প্রেম পিয়াসী পর্ব -২১+২২+২৩

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব__________২১.

ইলহামকে বেশ সময় যাবত ঘরে দেখতে না পেয়ে সব জায়গাতেই খুঁজতে লাগলো রাদ। কাউকে ডেকে জিজ্ঞেস করারও জো নেই। কেননা, সে এখানের কাউকেই চেনেনা। মাকে বা নিহাকে জিজ্ঞেস করার জন্য গেলেও তাদের যথাস্থানে পেলোনা। তাই ইলহামের কথা জানতে গিয়ে পূনরায় তাদের খুঁজে বের করার ব্যাপারটা এই মুহুর্তে নিতান্তই সময় ন//ষ্ট হবে। তাছাড়া বিকেলের পর থেকে নিজের ফোনটা পাচ্ছে না সে। কোথায় রেখেছে ঠিক মনে পড়ছেনা। ব্যস্ততায় আর খুঁজে দেখা হয়নি। হঠাৎ দেখতে পেলো গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে উপরে ওঠার সিঁড়িতে দুটো বাচ্চা বসে খেলছে। রাদের মনে পড়লো সন্ধ্যার বেশ খানিকটা সময় ইলহামকে এই বাচ্চা দুটোর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয়ই বলতে পারবে ইলহামের কথা।

রাদ তাদের কাছে ইলহামের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা জবাবে বলে, “প্রায় অনেক্ষন আগে তারা ইলহাম কে ছাঁদে যেতে দেখেছিলো। এরপর আর দেখেনি।”

কথাটা শোনা মাত্র রাদ নিজেই নিজের মাথায় গাট্টা বসালো। ঘরে না থাকলে ছাঁদ ছাড়া আর কোথায় যাবে? এই সামান্য কথাটা মাথায় এলোনা একবারও।

অতঃপর ছাঁদে এসে ইলহামকে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রথম দফায় বেশ অবাক হলেও পরক্ষণেই দেখা মিলে অন্তুর। অন্তুর ওমন লোভাতুর দৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করতে রাদের দু’দন্ডও সময় লাগলোনা। রা//গে শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় র/ক্ত ছিটকে উঠতেই কিছু না ভেবে শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে অন্তুর বুক বরাবর লাথি মা//রে রাদ। অন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছিটকে পড়ে মেঝেতে।

___________

নিস্তব্ধতায় খা খা করা রজনী হঠাৎ গুমরে উঠলো অন্তুর কোঁকানির শব্দে। পেটে হাত চেপে বিকট শব্দে আ/র্ত/নাদ করে চেঁচালো অন্তু। ইলহাম আঁতকে উঠে পিছিয়ে গেলো দু’কদম। রাদ নিজের মধ্যে নেই। হিং//স্র দা/ন/বের মতো হুং/কার করে এলোপাতাড়ি মা//র//তে লাগলো অন্তুকে। মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে অন্তুকে চেপে ধরলো ওখানটায়। অন্তু দ/ম আঁ/টকা পরিস্থিতিতে পড়ে তার হাত-পা এদিক ওদিক ছুঁড়তে লাগলো বাঁ/চা/র আকুতিতে। ইলহাম ক্রমাগত কাঁপছে ভ*য়ে। এই বুঝি রাদের আসল রূপ! যা ইতিপূর্বে কোনোদিন দেখার দূ/র্ভাগ্য হয়নি ইলহামের। ইলহামের নিঃশ্বাস নিতে ক/ষ্ট হচ্ছে। বড় বড় নিঃশ্বাস টানতে লাগলে কর্ণকুহরে প্রবেশ করে রাদের বজ্রকণ্ঠ,

—-“অনেক বড় ভুল করলি অন্তু! তুই আমার এখানটায় (বুকের বা পাশকে নির্দেশ করে) আ/ঘা/ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছিস! সি। এখানটায়! আজ তোর ম/র/ন নিশ্চিত রে। (দাঁতে দাঁত চেপে)”

কথাটা বলেই মুখ বরাবর এলোপাতাড়ি ঘু/ষি মা/র/তে শুরু করলো রাদ। অন্তুর ঠোঁটের কোন এবং নাক গলিয়ে র//ক্ত পড়তে লাগলো। ক্লান্তির শেষ স্তরে নেমে হাল ছেড়ে দিলো অন্তু। রাদের সাথে ও কোনোদিন পারবেনা” কথাটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে অন্তু। তবে, ঘটনা প্রবাহে এমন করে ধরা পড়বে তা যেন ভাবনাতীত ছিলো।

রাদ রা/গে দিন দুনিয়া ভুলে বসেছে। তা তার বিবর্ণ মুখখানা দেখলেই বোঝা যায় স্পষ্ট। এই মানুষ টা এখন অন্তুর সাথে ঠিক কি কি করবে তা যে ধারণা করার বিন্দুমাত্র সাহস নেই ইলহামের। রাদ হেঁচকা টানে অন্তুকে টেনে তোলে ফ্লোর থেকে। অন্তু শূন্যে ভেসে কোনোমতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বৃথা হয় রাদের রা/গে/র বিপরীতে। অন্তুকে কোনো মতে দাঁড় করিয়েই রাদ পূর্বের ন্যায় সজোরে লা/থি মা/রে অন্তুকে। অন্তু পূণরায় ছিটকে পড়ে অদূরে। তবে এবার নীচে পড়েনা। ছাঁদের রেলিঙ ধরে নিজেকে পড়া থেকে বাঁচায় অন্তু। অতিরিক্ত রা/গে রাদ অ/ন্ধ এখন। আ/গু/নে/র ন্যায় ঝলকানি দিচ্ছে রা/গগুলো। টগবগ করছে মস্তিষ্ক। কিন্তু এসবে কিছু যায় আসেনা অন্তুর। সে জানে সে রাদকে হারাতে পারবেনা। কিন্তু তাই বলে যে ইলহাম এবং রাদের মাঝে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মনের পৈ/শা/চিক আনন্দ টুকু রপ্ত করতে পারবে না এমন টা নয়। এসব কাজ সে খুব ভালো করেই পারে। তাই প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ঠোঁটের কোনে সেই গা জ্ব/লানো হাসিটুকু জুড়ে দিলো ঠিকই। কেমন একটা গা পোড়ানো হাসি অন্তুর।

