা না থাকলে এ জীবনে কোনো দাম নেই ”
” যদি আমি আপনার সাথে সারাজীবন থেকে প্রমাণ করে দি ”
” কেউ মানবে না আমাদের দু’জনের এক হওয়া ”
” মানবে কি মানবে না সেটা আপনি যানেন কিভাবে? সবার কাছ থেকে জেনে এসেছেন ”
” এমনিতেই বোঝা যায় ”
” চলেন বিয়ে করবো ”
রিদ আঁতকে ওঠে বলল ” এখান? ”
” হ্যাঁ তো? ”
নিরবতা গ্রাস করলো দু’জনের মাঝে। দুজনের মস্তিষ্কে ঘুরছে ‘বিয়ে’ নামক কথাটা। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে কি করবে না। চারিদিকে কপোত-কপোতী মেলা, বন্ধুত্বের আসর জমিয়ে যে যার মতো গল্পে মেতে আছে। সূর্য একটু একটু করে হেলে পড়েছে বিদায়ের জানান দিচ্ছে। নিরবতায় কেটে যায় বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো না দুজন দুজনের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো চোখে চোখে দুজনে মনের ভাব বিনিময় করছে। দুজন দুইজনের মনের অলিগলি ঘুরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। রিদ বলল
” এভাবে বিয়ে হয় না। তোমাকে এতোদিন যারা ভালোবেসে আগলে রাখলো তাদের মূল্য নেই তোমার কাছে? যদি তোমার আমার বিয়ে হওয়ার ই হয় তাহলে তাদের মতামত নিয়ে ই হবে ”
” যদি না মানে? ”
” তাহলে কখনোই দু’জনে এক হবো না ”
রিদের কথায় মেঘার অন্তত ছেদ করে উঠলো। চোখ ছলছল করে উঠে। চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে ‘ মেঘা রিদের না হলে আর করোর কখনো হবে না ‘
মেঘা দ্বিখণ্ডিত হৃদয় নিয়ে বলল ” আপনি চলে যান আপনার না কি কাজ আছে ”
” এখন তোমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ হতে পারে না ”
” আমি এস্পেশাল কেউ নয় যার জন্য নিজের চাকরির ক্ষ তি করবেন ”
” তুমি আমার কাছে এস্পেশাল কেউ একজন ”
” আমি যান আমি আপনাকে সময় করে বলে দিবো আপনি কবে আমাদের বাসায় আসতে হবে ”
রিদ প্রতিত্তর করলো না উঠলোও না ঠাঁই বসে রইলো। তারপর আবারও নিরবতা গ্রাস করলো দু’জনের মাঝে। দুজনের মন বিষন্ন হয়ে আছে মস্তিষ্কে হা না দিয়েছে হাজারো কু চিন্তা।
——————-
নবদিনের সূচনা। দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে গেছে। অক্টোবর মাসটা অন্যরকম। একটা শান্তি শান্তি ফিল হয় এই মাসে। অক্টোবরের শেষ দিয়ে হালকা শীত পড়তে শুরু করে। নতুন ঋতুর আগমন হওয়া এই মাসটা অন্যসব মাসের চেয়ে একটু আলাদাই হয়। তুষার কুয়াশার খুনসুটিময় টোনাটুনির সংসার ভালোই চলছে। সুইজারল্যান্ডে ঠান্ডা বারছে। নিত্যদিনে দুজনের বাক্যবিনিময়ের সময় সীমিত। ছুটির দিনে দুজনে এগলি ওগলি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে, পার্কে ঘুরে আসে। তুষার যখন সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে নিড়ে ফিরে তখন কুয়াশার মুচকি হাসি দিয়ে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেওয়া দৃশ্যটায় মন জুড়িয়ে যায় এইতো তার সব ক্লান্তি, হতাশা, খারাপ লাগা নিমিষেই দূর হয়ে গেছে।

তুষার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলো। তুষার কে দেখেই কুয়াশার সারাদিনের বোরিংনেস কেটে গিয়ে মুখে এক চিলতে হাসি এলো। তুষারে দিকে পানি এগিয়ে দিলে তুষার আজ হাসলো না কেমন বিষন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো কারণে বেশ চিন্তিত। কুয়াশা জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলো না। খেতে বসে কুয়াশা এবার জিজ্ঞেসা করেই ফেললো
” কি হয়েছে আপনার? কোনো কারণে আপনি চিন্তিত? ”
” আমি চলে গেলে তুমি এবাসায় একা থাকতে পারবে না? ”
কুয়াশার অন্তত ছেদ করে উঠলো। আঁতকে ওঠে বলল ” আমাকে একা ফেলে কোথায় যাবেন? ”
