প্রেমের রঙ পর্ব -১৮

#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_১৮
#মোহনা_হক

‘পদ্মের পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৪ দিন হলো। এর মাঝে দু’টো পরীক্ষা ও শেষ। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। কারণ ইজহান প্রতি রাতে কল দিয়ে হুমকি দেয় যদি কোনো সাবজেক্টে 80+ নাম্বার ছুটে যায় তাহলে ইজহান তাকে আর বাসায় নিবে না। জানে এগুলো মজা করে বলে তাও নিজের মান সম্মান শ্বশুড় বাড়ির কাছে রাখার জন্য ভালো করে পড়াশোনা করে একটা মান সম্মত রেজাল্ট করা লাগবে। যে করেই হোক। রোববার গণিত পরীক্ষা। সে হিসেবে পদ্ম দিন রাত অংক নিয়েই বসে আছে। এই এক বিষয় যেটাতে পদ্ম খুবই দূর্বল। শত মন দিয়ে চেষ্টা করলেও পারে না।’

‘পদ্ম পড়ার টেবিলে বসে আছে। তার মাথা আর কাজ করছে না। এই সাবজেক্ট টা নিয়ে আর পারে না। ইজহান কল করেছে। পদ্ম পড়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে কল টা রিসিভ করলো।’

‘ইজহান শান্ত কন্ঠে বললো-‘
“কি করছো পদ্মফুল?”

‘পদ্ম চিন্তিত হয়ে বললো-‘
“আমার আর ভালো লাগছে না। এতো চিন্তা মাথায় নিতে পারছি না।”

‘পদ্মের কথায় ইজহান ভ্রু কুচকালো। কি এমন হয়েছে যে এমন কথা বলছে।’

“কি হয়েছে বলবে তো। না বললে কিভাবে বুঝবো?”

“আমি অংক পারছি না। আপনি তো আমাকে বলে দিয়েছেন যে প্রতি বিষয়ে ৮০ এর উপরে নাম্বার থাকতে হবে। আচ্ছা আপনিই বলুন আমি কি এতো ভালো শিক্ষার্থী যে এমন রেজাল্ট হবে আমার। সব বিষয় ঠিক আছে গণিত বিষয়টা কে একটু ছাড় দিলে হয় না।”

‘ইজহান পদ্মের কথা শব্দ ছাড়া হাসলো। এই মেয়ে এটার জন্য এতো টেনশন করছিলো। হাস্যকর ব্যাপার। পরক্ষণেই ইজহান গম্ভীর কণ্ঠে বললো-‘

“উহুম কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। আমি এতো ভালো মানুষ নই ম্যাডাম।”

‘পদ্ম রেগে গেলো। এই বিষয়ে একটু ছাড় দিলেও পারতো। বড্ড বাজে লোক একদম।’

“আপনাকে কে বলেছে আপনি ভালো মানুষ? পঁচা লোক। আপনি মোটেও ভালো মানুষ নন।

‘ইজহান এবার শব্দ করে হাসলো। ইজহানের হাসির শব্দ শুনে পদ্মের রাগ নিমিষেই চলে গেলো। সেও হাসছে।’

” আমার পদ্মফুলের রাগী কথাগুলো এতো মজা লাগে কেনো বলো তো?”

‘পদ্ম কথাটা শোনা মুহূর্তেই চোখটা বন্ধ করে ফেললো।’
‘পদ্ম উত্তর দিচ্ছে না দেখে ইজহান বললো-‘

“আচ্ছা তাহলে কলটা রেখে দেই আমি?”

‘পদ্ম সাথে সাথে বললো-‘
“না না। আচ্ছা আপনি এখন কি করছেন?”

“এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। যেখানে একজনের পারমিশন ছাড়া ভিতরে যাবো না।”

‘পদ্ম কথাটা বুঝলো না। ইজহান আসলে কি বলছে?’

“হু বুঝিনি! কি বলছেন?”