সহসা ভেতরটা ধক করে উঠলো ইলহামের। কোনো অ/ঘ/ট/নে/র পূর্বাভাস পাচ্ছে সে। রাদের রাগটা পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায় অন্তুর হাসিতে। তেড়ে গিয়ে অন্তুর কলার চেপে ধরলে অন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সেই ব্লা//স্ট/টা ফাটায়। তাচ্ছিল্য করে হেসে বলে ওঠে,

—-“ভুল আমি করিনি, রাদ! ভুল করেছিস তুই। আমি তো কেবল পরখ করছিলাম। কিন্তু তুই? তুই তো ভাই ঠকে গেলি অন্ধবিশ্বাস করে। সেটা কি ঠিক হলো?”

রা/গে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েই অনেক আগেই। তাই অন্তুর রহস্যময় কথাটা বুঝতে বেশ অসুবিধাই হলো রাদের। কপাল কুঁচকে অন্তুর কলারটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

—-“মানে কি?”

অন্তু ফিক করে হেসে দিলো। যেন রাদ কোনো মজার কথা বলে ফেলেছে। তাই এক্ষেত্রে না হাসাটা বেমানান। অবশ্য এই মুহুর্তে অন্তুর হাসির মানে, রাদের রাগটা আরও দিগুন বাড়িয়ে তোলা। ফলাফল যেন তাই হলো। রাদ দাঁতে দাঁত চেপে অন্তুকে দ্বিতীয় আঘাত করতে গেলে অন্তু হাসতে হাসতে থামায় তাকে। বলে,

—-“মানে! মানেটা খুব সিম্পল। আবার হয়তো তোর কাছে নাও হতে পারে। কারন, তুই তো বিশ্বাস করেছিস। কি করে বুঝবি এত বড় ধোঁকা তোর জন্য অপেক্ষা করছিলো!”

শেষোক্ত কথাটা বলতে বলতে ইলহামের দিকে একটা তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অন্তু। ঠোঁটের কোনে রহস্যময়ী হাসি। যার কোথাও বিন্দুমাত্র পবিত্রতা কিংবা কারোর ভালো চাওয়ার ছাপ নেই। বরং উল্টোটা। অপবিত্রতা এবং কারোর কাল ডেকে আনার প্রয়াস।

রাদ কপাল কুঁচকে নেয়। রা/গকে সংবরণ করতে পারেনা। বরং তরতর করে বাড়তে থাকে।

—-“ধোঁকা! ধোঁকা দিয়েছে আমাকে? কে!”

রাদের কন্ঠ কেমন ক্ষীণ। যা শুনতেই এক শীতল র/ক্ত/স্রো/ত শরীর কাঁপিয়ে নেমে যায় ইলহামের। ভ/য়, ঘৃ/না এবং একরাশ অসহায়ত্বতা চেপে ধরে অসহায় মনটাকে। আবদ্ধ করে শ্বা/সরূ/দ্ধ সেই অতীতে।

—-“কে আবার? তোর সুইটহার্ট! ওরফ, ইলহাম।”

রাদের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। অন্তুর অবলীলায় ব্যক্ত করা এহেম বানীতে ভেতরটা কেমন হালকা হয়ে যায় তার। ইলহাম তাকে ধোঁকা দিয়েছে?

লাগাতার কয়েকটা ঘু/ষি পরপর পড়তেই বাঁ/চার তীব্র আকুতি শোনা যায় অন্তুর। অন্তু হাঁকিয়ে ওঠে,

—-“একবার শোন আমার পুরো কথাটা! আমি সত্যি বলছি ভাই!”

রাদ শোনেনা। একদম শুনতে চায়না এই অমানুষের মুখ থেকে তার প্রিয় মানুষটির নাম। ওর মুখে নাম উচ্চারণেও যে অপবিত্র হয়ে যাবে তার ইলহাম।

—-“ইলহামের সাথে আমার রিলেশন ছিলো, রাদ।”

ঘুষিটা মুখে পড়তে পড়তে থমকে গেলো রাদের হাত। রাদের ক্রো/ধ। রাদের ভেতরটায় ঘটতে থাকা জ্বা/লাপোড়া। কথাটা যেন স্তব্ধ করে দিলো গোটা ধরনীকে। রাদ এক অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে স্তম্ভিত হয়ে আছে। সে ভুল শুনেছে। মনটা ছটফটিয়ে কেবল এই বাক্যটিই জপে যাচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে ইলহাম দম বন্ধ করে তাকালো অন্তুর পানে। ইলহাম স্পষ্টই দেখতে পেলো অন্তুর মুখে ঐ পৈ/শা/চিক আনন্দ। ঠিকই উপলব্ধি করলো অন্তুর স্বার্থ।

রাদ নির্বাক প্রাণে অন্তুকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলো দু’কদম। তার ভেতরের র//ক্ত/ক্ষ/র/ণ কি ভ/য়া/ন/ক! কেউ কি বুঝবে?

ইলহামের রিলেশন ছিলো! সেটাও কার সাথে? অন্তুর সাথে! কই? ইলহাম তো তাকে কোনোদিন বলেনি এসব কথা!

