প্রেম পাগলামি পর্ব ৩০+৩১

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩০

রাতে বিয়ে নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো,মানে আমাদের কবে সুবিধা হবে যদিও ওই ফ্যামিলিও ডিসিশন নেবে তাও আমাদেরও তো মতামত আছে।মিটিং শেষে ১২ টার দিকে ঘরে আসলাম।আমার ফোনটা হাতে নিলাম।ফোন হাতে নিয়েই দেখি ওনার মেসেজ,
“আজ আর তোমার বেলকনিতে যাবো না।লক্ষী মেয়ের মতো বাড়ির পিছনে চলে এসো।আর যদি না আসো তাহলে কিন্তু সোজা তোমার বাড়ির মেইন গেইটে নক দেবো।আমি তো জানি তুমি আমার লক্ষী নিহীপাখি।একটুও ঝামেলা না করে চলে আসবে।তাড়াতাড়ি আসো,I am waiting”

মেসেজটা ৮ মিনিট আগে দিয়েছে।মেসেজ সিন করে রেখে দিলাম।আমি তো যাবো না।হাহ!উনি বলবেন আমার বাসার মেইন গেইটে আসবে আর আমি সেটা মেনে নেবো?আমি কি বোকা নাকি যে ওনার এই কথাই ভয় পেয়ে যাবো?আমি নিহীন অনেক সাহসী।ফোন রেখে কানে ওয়ারলেস হেডফোন দিয়ে গান শুনছি আর গানের তালে তালে নাচা শুরু করলাম,,
~~main larki beautiful kar gayi chul~~
গান শুনে নাচতে নাচতে হটাত দেখি ওনার কল।ওনার নাম্বার দেখে কেটে দিয়ে আবার নাচা শুরু করলাম।২ মিনিট পরেই একটা মেসেজ রিংটন।ফোন চেক করে দেখি এম.এম.এস এসেছে ওনার নাম্বার থেকে।ওপেন করলাম,ছবিটা দেখে আমার চোখ বেরিয়ে আসছে উনি আমার বাসার গেইটের সামনে এক হাত কলিংবেলের ওপর রেখে সেল্ফি তুলেছে।ছবিটার সাথে সাথেই ওনার মেসেজ আসলো,
“কলিংবেল টা কি বাজবো একবার?”
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।আধা ঘন্টাও হয়নি সবাই শুয়েছে,কাচা ঘুম তারমানে এখন যদি উনি বেল দেন তাইলে তো শিউর সবাই জেগে যাবে।তখন??নো নো ওনাকে ক্ষেপানো যাবে না।আমি তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে ওনাকে রিপ্লাই করলাম যে,
*আমি ৫ মিনিটে আসছি।আপনি যেখানে ছিলেন সেখানে ফিরে যান*

ওড়নাটা নিয়ে চুপিচুপি বাড়ির বাইরে চলে গেলাম।বাইরে যেতেই আমি তো অবাক।ফুচকার স্টল কেন এখানে?আর উনিই বা কই??আমি এদিক ওদিক ওনাকে খুজলাম পেলাম না।আর ফুচকার স্টলি বা কেন?
–আমাকে খুজছো?
ওনার কথা শুনে ভয়ে কেপে উঠলাম।হটাত করে অন্ধকারে এমন কথা বললে যে কেউই ভয় পাবে।
–ভয় পেলে নাকি?
–এরকম ভুতের মতো আসলে ভয় পাবো না তো কি?
–হাহাহহাহহহহ
–হাসি থামিয়ে আগে বলেন আজ আবার কেন ডেকেছেন?
–আজ?আজ খুব স্পেশাল একটা কারনে।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।উনি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে,
–চলো আজ তোমাকে ফুচকা খাওয়াবো।মেইড বাই মি??
–কি?
–ওয়েট নিহীপাখি।

