‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-১৬|
~সুনেহরা শামস
.
.
প্রেম আর প্রাঙ্গণের মা দুজনেই মুখোমুখি বসে আছেন।প্রেমের মুখে হাসি,,আর প্রাঙ্গণের মায়ের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।সামনেই প্রাঙ্গণ আর সাহিল দাঁড়িয়ে,,সাহিল আপাতত এই দুজন মানুষের মধ্যকার বিষয়টা বোঝার চেষ্টায় আছে।কিন্তু প্রাঙ্গণের দৃষ্টি,ধ্যান-ধারণা সব প্রেমেতে নিবদ্ধ যে নাকি এখন আইজা রুপে বসে আছে।সেই আইজার মতোই পাকিস্তানি কামিজের উপর চুলগুলো বেণুনি করা।প্রাঙ্গণ চোখ তুলে তাকায় তার মায়ের দিকে,,ঠোটের হাসি আরো প্রশস্ত হয়।সে জানত,এমন কিছুই হবে।
“কি হয়েছে আম্মা?আমার দিকে এভাবে চেয়ে আছেন কেন?”
প্রাঙ্গণের মা,,রুবিনা উপরে চোখ তুলে আইজারুপী প্রেমের দিকে তাকায়।তার চোখ এখন জলন্ত অগ্নিকুণ্ডর মতো লাল হয়ে আছে,,ভেতরে এখন তার আগুনের মতো দাউদাউ করছে।তিনি এখনও ভাবতে পারছেন না যে মৃত একজন মানুষ কিভাবে আবার জীবিত হয়।আর এখন সে প্রাঙ্গণের সাথেও থাকছে,,তার মানে তারা বিয়ে করে নিয়েছে??রুবিনার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে।দেড় বছর আগে আইজা মারা যাওয়ার পর কত চেষ্টা করেছিল প্রাঙ্গণকে বিয়ে দেওয়ার কিন্তু প্রাঙ্গণ তো নাছোড়বান্দা সে বিয়েই করবে না।আজ যদি প্রাঙ্গণকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারত তাহলে হয়তো এই মেয়ে কিছুই করতে পারত না।
“কি হলো আম্মা?কথা বলছেন না কেন?”
“কে তোর আম্মা?আর এই দেড় বছর পর তুই কোথা থেকে উদর হলি?মরেই তো গিয়েছিলি তাহলে আবার কেন এসেছিস?”
“মা!”
প্রাঙ্গণের ভীষণ রাগ হচ্ছে,,তার মা যে এমন ভাবে প্রেমের সাথে কথা বলবে সে জানত না।এখন তো আরো বেশী রাগ হচ্ছে কারণ সে তো আইজাকেই এভাবে বলছে,,যা প্রাঙ্গণের একদমই সহ্য হচ্ছে না।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে থাকে সে।
প্রেম রুবিনার কথাটুকু শুনে চোখ বন্ধ করে ফেলে।এভাবে তাকে কেউ কখনো বলেনি।আর তুই-তুকারি তো দূরের কথা।প্রেমের মন চাচ্ছে এই মহিলাকে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দিতে।
“আচ্ছা একজন খুনি হয়ে কিভাবে আপনি এতো দেমাগ দেখান আম্মা?”
রুবিনা এবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে।কিভাবে এই মেয়ে তাকে কথা শুনাচ্ছে।যে নাকি আগে মিনমিনিয়ে তার সাথে কথা বলত।
“তোর সাহস দেখে তো আমি অবাক হচ্ছি,,আগে তো তুই এমন ছিলি না”
সামনের টেবিলে হাত দিয়ে বাড়ি দিয়ে প্রেম বলে উঠে,,
“আগে এমন ছিলাম না কারণ আগে প্রে…”
“আইজা আইজা,চলো তো আজকে তোমার হাতের পুডিং খাব,,চলো চলো”
প্রেমের মুখ চেপে তাকে নিয়ে কিচেনের দিকে রওনা দেয় সাহিল।এদিকে প্রাঙ্গণ হাফ ছেড়ে বাচে।আরেকটুর জন্য আসল কথাই বলে দিতে নিয়েছিল প্রেম।এত প্ল্যানিং তাহলে তো সব জলে যেত।
প্রাঙ্গণ তার মায়ের দিকে তাকায়,,তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে ফুসতে ফুসতে কিছু একটা ভাবছেন।প্রাঙ্গণ মুখ চেপে হাসে,,তার মায়ের এই রুপ দেখলে তার ভীষণ হাসি পায়,,ভীষণ রকমের!