—-“হ্যাঁ রাদ। গত বছরের এই সময়টাতেই আমরা একটা কমিটনেন্টে আসি। আমাদের ঐ দিন গুলো সত্যি খুব সুন্দর ছিলো। বেশ, ভালোবাসার সকল আবদার পূরনের এক অদ্ভুত সুন্দর বন্ডিং। কিন্তু সেই সুন্দর সম্পর্কটার ইতি ঘটলো যখন জানতে পারি এই মেয়েটা.. এই মেয়ে টা আমাকে ডাবল ক্রস করছে। হ্যাঁ, রে! ও আমার সাথে কমিটমেন্টে থেকে আরেকজনের সাথে লুতুপুতু প্রেমে জড়িয়েছে। আমি ওকে অনেক বার বুঝাই। সবটা দিয়ে বুঝাই। কিন্তু ও তো.. ও আমার একটা কথাও শুনলো না। বরং, আমাকে ডাম্প করলো। এ সবটা কি আদৌও কোনো মানুষ মেনে নিতে পারবে? আমি পারিনি। তাই আমি ওকে ছেড়ে দেই। দেখ ভাই, আমি ওকে ছেড়ে দিতে না দিতেই ও কারোর সাথে এনগেজমেন্ট করতে চলে যায়। ভাব একবার। আমি ওকে কি ভাবতাম, আর ও? কি বের হলো! ছ্যাহ্!”

অন্তু কথাগুলো শেষ করে এক তৃপ্তিমুলক হাসলো। রাদ এতো বোকা নয়। সে এতোটা অন্ধবিশ্বাস নিশ্চয়ই করবেনা ইলহামের প্রতি। কথাটা ভাবতেই ভেতরটা ভরে উঠলো অন্তুর। কিন্তু তারপরে যা ঘটলো! তাতে, অন্তুর আত্মা শুকিয়ে আসার পালা হলো। রাদ পকেট থেকে রি/ভ/ল/বা/র/টা বের করেই তাক করলো অন্তুর ঠিক কপাল বরাবর। ক্রো/ধা/নলে জ্ব/লে ওঠে অন্তুর কলার চেপে ধরে ঠিক কপালের মাঝখানে ঠেসে ধরলো রি/ভ/ল/বা/র/টা। অন্তু ভ/য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে ঢোক গিললো। এতদূর তো তারও ধারণায় ছিলোনা।

—-“আর একটা বাজে কথা বলবি তো..”

বলেই আরও জোর দিলো হাতে। অন্তু কেঁপে উঠে লেপ্টে গেলো রেলিঙের সাথে। আরেকটু পেছোলেই সে নীচে খাদে গিয়ে পড়বে। কিন্তু সামনে আগানোতেও যে তার মঙ্গল নেই। বরং কাল দাঁড়িয়ে আছে।

ইলহাম আর পারলোনা স্থীর হয়ে থাকতে। শরীরে পেঁচিয়ে থাকা রাদের কালো জ্যাকেটটায় নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে দৌড়ে এলো। এক অজানা ভ/য় তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো এতদিন। আর আজ যখন সবটা সামনে এসেই পড়েছে তখন, এড়িয়ে যাওয়াটাও এক পর্যায়ের বোকামি।

—-“র..রাদ! রাদ ছেড়ে দিন ওকে। কি পা/গ/লামো হচ্ছে এসব!”

ঢোক গিলে সাহস সঞ্চয় করে রাদের হাতটা ধরলো ইলহাম। রাদ সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন। তার ধ্যানজ্ঞান সমস্তটা এখন কেবলই অন্তু। অন্তুর বুকের পাটা ঠিক কত বড়, আজ সেও দেখে ছাড়বে।

—-“এ্ এই তো তোর ইলহাম এসে গেছে! জ্ জিজ্ঞেস করনা ওকে? আমি যা বলেছি এসব সত্যি কি ম্ মিথ্যা!”

ম/র/নে/র ভয় কামড়ে ধরলো অন্তুকে। রাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বলল,

—-“আমার ইলহামকে আমায় চেনাচ্ছিস? কবে থেকে চিনিস ওকে? জানিস ওর পরিচয় কি?”

অন্তু বুকটা ধরাক করে ওঠে। অবাক বিস্ময় দৃষ্টি খানা গাঢ় হয় ক্রমশ। অবাক হয় ইলহামও। ইলহামের বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায় আরও কয়েক গুন। এবার পুরোনো ভ//য়ের সাথে যুক্ত হয় খানিক নতুন ভ//য়। কি বলছে মানুষটা?

—-“তুই আমার কথা বিশ্বাস করবি না? ওকে ফাইন। আস্ক হার। এক বছর পূর্বে আমাদের রিলেশন ছিলো কি না? আস্ক হার।”

—-“ওকে ফাইন! ধরে নিলাম, এক বছর পূর্বে তোদের একটা রিলেশন হয়েছিলো। আর তাতে ইলহাম তোকে ডাবল ক্রস করেছে। তাই বলে ও তোর সাথে রিলেশন থাকাবস্থায় আরও একাধিক রিলেশনে জড়িয়েছে! সেটা তোর ভাষ্যমতে! এন্ড আই হ্যাভ টু বিলিভ দ্যাট, এতো টা বোকা আমি নই। এতোটা বোকা আমি নই অন্তু।”

—-“ইলহামের একাধিক রিলেশন রাখাটা কোনো ব্যাপারই ছিলোনা ভাই। বিলিভ মি! তুই চেতন নামের কাউকে চিনিস? জানিস ওর সাথে ইলহামের এনগেজমেন্ট হতে যাচ্ছিলো! তারপরও তুই বিলিভ করবিনা?”

রাদ অদ্ভুত করে হাসলো।

—-“চেতন কে আমি খুব ভালো করেই চিনি। এমনকি চেতনও আমাকে খুব ভালো করে চেনে অন্তু। এটলিস্ট, তোর থেকে ভালো ও আমাকে চেনে। কারন, এর পূর্বের গু/লি/টা ওর হাতের গেঁথে ছিলো। আর এবারের গু/লি/টা? ঠিক তোর কপাল বরাবর!”

—-“র্ রাদ! রাদ কি পা/গ/লামো করছেন!! ছেড়ে দিন ওকে। একটা এ/ক্সি//ডে/ন্ট ঘটে যাবে…”

—-“শাটআপ!”

