#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim
~পঞ্চম পর্ব~ [সব চরিত্র গুলো কে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে আমি চরিত্র বাদ দিয়ে নাম দিয়ে লিখছি]
পুষ্পা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো পরি। চোয়ালে শক্ত করে সন্তপর্ণে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকলো পরির দিকে। পরো নার্ভাস ফিল করলো ওর এমন দৃষ্টি দেখে। তোঁতলিয়ে বলে,
–‘পুষ্পা তু-তুমি?’
–‘ভাইয়ার সাথে তোর কি সম্পর্ক?’
–‘ম-মা-মানে?’
–‘ভাইয়া কে হাত করেছিস তাই না?’
–‘পুষ্পা আমাকে ভুল বুঝছো আমি পূর্ণ ভাই…
বলে শেষ করার আগেই একটা চড় পড়লো পরির গালে। মুহুর্তের মধ্যেই চেহারা মলিন আকার ধারণ করলো। মনের আকাশে নেমে এলো ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ বাসায় আসার পর থেকে চড় থাপ্পড় ই কপালে জুটছে। নিচের দিকে দৃষ্টি নত করলো পরি। পুষ্পা দাঁত কিটমিট করে বললো,
–‘এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। আমার ভাই কে জাদু করে আমাদের কে খারাপ বানাবি ভাবছিলি তাই না! লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি তোকে আর কখনো যেনো ভাইয়ার আশে পাশে তোকে না দেখি।’
পূর্ণ কি ভেবে যেনো রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যাচ্ছিলো হঠাৎ ই পরির রুম থেকে পুষ্পার কন্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালো। অতঃপর কান পেতে শুনে পুষ্পার পুরো কথাটা। পরি প্রতি উত্তরে বলে,
–‘তুমি যা ভাবছো তা নয় পুষ্পা। আমার আর পূর্ণ বাইয়ের সাথে ওরকম কিছু নেই সত্যি বলছি!’
–‘ওহ আচ্ছা তাই? তাহলে ভাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছিলি ওটা কি ছিলো? দেখ আমি ছোট বাচ্চা না হ্যাঁ? আমি বুঝি ওসব। আবারো বলছি ভাইয়ার থেকে যত দূরে থাকবি ততই তোর জন্য মঙ্গল!’
তার মানে পরি যখন পূর্ণ কে খাইয়ে দিচ্ছিলো তখন পুষ্পা দেখছিলো!
বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। পুষ্পা আসছে দেখেই পূর্ণ সটকে পড়ে ছিলো। পরি পুষ্পার কথা শুনে থ হয়ে যায়। আসলেই তার মনে এমন খারাপ কোনো চিন্তা ছিলো না। চোখের পানি চিকচিক করছে। এক্ষুনি গড়িয়ে পড়বে যেনো। কষ্ট ছাড়া আর কোনো অনুভূতি তার কাছে নেই এটাই সে জানে।
অন্যদিকে পূর্ণ নিজরে রুমে গিয়ে পানির গ্লাস টা হাতে নেয়। পরির লাস্ট কথা টা বারবার মনে পড়ছে! ‘পূর্ণ ভাই জেঠা জেঠি ইভেন পুষ্পা ও ভাবছে আপনি উনাদের সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণ আমি। প্লিজ আমাকে উনাদের কাছে খারাপ বানাবেন না।’ এই কথাটার মিল খুঁজে পেলো সে এইমাত্র। গ্লাস টা কে রেগে চেপে ধরে আছে সে। রাগ ক্রমশই বাড়তে থাকে আর পূর্ণ রেগে গ্লাস টা কে নিচে ছুড়ে মারতেই গ্লাস টা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে সে রুম থেকে বের হয়ে পুষ্পা কে ডাকে।
–‘কি হলো ভাইয়া?’
–‘তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে!’
–‘[কিছু টা অবাক হয়ে] হ্যাঁ ভাইয়া বলো কি বলবা!’
–‘এখানে না তুই আমার সাথে ছাঁদে আয়!’
–‘মানে কি বলছো এতো রাতে ছাঁদে?’
–‘আসবি কিনা?’
–‘আচ্ছা চলো!’
পুষ্পা পূর্ণের পাশে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন করে যাচ্ছে যে কেন এখানে এসেছে সে। পূর্ণ একদম চুপচাপ। রাগ কন্ট্রোল করতে ব্যস্ত ছিলো সে।
–‘আরে আজব বলবা তো?’
–‘তুই পরি কে কি বলেছিস?’
–‘ওহ খবর পৌঁছে ও দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে? ওকে তো আমি! [রেগে মনে মনে বললো]’
–‘চুপ করে কেন আছিস। উত্তর দে!’
–‘কই ভাইয়া আমি আবার কি বলবো?’
পূর্ণ নিজের কানে যা শুনলো সব বললো। পুষ্পা রিতিমত রেগে আগুন।
–‘আমি চলে আসা মাত্রই ঐ মেয়েটা তোমাকে বলে দিয়েছে তাই না?’
–‘ও আমাকে বলে নি আমি নিজেই শুনেছি!’
–‘মিথ্যা!’
–‘তোর সাথে মিথ্যা বলে আমার কোনো লাভ আছে? কেন এমন ব্যবহার করিস ওর সাথে? ভালো ব্যবহার এক্সপেক্ট করে ও!’