উনি ফুচকা বানানো শুরু করলেন,খুব যত্ন করে নিজে হাতে ফুচকা বানাচ্ছেন।আমার বেশ ভালো লাগলো,আমাকে এর আগে এভাবে কেউ ট্রিট করিনি কখনো।এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে আমার সামনে আসলেন,,
–খাও
আমি তো হাবলার মতো তাকিয়ে আছি।হচ্ছে টা কি??
–কি হলো খাও।
আমি ফুচকার দিকে লোভ সামলাতে পারলাম না।কোন কিছু না ভেবেই ফুচকার প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।খেতে খেতে,
–ঝাল একটু কম কিন্তু ভালো।
–তোমার ভালো লেগেছে?
–হুম মোটামুটি
–তাহলে তোমার রাগ কুমেছে?
আমি খেতে খেতে ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম।গালের ফুচকা শেষ করে বললাম,,
–রাগ ভেঙেছে মানে?
–তুমি তো রাগ করে ছিলে,রাগই ভাঙছিলো না তাই এক বন্ধুর থেকে এই আইডিয়াটা পেয়ে চলে এলাম ফুচকাওয়ালা হয়ে।তুমি আমার ওপর রেগে থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না,পড়াই মন বসে না।কিছুই ভালো লাগে না।তাই তোমার রাগ ভাঙানোর জন্যে সব করতে রাজি।বলো না তোমার রাগ কুমেছে?

(ওনার কথা শুনে আমি থ মেরে গেলাম।লোকটা কি পাগল?আমার রাগ ভাঙানোর জন্য এতোকিছু করে ফেললো?যতদিন যাচ্ছে এই লোকটার ব্যবহারে আমি ওনার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।এসব কথা ভেবে নিজেই একটু লজ্জা পেলাম।)
–ওহ নিহীপাখি বলো,
–আজকের মতো মাফ করে দিলাম কিন্তু একটা শর্ত আছে।
–শর্ত?কি শর্ত বলো আমি সব মানতে রাজি আছি।
–যখনি আমার মুড হবে ফুচকাওয়ালাকে কিন্তু হাজির হওয়া লাগবে ফুচকা নিয়ে।

কথাটা বলেই লজ্জাই মুখ ঘুরিয়ে দৌড় দিলাম।উনি হয়তো ব্যাপারটা বেশ কিছুক্ষন পর বুঝেছেন।যখনি আমার কথার মানে বুঝলেন,,
–নিহীন(আমি পিছু ফিরে তাকালাম)ভালোবাসো বলে দাও না..
–হুহ!কে ভালোবাসে?আমি আপনাকে ভালোটালো বাসি না।

কথা শেষ করেই দৌড়ে ভিতরে চলে আসলাম।
রুমে এসে নিজের অজান্তেই ব্লাশ করছি।আমি কি তাহলে ওনাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি?কথাটা ভেবেই আরো লজ্জা লেগে গেলো।শেষ পর্যন্ত ওই অসভ্য শয়তান ব্যাটারে ভালোবেসে ফেললাম!!রাতে বেশখানিক ওনার কথা ভাবলাম।যখনি ওনার কথা মনে পড়ছে,লজ্জাই কুকিয়ে যাচ্ছি।

সকালে ভার্সিটিতে যেয়ে ওনাকে অনেক খুজেও পেলাম না।খারাপ লাগলো,হটাত মনে পড়লো আজ তো আমরা ওনাদের বাসায় যাচ্ছি।ওখানেই তো দেখা হবে।আমি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম।বিকাল বেলা সবুজ একটা কুর্তি আর ব্লাক পালাজো,ব্লাক হিজাব পরে রেডি হয়ে নিলাম।টুকটাক সেজেও নিলাম।রেডি হয়ে গাড়িতে বসছি,
–কি ব্যাপার নিহী আজ এতো খুশি কেন তুই?সেজেছিসও বেশ।তোরে দেখে মনে হচ্ছে নিলুর শশুরবাড়ি না তোর শশুরবাড়ি যাচ্ছিস..
(ফুফুর কথা শুনে খুব রাগ হলো)
–হ্যা আমার শশুরবাড়িও হবে ওইটা তোমার সমস্যা?(বিড়বিড় করে)
–কিরে কি বিড়বিড় করছিস?
–কিছু না ফুফু।অনেক দিন সাজিনা তো তাই সাজলাম।