‘ইজহান একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।’
“তোমার আমাকে এখন এই মুহুর্তে দেখতে মন চাচ্ছে?”

‘পদ্ম ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কি বলবে।’
“দেখতে মন চাইলে আপনি কি আসবেন নাকি? আর এখন তো আসাও সম্ভব না কতো দূরের পথ।”

“আমি বলেছি তোমার এখন আমাকে দেখতে মন চাচ্ছে কিনা? আর তুমি কি বলছো আসবেন নাকি কতো দূরের পথ। আমি যেটা জিগ্যেস করেছি সেটা বলো। অতিরিক্ত কথা বলা পছন্দ না।”

‘পদ্মের তো মনে মনে ঠিকই মন চাচ্ছে কিন্তু ইজহান কে কথাটা বলবে কিভাবে?’

‘পদ্ম কথা বলছে না দেখে ইজহান ধমক দিলো।’
“কথা বন্ধ কেনো? দু দু’বার জিগ্যেস করছি। আমার কথা কি গায়ে লাগছে না তোমার?”

‘পদ্ম আমতা আমতা করে বললো-‘
“হু ভিষণ মন চাচ্ছে।”

‘ইজহান হাসলো।’
“তাহলে দরজা খুলো।”

‘পদ্ম অবাক হয়ে গিয়েছে দরজা খুলবে কেনো?’
“দরজা কেনো খুলবো? এখন রাত প্রায় ১২ বাজে। আমার তো ভয় লাগছে।”

‘ইজহান বিরক্ত হলো। এ কি আসলেই কিছু বুঝতে পারছে না?’

“কলটা কেটো না। যাও দরজা খুলো। একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করছো তোমার জন্য।”

‘পদ্ম কিছু বললো না। ইজহানের কথা মতো কলটাও কাটলো না। আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুলছে। যদিও ভয় কাজ করছে কারণ এতো রাতে দরজা খুলবে। কাউকে ভয় না পেলেও ভূত কে তো ভয় পায়। যদি হঠাৎ দরজা খুলতেই সামনে এসে পড়ে। ঠিক এই কথাগুলো মনে করে পদ্মের পা চলছে আবার চলছে না। পদ্ম আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে গিয়ে দরজা খুলছে।’
‘পদ্ম দরজা খুলে ৪০৪ ভোল্টেজের শক খেলো। এ দেখি ইজহান দাঁত দেখিয়ে হেসে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম অবাক হয়ে পিছনে ফিরলো। ভেবেছে এটা মিথ্যে আবার ইজহানের দিকে ফিরে তাকালো। এটা স্বপ্ন নয় তো। তাড়াতাড়ি নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলো। না এটা স্বপ্ন আসলেই ইজহান দাঁড়িয়ে আছে।’

‘পদ্মের রিয়্যাকশন দেখে ইজহান হাসছে। নিশ্চয়ই সে খুব বড় করে অবাক হয়েছে। ইজহান হেসে পদ্মকে জড়িয়ে ধরলো। পদ্মের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো-‘

“পদ্ম আমি ইজহান। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।”

‘পদ্ম অবাক হয়ে তার কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’
“সত্যি এটা আপনি তো?”

‘ইজহান হেসে দিলো।’
“হ্যাঁ এটা আমি

“অবিশ্বাস্য। কিন্তু আপনি এখন এখানে কেনো?”

‘ইজহান ভ্রু কুচকালো। পদ্মকে ছেড়ে দিলো।’

“ওকে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।”

‘পদ্মের চোখ বড় হয়ে গেলো।’
“এই না যাবেন না।”

“তাহলে এখন কি করবো?”

‘পদ্ম ইজহানের হাত ধরলো।’
“ভিতরে আসুন।”

‘ইজহান পদ্মকে বললো দাঁড়াতে। সে নাকি গাড়ির চাবি রেখে আসছে। ইজহান চাবি নিয়ে আসছে সাথে আরও কিছু ব্যাগ ও। পদ্ম ব্যাগ গুলোর দিকে তাকালো।’

“এগুলো কি?”

