প্রেমের মরা জলে ডুবে পর্ব -০৪

#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে

#তানিয়া

পর্ব:৪

তিমির বাপের বাড়ি এসেছে নিজের প্রয়োজনীয় সবকিছু ঐ বাড়িতে নিয়ে যেতে।সবকিছু আচানক হয়েছিল যে,তিমিরের কাপড়চোপড় বইপত্র সবকিছু এ বাড়িতে রয়ে গেছে। জিন্নাহ সাহেবকে বলতেই তিনি নিজে তিমিরকে নিয়ে বাড়িতে নামিয়ে দেন। তিমির আল্লাহর নাম নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো।কবির সাহেব চা নিয়ে বসে আছেন। তাকে দেখে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। তিমির আশেপাশে তাকালো শান্তাকে দেখতে পায় কিনা কিন্তু শান্তার হা হুতাশ না পেয়ে সে ধীর পায়ে বাবার দিকে এগিয়ে গেলো।কবির সাহেব এখনো তিমিরের অস্তিত্ব টের পাননি।

“বাবা?”

কবির সাহেব চমকে গেলেন।চোখ তুলে মেয়েকে দেখতেই তিনি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালেন।

“মা,তুই? কেমন আছিস মা?ও বাড়িতে তোর কোনো সমস্যা হয়নি তো?”

“না বাবা এখনো তেমন সমস্যা হয় নি তবে নিপা আন্টি ঝগড়ার হূল ফুটালেও আঙ্কেল সেটাতে বাঁধা দেন।তাই খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। বাবা মা কই?’

“তোর মা গতরাত একটুও ঘুমায় নি।শুধু ছটফট করেছে।আসলে তোর সাথে শুভ্রর বিয়েটা সে মানতে পারে নি তাই মাঝরাতে প্রেশারে বেড়ে যা তা অবস্থা।শেষে ডাক্তার এনে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।তা তুই কেনো এসেছিস? ”

“বাবা আমার সব জিনিস তো এখানে।তাছাড়া আমি ঐ বাড়িতে কোনো কাপড় নিয়ে যায় নি।শুভার কাপড় পড়েছি।বইখাতা যাবতীয় ডকুমেন্টস এখানে তাই সেসব নিতে এসেছি।”

“ভালো করেছিস মা এখন এসে।তোর মা জেগে উঠলে কিছুই নিতে দিবে না তারচেয়ে এখন রুমে গিয়ে সব গুছিয়ে নে। যা মা।”

তিমির বাবার কথামতো হাটা ধরলো তবে আবার জিজ্ঞেস করলো,

“বাবা তুরফা আপু কই?”

“তুরফা মনে হয় ঘুমাচ্ছে।কেনো?”

তিমির কিছু না বলে চলে গেলো।আগে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিলো।তারপর তুরফার রুমে গেলো।তুরফা ঘুমোচ্ছে আর ঘুমের ধরন দেখে মনে হচ্ছে তুরফা ঘুমের মধ্যেও আনন্দ পাচ্ছে। তিমির এগিয়ে গিয়ে শরীরে একটা ধাক্কা দিলো।তুরফা ঘুমেই ব্যস্ত। কিছুক্ষণ ধাক্কা দেওয়ার পর তুরফা চোখ খুললো আর চোখের সামনে তিমিরকে দেখে একলাফে বিছানায় উঠে বসলো।

“তি তি তিমির তুই, এত সকালে এখানে কি করছিস, ওরা কি তোকে তাড়িয়ে দিয়েছে? ”

“না আপু তাড়িয়ে দেয় নি, নিজের কিছু জিনিস নিতে এসেছি।সাথে তোমার সাথে বোঝাপড়া করতে।গতকাল তুমি যা করেছো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।তোমাকে বাঁচাতে আমিই শুভ্র ভাইয়াকে বিয়ে করেছি আর তুমিই কিনা আমাকে সবার সামনে খারাপ প্রমান করলে।এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না আপু?”

“সরি তিমির,আসলে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম যদি তুই সবার জেরায় পড়ে সত্যিটা বলে দিস তাই ভাবলাম তুই যখন আমাকে হেল্প করলি তাহলে বিষয়টা আরেকটু ডিপ হোক তাই নিজেই নিজের অবস্থা বেহাল করে এ নাটকটা সাজাতে হলো। প্লিজ রাগ করিস না বোন?”

“আপু তুমি কি জানো তুমি কতটা স্বার্থপর। তুমি আমার বড় বোন হও কিন্তু কখনো বড় বোনের মতো আচরণ করো নি।বরাবরের মতো তুমি আমার সাথে বাইরের মেয়ের মতো আচরণ করেছো সেই সাথে আমাকে বারবার তোমার স্বার্থে ব্যবহার করেছো।এতকিছু তোমার জন্য করলাম সেই তুমিই আমাকে সবার কাছে আরো বাজেভাবে উপস্থাপন করলে?”

