প্রেম পিয়াসী পর্ব -১৮+১৯+২০

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকাঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______১৮.

প্রণয় এলোমেলো পা ফেলে একপ্রকার ছুটছে সামনের দিকে। সে জানেনা তার গন্তব্য কোথায়? কিন্তু, সে এইটুকু বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে অনন্যার সাথে আলভির এই বিয়েটা কিছুতেই হতে পারেনা। কিছুতেই না! এই বিয়েটা হলে যে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তার অনন্যা.. অনন্যা যে দম ঘুটে ম/র/বে প্রতি পদে পদে!

এলোমেলো চিন্তায় এবং রাগে প্রণয়ের ভেতরটা জ্ব/লে/পু/ড়ে যাচ্ছে। চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এসেছে সেই প্রথম দিকেই। এখন সে স্থান টইটম্বুর করছে নোনা জলে। বারবার কেঁপে উঠছে হৃদপিণ্ডটা। সবটা আবার কি করে ঠিক হবে?

কথাগুলো ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ভাবতে ভাবতে পা চলছিলো তার অতি দ্রুত বেগে। ঠিক এমন মুহুর্তে কারোর সাথে সংঘর্ষ ঘটতে পারে বুঝে কুলিয়ে উঠতে পারেনি সে। হাতে ফোন চাপতে চাপতে হেঁটে যাচ্ছিলো অন্তু। আকস্মিক কারোর সাথে ধাক্কা খেতে হাত থেকে ফোনটা ছিটকে পড়ে মেঝেতে। ফোন বলতে পাগল অন্তু। কেননা, এই ফোনেই আছে তার সব মধুমালতিদের ভীড়। অর্থাৎ তার সো কল্ড সকল গার্লফ্রেন্ডস। ফোনটার হয়তো কিচ্ছু হয়নি। তবে অন্তুর অনেক কিছু হলো। রা/গে ক্ষি/প্ত হয়ে সামনের আগন্তুককে না দেখেই ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। আকস্মিক চড় খেয়ে চমকে ওঠে প্রণয়। ঘটনা বুঝতে তার কয়েক মিনিট লাগে। চড় মা/রা/র পর অন্তু বুঝতে পারে চড়টা অন্যকাউকে নয়, বরং তার প্রিয় বন্ধু প্রণয়কে মে/রে/ছে। তাই খানিক খারাপ লাগা থেকেই সরি বলতে চাইলো। তবে প্রণয় তাকে সেই সুযোগ দিলোনা। চোখের পলকে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে। অন্তু অবাক নয়নে তার যাওয়ার পানে দেখলো। বার কয়েক পিছু ডাকলো বটে। কিন্তু প্রণয়ের কোনো সাড়া পেলোনা।

____________________________________________

মাঝের একটা দিন বড় অদ্ভুত ভাবেই কেটে গেলো। অর্থাৎ, অনন্যার মেহেন্দি অনুষ্ঠানের পাট চুকিয়ে আজ হলুদের অনুষ্ঠান করতে মেতেছে সকলে। এই গোটা একটা দিনে প্রণয়কে একটা বারের জন্যও দেখেনি কেউ। রাদ তাকে দিনরাত খুঁজে যাচ্ছে পা/গ/লে/র মতো করে। কিন্তু ছেলেটা যেন কোথাও নেই। আজ রাত ঠিক ৮ঘটিকায় শুরু হলো অনন্যার গায়ে হলুদ। যথারীতি অনন্যাকে নিয়ে এলো ফুলেফুলে সজ্জিত স্টেজে। গান,নাচ,মাতামাতি,হুড়োহুড়ি কোনো কিছুরই কমতি রাখছে না কেউ। কিন্তু অনন্যা এই সব কিছু থেকে অনেক দূরে। যেন হাজার হাজার ক্রোস মাইল পথ পেরিয়ে বসে আছে সে। কেবল একটা মানুষের অপেক্ষায়। আর সে হলো প্রণয়। অনন্যার মন বলছে প্রণয় আসবে তাকে নিতে। কিন্তু সময়ের ফেরে বারবার মন ভে/ঙে ভেতরটা হাহাকার করে যাচ্ছে। মাইলের পর মাইল রাস্তা কেবল ফাঁকাই পড়ে আছে তার কল্পনায়। কোত্থাও যে প্রণয় নেই। তবে কি সে মিথ্যে আশায় বুক বেঁধেছে? আসবেনা প্রণয়? সত্যি কি আসবে না সে?

দু’গালে শীতল কিছুর ছোঁয়া পেতেই চমকে উঠলো অনন্যা। ইতি ঘটলো তার সমস্ত অবান্তর, অযাচিত ভাবনাদের। ঘোলাটে দৃষ্টি জোড়া মেলে সামনের মানুষটাকে দেখতেই ভেসে উঠলো প্রণয়ের বিধ্বস্ত, এলোমেলো মুখখানা। যা দেখতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো অনন্যার। এক রকম কেঁপে উঠলো সে। প্রণয়ের কপাল কেটে র/ক্ত ঝড়া জায়গাটা চটলা দিয়ে শুঁকিয়ে গেছে। অনন্যার ভেতরটা ধরাক করে উঠলো পূর্বের ন্যায়। উপস্থিত শ শ মেহমানদের তোয়াক্কা না করে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো সে। প্রণয়ের দুগালে হাত চেপে কপালের
কা/টা স্থানে দৃষ্টি রেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শুধালো,

—-“ক..কোথায় ছিলেন আপনি? আ..আর একি অবস্থা করেছেন নিজের?”

—-“অ..অনু.. (কয়েক লহমা পেরোতে)
পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে,
কোনোমতে আর হারতে তোকে!
সরে যেতে আর আমি পারবোনা।
তোর বায়না সব, রেখে দিবো সাজিয়ে~
তুই চাইলে বল, হয়ে আছি রাজি রে!
পালাতে আমি পারবোনায়ায়ায়া!~~~”

প্রণয়ের রক্তিম চোখে নোনাজল গুলো বানভাসির ন্যায় গড়িয়ে গেলো। কাতর কন্ঠে সুরে সুরে জানিয়ে দিলো তার মনের কথা। যা বুঝতে অনন্যার এক লহমাও প্রয়োজন পড়লোনা। হু হু করে ডুকরে কেঁদে উঠে ঝাপটে ধরলো প্রণয়কে। তাদের সামনে দাঁড়ানো শ শ জনতা কেবল হা করে তাকিয়ে রইলো তাদের কান্ড দেখে। এক জোড়া প্রেমিক শালিক পাখি বহু প্রতিক্ষার পর যেন ফিরে পেলো একে অপরকে। তবে হ্যাঁ, এই খুশিটা কেবল ইয়ং জেনারেশনের মাঝেই দেখা যাচ্ছে। বাকি বয়স্ক সবার মাঝে চাপা গুঞ্জন উঠেছে ‘এসব নিতান্তই বেহায়াপনা ব্যাতিত আর কিছু না’। ছ্যা ছ্যা! মেয়ের শিক্ষার কি শ্রী! জনসমাজে কেমন নির্লজ্জের মতো জড়িয়ে আছে অন্য এক পরপুরুষকে।

ইলহাম ভীড় ঠেলে দৌড়ে এসে দাঁড়ায় স্টেজের সামনে। অনন্যা এবং প্রণয়কে একসাথে দেখে আনন্দে দিশেহারা হলো সে। যা বহিঃপ্রকাশে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

—-“ইয়েসসসসস।”

তার পিছু পিছু ছুটে এলো রাদ। প্রণয় ফিরেছে খবরটা পেয়ে তাদের কেউই আর স্থীর থাকতে পারলো না। ইলহামের পাশে এসে দাঁড়িয়ে অনন্যা এবং প্রণয়কে একসাথে দেখে তার খুশিও যেন কম হলো না। মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো সন্তোষ জনক হাসি। ভালোবাসার জয় হোক। ঠিক এভাবেই।

