প্রেম পাগলামি পর্ব ৩২+৩৩

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩২

আমার হাতে শপিং ব্যাগটা দিয়ে মা নিজের রুমে চলে গেলো আমিও আমার রুমে এসে প্যাকেটটা খুললাম।প্যাকেট খুলতেই আমি তো শকড।
এটা তো সেই শাড়িটা যেটা আমি দোকানে পছন্দ করেছিলাম।হ্যা এটাই তো।কিন্তু সৌরভ ভাইয়া কিভাবে জানলো নাকি আন্দাজেই দিয়েছে?আন্দাজে দিলেও তো ভালোই,বেগুনি রং এর শাড়িটা ভাজ খুলে গায়ে জড়াতে যাবো তখনি শাড়ির ভাজ থেকে একটা কিছু পড়লো মনে হলো,নিচু হয়ে দেখি একটা চিরকুট।ফ্লোর থেকে তুলে নিয়ে খুলে দেখলাম চিরকুটটি।

“এক পশলা বৃষ্টি ২০০গজ দূরের কৃষ্ণচূড়া আর তুমি….!তোমাকে আর কি বিশেষায়িত করবো আপদমস্তক তুমি বিশেষন,,
নীল রং এর শাড়িতে তোমাকে বেশ মানায় কিন্তু বেগুনি রং এর শাড়িতেও তোমাকে খারাপ লাগবে না।রোজ নিয়ম করে একটু হাসলে কাজের আহামরি ক্ষতি হয়ে যাবে না কিন্তু…!তাই একটু বেশি বেশি হেসো নিহীপাখি..*_*
ভাইয়াকে খুব কষ্টে বুঝিয়ে শাড়িটি পাঠালাম,তোমার পছন্দের কোনকিছুই কিন্তু আমার নজর এড়াই না।হিহিহহহহিহহ,,ভালোবাসি বলে কথা।জানি না তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা তবে একটা অনুরোধ কাল একবার ওই শাড়িটা পরে আসবে??
–তোমার অসভ্য”

লেখাগুলো পরে আমি তো শকড।কি লোক রে বাবা আমি যে শাড়িটা পছন্দ করেছি সেটাও খেয়াল করেছে?আবার সৌরভ ভাইয়াকে কি না কি বলে বাসায় ও পাঠায় দিলো।
–লোকটা ওতোটাও খারাপ না নিহী,ভালোবাসায় যায় ওই অসভ্যটাকে।কাল শাড়িটা পরেই যাস। (মনে মনে বললাম)

সকাল সকাল উঠে পড়েছি,ঝামেলা একটাই আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না।আপুকেই জোর করে ম্যানেজ করে নিলাম।আপু শাড়িটা পরিয়ে দিলো,অবশ্য আজকেই কেন শাড়িটা পরছি তাও বার বার জিজ্ঞেস করছে আপু।কোনরকম মিথ্যে বুঝিয়ে বের হলাম,এটাও বলেছি আজ ভার্সিটি শেষে মীরার বাসায় যাবো ফিরতে রাত হবে।উনি কিন্তু আমাকে রাত করে থাকতে বলেননি কিন্তু কেন জানি না ইচ্ছা হলো অনেকটা সময় কাটানোর।বাসা থেকে আজ গাড়িও নিলাম না রিক্সায় উঠেছি।রিক্সাওয়ালাকে একটা জায়গার নাম বললাম উনি আমাকে ওখানে নামিয়ে দিয়ে আসলেন।
–হ্যালো
–হুম নিহীপাখি বলো
–কোথায় আপনি?
–আমি তো ভার্সিটিতে যাচ্ছি আর ৫-৭ মিনিট লাগবে।
–ভার্সিটিতে যাওয়া লাগবে না।
–মানে?
–আমি একটা ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি ওখানে আসুন।আমি অপেক্ষা করছি।(উনি হয়তো প্রথমে বুঝতে পারেননি।বুঝতে পেরে উনি খুব খুশি হন মনে হলো)
–আমি এক্ষনি আসছি।

