প্রেমের রঙ পর্ব -১৭

#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_১৭
#মোহনা_হক

‘সকাল ১০টা।’
‘ইজহান পদ্মকে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় পদ্মের খুব কান্না পেয়েছিলো তাও নিজের মনটা কে শক্ত রেখে বাসা থেকে বের হয়েছিলো। গাড়িতে উঠেই মনটা হুহু করে উঠলো। ১৪দিন যেনো এক বছরের মতো লাগবে তার কাছে। বিয়ের প্রথম প্রথম গ্রামে যেতে খুব ইচ্ছে করেছিলো এখন ঢাকা শহরে থাকতে মন চাচ্ছে। ইজহান নিজেই ড্রাইভ করছে৷ পাশের সিটে পদ্ম মন খারাপ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে। যতোবার মনে পড়ছে ইজহান কে ছাড়া তার থাকতে হবে ততবার যেনো মনটা ভেঙ্গে যাচ্ছে তার। অসহ্য ব্যাথা একদম। মাঝে মাঝে পদ্ম ইজহানের দিকেও তাকাচ্ছে। লোকটা একদম শান্ত ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।’

‘পদ্ম নিরবতা ভেঙ্গে ইজহানকে বললো-‘
“আমি যে চলে যাচ্ছি আপনার কষ্ট হচ্ছে না?”

‘ইজহানের দৃষ্টি সামনের দিকে। পদ্মের দিকে একবারও তাকালো না।’

“না কেনো কষ্ট হবে? তুমি তো এক্সাম দিতে যাচ্ছো। শেষ হলেই আবার চলে আসবে।”

‘পদ্মের মনটা আবারও ভেঙ্গে গেলো।’
“জানি তো কষ্ট হচ্ছে না। আপনার মনে তো আর আমি নেই যে আমার জন্য কেনো কষ্ট হবে? কষ্ট তো হবে অন্য মেয়ের জন্য।”

‘ইজহান গাড়িটা থামালো। অবাক চোখে পদ্মের দিকে তাকিয়ে। ইদানীং তার ব্যবহারগুলোর সাথে অপরিচিত সে। গ্রামে যাচ্ছে এই শোকে বোধহয় পাগল হয়ে গিয়েছে। ইজহান পদ্মের দিকে অনেকটা ঝুঁকে এলো। যা দেখে পদ্ম ঘাবড়ে গিয়েছে।’

“কি বললে তুমি?”

‘পদ্ম থতমত খেয়ে গেলো।’
“না না কিছু বলি নি। আপনি গাড়ি চালানো বন্ধ করলেন কেনো?”

‘ইজহান হেসে দিলো। তাও আবার সেই সুন্দর হাসিটা। উফ পদ্ম তুই আজ শেষ হবি এই হাসি দেখে। ইজহান আবার ঠিকঠাক মতো বসলো। পদ্ম বুকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। হুটহাট এমন হওয়াতে ঘাবড়ে গেলো অনেকটা।’

‘ইজহান হেসে বললো-‘
“যাকে রেখে আসতে যাচ্ছি তার জন্যই তো কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি কষ্ট পাচ্ছি এটা দেখলে তো আর ম্যাডাম যেতে চাইবে না। পড়াশোনার বিষয়ে এতো ভালোবাসা দেখাই না।”

‘পদ্ম মুখটা বাঁকালো। ভেবেছিলো ইজহান দেখেনি। কিন্তু ইজহান ঠিকই দেখে নিয়েছে। আর জানেও পদ্ম কেনো এমন করেছে।’

“মুখ বাঁকিয়ে লাভ নেই। যদি এমন করো ইজহান কিন্তু তোমাকে আর গ্রাম থেকে আনবে না।”

‘পদ্ম ত্যাড়া ভাবে উত্তর দিলো।’
“আমি নিজেই চলে আসবো। যদি একা না আসতে পারি তাহলে মা আর পুষ্প কে নিয়ে সোজা আপনার বাসায় চলে যাবো।”

‘ইজহান পদ্মকে রাগানোর জন্য বললো-‘
“তুমি গ্রাম থেকে এসে দেখবে তোমার সতীন অলরেডি তোমার বরের সাথে সংসার করছে। তুমি কি আসলেই বুঝছো না আমি কেনো তোমাকে ওখানে এতো তাড়াতাড়ি রেখে আসছি? আমি তো আরেকটা বিয়ে করছি। তোমার দাওয়াত রইলো অবশ্যই তোমার বরের বিয়েতে আসবে। আমি আর তোমার সতীন খুবই খুশি হবো।”

