#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৪।
একটা কাঁচা হলুদ রং এর শাড়ি গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় পৃথা। মুখে কিঞ্চিত সাজসজ্জা। নিজেকে বেশ মনোযোগের সহিত পরখ করে। সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হয়। তবে তার পেটটা আজ একটু বেশিই বড়ো মনে হচ্ছে। সে পেটে হাত দিয়ে রুহার দিকে চেয়ে বলে,
‘আজকাল আমার পেটটা খুব বড়ো লাগছে, তাই না?’
রুহা হালকা হেসে বলে,
‘না, তেমন না। হয়তো শাড়ি পরেছিস বলে একটু বড়ো দেখাচ্ছে।’
পৃথা আবার আয়নার দিকে ফিরে বলে,
‘না রে, আমি কিছুদিন যাবত খেয়াল করছি, পেটটা আগের তুলনায় বেশ খানিকটা বড়ো। ঠিক মতো ব্যায়াম করছি না বলে হয়তো আরো বেশি মোটা হচ্ছি। এখন থেকে কম কম খেতে হবে, নয়তো পরে ফুলে একদম হাতি হয়ে যাব।’
‘খাওয়া কমাতে হবে না। এমনিতেই তুই খুব অল্প খাস। এখন যদি আরো খাওয়া কমিয়ে দিস তাহলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বি।’
পৃথা বলল,
‘কিন্তু…’
রুহা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘এত কিন্তু কিন্তু করিস না তো, তাড়াতাড়ি রেডি হো, ছাদে যেতে হবে।’
বাড়িতে খুব বেশি মেহমান না এলেও আশেপাশের পরিচিত পরিজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সবাই চলেও এসেছে। আর ইতিমধ্যেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, হলুদের মাঝেই আশপাশ থেকে বেশ গুণগান শোনা যাচ্ছে যে, পরিচিত পরিজনরা বলছেন, কেন এমন হুটহাট করেই বিয়ে ঠিক করা হলো? কেন তাদের আগ থেকে কিছু জানানো হলো না? বিশেষ করে পৃথার বাবার বাড়ির মানুষরা এই নিয়ে যেন একটু বেশিই আলাপ-আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। পৃথা অবশ্য আগ থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিল আজকে এমন কিছুই হবে, তাই সে চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিচ্ছে। তবে পৃথার বাবা সবাইকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলছেন যে, মেয়ে পছন্দ করেছে বলেই এভাবে হুটহাট করে বিয়ে দিচ্ছেন; তিনি মেয়ে সুখের জন্য সবকিছুই করতে পারেন। বাবার এমন ইতিবাচক মন্তব্য দেখে পৃথার বেশ খুশিও লাগছে।
খুব বেশি কেউ ছিলনা বলে পৃথার হলুদের অনুষ্ঠান টা খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হয়। ফ্রেশ হয়ে এসে পৃথা অর্ণবকে কল দেয়, জিজ্ঞেস করে, তাদের ঐদিকে কেমন আয়োজন ছিল। অর্ণব তাকে জানায়, ঐদিকে খুব বেশি আড়ম্বরতা ছিল না। বেশ ঝিমঝামের মধ্যেই তাদেরও হলুদের আয়োজন শেষ করা হয়। তারপর কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলে পৃথা ফোন রেখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন বেশ সকালেই পৃথার ঘুম ভাঙ্গে। অন্যদিনের তুলনায় আজকে যেন পৃথার চোখে ঘুমিই আসছিল না। সকাল সকাল উঠেই সে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বাড়িতে তখনো খুব বেশি কেউ উঠেনি। পৃথা রুহাকেও ডেকে তুলে। ঘুম ঘুম চোখে পৃথার দিকে তাকিয়ে রুহা ভ্রু কুঁচকায়, জিজ্ঞেস করে,
‘এত সকালে উঠেছিস কেন?’
পৃথা মুখ কাচুমাচু করে বলল,
‘উত্তেজনায় আর ঘুম আসছে না।’
রুহা উঠে বসে জিজ্ঞেস করল,
‘তাহলে এখন কী করবি?’