আমি ফোন কেটে দিলাম।ঠিকানা টা টেক্সট করে দেয়ার ১০মিনিট মতো পর উনি আসলেন।আমি বেশ অবাক এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন ভাবতেতে পারিনি।উনি আমার পাশে এসে বসলেন।আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে,,
–তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে নিহীন।
–ধন্যবাদ কিন্তু আপনি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলেন কিভাবে?
–আমার নিহীপাখি আমাকে কোথাও আসতে বলেছে আর আমি যদি লেট করি তাহলে তো সে রাগ করতো।আর আমি কি তাকে রাগাতে পারি?
–ওহহহহ,ভালো
–হুম ভালো তো হবেই,কে হুকুম করেছে দেখতে হবে না??আমি যদি অন্যদেশেও থাকতাম তাও দশ মিনিটে হাজির হতাম।
(ওনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।উনিও ভ্রু কুচকালেন।কিছুক্ষন পর একটু হেসে দিলেন)
–বেশি বেশি হয়ে গেলো নাকি?
–জি
–ওই একটু
–একটু না অনেকটাই
এরপর দুজনেই হেসে দিলাম।নদীর পড়ে ছোট্ট একটা বেঞ্চের ওপরে বসে দুজন বেশ অনেক সময় বসে থাকলাম।নদীর বয়ে যাওয়া স্রোত,স্নিগ্ধ বাতাসে বেশ ভালো লাগছে।অনেক্ষন চুপচাপ থাকার পর বলে উঠলাম,
–কিছু খাওয়াবেন খুদা লেগেছে??
আমার কথা শুনে উনি আশেপাশে তাকালেন,কিন্তু একটা বাদাম ওয়ালা ছাড়া কিছুই পেলেন না।
–নিহীন এখানে বাদাম ছাড়া আর কিছু
–ওটাই আনেন
–আচ্ছা তুমি বসো আমি আনছি।
উনি বাদাম কিনে এনে নিজেই বাদাম এর খোসা ছিলে আমকে খেতে দিলেন।দুজনে অনেক গল্পই করলাম,হাসাহাসি করলাম।ঘন্টাখানেক পর উঠলাম,রিক্সায় ঘুরলাম।দুজন খুব ফ্রিলি কথা বলছি আজ কোন সংকোচ নেই।বেলা ১২টার দিকে সেই বৃদ্ধাশ্রমে গেলাম।আজ সবাই আমাকে নাতবৌ বলে ডাকছে আমি বাধা দিলাম না।সারাটা দিন ওখানেই থাকলাম।সন্ধ্যার পর দুজন বের হলাম।রিক্সায় ছিলাম কিন্তু কি মনে করে আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।
–কি হলো নিহীন নেমে গেলে যে।
–আপনিও নামুন
–কেন?
–আমি বলছি তাই।
উনি নেমে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিলেন।দুজনেই এবার হাটছি।ফাকা রাস্তাই পাশাপাশি হাটতে বেশ ভালোই লাগছে।উনি হটাত বলে উঠলেন,
–নিহীপাখি
–হুউম
–একটা কথা বলবো?
–হুউউউম
–তোমার হাত না মানে
আমি বুঝতে পারলাম উনি হাত ধরার কথা বলছেন কিন্তু আমি বুঝেও না বুঝার ভান করলাম।
–কি মানে?
–না মানে আমি কি তোমার মানে
–উফ মানে মানে না করে বলেন তো
–আমি কি তোমার হাত ধরতে পারি??
–না
–কেন?
–আমি বলছি তাই।
–না আমি হাত ধরবোই।
উনি সাথে সাথে হাত ধরে নিলেন।
–কি হলো হাত ধরলেন যে?আমি না বললাম না
–তুমি বললেই হবে?
–তাহলে পারমিশন না নিলেই তো হতো।
হাত ধরে কিছুক্ষন হাটার পর হটাত করেই আমার কাশি শুরু হয়ে গেলো।আমাকে কাশতে দেখে উনি খুব বিচলিত হয়ে গেলো।কাছে পানি না থাকায় আমাকে দাড় করিয়ে পানি আনতে গেলেন।উনি যাওয়ার পর আস্তে আস্তে আমার কাশি বন্ধ হয়ে গেলো।আমি চারিপাশে খুজলাম কিন্তু ওনাকে পেলাম না।
–কি ব্যাপার সুন্দরি সৌভিককে খুজছো বুঝি?
পাশ থেকে লোকটার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম
–আপ আপনি?(আমার সামনে আর কেউ না সেই আদিল)

|
–নিহীন চোখ খোল(মায়ের গলা শুনে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম
–মাআ(মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম,আমি যে জীবিত আছি এটাই অনেক)
–কান্নাকাটি থামা আর এই শাড়িটা পরে নে।
(মায়ের হাতে লাল টুকটুকে একটা জামদানি শাড়ি।বিয়েতে কনেরা যেমন পরে তেমন)
–শাড়ি কেন পরবো মা?
–আজ এই মুহুর্তে তোর বিয়ে।
–আমার বিয়ে মানে?
–যে তোর এতো বড় সর্বনাশ করতে যাচ্ছিলো তার সাথেই তোর বিয়ে হবে এখন।মান সম্মান বাঁচাতে আমাদের এ বিয়ে দিতেই হবে।

