প্রেমালঘ্ন পর্ব -১৫+১৬

#প্রেমালঘ্ন
#লেখিলাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৫
,
,
,
,
,
ঈশান ভাইয়ার শুভ্র মুখটা দেখে কেন জেনো চোখের কোণে পানি জমে গেলো। বড্ড ইচ্ছা করছে গাল জোড়ায় উনার পুরুষালী শক্ত হাতের ছোয়া পেতে। কিন্তু জানি সেটা সম্ভব না। আমি দৃষ্টি সরায় নিলাম উনার থেকে। চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে আসছে অজনা ব্যাথায় চিন চিন করছে বুকের বাম পাশটা।

জানালার সাথে মাথা ঠেকায়ে চোখটা বন্ধ করে নিলাম। ঘাড় বেকা হওয়ায় চুল গুলোও এসে পড়লো মুখের উপরে।ইচ্ছা করলোনা হাত দ্বারা সরাতে। থাকুক না নিজের মতো আমিও নাহয় এই কালো কেশের আড়ালে নিজের অজানা কারনে জমা হওয়া অশ্রু গুলোকে মুক্ত করে দিবো।

ঘুমের মাঝেই গালে কারো স্পর্শ পেয়ে শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো।অজনা কারণে মন চাইলোনা চোখ দুইটা খুলতে বরং সময়ের সাথে নিবিড় হতে থাকা স্পর্শতে নিজেকে ভাসাতে ইচ্ছা করলো।কিন্তু মস্তিষ্ক সায় দিলোনা মনের এই ইচ্ছার সাথে চোখ খুলতেই চোখ গেলো গভির কালো আখি জোড়া যা অজনা নেশায় ভরপুর। মস্তিষ্ক কাজ করা যেনো মহূর্তে বন্ধ করে দিলো।আসফি ভাইয়ার হাত জোড়া তখন ও আমার গালে গলায় তার গরম নিশ্বাস স্পষ্ট টের পাচ্ছি

;ওগো শ্যামাঙ্গিনী কি মাখো এই মুলায়েম রেশম চুলে যার ঘ্রাণ আমাকে পাগল করে দেয়। শত শত চেষ্টাও যে বিফলে ফেলে দেয় তবুও যেনো কোন কিছুই পারে না তোমার থেকে দূরে রাখতে। এই তুমিতে যে মাতাল প্রিয়। চলোনা মান অভিমানের পালা শেষ করে নতুন #প্রেমালঘ্নের গল্প শুরু করি।

পারলাম না সহ্য করতে আপন মনেই বন্ধ হয়ে এলো আখিজোড়া।কম্পনরত ঠোঁট জোড়ায় অন্য কারো কোমল ঠোঁট জোড়ার ছোয়া পেতেই চোখের দুই ধার দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে এলো।

হঠাৎ কানে বাসের কান্ডেক্টর এর আওয়াজ পেতেই ঘুম ভেংগে গেলো।চোখ খুলতেই বুঝতে পারলাম আমি বাসে।আর এতোক্ষনের সব কিছুই ছিলো স্বপ্ন। মাথা উঠাতে নিলেই বাধা পেলাম যেনো শক্ত ভাবে কেউ আমার মাথা টা বেধে রেখেছে। ধীরে ধীরে মাথা খানিকটা উপরে তুলতেই আসফি ভাইয়ার খোচা খোচা দাড়িতে নিজের কপালে লাগতেই অদ্ভুদ শিহরণে সারা শরীর কেপে উঠে।ভালোবাসা নামক অনুভূতির সাথে আমার পরিচয় আগে একবার হলেও এই রকম অনুভূতির সাথে পরিচয় হয়নি আমার আগে।