পৃথা বলল,
‘চল, দুই কাপ কফি বানিয়ে ছাদে গিয়ে একটু আড্ডা দিয়ে আসি।’
পৃথার কথায় রুহা সহমত পোষণ করল। তারপর দুজন কফির গ্লাস নিয়ে ছাদে চলে গেল একটু অবসর সময় কাটানোর জন্য। কথার ছলে রুহা বলল,
‘শোন, বিয়ের পর তাড়াতাড়ি বেবি নিয়ে নিস।’
কথাটা শুনে পৃথা ভ্রু কুঁচকে ফেলে, জিজ্ঞেস করে,
‘তাড়াতাড়ি বেবি নিব কেন?’
রুহা হেসে হেসে বলল,
‘ওমা, আমার বুঝি খালামনি হতে ইচ্ছে করে না?’
পৃথাও হাসে, বলে,
‘তা তো অবশ্যই। কিন্তু, এত তাড়াতাড়িই ইচ্ছে কেন করছে শুনি?’
রুহা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
‘মানুষের হায়াত মওতের কথা তো আর বলা যায়না, যদি হুট করে মরে যাই? তাই বলছি, বিয়ের পরপরই একটা বেবি নিয়ে নিস, প্লীজ।’
রুহার কথা শুনে পৃথা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
‘চিন্তা করিস না, তুই এত তাড়াতাড়ি মরবি না।’
রুহান মুখ ভার করে বলল,
‘ যদি মরে যাই?’
‘আচ্ছা যা নো টেনশন, তুই মরার আগেই খালা হয়ে যাবি।এবার খুশি তো?’
রুহা বলল,
‘হ্যাঁ, অনেক।’
তারপর দু’জন আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলল। কথা শেষ করে ছাদ থেকে নেমে গেল। বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথার ফুপি বললেন,
‘এত সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলে, পৃথা? তুমি না নতুন বউ, যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে শাওয়ার সেরে এসে তৈরি হও।’
পৃথা খানিকটা বিরক্ত হয়, তবে কিছু বলে না। সে চুপচাপ শাওয়ার নিতে চলে যায়।
,
লাল জামদানিতে পৃথাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। সাথে টকটকে লাল ঠোঁট আর ওই ছোট্ট লাল টিপ, সবমিলিয়ে যেন একটা ছোট্ট পুতুল বউ হওয়ার কোন প্রয়াসই সে ছাড়েনি। রুহা তাকে দেখে বলে উঠে,
‘মাশাল্লাহ, আমার পুতুল বউ। আজতো অর্ণব ভাই গেয়া।’
পৃথা মুচকি হাসে, যেন ভীষণ লজ্জা পায়। তাদের কথোপকথনের মাঝেই বাইরে থেকে খবর আসে, মসজিদে অর্ণবের কবুল বলা হয়ে গিয়েছে এখন পৃথার পালা। পৃথা প্রস্তুতি নিয়ে দ্রুত তার বিছানার উপর উঠে বসে। বাড়ির বড়ো মেয়েরা সব তার সামনে এসে বসে। অপর পাশে হুজুর, পৃথার বাবা সহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বী বসেন, কাবিননামা পড়ার জন্য। সেই সময় কাবিননামায় কাবিনের টাকা উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথার কপালে ভাঁজ পড়ে । সে তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে,
‘কাবিনের টাকা এত কেন?’