আকস্মিক প্রণয় এবং অনন্যার ভ্রম কাটে অন্তুর জোড়ালো হাতে হেঁচকা টানে আলাদা হওয়াতে। ঝড়ের বেগে তেড়ে এসে দু’জনকে আলাদা করার তাগিদে পেছনের দিকে টেনে নেয় প্রণয়কে। প্রণয় নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যায় মেঝেতে। যা দেখতে চোখ গুলো চড়কগাছে চড়ে যায় মেহমানদের। কারোর কারোর মুখে অবাকের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতে হাত চেপে নেয় মুখে। অনন্যা দাঁড়িয়ে যায়। তার কন্ঠনালি হাঁকিয়ে ওঠে “প্রণয় ভাই” বলে। ডাকটা অন্তুর কানে পৌঁছাতেই আরও ক্ষি/প্ত হয়ে ওঠে অন্তু। ততক্ষণে রাজিয়া বেগম, মিলাদ এবং মান্নাত বেগম হাজির হন স্টেজে। রাজিয়া বেগমের মুখখানা দেখা যাচ্ছিলো না যেন। রা/গে, ক্ষো/ভে ভেতরে ভেতরে ফোঁস ফোঁস করছেন তিনি। এই দিন দেখার পূর্বে ম/র/লো না বলে বড্ড আক্ষেপ হলো তার।

প্রণয় মেঝেতে পড়ে পেছন মুড়ে দেখার চেষ্টা করলো, তাকে আ/ক্র/ম/ণ করা ব্যক্তির মুখখানা। অন্তু আবারও তেড়ে এলো প্রণয়ের পানে। ক্ষপ করে তার শার্টের কলারটা চেপে ধরে হেঁচকা টানে দাঁড় করিয়ে দিলো। প্রণয় ব্যা/থায় চোখমুখ কুঁচকে নিচ্ছিলো ঠিকই তবে মুখে একটা কথাও বলছিলো না। কারন সে খুব ভালো করেই জানে, অন্তু তাকে কেন মা/র/তে এলো।

—-“আমার বোনের বিয়েতে এসে নাটক করছিস হ্যাঁ? কি ভেবেছিস! বন্ধু হওয়ার খাতিরে আমি সবটা মুখ বুঁজে সহ্য করবো? শা*লা!!”

দাঁতে দাঁত চেপে রাঙা চোখে একপ্রকার শা/সা/নি দিলো অন্তু। কথার শেষোক্ত লাইনে পৌঁছে ধরাম করে একটা ঘু/ষি মা/র/লো প্রণয়ের মুখে। প্রণয় পেছনের দিকে হেলে পড়তে পড়তে পড়লোনা। কোনোমতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মাঝে আরও একটা ঘু/ষি পড়লো মুখে। প্রণয় এবার পিছিয়ে পড়লো দু’পা। ইতিমধ্যে ছুটে এলো অনন্যা। প্রণয়ের র’ক্ষ’ক হতে গিয়ে ভ’ক্ষ’ক হলো নিজের ভাইয়ের জন্য। নিজের ক্রো/ধ/কে সংবরন করতে না পেরে আকস্মিক ধাক্কা মে/রে বসলো অন্তুকে। একপ্রকার র/ণচ/ণ্ডী রূপ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো অন্তুর প্রতি,

—-“খবরদার ভাইয়া!! আর একবার যদি তুমি উনার গায়ে হাত তুলেছো..”

এ কোন অনন্যাকে দেখছে সবাই? যে মেয়ে কোনো দিন কারোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি, সে মেয়ে আজ.. একটা বাইরের ছেলের জন্য নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তুললো? এই ছেলে তো তাদের মেয়েকে একদম অ/ন্ধ করে দিয়েছে।

—-“কি বললি? আবার বল!”

অন্তু রাগে বিস্ময়ে অন্ধ হয়ে গেলো যেন। অনন্যার এতোটা ভ/য়া/ন/ক দুঃসাহস ছিলো না কোনোদিন।

—-“আমি বলেছি উনার গায়ে তুমি আর একটাবারও হাত তুলবেনা। এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা ভাইয়া!”

অনন্যার র/ণচ/ণ্ডী রূপ যেন টললো না এক চিমটিও। সে পূর্বের ন্যায়ই, বলা বাহুল্য পূর্বের চেয়ে আরও
ভ/য়ং/ক/র গলায় বলল। অন্তুর সাথে সাথে রাজিয়া বেগম এবং মিলাদ সাহেবের মুখখানাও দেখার মতো হলো। অবিশ্বাসের এক কালো ছায়ায় মুড়িয়ে যাচ্ছে তাদের দৃষ্টি।

অন্তু তেড়ে আসে আবারও। অনন্যা এবং অনন্যার কথা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করলো সে। প্রণয়ের কলার চেপে ধরলো পূর্বের ন্যায়। দাঁতে দাঁত চেপে
বি/ষবান ছুড়লো অন্তু!

—-“কি করেছিস আমার বোনের সাথে? বল! টাকার লোভ তোকে আজ এতো নীচে নামিয়ে দিয়েছে যে তুই আমার বোনকেও ছাড়লিনা? লিয়ার কথা মনে নেই তোর? কি করেছিস ওর সাথে জানে আমার বোন? বলেছিস কোনোদিন? নিশ্চয়ই না… তোদের মতো টাকা লোভী কাপুরুষরা কোনো দিন মুখ ফুটে বলতেও পারবেনা এসব! অন্তত, লজ্জার বালাই থাকলে তো আরও নয়!”

উপস্থিত জনগনের মাঝে একরাশ কৌতুহল চেপে বসে। কৌতুহল জাগে অনন্যার মাঝেও। লিয়া কে? জানতে চায় তার মন?

—-“দেখ অন্তু, পাস্ট ইজ পাস্ট। পাস্ট নিয়ে ঘাঁটতে গেলে কারোরই ভালো হয়না। ওটা আমি ভুলে গেছি। তুইও ভুলে যা। এটলিস্ট অনন্যার সামনে এসব কথা তুলিস না। ঘটনার মোড় কোনদিকে যাবে হয়তো তুই নিজেও জানিস না। দেখ ভাই? আমি অনন্যাকে ভালোবাসি! হ্যাঁ, মানছি আমার ওতো টাকা পয়সা নেই। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমার থেকে বেশি ভালো ওকে কেউ বাসতে পারবেনা। এবং আমি এটাও বিশ্বাস করি, অনন্যাও আমাকে খুব ভালোবাসে। ওর মতো একটা মানুষ আমি খুব ভাগ্য করে পেয়েছি।”

—-“যে মানুষের টাকা নেই, সে মানুষের সুখটা আসলে কোথায় আমি খুব ভালো করেই জানি প্রণয়। এই যে আমি! তোর বড় লোক বন্ধু। ঐ যে রাদ। সেও তোর বড়লোক বন্ধু। তোদের মুল উদ্দেশ্যই থাকে বড়লোক মেয়ে পটানো। যদি তা না পারিস তখন দেখিস কি করে বড়লোক ছেলে,মেয়েদের হাত করে, ইমোশনাল ব্ল্যা/ক/মে/ই/ল করে বন্ধু বানানো যায় কিনা। শা*লা, তুই আমার বোনকে ভালোবাসার কথা ভাবলি কেমন করে? কি যোগ্যতা আছে তোর হু? কি এমন আছে তোর যে তুই আমার বোনকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখলি?”

প্রণয়ের শুঁকনো মুখখানা প্রসারিত হলো মলিন হাসিতে। কয়েক মুহুর্তে কিছু বলল না। স্রেফ একহাত উঠিয়ে রাখলো অন্তুর কাঁধে। অতঃপর কিছু সময় পেরিয়ে এসে মলিন স্বরে আওড়ালো,

—-“বিশ্বাস কর ভাই, ও তোর বোন হয়েও অনেক বেশি আলাদা। ওর মাঝে যা আছে তা হয়তো আরও একশবার জন্মানোর পরেও তোর মাঝে আসবেনা। তুই ওর আশেপাশেও নোস। শী ইজ এবস্যুবলেটলি…”

প্রণয় কথাটা শেষ করার পূর্বেই ঠাস করে এক শব্দ হলো। অন্তু হাতের জোড় দেখিয়ে কসিয়ে মা/র/লো প্রণয়কে। অনন্যা ছুটে গিয়ে তার ভাইকে আটকাতে চাইলে রাজিয়া বেগম হাত টেনে ধরলো তার। চড় খেয়ে প্রণয় মাথা নীচু করে ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। পরন্তু, অন্তুর যেন লাগাম এলো না এবারেও। পূণরায় কলার চেপে ধরলো প্রণয়ের। রা/গে ফেটে বলে উঠলো,

—-“লিয়ার সাথে রাত কাটিয়েও কি মনে হয়েছিলো ও আলাদা? ওর সাথে ঠিক কি কি করেছিস মনে নেই তোর?”

পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে অন্তুর এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো অনন্যার জন্য। থমকে গেলো সে। তার ভাই, কি বলছে এসব? প্রণয় ভাই কারোর সাথে রাত কাটিয়েছেন? না না! তিনি তো এমন নন!

—-“ওও তাই নাকি রে? বাট আই নিউ দ্যাট দ্য পারসন, হু স্পেন্ট দ্য নাইট উইথ লিয়া! ওয়াজ নট প্রণয়! বাট সামওয়ান এলস। এন্ড আই থিংক তুইও চিনিস তাকে। ইভেন ডাজ ভেরী ওয়েল।”

কথাগুলো বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে বলতে অন্তুর সম্মুখ পানে এসে দাঁড়ালো রাদ। হাত দুটো পকেটে গুঁজে ভাবখানাই বেশ আলাদা। গম্ভীর তার চাহনি। অন্তুর অহংকার গুঁড়ো হতে রাদের এহেম ভঙ্গিমা কিছু কম ছিলোনা। প্রণয় শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে থাকা গলায় ঢোক গিললো। তার ভেতরটা ক্রমশ কেঁপে উঠছে। অন্তু নিজের কার্যাদি কি করে চাপিয়ে দিচ্ছে তার উপর। তার কি মোটেও অপরাধবোধ হচ্ছে না?

অন্তু ঢোক গিললো অজানা ভ;য়ে। চুপসে এলো তার গলা। কাঁপল কিঞ্চিৎ। বলল,

—-“মানে? প্রণয় নয় অথচ অন্যকেউ? আর আমি তাকে চিনি! শোন রাদ, এমন সময়ে এসব অবান্তর কথাগুলো বলিস না প্লিজ। আর তাছাড়া, তুই এসবের কিছু জানিসও না। সো প্লিজ…”

—-“কে বললো আমি কিছু জানিনা? ইভেন এটা বল, আমি যা জানি সেটা তুই জানিস না। সো,কিছু না জেনে প্রণয়কে ব্লেম করা বন্ধ কর। আর এক্ষনি কি বলছিলিস ওকে? প্রণয়ের মতো ছেলেরা কি করে? টাকার এতো অহং/কার তোর? কবে থেকে হলো এমন? দোষ টা জন্মসূত্রেই নাকি… হোয়াটএভার! দ্য ফ্যাক্ট ইজ, প্রণয় এবং অনন্যা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। আর কাল ওদের যথা সময়ে বিয়েটাও হবে। আমি দিবো। দেখি কার কি বলার আছে।”

অন্তু নিজের কথাগুলো শেষ করার পূর্বেই এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো রাদ। সে তার বলা কথাগুলো সম্পূর্ণ করে রাজিয়া বেগমের দিকে তাকালো। ওমনি রো/ষপূ/র্ণ কন্ঠে ক্ষে/পে উঠলো তিনি,

—-“আমার মেয়েকে একটা দু’টাকার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়? কি ভাবো নিজেকে? দু’দিন হয়নি কিছু টাকার মুখ দেখেছো এরই মাঝে এতো দা/প/ট বেড়েছে? শোনো রাদ, তোমার ঐ দু’পয়সা দিয়ে না আমি এই রাজিয়া বেগম আমার পা-টাও মুছিনা। এই শোন, তুই যদি আলভিকে বিয়ে করতে না পারিস তো গলায় কলসি বেঁধে ডুবে ম/র/বি নদীতে! কলঙ্কিনী.. তোকে পেটে ধরাটাই পা/প হয়েছিলো আমার!”

মুখে যা এলো লাগামহীন শ্রোতে ভাসিয়ে দিলো রাজিয়া বেগম। রাদ যেন শুনেও শুনলোনা কথাগুলো। অথচ প্রতিটা ঠেস মা/রা কথা রাজিয়া বেগম তাকে উদ্দেশ্য করেই নির্গমন করেছে।

রাদ গিয়ে অনন্যার হাত ধরে নিয়ে এলো প্রণয়ের সামনে। প্রণয় একবারও তাকালো না অনন্যার পানে। সে ভেবে নিয়েছে অনন্যা তাকে নির্ঘাত ভুল বুঝেছে। ভুল বোঝারই কথা। অনন্যা কি ভাববেনা, তার ভাই তাকে ভুল বলতে পারেনা!

—-“ভালোবাসিস প্রণয়কে?”

রাদ প্রশ্ন করে। অনন্যা নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে জবাব দেয়,

—-“হ্যাঁ ভাইয়া। ভালোবাসি আমি উনাকে।”

প্রণয় যেন চমকে উঠলো। এতোকথার পরেও অনন্যার এহেম দৃঢ় বিশ্বাস এবং নিঃসংকোচ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে! ভরে উঠলো তার নেত্রকোন।

—-“সন্দেহ হচ্ছে না তো প্রণয়কে? হলে বলে দে! আমি তোকে সবটা ক্লিয়ার করবো।”

—-“না ভাইয়া, সন্দেহ আমায় হয়নি। তবে ভ/য় হয়েছে। ভ/য় হয়েছে, যদি মানুষটাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলি!”

রাদ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। অনন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে কয়েক মুহুর্ত জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে। অতঃপর বলল,

—-“বিয়ে করবি ওকে?”

—-“তুমি পাশে থাকবে তো ভাইয়া? তুমি আমার পাশে থাকলে আমার আর কাউকে দরকার নেই।”

—-“শুধু আমি একাই থাকবো নাকি তোর ভাবিকেও চাই?”

অনন্যা ছোট্ট করে হেসে বলল,

—-“ভাবিকে তো মাস্ট চাই।”

ইলহাম দূরে দাঁড়িয়েই হাসলো। হাসলো রাদও। অনন্তর হাত বাড়িয়ে টেনে আনলো প্রণয়কে। দু’জনকে দু’হাতে আগলে রেখে ভরসা দিয়ে বলল,

—-“আমার বোনের বিয়ে আমি একাই দিবো। আশাকরি কাউকে আমার প্রয়োজন পড়বেনা। কিরে বেটা রাজি তো?”

শেষোক্ত কথাটা রাদ প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল। প্রণয় না হেসে পারলোনা। হেসে পড়ে বলল,

—-“শা/লা তুই থাকতে আর কাকে চাই বল?”

হাসলো রাদ, অনন্যা এবং ইলহাম। অতঃপর কারোর তোয়াক্কা না করেই অনন্যার হলুদের অনুষ্ঠান আবারও শুরু হলো। শুধু বর পাল্টালো। বাকি সব কাজ একই রইলো।

চলবে

[ বিঃদ্রঃ ঘুমন্ত পাঠকরা জাগ্রত হও🙂 হও ভাই হও]#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব___________১৯.