মা কেঁদে দিলো,আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।কি বলছে মা এগুলো?আমার বিয়ে,কার সাথে আর হটাত কেনোই বা?আমার কোন কথা না শুনেই আপু আমাকে শাড়িটি পরিয়ে দিলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই রাত ২টার দিকে বাবা শুকনো মুখে আমার ঘরে ঢুকলো সাথে কাজি।কেউ আমার কোন কথায় শুনছে না।কয়েক মিনিটেই আমার বিয়ে হয়ে গেলো।আমি মিস নিহীন থেকে মিসেস নিহীন আশহাদ হয়ে গেলাম।যখন ওনার নাম শুনলাম আমি তো অবাক হটাত কি হলো বাবা মা ওনার সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছে।বাবা মার বারবার বলাতে আমি কবুল বলে দিই।আমার সাথে কয়েক ঘন্টা আগেই বাজে একটা ঘটনা ঘটলো আর তারপরই ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো।কিন্তু মা এটা কেন বললো যে আমার সর্বনাশ করেছে তার সাথে বিয়ে?আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না।

রাত তিনটা আমি বাসর ঘরে বসে আছি ওনার অপেক্ষায়,মনে মনে এই বিয়েটার কারন খুজছি কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।বিয়ে,শব্দটা ছোট হলেও মেয়েদের কাছে এটা অনেক বড় একটা স্বপ্ন।আমারো অনেক স্বপ্ন ছিলো বিয়ে নিয়ে কিন্তু এভাবে সব হয়ে যাবে কোনদিনি ভাবিনি,তারওপর যা ঘটে গেলো সব মিলিয়ে আমি অনেক ভয় পেয়েছি।তবে আমি খুশি আমার পছন্দের মানুষটিকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি।আমার অপেক্ষার সমাপ্তি করে উনি আসলেন,ওনাকে দেখে আমি উঠে দাড়িয়ে ওনাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যায়,বড়দের মুখে শুনেছি স্ত্রীকে বাসর রাতে সালাম করতে হয়।আমিও সেই প্রথা অনুসারে সালাম করতে যায় কিন্তু উনি আমার দুই বাহু ধরে ফেলেন।খুব শক্ত করে ধরায় ব্যাথা পাই।উনি আগে তো এভাবে কখোনো আমার হাত ধরিনি ওই একদিন ছাড়া তাহলে কি আজও উনি রেগে আছেন?কিন্তু কেন আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেলো।আমি ওনার চোখের দিকে তাকাতেই বুক্টা কেপে উঠলো,চোখ লাল আর ফুলে গেছে।কিছু হয়েছে কি ওনার কেঁদেছে নাকি?
–কি হয়েছে আপনার??
উনি আমার কোন কথার উত্তর না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ছুড়ে মাটিতে ফেলে দেন।মাটিতে এমনভাবে পড়ায় আমি হাতে বেশ ব্যাথা পায়।কিন্তু উনি আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন কেন?
–আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন কেন?কি হয়েছে?

আমি মাটিতেই বসে আছি উনি আমার কাছে এসে চুলের মুঠি ধরে ফেলেন।আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠি।

চলবে….
(আপনাদের হিরো হিরোইনের বিয়ে দিলাম আজ।দুঃখিত দাওয়াত দিইনি আসলে হুট করেই হয়ে গেলো।কেন হলো সেটা ভাবছেন নিশ্চয়,বলবো বলবো সব বলবো একটু অপেক্ষা করেন)#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩৩

আমি মাটিতেই বসে আছি উনি আমার কাছে এসে চুলের মুঠি ধরে ফেলেন।আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠি।
–কি করছেন এটা?ব্যাথা লাগছে তো আর হটাত কি হলো আপনার?
–……….
–ব্যাথা লাগছে তো আমার!!
উনি চুল ছেড়ে দেই।জানালার কাছে দাড়িয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরায়।আমি আস্তে আস্তে উঠে ওনার কাছে গিয়ে দাড়ায়।ওনার কাধে হাত রেখে,
–কি হয়েছে আপনার?এরকম পাগলামি করছেন কেন?আর পরিবারের লোকেরি বা কি হলো হটাত আমাদের বিয়ে দিলো যে??আচ্ছা ওই আদিল এখন কোথায়??
আদিলের নাম টা শুনতেই হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে আমার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরেন।
–আমার সাথে কেন করলে এমন?আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছি শুধু তাহলে কেন?(উনি হাত ছেড়ে কেঁদে দিলেন,কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লেন)তোমার যদি আদিলকেই এতো পছন্দ আমাকে আগেই বলতে কিন্তু সবার সামনে আমাকে শেষ পর্যন্ত ছিনতাইকারী আর ইভটিজিং এর অপবাদ দিলে?যেই বাবা আমকে নিয়ে গর্ব করতো সেই বাবা আজ আমাকে ঘৃণা করে,যেই মা আমার গায়ে একটা টোকাও দেইনি সেই মা আজ আমায় থাপ্পড় দিয়েছে আর সব থেকে বড় কথা আমি নিজের চোখেই নেমে গিয়েছি।কেন করলে এমন,কোন প্রতিশোধ নিলে??
–কি বলছেন এসব?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
–বুঝতে পারছো না নাকি বুঝতে চাইছো না??
–আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।
–বন্ধ করো তোমার নাটক।তুমি যে এতোটা নিচু মনের মানুষ আমি ভাবতেও পারিনি।ছি!আমি তোমাকে ভালোবেসেছি??নিজের প্রতিই ঘৃণা আসছে আমার।
উনি ঘর থেকে চলে গেলেন।আমি ওনার এই ব্যবহারের কারন বুঝতে পারলাম না।উনি এভাবে কেন বললেন আমি তো ওনাকে কোন অপবাদ দিইনি,বাকিদের কাছে জানতে হবে ব্যাপারটা।কেঁদে ফেললাম,কাঁদতে কাঁদতে মাটিতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে ঘুম ভাংলো আপুর ডাকে।
–নিহী ওঠ বোন।
চোখ মেলে তাকাতেই আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।
–আপু উনি কোথায়?কি হয়েছে ওনার আর বাসায় বা কি হলো এভাবে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো?
–তুই এখনো ওর কথা জানতে চাইছিস যে কিনা তোর ক্ষতি করতে গেছিলো?
–মানে?উনি কেন আমার ক্ষতি করতে যাবে?কি বলছিস এসব?
–তুই তো সবার সামনে সৌভিকের দিকে ইশারা করে বুঝিয়েছিস যে ওই তোর ক্ষতি করতে যাচ্ছিলো।
–কি?
–হ্যা…
আপু আমাকে সবটা বলে,আপুর কথা শুনে আমি তো থ মেরে যায়।কি হয়ে গেলো এটা।সবাই তো ওনাকে ভুল বুঝলো।না সবার সত্যিটা জানা লাগবে।আমি সবাইকে ডাকতে বলি।আপুর কথায় দুই পরিবারি এক জায়গায় হয়।আমার সদ্য তৈরি হওয়া শশুরবাড়ির সবাই আমার কাছে ক্ষমা চাই।ওনাদের এভাবে দেখে আমার নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে।ওনার বাবা তো আমার পা ধরতে গেলেন,,
–কি করছেন আংকেল?প্লিজ এমন করবেন না।
–না মা আমার ছেলে যেটা করেছে
–কিছুই করেনি আপনার ছেলে আরো আমাকে বাঁচিয়েছে।উনি না থাকলে আমার আরো সর্বনাশ হয়ে যেতো।
–কি বলছিস এ নিহী?(মা বলে ওঠে)
–ঠিকি বলছি মা…