পৃথার ফুপি তার হাত চেপে ধরে ইশারায় চুপ থাকতে বলেন। কিন্তু, পৃথা সেটা অগ্রাহ্য করে আবারও একই প্রশ্ন করে বসে। পৃথার বাবা তখন বলেন, কাবিনের টাকা নিয়ে অর্ণবের পরিবারের সাথে তিনি কথা বলেছেন। অর্ণবের পরিবার খুশি মনে এই কাবিন মেনে নিয়েছেন। তবে পৃথা এতে ঘোর আপত্তি জানায়। সে বলে, টাকার সংখ্যা এত বেশি হলে সে কখনোই কবুল বলবে না। কাবিনের টাকা কমাতে হবে। তার এই কথাগুলো তার বাবার বাড়ির লোকেরা একদমই পছন্দ করছেন না, ওনারা বারবার পৃথা কে থামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু, পৃথাও এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্রী না। এক পর্যায়ে পৃথার ফুপি তাকে ধমক দিয়ে বলেন,
‘তুমি যেটা বুঝো না সেটা নিয়ে কথা বলো না।’
পৃথা তাতে উল্টো আরো ক্ষেপে যায়। সে চেঁচিয়ে বলে,
‘বিয়ে যেহেতু আমার সেহেতু কাবিনের টাকাও আমি নির্ধারণ করব।’
প্রথমবার তাদের বিয়ের সময় কাবিন এর টাকা ছিল ১০১ টাকা এবার পৃথা বলে তাদের কাবিন এর টাকা ১০ লক্ষ টাকা থেকে নামিয়ে ১০০১ টাকা করা হবে। পৃথার বাবা আর ফুপি সহ আশেপাশের বেশ কয়েকজন মুরুব্বি বেশ ক্ষেপে গেলেন এতে। বললেন,
‘১০০১ টাকার কাবিন এখন আর আছে নাকি?’
পৃথা তার সহজ স্বীকারোক্তিতে জানায়,
‘১০০১ টাকা এখনের কাবিন হোক বা না হোক আমার বিয়ের কাবিন ১০০১ টাকাই হবে, তার চেয়ে এক টাকাও বেশি হবে না।’
পৃথার কাছে এক পর্যায় সকলকে হার মানতে হয়। পরে তার সিদ্ধান্তকেই কবুল করে নিয়ে ১০ লক্ষ টাকা থেকে কাবিনের টাকা নামিয়ে ১০০১ টাকা করা হয়। কাবিননামা পুনরায় সংশোধন করে কাজী যখন বিয়ে পড়াতে যাবেন তখন শুরু হয় আরেক ঝামেলা। হুট করেই তখন সেখানে কোত্থেকে যেন ফরহাদ এসে হাজির হয়। তাকে দেখামাত্রই পৃথাথ মুখ শক্ত হয়ে যায়। ফরহাদ এসেই চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
‘বিয়ের আগেই মেয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে গিয়েছিল বলে এভাবে হুট করে তার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন তাই না, আঙ্কেল।’
সবাই স্তব্ধ হয়ে ফরহাদের দিকে তাকায়। পৃথার বাবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সঙ্গে পৃথা পুরো বাকরুদ্ধ।
চলবে….#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৫।
পৃথা প্রচন্ড রেগে গেল। সে চেতে গিয়ে বলল,
‘এখন আর কোন ভাবে বিয়েটা আটকাতে পারছেন না বলে, আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন? ছি, কতটা জঘন্য আপনি।’
ফরহাদ শব্দ করে হাসে, তার ঐ হাসির শব্দে পৃথার রাগ যেন আরো তরতর করে বেড়ে যায়। পৃথার বাবা ফরহাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন,
‘এসব কি শুরু করেছে, ফরহাদ?’
ফরহাদ মুখে কিছু বলে না, তার হাতে রাখা কাগজটা পৃথার বাবার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘আপনিই দেখুন।’
পৃথার বাবা ভ্রু কুঁচকে বলেন,
‘এটা কিসের কাগজ?’
ফরহাদ বলে,
‘খুলেই দেখুন না।’
চারদিকে এক থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সবাই থমকে তাকিয়ে আছে পৃথার বাবার মুখ পানে। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে তার কিছুই মেলাতে পারছে না বাড়ির লোকেরা। পৃথা তখন বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
‘কাগজে কী আছে, বাবা?
পৃথার বাবা কাগজটা খুলে ভালোভাবে পরখ করলেন। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল উনার। ভীত চোখে তিনি পৃথার দিকে চাইলেন। বাবার অমন মুখখানা দেখে পৃথার দুশ্চিন্তা যেন আরো বেড়ে গেল। জিজ্ঞেস করল,
‘কী হয়েছে, বাবা? কাগজে কী আছে?’