শ’খানেক বাঁধা বিপত্তিকে একরকম তোয়াক্কা না করেই অনন্যা এবং প্রণয়ের বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা নিজ হাতে করলো রাদ। আজ সন্ধ্যায় বিয়ে তাদের। বাড়ি ভর্তি মেহমানরাও পরিবারের ন্যায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। কেউ কেউ পুরো দমে সাপোর্ট করছে তাদের আবার কেউ কেউ ছ্যা ছ্যা করে ম/র/ছে। ওদিকে আলভির বাড়ি থেকে কল এলো, তাদের ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দু’দিন ধরে। সুতরাং, এই বিয়ে আপাতত স্থগিত রাখা হলো। রাজিয়া বেগমের মাথায় হাত। ওতো বড়লোক ছেলেটা এমন করে হাত ছাড়া হয়ে গেলো ভাবতে গেলেই তার প্রেশার লো হয়ে আসছে। ওমনি জ্ঞা/ন হারায়, ম/রে যায় এমন অবস্থা। প্রণয়ের বাবা মা-কে ডেকে পাঠালো রাদ। অতঃপর নিজেই প্রস্তাব রাখলো অনন্যা এবং প্রণয়ের বিয়ে নিয়ে। প্রণয়ের বন্ধু হিসেবে রাদকে তারা সবসময়ই খুব ভালো জানে। তাই রাদ যেহেতু এই প্রস্তাব তাদের কাছে দিয়েছে তবে, নিশ্চয়ই খারাপ নয়। জেনে বুঝেই দিয়েছে। তাছাড়া, অনন্যাকেও তারা চিনতো অন্তুর ছোট বোন হিসেবে। অনন্যা ভীষণ ভদ্র এবং গুনী মেয়ে বলেই জানে তারা। তাই আপত্তি করার আর কোনো অবকাশ রইলো না।

আজ তাদের বিয়ে। হাজার ব্যস্ততা ঘিরে ধরেছে রাদকে। অন্য সময় হলে এই ব্যস্ততা ঠেলে নিজের কাজে ডুবে থাকতো রাদ। তবে আজ যেন তা পারলো না। বরং স্ব-ইচ্ছেতে গাদা গাদা ব্যস্ততা টেনে আনছে নিজের দিকে। দেখতে হবে তো, ব্যস্ততার শীর্ষ ঘিরে কে আছে? তার একমাত্র ছোট বোন। যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এবং অপরপ্রান্তেই দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় বন্ধু। সুতরাং, খানিক এক্সট্রা ব্যস্ততা তো চাই-ই চাই।

রাদের হুকুমে কেনা, দুটো শাড়ি এবং একটা লেহেঙ্গাটা নিয়ে বসে আছে ইলহাম। কোনটা পড়বে? মাথা জুড়ে বিভ্রান্তিদের হাতছানি। তিনটে জিনিসই ভীষণ মনোজ্ঞ। ইচ্ছে করছে সব কটা একসাথে মিক্স করে পড়তে। কথাটা ভেবে একবার হাসিও পেলো। সবগুলো আবার একসাথে পড়া যায় নাকি? কিন্তু কি’বা করার। হাতে নিয়ে ওলট-পালট করে দেখছে তিনটাই। তীক্ষ্ণ চাহনিতে দেখার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় যেন ক্রমশ চেপে বসছে বিরক্তির পাহাড়। ধ্যাৎ! কোনোটাই পড়বেনা। বরং অন্যকিছু পড়বে। এসব বাছাই টাছাই হচ্ছে না তার দ্বারা। বড্ড অদ্ভুত কাজ এসব। সে ভেবে পায়না মেয়েরা মার্কেট ঘুরে শত শত ড্রেসের মাঝে কি করে নিজেদের পছন্দ বেছে নেয়। সে তো কেবল তিনটে ড্রেস নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে।

—-“লেহেঙ্গাটা পড়ে নিন ম্যাম। খুব মানাবে।”

ব্যস্ত একখানা গলা ভেসে এলো দরজার ওপাশ থেকে। ইলহামের বুঝতে অসুবিধা হলো না গলাটা কার। অতএব, পেছন মুড়ে প্রত্যাশিত মুখখানা দেখতেও অযথা সময় ব্যয় করতে পারলো না। অতি জলদি পেছন মুড়ে তাকালো রাদের পানে। রাদের বাহ্যিকরূপে আবেগে আপ্লূত ইলহামের দৃষ্টি। একি দেখছে সে। যেন ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের একমাত্র প্রিন্সেস দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। অফ হোয়াইটের গরজিয়াছ শেরওয়ানিটা তাকে এতোটা ফুটিয়ে তুলবে ভাবতে পারেনি ইলহাম। তবে ধারণা ছিলো, মানুষটাকে ভীষণ মানাবে। তাই নিহাকে বলে তাকে কিনিয়েছিলো এই শেরওয়ানিটা। বুকের চওড়া জায়গাটুকু জুড়ে গোল্ডেন স্টোন গুলো চোখ ধাঁধিয়ে জলজল করছে। শেরওয়ানির হাতা গুলো বেশ মার্জিত ভাবে ফোল্ড করে গুটিয়ে রেখেছে কনুই অব্দি। বাঁ হাতে ঝুলতে থাকা সিলভার রঙের ব্রান্ডের ঘড়িটা বারবার চিকচিক করছে আলোতে। ডানহাতের একটা সোনার ব্রেসলেট। সামথিং স্পেশাল কিছু আছে ঐ ব্রেসলেটে। যতদিন অব্দি ইলহাম মানুষটাকে দেখেছে সেই অব্দি কখনোও হাতে ব্রেসলেট ছাড়া কখনো দেখেনি। ডানহাতটা তুলেই কপালে ঘামের সাথে লেপ্টে থাকা ছোট চুলগুলোকে ঠেলে দিলো পেছনে। অমনি দৃশ্যমান হলো তার চওড়া ললাট। যার ডান পাশে জমজ দুটো তিলের সমাগম। গরমে সিদ্ধ হয়েছে সে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। শুঁকিয়ে আসা ঠোঁট জোড়া কতক্ষণ দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখে প্রবেশ করলো ভেতরে। বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো বার কয়েক।

ইলহাম কিছু না বলে একগ্লাস পানি নিয়ে ধরলো তার সামনে। রাদ একগাল হেসে পানিটুকু শেষ করলো এক ঢোকে। অতঃপর খালি গ্লাসটা এগিয়ে দিলো ইলহামের পানে। ইলহাম গ্লাসটা রেখে আসার জন্য পা বাড়ালে যেতে দিলো না রাদ। হাত ধরে বসালো তার পাশে। ইলহাম বসলো চুপটি করে। রাদ ক্লান্তমুখে হাসলো। ইলহামের হাতটা শক্ত করে চেপে রেখে নিবেদন করে বলল,

—-“সুইটহার্ট? ক্যান আই আস্ক ইউ সামথিং?”

—-“হু, বলুন?”

ইলহাম ছোট্ট করে জানতে চায় রাদের নিবেদন। রাদ হঠাৎ ঘুরে বসে ইলহামের পানে। সহসা ইলহামের দু’গালে হাত রাখে এক অধিকার বোধে। ইলহাম বাঁধা দেয়না। কেননা, তার মনে হয় এটা রাদের অধিকার। যা বাঁধা দিলে বিপরীত রূপ নিয়ে দাঁড়ায়। যেটা খুব একটা সহনশীল বা স্বাভাবিক হয়না তার জন্য। তাই বাঁধা না দেওয়াটাই শ্রেয় বলে মনে হয় তার।

—-“ড্যু ইউ বিলিভ মি?”

—-“হ্যাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করি। বিশ্বাস না করার তো কিছু হয়নি!”

রাদ কথাটা অন্যকিছু ভেবেই জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু ইলহামের উত্তরটা এতোটা নিঃসংকোচ হবে ভাবতে পারনি। একটু অবাকই হলো যেন। কেননা, এই ইলহাম এবং সেই তিনমাস পূর্বের ইলহাম এক নয়। শ শ মাইল পার্থক্য দু’জনের মাঝে।

রাদ মুচকি হাসলো। স্বভাবসুলভ ইলহামের দু’গালে আলতো করে স্লাইড করতে করতে চুমু আকলো ললাটে। ফের বলল,

—-“আমিও তোমায় সেইম ভাবেই বিলিভ করি, সুইটহার্ট। আমি জানি তুমি আমাকে হার্ট করে এমন কিছুই করবেনা।”