~~
“উফফ বাবা বাচলাম,আরেকটুর জন্য তো কেস খাইয়ে দিতে তুমি”
“ঐ শাকচুন্নি মহিলাকে তো আমি ছাড়ব না,,,ছাড়ো আমাকে সাহিল!!”
সাহিল এত শক্ত করে ধরার পরও প্রেমের সাথে পেরে উঠছে না।প্রাঙ্গণের মাকে এক এক কথা বলছে আর মোচড়ামুচড়ি করছে।সাহিল এবার প্রেমকে ধরে ঝাকি দেয়।
“প্রেম প্রেম,,রিলাক্স!এমন করছ কেন?”
প্রেম মোচড়াতে মোচড়াতে বলে উঠে,,
“এই মহিলার এত সাহস কি করে আমাকে তুই-তুকারী করে বলার?যেখানে আমার বাবা-মা আমাকে তুই করে কখনো ডাকেনি।আর কেমন মেয়ে সে?যে একজন মৃত মানুষকে এভাবে বলে?”
সাহিল প্রেমকে ধরে চেয়ারে বসায়।উঠতে নিলে এবার ধমক দেয়।প্রেম মুখ ফুলিয়ে আবার চেয়ারে বসে পড়ে।সাহিল প্রেমের সামনে হাটুগেড়ে বসে,,
“দেখ প্রেম,,সে যেমন তাকে তেমনই থাকতে দাও,,আমরা তো আর তাকে বদলাতে পারি না তাই না?এখন আমাদের লক্ষ্য যেটা সেটা পূরণ করতে হবে।তাছাড়া আমাদের লক্ষ্য পূরণ হলে সে এমনিতেই শাস্তি পাবে,,সো চিল!”
প্রেম এবার একটু শান্ত হয়।মনে মনে ঐ মহিলাকে অনেক কিছু বলে ফেলে সে,,একটু পর সাহিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,
“আচ্ছা সুহা কোথায়?”
সাহিল চিন্তিত স্বরে বলে উঠে,,
“কি হয়েছে ওর আমি নিজেই বুঝতে পারছি না,,কেমন চুপচাপ থাকে,,কম কথা বলে।খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মতো করছে না।”
“ওহ,”
প্রেমও লক্ষ্য করেছে সুহাকে,,কেমন যেন হয়ে গেছে ও,,সে জিজ্ঞেস করলেও বলব বলব বলে আর বলেই নি।প্রেম সাহিলের দিকে চেয়ে বলে উঠে,,
“আচ্ছা,,এখন কি করব আমরা?”
“এখন আমাদের মনে হয়ে আর কিছু করা লাগবে না,,ঘুঘু এমনেই ফাদে পা দিবে”
বাকা হাসি দিয়ে কথাটুকু বলল সাহিল।এদিকে প্রেম বেকুবের মতো বসে আছে। ঘুঘু কোথায় পেল?
~~~
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে।প্রাঙ্গণ বেডে শুয়ে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে।রুবিনা অনেক আগেই এ বাড়ি থেকে বিদায় নিয়েছে,,হয়তো পালিয়েছে!প্রেম মাত্রই জামা-কাপড় চেঞ্জ করে ঘরে ঢুকে।ঘরে এসে প্রাঙ্গণকে দেখে একটু অবাক হলেও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না সে।জামা-কাপড় সব গুছিয়ে রাখবে এমন সময় প্রাঙ্গণের কথা কানে আসে তার,,
“জামা চেঞ্জ করলে কেন?”
“তো ওগুলো পড়ে বসে থাকব নাকি?”
“ঐ জামাগুলো পড়ে থাকতে কি কোনো সমস্যা ছিল?”
“আমি ঐসব জামায় অভস্ত্য নই”
“ওহ”
তারপর আর কোনো কথা বলে না প্রাঙ্গণ।প্রেমও চুপ হয়ে যায়,,কি বলবে?সে তো জানে,নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখে প্রাঙ্গণের হয়তো ভীষণ ভালোলাগছিল।কিন্তু তাতে তার কী?যেখানে নিজের প্রাপ্য অধিকার সে পাচ্ছে না সেখানে আরেকজনের চিন্তা করা অসম্ভব।
.
ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।সবাই বলতে প্রেম,সুহা,সাহিল,প্রাঙ্গণ,শম্পা।প্রেমের মোটেও খেতে ইচ্ছে করছে না,,কেন জানি খাবার গলা দিয়ে নামছে না।তবুও সে খেয়েই যাচ্ছে।এদিকে সুহা খাবার মুখেই দিচ্ছে না,,খাবারের দিকে চেয়ে আছে,,মাঝে মাঝে মুখ বাকাচ্ছে।এসব কিছুই খেতে খেতে লক্ষ্য করছে প্রাঙ্গণ।বিষয়টা ভালো লাগল না প্রাঙ্গণের।
“সুহা,,এনিথিং রং?”
সুহার ধ্যান ভাঙে।প্রাঙ্গণের দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখ করে বলে উঠে,,
“কই কিছু না তো”
“তাহলে তুমি খাচ্ছো না কেন?”
“আসলে আমার খেতে মন চাইছে না।আচ্ছা আমি গেলাম সাহিল,,হুম?”
সুহা খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।এদিকে প্রেম আর সাহিল হা করে চেয়ে আছে সুহার দিকে,,এই পেটুক খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল?বিশ্বাস করতে পারছে না।যেই মেয়ে নিজের মামার মৃত্যুবার্ষিকীতেও এক হাড়ি খিচুরি খেয়েছিল সে আজ না খেয়ে উঠে গেল?
“ওকে আগামীকাল ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবি সাহিল।”
সাহিলও চিন্তিত হয়ে পড়ে,,কি হয়েছে সুহার??
~~~
রাত প্রায় ১২টার কাছাকাছি।প্রেম বারান্দায় বসে আছে,,আর ভাবছে কি এমন শত্রুতা হতে পারে প্রাঙ্গণের তার বাবার সাথে?আচ্ছা প্রাঙ্গণকে কি তার বাবা চেনে?সে কী প্রাঙ্গণের কোনো ক্ষতি করেছিল আগে?প্রেম বুঝে উঠতে পারছে না।এদিকে প্রাঙ্গণের আচরণ আবার পরিবর্তন হচ্ছে।আগের মতোই প্রেমকে এড়িয়ে চলছে সে,,মাঝে মাঝে তো প্রেমকে দেখেও না দেখার ভান করছে।প্রেম তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়,,নিজের কাজ আদায় করা শেষ তাই এখন তাকে পাত্তাও দিচ্ছে না।আসলেই সবাই স্বার্থপর,,সবাই!
“রুমে আসো,,বাইরে ভীষণ ঠান্ডা”
প্রেম শুনে,,প্রাঙ্গণের মাঝে মাঝে এইসব কথাগুলো এখন তার কাছে আদিক্ষেতা মনে হয়।কেন জানি বিরক্ত লাগে এসব,,অন্যসময় হলে প্রেমের এই কথাগুলোই মধুময় লাগত।কিন্তু আজকে যেন সবকিছুই বিষাক্ত লাগছে তার কাছে।
“হোয়াট হেপেন্ড,,কিছু একটা বলেছি শুনোনি?”
“আমার যখন মনে চাইবে আমি আসব,,আপনার কি তাতে?”
প্রাঙ্গণ রুমে বসেই ভ্রুকুচকে তাকায়,,এভাবে কথা বলছে কেন প্রেম তারসাথে?প্রাঙ্গণ কিছুক্ষন ভাবে,,তারপর এগিয়ে যায় বারান্দার দিকে।শান্তসুরে বলে উঠে,,
“শুধু শুধু নিজের গায়ে অসুখ কেন বাধাবে?ঘরে আসো ফাস্ট!”
প্রেম তবুও একপা-ও নড়ে না।যেদিকে ছিল সেদিকেই দাঁড়িয়ে থাকে।প্রাঙ্গণ এবার কাছে এসে একটানে প্রেমকে কোলে তুলে নেয়।প্রেম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না,,যেন সে এটাই চাইছিল।প্রাঙ্গণ বুঝেও কিছু বলে না।প্রেমকে বেডের উপর বসিয়ে চলে যেতে নিলে প্রেম হাত টেনে ধরে,,,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“ঘুমিয়ে যাও,,একটু পর আসছি।”
“কেন?”
“তোমাকে বলতে বাধ্য নই”
“তাহলে কি আইজাকে বলতে বাধ্য আপনি?”
