প্রেম প্রিয়জন পর্ব ৪

#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim

~চতুর্থ পর্ব~

পূর্ণ ভাইয়ের কথা গুলো টাষ্কিত হয়ে গেলাম। কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। সারা শরীর ঠান্ডা বরফের মতো হয়ে গেছে উনার কথার কোনো উত্তর দিলাম না অবশ্য উত্তর কি দিবো আমি উনার সরি বলার কোনো কারণ ই খুঁজে পেলাম না। চুপ থাকাকালীন পূর্ণ ভাই আবার বলে,

–‘আমি তোকে না চাইতেও আঘাত করে ফেলেছি তাই বলে তুই সেই রাগ নিজের হাতের উপর ঝারবি বুঝতে পারিনি!’

উনার কথার আগা মাথা বুঝতে একটু সময় লাগলো। আমাকে চড় মারার আমি উনার উপর রাগ করে হাত পুড়িয়ে ফেলেছি মনে করেছে হয়তো। যেভাবে চেপে ধরে রেখে আর কিছুক্ষণ হলে জানটাই চলে যাবে তাই না পারতে বললাম,

–‘আ-মাকে ছাড়ুন। আ-মা-র বিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে!’

কথাটা বলতে দেরি ছাড়তে দেরি হলো না। চোখ উঠিয়ে উনার দিকে তাকাতে পারবো না। এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি তে আগে কখনো পরিনি। দরজা কড়া লাগানো ছিলো না ছাড়া পেতেই আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালাম না। দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসি। আর হাঁপাতে থাকি। এটা কি করলো পূর্ণ ভাই? কেন করলো? এমন তো কখনো করে নি উনি করার কথা ও না! তাহলে আজ কেন করলো? উফ্ কিছু ভাবতে পারছি না।
.
রাতে সবাই খেতে বসলো একসাথে। দাদু কোথায় গেছেন জানিনা। কাউকে জিঙ্গেস করবো তার ও উপায় নেই। এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তিন জন ব্যক্তি ই আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন শুধু মাত্র পূর্ণ ভাই থাকার কারণে কিছু করতে পারছেন না। জেঠা বলে উঠেন,

–‘পূর্ণ আগের মিটিং টা না করে দিয়েছিস এবার আর তা করিস না। কাল আবার একটা কোম্পানির সাথে মিটিং আছে। আর সেটা কক্সবাজারে আই হোপ এবার তুই যাবি!’

–‘ভেবে দেখবো!’

জেঠি মা বললেন,

–‘ভেবে দেখবি মানে কি? তোর বাবা অনেক আশা করে এই বিজনেস টা তোর উপর ছেড়ে দিয়েছে। আর তুই সেটাতেই এতো গ ছাড়া ভাব করলে কিছু হবে পূর্ণ?’

পুষ্পা আর আমি নিরব দর্শক। পূর্ণ ভাই চুপচাপ।

–‘এবার কথা বন্ধ হয়ে গেছে!’

–‘আহা খাও তো তুমি নাজমা ও যা বুঝার বুঝেছে!’

জেঠি পারছেন না সব রাগ থেকে দেন। তাই তো জেঠার কথায় ও থামলো না।

–‘নাহ ও আর আগের পূর্ণ নাই। কেমন যেনো পাল্টে গেছে। সব কিছু তে এখন ও আলসেমি। চোখ রাঙিয়ে কথা বলে আমার সাথে!’

পূর্ণ ভাই আর চুপ থাকলেন না। খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়েন। এত টা সময় ধরে প্লেটের মধ্যে খাবার গুলো আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে. জেঠা জেঠি কথা হজম করতে ব্যস্ত ছিলেন সম্ভবত।

–‘খাবো না আমি!’

চলে যাচ্ছে পূর্ণ ভাই। জেঠা বললো,

–‘এদিকে তো রাগিয়ে। ওকে এখন এসব বলার কি দরকার ছিলো!’