রাদের কথাটা শুনে ইলহামের সমস্ত মুগ্ধতা যেন এক নিমিষে মিলিয়ে গেলো। হঠাৎ তার চোখের সামনে অন্তুর মুখখানা ভেসে উঠলো। অনন্যা এবং প্রণয়ের বিয়েটা হওয়াতে অন্তু ভীষণ ক্ষে/পে আছে তাদের প্রতি। পাছে, ক্ষো/ভে পড়ে এমন কিছু করে না বসে যাতে তাদের এই সুন্দর,সাবলীল, বোঝাপড়া সম্পর্কটার বিচ্ছেদ আসে। আচ্ছা, তার কি উচিৎ অতীতে ঘটা সব ঘটনা রাদকে বলে দেওয়া? কেননা, আর যাই হোক রাদ যে তাকে কোনোদিন ছাড়বে এ কথা সে বুঝে গেছে। আর সেভাবেই দিনকে দিন রাদের প্রতি এক অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করতে পারছে সে। সে চায়না এই সুন্দর অনুভূতি গুলোর মৃ//ত্যু হোক। সেটাও অন্তুর মতো একটা জ/ঘ/ন্য মানুষের জন্য। এবং অবশ্যই সে চায়না তাদের এই সুন্দর সম্পর্কটা ভুল বোঝাবুঝি দিয়ে শুরু হোক। একদম চায়না। হ্যাঁ, হয়তো রাদ তাকে প্রথমে ভুল বুঝবে। ক/ষ্ট পাবে। সেগুলো কি স্বাভাবিক নয়? অবশ্যই স্বাভাবিক।

চোখের সামনে রাদ তুড়ি বাজাতে দৃষ্টি কাঁপে ইলহামের। অর্থাৎ তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। হকচকিয়ে তাকায় রাদের দিকে। রাদ তার গাল চেপে বলে,

—-“কি এতো যোগসূত্র মেলাচ্ছেন ম্যাম? রেডি হতে হবে তো?”

ইলহাম মলিন দৃষ্টি মেলে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থাকে রাদের দিকে। সবটা জেনে রাদের কি রিয়াকশন হবে সেটা ভেবেই ভেতরটা কাঁপছে তার। সে কোনো ভাবেই চায়না রাদ তার কারনে ক/ষ্ট পাক। কেন চায়না জানেনা সে। আর জানতেও চায়না। ব্যস, ক/ষ্ট দিতে চায়না।

—-“হ..হ্যাঁ র..রেডি হবো!”

রাদ কপাল কুঁচকে নেয়। ইলহামকে কে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ানো দেখা যাচ্ছে। হয়েছি কি ওর?

—-“সুইটহার্ট, তুমি কি ঠিকাছো?”

মনের সংশয় কাটাতে রাদ জিজ্ঞেস করে বসলো। ইলহাম জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে রাদের সংশয় দূর করার চেষ্টা করে। বলে,

—-“ঠিক থাকবো না কেন? আপনি না শুধরোবার নন। নিজেই বলছেন রেডি হতে, অথচ নিজেই বসে আছেন সম্মুখে।“

রাদ নড়েচড়ে বসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে হাত জোড়া নামিয়ে নিলো ইলহামের থেকে। কথাটায় খানিক বিব্রত হয়েছে সে। তবে প্রকাশ করতে চাইলোনা মোটে। মাথা চুলকে বলল,

—-“স্ সরি! তুমি রেডি হও। আমি নীচে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।”

—-“হু।”

রাদ উঠে চলে গেলো বাইরে। রাদের পছন্দ করে দেওয়া লেহেঙ্গাটা হাতে নিতে নিতে ইলহাম রাদের যাওয়ার পানে তাকালো। রাদ বাচ্চাদের মতো হাঁটছে হাঁটছে কিন্তু হাঁটছে না। মনে হচ্ছে বারবার দাঁড়িয়ে পড়বে। কিন্তু দাঁড়াচ্ছেও না। ইলহাম বুঝলো রাদ কিছু বলতে চায়। তাই নিজেই বলে উঠলো,

—-“কিছু বলবেন?”

রাদ যেন খুশি হয়ে গেলো। চটজলদি পেছন মুড়ে বলল,

—-“আব.. তোমার জন্য একটা গিফট ছিলো।”

ইলহাম ভ্রু নাচায়।

—-“কি গিফট।”

রাদ পকেট হাতিয়ে দুটো বক্স বের করে আনে। ইলহামের দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল,

—-“নিজেই দেখে নাও।”

ইলহাম হাত থেকে লেহেঙ্গাটা নামিয়ে রেখে উৎসুক হয়ে এগিয়ে গেলো রাদের দিকে। বক্সটা নিতে নিতে একবার তাকালো রাদের মুখে। রাদ হাসছে মিটমটিয়ে। ইলহামের সন্দেহ বাড়ছে বৈ কমছে না। কি এমন আছে ভেতরে। ইলহামের সন্দেহ বাড়ার সাথে সাথে আগ্রহ ভীষণ তেজ হলো। বড কৌতুহল নিয়ে বক্সটা খুলতেই একটা জ্যন্ত তেলাপোকা উড়ে গেলো চোখের পলকে। ইলহাম আঁ/ত/কে উঠে বক্স ছুঁড়ে ফেলে গলা ফাটিয়ে সে কি চিৎকার। তার গগনবিহারী চিৎকারের মাঝে কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে রাদের হাসির শব্দ। ইলমাহের সারা অঙ্গ গুলিয়ে উঠলো তেলাপোকার ভ/য়ে। দৌড়ে গিয়ে লুকালো রাদের পেছনে। রাদ কোনো মতে নিজের হাসি থামাতে পারছেনা। ইলহামের যেমন রা/গ হচ্ছে তেমন ভ/য়ও হচ্ছে।

পাজি লোক একটা! এমনটা করার কি খুব দরকার ছিলো? সে তো ভালো ভেবে তাকে বিশ্বাস করে নিয়েছে বক্সটা। এই তো কিছুক্ষন আগে তার বিশ্বাস অর্জন করছিলো বসে বসে। তাহলে এই কি ছিলো তার নমুনা?

—-“সরি সরি, সুইটহার্ট। আমার কিন্তু ধারণা ছিলো না, তুমি এত্তো ভীতুর ডিম।”

ইলহাম তেতে উঠলেো। পেছন থেকে তার পিঠে দু’চার ঘা বসিয়ে দিয়ে বলল,

—-“আপনাকে বিশ্বাস করাই ভুল হয়েছে আমার! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, পাঁজি লোকদের বিশ্বাস করাটা জীবনের সবচেয়ে বড় বোকামি।”

রাদ হেসে কুটিকুটি। পেছনের দিকে হাত বাড়িয়ে সামনে টেনে আনলো ইলহামকে। ইলহাম গুটিশুটি মে/রে আছে। তার দৃষ্টি এলোমেলো। উড়ন্ত তেলাপোকার দিকে। তেলাপোকাটা উড়ে ঠিক কোথায় গেছে সেই ভ/য়ে/ই দুরুদুরু কাঁপছে বুক।

—-“আরে বাবা তাকাও আমার দিকে। তুমি এতো ভীতু জানতাম না তো!”

ইলহাম রা/গী ফেস করে তাকালো রাদের দিকে। পেট বরাবর কনুইয়ের চাপা গুঁতো দিয়ে বলল,

—-“আমি মোটেই ভীতু নই। আপনি পাজি তা স্বীকার করুন।”

রাদ পেটে হাত চেপে কুঁকড়ে পড়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ইলহামের রা/গী মুখের দিকে। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে জানান দিলো চাপা ব্যা/থাটা। ইলহাম তীক্ষ্ণ এবং রা/গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পানে। রাদ অসহায় ভঙ্গিতে বাচ্চা সুলভ কন্ঠে আওড়ালো,

—-“এভাবে কেউ মা/রে!”

—-“এটা আপনার শা/স্তি!”

এই বলে ইলহাম চলে যেতে নিলে রাদ পূণরায় আঁটকায় তাকে। ব্যা/থা এবং,মজা-মাস্তি ভুলে এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকায়। অন্য হাতে ধরে রাখা ছোট্ট বক্সটা তুলে ধরে ইলহামের সামনে। ইলহাম পূর্বের ঘটনা স্বরনে হঠাৎ আঁ/ত/কে ওঠে। ভেবে নেয় রাদ এবারও একি কান্ড ঘটাবে। তাই অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—-“এবার কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।”

রাদ ফিক করে হেসে দেয় ইলহামের ভ/য়ার্ত মুখখানা দেখে। ইলহাম ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রাদ ইলহামকে অভয় দেয়। না সূচক মাথা নেড়ে বলে,

—-“ভ/য় পেয়োনা। এবার সত্যি সারপ্রাইজ।”

—-“তো আগেরটা কি ছিলো?”

