প্রেমালঘ্ন পর্ব -৩১+৩২

#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৩১
,
,
,
,
,
মায়ের জোড়াজুড়িতে আরিফা কে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় আরিফাকে নিয়ে। আরিফাও খুব খুশি হলো কবে থেকে বাসা থেকে বের হয়না তার ও একটা চেঞ্জ প্রয়োজন ছিলো।আরিফা আরহামের পছন্দের কালো শাড়ি পরে নিজেকে তৈরি করে নিলো চোখে কাজল কপালে ছোট টিপ পরে বেরিয়ে পরলো বাহিরে বের হতেই তার চোখ জোড়া যেনো আটকে গেলো তার প্রেমিক পুরুষ টা কে যেনো কোন রাজ্যের রাজ কুমার লাগছে তৈজস রুপ। ধূসর রাঙ্গা শার্ট আর ব্লু জিন্সে এতো আকর্ষনীয় কোন ছেলেকে লাগতে পারে সেটা আরিফার জানা ছিলোনা।

—আমাকে দেখা হলে এবার বেরুতে পারি।দেরি হয়ে যাচ্ছে

আরহামের গম্ভির গলায় বলা কথা শুনে আরিফার শরীর টা জ্বলে উঠলো মুখ ভেংচি দিয়ে বির বির করে বলে উঠলো

—ছ্যাত করে উঠার জন্য সব সময় তৈরি হয়ে থাকে এই লোকটা সব কথায় যেনো ঝাঝ দিয়ে ভরা।

—আমার নামের দুর্নাম করা হলে উঠে বস নাহলে তোকে থুয়ে চলে যাবো তখন আমাকে কেউ কিছু বলতে পারবিনা

—রিক্সাই যাবো

—থাপ্পড় দিবো

—মাকে ডাক দিবো

আরহাম ভাইয়া রাগী একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাহিরে যেয়ে রিক্সা থামিয়ে আরিফা উঠিয়ে রওনা দিলো উদ্দেশ্য হীন গন্তব্যতে

_________

অনুষ্টান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো সাথে বারতে থাকলো আমার রাগ।এই সারা টা সময় প্রিয়ন্তিকা একপ্রকার চিপকে ছিলো আসফি ভাইয়ার সাথে।যেনো আঠা দিয়ে দুইজনকে লাগিয়ে রাখা হয়েছে একে অপরের সাথে। ইতিমধ্যে ভার্সিটি জুরে চাপা গুঞ্জন ছড়িয়েও পরেছে যে আসফি ভাই আর প্রিয়ন্তিকা ম্যাম আগে থেকে চিনে আর তারা রিলেশান এ ও আছে কেউ কেউ তো আগ বাড়িয়ে এটাও বলছে ওদের খুব শ্রীঘই বিয়েও হতে চলেছে।ইচ্ছা করছে সব গুলোর মাথা ফাটিয়ে দেয়।এরই মাঝে কেউ একজন কলেজ গ্রুপে আসফি আর প্রিয়ন্তিকার ছবি পোস্ট করে লিখেও দিয়েছে #আপ্রি। আমি এদের কান্ড দেখে হতবাক আর এদিকে বিবাহিত বউ হয়েও কিছু করতে না পারায় নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা করছে।

এরই মাঝে ফোন বেজে উঠলো স্ক্রীনে স্পষ্ট লিখা ভাসছে আসফি উইথ এ হার্ট। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই আসফি ভাইয়ার ক্লান্ত মাথা গলা।কানে শ্রবণ হতেই রাগ টা পানি হয়ে আসে।

—আরুপাখি তুমি বাড়ি চলে যেও প্রিয়ন্তিকা বড্ড জেদ করছে আজকে নাকি আমাকে তার সাথে যেতে হবে সব ফ্রেন্ড রা নাকি আজকে এক সাথ হবে আমাদের আড্ডার জায়গাতে

—ওহ আচ্ছা ঠিক আছে

—মন খারাপ করলা

—নাহ কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে আসিয়েন

—হুম ভালোবাসি বউ

আমি কিছুনা বলে রেখে দিলাম। মার্জান মারিয়া আর বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে।রওনা দিলাম মন টা খারাপ হয়ে গেলো হঠাৎ করে একটা কেক শপ দেখে কিছু একটা মনে পরে গেলো ব্যাগ হারতে দেখলাম কই টাকা আছে।ব্যাগ থেকে টাকা বের করে গুনতেই চোখ দুইটা চকচক করে উঠলো।।।এক গাদা শপিং করে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্য।।