হঠাৎ বাস ব্রেক কষতেই আসফি ভাইয়ার মাথাটা কিছুটা সামনে ঝুকে যায় তাড়াতাড়ি করে সামনের সিটে হাত রাখাই মাথা টা এসে বারি খাই আমার হাতে ভাইয়ার মাথাতে না লাগলেও হাতটা আমার লাল বয়ে যায় ইতিমধ্যে ভাইয়ার ঘুম টাও ভেংগে যায়।আর আলগা করে দেয় উনার বাধন।আমি হাত ঝাড়া দিতে শুরু করি।

;কি হয়েছে হাতে দেখি

;আরে ও কিছুনা হাত সামনে হালকা বারি খেয়েছিলো

আমার উত্তর যেনো পছন্দ হলোনা সেটা উনার মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম আমি। হাসি পেলো হাতের ব্যাথা যেনো পাত্তা পেলোনা তাই গায়েব হয়ে গেলো মানুষ টার এই কেয়ার টা মিস করেছি যে প্রচুর

;হাত দে

আমি বিনা বাক্যেতে হাত উনার সামনে দিলাম হাতের তালুতে ব্যাথা পেলেও সেটা ওতোটা ছিলোনা কিন্তু হাতের পিঠ রোড এর সাথে বাড়ি খাওয়াই সেটাই লাল দাগ বসে গেছে অবশ্য সেদিনে আমার তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ নেই। আমার দৃষ্টি তো সামনে থাকা সুদর্শন যুবোক টির উপরে যার খোচা খোচা দাড়ির প্রতি লোভ আমার বড্ড।

;বড় আব্বু কই

;আরিফা কে নিতে গেছে(ব্যাগে মলম খুজতে খুজতে)

;আরিফা ঢাকাই

;হুম ওর মামা বাসায় এসেছিলো।

;একটাবার দেখাও করেনি

;তোর কথায় কথায় নাক না ফুলালে হয়না। যেদিন নাকের মাথায় কামড় বসাবো সেদিন বুঝবি

;আপনি কেনো যাচ্ছেন

;আমি তো আর।সাধে যাচ্ছিনা আপনার বড় আব্বু কল করে বললো যে তার মেয়েকে।যেনো দেখে শুনে বাসায় পৌঁছে দি। তাই কাজ কাম ছেড়ে ছুটে আসা নাহলে আমার ওতো ফালতু সময় নেই।

আসফি ভাইয়ার এমন কঠোর আর ব্যাঙ্গাত্মক বাণিতে বড্ড অভিমান জন্মালো বুক পিঞ্জোরে হাস্যজ্বল মুখটা নিমিষেই অভিমানী মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পরলো

এতোটাই ফেলনা সে এই।লোকটার কাছে। আমার পিছনে কর৷ ব্যায় সময় গুলো ফালতু সময় কিন্তু সে কি জানে।তার এই ফালতু সময় গুলো আমার জন্য বর্তমানে ঠিক কতোটা মূল্যবান।

;হাত দে

;—–

;হাত চাইলাম

;———

আরুর নিশ্চুপ হয়ে থাকা আসফিকে বুঝাতে সময় নিলোনা যে তার শ্যামাঙ্গিনী অভিমান করেছে।সে মুচকি হেসে মলম টা হাতে।নিয়ে।আলতো করে তার আরুর হাত টা ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে স্প্রে করে দিলো।

হঠাৎ কানে গরম নিশ্বাস পড়তেই দম আটকে আসতে লাগলো আমার। অজনা এক নেশায় ডুবতে শুরু করেছি আমি সেটা বুঝতে আমার বাকি।নেই আর।কিছু সেকেন্ডের মাঝেই কানে এলো উনার সে মন মাতানো আওয়াজ

;এই অভিমানে যখন মুখটা ফিরাও বুকের বামপাশটাই অদ্ভুদ একটা আন্দোলন শুরু হয়ে।তোমার এই চোখে যখন অশ্রু জমে শ্যামাঙ্গিনী বিশ্বাস করো বড্ড হিংসা হয় ওই অশ্রু কোণার উপর।ইশ যদি ওই চোখের মূল্যবান অশ্রু কোণা হয়ে তোমার গাল বেয়ে ঝড়তে পারতাম জীবন টা সার্থক হতো গো প্রাননাসী।