—-“সারপ্রাইজই ছিলো একরকম।”

বলে আবার হাসতে লাগলো। ইলহাম বিশ্বাস করলো না রাদকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বক্সটার দিকে। রাদ দু-হাত মিলিয়ে বক্সটা খুললো। বক্স খুলতেই ইলহামের চোখ চড়কগাছ! একি দেখছে। বক্সের ভেতর অবস্থানরত হীরের আংটিটায় চোখ ধাঁধিয়ে এলো ইলহামের। লোকটা কি পাগল? এতো দামী জিনিস কেন নিয়ে আসে সে?

—-“আমার ইচ্ছে। তোমাকে বলতে হবে? দেখি হাত দাও।”

ইলহাম চমকে ওঠে। যেন রাদ তার মনের ভেতরে তোলপাড় করা লাইন গুলো খিঁচে বাইরে টেনে আনলো। আর তাতে তালে তাল মিলিয়ে সুন্দর একখানা জবাব নিক্ষেপ করলো।

রাদের পরশে ঘোর কাটে ইলহামের। রাদ আংটিটা পড়িয়ে দিয়েছে তার হাতে। একদম পার্ফেক্ট বসেছে। গত দেড় বছরে তবে ইলহামের ছোট ছোট জিনিস গুলো ভোলেনি সে।

—-“লেহেঙ্গার সাথে পার্ফেক্টলি ম্যাচ হবে। ফাস্ট রেডী হয়ে নাও। আ’ইম ওয়েটিং।”

শেষোক্ত কথাটা রাদ ইলহামের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল। কথাটায় কিছু একটা ছিলো যেন। ইলহাম ভেতর ভেতর কেমন একটা কেঁপে উঠল। রাদ মুচকি হেসে প্রস্থান করলো।

#চলবে

[ বিঃদ্রঃ রাদের সারপ্রাইজ কেমন লাগলো আপনাদের?😆]#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_________২০.

আধঘন্টার মাঝেই পরিপূর্ণ তৈরি ইলহাম। তার লম্বা কেশ গুলো আজ বাঁধেনি ইচ্ছে করেই। না বাঁধাতেই ভীষণ ভাল্লাগছে বলে ঠাওর হলো। তার লেহেঙ্গাটা রাদের শেরওয়ানির ন্যায়ই অফ হোয়াইট। উপরের হাফ পার্টের পুরোটা জুড়ে সাদা সুতোর নকশা এবং তার উপর স্টোনের ঝাকঝকম কাজ। নীচের পার্টটেও তার আংশিক কাজের ঘনঘটা। লেহেঙ্গার ওড়নাটা শাড়ীর আঁচলের ন্যায় তুলে দিলো ইলহাম। উ*ন্মুক্ত জঠরে একটা বিছা পড়ে নিলো। বিছা পড়ায় টাইট হয়ে আঁকড়ে ধরলো একঝাক সৌন্দর্য্য। কপালের ঠিক মাঝখানে সাদা পাথরের টিপটা দিতে দিতে নিজের সর্বাঙ্গে একবার অবলোকন করলো ইলহাম। রাদের ভাষ্যমতে এই পোষাকে সে সত্যিই মনোরঞ্জক লাগছে।

দু’গালের সাথে তাদের এক আদুরে বিচরণ। ইলহাম চুলগুলো কানের পাশে ঠেলে দিতে কানের ছোট্ট ঝুমকোটা নড়ে উঠলো। ইলহামের ঠোঁটের কোনে বিচরণ করলো মনোহর হাসির ঝলক। এমনিতেই অনেক দেরী করে ফেলেছে সে। তাই বাড়ন্ত লেহেঙ্গার অংশ গুলো জাগিয়ে ধরে ছুট্টে গেলো নীচে। সিঁড়ি ধরে দ্রুত নীচে নামতে নামতে দেখা মিললো প্রত্যাশিত মুখখানার। রাদ ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। সে অবশ্য খেয়াল করেনি ইলহামকে। ইলহাম এক ছুট্টে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দাঁড়ালো রাদের সামনে। রাদ ফোন থেকে মুখ তুলতে আপনাআপনিই তার চোখ জোড়া রসগোল্লা পাকিয়ে গেলো। মানুষ যখন এক্সপেকটেশনের থেকে বেশি কিছু পায় তখন হয়তো এমনটাই হয় তার রিয়াকশন। ইলহাম আগ্রহমন্ডিত দৃষ্টিখানা নিক্ষেপ করলো রাদের পানে। রাদ তাকে দেখে পুলকিত হলো। ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে দু’হাত গুঁজে দিলো পকেটের ভেতর। একটু দূরে স্বরে এক অন্যরকম চাহনিতে আবিষ্ট করলো ইলহামকে। তার চোখের ভাষা বরাবরের ন্যায় এক ভিন্ন অনুভূতি জাগিয়ে তুললো ইলহামের মনে। ইলহাম মাথা নীচু করে ফেললো তড়িঘড়ি। তার কোনো এক অজানা কারনে ভীষণ লজ্জা লাগছে। বুকের ভেতরটা দুরুদুরু কাঁপছে। রাদ পুলকিত কন্ঠেই বলল,

—-“ইশশ! মনে হচ্ছে আমার রাজ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী পরীর বিচরণ ঘটেছে। আমি ধন্য তোমার পদচারণে মনোহরিনী।”

ইলহাম কয়েক মুহুর্তের জন্য অন্য এক কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলো। ঘোর কাটলো রাদের পরশে। রাদ তার হাত ধরে বলল,

—-“চলো। ওদের বিয়ে পড়ানো হয়তো শুরু হয়ে গিয়েছে। তোমাকে ছাড়া তো যেতে পারছিনা।“

ইলহাম বুকের ভেতরকার সকল অস্থিরতা দমিয়ে ভেতরে ভেতরে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছাড়লো। ছোট্ট জবাবে বলল,

—-“চলুন।”

বিয়ের সকল প্রক্রিয়া শেষ হলো। অনন্যাকে নিয়ে যাওয়ার পালা এলো। বেশ মন খারাপ নিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে অনন্যা কেবল তার মাকেই খুঁজছিলো। তবে, ভদ্রমহিলার দেগামে এবং টাকার অহং/কার বরাবরের মতো এবারেও জমিনে পা পড়লো না। এমনকি তিনি মেয়ের বিদায়েও উপস্থিত হলেন না। নিজের কিছু অযৌক্তিক দেমাগি ভাবকেই আত্মস্থ করে ঘরে দোর দিয়ে বসে ছিলেন। অন্তুরও একই দশা। শ খানেক লোকের মাঝে হারিকেন লাগিয়েও অন্তুকে দেখা গেলোনা। গতকাল রাত থেকেই অন্তুর দেখা মেলেনি। এক্ষেত্রে মায়ের সকল ভূমিকা এবং দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয়ে এলেন মান্নাত বেগম। তিনিই রাজিয়া বেগমের সকল খালি জায়গা পূরণ করে অনন্যাকে বিদায় দিলেন তার আপন বাড়িতে। যেতে যেতে রাদ প্রণয়কে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিলো, “বৌভাতে অনন্যা এ বাড়িতে নয়, তার ভাইয়ের বাড়িতে অর্থাৎ রাদের বাড়িতে ফিরবে।”

রাদের এহেম প্রস্তাবে মিলাদ সাহেব বেশ নারাজ হলেন। তার মেয়ের বৌভাত কেন রাদের বাড়িত হবে। প্রশ্ন উঠলে রাদ সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় জানিয়ে দিলো, “আপনার বউ আপনার একমাত্র কন্যার সাথে সকল সম্পর্কের ইতি টেনেছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে অনন্যাকে তার ভাই, এই ন/র/কে পূণরায় ফেরত পাঠাবে।