গত কাল রাতের ঘটনা:-
–কি ব্যাপার সুন্দরি সৌভিককে খুজছো বুঝি?
পাশ থেকে লোকটার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম
–আপ আপনি?(আমার সামনে আর কেউ না সেই আদিল)
–হ্যা আমি।তুমি তো সেই সুন্দর,সৌভিক তো একদম খাটি মাল পছন্দ করেছে।
–হাউ ডেয়ার ইউ আমাকে মাল বলছেন কেন?
–এই এই দেখ তোরা সুন্দরিকে মাল বলাতে মাইন্ড করেছে ম্যাডাম।সরি সুন্দরী(আদিলের সাথে থাকা ৪-৫ টা ছেলেও বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো.
–সাইড দিন আম বাসায় যাবো?
–এতো তাড়া কেন আর তোমার সৌভিক কোথায় তা প্রাণপাখিকে একা রেখে কোথায় গেলো(আদিল আমার হাত ধরে কথাটা বলে)
–একি হাত ধরলেন কেন??হাত ছাড়ুন।
–একটু হাত ধরায় এমন করছো অন্য কিছু ধরলে কি করবা??(আদিলের কথাই আমার খুব রাগ হয়ে যায় কোনরকম হাত ছাড়িয়ে আমি আদিলকে এক থাপ্পড় মেরে দিই।আদিল অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়)
–তোর এত বড় সাহস আমাকে থাপ্পড় মারলি?তোকে তো এবার
আদিল এক টানে আমার ওড়না খুলে ফেলে।তারপর খুব বিশ্রীভাবে আমার দিকে বাজে মতলবে আগায়।আমি এক পা দুপা করে পিছাচ্ছি আর এটা যে ও ঠিক করছে না সেটাই বলছি।
–ভুলেও কোন ভুল করিস না আদিল।সৌভিক কিন্তু তোকে ছাড়বে না
–আরে বাদ দাও তো তোমার সৌভিকের কথা ও আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।আজ তো আমি সৌভিকের নিহীপাখিকে নিজের খাচায় বন্দি করবো
–আমার পাখিকে বন্দি করার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করিস না।
সৌভিক ভাইয়ের কথায় আদিল পিছু ঘুরে তাকাই।ওনাকে দেখে আমি দৌড়ে ওনার পিছে চলে যায়।
–কিছু হবে না নিহীন তোমার।
এরপরি সৌভিক ভাই আর আদিল গ্রুপের মাঝে ঝামেলা হয়।আমি কখনো এরকম মারামারি দেখিনি তাই খুব ভয় পেয়ে যায়।একটা পর্যায়ে আদিলের এক লোক ওনার মাথায় কিছু দিয়ে আঘাত করে আমি ওনাকে ধাক্কা দিই আর বাড়িটা এসে লাগে আমার মাথায়।আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।

এই ফ্লাশব্যাকটুকু মনে মনে ভাবলাম।মা বলে ওঠে,,
–নিহীন কথা বল।
মায়ের কথায় আমার হুশ ফেরে আর আমি সবটা বলি যে আদিপ এসেছিলো আমার ক্ষতি করতে অবশ্য এটা বলিনি যে আমি ওনার সাথে ছিলাম আর ওনার জন্যেই আদিল আমার ক্ষতি করার ভেবেছিলো।আমার কথা শুনে কি সবাই তো অবাক?
–কি বলছো এসব নিহীন?আমরা তো সৌভিকরে খারাপ ভেবেছি(সৌরভ ভাইয়া বলে)
–আমিও তো সেটাই ভাবছি যে আপনারা ওনাকে কেন ভুল ভাবলেন।
সৌরভ ভাইয়া এবার বলে,,
আসলে,
আমি অজ্ঞান হওয়ার পরপরি ওখানে লোক জড় হয়ে যায়।আদিল আর সৌভিক ভাই ছাড়া সবাই পালিয়ে যায়,এই দুজনকে ধরে রাখা হয়।ওখানে যে মহিলারা ছিলো তারা আমার মাথায় পানি দেই আমার ফোন থেকে বাসায় কল দেয়া হয়।বাসার সবাই যাওয়ার পর নাকি আমার জ্ঞান ফেরে তারপর জানতে চাই আমার সাথে এসব কে করেছে আমি নাকি সৌভিক ভাইয়ার দিকে ইশারা করি আর মুখেও সৌভিক নামটাই বলছিলাম বার বার।তখনি সৌভিক ভাইয়ার মা ওনাকে এক থাপ্পড় দেই।ওনার বাবা ওনাকে পুলিশে দিতে যায় কিন্তু আমার দাদি তখন বলে ওনাকে পুলিশে দেয়া হবে না।ওনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে।কেউ রাজি হয় না তখন কিন্তু মান সম্মানের ব্যাপার তাই শেষ পর্যন্ত আমাদের বিয়ে দেয়া হয়।