ইলহামের আকুতভয় কন্ঠটি একদমই ক্ষীণ হয়ে আসলো রাদের বজ্রকণ্ঠে। ইলহাম আঁতকে উঠে রাদের হাত টা ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে পড়লো ভ/য়ে। রাদ অ/গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পানে। যেন এক্ষনি ভ/স্ম করে দেবে ইলহামকে।

চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
পর্ব________২২.

ইলহাম ডুকরে কেঁদে ওঠে। রাদ আর তাকায় না ওর দিকে। কোনো এক তীক্ষ্ণ অবহেলার প্রগাঢ় আবরণ লেপ্টে পড়ে ইলহামের আহত হৃদয়ে।

রাদ রি/ভ/ল/বা/র চালাতে উদ্যত হয় অন্তুর কপালে। ইলহাম ভ/য়ে তার কাছে ঘেঁষে না। অদূরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে দু’হাতে মুখ চাপে। ঠিক এমন মুহুর্তে প্রতিধ্বনিত হয় অন্তুর শেষ বি/ষা/ক্ত বানী,

—-“আ..আমার সাথে রাত কাটিয়েছে তোর ইলহাম! কেবল একবারই নয়! অনেক বার। আ..আ..আই সয়্যার ভাই!”

বিকট এক শব্দে পূণরায় কেঁপে ওঠে নিস্তব্ধ রজনী! রাদ সত্যি গু//লি চালায়। তবে ভাগ্যক্রমে সেটা পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় অদৃশ্যপটে। ইলহাম ভ/য়ে/র সর্বোচ্চ সীমাকে লঙ্ঘন করে দু’হাতে দুই কানকে আবদ্ধ করে। ধড়ফড় করে ওঠে তার হৃদপিণ্ড। এক্ষনি ছিটকে বেরিয়ে এলো বলে। খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো বিধায় দেখা হলো না, গু/লি/টা আসলেই বিদ্ধ করলো কিনা অন্তুকে।

অন্তু ভাঙা স্বরে চেঁচায়। শুনতে পেয়েছিলো ইলহাম। তারপর সবটা নিস্তব্ধ। ঠিক তখনই ঠাস করে কারোর গালে চড় পড়ার মতো শব্দ ভেসে এলো। ইলহাম চমকে উঠে চোখ জোড়া মেলে ধরতেই প্রকাশ্যে ভাসে মান্নাত বেগমের রা/গে গমগম করা মুখখানা। ইলহামের মনে পড়েনা মান্নাত বেগমকে এর পূর্বে কখনোও এমন র/ক্তি/ম মুখশ্রীতে দেখেছে কিনা। এটা ভাবাও অনেকটা অবাক করা বিষয় যে মান্নাত বেগম মানুষটা কোনো কারনে রা/গ/তে পারেন। সেই তিনি রে/গে কাকে চড় বসালেন?

ইলহাম দেখতে পেলো ঝুঁকে থাকা মাথাটা উঠাতে উঠাতে গালে হাত রাখলো রাদ। অর্থাৎ মান্নাত বেগমের রা/গে/র বহিঃপ্রকাশ নিজের সন্তানের প্রতিই হয়েছে।

আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এলেন রাজিয়া বেগম। পেছনে এলেন মিলাদ সাহেবও। প্রত্যেকের মুখে মৃ//ত্যু ভয়ের কালো আবরণ। ছেলেকে ম/র/তে ম/র/তে বাঁচাতে পারার এক প্রকার স্বস্তিও। তবে তার চেয়েও যে ভ/য়/টা/ই প্রখর।

—-“পাগল হয়ে গেছিস তুই? এক্ষনি কি করতে যাচ্ছিলিস? নিজের ভাইকে মা/র/বি তুই? এতো বড় গু/ন্ডা হয়েছিস!!”

মান্নাত বেগম রা/গে দিশেহারা প্রায়। ছেলেকে এই মুহুর্তে ঠিক কি বলে শাসন করা উচিৎ জানা নেই তার। আক্ষেপে যে ম//রে যেতে ইচ্ছে করছে তার। এই শিক্ষা দিয়েছিলো ছেলেকে? হায় আফসোস!

—-“বল!! চুপ করে আছিস কেন? কেন মা/র/তে গেলি নিজের ভাইকে? সেটাও এই.. এই অ/স্ত্র তুলে! হে প্রভু, এমন দিন দেখার পূর্বে কেন আমাকে নিলেন না আপনি?”

মান্নাত বেগমের চোখ জোড়া টলমল করতে লাগলো। দূরে সেই পূর্বের আকারেই পাথরের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েই আছে ইলহাম। বারে বারে ডুকরে কাঁদছে। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো!

—-“কথা বলিস না কেন? কথা বল! কথা বল বলছি? বল, কেন করলি এমন? কি কারন? বল আমাকে..”

ভেতর থেকে পুরোটাই ভে/ঙে পড়লেন মান্নাত বেগম। এলোপাতাড়ি মা/র/তে লাগলেন নিজের ছেলেকে। চ/ড়-আ/ঘা/ত কোনোটিই বাদ রাখছেন না। নিহা ছুটে আসে তাকে আটকাতে। রাদ মাথা নীচু করে নিথর হয়ে শুনতে লাগে মায়ের কথা। মায়ের চ/ড় থা/প্পড়েও মাথা তুলে একটা সামান্য কথা অব্দি বলে না সে। মূলত বলতে চায়না।

ইলহাম আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। তার শরীর ক্রমশ ভে/ঙে পড়তে চাইছে। পা জোড়া থরথর করে কাঁপছে অনবরত। উপস্থিত জনগন কেবল মায়েরাই নন। বরং আরও অনেক মানুষ ভীড় করেছে এখানে। সবাই কেমন আঁড়চোখে দেখছে ইলহামকে। অনেকে কানাঘুঁষাও কম করছেনা। ইলহাম আর কোনো ভাবনায় না জড়িয়ে এক রকম পালিয়ে আসে সবার মাঝখান থেকে। সে জানে, হয়তো এক্ষনি একজোড়া কটাক্ষের হাত তাকে ইশারা করবে। কেমন, ঠেস মা/রা গলায় জানান দিবে, তার মতো নগন্য মানবের কারণেই এই ধরণীর যত অমঙ্গল।