“যে নেই তাকে নিয়ে কোনো তর্ক করতে চাই না”
“আজকে আমার সাথেই আমার পাশেই ঘুমাবেন আপনি।”
“তোমার পাশেই তো ঘুমাই,,তাহলে?”
“কিন্তু দুরুত্ব বজায় রেখে”
প্রাঙ্গণ এবার ঘুরে তাকায় প্রেমের দিকে।নিচু হয়ে প্রেমের দিকে মুখ রেখে বলে উঠে,,
“কাছে আসলে তুমি কিন্তু আমার থেকে রেহাই পাবে না প্রেম।”
“যদি বলি রেহাই চাই না?”
“তাহলে আমার কাছেই মরতে হবে তোমার”
“যদি বলি আমি রাজি?”
প্রাঙ্গণ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এখন বুঝতে পারছে যে সে কতবড় ভুল করেছে।অন্তত কাউকে ব্যবহার করে প্রাঙ্গণ ঠিক কাজ করেনি,,যার ফলাফল এখন তাকে পেতে হচ্ছে।আসলে “মানুষ যাকে ভালোবাসে তাকে পায় না আর যে তাকে ভালোবাসতে পারে তার প্রতি ভালোবাসা আসেনা।” এটা বোধহয় প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ম।
“শুয়ে পড়ুন না প্লিজ”
প্রাঙ্গণ দ্বিতীয়বারের মতো দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,,গিয়ে পাশে শুয়ে পড়ে প্রেমের।প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর প্রেম গুটিশুটি মেরে প্রাঙ্গণের বুকে লুকিয়ে পড়ে,,চুমু খায় তার বুকে।প্রাঙ্গণ নিশব্দে সব ধারণ করে নেয়,,অদ্ভুত ঠান্ডা বাতাস তার ভেতর দিয়ে বয়ে যায়,,আচ্ছা ভালোবাসার ছোয়া কি এমনই হয়??
‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-১৭|
~সুনেহরা শামস
.
.
বাড়িতে নানারকমের খাবারের আয়োজন চলছে।পূর্বা এসেছে বাড়িতে,,তিনিই মূলত এসবের আয়োজন করছেন।সাহিল একটু পর পরই বাচ্চাদের ঝুনঝুনি নিয়ে শব্দ করছে,,এদিকে প্রেম একটু পর পরই সুহার সামনে এসে ঘুরঘুর করছে আর কি লাগবে তার জিজ্ঞেস করছে।এদিকে প্রাঙ্গণ শুধু এদের কাহিনী দেখেই যাচ্ছে ঠোঁটের নিচে আঙুল দিয়ে।এদিকে সুহার বিরক্ত লাগছে,,এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবে সে?
“আচ্ছা সুহা তোর তো টক খেতে মন চায় তাই না?আচ্ছা তেতুল খাবি নাকি বরই?নাহ,থাক আমিই দেখছি কোনটা ভালো হবে ওয়েট”
প্রেম কথাটুকু বলে চলে যেতে নেয় আবার থেমে যায়।পিছনে ফিরে এসে বলে,,
“আচ্ছা সুহা,,তুই তো এসব ড্রেসে কম্ফোর্টেবল না।একটা কাজ করি তোর জন্য ঢিলাঢালা ড্রেস কিনে আনি।”
প্রেম বলেই চলে যেতে নিলে পিছনে ফিরে আসে আবার,,,আর বলে উঠে,,
“আচ্ছা তোর চুলগুলোতো তোকে অনেক ডিস্টার্ব করে তাই না?একটা কাজ করি,তোর চুলগুলোই কেটে দেই”
“নাহ!”
“প্রেম!!”
সুহার চিৎকার আর প্রাঙ্গণের ধমকে প্রেম চুপ হয়ে যায়।এদিকে সাহিল আফসোসের সুরে বলে উঠে,,
“হায় হায়!শেষে কীনা এটা শুনতে হবে যে সাহিলের বউ টাকলু?”
সাহিলের কথায় সুহা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে।সামনে থাকা কুশন ছুড়ে মারে সাহিলের দিকে,,সাহিলের মাথায় লেগে কুশনটি নিচে পড়ে যায়।কুশনটি তুলতে তুলতে সাহিল হেসে বলে উঠে,,
“নাইস শট,,আমাদের বিচ্ছু মনে হয় ভবিষ্যতে ক্রিকেটার হবে।দেখে নিও”
“প্রাঙ্গণ ভাইইইই!”
