প্রেম পাগলামি পর্ব ২৮+২৯

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৮

স্যার চলে গেলেন আর আমি তো শকড উনি স্যারকে এসব বলেছেন কিন্তু উনি কিভাবে জানলেন??আমি মীরার দিকে তাকালাম ও দুষ্টু হাসি দিলো।বুঝে গেলাম মীরাই বলেছে।

–ওনাকে কে বললো মীরা যে স্যার আমার সাথে রুড বিহেভ করেছে??
–আমি কি জানি??
–তুই কি জানিস মানে??
–আরে নিহীন শোন উনি না যে সে মানুষ না,ক্যাম্পাসে কখন কি হয় উনি সব জানেন।আর তা ছাড়া উনি তোর আজ হেল্পও করলো অনেক।অবশ্য করবেই না কেন তুই তো তার স্পেশাল মানুষ।হিহিহিহহহহহ,(মীরা কথাটা বলেই চোখ টিপ দিলো)
অন্য টিচার চলে আসলো মনে মনে ভাবছি সত্যিই তো উনি স্যারের সাথে কথা বলেছেন,বুঝিয়েছেন বলেই তো আজ স্যার নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে।স্যার চলে যাওয়ার পর,,
–মীরা অনেক ভেবে বুঝলাম অল ক্রেডিট গোজ টু হিম,উনি না থাকলে এতো কিছু হত না।
–ইয়েস নিহু,সৌভিক ভাই ছিলো বলেই স্যার আজ সবার সামনে তোকে সরি বললো,যে স্যার ভালো করে কথা তাই বলে না সে স্যার তোকে সরি বললো ভাবা যায়??তোকে একটা থ্যাঙ্কস বলা উচিত।
–থ্যাঙ্কস?
–হ্যা থ্যাঙ্কস।তাও যে সে থ্যাঙ্কস না কোন সুন্দর গিফট দিয়ে।
–গিফট কেন দেয়া লাগবে?উনি কে যে গিফট দিতে হবে??
–উনি তোর উডবি
–হাহ!!এসব হবে না বুঝলি।আমি তো জানি উনি সব মজা করেই বলেন।
–একদমি না।ভাই সিরিয়াস।
মীরা আমাকে রেখে চলে গেল আর আমি ভাবছি সত্যিইতো ওনার প্রতি আমারো তো টান আছে কোনএকটা আর তাছাড়া কাউকে একটা গিফট দেয়ায় যায়।এতে ক্ষতি নেই কোন।
–মীরা দাড়া,,আমাকে রেখে কয় যাস।

রাতের বেলা,,
–হ্যালো
–হুম কে??(ঘুম জড়িত কন্ঠে)
–কে মানে?আমি নিহীন??
–নি নিহীইইন,,ওহ সরি সরি নিহীপাখি আমি নাম খেয়াল করিনি।(ঘুম কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো মনে হলো)
–ঘুমাচ্ছিলেন?
–হ্যা ওই আর কি।আসলে ক্যাম্পাসে একটা নির্বাচন হবে তো তাই নিয়ে ব্যস্ত আছি।রাতে তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আজ,ভোরে উঠে আবার পড়া লাগে।
–কি ছেলে মাইরি?রাজনীতি ও করে আবার পড়ার কথাও ভাবছে?(আস্তে আস্তে)
–কিছু বললে?
–কই না তো কিছু না।আচ্ছা ঘুমান আপনি
–না না তুমি কথা বলো,সমস্যা নেই
–কোন ইম্পর্টান্ট কথা না ঘুমান।
–সিউর
–হান্ডেট পার্সেন্ট
–ওকে বাই।লাভ ইউ
–লা….(থেমে গেলাম)
–কি বলতে গেলে বুঝলাম না
–কিছু না।বাই

আমি কল কেটে দিলাম।
–শীট ম্যান কি বলছিলাম এটা আমি?আমি তো ওনাকে লাভ করি না।তাহলে?ভাগ্যিস উনি শুনিনি।শুনলে কি হতো?