হেলায় দিলাম মাথা উনার বাহুতে। উনিও সাদরে তার বাহুতে আবদ্ধ করে নিলেন আমায়।এবার আর নিজেকে আটকালাম না আমার ঠোঁট জোড়া দ্বারা স্পর্শ করলাম উনার খোচা খোচা দাঁড়ির আড়ালে শক্ত গাল।
উনার বাহুতে আব্ধ থাকায় স্পষ্ট বুঝলাম উনার কম্পন। উনার বুকের স্পন্দন দ্বিগুন গতীতে ছুটার আওয়াজ যেনো আমার মন কে অদ্ভুদ তৃপ্তি দিচ্ছে। অদ্ভুদ ভালো লাগায় ছুয়ে দিচ্ছে এই মন। তাহলে কি এবার সত্যি শুরু হতে চলেছে আমার #প্রেমালঘ্ন।

বাড়িতে প্রবেশ করতেই যে এতো বড় চমক পাবো আমি আশা করি নাই।জানিনা এখন আমার কি করা উচিৎ এমন অবস্থায় আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবো বুঝতে পারলাম না। কিন্তু বুক পাজোরে অদ্ভুদ খুশি অনুভব করলাম।সারা বাড়ি আজ আনন্দে মুখরিত। হবেই না কেন বাড়ির আদরের ছেলে আলিফ ভাইয়া বাবা হতে চলেছে। ছোট ছোট হাত পা নিয়ে খেলার মানুষ আসতে চলেছে।আলিফ ভাইয়ার সে কি উত্তেজনা কি করবে না করবে কিভাবে ঘড় সাজাবে চোখ মুখে আলাদায় খুশির ঝিলিক এখন থেকেই কতো খেয়াল উনার। আফরা ভাবিকে সম্পূর্ণ ছুটি দেওয়া হয়েছে সব কাজ থেকে।এখন উনার পা আলিফ ভাইয়া।

হঠাৎ করে আখি জোড়া বেয়ে গরিয়ে পড়লো অশ্রু। কি ভাবছেন তো কেমন মেয়ে আমি ছোট ভাইয়ের জন্যেও অনূভুতি আর বড় ভাইয়ের প্রতিও। প্রথম ভালোবাসা যে এমন ই অদ্ভুদ মুখ দিয়ে চিল্লায় চিল্লায়েও যদি বলা হয় আমি তাকে ভুলে গেছি। ভুলে গেছি তাকে নিয়ে সাজানো কল্পনার রাজ্যে ভুলে গেছি তাকে নিয়ে কল্পনাই গড়া ভবিষ্যৎ আদৌ কি সেটা সত্যি হয় উহু। দ্বিতীয় ভালোবাসা যেমন গভীর হয় কথাটা সত্যি প্রথম ভালোবাসা আজীবন মনের এক কোণায় যত্ন করে লুকিয়ে থাকে।যে ব্যাক্তিটাকে নিয়ে একসময় এই সময় টার কল্পনা করতাম আজকে সে কল্পনা টা সত্যি কিন্তু সে জায়গাটাই আমি নেই আজ লোকটা পাগলামী কেয়ার করছে ঠিক কিন্তু তার এই পাগলামীর কারণ টা যে আমি নই।

হঠাৎ করে নিজের হাত আসফি ভাইয়ার হাতের ভাজে পেতেই তার দিকে তাকালাম। আবার আশেপাশে তাকালাম। সবাই বর্তমানে আফরা ভাবীকে নিয়ে ব্যাস্ত হাফ ছাড়লাম। কিন্তু আমার আখি জোড়া দেখতে পেলোনা কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার আর আসফি ভাইয়ার হাতের বাধনের দিকে।

;প্রস্তুত হও শ্যামাঙ্গিনী। হয়তো সামনের বছরে এমন একটা দিন আসবে তুমি এই ভাবেই লজ্জায় মাথা নুয়ে রাখবে আর আমি তোমার সে লজ্জা রাঙ্গা লাল হওয়া গালে গভীর ভাবে চুম্বন একে তোমার শারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলবো।