তুষার শান্ত কন্ঠে বলল ” হাইপার হয়ে যাচ্ছো কেনো? রিলাক্স হও ”
” আগে বলেন কি হয়েছে? কেনো আমাকে রেখে যাবেন? কোথায় যাবেন? ”
” কুয়াশা কয়দিনের জন্য আমাকে বের্ন যেতে হবে অফিসের কাজে। ”
কুয়াশা মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা গ্রাস করলো। অন্তঃপুর শূন্য হয়ে গেলো।
” কবে ফিরবেন আপনি? ”
” কাজ হয়ে গেলে ফিরে আসবো কথা দিতে পারছি না ”
আর কেউ কথা বলল না চুপচাপ খেয়ে নিলো।

সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বের্ন ভ্রমণের জন্যএকটি জনপ্রিয় ইউরোপীয় গন্তব্য। ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান । ভ্রমণকে সহজতর ও আরামদায়ক করার জন্য এখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বার্নে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর গবেষণার কার্যকাল উদযাপনের এখানকার জাদুঘরের পাশেই তার সম্মানার্থে আইনস্টাইন ক্যাফে রয়েছে। এই ক্যাফেটি ভ্রমণকারীদের ভ্রমণকে নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করে ।

সর্বোপরি, শহরটি মধ্য দিয়ে কুঁকড়ানো নদীটি অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য যোগ করেছে। সমস্ত গ্রীষ্মকাল ধরে স্থানীয়রা বার্নের লোয়ার শহরে যাত্রা করে নদীর স্রোতে একটি সতেজ প্রবাহ উপভোগ করে। নদীতে নৌকা ভ্রমণের জন্য সুইজারল্যান্ড এর সবথেকে জনপ্রিয় স্থান এটি।

তুষার লাগেজে জামাকাপড় গোছাচ্ছিল। কুয়াশার ঘরে মন টিকছে না। নিজের সাথে অনেক যু দ্ধ করে তুষারের রুমে সামনে এসে নক করলো।
” ভিতরে আসো নক করার কি আছে? ”
তুষার গোচ্ছে দেখে কুয়াশার মন খারাপের তিব্রতা বেড়ে গেলো।
” কিছু বলবে? ”
” আমাকে আপনার সাথে নিবেন? ”
তুষার কুয়াশার দিকে একবার তাকিয়ে বলল
” নিতে পারলে তোমাকে অবশ্যই নিতাম তুমি না বললেও কিন্তু এটা আমার হাতে নেই। তাছাড়া আমি ওখানে কাজে ব্যস্ত থাকবো তোমাকে সময় দিতে পারবো না। তুমি বাসায় থাকো আর বলো কি কি লাগবে এখন অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। সকালের মধ্যে এসে যাবে। ”
” কিছু লাগবে না সবই আছে ”
” আচ্ছা। শুনো একা বাসা থেকে বের হবে না। দরকার হলেও না। কেউ আসলে দরজা খোলার দরকার নাই কেউ আসবেও না। আর সাবধানে থেকো। ”
কুয়াশা কিছু বলল না। তুষার একটু থেমে আবার বলল ” তুমি কি একা একা পুরো বাসায় থাকতে ভয় করবে? ”
” নাহ ”
” আচ্ছা তাহলে তো হয়েই গেলো। কয়েকটা দিন রিলাক্সে থাকো। আমার সাথে ঝগড়া করা লাগবে না। তোমাকে কেউ খে পাবে না। তুমি শুধু খাবে, দাবে আর ঘুমাবে ”
কুয়াশার রাগ হলো। বলল
” হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। আপনি গেলে আমি একা একা শান্তিতেই থাকবো ”
কুয়াশা ধুপধাপ পায়ে চলে গেলো। তুষার হাসলো। ব্যাগ গুচ্ছিয়ে নিলো। দু’জনের দুই রুমে র্নিঘুম রাত কাটলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রেমরোগ-৩০
#তাসনিম_তামান্না

সময় আর স্রোত কখনো কারোর জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু আজ কুয়াশার সময় কাটছে না। ওর কাছে মনে হচ্ছে সময় থমকে গেছে। তুষার আসার অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। একা একা সবসময় কেমন উদাস হয়ে থাকে। কিছু ভালো লাগে না। এই তো তুষার যাওয়া সময় কুয়াশাকে সাবধানবাণী দিয়ে গেছে কতগুলো এমন কি গার্ডেনেও আসতে মানা করছে। তুষারের যে কুয়াশাকে ফেলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তা কুয়াশা বেশ করে বুঝতে পারলো। তুষার কে চি গেট পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসো কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে ক পা লে শব্দ করে চু! মু খেয়ে হনহন করে চলে গেলো। আর একটিবার ও ফিরে তাকালো না। কুয়াশা তখন অনুভূতি শূন্যে তুলে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তুষারের যাওয়ার দিকে। তুষার গাড়ি করে অদৃশ্য হয়ে গেছে তখনো কুয়াশা থম মে রে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পর নিজের জ্ঞান ফিরে পাই ফোনের ম্যাসেজ টোনে তুষারের ছোট বার্তা ‘এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভিতরে যাও’।
কুয়াশা অবাক হলো কিছুটা তুষার কীভাবে জানলো ও এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে ভাবতে তুষারের চু!মু দেওয়ার কথা মনে পড়লো। কপালে স্পর্শ করে মুচকি হাসলো। তারপর তুষারে রুমে বিছানায় গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। তুষারের ঘরে তুষার, তুষার ঘ্রাণ। মনে হচ্ছে এখানেই তো তুষার আছে।তুষারের সাথে কাটানো মুহুর্তের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে গেলো। ঘুম ভাঙ্গতেই তড়িঘড়ি করে ফোন নিয়ে দেখলো তুষার ফোন দিয়েছে কিনা। কিন্তু না তুষার ফোন দেয় নি। কুয়াশার মন খারাপ হলো। মনে করলো নিজে ফোন দিবে কিন্তু তুষার ব্যস্ত থাকতে পারে বলে আর ফোন দিলো না। কফি বানিয়ে খেতে খেতে বাসার সবার সাথে কথা বলল যাতে অশান্ত মনটা শান্ত করতে পারে। কিন্তু অশান্ত মন শান্ত হলো না উলটে বাড়লো মেঘার কথায় কি হবে মেয়েটার ভাগ্য কি মেয়ে নিবে মেঘা আর রিদের মিলন?
সারাটা দিন গেলো শুয়ে বসে ফোন চে পে। সময় কাটাতে আজ বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কুয়াশার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু পেটে ক্ষুদা না খেলেও হয় না রাতের খাবার খেয়ে ফোন হাতে নিলো তুষার কে ফোন দেওয়ার জন্য এবার টেনশন হচ্ছে লোকটা সেই যে গেলো একটা ফোন অব্দি দিলো না। রাগ অভিমান হলো। কিন্তু রাগ অভিমান দূরে ঠেলে ফোন দিলো তুষারের কাছে একবার বাজলো…
দুইবার বাজতেই ফোন ধরলো। তুষার ‘হ্যালো’ বলতেই। কুয়াশার মনের অস্থিরতা কমে গেলো কিছুটা। কুয়াশা শান্ত কন্ঠে বলল
” পৌঁছে গেছেন? ”
” হ্যাঁ অনেক আগেই কাজে বিজি ছিলাম তাই আর ফোন দিতে পারি নাই। ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন দিবো কিন্তু এসে দেখলাম তুমি ফোন দিয়েছ। খেয়েছ? ”
” হ্যাঁ। আপনি? ”
তুষার বিছানায় আরাম করে শুয়ে হাত দিয়ে চুল ব্রাশ করে বলল
” হ্যাঁ। ভয় লাগছে না তো? ”
” উহুম। আপনি কবে ফিরবেন? ”
” কেনো আমাকে মিস করছ বুঝি? ”
কুয়াশা নিশ্চুপ। সে সত্যি তুষার কে মিস করছে। কিন্তু মিস করার কথা বললে তুষার কি মনে করবে? ভেবে চুপ রইলো। তুষার ঠোঁট চে পে শব্দহীন হাসলো। তুষার বলল
” আসলেই বউটা তার বরকে মিস করছে। ”
কুয়াশার রাগ, লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি হচ্ছে। তুষার যখন বুঝতেই পেরেছে তাহলে এভাবে বলে লজ্জা দেওয়ার মানে কি? কুয়াশা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল
” বলছি একবারও আমি আপনাকে মিস করছি? ”
” বলো নি কিন্তু নিরবতায় সম্মতির লক্ষ্মণ। আর আমার একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে যানো? ”
কুয়াশা উৎসক হয়ে বলল
” কি ক্ষমতা ”
” তুমি না বলেও তোমার সব কথা বুঝে যায় ”
তুষারের কথা সত্যি। তবুও কুয়াশা বলল
” কচু! আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েন। আমি বুঝি না মনে করেছেন। আমি এতোটাও বোকা নই। আমি সব জানি ”