ফোন রেখে শুয়ে পড়লাম।ভাবছি ওনার প্রতি আমার ফিলিংসটা কি আসলে?শাওন আর ওনার ভাস্যমতে উনি আমাকে লাভ করেন,ওনার ইদানিং বিহেভিয়ারেও কিছুটা বোঝা যায় কিন্তু আমি কি ওনাকে ভালোবাসি??অবশ্য উনি যে সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন সেটারো বা প্রমান কি?ধুর এই প্রেম-ভালোবাসা এতো কানফিউজিং কেন?এসব না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আযানের সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেলো,ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বিছানায় এসে বসলাম দেখি ওনার টেক্সট,
–“গুড মর্নিং”(ওনার মেসেজ দেখে বেশ ভালোই লাগলো।রিপ্লাই দেবো কি দেবো না ভাবছি।না দিয়েই দিই)
–“গুড মর্নিং”
–“থ্যাঙ্ক ইউ নিহীপাখি রিপ্লাইয়ের জন্যে এবার আমি সব কাজে মন বসাতে পারবো।তোমার সাথে কথা হয়েগেছে আজকের দিনটা ভালোই যাবে।আচ্ছা এখন আর কথা বলতে পারছি না।বিজি আছি প্লিজ রাগ করো না।বাই”

ওনার মেসেজ দেখে আমি হা।এই ছেলে কি সব সত্যিই বলে?আর সত্যি বললেও এইরুপ এতোদিন কোথায় ছিলো??না এনাকে নিয়ে ভাবতে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো।আমি ফোন রেখে ওয়ারড্রব থেকে একটা প্যাকেট বের করলাম।প্যাকেটটা কাল বাসায় এসে লুকিয়ে রেখেছি কারন এর ভিতরের শার্টটা যদি কেউ দেখে তাহলে ঝামেলা হবে।সবাই জানতে চাইবে এটা কার?আমি তো আর বলতে পারবো না এটা ওনার জন্যে কিনেছি।

ফ্লাশব্যাক গতকাল ভার্সিটি ছুটির পর:-
–দোস্ত ওনাকে তোর একটা গিফট দেয়া উচিত
–বলছিস?
–হুম
–আচ্ছা গিফট দেয়া তো প্রব্লেম না কিন্তু দেবো টা কি বল?
–আমি জানি তুই কি দিবি?
–তুই জানিস না মানে?আমাকে গিফট দে গিফট দে বলে পাগল করে দিচ্ছিস আর জানিস না কি দেয়া লাগবে?
–আমি কিভাবে জানবো আমার কি বি এফ আছে নাকি যে জানবো?
–তা আমার কি বিএফ আছে?
–আছে তো,সৌভিক ভাই।
আমি মীরার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম।
–না মানে হতেও তো পারে কোন কালে।যায় হোক এসব বাদ দে।কি দেয়া যায় সেটা ভাব।
–হুম
কিছুক্ষন পর,
–নিহু পেয়ে গেছি?
–তাই?কি পেলি?(আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে শুনলাম)
–তুই ভাইকে টেডি বিয়ার গিফট কর,দেখ কতো সুন্দর(ও হাত দিয়ে শপিং মলের একটা দোকানে ইশারা করলো)
আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে আছি আর ও টেডিবিয়ার দেখায় ব্যাস্ত
–মীরা..
–….
–মীরাআআআআ(চিল্লিয়ে উঠলাম ওউ ভয়ে লাফিয়ে উঠলো)
–কিক কি কি হয়েছে চিল্লাছিস কেন?
–ওনাকে আমি টেডি গিফট করবো?হুম তো ক্ষতি কি?
–উনি কি মেয়ে যে ওনাকে টেডি গিফট করবো??
–তাতে কি?
–তাতে কি মানে?কোন ছেলেকে টেডিবিয়ার গিফট করে কেউ?
–করেনা??
–হাই আল্লাহ!!তুলে নাও এ মেয়ে পাগল হয়ে গেছে।

