#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত
#সাদিয়া_নওরিন
পর্ব—-১৮
তিমির রাত্রির স্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্তে। ডাহুকও ডাকছে দূরে কোথাও।কেবল তার মিহিস্বরই শোনা যাচ্ছে আবছা৷ জানালার গা এলিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিঁয়ে আছে ইরশাদ। আলোছায়ার আবছা খেলা করছে তার চোখে মুখে। মুখে বিষন্নতার ছাপ।অশ্রুর সুক্ষ্ম ধারা গড়িয়ে পড়েছে তার চিবুক ছুঁইয়ে, যা কেবল তার মনের অজান্তেই! সে তাকিয়ে আছে বাইরে। কিন্তু তার হৃদয়, এ যেন শত কষ্টে দগ্ধ হচ্ছে!
আচমকা ইরহাম আর সাগরের হাসাহাসি শব্দে ঘোর কাটলো তার। কিছু একটা বলে খিলখিলিয়ে একজনের গায়ের উপর অন্যজন গড়িয়ে পড়ছে তারা৷ ইরশাদ সেদিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে, তাদের অলক্ষ্যেই অশ্রুটুকু মুছে ফেলল।তারপর ইরহামের দিকে তাকিয়ে মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—– ভাইয়া আপনার সাথে আরশীর মিট টা হলো কিভাবে?
ইরহাম মুচকি হেঁসে তাকালো তার দিকে।তারপর বিছানায় পা ছড়িয়ে বসতে বসতে বলল,
—– এতোক্ষণ সাগরকে বলতেছিলাম এইসব৷ আসলে ও আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। মেয়ে লক্ষী,ভদ্র। তাই আর কি আমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।আর তাছাড়া
—–থাক ভাইয়া, আপনি খুশিতে আছেন আলহামদুলিল্লাহ। আর বাকি টা না হয় পড়ে শুনবো। কাল ৪.৫০ এ ট্রেন সো আর্লি ঘুমাতে হবে এখন।
ইরশাদ কারো জবাবের অপেক্ষা না করেই পা টানটান করে শুয়ে পড়লো। তারপর একপাশ হয়ে শুয়ে চোখের ওপর হাত রাখলো সে! যাতে তার আঁখি গড়িয়ে বেরিয়ে আসা অশ্রু দৃষ্টিগোচর হয় সবার। অন্যদিকে ইরশাদের এমন ব্যবহার হালকা অবাক হলো ইরহাম৷ হুট করেই অর্ধেক কথায় থামিয়ে দিল কেন তাকে তা ভেবেই যেন মনঃক্ষুণ্ন হলো তার!
সাগর লাইট বন্ধ করতে উঠে দাঁড়িয়ে আবার কিছু ভেবে পিছনে ফিরে এলো!তারপর পরম বিষ্ময়ে বলল,
—- ইরশ, ত্রিকোয়াটার পড়লি না যে! তোর তো লম্বা পেন্ট পড়ে শুতে কষ্ট হয়।
—– এইটা আরামদায়ক তাই পড়লাম। এখন লাইটটা অফ কর। চোখ জ্বালা করছে আবার।
সাগর আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো তার পাশে।আর ইরশাদ চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিল৷ চোখ দুটো কান্না আঁটকে রাখায় অসম্ভব লাল দেখাচ্ছে তার এখন। সে মনে মনেই বলে উঠলো,
” হয়তো আমার অস্তিত্বের ছাপ নেই তোমার শহরে, কিন্তু আমার শহর জুড়ে কেবল তোমারই আনাগোনা! তোমার কন্ঠ নিসৃত ধ্বনি আমার কাছে অঙ্গীকারনামা।কিন্তু আফসুস, আমার বুকভরা চিৎকার কেবল তোমার জন্য কিছু মূল্যহীন ধ্বনি!”
পরদিন সবার সকাল হলো সাড়ে এগারোটায়! আরশী ঢুলুঢুলু চোখে ফোনের দিকে তাকাতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসলো। ইশ্ সূর্য মাথার উপর পৌঁছে গেছে আর তারা কিনা নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে! সে তাড়াতাড়ি বন্যাকে ডেকে গোসল করতে ডুকে পড়লো।আর বন্যা ফোনের দিকে তাকিয়ে ডোন্টকেয়ার ভাব করে আবার চোখ বুঝলো!