ছাঁদে অনেক শোরগোল শোনা গেলো। যার শুরু হলেও শেষ হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। সেদিন রাতেই নিজের বাড়ি ফিরে আসেন মান্নাত বেগম। ইলহাম তাদের সাথেই ফেরে। সারারাত আর দেখা মেলেনি রাদের। এমনকি টানা দুটো দিন নিখোঁজ সে। উপস্থিত হলো ঠিক অনন্যার রিসেপশনের দিন। অনুষ্ঠান শেষ করে যখন অনন্যাকে নিয়ে প্রণয় তার বাড়িতে উপস্থিত হলো, তাঁদের সঙ্গে রাদও ফিরলো। তবে প্রণয়ের বাড়ি থেকে নয়। বরং, অন্য কোথাও থেকে। যে ঠিকানা ইলহাম টানা দুটো দিনেও খুঁজে বের করতে পারেনি। ইলহামের ফোলা ফোলা গাল, চোখ, মুখ দেখে যে কেউ খুব সহজেই ধরতে পেরেছিলো সে এই দুটো দিন নিয়ম করে কেঁদেছে! কেবল একটা বার রাদের ফেরার আশায়। অথচ, চাঁদ মামা তার কুটিরে ফিরে গেলেও রাদের দেখা পাওয়াটা ডুমুরের ফুলের ন্যায় হয়ে উঠেছিলো। অবশেষে যখন বাস্তবেই রাদ ফিরে এলো তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না ইলহাম। এক ঘর লোকের সামনেই হায়া ভুলে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জানতে চেয়েছিলো, “কোথায় ছিলেন এই দুটো দিন? কতবার কল করেছি কোনো খবর রেখেছেন?”

আশ্চর্যজনক ভাবে রাদ তাকে এই আঙ্গুলও স্পর্শ করেনি। কেমন গম্ভীর মুখ করে বলেছে,”ছাড়ো। মানুষ দেখছে।”

ব্যস তারপর থেকে আবার লাপাত্তা। ইলহাম বোবা চোখে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো রাদের দিকে। মানুষটা ঠিক কতটা বদলে গেছে এই দুটো দিনে, ভাবতেই হাজার বার ম/রে/ছে সে। কাঁদতে কাঁদতে পা/থ/র হয়েছে চোখ জোড়া। কতটা ভ/য়া/ন/ক ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে সে রাদকে! রাদ কি কিছুই বুঝতে পারেনা?

____________________________________________

রাত ১২টা বেজে ৪৫মিনিট। ইলহামের রুমের দরজাটা ভেজানো দেখে অনুমতি ব্যতীতই ভেতরে প্রবেশ করলো অনন্যা। ইলহাম আড়াআড়ি হয়ে এলোমেলো অবস্থায় শুয়ে আছে বিছানায়। তার অন্যমনস্ক ভাব বুঝিয়ে দিচ্ছে, সে টের পায়নি অনন্যার আগমন। অনন্যা তাকে এমন ভাবে দেখে ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চুপটি করে তার মাথার কাছে বসে আলতো ভঙ্গিতে হাত রাখলো মাথায়। ইলহাম কারোর ছোঁয়ায় চমকে উঠলো আকস্মিক। ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে এক কৌতুহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অনন্যার পানে। তারপর হঠাৎ মিইয়ে পড়লো কৌতুহল নিহিত চোখজোড়া। অর্থাৎ, সে অন্য কাউকে আশা করেছিলো। অনন্যা ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

—-“তুমি ঠিকাছো ভাবি?”

—-“ত্ তুমি এই সময়? (অনন্যার প্রশ্নে কয়েক মুহুর্ত থম মে/রে থেকে) হ্যাঁ। ঠিকাছি। কেন বলোতো?”

—-“ভাইয়ার সাথে সব কিছু ঠিকাছে তো?”

ইলহাম জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু সেই হাসিটুকুও দীর্ঘময় হলোনা। ফ্যাকাসে হয়ে এক ধূসর বি/ষ/ন্ন/তা ছেয়ে গেলো মুখশ্রীতে। অনন্যা ঢের বুঝতে পারলো ইলহামের মনের অবস্থা। ইলহামকে কিছু বলতে না দিয়ে অনন্যা নিজেই বলে উঠলো আবার,

—-“কি হয়েছে ভাবি? আমাকেও বলা যায়না?”

বলতে বলতে ইলহামের হাতজোড়া নিজের হাতে নিয়ে নিলো অনন্যা। পুরনো ক্ষ/ত/তে কেউ লাগাতার অ/স্ত্রা/ঘা/ত করলে যেমন অনুভূতি হয়, তার চেয়েও ভ/য়া/ন;ক তা;ড়;না হচ্ছে ইলহামের বুক পাঁজরে। কিছু বলতে পারলো না সে। ডুকরে কেঁদে উঠে জড়িয় ধরলো অনন্যাকে। অনন্যা হতবিহ্বল হয়ে গেলো ইলহামের কান্না দেখে। বোবা স্বরে বলে উঠলো,

—-“ভাবি!! ভাবি কাঁদছো কেন? আমাকে প্লিজ বলো ভাবি! আমি কিন্তু সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা। এই ভাবি?”

ইলহাম কান্না জড়ানো কন্ঠেই একের পর এক ঘটনা বর্ণনা করে গেলো অনন্যার কাছে। অন্তুর সাথে সম্পর্ক হওয়ার আগে থেকে শেষ অব্দি সবটা নিখুঁত ভাবে বলল। সবটা শুনে অনন্যাও বেশ খানিকটা সময় স্থীর হয়ে রইলো। তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তার নিজের ভাই? তার নিজের ভাই এতোটা নোং//রা!

—-“চোখ মুছো ভাবি। এখানে তোমার কি ভুল বলো তো? ভাইয়া হয়তো তোমার প্রতি একটু অভিমান করেছে। দেখবে দিন শেষে তোমার কাছেই আবার ফিরে আসবে। তুমি জানোনা, ভাইয়া তোমায় ঠিক কতটা ভালোবাসে!”