,
,
,
আরিফা আর আরহাম বসে ছিলো পার্কের এক ব্রেঞ্চিতে। হঠাৎ সেখানে একজন যুবোক এসে উপস্থিত হয়।আরিফার চোখ দুইটা চকচক করে উঠে উত্তেজনায় জরিয়ে ধরে সে যুবোক টাকে যুবোক ও খুশিতে নিজের সখিকে জরায় ধরে। দুই পুরাতন বন্ধু একে অন্যের সাথে আলাপ করতে ব্যস্ত এদিকে যে তাদের দেখে কেউ একজন রাগে ফুসছে সেদিনে কারোই খেয়াল হলোনা। আরহামের চোখ ওই ছেলের দিকে আবদ্ধ যাকে কথার ছলে আরিফা পরিচয় করিয়েছে আকিব হিসেবে।

আকিবের চোখে স্পষ্ট আরহাম লালসা দেখতে পাচ্ছে। কথার ছলে বার বার আরিফার শরীর স্পর্শ করার চেষ্টাও তার দৃষ্টি এড়াতে সম্ভব হলোনা।

এতে তার রাগ যেনো দ্বিগুন বেরে গেলো আকিবের সামনেই সাপটে চড় বসিয়ে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসলো।আরিফার লজ্জায় ব্যাথায় চোখে পানি চলে এলো।তার ফ্রেন্ডের সামনে অন্তত এরকুম আচারণ না করলে কি হতো না

আরহাম টেনে হিচরে আরিফাকে নিয়ে যেতে নিলেই মিসেস জামান বাধা দিতে চায় কিন্তু পারেনা। আরহাম আরিফাকে রুমে নিয়ে যায় আরও একটা থাপ্পড় মারে

—কি শুরু করেছিস তুই হ্যা ছেলেদের ছোয়া কু দৃষ্টি খুব ভালো লাগে সেজন্য এতো ঘেষাঘেষি তার সাথে

—কি বলছেন এইসব হ্যা এইসব আর আপনার কি সমস্যা কিসের এতো ঘৃণা আমার উপরে কেন এমন করেন সব সময় আমার সাথে। আপনার নিজেকে পুরুষ মনে হয় আপনি,,,,,,,,,, আর কিছু বলতে পারলোনা তার আগেই আরহাম নিজের রাগ মিটাতে লাগলো যেনো এতো বছরের রাগ এক সাথে ঝারে চলেছে সে।

খাটের এক পাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে আরিফা। শরীর তার অনবরত কেপে চলেছে ভয়ে উত্তেজনায়। ব্যাথায় মুখ টা নিল বর্ণ ধারণ করেছে কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে ব্লাউজ এর হাত ভেদ করে ফর্সা হাত ফেটে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। পুরো শরীর রক্তে ক্ষতবিক্ষত।যে কেউ দেখে বলতে পারবে হিংস্র পশুর ন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে ছোট শরীর টার উপরে।

আরিফার থেকে কিছুটা দূরেই মাথা চেপে বসে আছে আরহাম। হাত তার মোটা একটা বেত যেটা দ্বারাই এতোক্ষন আরিফার উপরে নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছে সে।

কিছুক্ষণের মাঝেই দরজাই বাড়ি পড়ার আওয়াজে আরিফা ভয়ে একদম দেওয়ালের সাথে সিটিয়ে যায়।আরহাম সেটা দেখে জোড়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বেত টা ছুড়ে মেরে যেয়ে দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলতেই দৃষ্টি গোচর হয় মিসেস জামান এর শুভ্র মুখ খানা যেটাতে চাপা রাগ আর ঘৃণা স্পষ্ট।আরহাম ভারি নিশ্বাস ত্যাগ করে জায়গা থেকে প্রস্থান নেয়। ডাক্তার ডাকা জরুরি।

কিছুক্ষনের মাঝেই ডাক্তার চলে এলো কিছু ঔষধ প্রেসক্রিপশানে লিখে চলে গেলো যাওয়ার আগে আরহাম কে বলে গেলো

—নিজের বউ এর যত্ন নেন বউ শুধু ভোগ আর রাগ মিটানোর বস্তু হয়না।। বড় হয়েছিস ভালো খারাপ বুঝিস মানুষ আছিস মানুষ থাক জানোয়ারের রুপ ধারণ করিস না

আরহাম মাথা নিচু করে ফেললো কাজের মানুষ কে দিয়ে ঔষধ আনায়ে নিলো । মিসেস জামান আরিফার কাপড় চেঞ্জ করতে নিলে আরহাম বাধা দেয়।