গোসল সেরে বেরিয়েছে ইরশাদ।পেটের ভেতরটা খিদায় জ্বলছে তার। গেস্টিকেরও হালকা সমস্যা হচ্ছে মনে হলো তার। আর তাই সে সার্জেল একটা করে খেয়ে নিল সাথে সাথেই।তারপর চুল সেট করায় লেগে গেলো।
নিজের রূমের সবাইকে ডেকে তিতাসের রুমে নক করলো ইরশাদ। কিছুসময় নক করার পর ঘুম ঘুমু চোখে দরজা খুলে, চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো তিতাস,
—– ইয়ার, এতো সকাল সকাল ক্যান? এখনো সূর্যমামা ও উঠে নি!
—– সূর্যমামা উঠে মামির সাথে রোমান্স করতে করতে দুনিয়া সহ গরম করে তুলেছে।বাইরে চক্ষু নিক্ষেপ করে দেখ বন্ধু। বেলা ১২টা বাজে। ইউ আর টু লেইট। তবে তুমি চায়লে আজকের দিনটাও হোটেলে রোমান্স করে কাটাতে পারবে তোমরা।আমরা দিল্লি ঘুরে আসি।
সাথে সাথে বিস্ময়ে হা হয়ে গেল তিতাসের চোয়াল। সে তাড়াতাড়ি বাইরের দিকে তাকিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল! ইরশাদের এবার বড্ড হাসি পেল। এতোসময় খালিগায়ে কেবল ত্রিকোয়াটার পড়ে দাঁড়িয়ে ছিল এইটা যেন হুট করেই মনে পড়ে গিয়েছিল তিতাসের।
গোসল শেষ করে বেরিয়ে ঘুমন্ত তিশার মায়াবী মুখটির পানে তাকালো তিতাস। মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়লো তার চোখেমুখে! উজ্জ্বল শ্যামলা মানুষগুলোর চেহারায় যে অদ্ভুত মায়াবী রূপ থাকে তা অনেক সময় দুধে-আলতা গায়ের রংয়ের মেয়েটির চেহারায় ও যেন দেখা মিলে না। লম্বা ঘন পাপড়ির যুক্ত চোখদুটি যেন মায়ার সাগর যার দিকে তাকালেই তিতাস হারিয়ে যায় অতলে! আর তসর মুখমণ্ডল!
আরো গভির দৃষ্টিতে তিশাকে দেখতে থাকে তিতাস। চিকন খাড়া নাকটির নিচে মাঝারি সাইজের ঠোঁটটি তিতাসকে যেন সবসময়ই কাছে টানে। আর তিশার মনটা অতিরিক্ত স্বচ্ছ যা তিতাসের কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি বলে মনে হয়।
পেটের ওপর কারো গভীর স্পর্শ আর ঘাড়ের ওপর কারো গরম নিশ্বাসে ঘুমের মাঝেই কেঁপে উঠলো তিশা। কিন্তু স্পর্শ টা যে বড্ড চেনা তার। আর তাই একইভাবে চোখ বুঝে রইলো সে। হঠাৎ ঘাড়ে ঝড়োবেগে আদরে মিইয়ে বিড়ালের বাচ্চার মতো কুই করে উঠলো সে। তিতাস সেইভাবেই গভীর চুমু কাটতে কাটতে আদুরে স্বরে বলল,
—- উঠ না।
“ওহুম” তিশার ঘুমুস্বরে উত্তর৷ তিতাস আরেকটু গভীরভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,
—- বেলা সাড়ে বারোটা বাজে।
তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো তিশা৷ তাড়াতাড়ি সিথানের কাছে রাখা মোবাইলটির দিকে তাকিয়ে নাক ফোলাল সে৷ আর তা দেখেই ফিক করে হেঁসে দিল তিতাস৷ তিশা সেদিকে তাকিয়ে আলতোভাবে হতাশজনক মাথা ঝাঁকিয়ে লম্বা চুলগুলো খোঁপা করে নিল। তারপর ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে করতে বলল,
—– এতো দেরি, মানুষ কি ভাবছে আমাদের। ওফ, একদম কমন সেন্স নেই তোমার।
—- আমি তো তোমাকে দেখলেই সেন্সলেস হয়ে পড়ি জানে মান। তো কনমসেন্স টা কোথায় পাব?