উনার এমন বেফাস কথায় শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো হাত ছুটিয়ে কোন রকম পালিয়ে এলাম। এ কেমন অবস্থা হলো আমার এ কোন মায়া রাজ্যে প্রবেশ হলো আমার যেখানে আসফি নামক নিষ্ঠুর পুরুষ প্রতিনিয়ত তৈরি আমাকে লজ্জায় রাঙ্গাতে।।
#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকা;নওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১৬
,
,
,
,
,
ভারী বর্ষনে সারা শহর কে স্নান করিয়ে করে তুলছে সজীব গাছ লতাপাতা সব কিছু যেনো নতুন প্রান ফিরে পেয়েছে।সে তুমুল বর্ষণের প্রতিটি বিন্দু অদ্ভুদ আনন্দ দিচ্ছে আমাকে।পুরাতন ক্যানভাসে আকানো শহরকে মুছিয়ে নতুন করে সাহস জোগাচ্ছে পুনরায় রঙ তুলি হাতে নিয়ে নতুন শহর আকানোর।

বৃষ্টি বিলাসে বাধা দিয়ে আমার কোমড় নিজের হাত দিয়ে পেচিয়ে নিলো আসফি ভাই। পিছন থেকেও তার ছোয়া চিনতে আমার ভুল হয়নি হবেই বা কি করে সে ছাড়া আর কারো স্পর্শ করার অধিকার যে নেই তার এই স্পর্শে আমার রুহ অব্দি কম্পিত হয়ে উঠে।সে ভয়ংকর সুখময় স্পর্শ কি ভুলা সম্ভব।

ধীরে ধীরে উনার হাত আমার শাড়ী ভেদ করে উমুক্ত নাভী স্পর্শ করতেই কেপে উঠলাম আমি। হেলিয়ে দিলাম শরীর উনার বুকে।কাপা কাপা কাতর কন্ঠে বলে উঠলাম

;কি করছেন আসফি ভাই কেউ দেখবে

;দেখুক সবাই দেখুক আমার শ্যামাঙ্গিনীকে আমার রঙে রাঙাতে দেখুক।তার নামের পাশে যে এখন আমার নাম জুড়ে গেছে সেটা জানুক সবাই

;পাগল হয়ে গেছেন আপনি আসফি ভাই। আগে তো জানা ছিলোনা এই গম্ভির আর চুপচাপ স্বভাবের ছেলেনা আসলেই এতো ঠোঁট কাটা আর লাগাম হীন

;এখন ও তো শুরুই করলাম না কিছু শ্যামাপরী তাতেই লাগাম হীন আর
ঠোঁট কাটার উপাধী দিয়ে দিলা তাহলে একটু লাগাম হীন কাজ করে দেখাই

কেপে উঠলাম আমি উনার এমন নেশা জোড়ানো আওয়াজ শুনে।কারো আওয়াজেও বুজি নেশা থাকে।জানা ছিলোনা আর না কোন দিন কারো এতোটা গভির স্পর্শে মাতাল হওয়ার অনুভূতিতে বেশালাম হয়ে পড়েছি।

আসফি ভাই একটানে আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া চুল গুলো এসে লেপ্টে গেলো আমার গালে কাজল ও চোখের রেখা ত্থেকে বের হয়ে চোখের নিচে থাকা গর্তে এসে বাসা বেধেছে।আসফি ভাই আলতো হাতে আমার চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিলেন উনার এমন স্পর্শ সহ্য করতে না পেরে খামচে ধরলাম উনার পড়নের শার্ট।এতেও যেনো।উনি শান্ত হলেন না। গভীর চুম্বন করলেন আমার আখি জোড়াই। ধীরে ধীরে উনার অধর জোড়া এসে থামলো আমার গালে। আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে এলো আমার।এ কেমন অনুভূতি যে অনুভূতি সহ্য করা কষ্টকর আবার এর ঘোর থেকে বের হওয়াও যেনো আমার জন্য দুষ্কর। হঠাৎ করে গলায় চিনচিন ব্যাথা অনুভূতি হতেই ব্যাথায় খামচে ধরলাম উনার বাহু।

