#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__০২
#অদ্রিতা_জান্নাত
নিজেকে সামলিয়ে তার উপর থেকে উঠে পরলাম ৷ নিজের জামা ঝাড়তে ঝাড়তে আশেপাশে তাকালাম ৷ ইশান উঠে আমার হাত টেনে ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,
ইশান : কি করলে এটা? তোমার জন্য বাস মিস হয়ে গেল আমার ৷
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,
ইশিতা : বাস তো আমারও মিস হয়েছে ৷ আর আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?
ইশান : তো কি তুই করে বলবো? আমি তোমার থেকে বয়সে বড় ওকে? আর আপনি করে তাদের বলতে হয় যারা সম্মান পাওয়ার যোগ্য ৷ তুমি তো সম্মান পাওয়ারই যোগ্য না ৷
ইশিতা : এই এই কি বলছেন এগুলা আপনি হুম? আপনার সঙ্গে কি করেছি আমি?
ইশান : এই যে আমার মতো একটা সহজ সরল ছেলেকে কিডন্যাপ করেছো ৷
ইশিতা : ও হ্যালো আপনি সহজ সরল? লাইক সিরিয়াসলি? নিজের প্রশংসা নিজে করছেন? আজিব যান তো যান নিজের কাজে যান ৷
ইশান : হুম সেটা তো যাবোই ৷ তুমি থাকো একা একা ৷
বলেই সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ আশপাশটা পুরো নির্জন ৷ একদম গা ছমছমে ভাব ৷ এরকম পরিবেশে একা আমার পক্ষে থাকা কোনো ভাবেই সম্ভব না ৷ তার উপর একা একা এতোটা পথ আমার জন্য রিস্কি ৷ তাই আর কোনো কথা না ভেবে ইশানের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলাম ৷ উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে নিজের মতো করে হাঁটতে লাগলেন ৷ কিছুটা পথ যেতেই একটা টিনের চায়ের দোকান দেখতে পেলাম ৷ ইশান সেখানে গিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন,,,,,,,,
ইশান : চাচা এখান দিয়ে কোনো বাস যেতে দেখেছেন?
লোকটা আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,,,,,,,
—- হ বাজান, প্রায় মিনিট বিশেক আগে দেখছিলাম একটা বাস চইলা যাইতে ৷
ইশান : বিশ মিনিট? আচ্ছা সামনে কোনো বাস স্টেন্ড আছে? জানেন কি?
—- হ আছে তো ৷ তোমরা…?
ইশান : আসলে বাসটা মিস হয়ে গেছে আমাদের ৷ কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন প্লিজ? শুধু বাসটা ধরবো ৷
—- হ আমার ভাইগ্না অটো চালায় ৷ কইয়া দেহোন লাগবো ৷ তোমরা দুজন কি হও?
ইশান কিছু একটা ভেবে বললেন,,,,,,
ইশান : আমরা স্বামী স্ত্রী ৷
অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে ৷ উনি একবার আমাকে দেখে আবার বলতে লাগলেন,,,,,,,,,
ইশান : চাচা আপনার ওই ভাগ্নিকে আসতে বলুন প্লিজ ৷ আমাদের বাস ধরতে হবে ৷
—- আইচ্ছা তোমরা বসো ৷ আমি আইতে কইতাছি ৷
ইশান আমাকে পাশ কাটিয়ে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলেন ৷ আমি এখনো তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ৷ আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ওনার পাশে গিয়ে বসে বলতে লাগলাম,,,,,,,
ইশিতা : কবে আবার আমাদের বিয়ে হলো? আমরা স্বামী স্ত্রী বললেন কেন?
ইশান : না বললে তোমাকে ধরে নিয়ে যেত বুঝেছো?
ইশিতা : মানে?
ইশান : মানে বিয়ের পোশাকে আমার সাথে এসেছো তুমি ৷ এখন যদি আমি বলতাম তুমি আমার কেউ না ৷ আর আমরা বিবাহিত না ৷ তাহলে ওরা তোমাকে ধরে নিয়ে যেত নয়তো আমার সঙ্গেই বিয়ে দিয়ে দিত ৷
ইশিতা : কিইইই??