‘ইজহান ব্যাগ গুলো রাখলো ভিতরে এনে।’

“তোমার যে ডেঞ্জারাস বোন আছে বাবারে। সে জানি কখন আবার কি বলে অপমান করে ফেলে। তার কথা গুলো খুবই জঘন্য। দুলাভাই হিসেবে একদিন ও ভালো কথা বলে নি। এমনিই দেখা হলে অপমান করে। এখন যদি জানে খালি হাতে শ্বশুড় বাড়িতে এসেছি, আমার ইজ্জত পানি পানি করে দিবে।”

‘পদ্ম হেসে দিলো ইজহানের কথা শুনে। এই দু মানুষের কখনো মিল হয়নি। ভবিষ্যতে হবে কিনা সন্দেহ আছে।’

“আচ্ছা এগুলো এখানে থাকুক। আপনি ভিতরে যান আমি আসছি।”

“কোথায় যাবে? শুনো কাউকে এখন বলার দরকার নেই। সবাই ঘুমে আছে। যদি বলেছো তো তাহলে আমি চলে যাবো কিন্তু।”

“আচ্ছা বলবো না। কিন্তু আপনি কি কিছু খাবেন না?”

“আমি খেয়ে এসেছি। রুমে চলো এখন।”

‘পদ্ম ইজহানের সাথে রুমে আসলো। ইজহান ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। এই ফাঁকে পদ্ম ইজহানের জন্য এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। বলেছে খেয়ে আসছে তাই বলে এখন কি তাকে কিছু খেতে দিবে না নাকি? এজন্য চা বানিয়ে আনলো। পদ্ম চা ওতো বেশি পছন্দ করে না তাই আর নিজের জন্য বানালো না।’

‘ইজহান শার্ট চেঞ্জ করে এখন টি-শার্ট পড়েছে। দেখে মনেহচ্ছে গোসল করেছে। কারণ চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে।’

“আপনি গোসল করেছেন?”

‘ইজহান মাথা নাড়লো। পদ্ম ইজহানের সামনে চা নিয়ে দাঁড়ালো।’

“চা বানিয়েছো কেনো?”

“আপনাকে কি না খাইয়ে রাখবো নাকি?”

“চা খেলে আমার পেট ভরবে বলে তোমার মনে হয়?”

‘পদ্ম অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো ইজহানের দিকে।’

“আপনি না খেয়ে এসেছেন?”

‘ইজহান পদ্মের অধরে হাত রাখলো।’

“আমার মন তো অন্য কিছু খেতে মন চাচ্ছে।”

‘পদ্ম সরে আসলো ইজহানের থেকে।’

“দেখুন এখন এসব ভালো লাগছে না। আপনি চা খান।”

“দাও।”

‘ইজহান চা টা মুখে দিয়ে চেহেরাটা বিকৃতি করে ফেললো। পদ্ম ভড়কে গেলো। চা মনেহয় ভালো হয়নি।’

“ভালো হয়নি?”

“চিনি দাও নি তো একটুও। বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখো।”

‘পদ্ম খেলো ঠিকই চিনি দেয়নি। একদম পানির মতো লাগছে চা। পদ্ম ইজহানের হাত থেকে চায়ের কাপ টা নিয়ে নিলো।’

“থাক আপনার আর চা খেতে হবে না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। জার্নি করে এসেছেন।”

‘ইজহান তার হাত দিয়ে সামনের চুল গুলো পিছনে নিলো।’

“তোমার না ম্যাথে প্রবলেম?”