‘পদ্ম যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইজহানের কথাটা খুবই বাজে ছিলো। এক বউ থাকতেও আবার বিয়ে করার কথা বলছে। পদ্ম কেঁদে ফেললো।’

“আপনি খুব খারাপ। আমি আপনার সাথে থাকবো না। এতোদিন তাহলে আপনি আমার সাথে অভিনয় করেছেন? আমি তো জানি আপনার আমাকে ভালো লাগে না। কারণ আমি গ্রামের মেয়ে আপনার চোখে তো শহুরে মেয়েদেরকেই ভালো লাগে। আমাকে কেনো লাগবে। দরকার নেই আমাকে গ্রামে দিয়ে আসার এখানেই নামিয়ে দিন। আমি একাই চলে যেতে পারবো।”

‘ইজহান ভেবেছে পদ্ম রাগ করে কথা শোনাবে কিন্তু তিনি তো একেবারে কেঁদেই দিলো। ইজহান পদ্মকে টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।’

“পদ্মফুল আমার চোখে তুমিই সব সময় সুন্দর। আমি তোমার সাথে কোনো অভিনয় করিনি। তবে এটা ঠিক বিয়েতে আমার মত ছিলো না আমার মা জোর করেছিলো। এইযে তোমাকে আদর দেই, ভালোবাসি এগুলো আমি মন থেকেই দিই। বিয়ের পরেরদিন থেকে আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি। প্রথমে মানতে পারছিলাম না এখন তুমি গ্রামে যাচ্ছো আমি সহ্য করতে পারছি না। ইজহান শেখের জীবনে প্রথম নারী তুমি। যার প্রতি সে এতোটা দূর্বল, যাকে না দেখে ইজহান তার সকালটা শুরু করতে পারেনা, যার কষ্ট হলে সে নিজেও কষ্ট পায়, যার প্রতি ইজহানের বুকভরা ভালোবাসা রয়েছে সে মেয়েটি তুমি পদ্মফুল। তুমি নিতান্তই ভাগ্যবতী মেয়ে।”

‘ইজহানের কথা শুনে পদ্ম কষ্টের মাঝেও হাসলো।’
“আপনিও অনেক ভাগ্য করে আমার মতো বউ পেয়েছেন এই কথাও কিন্তু ভুলে যাবেন না।”

‘ইজহান হেসে দিলো।’
“উহুম একটুও ভুলবো না।”

‘পদ্ম ইজহানের বুকে একটা সুন্দর করে চুমু এঁকে দিলো। তারপর গভীর ভাবে ইজহান কে জড়িয়ে ধরলো। ইজহানও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। আর এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে।’

‘দেখতে দেখতে পদ্ম আর ইজহান গ্রামে ঢুকলো। পদ্ম ঘুমিয়ে আছে। সে যে গ্রামে চলে এসেছে তার কোনো খেয়ালই নেই। ইজহান পদ্মের বাসার জন্য একগাদা জিনিসপএ কিনেছে। সাথে অনেক বাজার ও করেছে। আসার সময় মুনিরা শেখ বলে দিয়েছিলো ও যেনো বাজার করে নিয়ে যায়, কারণ নতুন বর বিয়ের পর প্রথমবার মেয়ের বাড়িতে গেলে বাজার করতে হয়। আর ইজহান ও তাই করলো। তার মা যা যা বলে দিয়েছে সে সবকিছুই নিয়েছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে পদ্ম এগুলো কিছুই দেখতে পারলো না। সে তখন ঘুমে ছিলো।’
‘ইজহান পথটা ভুলে গিয়েছে তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও পদ্মকে জাগালো।’

‘ইজহান পদ্মকে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু পদ্ম ঘুম থেকে উঠছে না। এবার ইজহান পদ্মের মুখে পানি ছিটালো। সাথে সাথে পদ্ম হড়বড় করে চোখ খুললো।’

“উঠেছো তুমি? আমি কতক্ষণ ধরে ডাকছিলাম তোমায়।”

‘পদ্ম চোখ পিটপিট করে ইজহানের দিকে তাকালো।’
“কি হয়েছে?”