—তুমি রুমে যেয়ে রেস্ট নেও মা আমি সামলে নিবো

—খবরদার ওই পাপী মুখে আমাকে মা ডাকবিনা ছি আমি ভাবতে পারছিনা আমি তোর মতো কুলাংগার ছেলের মা। কি করে পারলি বাভচা মেয়েটার সাথে এমন জানোয়ারের মতো আচারণ করতে তোর কি বুক কাপলোনা একটা বার মায়ায় ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে দেখ তো

আরহাম নিশ্চুপ হয়ে শুনলো নিজেকে নিজের কাছে নিকৃষ্ট পশু লাগছে।
মিসেস জামান চলে গেলেন আরহাম দরজা বন্ধ করে এনে অজ্ঞান হয়ে থাকা আরিফার যখম জায়গায় পরিষ্কার করতে শুরু করলো।ওর চোখে পানি চলে এলো আরিফার যখন দেখে।

—মাফ করে দিস জানিনা কিভাবে এতোটা নিচে নেমে গেলাম কিন্তু তোর শরীরে ওর কু দৃষ্টি যেনো সহ্য হচ্ছিলোনা তার উপরে তোর কথা গুলো রাগ টাকে আরও দ্বিগুন বারিয়ে দিয়েছিলো জানি আজকের পর থেকে তুই হয়তো ভালোবাসবি না আর সেটাই হয়তো আমাদের জন্য ঠিক হবে
আমরা আলাদা হওয়ার জন্যই হয়তো এক হয়েছিলাম।

কথা গুলো বলতে বলতে কখন এক ফোটা অশ্রু চোখে বেয়ে গরিয়ে পরলো আরহাম বুঝলোনা। আরিফার জামা বদলে দিয়ে বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

———

রাত দেড় টার দিকে বাসায় এলো আসফি। বারান্দার লাইট জ্বালাতেই তার দৃষ্টি গেলো দেওয়ালের দিকে। আর যা দেখলো তার জন্য মৌটেও প্রস্তুত ছিলোনা সে।
#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৩২
,
,
,
,
দেওয়ালে বড় বড় করে লিখা আছে “HAPPY BIRTHDAY ASFI” আসফি থোমকালো সে মনে করেছিলো আয়রার মনে নাই সেজন্য তার বন্ধুরা যখন তাকে জোড় করলো তখন সে থেকে যেতে বাধ্য হলো অনেক। দিন পরে দেখা হয়েছিলো সে চেয়েছিলো না তার চলে যাওয়াই তারা কষ্ট পাক তাদের এতো এতো আয়োজন বৃথা হয়ে যাক।তাইতো আয়রাকে ম্যাসেজ পাঠায় দিয়েছিলো তার ফিরতে দেরি হবে।কিন্তু মেয়েটা হয়তো এইসব আয়োজন করতে ব্যাস্ত ছিলো।পাশে তাকাতেই চোখ যায় টেবিলের উপর রাখা কেক টার উপরে পাশেই পার্টি স্প্রে ফুল মোমবাতি প্লাস্টিকের চাকু।ডাইনিং টেবিলে কতো বাটির যে ভীড় তা দেখে আসফি আরও অবাক হলো যে মেয়ে কোন রকম দুই বা তিনটা আইটেম বানাতে পারত আজ সে মেয়েটা বাহারী রকম রান্না করে ভরিয়ে তুলেছে টেবিল টা চোখের সামনে হুট করে ভেসে উঠলো আয়রার ঘামক্ত উজ্জ্বল মুখটা। আসফির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো হঠাৎ করেই ঘামাক্ত হাস্যজ্বল মুখটার জায়গায় ভেসে উঠলো কান্নারত মানবী।দরজার দিকে তাকিয়ে কান্না করা এক অসহায় মানবীকে দেখে বুকের ভিতর টা মুচরে চলেছে।

কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে গেলো নিজের ঘরে। আলো জালাতেই অবাক হলো পুরো রুমে কেউ নেই মেঝেতে পরে আছে বাঙ্গি রঙের শাড়ি।রেশমি লাল বাঙি মিশ্রিত চুড়ি।হঠাৎ করে মুচরে উঠলো বুকের বামপাশটা নিজের অজান্তেই কতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে তার শ্যামাঙ্গিনীকে সেটা ভাবতে দম বন্ধ হয়ে কান্না পাচ্ছে তার অসহ্যকর যন্ত্রণা হচ্ছে। এই মহূর্তে শুধু তার প্রয়োজন তার শ্যামাঙ্গিনীর ছোয়ার কিন্তু কোথায় তার অভিমানী । কই লুকিয়ে রেখেছে তার অভিমানী মুখশ্রী।