ফুফু এরপর কিছু বলতে গেলো কিন্তু বাবা আসায় আর বলতে পারলাম না।সৌরভ ভাইয়াদের বাসায় পৌছানোর পরর সবার সাথে কথা হলো,শাওন তো বেয়ান বেয়ান করে ইয়ারকি মারছে আমিও বেয়াই বলে পাল্টা জবাব দিচ্ছি।আধা ঘন্টামতো পার হয়ে গেলো,বাড়ির সবাই আছে কিন্তু উনি নেই।আমি সবার সাথে কথা বলছি ঠিকি কিন্তু মনে মনে ওনাকে খুজে চলেছি।শাওনকেও বলতে পারবো না।মিনিট পাঁচেক আগে ও বাইরে গেছে।আমার একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।তখনি সৌরভ ভাইয়াদের বাড়িতে যে থাকে,রিমি ও আসলো।মেয়েটা বেশ ভালো,আগের দিন এসে ওর সাথে পরিচয় হয়েছিলো।ও আমার কাছে এসে বললো,,
–আপু ছাদে যাবেন?অনেক ফুল গাছ আমাদের।বিকেলে অনেক ভালো দেখায়।আপনার ভালো লাগবে।
আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না তার আগেই সৌরভ ভাইয়ার আম্মু আমাকে যেতে বললেন রিমির সাথে।আমি মায়ের দিকে তাকালাম।মাও ইশারা করলো যেতে।আমি রিমির পিছু পিছু গেলাম।দোতলায় বেশ কয়েক্টা ঘর কিন্তু হটাত একটা ঘরের সামনে থেমে গেলাম।কারন ও আছে।দরজার পাশে লেখা,বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ।এরকম দেখে বেশ অবাক লাগলো।এই বাসায় এরকম লেখা ঘর কার আবার?আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিমি বললো,,
–আপু দাড়িয়ে গেলেন যে
–রিমি এটা কার
–ওটা মেজো ভাইজানের ঘর(আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রিমি বলে দিলো)
–এটা ওনার ঘর কিন্তু এরকম লেখা
–আর বইলেন আপু।মেজো ভাইজান যে রাগি ওনার কোন কিছুতেই কেউ নাক গলাক বা ওনার ব্যক্তিগত কিছুতে হাত দিক তা একদমি পছন্দ করেন না।চলেন এখন ছাদে যায়।