—-“না গো! উনি কোনো অভিমান করেননি। উনি সত্যি সত্যি আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছেন! ব্ বিশ্বাস করো অনন্যা, আমি উনাকে সবটা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু…”

ভেতরটা তোলপাড় হচ্ছে ইলহামের। না, এমন করে সত্যি থাকা যায়না! আর সে থাকবেও না। আর একটা দিনও থাকবে না এই বাড়িতে। কালই চলে যাবে। সত্যি বলতে ও যোগ্য নয় মানুষটার ভালোবাসার। ওর যোগ্যতা মামির অ/ত্যা/চা/রে দিনযাপন করা অব্দিই সীমাবদ্ধ।

—-“আমি কথা বলবো ভাইয়ার সাথে। এভাবে কেঁদো না প্লিজ ভাবি। দেখো আমার দিকে..(ইলহামের দু’গালে হাত রেখে)..খুব ভালোবাসো ভাইয়াকে, তাইনা?”

ইলহাম ফোপাঁতে ফোপাঁতে মাথা নুইয়ে নিলো। ভালোবাসবে? কোন যোগ্যতায় ভালোবাসবে মানুষটাকে? ওর যে কাউকে ভালোবাসারও যোগ্যতা নেই।

—-“বলেছো ভাইয়াকে?”

ইলহাম না বোধক মাথা নাড়ে। অর্থাৎ, কখনও বলেনি। অনন্যা মৃদু হাসে। গুনী ভঙ্গিতে ইলহামের দুচোখের জল মুছতে মুছতে বলে,

—-“জানাতে হবে তো ভাইয়াকে। নয়তো কি করে জানবে, কেউ একজন ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।”

ইলহামের বুক কাঁপে। হয়তো সে নিজের চেয়েও বেশি রাদকে ভালোবাসে। কিন্তু সেই ভালোবাসা কি আদৌও কোনোদিন খাটে তার সামনে! একদম খাটে না।

—-“একদম কাঁদবে না, ভাবি। দেখো তুমি কাঁদলে কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগে না। না জানি, ভাইয়া তোমার চোখের জল দেখলে কি করে। শোনো না, ভাবি? আমি ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলবো। তুমি এইসব নিয়ে আর একটুও মন খারাপ করে থাকবেনা। কেমন? তোমাকে কাঁদলে একদমই ভালোলাগেনা। সব সময় যেমন হাসিখুশি থাকো। ওমনই থাকবে হু? ভাইয়া বোধহয় বাসায় ফিরেছে। আমি দেখছি। কথা বলে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি। কেমন?”

ইলহাম হ্যাঁ বা না কোনোরূপ জবাব আওড়ালোনা। কেবল নিশ্চুপ থেকে চোখের কোন মুছে চুপচাপ বসে রইলো। বুক ভরে তাজা দীর্ঘশ্বাসের আনাগোনা। আর কোনো স্বপ্ন সে নতুন করে দেখতে চায়না। কারন, ভাগ্য নামক জিনিসটায় সুখ বলতে একদমই কিচ্ছু নেই ওর। তাই স্বপ্ন দেখা তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো।

অনন্যা চলে গেলো রাদের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু রাদকে কোথাও পেলোনা। কয়েক মুহুর্তের জন্য বাসায় এলেও আবার কাজের বাহানায় বেরিয়ে গেছে রাদ।

#চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব________২৩.

রাদ বাড়ি ফিরলো মধ্যরাতে। প্রতিদিন ইলহামের প্রতীক্ষার প্রহর না কাটলেও আজ যেন খুব দ্রুতই কেটে গেলো। কেননা, আজ আর কারোর পথ চেয়ে বসেনি ইলহাম। বরং ভোর হওয়ার তীব্র আকুতিতে গমগম করছিলো অন্তস্থল। রাতে যেমনটা ভেবেছিলো, ভোর হতে না হতে সেটাই করলো সে। প্রকৃতির বুক চিঁড়ে অন্ধকার তলিয়ে যেতেই ব্যাগ গুছিয়ে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো নিজের বাড়িতে। মামি ওকে দেখতেই মুখ ঝামটি দিয়ে বেশ কথা শুনালো। যা ছিলো এতোদিনের চেপে রাখা ক্ষো/ভে/র বহিঃপ্রকাশ। রাদ তাকে যা-তা বলে অপমান করেছে প্রতি পদক্ষেপে। তার কি শোধ মোটেও তুলবেনা! এসব কি আদৌও সম্ভব?

ওদিকে সকাল থেকে ইলহামকে খুঁজে না পাওয়ায় শোরগোল পড়ে গেলো বাড়িতে। রাদ সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোরের দিকে কেবল চোখ বুঁজেছিলো। এর মাঝেই কানে এলো, ইলহামকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” কথাটা শোনা মাত্রই আর কিছু শুনতে পায়নি কানে। যেন ঐ শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করার পর সে কানে কালা হয়ে গেছে। জমানো সমস্ত অভিমানের ছোট ছোট টুকরো গুলো কাচ ভাঙার ন্যায় কয়েক শত খন্ডে বিভক্ত হয়েছে। দিশেহারার ন্যায় ছুটে গেলো ইলহামের শূন্য ঘরে। না;ইলহাম নিজের ঘরে নেই। গার্ডেন, ছাদ, গোটা বাড়ি কোথাও নেই ইলহাম। মান্নাত বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। তার শরীর কিংবা মন কোনো কিছুতেই আর কুলোচ্ছেনা। এক বি/ষা/ক্ত তা/ড়/না মিশ্রিত অনুভূতি তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে বিগত পনেরোটা বছর অব্দি। সেই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটা রোজকারের ন্যায় ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। স্যুট-বুট পড়া সর্বদাই একজন সম্মানিও বিশিষ্ট ভদ্রলোক ছিলেন তিনি। কিন্তু একদিন.. একদিন হঠাৎ সেই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটার তাজা র/ক্তে যবথব করা লা//শ বাড়ি এলো। তারপর থেকেই মান্নাত বেগম এক চাপা দীর্ঘশ্বাসকে পুঁজি করে বেঁচে আছেন এতোগুলো বছর। তার কাছে এই সংসারের কোনোকিছুরই মূল্য নেই কেবল রাদ ছাড়া। আর রাদের প্রাণভোমরা যেহেতু ইলহাম, তাই তিনি ছেলের মতোই একহাতে আগলে রেখেছিলেন দু’জনকে। কিন্তু এই একের পর এক ঘটনা গুলো ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে তাকে। পুরনো ক্ষ/ত গুলো আবারও তাজা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে।