ইশান : জ্বী ৷ এটা শহর না এদিকটা গ্রাম্য ৷ এখানে এসব প্রচলিত ৷ অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের একসাথে দেখলে এরা অন্য কিছু মিন করে ৷ এখন একটু চুপ থাকো ৷
ইশিতা : কি বিপদে পরলাম রে বাবা ৷ এখন বাস ধরবো কীভাবে? যদি আমরা যাওয়ার আগে আমাদের রেখেই চলে যায়?
ইশান : তোমার জন্য আমি এতো ঝামেলায় পরলাম ৷ মেয়েরা এরকমই হয় ৷ যেখানে যায় সেখানেই ঝামেলা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ৷
ইশিতা : ওই বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ৷ আমরা ঝামেলা তো আপনারা কি হ্যাঁ? অসভ্যের দল, অভদ্রের দল, গাঁধার দল…
ইশান : উফ বাবা চুপ করো ৷ যেখানে আমি বললাম একটা সেখানে তুমি বলছো হাজার হাজার ৷ আরেকটা কথা বললে তোমাকে এখানে রেখেই চলে যাবো আমি ৷
ইশিতা : হুহ!
কিছুক্ষন পর একটা ছেলে অটো নিয়ে আসলে ওরা দোকানদারকে ধন্যবাদ বলে গাড়িতে উঠে গেল ৷ ইশিতা একদম কিনার ঘেষে একপাশে বসে রইল ৷ অন্যপাশে ইশান বসে বসে ফোন টিপতে লাগল ৷ প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ৷ বাহিরের থেকে মৃদু শীতল বাতাস ইশিতার গাঁ ছুয়ে যাচ্ছে ৷ আর ও কিঞ্চিত কেঁপে কেঁপে উঠছে ৷ কিন্তু ওর এই ঠান্ডা বাতাস বেশ ভালো লাগছে ৷ বাতাসের ধাক্কায় ওর চুলগুলো বারবার ইশানের মুখে বারি খাচ্ছে ৷ ও বিরক্ত হয়ে ইশিতার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চুপ হয়ে গেল ও ৷ চোখ বন্ধ করে বাহিরের বাতাস অনুভব করছে ইশিতা ৷ ঠোঁটে হালকা টানা হাসি ৷ সেই হাসির সাথে রয়েছে গালে পড়ন্ত টোল ৷ ছেড়ে দেয়া সিল্কি চুলগুলো বাতাসের জন্য নড়ছে বারবার ৷ আর সেই চুলগুলোই ইশিতার মুখে আছড়ে পরছে ৷ যার জন্য ও মাঝেমাঝে চোখ মুখ কুচকে ফেলছে ৷ ইশান গভীর ভাবে দেখছে ওকে ৷ ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না ৷ শুধু চেয়ে আছে ইশিতার দিকে ৷
__________
পর পর দুইটা বাস স্টেন্ড পেরোনোর পরও বাসের দেখা পেল না ওরা ৷ প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো সময় কেটে গেল ৷ সামনেই আরেকটা বাস স্টেন্ড রয়েছে ৷ সেখানে গেলেই যেন বাসটা পাওয়া যায় সেই আশাই করছে ওরা ৷ ৫ মিনিট পর গাড়ি থামিয়ে ছেলেটা বলতে লাগল,,,,,,
—- ভাই সামনে একটা বাস দেখা যাচ্ছে ৷ যাইয়া দেখেন তো ওইটা নাকি?
আমি অটো থেকে নেমে সামনে এগিয়ে দেখি ওই বাসটাই ৷ পুরো বাস খালি ৷ সবাই হয়তো খেতে নেমেছে ৷ এদিক দিয়ে ভালোই হলো ৷ তাড়াতাড়ি বাসে উঠে নিজের সিটে গিয়ে বসে পরলাম ৷
এদিকে ইশান ভাড়া মিটিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখে ইশিতা নেই ওর পেছনে ৷ চারপাশে খুজে যখন বাসের জানালা দিয়ে ইশিতার মুখ দেখতে পেল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ও ৷ ওকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও ৷ পাশের রেস্তোরা থেকে দুটো খাবারের প্যাকেট আর পানির বোতল নিয়ে বাসে উঠে ইশিতার পাশে বসে বলতে লাগলো,,,,,,
ইশান : চলে এলে যে ওভাবে? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো ৷
ইশিতা : ভয় কেন পেলেন? আমি তো এখানেই হঠাৎ ভয়?