প্রাঙ্গণ এবার ভ্রু-কুচকে বলে উঠে,,
“প্রবলেম কি তোদের?এমন করছিস কেন?”
প্রেম হাতের কলম প্রাঙ্গণের দিকে তাক করে বলে উঠে,,
“আপনি তো চুপই থাকুন,,এগুলো সম্পর্কে আপনি জানেন? জানেন কত খেয়াল রাখতে হবে এখন সুহার?”
“তুমি এমন একটা ভাব করছ যেন আগে তোমার আরো দুটো বাচ্চা হয়েছিল”
“হ্যা ছিল তো,,”
কথাটুকু বলেই যখন প্রেম বুঝতে পারে সে কি বলে ফেলেছে তখনই সাথে সাথে জিভ কাটে।এদিকে প্রাঙ্গণে মুখ বাকিয়ে হাসছে,,সাহিল হো হো করে হেসে দেয়।সুহা এদিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে এদের কান্ড দেখছে।
এরই মাঝে পূর্বা হাজির।হাতে গরম গরম কাবাব!
“তোমরা কি এভাবে সারাদিনই না খেয়ে থাকবে নাকি?”
প্রেম প্লেট থেকে একটা কাবাব নিয়ে অর্ধেক মুখে পুড়ে বলে উঠে,,
“আরেহ না খেলে কিভাবে হবে?এখনই তো খাওয়ার সময়!”
“হুম বেশী খাও আর স্বাস্থ্যবান হও যেন পড়ে আবার আরেকটা সুখবর শুনতে পারি!”
প্রেমের গলায় খাবার আটকে যায়,,,গালগুলোতে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে।প্রাঙ্গণের দৃষ্টি লাল আভাযুক্ত গালগুলোতে নিবদ্ধ।কেন জানি আজকাল প্রেমকে আর আইজা ভাবতে ইচ্ছা হয় না প্রাঙ্গণের।এখন তো প্রেমের সবকিছুই কেন জানি তার ভালোলাগে,,সবকিছু!এই যে এখন,প্রেমের লাল আভাযুক্ত গালগুলো প্রাঙ্গণের কাছে ভীষণ রকমের ভালোলাগছে,,কেমন যেন একটা নতুনত্ব খুজে পাচ্ছে সে।বড়বড় চোখগুলোতে অনেক মায়া খুজে পাচ্ছে সে!সাক্ষাৎ মায়াবতী!
“উহুম উহুম,,প্রাঙ্গণ ভাইইই!”
সুহার দুষ্টুমিমাখা সুরে প্রাঙ্গণে শান্ত ও সরু চোখে সেদিকে তাকায়।সুহা প্রথমে ভয় পেয়ে যায়,,বুকে থু থু দিয়ে প্রাঙ্গণের কানের সামনে আস্তে করেবলে উঠে,,
“এমন করে প্রেমের দিকে চেয়ে আছেন কেন প্রাঙ্গণ ভাই??সামথিং রঙ?”
সুহা যে তার সাথে দুষ্টুমি করছে তা প্রাঙ্গণ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।প্রাঙ্গণ এবার সুহার দিকে চেয়ে আস্তে করে বলে উঠে,,
“প্রেমের গলায় একটা তিল আছে,,নোটিস করেছ?মন চাচ্ছে,,এখন প্রেমকে খেয়ে ফেলতে।”
সুহা প্রাঙ্গণের কথা শুনে কাশতে শুরু করে।শম্পা জলদি করে পানি নিয়ে আসে।সাহিল সুহার পিঠ চাপড়ে দেয়।
“কি হয়েছে সুহা?সামথিং রং?”
প্রাঙ্গণের কথা সুহা তার দিকে বড় বড় চোখে তাকায়।তার কথা তাকেই ফেরত দিচ্ছে?সুহা মুখ ফুলিয়ে আস্তে করে বলে উঠে”কি সাংঘাতিক ছেলে!”
প্রেমের খাওয়া শেষ হলে সোফায় ধুপ করে বসে পড়ে,,চোখের বড় বড় পলক ফেলে কিছুক্ষন!সাহিক পাশেই বসে ছিল হাতে ঝুনঝুনি নিয়ে,,প্রাঙ্গণের জরুরি কল আসায় আগেই বেরিয়ে গেছে।সাহিলের দিকে ঘুরে প্রেম বলে উঠে,,
“আচ্ছা সাহিল,,বাবুর নাম কি রাখবে?”