আমি আর দাড়ালাম না ওর পিছু পিছু ছাদে গেলাম।বেশকিছুক্ষন থাকলাম।এ বাহানা সে বাহানায় ওনার ব্যাপারে শুনলাম।রিমি যা বললো তাতে আমি হা।এই বাসায় নাকি কেউ ওনার মুখের ওপর কিছু বলে না।ওনার অনুমতি ছাড়া কেউ ওনার ঘরেও যায় না।তবে ওনার মা আর সৌরভ ভাইয়া যায়।উনি এমনিতে অনেক মিশুক হলেও রেগে গেলে রক্ষে নেই।ওনার এসব বর্ননা শুনে কিছুটা অবাক হচ্ছি যদিও আমি ওনাকে এতোদিনে ভালোই চিনেছি।রিমি কি একটা কাজে নিচে নেমে আসল আমি রয়ে গেলাম,সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই আমিও নেমে আসছি।ওনার ঘর পাস করার সময় কি মনে করে দাড়িয়ে গেলাম।খুব ইচ্ছা করছে একবার ভিতরে যেতে কিন্তু লেখাটার দিকে চোখ গেলো।দাড়িয়ে ভাবছি যাবো কি যাবো না।আচ্ছা উনি তো বাসায় নেই,বাসায় থাকলে তো দেখা হতোই।যেহেতু বাসায় নেই সেই সুযোগে অসভ্যটার ঘরে একবার ঘুরেই আসি।আমি আস্তে আস্তে দরজা খুললাম।ধির পায়ে ঘরের ভিতরে গেলাম।ওনার ঘরে ঢুক্তেই সবার আগে সাদা দেয়ালে টাঙানো ওনার ছবিটা চোখে পড়লো,বেশ বড় করেই ছবিটা বাধানো হয়েছে।হাসি মুখ,চোখের উপরে আসা সিল্কি চুল,ছবিটা জাস্ট ওয়াও।আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম।দেয়ালে আরো কিছু ছবি,ঘরে বেশ বড় সাইজের একটা আলমারি,সুন্দর একটা বেড,দুই সিট নিয়ে একটা সোফা,পড়ার টেবিল,বেশ বড় একটা ড্রেসিংটেবিল আর ঘর সাজানো অনেক কিছুই আছে।খুব পরিপাটি করে ঘরটা সাজানো।আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি হটাত উল্টা ঘুরতেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,আর আমার সামনে দাড়ানো ব্যাক্তিটি তো আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চিল্লিয়ে উঠলো,ওনার চিল্লানিতে
আমি চোখ বন্ধ করে উল্টো ঘুরে গেলাম।ছি ছি কি দেখলাম আমি এটা?উনি তো বাসায় ছিলো না তাহলে এখানে কিভাবে আসলো তাও আবার টাওয়াল পরে।জীবনে প্রথম কোন ছেলেকে এভাবে দেখলাম সরাসরি।ভেজা চুল,আধ ভেজা খালি গা,পরনে ছোটখাটো একটা টাওয়াল।বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,কিন্তু উনি যে আমার থেকে বেশি লজ্জা পেয়েছেন তা বুঝলাম।উনি এতোক্ষনে চিতকার থামিয়ে দিয়েছে।আমি উল্টোঘুরেই চোখ বন্ধ করে আছি এখনো।

চলবে……….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩১

ভেজা চুল,আধ ভেজা খালি গা,পরনে ছোটখাটো একটা টাওয়াল।বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,কিন্তু উনি যে আমার থেকে বেশি লজ্জা পেয়েছেন তা বুঝলাম।উনি এতোক্ষনে চিতকার থামিয়ে দিয়েছে।আমি উল্টোঘুরেই চোখ বন্ধ করে আছি এখনো।
–সরি সরি আমি জানতাম না আপনি এখানে এভাবে আছেন,সরি।
–কি ইয়ার নিহীন?তুমি আমার রুমে কেন আসলে এখন??এভাবে কারোর রুমে নক না করে আসতে হয় না জানো না??তোমাকে কি সব বলে বলে শেখানো লাগবে??
–আ আমি তো জাস্ট ভুল করে ঢুকে গেছি।আগে যদি জানতাম যে আপনি এভাবে থাকবেন তাহলে আসতাম না।সরি আমি বুঝতে পারিনি।
–আর এভাবে আসবা না।আমি তো নিচে যেতামি,কালকে একটা এক্সাম আছে তাই আজ সারাদিন পড়াশুনা করেছি ভার্সিটিতে না যেয়ে যাতে সারা সন্ধ্যা তোমার সাথে কাটাতে পারি,নিচে যাবো বলেই শাওয়ার নিয়ে রেডি হচ্ছিলাম।তার আগেই তুমি চলে এলে।
–আমি তো ভেবেছিলাম আপনি বাসায় নেই।সরি
–এখন আর সরি বলার মানে কি?যা দেখার তা তো দেখেই নিয়েছো।আমি ভাবতাম তুমি মেয়েটা অনেক সহজ সরল কিন্তু তলে তলে যে তু..(ওনার কথা শেষ করতে দিলাম না)
–এই এই আমি কিছু দেখিনি।আর আমার ওতো ইচ্ছাও নেই কিছু দেখার।
–আরে হয়ছে হয়ছে।ওতো লজ্জা পেয়ে কাজ নেই।হবু স্বামীর কিছু দেখলে পাপ হবে না।
(ওনার কথাই খুব রাগ হলো,ওনাকে বকা দেয়ার জন্য উল্টা ঘুরতেই আবার লজ্জা পেয়ে গেলাম আর উনিও।উনি প্যন্ট পরছিলো এমন সময় আমি তাকিয়েছি আবার।দোষটা আমারি আমিই তো ভুল সময়ে তাকিয়েছি।আমি আবার উল্টা ঘুরে যায়)
–শীট ম্যান
–ওহ নোওওও নিহীন তুমি আবার..
–আমি ইচ্ছা করে তাকাইনি
–থাক চুপ করো এবার।প্রথমবার না হয় ভুল করে তাকিয়েছো তাই কিছু মনে করিনি কিন্তু এবার আমাএ সত্যি লজ্জা করছে।(ওনার কথা শুনে বেশ হাসি পেলো)
–আমি তো
–তুমি তো কিছুই ইচ্ছা করে করো না।মান সম্মান আর রইলো না।
(ওনার কথাই খুব হাসি পাচ্ছে।এখানে আর থাকা যাবে না।আমি কিছু না বলেই দৌড় দিলাম।নিচে এসে হাফাচ্ছি আর হাসছি।আমার পাশে ওনার দাদু এসে বসলো)
–কি হয়েছে দাদুভাই এতো হাসছো যে(দাদুকে দেখে আমি হাসি থামালাম)
–কিছু হয়নি দাদু
–কিন্তু তোমায় দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে।
–না দাদু কিছু হয়নি..
(আমার কথা শেষ হওয়ার আগে অসভ্যটার দিকে চোখ গেলো।সাদা টি-শার্ট,থ্রী কোয়াটার প্যান্ট,ভেজা চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ানো।একদম ভদ্র পোলা লাগছে কিন্তু মনে মনে যে কত্ত শয়তান তা তো আমি জানিই।কিন্তু দেখতে ভালোই লাগছে।ওনাকে দেখে আমারো বুকে হাত দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে,”হায় ম্যে মারজাভা!এ লাড়কা ইতনা সুন্দার কিউ হ্যে?”দাদু থাকাই চুপ থাকলাম।আমার দিকে উনি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো।বেচারা সত্যিই অনেক লজ্জা পেয়েছে।আমারো লজ্জা লাগলো কিছুটা।আবার হাসিও পেলো)
–দাদুভাই চুপ যে..