—– একদম বাটার লাগাবে না আমায়।
মুখে মেকি রাগ ঝুলিয়ে বলল তিশা। তিতাসের বলা কথার প্রভাব একটমই মুখে প্রকাশ করলো না সে ।বরং ” ইশ কি ভাবছে আমায় লোকটি! তা বলতে বলতে ওয়াসরুমে প্রস্হান করলো সে।
গোসল শেষ করে শীতল টাইলসে পা রাখতেই স্তব্ধ হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো তিতাস! তার সামনে নীল-কালো কম্বিনেশনের শিপনের শাড়ি পড়ে চুল আঁচড়ে চলছে একটি মেয়ে! তার দিঘল কালো চুলগুলো হাঁটু ছুঁইছুঁই, যার মাঝে গড়িয়ে পড়া জলবিন্দুকে লাগছে মুক্তোসরুপ । আর তাছাড়া পার্ফেক্ট সেইপের শরীরটি যেন আরো পার্ফেক্ট লাগছে আজ শাড়িতে!
আজ তিতাসের খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,
” কে বলেছে শ্যামবর্ণ কন্যাকে নীলে মানায় না? কে বলেছে ফর্সা মেয়ের জন্যই কেবল গাড় রংগুলো বরাদ্দ? যে বলেছে হয়তো তার চক্ষু নেই। অথবা চক্ষুদৃষ্টিতে মানুষকে পরখের শক্তিই নেই। অন্যথা সে জানতো। শ্যামবর্ণ কন্যাকে নীলে নীল কাদম্বরীর মতো মনে হয়! তাকে মনে হয় বর্ষার আগে নীলের ওপর কালো মেঘের আনাগোনার সেই আকাশটির মতো যা শিল্পীর তুলিতে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ফুটে উঠে!”
আচমকা তিতাসের দিকে চোখ পড়লো তিশার। তিতাসের গভীর দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলো যেন সে! তারপর লাজুক হাসি মুখে ঝুলিয়ে আড়ঁচোখে তার দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করে বসলো সে,
—- কি দেখছো গো?
—- তোমাকে!
তিতাসের ফিসফিসানো স্বরে কেঁপে উঠলো সে। আর তার কম্পন অনাবিল খুশি দোলা দিয়ে গেল তিতাসের মনে।
_______
বেলা একটা বেজে দশ, তারা সবাই ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ দুটোই করতে বসেছে।তারা একটি মুসলিম হোটেলে ডুকেই কর্নারের একটি সিটে বসে পড়লো। এখানের খাবারগুলো কেমন মিষ্টি মিষ্টি মনে হলো তাদের।তারা থালি সিস্টেমেই খাবার নিল এবার৷ সবাই থালি শেয়ার করে খাবে। ইরশাদ আঁড়চোখে তাকালো আরশীর দিকে। হলুদ লাল মিক্স ত্রিপিস পড়েছে আজ সে। কানে কাঠের দূল। তাকে দেখে যেন একটি গানই মাথায় ঘুরছে ইরশাদের,
” হলুদিয়া পাখি সোনার বরণ, পাখিটি ছাড়িলো কে?”
আসলেই এই হলুদিয়া পাখিটি তার নয়। আর না সে কখনোই তার রানী হতে পারবে। মনের অজান্তে আবার চোখ জ্বালা দিয়ে উঠলো তার। সে আলতো মাথা নুইয়ে নিজের খাবারে মন দেয়।
আরশী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আজ ইরশাদকে। বিশেষ করে ইরশাদের হাতের দিকে যেন বারবার নজর পড়ছে তার। ফর্সা লম্বাটে আঙ্গুলগুলি থেকে তার যেন চোখ ই সরছে না! দুআঙুলে রুটি ছিঁড়ে ডালে ডুবিয়ে মুখে পুরার দৃশ্যটিও যেন অপরুপ ঠেকছে আজ আরশীর চোখে!