আসফির কান হঠাৎ সজাগ হয় ঝর্ণার আওয়াজে।কেপে উঠে তার সর্বাঙ্গ। কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে কয়েক বার ডাকার পরেও যখন সারা পায়না তখন অসহ্যকর ব্যাথা উঠে তার মনে এ কি ব্যাথা এতো ব্যাথা কেন হচ্ছে তার বুকের বা পাশ টাই।তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলতে চাইলেও শরীর সায় দিচ্ছেনা বড্ড কু ডাকছে মন টা ।

কাপা হাতে হ্যান্ডেল ঘুরাতেই আয়রার নিস্তেজ মুখটা দেখেই পা জোড়া ভেংগে এলো আসফির। মুখটা নিল হয়ে এসেছে।সাওয়ারের পানি তখন ও ভিজিয়ে দিচ্ছে জ্ঞান শূন্য মেয়েটির সারা শরীরকে।অনেক কষ্টে এগিয়ে এসে ঝর্ণা বন্ধ করে দিলো।শরীর টা ছেড়ে দিয়ে বসে পরলো তার শ্যামাঙ্গিনীর পাশে।বরফের ন্যায় শীতল শরীর টাকে চেপে ধরলো নিজের উষ্ণ বুকে।।।।

—এতো অভিমান কেন রে তোর একটাবার কি ভাবলি না তোর আসফির কি অবস্থা হবে তোকে এই অবস্থায় দেখে।রাগ আমার উপরে এনে ফেলতি তোর মাথা পেতে নিতাম কে নিজেকে কষ্ট দিলিরে এই করণ যন্ত্রণা যে সহ্য করা দায় হয়ে যাচ্ছে বুক পাজরের হাহাকার করছে।শ্যামাঙ্গিনী দেখ তোর গম্ভির রাগী পুরুষ টা কান্না করছে একটাবার চোখ মেলে তাকা না লক্ষিটি।

আসফির হাজারো হাহাকার পৌছাতে অক্ষম হলো আয়রার কুর্ণগহ্বরে
সে যে তার গম্ভির মানুষ টার উপরে এক আকাশ সমান অভিমান করেছে প্রচুর অভিমান প্রেমালঘ্নে কি শুধু ভালোবাসাময় অধ্যায় ই থাকবে উহু প্রেমালঘ্ন তো সকল সৃতির এক বড় ডায়েরি যেটা শেষ হবে দুইজনের শেষ নিশ্বাসের পরে।প্রেমালঘ্নে যে জমা হবে হাজারো সুখ ভালোবাসার সাথে হারানোর যন্ত্রণার মতো এক আকাশ সমান কষ্ট।

———

সূর্যের আলোর সাথে চোখ মেলে তাকায় আরিফা। শরীর টা যন্ত্রণায় ভেংগে আসছে।তার উপরে মনে হচ্ছে তার নরম ব্যাথায় ভরা শরীর টা কোন শক্ত উষ্ণ বেরাজালে আবদ্ধ সে জানে এই শক্ত আবদ্ধ আর কারো না বরং তার আরহাম মশাই এর সে হাসে। কারন সে জানে তালে আঘাত দেওয়ার পরে ঠিক কতোটা ছোটফোট করেছে এই ব্যাক্তিটা।

—কি ভেবেছিলেন আরহাম মশাই কালকের রাতের পরে ঘৃণা করবো আমি। আপনি বলেন তো কেমনে করি এই ব্যাক্তিটাকে ঘৃণা যে কি না এইজন্য আমাকে আঘাত করেছে যে তার স্ত্রীর দিকে অন্য কেউ বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। হুম আমি জানি তার দৃষ্টি খারাপ সেজন্য সবসময় তার থেকে দুরুত্ব বজায়ে চলি কিন্তু জানতে চেয়েছিলাম আমি তার সে নজর কি আপনার মনে কোন আঘাত হানে। দেখেন আপনার রাগ বেরিয়ে এলো।আমি জানি আরহাম কালকের রাতের পরে আপনার মনে থাকা ঘৃণা টাও সরে গেছে।বহু দূরে হারিয়ে গেছে এই আরহাম এর মনে আমার জন্য আর কোন ক্ষোভ নেই

আরহাম হঠাৎ নড়েচড়ে উঠলো।ধীরে ধীরে চোখ মেলে আরিফাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ জোড়া নিচু করে নিলো।সহস্রা হাসলো আরিফা।নিজের হাত দিয়ে উঠিয়ে দিলো নিচু হয়ে আসা মুখটি।