দাদুর কথাই হুশ ফিরলো।কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই দাদু ওনাকে ডাক দেই।উনি এসে দাদুর পাশে বসে।সবাই চলে আসলো,বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলো।দুই পরিবারের মতামতে দুই সপ্তাহ পর বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।সবাই তো অনেক খুশি।আমরা প্রায় ৩ ঘন্টা থাকলাম এর মাঝে ওনার সাথে বেশ কয়েকবার আই কন্টাক্ট হলো।আমার বেশ লজ্জা লাগছে কিন্তু ওনার তো লজ্জাশরম কিছু নেই।বাসায় ফেরার সময় হয়ে গেলো।সবাই এক এক করে বের হয়ে গেছে কিন্তু আমি ওয়াশরুমে থাকায় সবার শেষে বের হচ্ছি।গেটের বাইরে যাওয়ার সময় কেউ আমার হাত টেনে ধরলো,এরকম হুট করে ধরায় ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু তা কিছুক্ষনের জন্যেই কারন এ কাজটা যে কার তা আমার ভালো মতোই জানা।ওই অসভ্যটা ছাড়া এই কাজ আর কারই বা হতে পারে?আমার কোমরে এক হাত আর অন্যহাত দেয়ালে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার খুব লজ্জা লাগছে।
–কি করছেন এটা?
–কি করছি আমি?তোমাকে দেখছি।আমার তো এখনো ওতো সৌভাগ্য হয়নি যে তোমাকে ওইভাবে দেখবো,বিয়ের আগে তো হবেও না।কিন্তু তুমি চালাকি করে দেখে নিলে।
–মানে?
–যাহ দুষ্টু আবার মানে শোনে।আমার বুঝি লজ্জা করে না?
–বেশি না পেচিয়ে বলেন তো।
–ওই যে তখন আমি…
–থাক আর বলতে হবে না।ছাড়ুন আমাকে কেউ দেখে ফেলবে।
–না কেউ দেখবে না সবাই তো বাইরে
কথাটা বলেই উনি মুখটা আমার মুখের দিকে এগিয়ে আনছেন।আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো,ঠোট কাঁপছে।উনি আরো এগিয়ে আসছে।না পেরে আমি বলে উঠলাম,
–দাদু
আমার মুখে দাদু কথাটা শুনেই উনি তাড়াহুড়া করে ছেড়ে দিলেন।আশেপাশে তাকিয়ে দাদুকে কোথায় না পেয়ে উনি তো বোকা বনে গেলো।আমি ওনার অবস্থা দেখে হেসে ফেললাম।
–খুব হাসি পাচ্ছে তাই না??ঠিক আছে হাসো দিন আমারো আসবে।মাইন্ড ইট!