—-“ভাইয়া, ভাবির ফোনটা-তে রিং হচ্ছে!! কিন্তু কেউ তো তুলছেনা ফোনটা!”

অনন্যা নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে আসলো রাদের কাছে। বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল কথাটা। রাদ স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। অনন্যার হাত থেকে ওর ফোনটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে একবুক আশা নিয়ে তাকায় ফোনটার দিকে। যেন, ইলহাম কল টা পিক করবে। কিন্তু সেগুড়ে বালি। বরাবরের মতোই ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো। বিষয়টা উপলব্ধি হতে রাদের বুক পাঁজরে এক বি/ষা/ক্ত ব্যাথা কামড়ে ধরলো। দম বন্ধ অনুভূতিগুলোও কি ভ/য়া/ন/ক হয়। নিরাশ হয়ে ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রাদ। শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকা গলাতে ছোট্ট একটা ঢোক গিলে গলা ভেজানোর সাথে সাথে ভেতরের ভ/য় গুলোকেও গিলে খেলো। মনটা ছটফট করছে কেবল একটাই দুশ্চিন্তাতে। ইলহাম যেন ঠিক থাকে। কোনো ভাবেই যেন নিজের রা/গে/র কাছে হেরে গিয়ে ফের অন্তুর মিছে মায়ায় নিজেকে বিলীন না করে।

ঠিক এমন সময় শিরিন উপর থেকে গলা উচিয়ে আওয়াজ দিলো,

—-“খালাম্মা, এই ফোনডা ইলহাম আপার রুম থেইক্কা অনেক্ষন ধইরা বাজতাছে। মনে হয় ইলহাম আপার ফোন।”

কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে করতে বুক পাঁজরের বি/ষা/ক্ত ব্যা/থাটা আরও ভ/য়া/ন/ক রূপ নেয়। রাদ দু’হাতে পুরো মুখ একবার মালিশ করে কয়েক মুহুর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। অনন্যা শিরিন কে ফোনটা নিয়ে নীচে নামতে বলে। শিরিন ফোনটা নিয়ে নীচে এলে অনন্যা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ইলহামের ফোনটা। হ্যাঁ; শিরিন ঠিকই ধরেছে। এটা ইলহামেরই ফোন।

—-“ ভাইয়া? ভাবি রাগ করে তার বাসায় ফিরে যায়নি তো?”

কথাটা মন্দ বলেনি অনন্যা। অন্তুর দুঃশ্চিতায় রাদের মাথাতেই আসেনি কথাটা। অনন্যার মুখে কথাটা শুনতে দেরী হলেও রাদের বেরিয়ে যেতে দেরী নেই। গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো রাদ। তার দৃষ্টি এলোমেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে স্টিয়ারিং ঘোরাতে শুরু করে।

এতো কিসের রাগ ওর? যে না বলে এভাবে হুট করে বাড়ি ফিরে গেলো? অনেকদিন কোনো শা/স/ন পায়নি তো, তাই এতো দুঃসাহস বেড়েছে। আজই ওর ডানা ছাটতে হবে। খুব বাড়-ও বেড়েছে।

ঘন্টা খানিক সময় পেরোতে একটা কালো গাড়ি বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে দেখা গেলো। ইলহাম অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজের রুম সংলগ্ন ব্যালকনিতে। ভেতরটা ক্রমশ ডুকরে কেঁদে ম/র/ছে। বুকের পা পাশটা জুড়ে এক তীক্ষ্ণ ব্যা/থার প্রতিযোগিতা চলছে। যু//দ্ধ লেগেছে, ঠিক কতটা তীব্র য/ন্ত্র/ণা দিয়ে আহত করা যায় তার হৃদযন্ত্রটিকে। অবশ্য সফলও হচ্ছে। হা/হা/কার করা কান্না গুলো বারবার উপচে পড়তে চায় এই র//ক্ত/ক্ষ/র/ণের কাছে হার মেনে। তারা পাশ করেছে। এমনকি তাদের পাশের নাম্বারও দিতে চায় ইলহাম। সবাই একশোতে একশো।

কত-শত অবান্তর ভাবনাদের ছড়াছড়ি। ঠিক তখনই চোখ জোড়া চমকে উঠলো কাউকে দেখে। কালো গাড়িটার দরজা খুলে বেরিয়ে এলো রাদ। রাদ নীচে দাঁড়িয়েই বেশ ভালো ভাবে দেখতে পেলো ইলহামকে। ওমনি চাপা রা/গ-ক্ষো/ভ গুলো রেরে করতে করতে যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো। পারতো, নীচ থেকেই জাম্প করে চলে যেতো ইলহামের সম্মুখে।

ইলহামের চোখ জোড়া ভরাট হয়ে এলো রাদের আগমনে। সে তো প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলো, রাদ হয়তো আর কোনোদিন তার মুখটাও দেখবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, রাদ তাকে ছাড়া সত্যি ভালো থাকতে পারবেনা। তার প্রেমে আকুল পিয়াসী রাদ। যেমনটা আজ সে নিজেকেও দাবী করতে পারবে। কারন সেও যে ভীষণ মায়ায় পড়েছে মানুষটার। ঐ র/ক্তি/ম চোখের, চাপা স্বরের। একরাশ তি/ক্ত/তা মিশ্রিত কন্ঠের। সমস্ত টাই এখন তাকে ক্রমশ টেনে নিচ্ছে রাদের কাছে। ভালোবেসে ফেলেছে সে রাদকে। কঠিন ভাবে।