—কি হলো আরহাম মশাই এতোদিন ঘৃণার দৃষ্টিতে ঠিক চোখ মিলিয়েছেন তবে আজ কেন এই চোখ নিচে।এই চোখ কেনো মিলছেনা আমার দৃষ্টিতে।

—ত তুই আমাকে,,,

—কি মনে করেছিলেন ঘৃণা বা রাগে মুখ ফিরিয়ে নিবো। রাগ আপনার উপর হয়না আমার জানেন বহু চেষ্টা করেছি কিন্তু আসেনা। আর ঘৃণা।মানুষ কোন দিন নিজের অন্তর কে ঘৃণা করতে পারে বলুন তো তাহলে আমি তাকে কি করে ঘৃণা করবো যে আমার অন্তরে বাস করে।হ্যা অভিমান হয়েছে ঠিক কিন্তু জানি সেটাতে আপনার কোন যায় আসে না তাই সেটা না বলাউ শ্রেয়।অবশ্য আমি না বললে আপনি জানতেও পারতেন না।

—আমি খুব খারাপ আরু চলে যা আমাকে ছেড়ে। আমার সাথে থাকলে কষ্ট বাদে কিছু পাবিনা

—এই খারাপ লোকটাকেই যে আমি বড্ড ভালোবাসি আরহাম সাহেব
তেরে ইশকমে দারদ বারা
মুখে দারদ আচ্ছা লাগে

মুচকি হেসে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে উঠতেই আরহাম শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো ব্যাথা পেলেও ঠোঁট কামড়ে সহ্য করে নিলো।এই ভাগ্য কি সর্বদা হয় নিজ ইচ্ছাই টেনে নিলো নিজের বাহুডোরে।হোক না একটু কষ্ট।কষ্ট ছাড়া ভালোবাসা যে পানসে লাগে।না হোক সবার মতো প্রেম ভালোবাসা দিয়ে শুরু তাদের প্রেমালঘ্ন টা নাহয় কষ্ট দিয়েই শুরু হোক আর সমাপ্তিটা ভালোবাসার অধ্যায় দিয়ে।এতে কি খুব ক্ষতি হবে? উহু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম টা যে বড্ড বেশি খুশি দেয় আলাদা এক অনুভূতি দেয় যখন তারা পুরানো সৃতিতে তাদের প্রেমালঘ্ন দেখবে আর ভাববে প্রথমে তাদের চোখে পানি এলেও পরে আসবে হাসি। কি অদ্ভুদ হবেনা অশ্রসিক্ত দুই ব্যাক্তির অমায়িক হাসি।

_______

নিস্তেজ নিথর দেহটি পরে আছে সাদা শক্ত বেড এ মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক পড়াই ছোট মুখটি যেনো দৃষ্টির বাহিরে। অধিক সময় পানিতে ভিজার জন্য নিশ্বাস নিতে পারছে।খুব ধীরে চলছে নিশ্বাসের গতি।২ দিন হতে চললো তবুও কোন হেলদোল নেই আর না স্বাভাবিক হচ্ছে আসফির শ্যামাঙ্গিনীর নিশ্বাস।উপর থেকে শক্ত হয়ে বসে থাকলেও ভিতরে চলছে অদ্ভুদ লড়াই নিজের সাথে অদ্ভুদ ঝড়ে কাপিয়ে তুলছে শক্ত পুরুষটার মন।

২ দিন হলো নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছে হস্পিটালের এক কোণার চেয়ারে।বাড়ির সবাই আয়রাকে দেখলেও আসফির সাহস হয়নি যাওয়ার কোন মুখ নিয়ে যাবে কি করে দেখবে তার শ্যামাঙ্গিনীর মুখের সে নিল ছাপ।সে যে সয়তে পারবেনা।

—ফিরে আয়না শ্যামাঙ্গিনী তোর গম্ভির পুরুষ টা ভেংগে পরছে। তুই ছাড়া যে কেউ নেই তাকে সামলানোর উঠে পর না শ্যামারানী। তোর আসফির যে বড্ড প্রয়োজন তোকে।

আসফির ভাবনার মাঝেই কেউ তার গালে সাপটে চড় বসিয়ে দিলো।আশেপাশের সবাই অবাক।এদিকে আয়রার পরিবারে সবার মুখটাই থমথমে রাগী ভাব।

চলবে!
চলবে!

কি লিখেছি জানিনা হাত আগাছিলোনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here