পৃথার বাবা নিশ্চুপ রইলেন। কাগজটা পৃথার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘তুমি দেখো।’
পৃথা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল, এটা তো ডক্টরের রিপোর্ট। আর সেখানে তার নাম লেখা। পৃথা বুঝতে পারল না কিছু। সে সন্দেহ নিয়ে কাগজটা খুলে ধরল। ডাক্তারের সেই রিপোর্টটা খোলা মাত্রই রুহার মুখটাও সঙ্গে সঙ্গে চুপসে যায়। পৃথা রিপোর্ট খুলে দেখে সেখানে একটা প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট আর সেটা পজিটিভ। রিপোর্টের গায়ে তার নাম, বয়স আর তারিখ দেখে সে যেন আরো চমকে যায়। পৃথার মনে হয়, এটাই কি সেই রিপোর্ট যেটা হারিয়ে যাওয়ার কথা অর্ণব বলেছিল? কিন্তু, এখানে তাকে প্রেগন্যান্ট দেখাচ্ছে কেন? এটা তো অসম্ভব। আতঙ্কে সে রুহার দিকে তাকায়। কিন্তু, রুহার শুকিয়ে যাওয়া চোখ মুখ দেখে পৃথা কোনো উত্তর মেলাতে পারে না। পৃথার বাড়ির লোকেরাও ইতিমধ্যে উত্তেজিত হয়ে পড়েন, কী হয়েছে জানার জন্য। ফরহাদ তখন বলে,
‘তেমন কিছুই হয়নি, শুধু আপনার বাড়ির মেয়ে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছে।’
এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ফুপি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি বড়ো বড়ো চোখ করে পৃথার দিকে চেয়ে বলেন,
‘এসব কী পৃথা? এই ছেলেটা এসব কী বলছে?’
পৃথা অসহায় সুরে বলে,
‘ আমিও কিছু বুঝতে পারছিনা ফুপি।’
তারপর সে রুহার দিকে তাকাল, বলল,
‘রুহা, আমি তো সেদিন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিনি। তাহলে এই রিপোর্ট কোথ থেকে এল?’
রুহা কিছু জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে আছে কেবল। এর মাঝেই বাড়িতে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে যে, বিয়ে হওয়ার আগেই বউ প্রেগন্যান্ট; আর এই যেন এক বিরাট ঘটনা।
পৃথার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। ফরহাদ পকেটে দুহাত পুরে শক্ত গলায় বলল,
‘কী হলো পৃথা, এখন কিছু বলছো না কেন? বলো, তোমার এই বাচ্চার বাবা কে? কার বাচ্চা গর্ভে নিয়ে তুমি অন্য একজনের বউ হতে যাচ্ছিলে? কী হলো পৃথা, এখন বোবা কেন, বলো কিছু।’
পৃথা তার কথার বিপরীতে রিপোর্টটা ছুড়ে মারে। সে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
‘সব কিছু মিথ্যে, এসব কিছু কখনোই সম্ভব না। এটা আমার রিপোর্ট হতেই পারে না।’
তার ছুড়ে ফেলা রিপোর্টটা তখন একজন হাতে তুলে নেয় আর সে মানুষটাকে দেখে চোখে মুখে যেন আরো অসহায়ত্ব ভর করে পৃথার। সে তখন কাতর সুরে বলে,
‘অর্ণব, আমি এসব কিছুই জানি না।’
অর্ণবকে দেখে বাড়ির সবার মনোযোগ এবার তার দিকে যায়। ফরহাদ তাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসে বলে,
‘আরে, এই তো আমাদের বর সাহেবও চলে এসেছেন। আসুন আসুন, আপনারই আসার বাকি ছিল।’
অর্ণব ফরহাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কী হচ্ছে এখানে?’
ফরহাদ তার মুখের হাসি জারি রেখেই বলে,
‘তোমার বউ যে আগে থেকেই প্রেগন্যান্ট, এটা কি তুমি জানতে, অর্ণব?’