তিমিরের কথায় তুরফার ভাবগতির তেমন কোনো পরিবর্তন হলো না।তিমির তুরফার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সারাঘর পায়চারি করছে তুরফা।শান্তা বেগম জানিয়েছেন সামনের সপ্তাহে শুভ্রর সাথে তার বিয়ে কিন্তু শুভ্রকে সে পছন্দ করে না।অবশ্যই পছন্দ না হওয়ার মতো ছেলে সে নয়,সবদিক দিয়েই পারফেক্ট কিন্তু তুরফার পছন্দ না কারণ শুভ্র অতি বিনয়ী আর অতিরিক্ত পজেসিভ।তাছাড়া তার মধ্যে আধুনিকতার চেয়ে ওল্ড ভাবটা বেশি।সবসময় ফর্মালিটি মেনে কাজ করে।তুরফা শুভ্রর এমন ভাব নিতে পারেনা।যদিও মায়ের কথায় সে শুভ্রর সাথে কথা বলে বুঝায় যে শুভ্রকে তার ভালো লাগে কিন্তু তিল মাত্র সে আগ্রহী নয়।এদিকে অন্য এক ছেলের সাথে তার প্রণয় চলছে কীভাবে সে তাকে বাদ দিয়ে শুভ্রকে বিয়ে করবে?মায়ের ওপর তার বেজায় রাগ হচ্ছে কিন্তু মাকে সে ভয় পায় কীভাবে এ বিয়ে থামাবে তুরফা?তখনি তার মাথায় বুদ্ধি আসে। তিমির মাকে তেমন ভয় পায় না, তাছাড়া তিমির তুরফাকে বড় বোন হিসেবে যথেষ্ট ভালোবাসে যদিও তুরফা তাকে কখনো ছোট বোন হিসেবে মানা বা ভালোবাসা কোনোটা করে নি তবে তুরফার মনে হলো তিমির তাকে সাহায্য করবে।তাই তিমিরের রুমে গিয়ে তুরফা দেখে তিমির পড়ছে।তুরফা তেমন একটা তিমিরের রুমে আসে না তাই তুরফকে দেখে তিমির বেশ অবাকই হলো।

“আপু তুমি আমার রুমে, কিছু বলবে?”

“তিমির তোকে আমায় সাহায্য করতে কি হবে?”

তিমির দেখলো তুরফা কেমন টেনশনে আছে।সে তুরফাকে খাটে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি সাহায্য,

“তিমির আমি শুভ্রকে বিয়ে করবো না, আমি অন্য ছেলেকে ভালোবাসি?”

“কি বলছো আপু মা তো নিপা আন্টিকে কথা দিয়েছে তাছাড়া আমি ছোট থেকে দেখছি শুভ্র ভাইয়া এ বাড়িতে আসে তোমার জন্য। সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আর দেখতেও ভালো।আর তুমি কিনা তাকে রিজেক্ট করছো অন্য ছেলের জন্য? ”

“হ্যাঁ করছি কারণ সে যেমনই হোক আমার কাছে বরাবরের মতো শুভ্র একটা মাকাল ফলের মতো।যার কাছে আধো ভালাোবাসার মতো ফিলিংস নেই। তাছাড়া সে ঠান্ডা স্বভাবের পুরুষ, ওকে আমি কখনো প্রেমিক হিসেবেও ভাবতে পারিনি সেখানে স্বামাী হিসেবে ভাবা অসম্ভব ব্যাপার। তাই তোকে আমায় সাহায্য করতে হবে?”

” কি সাহায্য আপু?”

“শুভ্রকে তুই বিয়ে করবি?”

তুরফার কথা শুনে তিমির বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। যেখানে স্বয়ং শান্তা নিজেই বিয়ে ঠিক করেছে সেখানে তিমির কীভাবে এ কাজ করবে
শুধু তাই নয় নিপা শান্তা দুজনে একি স্বভাবের, যদি বিয়ের আসরে তিমিরকে দেখে তাহলে তো গিলে খাবে।

“আপু এটা অসম্ভব আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।এতগুলো মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমি বিয়ে করতে পারবো না।তাছাড়া আমি ধরা পড়ে যাব”