–‘মানে?’
–‘সত্যি করে বল তো কেন পরির সাথে খারাপ আচরণ করিস?’
–‘এটাই তো ওর প্রাপ্য!’
–‘নাহ!’
–‘পরি ভালো মেয়ে না ভাইয়া! আর তুমি ওর হয়ে কথা বলছো?’
–‘কে বলেছে তোকে?’
–‘মা!’
মুখ ফসকে বলে দিলো পুষ্পা।
–‘কি বলেছে?’
–‘ক-কই ক-কিছু না!’
–‘বলতে বলেছি তোকে! নয়তো আমি এক্ষুনি…
পূর্ণের রাগ সম্পর্কে অবগত পুষ্পা তাই বললো,
–‘মা বলেছে পরি তোমাকে হাত করে এই পুরো সম্পত্তির মালিক হতে চায়। মাকে নাকি থ্রেট দিয়েছে!’
পুষ্পা গড়গড় করে তার মায়ের বানিয়ে বানিয়ে বলা মিথ্যে কথা গুলো বলে দিলো। পূর্ণ নিজ মায়ের মিথ্যা বানোয়াট কথা গুলো শুনে চুপসে গেলো।
–‘তোর একবারের জন্যও মনে হয় নি পরি এসব করতেই পারে না?’
পুষ্পা চুপ!
–‘সেজন্য আমাকে না জানিয়ে পরি কে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো বাবা মা?’
–‘হ্যাঁ!’
–‘আফসোস! পরি কে হোস্টেলে দিয়ে দিয়েছে মা। আর তোকে বললো সম্পত্তি হাতিয়ে নিবে? তুই একটু আগে পরি কে যা বললি ও কোনো প্রতিবাদ করতে দেখেছিলি? যদি ওর মনে সত্যি ই এরকম কিছু থাকতো তাহলে সে হোস্টেলে কেন পড়ে থাকতো?’
পুষ্পা আসলেই এটা কখনো ভাবে নি। বিবেক বুদ্ধিহীন মানুষের মতো মায়ের কথা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে মেয়েটা এতোদিন যাবৎ যখনি পেয়েছে কষ্ট দিয়ে এসেছে।
–‘বাবা মা পরির জীবন টাকে তছনছ করে দিয়েছে রে!’
–‘কি বলছো ভাইয়া?’
–‘শুন তাহলে…
এরপর পূর্ণ যা বললো তা শুনে পুষ্পা নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। কথা বলার ভাষা যেনো তার জানা নাই। বাকরুদ্ধ সে। পরি সম্পর্কে এতো বড় একটা সত্যি তার অজানা ছিলো তা কল্পনার বাহিরে! পরির সাথে নিজের করা অন্যায়ের জন্য মুহুর্তেই খারাপ লাগলো। প্রথমে বিশ্বাস হতে চাচ্ছিলো না কিন্তু পূর্ণের কাছে প্রমাণ ছিলো। না চাইতেও বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো। অস্বাভাবিক রকমের এক অনুতপ্ত বোধ কাজ করছে নিজের মধ্যে। এক মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ে কে কিভাবে ইনসাল্ট করলো সে ভাবতেই নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে! তার বাবা মা এমন একটা কাজ করেছে মাথায় ও আসে নি কোনো দিন!
–‘মেয়েটা কে আর কষ্ট দিস না। মায়া হয় আমার ওর জন্য। আর বাবা মা সম্পর্কে যা বলেছি তা কখনো কাউকে বলিস না। কথা দিয়েছিস আমাকে আই হোপ কথা টা রাখবি!’
পুষ্পা সম্মতি সূচক মাথা নাড়াল।
পূর্ণ চলে যায় নিজের রুমে। এতোদিন মনে চেপে রাখা কথা গুলো আজ সে নিজে ব্যতীত দ্বিতীয় জন জানলো আর সে পুষ্পা। বাধ্য হয়েই বলেছে সে। নাহলে নিজের মধ্যে ই রাখতো। বাবা মার উপর পুষ্পার ও ঘৃণা জন্ম নিক চায় নি কখনো। কিন্তু বাধ্য করলো পুষ্পা!
পূর্ণ রুমে স্থির হয়ে বসতেই পারছে না। নিজের মধ্যে ই কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে। তাই আর বসে না থেকে উঠে দাঁড়ায়। রুমের মধ্যে পায়চারী করে কিছু একটা ভাবলো। তারপর পা বাড়ায় পরির রুমের দিকে যাওয়ার জন্য। রুমের সামনে এসে ভাবছে তার যাওয়া আদৌ ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব শেষে রুমে ঢুকল। দরজা টাও লাগায় নি। পূর্ণ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে পরির বেডে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। মুখ টা মলিন দেখেই বুঝা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। আচমকা পূর্ণের মুখ থেকে একটা কথা বেরিয়ে এলো,
–‘স্লিপিং বিউটি!’ উইথ স্মাইল!
(চলবে)
প্রেম প্রিয়জন পরি পূর্ণ পুষ্পা আর আজ পঞ্চম পর্ব! বলছি যে প দিয়ে পাঠক/পাঠিকাগন একটা কমেন্ট ও করে গেলেই তো পারেন তাই না? এতো কিপ্টুস কেন আপনারা?😒