‘ইজহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে পদ্মের দিকে।’
“তোমার গ্রামে ঢুকেছি কিন্তু পথটা ভুলে গিয়েছি। চিনতে পারছি না ঠিক।”

‘পদ্মের মনে হলো সে ঘুমেই ভালো ছিলো। এখন আবার মনটা খারাপ করে দিলো লোকটা। পদ্ম ঢোক গিললো।’

“আচ্ছা আপনি গাড়ি চালান আমি বলছি।”

‘পদ্ম বলছে আর ইজহান সেই মোতাবেক গাড়ি চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে বলতে গিয়ে তার কান্না চলে আসছে। তবুও সে মনটা একদম ঠিক রেখে ইজহানকে বললো। পদ্মের বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থেমেছে। গ্রামের রাস্তাগুলো একেবারে সরু। রাস্তার চারপাশে গাছ আর ধান ক্ষেত। ইজহান গাড়ি চালানো পাশাপাশি চারপাশ ও একটু দেখে নিয়েছিলো। যখন প্রথমে এসেছিলো তখন এসব কিছুই খেয়াল করে নি।’

‘পদ্ম গাড়ি থেকে নামলো, আর পুষ্প সেটা দেখে দৌড়ে তার আপু কে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।’

“মা আপু এসেছে।”

‘রুবিনা খাতুন ও আসলো। তার মেয়েকে একেবারে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে রাখলো। পদ্মের মাথায় কয়েকটা চুমু দিলো রুবিনা খাতুন। পদ্ম ও একদম তার মা কে জড়িয়ে ধরে আছে পাখির ছানার মতো।’
‘ইজহানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো রুবিনা খাতুন। কিন্তু পুষ্প কোনো রকম কথা বললো না। ইজহান একবার ভুলবশত তাকিয়ে ছিলো কিন্তু মেয়ে তাকে দেখে মুখটা ভেঙ্গিয়ে দিলো। ইজহান একেবারে হকচকিয়ে গেলো।বুঝেছে এর রাগ এখনো কমেনি।’

‘ইজহান শান্ত কন্ঠে রুবিনা খাতুন কে বললো-‘
“তাহলে মা আমি এখন আসি!”

‘রুবিনা খাতুন অবাক হয়ে গেলো। আসি মানে কি এখনই চলে যাবে নাকি? নতুন জামাই প্রথম বাড়িতে এসেছে মাএ এখনই যাওয়ার কথা বলছে?’

“কি বলছো বাবা। এখন চলে যাবে মানে?”

‘ইজহান সৌজন্যবোধক হাসলো।’
“আসলে মা আজ কিন্তু আমার ডিউটি ছিলো। তাও ছুটি নিয়েছি শুধুমাত্র পদ্মের জন্য। এখন আবার চলে যেতে হবে কারণ কাল থেকে আমাকে ডিউটি তে ফিরতেই হবে। পদ্ম জানে সব।”

‘শেষের কথা বলার সময় ইজহান পদ্মের দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখ যে পানিতে টলমল করছে তা বোঝাই যাচ্ছে। ইজহানের কথা কোনোমতেই রুবিনা খাতুন রাজি নন। অন্তত আজ রাতটা থাকতেই হবে। ইজহান বলছে সম্ভব না তাও তিনি জোর করছেন।’

‘ইজহান অনুরোধের সুরে বললো-‘
“আজ না মা। আমি তো আসবোই আবার। পরে একদিন নাহয় থাকা যাবে। এখন আমাকে আসতে হবে। ”

‘রুবিনা খাতুন বললো-‘
“দুপুরের খাবারটা ও কি খেয়ে যেতে পারবে না?”

‘ইজহান ভাবলো কিছুক্ষণ তারপর ভেবে বললো-‘
“জ্বী খেয়ে যাবো।”

‘রুবিনা খাতুন খুশি হলো সাথে পদ্মও। পদ্মের তো খুশির শেষ নেই। কিন্তু পুষ্প তৎক্ষনাত বলে উঠলো-‘

“ইহ এই লোক কে আমাদের বাসায় খেতে দিবো না। ওনাদের বাসায় যখন গিয়েছিলাম তখন ওনি আমাকে একটুও ঘুরাতে নেননি। আবার একদিন প্রায় দুপুরের সময় সকালের নাস্তা খেতে দিয়েছিলেন।”

‘পুষ্পের কথায় ইজহান লজ্জা পেলো। এই বিচ্চু মেয়ে যে একদম সরাসরি অপমান করে দেয় কে জানতো। রুবিনা খাতুন পুষ্পকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। এই মেয়ে কখনো ভালো হবে না।’