ইশান : ওওও কিছু না ৷ নাও খেয়ে নাও ৷
বলেই একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলেন ৷
ইশিতা : ভালো লাগছে না আপনি খেয়ে ফেলুন আমি খাবো না ৷
ইশান : আমার ক্ষুধা লেগেছে আমি তো খাবোই ৷ তুমিও খেয়ে নিও ৷
বলেই আমার হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিলেন ৷ তারপর উনি খেয়ে নিলেন ৷ প্যাকেটটা ব্যাগে রেখে একটু পানি খেয়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ রইলাম ৷
ইতোমধ্যে বাসের সবাই চলে এসেছে ৷ যে যার জায়গায় বসে পরলো ৷ ড্রাইভার বাস স্টার্ট দিল ৷ আস্তে আস্তে বাস সামনের দিকে চলতে লাগল ৷ পুরো বাস জুড়ে রয়েছে অন্ধকার ৷ সেই অন্ধকারের মধ্য দিয়ে চাঁদের কিছুটা আলো এসে পরছে ইশিতার মুখের উপর ৷ হালকা আলোতে ওর চোখ মুখ জ্বলজ্বল করছে ৷ ও নিজের মাথাটা এলিয়ে দিল ইশানের কাঁধের উপর ৷ ইশান ওর দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে পরেছে ও ৷ সারাদিনের ক্লান্তিটা এখন ঝেকে ধরেছে ওদের ৷ ইশানের কী হলো নিজেই জানে না ৷ ইশান নিজের হাত দিয়ে ইশিতার মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল ৷ তারপর মুচকি হেসে ও নিজের বাম হাতটা দিয়ে পিছন দিক থেকে ইশিতাকে ধরে মিশিয়ে নিল ওর সাথে ৷ ঘুমের মধ্যে ইশিতাও জড়িয়ে ধরলো ইশানকে ৷
★★★
ভোর ০৫টা বাজে ৷ বাস এসে থামলো বান্দরবান বাস স্টেন্ডে ৷ বাসের কনডাক্টর বাসের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে দিল ৷ একে একে সবাই নেমে গেল ৷ শুধু রয়ে গেল ইশান আর ইশিতা ৷ দুজনেই রয়েছে গভীর ঘুমে ৷ বাসের কনডাক্টর এসে ইশানকে বার কয়েক ডাকলো ৷ ও ঘুমন্ত গলায় বললো,,,,,,,
ইশান : কি হয়েছে?
—- গন্তব্যে আইসা পরছি ৷ সবাই নেমে গেছে ৷ তোমরাও নামো ৷ বাস ছাইড়া দিব ৷
বলেই কনডাক্টর চলে গেল ৷ ইশান নিজের চোখ দুটো একবার কচলে ইশিতার দিকে তাকালো ৷ একদম গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে ও ৷ ইশান ওকে নিজের থেকে সরিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগল,,,,,,
ইশান : এই যে মিস উঠো তাড়াতাড়ি ৷ বাস ছেড়ে দিবে নাহলে ৷
ইশিতা একটু নড়েচড়ে চোখ বন্ধ করে রেখেই বিড়বিড় করে বললো,,,,,,,
ইশিতা : কে ছাড়বে?
ইশান ওর মুখের কাছে কান নিয়ে শুনলো ৷ তবুও হালকা হালকা শুনতে পেল ৷ এতোটাই আস্তে কথা বলেছে ও ৷ ওর ঘুমন্ত গলা সোজা ইশানের বুকে গিয়ে বিধলো ৷ এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ওর দিকে ৷ আবার কনডাক্টর এসে বাসের জানালা দিয়ে বললো ওদের বাস থেকে নামতে ৷ ইশিতাকে ধরে ধরে বাস থেকে নামলো ইশান ৷ তারপর ওকে ঝাকিয়ে বললো,,,,,,
ইশান : আরে এই কুম্ভকর্ণের রাণী এখন তো উঠো ৷ আর কত ঘুমাবে? তাও আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে?