“দূর গাধী আমি পুরো প্ল্যানটা সাজাবো দেখবি কিছুই হবে না।তাছাড়া আমি যদি পালিয়ে যায় তাহলে কি ভালো হবে অথবা বি*ষ খেলে কি তুই খুশি হবি?দেখ সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা, ও নিজেও এখন প্রাকটিস করছে, আমারও পরীক্ষা শেষ হলে খুব তাড়াতাড়ি দুজনে সেটেল হবো।আমার কিছু সময় দরকার কিন্তু মা সেটা দিচ্ছে না যদি তুই শুভ্রকে বিয়ে করিস তাহলে হয়তো আমি সেটা পাবো।তাছাড়া তুই খেয়াল কর,যদি আমার বিয়ে হয়ে যায় মা তোকে যা তা ছেলের সাথে বিয়ে দিবে, তার ওপর তুই কালো মেয়ে, কোনো সুন্দর ছেলেও তোকে বিয়ে করবে না।এ সুযোগে তুই শুভ্রর মতো একজন উচ্চ শিক্ষিত ছেলেকে নিজের বর হিসেবে পাবি তাও না কম কীসে?”

তিমিরের গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ করাটা তুরফার একটা আনন্দের কাজ।সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেটা হজম করলো।

“তিমির তুই ভয় পাস ন।আমি সবটা সামলাবো তুই শুধু বিয়েটা করবি।আমি বিয়ের জন্য দুইটা লেহেঙ্গা কিনবো।তুই তোর মতো ড্রেস পড়বি।আমি বিয়ের সাজে থাকবো।তারপর আমাকে আসরে নিতে আসার আগেই তুই দ্বিতীয় লেহেঙ্গা পড়ে নিবি আর সোজা কাজীর সামনে চলে যাবি।একবার বিয়েটা হয়ে গেলে আর কেউ কিছু করতে পারবে না বাকিটা পরে আমি বুঝে নিবো।তিমির তুই যদি রাজি না হোস তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো।মনে রাখিস নিজের ভালোবাসাকে না পেলে আমি অন্য কারো হতে পারবো না।তাই তুই সিদ্ধান্ত নে আমি ম*রবো নাকি তুই হেল্প করবি?”

তুরফা যেহেতু ডাক্তার তাই সে জানে কোন বিষ কেমন প্রতিক্রিয়া করবে আর সেই মেডিসিন প্রয়োগ করলো তিমিরের ওপর।তিমিরকে যতই তুরফা হেয় করুক তিমির সবসময় তাকে বড় বোনের মতো ভালোবেসেছে তাই তুরফা যখন বিষ দেখালো তখন তার মনটা ভয়ে কেঁপে ওঠলো।দ্বিধা দ্বন্দ না রেখে সে রাজি হলো ভাবলো বাকিটা তুরফা সামলাবে কিন্তু বিয়ের দিন তুরফা যখন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো তখনি তিমির বুঝলো তুরফা কিভাবে তাকে ফাঁসিয়েছে!

শান্তা বেগম জানতে পারলো তিমির বাড়িতে এসেছে তখনি তিনি বিকট চিৎকার দিয়ে উঠলেন।নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে অনেক জিনিস চুরি করেছে বলে তদন্তে নামলেন।কবির সাহেব যতই বলে সে নিজের কাগজ আর কাপড় নিতে এসেছে ততই তিনি গর্জে উঠেন।ফোন দিয়ে তিমিরকে ইচ্ছে মতো গালাগাল করেন সেই সাথে হুমকি দেন দ্বিতীয় বার আসলে পা খোঁড়া করে দিবে।ফোন রেখে শান্তা তিমিরের রুমটা তালাবদ্ধ করেন কারণ তিনি বেশ বুঝতে পারছেন তিমির আসলে আবারও এ রুম থেকে কিছু না কিছু নিবে।

তিমির জানতো মা জানলে এমন করবে তাই সে তার সনদ,সার্টিফিকেট, কাপড়চোপড় যা যা লাগে সবটা নিয়ে এসেছে। আপাতত ও বাড়ির দরজা তার জন্য বন্ধ। তাই নিজের জিনিসগুলো হাতে পেয়ে সে সন্তুষ্ট। নিপা একবার সবটা চেক করেছে কারণ শান্তা বলেছে,সে হয়তো অন্য দামি জিনিস চুরি করতে পারে।তাই নিপা যখন জানালো তিমিরের প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অন্য কিছু সাথে আনেনি তখন সে ক্ষান্ত হলো।

রাতে খাওয়ার সময় জিন্নাহ সাহেব বৌভাতের কথা তুললেও নিপার মুখ ভেংচি আর টিপ্পনী মার্কা কথা শুনে তিমির বেশ বুঝলো এসব তার কপালে নেই সেই সাথে বাপের বাড়ির নাইওর। তাই সবটা বাদ দিয়ে সে মনে মনে দোয়া করলো অন্তত এ বাড়ির আশ্রয়টা যাতে সে না হারায়।
,
,
,
চলবে….

৩.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here