আমি আনমনে সাইডে তাকাতেই দেখি,এক কাপড়ের দোকানে আনুমানিক ৫০-৫৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা তার থেকে বয়সে আরেক্টু বড় হবে বৃদ্ধ লোকটির গায়ে শার্ট ধরে দেখছে আর দুজনি মুচকি মুচকি হাসছে।অনুমান করলাম ওনারা হাজবেন্ড-ওয়াইফ।এই বয়সেও দুজনকে খুব সুন্দর লাগছে।বৃদ্ধা মহিলাটি হাতের শার্টটা অন্য একটা ষার্ট নিলেন এটা দেখেই আমার মাথায় এসে গেলো ওনাকে কি গিফট দেয়া যায়।আমিও ওই দোকানটাই ঢুকে গেলাম তারপর অনেক বেছে বেছে অ্যাস কালারের একটা শার্ট নিলাম,সাইজে হবে কিনা জানি না।শপিং মল থেকে বের হতে যাবো কিন্তু মীররা জন্য হলো না।তার নাকি ওই টেডিববিয়ার কিনে দিতে হবে।প্রথমে দিতে চাইনি কিন্তু ওর জেদের কাছে বাধ্য হয়ে দেয়াই লাগলো।বাসায় এসেই ওই শার্টের প্যাকেট লুকিয়ে রাখি।

বর্তমানে:-
শার্টের প্যাকেটটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।ভার্সিটিতে এসে ওনাকে অনেক খুজলাম পেলাম না।একটা ক্লাস করে আবার খুজছি,একজনের থেকে জানতে পারলাম উনি ক্লাবে আছ।ক্লাবটা মূলত রাজনীতিক সভা,আলোচনার জায়গা।যাবো কি যাবো না ভবছি।
–নাহ যায়।কিই বা আর হবে??
যেই ভাবা সেই কাজ।মীরাকে নিয়ে চললাম ক্লাবের দিকে।মীরা তো খুব ভয় পেয়ে আছে।ও এসব অনেক ভয় পাই।আমার ভয় না লাগলেও খুব বেশি পছন্দ না এই দলাদলি।তাও যাচ্ছি।ক্লাবের বাইরে দুইটা জুনিয়র ছেলে দাড়িয়ে,আমাদের ভিতরে যেতে দেবে না।অনেকবার বলার পরেও যেতে দেবে না।কি আর করা শয়তানি বুদ্ধি কাজে লাগালাম সিনিয়র হওয়ার সুযোগ নিলাম।ভয় দেখিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।ভিতরে ঢুকেই দেখি ওনারা বসে কি নিয়ে তর্কাতর্কি করছে।একটা ছেলে তো ওনাকে মারতে আসলো উনিও তেড়ে গেলেন,শিবলি ভাইও ওনার সাথে মারতে গেলেন ওই ছেলেটাকে।দুপাশ থেকেই ছেলেরা হাতাহাতি করছে।কয়েকজন থামানোর চেষ্টা করেও পারছে না।হটাত ওনার মুখে একটা ছেলে খুব জোরে ঘুষি মারলো।ঘুষিটা ওনাকে মারা হলেও আমার বুক কেপে উঠলো,যেন আমাকেই মেরেছে।ঘুষি খেয়ে উনি নিজেকে সামলাতে না পেরে নিচে গিয়ে পড়লেন।আমি তাড়াতাড়ি ওনার কাছে গিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম,
–আপনার লাগেনি তো??ঠিক আছেন তো আপনি?
–নিহীন তুমি?এখানে?
–কোথায় লেগেছে দেখি।
–কিরে সৌভিক এটা আবার কে??প্রেমিকা নাকি?(আমি আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকালাম।যেই ছেলেটার সাথে ওনার প্রথমে ঝামেলা বেধেছে সেই ছেলেটাই।আমি আবার ওনার দিকে তাকিয়ে)
–অনেক ব্যাথা পেয়েছেন?
–তুমি এখানে এসেছো কেন?এক্ষনি বাইরে যাও।
–না যাবো না আগে আপনি উঠুন

উনি আমার হাত ধরে উঠে দাড়ালেন।তারপর ওই ছেলেটা কি যেন ইশারা করাই ওনার চোখ লাল হয়ে গেলো,হাত মুঠ করে ফেলেছে।রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে
–নিহীন যাও এখান থেকে
–না আপনাকে একটা জিনিস দেয়ার আছে
–নিহীন যাও
–নাআআ বললাম না আগে
–নিহীন গেট আউট
–না।আমি যাব না যাব না যাব না