ইশিতা : উফ কত মশা ৷
ইশান হা করে তাকিয়ে রইল ওর দিকে ৷ ইশান বললো কি আর ইশিতা বুঝলো কি? জোরে একটা দম নিয়ে ইশিতার কানের মধ্যে জোরে একটা ফু দিল ৷ ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে উঠলো ও ৷ ওকে এরকম করতে দেখে ইশান জোরে জোরে হাসতে লাগলো ৷ ইশানের হাসি দেখে ইশিতা ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,,,,,,,,
ইশিতা : কি হলো এইটা?
ইশান : আরো ঘুমাও ৷ তাহলে বুঝবা ৷
বলেই ইশান বাসের ভিতরে গিয়ে আমার আর ওনার সব ব্যাগপত্র নিয়ে এলো ৷ নিজের ব্যাগ নিয়ে সামনে যেতে যেতে বললো,,,,,,,,,
ইশান : দাঁড়িয়ে না থেকে হোটেলে যাও ৷
আমি ওনার পিছুপিছু যেতে যেতে বললাম,,,,,,
ইশিতা : হোটেলে রুম তো বুক করা হয় নি আমার ৷
ইশান : সামনে দুটো হোটেল আছে ৷ কোনো রুম তো খালি থাকবেই ৷ গিয়ে বুক করে নিও ৷
বলেই চুপচাপ সামনের দিকে হাঁটতে লাগলেন ৷ আমিও তার পিছু পিছু এগিয়ে যেতে লাগলাম ৷
একটা হোটেলের ভিতরে ইশান ঢুকলেন ৷ আমিও তার সাথে এগিয়ে গিয়ে রিসিপশানে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,
ইশিতা : excuse me কোনো রুম হবে কি?
—- সরি ম্যাম ৷ সব রুম আগেই বুক হয়ে গিয়েছে ৷
ইশিতা : একটাও রুম কি খালি নেই?
—- নো ম্যাম ৷
ইশানের দিকে তাকালাম আমি ৷ উনি ওনার রুমের চাবিটা নিয়ে বললেন,,,,,,
ইশান : পাশের হোটলে গিয়ে দেখো ৷ পেয়ে যেতে পারো৷
ইশিতা : যদি না পাই ৷
ইশান : পজেটিভলি ভাবো ৷ এখন আমি ক্লান্ত ৷ পরে কথা হবে, বায় ৷
বলেই উনি চলে গেলেন ৷ কি ছেলে এটা? একটা মেয়েকে ফেলে চলে গেল? ধুররর ৷ সময় নষ্ট না করে আমি পাশের হোটেলে গিয়ে খোঁজ করলাম ৷ বাট ওখানে সেই-ই একই অবস্থা ৷ পাশে থাকা সোফায় বসে পরলাম ৷ কিছুক্ষন পর হোটেলের ম্যানেজার এসে বলে গেল এই মাত্র একটা রুম খালি হয়েছে ৷ সব ফর্ম ফিলাপ করে রুমটা বুক করে নিলাম ৷ চাবি নিয়ে দোতলায় চলে গেলাম ৷ রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নিলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে এসে চারপাশটা দেখতে লাগলাম ৷ বেশ সুন্দর আর গোছানো ৷ দরজায় নক পরায় দরজা খুলে দেখি একটা ছেলে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে ৷
তাকে ধন্যবাদ বলে ট্রেটা হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম ৷ তারপর কফির কাপ নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম ৷ বাহিরে আকাশে মেঘ জমেছে তার সাথে সাথে বইছে ঠান্ডা বাতাস ৷ এই বেলকনিটার সামনাসামনি রয়েছে আরেকটা বেলকনি ৷ দূরত্ব প্রায় একহাতের মতো ৷ বাতাসের সঙ্গে ওই সামনের বেলকনির পর্দাগুলো উড়ছে বারবার ৷ রুমের ভেতর লাইট অন করা ৷ বাট ভিতরে কে সেটা জানা নেই আমার ৷ ওদিক থেকে চোখ সরিয়ে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,