–‘ছিলো দরকার। জানো তোমার ছেলে কেন আমার জন্য এমন করে! এই মেয়ের জন্য!’

আমার দিকে তীর টা আসতেই বেশ চমকে গেলাম। একে একে জেঠা জেঠি আর পুষ্পা খাবার ছেড়ে উঠে গেলো। এখন মনে হচ্ছে আমি সত্যি ই উনাদের সুখের সংসারে কাটা হয়ে আছি। মন টা খারাপ হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যেই!

–‘এভাবে খাবার ছেড়ে যাবেন না প্লিজ খেয়ে যান!’

–‘তুই খা রাক্ষুসী কোথাকার!’

হনহনিয়ে চলে গেলো। পুষ্পার চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। খাবার আর আমার গলা দিয়ে নামলো না। আসলেই কি আমি রাক্ষুসী? আমি তো দূরেই ভালো ছিলাম এখানে নিয়ে আসলো কেন? বিয়ে দিতে? বিয়ে টা ভাঙ্গলো কি করে ছেলে পক্ষ তো দেখতেই আসে নি তার আগেই কেন না করলো? আর পূর্ণ ভাই ই বা আমার বিয়ের কথা জানলো কি করে? নিজে ও হাত ধুয়ে নিলাম। সাথে সব কিছু ধুয়ে রাখতে চলে চলে যাই। ফোসকা পড়া হাতে একটু ব্যথা লাগছে তাও চেষ্টা করলাম। কষ্ট করে হলেও সব কিছু ধুয়ে রাখি। পূর্ণ ভাই খাবার খায় ই নি। আমার জন্য কথা শুনতে হলো তাই খারাপ লাগছে। প্লেট এ খাবার নিয়ে উনার রুমের সামনে যাই। ভেতরে যাওয়ার সাঘস পাচ্ছি না। তাই রুমের বাহিরে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।

–‘ভেতরে আয়!’

গম্ভীর কন্ঠে কথা টা কানে আসতেই চমকে উঠলাম উনি জানলো কিভাবে যে আমি এসেছি? পা টিপে টিপে ভেতরে গেলাম। ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে আছে। ঠিক বসে ও নয় ল্যাপটপে কাজ করছে। ভাইয়ার বসার অবস্থান থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাউকে তো দেখা যায় না। তার উপর দরজা টা বন্ধ ছিলো তাহলে ভাইয়া দেখলো কিভাবে যে আমি এসেছি! অদ্ভুত! ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেন।

–‘কেন এসেছিস?’

–‘বলছিলাম যে খাবার তো কোনো দোষ করে নি। তাই খেয়ে নিন!’

–‘খাবো না। যেভাবে নিয়ে এসেছিস সেভাবে নিয়ে চলে যা!’

আমি আর কথা বাড়ালাম না। চলে যেতে পা বাড়ালেই শুনতে পাই পূর্ণ ভাই বলছেন,

–‘নিজের খেতে পারবো না ইমফর্টেন্ট কাজ করছি তুই খাইয়ে দে!’

–‘কিহহ…!’

চোখ অস্বাভাবিক বড় হয়ে রশোখোল্লার মতো হয়ে গেলো। এটা কি শুনলাম কানে সমস্যা না তো আবার!

–‘আবার কি হলো তোর?’

–‘থাক আপনার মন চাচ্ছে না যখন খাওয়ার দরকার নেই!’

–‘মন চায় নি কখন বললাম তোকে? কষ্ট করে নিয়ে এসেছিস এখন খাইয়ে দে!’

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমি পারবো না। পেটের কথা পেটেই থেকে গেলো। টেবিল টার উপর প্লেট টা রেখে যেতে পা বাড়ালেই ওমনি থমথমে কন্ঠস্বর,

–‘কোথায় যাচ্ছিস?’

–‘চামচ নিয়ে আসতে!’