রাদের জবাব পেয়ে একদম চুপসে গেলো মিলাদ সাহেব। অনন্যাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে রাদ অন্তর্মূখি হয়ে ফিরে আসলো। বিয়ে শেষ হতেই মেহমানরা প্রায় অর্ধেক সাফা হয়ে গেলো। বাকি যারা থাকলো তারা সকলেই একরকম র/ক্তে/র আত্মীয়।

_______

ক্লান্ত শরীরটা টেনে কোনো রকমে বিছানায় এলিয়ে দিতেই হাতের ফোনটা টুং করে উঠলো ইলহামের। প্রথম দফায় বেশ বিরক্ত নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। পরক্ষণেই ভেতরের সমস্ত বিরক্তি যেন উবে গেলো কোথাও। ফোনের ম্যাসেজটা আর কারোর নয়, বরং রাদের। নিজের অজান্তেই বুকের ভেতরটা এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে হাঁকিয়ে উঠলো। শোয়া থেকে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে পূণরায় নজর বুলালো ফোনের স্ক্রিনে। তাতে স্পষ্ট হয়ে ভেসে আছে রাদের ছোট্ট ম্যাসেজটি।

“ছাঁদে এসো। অপেক্ষা করছি।”

ইলহামের পরনে এখনোও পূর্বের লেহেঙ্গাটি। বিয়ে বাড়ির সকল ব্যস্ততাময় সময়কে পারি দিয়ে সবেই ফ্রী হতে পারলো। এতক্ষণ ঢের বিরক্তিতে থাকলেও এখন যে তার ছিটেফোঁটাও নেই। কারনটা হয়তো রাদ। ইলহাম জানেনা হঠাৎ কি হয়েছে ওর! মনের অজান্তেই কি ভালোবেসে ফেললো লোকটাকে?

ছাঁদে যাওয়ার সিঁড়ি ধরে উপরে এসে দাঁড়াল ইলহাম। খুব অদ্ভুত এক অনুভূতির সঞ্চালন হচ্ছে গোটা অঙ্গ জুড়ে। দুরুদুরু বুক কাঁপছে লাগাতার। হৃৎস্পন্দনের তুমুল ঝগড়া সেও শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। ঢিপ-ঢিপ ঢিপ-ঢিপ আওয়াজ তাদের। গুনে গুনে পা ফেলার সঙ্গে অন্তস্তলের তারবিহীন কাঁপনি যেন ক্রমশ বর্ধমান হচ্ছে। ইলহাম অন্ধকারের আবছায়া ঠুকরে খুঁজছে মানুষটাকে। কিন্তু,ছাঁদের এপাশ থেকে ওপাশ পুরোটাই মানবহীন নিস্তব্ধতায় খা খা করছে একরকম। ইলহামের সর্বাঙ্গে বি//ষা//দি//ত এক শ্রোত বয়ে গেলো। রাদ যে বলল ছাঁদে অপেক্ষা করছে? কোথায় তবে? পুরো ছাঁদটাই তো ফাঁকা পড়ে আছে।

বেশ রা/গ হলো ইলহামের। এ কেমন মজা হলো? নিজেই ডাকলো অথচ নিজেই নেই। পুরনো বিরক্তির ছাপ গুলো পূণরায় স্পষ্ট হলো কপালের ভাঁজে। একই সাথে একটা খারাপ লাগা। হঠাৎ কত খুশি হয়েছিলো মানুষটা ওকে ডেকেছে ভেবে! সমস্ত খুশির সমাপন ঘটলো মুহুর্তেই। মুষড়ে পড়লো আনন্দে বিমোহিত থাকা নাজুক মনটা।

বড় করে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইলহাম। আজ বোধহয় অমাবস্যা। কোথাও চাঁদমামা কিংবা তার পরিবারের দেখা নেই। অর্থাৎ তাঁরাদের সেই ঝলমলানি। গোটা অম্বর ফ্যাকাসে রঙের হয়ে আছে। ক্ষনেক্ষনে মেঘ সরে নিকষ অন্ধকার কামড়ে ধরছে গোটা রজনীকে। ক্ষনে ক্ষনে মেঘেদের হাঁটে আবার সেই ফ্যাকাসে রঙ।

ইলহাম মন খারাপ করে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। ঠিক তখনই ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত কান্ড। পেছনে কারোর অস্তিত্ব প্রগাঢ় ভাবে আবিষ্কার করল। ইলহামের পা জোড়া থেমে গেলো আপন গতিতে। মনের ভেতর ঝড় উঠলো কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটিকে আবিষ্কার করে। তবে তা যেন সেগুঁড়ে বালি। ইলহাম মানুষটিকে দেখার লোভে পেছন মুড়ে তাকাতে তাকাতে পেছনের ব্যাক্তিটি তাকে গভীর ছোঁয়ায় আলিঙ্গন করলো। ইলহাম চমকে উঠলো। এ ছোঁয়া তার অপরিচিত! মানুষটা যে রাদ নয়, সেকথা বুঝতে তার দেরী হলো না এক সেকেন্ডও। ভেতর ভেতর কেঁপে উঠল অজানা ভ/য়ে। রাদ না হলে কে? কথাটা ভেবেই ভ/য়ে কুঁকড়ে পড়লো বুকটা।

অমনি উপলব্ধি হলো লোকটা তার উন্মুক্ত জঠরে কেমন বি/ষা/ক্ত ছোঁয়ায় নিঃশ্বাস ভারী করে চলেছে! ইলহাম এবার ঢের বুঝতে পারলো এ অন্তু ছাড়া কেউ নয়! ততক্ষণে তুমুল যু//দ্ধ শুরু হলো নিজেকে ছাড়ানোর। ছটফটিয়ে ম//র//তে লাগলো, হাত ছুটতে লাগলো ক্রমাগত! ঠিক তখনই কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো অন্তুর লাগামহীন বানী,

—-“আজ তোমায় কাছে পেতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয় আমাকে! অথচ রাদ? কি অবলীলায় পেয়ে যাচ্ছে! আচ্ছা, সত্যি করে একটা কথা বলবে? কি এমন পেয়েছো রাদের কাছে যা আমি দিতে পারিনি? টাকা পয়সা? তা তো আমারও কম নেই! ফি//জি//ক্যাল রিলেশন? তা কি আমি চাইনি? তবে কেন পড়ে আছো ওর কাছে? কি এমন পাচ্ছো বলো? আমিও তাই দিবো তোমায়। ইলহাম!! আ..আমি যে আর পারছিনা তোমায় ছাড়া। কত ভালোবাসি তোমায় বোঝোনা তুমি?”

ইলহামের অন্তর আত্মা অব্দি চির চির করে উঠলো অন্তুর কথা গুলোতে! অন্তুর প্রতিটি ছোঁয়ায় এক বি/ষা/ক্ত পানসিটে ভাব খেলে যাচ্ছে ক্রমশ। অন্তুর হাত জোড়া একস্থানে স্থীর নেই! যা উপলব্ধি হতেই ঘৃ/ণা/য় গুলিয়ে উঠছে ইলহামের ভেতরটা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েও দূরে সরাতে পারছেনা হিং//স্র পশু সমতুল্য অন্তুকে। চোখের কোন বেয়ে অঝোর ধারায় শুরু হলো জল প্রবাহ! কান্নারত মন টা শুধু একটা মানুষকেই খুঁজতে লাগলো অসহায়ের ন্যায়।

—-“ভালোবাসা? ভালোবাসা নামক এই ছোট্ট শব্দটির মানে জানো তুমি? জানলে হয়তো আজ ইলহাম রাদের কাছে নয়, অন্তুর কাছে থাকতো। কেবল থাকতোই না! বাধ্য হতো থাকতে। কেন জানো? ঐ ছোট্ট শব্দটি.. ভালোবাসা! তার টানে।”

ইলহামের কঠোর গলাটি শ্রবণগোচর হতেই কেমন তাচ্ছিল্য করে হাসলো অন্তু। ইলহামের গাল চেপে জোরপূর্বক ঠোঁট মুখ ঘষতে লাগলো ইলহামের গলায়। চাপা গলায় ঠোঁট কামড়ে বলল,

—-“ভালোবাসা! আরে যে ভালোবাসায় ফি//জি//ক্যা//ল কোনো চাহিদা পূরণ হবেনা সে ভালোবাসা আবার কেমন ভালোবাসা? আর এখানে টান.. চাহিদা পূরণেই টান বাড়ে জান। আদারোয়াইজ, সেই রিলেশনে কোনো ভাবেই টিকে থাকা সম্ভব নয়। এই একটা কথা বুঝতে তুমি আর কত সময় ব্যয় করবে বলো তো?”