হঠাৎ চোখাচোখি হলো দু’জনের৷ আড়ষ্টভাব কাটিয়ে শুভদৃষ্টি ঘটলো যেন দুটি চোখের! সময়টাও যেন থমকে গেল তাদের। কিছুক্ষণের জন্য ডুবে গেল তারা দুজনাতে!
ইরহাম আচমকা একনলা খাবার তুলে দিল আরশীর মুখে! আরশী অবাক চোখে তাকালো তার দিকে! কিন্তু ইরহামের মুখে ঝুলছে আত্মতৃপ্তি! নিজের হবুবৌয়ের সাথে কাটানো এ মুহুর্ত যে বড্ড অমূল্য তার! ইরশাদ সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,
—- ৪.৩০ এ ট্রেন।আর এখানেই ২ টা বাজছে।তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে ব্যাগ গুছিয়ে নেমে এসো সবাই। দেরী হয়ে গেলে ট্রেন মিস করবো।
সবাই আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলো আর তারপর চটজলদি খাবার শেষ করে উঠে পড়লো।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এম্বাসেডর কমলা রঙের দুটি ট্যাক্সি ভাড়া করলো তারা। তারপর দুইটি ট্যাক্সি চেপে শিয়ালদহ রেলস্টেশনের পথে রওনা দিল। ঠিক চারটায় তারা স্টেশনে এসে পৌঁছালো। কমলা আর ক্রিম রঙের বিল্ডিং এটি। তারা তিনতালায় উঠে গেল। মূলত তিনতালাতেই টিকেট বুকিং ও ইনফরমেশন কাউন্টার। যদিও ইরশাদ প্রথমেই টিকেট কেটেছে তবুও তারা আরেকবার চেক করে নিল।
তাদের ট্রেনের নাম রাজধানী এক্সপেস। এটি দিল্লি টু কলকাতা আর কলকাতা টু দিল্লি চলাচল করে। যেহেতু ওরা সময়মতো এসেছে তাই তাদের ট্রেনটি তারা সামনেই দেখতে পেল। আর তারপর সবাই আবার দল বেঁধে উঠে পড়লো ট্রেনে।
ট্রেনটি পুরোটা স্লিপার কোচের।আর তাদের টিকেট অনুসারে তারা এসি এ ক্লাসে। ইরশাদ আনমনে কিছু ভাবলো। তারপর বলল,
—- যেহেতু আমরা ক্যাবিন পায় নি। আর দুইটো সিট একটু দূরে অন্যজায়গায় পড়েছে। আমরা পাঁচজন এখানে থাকি। আর ক্যাবিনে যেই দুটি সিট আছে ঐ দুটি তিতাস আর তিশা নিক।
সবাই সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকালো। যার অর্থ তাদের সমস্যা নেই।
ঠিক তখনি আবার কিছু ভেবে বলে উঠলো ইরশাদ,
—– অন্যদের সাথে ক্যাবিন শেয়ার করতে প্রবলেম হবে না তো তোদের?
তিশা আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে মুচকি হেঁসে তাদের জন্য বরাদ্দ ক্যাবিনের দিকে হাঁটা দিল।
এখানে মূলত ছয়টি সিট আছে। দুইটি উপরে আর চারটি নিচে। ইরশাদ একপাশে উপরে উঠে পড়লো আর তার দেখাদেখি আরশীও আরেকপাশে উপরের সিটে চড়ে বসলো। অন্যদিকে বন্যার পাশের সিটটা দখল করে নিল সাগর।আর ইরহাম তার পাশের সিট টি নিল। বাকি জিনিসপত্র তারা খালি সিটটিতে রেখে দিল।
ঠিক ৪.৫০ ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করলো। দিল্লি পৌঁছাতে আঠারো ঘন্টা সময় লাগবে তাদের। ইরশাদ আর আরশী একসাথে আড্ডা দিতে নিচে নেমে এলো। ঠিক একটু পরই তাদের দেওয়া হলো বিকেলের নাস্তা। একটি কচুরী, একটি কেক আর ডাল ভাজা। আর সাথে চায়ের সরঞ্জাম তো আছেই। তারা চা খেতে খেতেই গল্প চালিয়ে গেল।
সূর্য ডুব দিয়েছে দিগন্তে। লাল আভা ছড়িয়ে পুরো আকাশটিতে রক্তিমবর্ণ ধারণ করে আছে৷ ইরহামের শরীরটা হুট করেই ম্যাচম্যাচ করতে লাগলো আর সে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো তার সিটে। অন্যদিকে এক সিটে বসেই বন্যা আর সাগর ঝগড়ায় ব্যাস্ত! ঝগড়ার মূল বিষয়বস্তু হলো বন্যার মতে কলকাতায় সবকিছুই এক্সপেন্সিভ। অন্যদিকে সাগরের মতামত, জিনিস যেইটা ভালো দাম তার একটু বেশী। আর এখানের জিনিসগুলোও ভালো। কথা একপর্যায়ে নাকফুলিয়ে বলে উঠলো বন্যা,
—– একটা ট্রেনের সিট ১৮০০ রুপি দাম! তাও আবার ক্যাবিন ও না।
—- তো তিনবেলা খাবার দিবে। থাকতেছিস৷ এর থেকে কম কিভাবে হবে বল?