–‘দরকার নেই হাত দিয়েই খাইয়ে দে।’

ব্যাটা বলে কি রে বাবা! উপকার করতে এসে এভাবে ফেঁসে যাবো ভাবতে পারিনি। আমার উত্তর না পেরে রাগি লুকে আমার দিকে তাকাতেই ভয়ে ঢোক গিলে উনার পাশেই বসি। কাঁপা কাঁপা হাতে প্লেট টা হাতে নেই। এক লোকমা মুখের দিকে বাড়াতেই শান্ত শিষ্ট ছেলের মতো খেতে থাকে। আমি অবাক! শেষে এই দিন টা দেখতে হবে কে জানতো! এতো বড় ছেলে কে কিনা খাইয়ে দিচ্ছি আমি? সত্যি এটা! বিশ্বাস হচ্ছে না। নিজের হাত যথাসাধ্য দূরের রাখারা চেষ্টা করছি। আর উনি চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে পাশাপাশি ল্যাপটপে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর করে ছোট বাচ্চাদের মতো খাচ্ছে যে হা করে তাকিয়ে আছি আমি! তাও নিজের অজান্তে। পূর্ণ ভাই সেটা দেখে ফেলতে চোখ সরিয়ে নেই। লজ্জা লাগছে। দোয়া করছি কখন খাবার টা শেষ হবে। শেষ পর্যায়ে আসতেই পূর্ণ ভাই হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।

–‘আহা খাবার আজকে দারুণ হয়েছে!’

–‘সেজন্য কি আমার হাত ও গিলে ফেলতে হবে রাক্ষুস!'(মনে মনে)

–‘আমি রাক্ষস না জলজ্যান্ত একটা মানুষ!’

–‘মনের কথা আপনি জানলেন কিভাবে?’

–‘এতো জোড়ে জোড়ে বললে শুধু আমি কেন আশে পাশের সবাই শুনতে পাবে!’

ভেঙ্গচি কেটে চলে আসতে নিবো পেছন থেকে উনি ডাকলেন,

–‘পরি!’

পেছন ফিরে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।

–‘থ্যাঙ্কস খাইয়ে দেওয়ার জন্য। সত্যি ই খুব ক্ষুধা পেয়েছিলো!’

–‘থ্যাঙ্কস যদি দেয়ার ই হয় তাহলে বলবো কাল আপনি যাবেন মিটিং এ এটেন্ড করতে!’

–‘কিন্তু..!’

–‘পূর্ণ ভাই জেঠা জেঠি ইভেন পুষ্পা ও ভাবছে আপনি উনাদের সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণ আমি। প্লিজ আমাকে উনাদের কাছে খারাপ বানাবেন না। আমি আপনাদের কেউ নই। বিয়ে হলে চলে যাবো কিন্তু আপনাদের মধ্যে আমার জন্য কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হোক চাই না। তাই অন্তত আমার কথা টা রাখবেন প্লিজ!’

আমার কথা টা শুনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো পূর্ণ ভাই। যথার্থ উত্তর না পেয়ে নিচে চলে আসি। সব কিছু গোছগাছ করে রেখে বেলকনিতে চলে আসি। ভাবছি পূর্ণ ভাই আমার কথা শুনবে কিনা!

হঠাৎ ই পেছন থেকে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পাই। হয়তো পূর্ণ ভাই এসেছে কিছু জিঙ্গেস করতে। কিন্তু আমার তো আর কিছুই বলার নেই। তাই পেছনে না ফিরেই বলতে লাগলাম,

–‘আমি তো সব বলে দিয়েছি তাহলে আবার কেন এসেছেন পূর্ণ ভাই?’

কথা টা শেষ করে কোনো উত্তর পাই না তাই বাধ্য হই পেছনে ফিরতে আর আমার সামনে চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা কে দেখেই ভয় পেয়ে যাই। এটা তো পূর্ণ ভাই নয়! তাহলে কি…..!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here