প্রেম ছোঁয়ালে পর্ব ৪

#প্রেম_ছোয়ালে

Part:04
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

নীলি ও এগিয়ে যায় তার নীল পুরুষ এর দিকে

দুজনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে

–এই যে নীল পরী পেছনে ঘুরে দাঁড়াও, তোমার মালা বইতে বইতে আমি ক্লান্ত
–সামান্য মালা বইতে ক্লান্ত ।তাহলে আমাকে সারাজীবন কিভাবে বইবেন নীল পুরুষ

দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো।নীলির খোপাতে মালা গুঁজে দিল আশফি

–তোমার খোপার এই বেলী ফুলের ঘ্রাণ এই আমার দিন কেটে যাবে
–দেখুন নীল পুরুষ আপনি আমাকে ভুলেও গাড়ি র টায়ার ভাববেন না।যে পাম দেব তো ফুলে যাবে
–ও তাই বুঝি
–হ্যাঁ তাই

এভাবেই খুনশটি কেটে গেল কয়েকটি মাস।রাত জেগে ফোন আলাপ,সপ্তাহ এ দুদিন রিক্সা তে চড়ে ঘুরে বেরানো ভালোই চলছিল তাদের প্রেমের গল্প

–এই রে নীল পুরুষ শুনছো
–বলো
–আচ্ছা শোনো না,আমি ভাবছি দেশের বাইরে গিয়ে পিএইচ ডি করবো।কেমন হবে বলোতো

বাদাম এর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে আশফি বললো

–দেখেছো।সেই এক কান্ড।শুধু রঙ না এখানে আমাদের মিল
–কিভাবে
–আমি ও ঐ একি ভাবনাতে আছি
–ও আচ্ছা
–হুম।তোমার আর আমার মাঝে কোন কিছুর অমিল খুঁজে পাই না।হয়তো এভাবেই আমাদের মিল হবে কি বলো

আশফি র কথাতে নীলি শায় দিতে পারলো না।কারণ সে একবার কার কাছে শুনেছিল,দুটো মানুষ এর মাঝে হুবহু সব মিল থাকতে নেই।তাহলে ঐ মানুষ দুটো কখনো মিলতে পারে না।একটু অমিল থাকা উচিত

যেমন ধনাত্মক আধান (+) আর ঋণাত্মক আধান(-)।এরা বিপরীত এ আকর্ষিত হয়।আর বিপরীত আকর্ষণ এই বিদ্যুত প্রবাহ সৃষ্টি করে।

নীলির মাথা তে এসব ঘুরছে হঠাত্

–এই নীল পরী কি ভাবছো
–কিছু না
–কিছু তো আছেই।বলো কি হয়েছে?
–আচ্ছা চলো তুমি আমি দুজনেই রাজী যখন চলো আজ একসাথে গিয়ে অনলাইনে বিদেশের কিছু ভারসিটিতে এপলাই করি।কি বলো
–হুম তোমার কথা মন্দ না।চলো

সেদিন একসাথে দুজনে গিয়ে অনলাইনে চারটি ভারসিটিতে এপলাই করে

–আচ্ছা যদি আমাদের দুজনের এক সাথে একি জায়গায় হবে তো?
–আরে এটা চিন্তা করো না।যা হবার হবে ।এখন চলো

দুজনে ঘুরতে বেরোলে

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ।মেঘের ঢাকা আকাশ আর রাতের আধার সব কিছু যেন পুরো গ্রাস করেছে সম্পূর্ণ পৃথিবী কে।আর এদিকে দু প্রান্তে দুই বেলকনিত এ দাঁড়িয়ে ফোন আলাপে ব্যস্ত দুজন কপোত কপোতী