” কি জানো? আমি একজনকে ভালোবাসি জানো? কিন্তু সে বুঝতে চায় না ”
কুয়াশার বুকের মধ্যে ধরাস করে উঠলো। তুষার কাউকে ভালোবাসে? কুয়াশা কাঁপা গলায় বলল
” আপনি কাকে ভালোবাসে? এই যে বললেন আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে ”
” ভালোবাসতে গার্লফ্রেন্ড লাগে না-কি? একটা বউ থাকলেই যথেষ্ট ”
তুষারের কথার মর্মার্থ বুঝতে কুয়াশা কয়েক সেকেন্ড লাগল। বুঝতে পেরেই লজ্জায় মিয়িয়ে গেলো। তুষার ইনডিরেক্টলি তাকে ভালোবাসি বলছে। ইশশ কি লজ্জা। অনুভূতিরা সাতরাঙা আকাশে ডানা মেলে উড়তে লাগলো এদিক থেকে ওদিক। কুয়াশা মিনমিন করে বলল
” কে বলেছে বুঝে না সে বুঝে ”
তুষার শব্দহীন মুখে হাসি লেপ্টে আছে বলল
” তাই তাহলে সে ও কি আমাকে ভালোবাসা? আমাকে মিস করছে ”
কুয়াশার হাসফাস করছে। শ্বাস নিতেও কেমন সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে মনে হচ্ছে এই বুঝি তুষার সব বুঝে ফেললো। কুয়াশা আর একটা কথার বলতে পারলো না। খট করে ফোনটা কেটে দিলো। দুহাতে মুখ ঢেকে হেসে ফেলল। হ্যাঁ কুয়াশা এই ক’দিনে তুষারের জন্য সামথিং ফিল করে। তুষার আসার অপেক্ষায় থাকে সারাদিন তুষারে ক্লান্তি মাখা মুখ দেখলেও আবার কষ্ট হয়। এই যে তুষার দূরে আসলো। ও বড্ড কষ্ট হচ্ছে। নিজ মন, বাসার প্রতিটা কোণা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। কেমন নির্জীব। তুষার বেশিরভাগ সময় কুয়াশাকে খেপিয়ে দিয়ে ঝগড়া করতো। আগের কথা ভাবতেই কুয়াশা অজান্তেই হেসে ফেললো। চোখের কোনে অশ্রু জমলো গড়িয়ে পড়তে দিলো না মুছে ফেললো। সারাদিনের অস্থিরতা, মন খারাপ, অভিমান, রাগ সব দূর হয়ে গেলো। মনে ভালোলাগা ভালোবাসা একাকার হয়ে গেলো। হ্যাঁ কুয়াশা তুষার কে ভালোবাসে। কুয়াশা বিড়বিড় করে বলল
” শরৎকাল হলেও আজ আমার জন্য বসন্ত। প্রেম বসন্ত। ”
তুষার কুয়াশার লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দেওয়ায় হাসলো। বলল
” ম্যাডাম আমার প্রেমে ফেঁ সে গেছে। ”
ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ দিয়ে বলল
” ম্যাম আপনি কি লজ্জা পেয়েছেন? ”
কুয়াশা ম্যাসেজটা দেখে বলল ” অ স ভ্য সব সময় আমাকে অস্তিতে ফেলা। ”
কুয়াশা খুশি মনে কল্পনা জল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো। স্বপ্নে তুষার কুয়াশা কত কি দেখলো।
___________________________
মেঘা শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ঘুম নেই দু-চোখে মাথায় হাজারো দুঃচিন্তা। কাল ছুটির দিন সকলে বাসায় থাকবে। মেঘা ভেবে নিয়েছে কাল ই সবাইকে তার আর রিদের ব্যাপারটা জানানোর পার্ফেক্ট দিন। কিন্তু জানানোর পর কি হবে মানবে তো? ওকে যদি ধরে বেঁধে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে ও রিদকে ছাড়া থাকবে কিভাবে? একদম ম রে যাবে। কিছুতেই এমন কিছু হতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে বাসা থেকে চলে যাবে। কিন্তু এতোগুলো ভালোবাসার মানুষ গুলোকে ছাড়া কিভাবে কাটবে তার জীবনের মুহূর্ত? এই মানুষ গুলোকে ছাড়া মটেও তার জীবন চলবে না। কিন্তু রিদ ছাড়া নিজে অন্য কারোর বউ হিসেবে কল্পনা ও করতে পারবে না। যদি দুই দিক থেকে একজনকে বেচে নিতে হয় তখন কাকে বেচে নিবে? এসব হাজারো জল্পনা কল্পনা করে মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। সিদ্ধান্তঃহীনতায় ভুগছে। অন্তপুর কষ্ট জর্জরিত হয়ে আছে। রিদ কয়েকবার ফোন দিয়েছে কিন্তু মেঘা ধরে নি ফোন ওফ করে রেখেছে। শেষ রাতের দিকে দুচোখের পাতা এক হয়েছে। তাও এক ঘন্টার জন্য।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here