ঠাসসসস,,আমি কথাটা বলার সাথে সাথে উনি আমাকে থাপ্পড় মারেন।আমি তো থ মেরে গেছি।
–আপনি আমাকে মারলেন?
–গেট লস্ট ড্যামিট
ওনার এই বিহেভিয়ারে খুব খারাপ লাগলো কেদে দিলাম আমি।উনি এখনো রেগে তাকিয়ে আছে।
–আপনি খুব খারাপ
কথাটা বলেই ব্যাগ থেকে ওনার জন্যে আনা শার্টের প্যাকেটটা ছুড়ে মারলাম ওনার বুকের ওপর তারপর চলে আসি।

বাসায় এসে অনেক কান্নাকাটি করলাম।সারাদিন কিছু খাইওনি।বাসার সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু কিছু বলছিও না।রাতে শুয়ে আছি মন খারাপ প্লাস রাগ নিয়ে তখনি ওনার কল আসলো।আমি কল কেটে দিয়ে ফোন সুইচড অফ করে রাখলাম।১০ মিনিট মতো পর,
–ফোন অফ করে রেখেছো কেন?
হটাত করে রুমে কারোর আওয়াজ পেয়ে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।তাকিয়ে দেখি উনি বেলকনির দরজায় দাড়িয়ে।বেলকনির দরজা লক করতে মনে ছিলো না।উনি ঘরের ভিতরে এসে আমার বেডে বসে পড়লো।ওনাকে দেখে গায়ে ওড়না দিতে দিতে আমি উঠে দাড়ালাম।
–রাগ করে আছো কেন তুমি?আমি তো আর ইচ্ছা করে মারিনি তোমাকে।প্লিজ বোঝো ব্যাপার টা তখন
–আপনি আমার রুমে কি করছেন এখন?কোন সাহসে এসেছেন।এখনি বের হয়ে যান।
–আ’ম সরি নিহীপাখি
–ডোন্ট কল মি নিহীপাখি

উনি এবার আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে ফেললেন,,
–একি হাত ধরছেন কেন?হাত ছাড়ুন
–সরি নিহীপাখি আসলে তুমি তখন হটাত করেই চলে এসেছিলে,ওখানে অনেক খারাপ ছেলে ছিলো।ওরা ভালো না,আমার শত্রু ছিলো অনেকেই আর ওরা যদি জানে আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার ক্ষতি করে দিতো।আদিল মানে যার সাথে আমার ঝামেলা হয়েছিলো সে তখন ইশারা করে খুব বাজে একটা কথা বলেছিলো।তাই তো আমার বেশি রাগ হয়ে গেলো।সরি
–………
–সত্যি বলছি
–রাগ হয়েছে বলেই মারতে হবে??(অভিমানি কন্ঠে)
–হ্যা হবে
–কি?(রাগ করে)
–না মানে আমার ভালোবাসার মানুষটিকে কেউ খারাপ মন্তব্য করলে আমার তো রাগ হবেই তাই না।বাট আই প্রমিস ইউ আর কোনদিন মারবো না।
–……
–সরি বললাম তো আমি প্লিজ
–সবার সামনে মেরে এখন নাটক করা লাগবে না।
–আমি নাটক করছি না।তুমি জানো আদিল কি বলেছিল?মন চাচ্ছিলো ওরে খুন করি
–কি বলেছিলো শুনি
–ও….না তোমার শোনা লাগবে না।খারাপ কথা,তুমি শুধু আর কোনদিন এভাবে হুটহাট করে যেয়ো না ওখানে।
–আমার লজ্জা আছে আর কোনদিন যাবো না।
–আবার রাগ করছো কেন?
–রাগ করছি না এবার যান।
–রাগ তো করছো।
–না
(সত্যি বলতে আমার এখনো রাগ আছে কিন্তু আমি বলছি না।ওই ছেলে কি বললো না বললো তাই বলে এইভাবে আমাকে মারবে।উনি সবসময় আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে।এবার আর আমি ওনার সাথে ভালো করে কথা বলবো না।)
–সরি তো নিহীন।
–থাক আর সরি বলতে হবে না।যান এখন
–হুম যাবোই তো।তুমিও যাবে আমার সাথে
–আমিও যাবো মানে?
–তুমি যাবে মানে তুমি যাবে।
–আমি কই যাবো?
–আমার সাথে।চলো(আমার হাত ধরে উঠে দাড়ালেন)
–আমি কোথায় যাবো আর কেন যাবো?
–আগে চলোই তো
–না আমি আপনার সাথে যাবো না কোথাও ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো।
–না যাবে।এখনি যাবে আর যদি না যাও আমি কিন্তু এখন তোমার আব্বুর কাছে চলে যাবো গিয়ে বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও
–কি??
–ভেবো না মজা করছি।
উনি আরো অনেক কথা বললেন।বাধ্য হয়ে ওনার সাথে যাওয়া লাগবে কারন ওনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই,উনি যে ছেলে তা যেতেও পারে বাবার কাছে।বাবার কাছে যাওয়া মানেই তো আমার বিপদ।উনি বেলকনি দিয়ে যেতে গেলো আমি থামিয়ে বাড়ির পিছন গেট দিয়ে বের হলাম।বাইরে এসে দেখি ওনার গাড়ি দাড়িয়ে,ওনার গাড়িতে উঠে বসলাম।উনিও আমার পাশে বসলো।