–আমি ভাবতে পারিনি নীলি যে বাবা মা রাজী হয়ে যাবে
–আমিও
–নীলি দেখেছো
–কি
–ঐ যে বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে
–হুম দেখেছি।হালকা বাতাস ও বইছে
–তুমি ও কি এখনো বেলকনিত এ দাঁড়িয়ে
— না এতোক্খন ছিলাম।এখন ঘরে এসে কোলবালিশ জরিয়ে ধরে তোমার সাথে ফোনে কথা বলছি
–ওমা কেন
–মেঘের ডাক শুনলে আমার খুব ভয় করে।আর সাওদা টা সেই কখন নিচে গেছে।এখনো আসে নি।তাই ভয়ে কোলবালিশ জরিয়ে আছি
–হা হা
–তুমি হাসছো
–আচ্ছা ঠিক আছে।বিয়ে র পর যেন প্রতিদিন মেঘ গর্জন করে আমি সেই দোআ করছি
–কেন
–তাহলে ততোবার তুমি ভয়ে আমার বুকে মুখ লুকাবে
–যাহ পাজি একটা।রাখছি
–এইইই শোন
–কি
–বাসি ভালো
–আমিও
–শুভ রাত্রি নীল পরী
–শুভ রাত্রি নীল পুরুষ

আশফি র চোখে ঘুম নেই আজ।আর দুই মাস পরে তাদের বিয়ে ।তাদের সম্পর্কে র কথা দুই পরিবারেই জেনেছে।আর কোন বাধা নেই।খুব শিগগিরই তার নীল পরীকে সে বুকে নিয়ে ঘুমাবে

বিয়ের কেনাকাটা,প্রেম,খুনশটি কেটে গেছে অনেক দিন

হঠাত্ একদিন সকালে নীলিকা র ফোনে ইমেইল আসে।সে হাভারড ইউনিভার্সিটি তে মনোনীত হয়েছে।এখন তিন দিনের মধ্যে তাকে কনফরম করতে হবে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য।পাসপোর্ট করতে হবে ।আর পাসপোর্ট ভিসা হয়ে গেলেই তার ফ্লাইট

নীলিকা ওর পরিবার সবাই খুশি।কিন্তু কে জানতো এই খুশির খবর হবে তার আর আশফির মাঝে র ভাঙনের কারন

–আশফি বোঝার চেষ্টা করো তুমি নিজেও তো রাজী ছিলে বলো।আর তোমার নাম হয়তো পরে আসবে।আশফি একটু বোঝার চেষ্টা করো।আমার এতোদিনে র স্বপ্ন
–কি বোঝার চেষ্টা করবো নীলি।তুমি বুঝতে পারছো।চারটি বছর।এটা কম।চারটি বছর তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে
–আশফি চারটি বছর কি অপেক্ষা করতে পারবে না তুমি ।আশফি আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই
–আর আমাকে চাও না
–আশফি তুমি জানো যে আমি কতো করে তোমাকে চাই
–তাহলে।আর একমাস ও নেই আমাদের বিয়ে র।তুমি জেদ করোনা নীলি।আর তুমি যদি যেতে চাও তো যাও আমি মানা করবো না।কিন্তু আমাকে ভুলে যেও
–আশফি ইই

আশফি ফোন কেটে দিয়েছে।এদিকে নীলি কেঁদেই যাচ্ছে ।এই বছরের সম্পর্ক তাদের ।আশফি কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলেনি।আর নীলি কে কাদানো তো দূরে থাক

–মা তুমি ভেবে বলছো তো।এতো বড় সুযোগ তুমি এভাবে হাতছাড়া করবে
–বাবা আমি আশফি কে চাই।স্বপ্ন এর কথা না হয় ভুলে যাব
–মা চার বছর পর তুমি এলে আশফি র চেয়ে ভালো,,,,,,,,
–বাবা আমি ওকে ভালোবাসি।আর আমি ওর সাথে থাকতে চাই

নীলির বাবা মাও মানতে বাধ্য হয়েছিল তার সিদ্ধান্ত

–তুমি খুশি তো
–নীলি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমাকে ভুল বুঝো না
–আমি ভুল বুঝিনি ।তোমাকে ভালোবাসি।যা করেছি তোমাকে ভালোবেসে করেছি
–কিন্তু আমার যে কষ্ট হচ্ছে নীলি।আমার জন্য তোমার স্বপ্ন
–স্বপ্ন পরেও পূরন করতে পারবো আশফি
–আচ্ছা শোন কাল তোমাকে নিয়ে বেরোবো
–ঠিক আছে

নীলিকা ফোন রেখে,ঐ ইমেইল টা ক্যানসেল করে দিল।কি অদ্ভুত তার স্বপ্ন আজ দরজার কাছে এসেও তাকে ফেলতে হচ্ছে

এক সপ্তাহ পর

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here