আমি মুখ ভেংচে দিয়ে দৌড়ে পালালাম।বাসায় এসে ওনার কথা ভাবছি আর হাসছি।সকাল এ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় মা বললো আজ সন্ধ্যায় নাকি বিয়ের শপিং করতে যাবে দুই পরিবার।আমাকেও যেতে হবে।দুই পরিবার একসাথে যাবে শুনে বেশ ভালো লাগলো।

বাসায় ফিরে শুনলাম জাস্ট মেয়েরায় থাকবে,ছেলেরা যাবে না কেউ আজ।মায়ের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কোথায় ভাবলাম ওনার সাথে কিছুটা সময় কাটাবো কিন্তু তা আর হলো না।মাকে বললাম যাব না কিন্তু মায়ের বকাবকিতে যেতেই হবে।হলুদ একটা থ্রীপিছ আর ব্লাক হিজাব পরে রেডি হয়ে নিচে আসলাম।নিচে আসতেই তো আমার চোখ চড়কগাছ,সিড়ির মাঝেই দাড়িয়ে পড়লাম।অসভ্যটা এখানে কি করছে?সোফায় বসে সৌভিক ভাই দাদির সাথে গল্প করছে।আকাশি রং এর শার্ট এর হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা,চুল গুলো স্পাইক করা হাতে ডায়ালের ঘড়ি একদম হিরো লুক।আমি তো ওনাকে দেখায় ব্যস্ত তখনি মা ডাক দিলো আমায়,
–ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন নিহীন?তাড়াতাড়ি আই..
মায়ের কথাই নিচে নামলাম।মা বললো,,
–আন্টিকে সালাম দাও নিহী
আমি নিলু আপার শাশুড়িকে সালাম দিলাম।উনি উত্তর দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন।তারপর নিজেই বললেন,,
–ড্রাইভার বাসায় নেই তাই সৌভিককে নিয়ে এলাম।
আমি ওনার দিকে তাকালাম উনি দাত বের করে হাসি দিলেন তারপর হুট করে বলে উঠলেন,
–দাদি আপনার ছোট নাতনিকে কিছু শিক্ষা দেননি?বড়দের সম্মানি করে না।আমি তো তার থেকে বয়সে বড় আবার ক্যাম্পাসেও সিনিয়র তাও আমাকে দেখে সালাম দিলো না।ভেরি ব্যাড।

ওনার কথাই আমার তো খুব মেজাজ গরম হয়ে গেলো।আর আমার মা তো আমার দিকে রাগে রাগে ইশারা করলো।তারপর মা ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,,
–তুমি কিছু মনে করো না বাবা।আমার মেয়েটা একটু ওরকমি।নিহী…(আমার দিকে দাত খিটমিট করে তাকায়)
আমি সালাম দিলাম এবার..
–আসসালামু আলাইকুম
–ওলাইকুম আসসালাম (টেনে)
–এবার যাওয়া যাক মা??
–হ্যা হ্যা চল