“বাবা তুমি কিছু মনে করো না ওর কথায়। ও এমনই আমি কতো বকি কিন্তু সে বকা খাওয়ার পর সব আবার ভুলে যায়।”

‘ইজহান পুষ্পের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।’
“সমস্যা নেই মা।”

‘রুবিনা খাতুন পদ্মের উদ্দেশ্যে বললো-‘
“পদ্ম ইজহান বাবা কে ভিতরে নিয়ে যা।”

‘ইজহান পদ্মের সাথে ভিতরে ঢুকলো। পদ্ম ইজহান কে তার রুমে নিয়ে গেলো। পদ্ম রুমে গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। ইজহান পকেটে হাত গুঁজে পদ্মের সোজাসুজি দাঁড়ালো।’

“এসেছো তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। যেখানে আমার ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার কথা সেখানে তুমি কাজটা করছো।”

‘পদ্ম অন্যদিকে ফিরে গেলো। ইজহান এটা দেখে পদ্মের পাশাপাশি শুয়ে পড়েছে।’

“চলেই তো যাবো একটু পর তাও রাগ দেখাচ্ছো?”

‘পদ্ম ইজহানের দিকে ফিরলো এবার।’
“রাগ করছি না তো। আমার আসলে ভালো লাগছে না।”

“কেনো লাগছে না?”

“জানি না।”

“কেনো জানো না?”

“উহু।”

“আমি চলে গেলে ভালো লাগবে তোমার?”

‘পদ্ম ইজহানকে জড়িয়ে ধরেছে। ইজহান হাসছে। মেয়েটা একটু পাগলাটে ধরনের।’

“আপনি চলে গেলে আমার একটুও ভালো লাগবে না ডাক্তার সাহেব।”

‘ইজহান পদ্মকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ডাক পড়েছে। পুষ্প দরজার ওপাশ থেকে বললো তারা যেনো তাড়াতাড়ি খেতে আসে।’
‘পদ্মের খাওয়া আগেই শেষ কিন্তু ইজহানের জন্য বসে রইলো। তাদের খাওয়া শেষ করে পদ্ম আর ইজহান রুমে আসলো। ভাবতেই মন কেমন করে উঠলো কারণ এইতো এখনই ইজহান চলে যাবে।’

‘পদ্ম আর ইজহান পাশাপাশি বসেছে। দু’জনেই চুপ করে আছে। ইজহান পদ্মের মাথায় হাত দিয়ে বললো-‘

“শুনো এক্সাম গুলো ঠিকঠাক মতো দিবে। আমি হয়তো আসতেও পারি আবার নাও আসতে পারি। চেষ্টা করবো আসার জন্য। তুমি কিন্তু ভালো করে এক্সাম দিবে।”

“হু।”

‘ইজহান ভেবেছে পদ্ম আর কিছু বলবে না তাই সে বললো-‘

“তাহলে আসি হ্যাঁ। ঠিকঠাক মতো চলবে আমি কল দিবো তোমায়।”

‘পদ্ম ইজহানের হাত ধরে বললো-‘
“এতো তাড়া কিসের? আরেকটু বসুন না।”

‘ইজহান পদ্মকে মোবাইল টা দেখালো। যেখান বড় করে উল্লেখ করা 5:45 বাজে।’

“দেখো অলরেডি আমি লেইট করে ফেলেছি অনেক। আমাকেও তো বাসায় ফিরতে হবে তাই না?”

‘পদ্ম এখন আবার কেঁদে উঠলো।’
“আজ থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো।”

‘ইজহান হেসে পদ্মের গালে হাত বুলাচ্ছে।’
“এ দু’দিন তুমি যতোবার কেঁদেছো জীবনেও মনেহয় এতোবার কাঁদোনি।”

‘পদ্ম ইজহানকে অবাক করে দিয়ে একটা কাজ করলো। পদ্ম ইজহানের ওষ্ঠে তার ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। মুহুর্তেই পদ্ম নিজেই চোখটা বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু ইজহান ব্যা’টা তো ছাড়ছে না। পদ্ম অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। ওদিক মুখ রেখে বললো-‘

“আপনি কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না ডাক্তার সাহেব। পদ্মফুল কিন্তু রাগ করবে। এবার আপনি আসতে পারেন।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here