“হু।”

“চলো দেখি কোথায় প্রবলেম।”

“এখন অংক করবো না।”

‘ইজহান ধমক দিলো।’
“করতে হবে।”

‘ইজহান পদ্মের হাত ধরে টেনে এনে টেবিলে বসালো। পদ্মের পাশের চেয়ার টেনে নিজেও বসলো। ইজহান পদ্মের এই অবস্থা দেখে যা বুঝলো সে কিছুই পারে না। ভেবেছিলো পদ্ম অনেক ভালো স্টুডেন্ট এখন দেখি ঘোড়ার ডিম সে। প্রায় ৫টা অংক করে দিলো ইজহান। এখন পদ্মকে প্রচন্ড ঘুমে ধরেছে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না একটুও।’

“আমার ঘুম আসছে চলুন না ঘুমাতে যাই।”

‘ইজহান পদ্মের কথামতো ঘুমাতে গেলো। পদ্ম ওদিক ফিরে শুয়ে পড়লো। যেটা ইজহানের সহ্য হলো না। পিছন থেকে পদ্মকে জড়িয়ে ধরলো। পদ্মের ঘাড়ে মুখ লুকাল। এবার শান্তি লাগছে ইজহানের।’

“এতোদিন এটাই মিস করতেছিলাম পদ্মফুল।”

‘পদ্ম চিমটি কাটলো ইজহানের হাতে। ইজহান আরেকটু গাঢ় করে জড়িয়ে ধরলো।’

“একটু ভালোবাসার কথা ও বলতে পারবো না?”

‘সকাল ৫টা।’
‘পদ্ম তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো। কারণ তার মাকে বলতে হবে ইজহান এসেছে। তার জন্য নাস্তা বানানো লাগবে। এখন যদি না বলে তাহলে তার মা তাকে ইচ্ছেমতো বকবে। পদ্ম আস্তে করে ইজহানের হাত এক পাশে রাখলো। হাত দিয়ে চুলে খোঁপা করে, দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।
‘রুবিনা খাতুন খুব রাগ করলেন কারণ কেনো তাকে কিছু বলা হয়নি। আরও ইজহান ও কিছু খায়নি শুনে তিনি পদ্মকে হাজারটা বকা দিলেন। রুবিনা খাতুন এখন ইজহানের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। পদ্ম তার মায়ের পাশে বসে আছে।’

‘৯টা।’
‘পদ্ম ইজহানকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য রুমে আসলো। ইজহান আগেই উঠে বসে আছে। ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। পদ্ম ঠিক ইজহানের সোজাসুজি দাঁড়ালো।’

“ফ্রেশ হয়েছেন?”

“হু। তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ? ঘুম থেকে উঠে পায়নি কেনো তোমায়?”

“আমি মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। মা খুব বকেছে কেনো জানায় নি। আচ্ছা খেতে আসুন এখন।”

“আগে তো স্পেশাল কিছু পাই তারপর খাবো।”

“স্পেশাল কিছু কি আবার?”

“উফ তুমি এতো বোকা কেনো পদ্মফুল? আমার মনের ভাষা বুঝতে পারো না? কেনো তুমি বড় হলে না?”

‘ইজহান পদ্মকে টেনে তার কোলে বসালো। পদ্ম হকচকিয়ে গেলো। পদ্মের গালে সুন্দর করে চুমু বসিয়ে দিলো। পদ্ম ইজহানের হাত খামচে ধরলো।’

‘তাদের এই মুহূর্তে পুষ্পের আগমন ঘটলো।

“আপু মা ডাকছে।”

‘দূর্ভাগ্যবশত পুষ্প দেখে ফেললো। সাথে সাথে পুষ্প ওদিক ফিরে গেলো।’

“ছি ছি কি দেখে ফেললাম।”

‘পদ্ম জোর করে ইজহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। ইশ এমন টা না হলেও পারতো। এখন পুষ্পের সামনে মুখ দেখাবে কি করে?’

‘ইজহান শান্ত কন্ঠে বললো-‘
“ছি ছি করো না দোষটা তোমারই ছিলো। তুমি ভুল সময়ে এসে পড়েছো। এগুলো আবার কারো কাছে বলতে যেও না।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here