সবাই বের হয়ে গেলাম।উনি ড্রাইভ করছে,আপু ওনার পাশে বসেছে আর আমি,মা,আন্টি পিছনের সিটে বসে আছি।সারা রাস্তা জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকলাম।শপিং মলে এসে শপিং করছি।আপুর জন্য শাড়ি সিলেক্ট করার সময় একটা শাড়ি বেশ পছন্দ হলো।কিন্তু মাকে বলতে পারলাম না।আপুর জন্য শাড়ি/গহনা নেয়া হলো,এর মাঝে সৌরভ ভাইয়াও চলে এসেছে।ভাইয়ার জন্যেও শেরোয়ানি কেনা হলো।সব শপিং শেষে সৌরভ ভাইয়া বললো মা,আপু আর আন্টিকে উনি নিয়ে যাবেন এখন নাকি কোন কাজ আছে তাই পরে যাবে।আমি যেন সৌভিক ভাইয়ার সাথে চলে যায় বাসায়।মা প্রথমে আপত্তি করলো কিন্তু সৌরভ ভাইয়ার জোরাজুরিতে মা রাজি হলো।গাড়ি তো নিয়ে যাওয়া যাবে না এখন তাই আমাদের দুজনকে রিক্সায় যাওয়া লাগবে।উনি তো ব্যাপারটাই অনেক খুশি মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে,মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে।
–আর কতোক্ষন দাড়িয়ে থাকবো?তাড়াতাড়ি রিক্সা খোজেন।
–এই তো…

একটা রিক্সা ডাকলেন আমি আগে উঠে বসলাম পরে উনিও উঠলেন,ওনার পাশে বসে কেমন একটা লাগছে।রিক্সা কিছুদুর যেতেই হটাত ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
–এই এই মামা দাড়ান বৃষ্টি হচ্ছে
আমার কথায় রিক্সাওয়ালা থেমে যাচ্ছিলো কিন্তু উনি থামতে নিষেধ করেন।
–মামা চালান আপনি।আপনার মাথার ওপর তো ছাতা বাধা সমস্যা নাই।
–কি হলো?মানা করছেন কেন?ভিজে যাবো তো আমরা ওনার না হয় ছাতা আছে কিন্তু আমাদের তো..
–চুপ থাকো আজ(ওনার কথা শেষ হওয়ার আগে রিক্সাওয়ালা মামা বললেন
–মামা আপনারা হুড তুলে নেন)
–না মামা লাগবে না
–লাগবে না মানে?
–মানে আজ আমরা ভিজবো?
–হোয়াট
–ইয়েস বেবি
–এই মামা দাড়ান আপনি নামবো আমি এই লোক পাগল হয়ে গেছে।
–না মামা আপনি দাড়াবেন না চালান তো।নিহীপাখি চুপচাপ বসে থাকো।আজ তোমাকে ভিজতে হবে
আমি কথা বলতে গেলাম উনি এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে কানের কাছে এসে বলেন,
–চুপ করে বৃষ্টি এনজয় করো নিহীপাখি।

আমি আর কথা বলতে পারলাম না,চুপ করেই রইলাম উনি আমার হাত ধরে বসে আছেন,দুজনে ভিজছি।বেশ ভালোই লাগছে।উনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি চোখ নিচু করে বসে আছি।বৃষ্টি থেমে গেলো,দুজনেই কাক ভেজা অবস্থা এখন।উনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন এভাবেই বাসায় পৌছে গেলাম।
–বাসায় এসে গেছি
–হুম??
–বাসায় এসে গেছিইই
–ওহ।মামা দাঁড়ান।

আমি রিক্সা থেকে নেমে আর দাড়ালাম না বাড়ির ভিতরে চলে আসলাম।ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসলাম তখনি আপুরা এলো।নিচে আসলাম,মায়ের কাছ থেকে জানলাম সৌরভ ভাইয়া নাকি সবার জন্যে শপিং করে দিয়েছে।আমার জন্যেও নাকি আছে।আমার হাতে শপিং ব্যাগটা দিয়ে মা নিজের রুমে চলে গেলো আমিও আমার রুমে এসে প্যাকেটটা খুললাম।প্যাকেট খুলতেই আমি তো শকড।
এটা তো সেই শাড়িটা যেটা আমি দোকানে পছন্দ করেছিলাম।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here