বন্যা দাঁতে দাঁত চেপে আরো কিছু বলতে গেল যা কর্ণস্পর্শ করলো না আরশীর! সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরশাদের পানে!
সূর্যের লাল রশ্মিতে যেন আজ আরো মায়াবী লাগছে ইরশাদকে যেন চোখই সরে না! আচমকা “খ্যাক” শব্দ তুলে উঠে দাঁড়াতে নিল ইরশাদ। আর সাথে সাথেই নিজের সবটা সাহস জুগিয়ে খপ করে তার হাতটি ধরে ফেলল আরশী!
স্তব্ধ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আরশীর দিকে তাকিয়ে আছে ইরশাদ৷ সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার!তাকে ধরে রাখা হাতটির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে, আবার আরশীর মুখের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো সে! আরশী যেন কথার মালা সাজিয়ে রেখেছে আজ! সে ভনিতা না করেই বলে উঠলো,
—– নিজের স্বামীর হাত যেকোন বৌ ধরতে পারে৷ আর আমার কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।
ফিক করে হেঁসে উঠলো ইরশাদ! মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলছে তার! আরশী সেদিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাতেই ইরশাদ সেইভাবেই হাসি মুখ করে বলল,
—- এক্সকিউজ মি মিস.. আপনার হবু হাসবেন্ড দূরে গেলেই বুঝি আমার কথা মনে পড়ে আপনার?
—- ইরশাদ!
—- ওয়েট আ মিনিট। আপনি হুট হাট আমার ওপর অধিকার দেখাতে পারেন না৷ কারণ আমি যাকে বিয়ে করেছিলাম তার নাম ছন্দ রহমান।আর পিতার নাম মোহাম্মদ রহমান৷ আর আপনি?
নাক ফুলিয়ে বাইরের দিকে তাকালো সে! তারপর বলল,
—- আপনি আরশী মেহতাব। পিতার নাম আই ডোন্ট নো।
আরশী মরিয়া হয়ে কিছু বলতে মুখ খুলতেই অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকালো ইরশাদ!দৃষ্টিতে আগুন ঝরছে যেন তার! সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—- আমাকে আপনার বান্ধবী প্রিয়া আপনার সত্যতা ভালো ভাবেই বলেছে কেবল আমিই তখন বিশ্বাস করতে পারি নি তাকে। যদিও পরে পস্তালাম ও। সুতরাং আর নাটক করবেন না আমার সামনে
সটানভাবে দাঁড়িয়ে গেল সে। তারপরে পেছনে না তাকিয়েই বলে ফেলল,
—- প্লিজ আবার বলবেন না প্রিয়াকেও চিনেন না আপনি।আপনাদের অনেক পিক দেখিয়েছে সে আমাকে।যদিও তাকে বিশ্বাস না করার মূল্যও আমি এতো বছর ধরে দিচ্ছি! সাথে নিজের বোকামীর জন্য আফসুস ও।
ইরশাদ উঠে গেল নিজের সিটে।আর আরশী ভগ্ন হৃদয়ে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে!
চলবে