গলা থেকে মুখ সরিয়ে উনার নাক এসসে স্পর্শ করলো আমার গালে। ঘ্রান নেওয়ার মতো করে নিজের নাক।দ্বারা গালে স্লাইড করতে শুরু করলো আমি লজ্জায় উনাকে ছাড়িয়ে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে পরে। আচল শক্ত করে বুকে চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলাম। অস্থির হয়ে হাত ছুটানোর চেষ্টা করতেই বলে উঠলেন উনি

;এখন ই এতোটা অস্থির হয়ে পরছো প্রিয়তমা যেদিন এই স্পর্শ তোমার শারা শরীর জুরে থাকবে সেদিন কি করবে। যেদিন তোমার সমস্ত লজ্জা ভেংগে তোমাকে সম্পূর্ন্য নিজের করে নিবো সেদিন কি করবে শ্যামাঙ্গিনী সেদিন কই পালাবে

আমি আর সহ্য করতে না।পেরে ঝটকায় উনার হাত ছাড়িয়ে নিচে নেমে এলাম।

ছাদে দাড়িয়ে দুই হাত দুক দিকে মিলিয়ে বৃষ্টিকে নিজের দিলে আহ্বান করতে লাগলো নিজের দিকে

;আমি পেরেছি তার মনে আমার জায়গা গড়তে পেরেছি তাকে আমার রঙ্গে রাঙ্গাতে। ওকে একান্তই নিজের করতে আর শুধু এক ধাপ তার পরে সে আমার আমার রাজ্যের রানী আমার শ্যামাঙ্গিনী আমার আরু পাখি।যাকে নিয়ে হাজারো প্রেমালঘ্নর গল্প সাজাবো যে গল্প এই৷ সারা শহরে রটবে যখন আয়রা এই আসফির বুকে মাথা রেখে সারা দুনিয়াকে ভুলে যাবে।

——–

রাতে খেতে এসে অবাক হলাম ডাইনিং টেবিলে সবাই আছে কিন্তু সেখানে অনুপস্থিত রয়েছে আসফি ভাই। উনার না আসার কারণ বুঝলাম না আমি।এমনকি বড় আম্মুও ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত নেই খটকা লাগলো আমার।

;ছোট মা বড় আম্মু কই

;আর বলিস না আসফির হুট করে জ্বর এসেছে বড় আপা আসফির সাথেই আছে।ডাক্তার আসে দেখে গেছে।তুই তো ঘুমাচ্ছিলি তাই টের পাস নি

অবাক হলাম আমি কি এমন ঘুম দিলাম যে কিছুই টের পেলাম না খাওয়ার আর গলা দিয়ে নামলো না। প্লেট সরায়ে রওনা দিলাম আসফি ভাইয়ার রুমে। পিছন থেকে আমার নাম ডাকছেন বড় আব্বু ছোট আম্মু আব্বু কিন্তু সেদিকে কান দিয়েই হাটা ধরলাম

;দেখলা বাবা ভাইয়ের জ্বর শুনেই কি করে ছুটে গেলো

;তাই তো দেখছি আলিফ। আল্লাহ করে যেনো দুইজন এক হয়। আমার মা টার কষ্ট যাতে আসফি নিজের ভালোবাসা দিয়ে ভুলায় দিতে পারে

;মানে কিসের কষ্ট

;ভালোবাসার ছোট বেলায় বাবা মা ছাড়া মানুষ হয়েছে। যতোই আমরা ওকে ভালোবাসি নিজের বাবা মা য়ের জায়গা কি আর নেওয়া যায় কিন্তু একজন স্বামি পারে সে জায়গা করে নিতে।কারন বিয়ের পরে স্বামির ভালোবাসায় একজন স্ত্রীর জন্য সব হয়।