চলবে…..
(#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৯

বাইরে এসে দেখি ওনার গাড়ি দাড়িয়ে,ওনার গাড়িতে উঠে বসলাম।উনিও আমার পাশে বসলো।আমি এখনো রেগে আছি।তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,,
–আসলে কি জানো নিহীপাখি,রাজনীতি ব্যাপারটা অনেক খারাপ।আবার ভালোও আছে।তুমি কোন সাইডটা বেছে নিবা সেটা তোমার ব্যাপার।কিছু কিছু মানুষ এতোটাই জঘন্য হয় যে বিপক্ষ দলকে দমানোর জন্য এরা যা না তাই করতে পারে,পরিবারকেউ হার্ট করতে পারে।
–এতোই যখন খারাপ তাহলে ওসব করা লাগে কেন??
–আরে বললাম না ভালো দিকও আছে আমি সেটাই করি।কিন্তু তুমি আজ যা করলে ভয় ঢুকে গেলো।
–আমি আবার কি করলাম?
–ওই যে মিটিং এর মাঝে গেলে,কতো বড় ভাই,বিপক্ষদলের ছেলেরা ছিলো ওরা তো তোমার দিকে খারাপ নজর দিতে পারতো।যদিও আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে ওই আদিল আমাকে শায়েস্তা করার জন্যে তোমার না আবার……আচ্ছা বাদ দাও।খাবার খাওনি কেন তুমি?
–এই ব্যাটা ক্যামনে জানলো?(মনে মনে ভাবলাম)
–আমি সব জানি..
–হাই আল্লাহ মনের কথাও পড়তে পারে নাকি?(এটাও মনে মনে ভাবলাম)
–নিলুফা বলছিলো ভাইয়াকে,আমি পাশেই ছিলাম তাই শুনেছি।
–যাক তাও ভালো(মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম)

উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন,তারপর সামনের সিট থেকে একটা ব্যাগ আনলেন।ছোট্ট একটা ব্যাগ,ব্যাগ খুলেই উনি একটা টিফিন বক্স বের করেন।টিফিন বক্স খুললেন।ভিতরে ভাত,ডিম ভাজি আর আলু ভর্তা।উনি হাত ধুয়ে এক লোকমা ভাত হাতে নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন,
–নাও খাও
(আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।উনি আমাকে ভাত খাইয়ে দিতে যাচ্ছে??)
–কি হলো খাও।আমি এর থেকে বেশি কিছু পারিনা রান্না করতে।না কফি পারি অবশ্য।কিন্তু কফি তো আর খাওয়ানো যাবে না এখন।খেয়ে নাও না নিহীপাখি..
–………..
–ওভাবে কি দেখছো?খেয়ে নাও।আমি আর কোনদিন তোমাকে মারবো না,প্রমিস
–খাবো না আমি
–প্লিজ খেয়ে নাও।আমি তো বললাম আর মারবো না।
উনি অনেকবার রিকুয়েস্ট করলেন আমি শুনলাম না।উনি এবার মন খারাপ করে বললেন,
–ঠিক আছে খাওয়া লাগবে না।তোমার আর কি?তুমি তো না খেয়ে থাকতে পারো আমি তো পারি না।আমি না হয় ন খেয়ে মরেই যাবো(ওনার মুখে মরে যাওয়ার কথা শুনে আমার বুকের মধ্যে কেপে উঠলো)তুমি খাওনি তাই আমিও খাইনি।এখন আমি তোমার জন্যে নিজে হাতে রান্না করে আনলাম আর তুমি।ভেবেছিলাম তুমি খাওয়ার পর আমি খাবো কিন্তু এখন তো….আচ্ছা তুমি বাসায় যাও
–না আমি খাবো
–কি বললে শুনতে পেলাম না।
–আমি ভাত খাবো।
উনি আর একটা কথাও বললেন না হাতে ভাত নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিলেন।প্রথমবার গালে দিতেই পোড়া আর সাথে লবনে ভরা ডিমভাজিতে আমার বমি চলে আসলো।কিন্তু ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বললাম না।উনি খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,
–কেমন হয়েছে?
–ভালো(মুখে ভালো বললেও টেস্ট খুব বাজে)