পেছন থেকে কারোর অস্তিত্ব প্রগাঢ় ভাবে আলিঙ্গন করলো ইলহামের অন্তঃকরণকে। এক নাম না জানা অনুভূতি ক্রমবর্ধমান শিহরণের সৃষ্টি করছে তার সর্বাঙ্গে। মানুষ টা একটু একটু করে কাছে আসছে তার। এই তো, এক্ষনি হয়তো পরম আবেশে মিশিয়ে নিবে তাকে। আর ছাড়বেনা কোনোদিন। হারিয়ে ফেলার ভ/য় যে তাকেও কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। বুকের ভেতরে তোলপাড় করা হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে ইলহাম। ঢিপ ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ করে ছন্দে ছন্দে তাল মিলিয়ে চলেছে তারা।

ঠাস করে কসে একখানা চড় পড়তেই ইলহামের সমস্ত ভাবনাদের ইতি ঘটলো। ইলহাম আঁ/তকে উঠে গালে হাত চেপে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো র//ক্ত চক্ষুতে তাকিয়ে আছে রাদ। ইলহাম তৎক্ষনাৎ ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেললো। তাতে রাদের ভাবাবেগ নিতান্তই শূন্য। তার র//ক্ত ঝলসানো চাহনি পূর্বের ন্যায়ই বিরাজমান। তাকে দেখে ইলহাম বুঝে নিলো আরেকটা চড় তার জন্য ঠিক অপেক্ষা করছে।

—-“এতো সাহস কে দিয়েছে তোকে? কার পারমিশনে বেরিয়েছিস বাড়ি থেকে! একদম ভুলে যাওয়ার ভান করবি না, রাদ তোকে ভালোবাসে। পা/গ/লের মতো ভালোবাসে। আগেও বাসতো। আজও বাসে। নিজের মনগড়া কিছু অনুমান নিয়ে আমাকে হার্ট করার রাইট তোকে কেউ দেয়নি!”

এটুকু বলে থামে রাদ। রাগে অভিমানে গৌর মুখখানা র/ক্তি/ম প্রভায় ছেয়ে গেছে তার। চোখজোড়ায় অনতিপূর্বেই ছোপ ছোপ র//ক্তে/র আবরণ। প্রগাঢ় লালে এখনি যেন ফেটে পড়বে মুখখানা। ইলহামের যে এবার সত্যি বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। ঠিক এই কথাগুলোই যে শুনতে চেয়েছিলো সে। তাহলে, তখন কেন বলেনি যখন সে শুনতে চাইতো? তখন কেন এমন করে ছুটে আসেনি যখন তার সঙ্গই সবচেয়ে বেশি কাম্য ছিলো? কেন ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছিলো, যখন এতো গভীর টান?

ইলহামের নিশ্চুপ ভঙ্গিমা রাদের রা/গে/র আগুনে ঘি ঢালে। রাদ দাঁতে দাঁত চেপে ইলহামের বাহুজোড়া শক্ত করে চেপে ধরে! রা/গের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে অকেজো মস্তিষ্কে ইলহামকে টেনে আনে খুব কাছে। পা/গ/লের প্রলাপ বকতে বকতে সহসা ইলহামকে গভীর ছোঁয়ায় পরাস্ত করে নিজের কাছে। পাগলের ন্যায় এক বি/ষা/ক্ত অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় ইলহামের অন্তঃকরণে, শরীরের অভ্যন্তরস্থে।

—-“কেন!! কেন আমায় এমন করে ভা/ঙ/ছো সুইটহার্ট? তুমি কি জানোনা, আমি তোমায় ছাড়া কতটা অসহায়?”

কপালে কপাল ঠেকিয়ে কাতর কন্ঠে নিজের অনুভূতি গুলো ব্যাক্ত করার বৃথা চেষ্টা করলো রাদ। ইলহাম চোখের জল বিসর্জন দিয়ে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল,

—-“আপনি খুব খা/রা/প জানেন তো! নিজেই আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন! এখন উল্টো অভিযোগ করা হচ্ছে।”

—-“আমি তোমাকে মোটেই দূরে সরিয়ে দেইনি তোমায়। হ্যাঁ, নিজেকে সামলেছি তোমার থেকে। আর যে কোনোভাবেই মায়া বাড়ানোর দুঃসাহস হচ্ছিলো না আমার। নিজের উপর ভয়নাক রা/গ হচ্ছিলো জানো? নিজের বোকামোর ফল নিজে ভোগ করেছি। এখানে কারোর হাত ছিলো না। আর তোমার তো একদমই নয়। ভেতরটা কেবল ছটফট করছিলো একটাবার তোমার কাছে ছুট্টে আসতে। কিন্তু আমি পারিনি। হয়তো.. নিজের করা কিছু বোকামোর ফল এটাই হওয়ার ছিলো। সব দো/ষ আমার, সুইটহার্ট। নয়তো অন্তু…”

এটুকু বলে থেমে গেলো রাদ। ইলহাম ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে। রাদ ইলহামের কান্না দেখে অস্থির হয়ে উঠলো। দু’গালে আলতো করে হাত দিয়ে মুখটা উঁচিয়ে ধরলো।

—-“এই বোকা মেয়ে? কাঁদছো কেন হু?”

—-“রাদ? আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?”

ইলহামের শীতল প্রস্তাবে আকস্মিক জমে গেলো রাদ। তার দৃষ্টি খানা স্তব্ধ কুটিরে আঁটকে গেলো। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো। অন্তঃকরণে কেউ চিৎকার পেড়ে বলল, “আমি ভুল শুনিনি।”

চলবে

[ বিঃদ্রঃ গঠন মূলক মন্তব্য ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here