;হুম

—–

বড় আম্মু চোখের পানি ফেলছেন আর ভাইয়াকে জ্বল পট্টি করে দিচ্ছেন আসফি ভাইয়ার মুখটা কেমন লাল হয়ে উঠেছে।চোখ মুখ শুকায়ে গেছে চেহারার উজ্জ্বলতা কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে বিলিয়ে গেছে।

আমি কাপা কাপা পায়ে রুমে এগিয়ে গেলাম আমার পায়ের শব্দ শুনে অশ্রু শিক্ত নয়নে বড় আম্মুর আমার দিকে তাকালো আমার বুকটা ধোক করে উঠলো কান্না করতে করতে চোখ জোড়া ফুলিয়ে ফেলেছে বড্ড মায়া হলো নিজের উপর রাগ ও হলো প্রচন্ড।

;তুই এসেছিস মা দেখনা ডাক্তার ঔষধ দিয়ে গেলো তবুও জ্বর কমছেনা তুই একটু ওর পাশে বসে জ্বল পট্টি দে আমি তোর বড আব্বুকে ডেকে আনছি

আমি মাথা নারালাম।বড় আম্মু যাইতেই উনার মাথার পাশে বসলাম।পাশে রাখা বাটি থেকে রুমাল ভিজিয়ে উনার মাথায় রাখলাম

;কি দরকার ছিলো বৃষ্টিতে ভিজার । জানেন বৃষ্টি সহ্য হয়না আপনার তারপরেও হিরো গিরি করতে গেছিলেন

;উহু হিরোগিরি না রোমিও গিরি বলে একে শ্যামাঙ্গিনী। সেটা তুমি বুঝবা না

;হ্যা আমি বুঝবো কেন সব বুঝার দায় তো আপনার যতসব

;রাগে যখন তোমার ওই সরু নাক টা ফুলে লাল হয়ে যায় না বিশ্বাস করো শ্যামাঙ্গিনী বড্ড দায় হয়ে যায় নিজেকে সামলানো

;এই আপনি চুপবেন জ্বরের মাঝেও ফালতু কথা

;এগুলো……..

আসফি ভাইয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে উনার মুখে হাত রাখে উনাকে চুপ করায় দিলাম। সাথে সাথে উনার উতপ্ত ওষ্ঠদ্বয় এর ছোয়া পেলাম হাতে।সাথে সাথে চোখ গরম করে হাত সরায় নিলাম আর উনি হেসে উঠলেন। বালিশ ছেড়ে আমার কোলে নিজের মাথা রাখতেই কেপে উঠলাম এ কি এলাহি কান্ড

;কি করছেন আসফি ভাই দরজা খোলা বড় আম্মু যেকোন মহূর্তে চলে আসবে। প্লিজ উঠুন। বড় আম্মু এই অবস্থায় আমাদের দেখলে কলংকারী হয়ে যাবে

;হোক আমার তাতে কিছু যায় আসেনা শ্যামাঙ্গিনী তুমি থাকলেই আমার চলবে এবার চুপটি করে আমার চুল টেনে দেওনা মাথাটা প্রচুর ধরেছে।

;আপনি বালিশে শুয়ে পরুন আমি সেখানেই টিপে দিবো

উনি কোন জবাব না দিয়ে আমার পেটে মুখ গুজলো কেপে উঠলাম চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো প্রথম দিন ঢাকার ঠিক এই ভাবেই আমার কোলে আসন পেতে ছিলেন। ওই দিন অনূভুতি গুলো দল পাকিয়ে গেলেও আজকে তারা উমুক্ত। চোখ বন্ধ করে অতীত ঘুরতে শুরু করলাম আর হাত চলতে থাকলো উনার মোলায়েম ঘন ঝাকরা চুলে।আজকের অতীতের পর্দায় আসফি ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব নেয়।

চলবে!
চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here