উনি হাসি মুখে আরো দুয়েকবার খাইয়ে দিলেন।
–এবার আপনিও খেয়ে নেন।আমি আর খাবো না।আই এম ডান
–এইটুকুতেই হয়ে গেলো।এইটুকু খাও বলেই তুমি এতো শুকনা।যায় হোক আমি খায়।খুব খুদা পেয়েছে।
উনি একবার ভাত মুখে দিলেন আলু ভর্তা দিয়ে।তারপর ডিম ভাজি গালে পড়তেই ওয়াক করে উঠলেন।গাড়ির জানালা দিয়ে বমি মতো করে খাবার তুলে দিলেন।
–ছি!এটা ডিক ভাজি না অন্য কিছু?এতো বাজে খেতে??ওয়াক থু..(ওনার অবস্থা দেখে এবার বেশ হাসি পেয়ে গেলো।ওনার ওপরের সব রাগ যেন এক নিমিষেই শেষ)
–আচ্ছা নিহীন তুমি এটা খেলে কিভাবে?এটা তো
–জানি বাজে তাও আপনার খারাপ লাগতো তাই…

উনি আমার কথা শুনে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।তারপর ওনার চোখের কোনের পানি মুছে নিলো আমার আড়ালে।আমার দিকে তাকিয়ে,
–এই জন্যেই আমি ইউটিউবে বিশ্বাস করি না।
–মানে?
–ওই যে ডিম ভাজি।আমি আসলে ভাত আর ভর্তাই পারি।ডিম আজকে ফার্স্ট টাইম ভেজেছি তাও ইউটিউবের জোরে।হিহিহহহহহ

ওনার কথা শুনে হাসবো না কাদবো ভাবছি।ডিম ভেজেছে নাকি ইউটিউব দেখে।লাইক সিরিয়াসলি?

–আচ্ছা এসব বাদ দাও তোমার জন্যে আরো একটা সারপ্রাইজ আছে?
–কি?
–ওয়েট।(উনি সামনের সিটে হাত বাড়িয়ে আরো একটা বক্স নিলেন।বক্সের ভিতরে বরফ অনেক আর তার মাঝে দুইটা আইসক্রিম)
–আইসক্রিম??
–হ্যা।
–আমার জন্যে?
–হ্যা
–থ্যাঙ্ক ইউ(আমি আইসক্রিম দুইটাই নিয়ে নিলাম)

আমি দুইটাই খাচ্ছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হটাত আমার খেয়াল হলো আমি তো সব নিজেই খেয়ে নিচ্ছি ওনাকে তো কিছুই দিলাম না।ধুর!উনি কি ভাবলেন?মেয়েটা এতোই খাদক যে দিলো না।
–……….
–কি হয়েছে কিছু বলবে?
–সরি…
–কেন?
–আইসক্রিম দুইটাই আমি
–আরে ব্যাপার না।খাও তুমি?
–সত্যি?
–তিন সত্যি।
–থ্যাঙ্ক ইউ
–নিহীন
–হুম(খেতেই)
–ভালোবাসো আমায়?
ওনার কথা শুনে আমি তাকালাম।
–জানি এখনো ভালোবাসো না।তবে আমি অপেক্ষায় রইলাম(আমি মাথা নিচু করে রইলাম)
আচ্ছা ভালোবাসো না ঠিক আছে।কিন্তু তোমার রাগ কুমেছে তো??নাকি এখনো রাগ কুমলো না?