–ভাইয়া আমি তখন ওনার দিকে ইশারা করেছিলাম কিন্তু তার কারন ছিলো আর কারনটা হলো ওনার হাত কেটে গেছিলো আমি ওনাকে দোষী বোঝাতে চাইনি।(আমি কেঁদে দিই)
তারপর বলি ওনার জন্যেই আমার ক্ষতি হয়নি।আমার কথা শুনে সবাই ভুল বুঝতে পারে।সবাই লজ্জা বোধ করছে এখন।বিশেষ করে ওনার বাবা-মা আর আমার বাবা-মা। এনারাই তো বেশি বাজে ব্যবহার করেছে।সবাই ওনাকে খুজতে থাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যে কিন্তু উনি কোথাও নেই।সারাবাড়ি খোজা হলো এমনকি ওনার বন্ধুরাও জানে না উনি কোথায় এরি মাঝে সৌরভ ভাইয়ার ফোনে ওনার মেসেজ আসলো,,
“আমি নিহীনের ক্ষতি করতে চাইনি ভাইয়া।জানি না ও কেন এটা করলো।আমার জন্যে তোদের মান সম্মান নষ্ট হলো।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি চলে যাচ্ছি”
মেসেজ টা সৌরভ ভাইয়া সবাইক জানালে সৌভিক ভাইয়ের মা কান্নাকাটি শুরু করে ছেলেরা ওনাকে খুজতে বের হয় আর এদিকে বাড়িতে সবাই নিজেদের ভুল ভেবে নিজেদের দোষ দিচ্ছে আর কাঁদছে।আমার টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।আমার বোকামির জন্যে সবাইক ওনাকে খারাপ ভাবল উনিও আমায় ভুল বুঝলেন।প্রায় তিন ঘন্টা পর সৌরভ ভাইয়ারা আমাদের বাসায় ফেরে।ওনাদের দেখে সৌভিক এর মা ছুটে যায়,,
–আমার ছেলে কই বড় খোকা?
–আমি এখানেই আছি মা।
ওনার গলা শুনে আমার বুক কেঁপে ওঠে।ওনার মা ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাদে আর ক্ষমা চাই ওনার বাবাসহ সবাই ওনার কাছে ক্ষমা চাই।আর আদিলকে ধরানোর জন্য পুলিশকে কল দেই।উনি আমার দিকে আড়চোখে কয়েকবার তাকায় আমি কথা বলতে গেলে উনি কথা বলেন না।বাসায় যেতে চান কিন্তু আমার মা-বাবা জোর করে ওনাকে রেখে দেই।সবাই থেকে যায় আমাদের বাসায়।রাতে উনি ওনার ঘরেই খাওয়া দাওয়া করেন।আমি অনেকবার চেষ্টা করেও কথা বলার সুযোগ পাইনি।না পেরে ওনাকে কল দিলাম উনি রিসিভ করলেন না।মেসেজ দিয়ে দিই একটা।
“ছাদে অপেক্ষায় থাকবো একটাবার আসবেন প্লিজ”

আমি ছাদে ১০ মিনিট মতো দাড়িয়ে আছি কিন্তু আজব ব্যাপার আজ আমার একা থাকায় ভয় করছে না একটুও।দাড়িয়েই আছি হটাত পিছনে কারোর পায়ের আওয়াজ পেলাম।পিছু ঘুরতেই দেখি উনি অন্যদিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
–কথা বলবেন না আমার সাথে??
–……..
–সরি আমি ইচ্ছা করে..
–তুমি ইচ্ছা করে না করলেও সবাই আমায় ভুল বুঝলো নিহীন।যেই সৌভিক কোনদিন মেয়েদের সাথে গা ঘেষে দাড়াইনি,চোখে চোখ রাখেনি তার নামের সাথে এতো বড় বদনাম লেগে গেলো।তুমি জানো এটা কতটা লজ্জার??
–আমি সত্যিই ইচ্ছা করে করিনি এসব।
–ঠিক আছে নিহীন।বাদ দাও…আমারি ভুল আমিই তোমাকে ভালোবেসে গেছি পাগলের মতো কিন্তু তুমি…হাহ!এ জীবনে আর তোমাকে ভোলা সম্ভব না কিন্তু আমি আর তোমার সামনে আসবো না,কোন মুখে আসবো?তোমার মুখ দেখলেই আমার এসব মনে পড়বে।আর তোমার সাথে রাতের ওই খারাপ বিহেভিয়ার এর জন্যে সরি।আসি…(উনি কথাটা বলেই চলে যেতে যান)
–আসি বললেই তো যাওয়া হবে না…(আমি ওনার হাত ধরে ফেলি উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়)

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here