পূণরায় অন্তু নামক মানুষটার প্রতি অতীতের সমস্ত বিতৃষ্ণা গুলো মনের উপর ঝেকে বসতেই শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে তাকে ধাক্কা দিলো ইলহাম। অন্তু এক ধাক্কাতেই কুপোকাত প্রায়। টালমাটাল অবস্থায় পেছনের দিকে কয়েক কদম ছিটকে পড়ে ছাঁদের রেলিঙে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়লো। ইলহাম ফুঁসে উঠলো। ফুঁসতে ফুঁসতে চোখ মুছে একজোড়া অবজ্ঞা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অন্তুর পানে। বলল,

—-“তোমাদের মতো অশিষ্ট, জাত হীন অমানুষরা আর জানেই বা কি? তোমাদের মতো বন্য পশুরা ভালোবাসার মানে এটাই বুঝতে পারে। কিন্তু রাদ তা পারেনা। বিশ্বাস করো, উনি সত্যি তা পারে না। উনি সত্যিকার ভালোবাসতে জানে, ভালোবেসে আগলে রাখতে জানে। আমি হয়তো ওসবের যোগ্যও নই কোনোদিন। কিন্তু উনি, ভালোবেসে এই আমাকে.. আমার মতো অনাথ মেয়েটাকে মাথায় করে রেখেছে। প্রতিটা পদক্ষেপে শক্ত করে হাতটা ধরে রেখেছে। একটা অনাথ মেয়েকে গোটা একটা পরিবার দিয়েছে। এরপরেও আমার আর কি চাওয়ার থাকতে পারে? জানতে চাইলে না,রাদের কাছে কি এমন আছে যা তোমার কাছে নেই? জেনে রাখো, রাদের কাছে আমার প্রতি যে পবিত্র ভালোবাসা আছে তা হয়তো তোমাদের মা ছেলের মাঝেও নেই। তার ভালোবাসার সাথে তোমাদের মতো কিছু উচ্চশ্রেণীর অমানুষের ভালোবাসার তুলোনা করতে আমার সত্যি গায়ে বাঁধছে। কিন্তু কি করার? এটাই বাস্তবতা।”

অন্তু ক্ষে/পা চাহনিতে ইলহামকে গিলে খাবে যেন। ততক্ষনে ছাঁদের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছে অন্তু। ইলহামের একেকটা কথা তার শরীরে যেন সূচ ফুটালো। ক্ষে/পা চাহনিতে তাকে ধ্বং//স করতে পারলেও তেমন আক্ষেপ হবেনা। কথা গুলো বলো ইলহাম চলে আসতে নিলেই অন্তু তার হাতটা ধরে ফেলে। ইলহাম পূর্বের ন্যায় ফোঁস করে ওঠে। এবার তার রা/গ আকাশ স্পর্শ করলো যেন। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চড় মা/র/তে। কিন্তু মা/র/লো না। বরং নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু, সেটাই যেন হলো তার সবচেয়ে বড় বোকামি। অন্তু তার শান্ত ভঙ্গিমাকেই অ//স্ত্র করলো। ইলহামের হাতটা শক্ত করে চেপে রেখে সহসা ইলহামের পরনে শাড়ির ন্যায় ওড়নাটা টেনে খুলে ফেললো। অন্তুর হাতের জোরে ওড়নাটা সেফটিপিন গুড়িয়ে অন্তুর হাতে চলে গেলো। ইলহাম চক্ষু লজ্জায় মুষড়ে পড়লো ভেতর থেকে। এক ঝটকায় অন্তুর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে আড়াল করলো নিজেকে। তার বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো এবার।

অন্তু বিকট শব্দে হেসে উঠলো। ইলহাম যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল করে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এবার যেন সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে অন্তু। ইলহামের চোখের জল বাঁধ মানলো না। সহসা ঝর্ণার ন্যায় গড়াতে লাগলো গাল বেয়ে।

—-“এমন কামনীয় নারীকে কেউ ডিনাই করতে পারে বলোতো? আমি তো পারিনা। তাতে তুমি আমাকে পশু বললেও আমার কোনো প্রবলেম নেই।”

বলেই হাতের মাঝে ইলহামের ওড়নাটা পেঁচাতে লাগলো অন্তু। ইলহাম লজ্জায়, অপমান চোখ জোড়া বন্ধ করলো। এই মুহুর্তে তার ম//রে যেতে ইচ্ছে করছে। কেন বোকার মতো রাদের ম্যাসেজ পেয়ে ছাঁদে আসতে গেলো? কই রাদ তো এর আগে কোনোদিন তাকে ম্যাসেজ করে ডাকেনি ছাঁদে। বরং প্রয়োজনে নিজে সঙ্গে করে সব স্থানে হাজির হয়েছে। তাহলে আজ কেন ভাবলো না, এটা কোনো ট্র্যা//প হবেনা!

ইলহামের হেঁচকি তোলা কান্নায় আত্মতুষ্টি পাচ্ছে অন্তু। পেছন থেকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগলো। লালসাতুর দৃষ্টি ইলহামের উদাম পিঠে। একই সাথে শরীরে বিভিন্ন খাঁজে বিরাজ করছে। অন্তু বাঁকা হাসছে। সে খুব ভালো করেই জানে ইলহাম ম//রে যাবে, তবুও এমন অবস্থায় নীচে নামবে না। তাই এটাই সুযোগ।

অন্তুর কিলবিল করা হাতটা এগিয়ে এলো ইলহাম কাঁপতে থাকা শরীরের খাঁজে। কেমন লোভাতুর দৃষ্টি তার। কোনো হিং//স্র পশু যেন হার মানবে ওর কাছে।

ইলহাম অনুভূতি শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! লজ্জায় অপমানে ক্রমশ ঢুকে পড়ছে অতল গহ্বরে। অন্তু তাকে ছুঁই ছুঁই এমন পর্যায়েও যেন কোনো ভাবাবেগ ঘটেনি তার ভেতরে। কেবল একটা শব্দ ব্যাতীত!

আকস্মিক এক ভ/য়া/ন/ক শব্দ কেঁপে উঠল ইলহাম। কেঁপে উঠল অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকার এই রজনী। একই সঙ্গে ঝনঝন করে কম্পন তুললো গোটা ছাঁদ। অন্তু ছিটকে পড়েছে দূরে। ইলহাম ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মুখ উঁচিয়ে তাকালো সামনে। রাদ দাঁড়িয়ে আছে। না, সে ভুল দেখছেনা। রাদই দাঁড়িয়ে আছে র/ক্ত/চ/ক্ষু নিয়ে। ইলহামের কান্নার বেগ বেড়ে কাঁপিয়ে তুললো রাদের বুক পাঁজরের হাড়টিকে। রাদের র/ক্তি/ম অক্ষি কাঁচ ভেঙ্গে এখনি যেন আ/গু/নের জ্ব/ল/ন্ত লা/ভা/দের আবির্ভাব ঘটবে। তবে ইলহামের কান্নার শব্দে অবাক করে দিয়ে শান্ত হয়ে গেলো ঐ দৃষ্টি জোড়া। মুমূর্ষু হয়ে উঠলো যত্রতত্র,

—-“সুইটহার্ট!“

ইলহামের দু’গালে হাত রেখে আর কোনো কথা আওড়াতে পারলো না রাদ। তার পূর্বেই নিজেকে আড়াল করতে ইলহাম লুটিয়ে পড়লো রাদের প্রশস্ত বক্ষঃস্থলে। কান্নায় ভেঙে পড়ে হু হু করে কেঁদেই চললো। রাদের ভেতরটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সে কিছু বললো না। সামনের দিকে তাকিয়ে অন্তুর হাতে ইলহামের ওড়নাটা দেখে বাকি যা বোঝার বুঝে নিলো।

#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here