ওনার ওপর আমার একটুও রাগ নেই।কিন্তু কেন জানি না মাথায় দুষ্টু একটা বুদ্ধি আসলো।মুখ গম্ভীর করে বললাম,
–আমি ওতোটাও হেলা ফেলা করা মেয়ে না যে এতোতাড়াতাড়ি সব ভুলে যাবো
–কিন্তু নিহী

আমি আর ওনার কথা শুনলাম না।গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে আসলাম।ঘরে এসেই খুব হাসি পেয়ে গেলো।ভাবছি ওনার সাথে কি এটা ঠিক করলাম?আমি তো রাগ করে নেই তাও।।না ঠিকি করেছি ব্যাটা বুঝুক আমাকে কষ্ট দিলেই আমি তা মেনে নেবো না।আচ্ছা উনি কি আছেন নাকি চলে গেছেন??চুরিচুরি করে জানালা দিয়ে তাকালাম।উনু এখনো আছেন উপরের দিকে তাকিয়ে।আমার বেশ হাসি পেলো।১০ মিনিট মতো পর উনি চলে গেলেন।আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি লোকটা এতোটাও খারাপ না,আমার জন্যে রান্না করে আনলো।যদিও সিম্পিল তাও তো করলো।এতোকিছু তো আর ফেইক না।ব্যাটা শয়তানটা তাহলে সত্যিই ভালোবাসে।লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।

সকালে ভার্সিটি যাওয়ার পথে ভাবলাম আজ যদি দেখা হয় তাহলে কাল রাতের মতোই রাগ করার অভিনয় করবো।ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতেই সেই পিচ্চি ছেলেটা হাজির।ওকে দেখে আমি দাড়ালাম,হাতে একটা লাল গোলাপ নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে আর বললো,,
–নিহীপাখি সরি
–হোয়াট
–নিহীপাখি সরি
আমি বেশ অবাক হলাম,ছেলেটা আমার ডান হাত নিয়ে ফুলটা আমার হাতে দিয়ে দিলো দৌড়।
–এই পিচ্চি দাড়াও,এটা কেন??এই…..
না পিচ্চিটা দাড়ালো না চলে গেলো।আমি আমাদের বিল্ডিং এর দিকে যাওয়ার জন্যে রওনা দিলাম,তখনি কিছু জুনিয়র ছেলে মেয়ে এক এক করে এসে আমাকে এক্টা করে লাল গোলাপ দিয়ে গেলো,সবার মুখেই একটাই কথা।নিহীপাখি সরি।কিছু সিনিয়র আপুও আমাকে ফুল দিয়ে এই কথাটা বলে গেলো।আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।আমাকে এরা সবাই ফুলই বা কেন দিচ্ছে আর সরিই বা কেন বলছে?আমাকে তো নিহীপাখি নামে শুধু উনিই ডাকে তাহলে কি???এসব ভাবতে ভাবতে আমদের বিল্ডিং এর সামনে চলে এসেছি।মীরা আর শাওন দাড়িয়ে ছিলো ওদের দেখে ডাক দিলাম।তারপর নিজেই ওদের কাছে গেলাম।ওদের কাছে গিয়ে এই ব্যাপারটা বলতে যাবো তার আগেই
–নিহীপাখি সরি
দুজনি হাতে লাল গোলাপ নিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
–তোরাও
–আরে ধরো ধরো নিহীপাআআখিইইইইউউ(মীরা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে)
আমি একবার শাওনের দিকে তো একবার মীরার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।আমাকে দেখে ওরা দুজনেই হোহহোহোহহ করে হেসে দিলো।আমি বুঝেই গেলাম এটা ওনার কাজ।উনিই সবাইকে দিয়ে এটা করাইছে।
–তাহলে তোমাদের ওই অসভ্য ভাইটাই এসব করছে।
–জি ভাবি।(শাওন হাসতে হাসতে বলে)
–ভাবি?কে ভাবি?
–কেন তুমি..হোহহহোহহহ