অর্ণব হতভম্ব হয়ে পড়ল, কী করে সে এখন এই পরিস্থিতি সামলাবে সেটাই সে বুঝতে পারছে না। পৃথা মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,
‘আমি এসবের কিছুই জানিনা, অর্ণব। এই রিপোর্ট কোত্থেকে এল? এই রিপোর্টে কী আছে সেই সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই।’
ফরহাদ তখন দাঁতের দাঁত চেপে বলল,
‘কী জানো না তুমি? এখন নাটক করছো? বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হয়েছ বলেই এখন একটা সহজ সরল ছেলেকে ফাঁসিয়ে তুমি বিয়ে করতে চাইছো, তুমি কি ভাবছো, আমি কিছু বুঝিনা? ভাগ্যিস, তোমার মতো এমন চরিত্রহীন একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়নি।’
চরিত্রহীন শব্দটা পৃথার মস্তিষ্কে যেতেই তার শরীর যেন আসার হয়ে যায়। অর্ণব আর সহ্য করতে পারল না, সে সজোরে ফরহাদের গালে একটা চড় মেরে বসল। আর চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
‘তোর সাহস কী করে হলো আমার বউকে চরিত্রহীন বলার?’
ফরহাদের মেজাজ তখন আরো বিগড়ে গেল। রাগে সে কটমট করতে করতে বলল,
‘বিয়ের আগেই যে মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয় তাকে চরিত্রহীন বলব না তো কি দুধে ধোয়া তুলসীপাতা বলব?’
অর্ণব আর এসব সহ্য করতে পারছে না। সে চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। পৃথা যেন আর তার হুঁশে নেই। অর্ণব নিজেকে খানিকটা ধাতস্ত করে বলল,
‘পৃথা বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হয়নি, পৃথা আর আমার বিয়ে আরো আগেই হয়েছে।’
ফরহাদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘সেটা আর আমাদের বুঝাতে হবে না। তোমাদের বিয়ে হয়েছে কেবল এক সপ্তাহ হয়েছে আর এখানে রিপোর্টে দেওয়া, পৃথা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। সেটা কী করে সম্ভব বলো?’
পৃথার ফুপি ঝাঁঝাল স্বরে বলে উঠল,
‘ছি ছি, পৃথা, এসব আমি কী শুনছি? শেষে কিনা তুই বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট? কিরে ভাই, তুই তোর মেয়েকে এই শিক্ষা দিয়েছিস? তোর মেয়ে তো আজ আমাদের মান সম্মান ডুবিয়ে ছাড়ল।’
পৃথার বাবা চুপ রইলেন। তিনি দ্বিতীয় কোন কথা বলার সাহস পেলেন না। পৃথা যেন নীরব দর্শক। তার সাথে কী ঘটছে কেন ঘটছে তার কোন ইয়ত্তা সে পাচ্ছে না। একহাতে সে রুহার হাতটা চেপে ধরে কান্না ভেজা স্বরে বলে,
‘এসব কেন হচ্ছে রুহা?’
রুহা তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
‘শান্ত হো, এবার তোর সব সত্যির মুখোমুখি হতে হবে।’
পৃথা তার দিকে ফিরে বলে,
‘কী সত্যি? রুহা ঢোক গিলে। অর্ণবের দিকে চেয়ে বলে,
‘ভাইয়া, আপনি এবার সব বলুন।’
অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, বলে,
‘হ্যাঁ, এবার সব সত্যি বলার সময় এসেছে।’
পৃথার বাবা এবার চমকে দাঁড়ান। বলেন,
‘অর্ণব, দাঁড়াও। তুমি জানো, পৃথার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। ডাক্তার বারণ করেছে ওকে এসব কিছু শোনাতে। তুমি কি আমার মেয়ের জীবন রিস্কে ফেলতে চাইছ?’
পৃথা অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। জিজ্ঞেস করে,
‘কী লুকাতে চাইছো তোমরা আমার কাছ থেকে? অর্ণব, আপনি কোন সত্যের কথা বলছেন?
অর্ণব পৃথার বাবার দিকে চেয়ে জবাব দিল,
‘আজ আর আমি চুপ থাকব না। একবার চুপ থেকে আমি পৃথাকে হারিয়ে ছিলাম। এবার আর হারাতে পারব না। এতদিন এই ভয় দেখিয়েই আপনি আমাকে চুপ রেখেছিলেন, তবে আর না। এবার পৃথাকে সব জানতে হবে, তার ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। আর তাতে তার খুব কষ্ট হলেও আমার কিছু করার নেই।’
চলবে…