দুটোই হাসছে।আমার বেশ রাগ হয়ে গেলো।আমি হাত দিয়ে মারতে লাগলাম।
–আরে থামো থামো আর কত মারবা ব্যাথা লাগছে তো।
শাওন কথাটা বলে।আমি থেমে যায়।এরপর ও জানতে চাই আমি কেন এখোনো রেগে আছি।আমি ওরে সবটা বলি যে আমি রেগে নেই জাস্ট অভিনয় করছি।আমার কথা শুনে মীরা শাওন দুজনেই তো হা হয়ে গেছে।ওরা সৌভিক ভাইকে সব বলে দিতে চাই কিন্তু আমিও ওদের পটিয়ে নিজের দলে করেনিই।ওরাও আমাকে প্রমিস করে যে ওনাকে বলবে না যে আমি আর রেগে নেই।

তিনজন কথা বলতে বলতেই স্যার চলে আসে।আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়ি।টানা তিনটা ক্লাস করে আমি টায়ার্ড।আমি আর মীরা ক্যান্টিনে যায় কিছু খেতে।ক্যান্টিনে গিয়ে হালকা স্নাক্স অর্ডার দিই কিন্তু আসে একটা এক পাউন্ড মতো সুন্দর চকলেট কেক তারওপরে লেখা সরি।আমি কেক দেখেই বুঝেছি এটা ওনার কাজ।ক্যান্টিনে কেক পাওয়া যায় না এমন পাউন্ডের।আমার বেশ হাসি পায় আর কেন জানি না ভালোও লাগে আমার রাগ এভাবে আগে কেউ ভাঙায়নি,ওনার এই পাগলামি গুলো বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু আমি এখনি গলে যাবো না আরো একটু ঘুরায়।মনে মনে দুষ্টু হাসি দিলাম।তারপর ক্যান্টিনে যে ছেলেটা ওয়েটারের কাজ করে তাকে ডেকে একটু বকাবকি করলাম।যদিও ওরে বকতে খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু ইচ্ছা করেই বকলাম কারন আমি ভালো মতোই জানি উনি আড়াল থেকে আমাকে দেখছে।ওনাকে দেখানোর জন্যেই এই বকা।আমার বকা শুনে ছেলেটা মন খারাপ করে চলে গেলো।এরপর মীরা বললো,
–ওরে কেন বকলি?ওর কি দোষ?আর কেকটা তো অনেক সুন্দর আমার তো দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে।
–তাইলে বসে আছিস কেন গিলতে থাক।
আমি মীরারকে কথাটা শুনিয়ে উঠে গেলাম ব্যাগ নিয়ে।মীরাও আমার পিছু পিছু আসলো।

সন্ধ্যা বেলা সোফায় বসে টিভি দেখছি হটাত কলিং বেল বেজে উঠলো,আমি গিয়ে দরজা খুললাম।সৌরভ ভাইয়ার মা-বাবা আর শাওন দাড়িয়ে।ওনাদের দেখে আমি সালাম দিলাম।ওনারাও উত্তর দিয়ে কেমন আছি জানতে চাইলো।কুশল বিনিময় শেষে ওনারা ভিতরে আসলেন।আমি মা-বাবা সহহ সবাইকে ডাক দিলাম।সৌরভ ভাইয়ার বাবা জানালেন তারা তাড়াতাড়িই বিয়ে দিয়ে দিতে চান।দুই পরিবারের সম্মতিতে ঠিক হলো তাড়াতাড়িই বিয়েটা হবে।ওনারা আগামীকাল ওনাদের বাসায় আমাদের দাওয়াত দিলেন,কালকেই ডেট ফিক্সড হবে।রাতের খাবারের পরর ওনারা চলে গেলেন আপু তো অনেক খুশি সাথে আমরাও।কিন্তু মা-বাবা চিন্তায় পড়ে গেলো কিছুটা।বিয়ে মানে তো হাজার কাজ,হাজার ঝামেলা সব ঠিকঠাক সামলে উঠলে হয়।

রাতে বিয়ে নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো,মানে আমাদের কবে সুবিধা হবে যদিও ওই ফ্যামিলিও ডিসিশন নেবে তাও আমাদেরও তো মতামত আছে।মিটিং শেষে ১২ টার দিকে ঘরে আসলাম।আমার ফোনটা হাতে নিলাম।

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here