ঝুনঝুনি নাড়িয়ে ঝুনঝুন শব্দ করতে করতে বলে উঠে,,
“ছেলে হলে ভূতু আর মেয়ে হলে পেত্নি রাখব,,নাইস না?”
প্রেম নাক-মুখ কুচকে সাহিলের দিকে তাকায়।এদিকে সুহা রাগে ফুসফুস করতে থাকে,,কিন্তু কিছু বলে না।
“ইশশশস,,ঠিক করে বলো তো”
প্রেমের কথায় সাহিল চোখ ঘুরিয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠে,,
“ঐটার ভূতুর মাকে জিজ্ঞেস করো!”
প্রেম চোখ ঘুরিয়ে তাকায় সুহার দিকে।সুহা বারবার আঙুলে ওড়নার শেষ অংশ পেচাচ্ছে আর খুলছে,,চোখ-মুখ কিছুটা অস্বাভাবিক!প্রেম বুঝে,,,সুহার সাহিলের প্রতি অভিমান হয়েছে।কিন্তু কেন?প্রেম জানে না।তবে এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকে এখানে মানায় না।প্রেম সাহিলকে খোচা দেয়,, সাহিল ফোন থেকে চোখ সরিয়ে প্রেমের দিকে তাকায়।প্রেম ইশারা করে সুহার দিকে,,সাহিল সেদিকে তাকায়।সে-ও কিছুটা আচ করতে পারে।চোখ দিয়ে প্রেমকে আশ্বস্ত করে,,প্রেম ছোট একটা হাসি দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
সাহিল পা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সুহার পাশে গিয়ে বসে।সুহার কাধে হাত রাখে।সুহার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।সাহিল এবার হালকা স্বরে সুহাকে ডাক দেয়,,
“সুহা!”
সুহা নিজের কাজ চালিয়ে যায়,,জবাবে কিছুই বলে না সে।সাহিল সুহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে,,
“আচ্ছা সুহা আমাদের ছেলে হবে নাকি মেয়ে?”
“আমি জানি নাকি?”
“কেন ডক্টর কিছু বলেনি নাকি?”
“এখন কিভাবে বলবে,,মাত্র একমাস!”
“ওহ,,তা মন খারাপ কেন?”
“তোমাকে বলতে হবে?”
সাহিল অবাক হওয়ার ভান করে বলে উঠে,,
“আমাকে ছাড়া কাকে বলবে তুমি??”
সুহা আড়চোখে সাহিলের দিকে চেয়ে মুখ টিপে হেসে বলে উঠে,,
“কেন রাকিব আছে না?”
সাহিল সুহার কথাশুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে,,এই ছেলেকে সে মোটেও সহ্য করতে পারে না এই বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান সুহার আছে।সুহার এই মামাত ভাইকেই তো তার বাবা সুহার গলায় ঝুলাতে চেয়েছিল যদিও পেরে উঠেনি সাহিলের বদৌলতে।সাহিল সুহার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে মাছি তাড়ানোর সুরে বলে উঠে,,
“এহ যাও যাও।ঐ রাকিবের সাথে গিয়ে নিজের বাচ্চার ডায়পার চেঞ্জ করো,,আমার কি?হু আই এম!?”
সাহিলের কথায় মনে মনে কিটকিটিয়ে হেসে উঠে সুহা,,যাক অবশেষে তার কথা কাজে পরিণত হয়েছে।সাহিলের উরুতে মাথা রাখে সুহা,,একদম বেডের কিনারা ঘেঁষে শুয়ে পড়ে।সাহিল সুহার পিঠে হাত রেখে তাকে আগলে ধরে।সুহা সাহিলের গাল টেনে ধরে।এর মাঝেও সে সুহার কেয়ার করছে।মাঝে মাঝে তার গর্বানুভব হয় এই ভেবে যে সাহিলের মতো একজন সে পেয়েছে!
সুহার গর্বের সহিত আরেকবার সাহিলের গাল টেনে ধরে,,অতি উচ্ছ্বাসে খুব জোরেই টেনে ধরে সে।সাহিল ভ্রু কুচকে “আউ” বলে সুহার মাথায় এক গাট্টা মারে।
~~~
প্রেম একটু আগেই কিচেনে ঢুকেছে,,উদ্দেশ্য রাতের জন্য নিজের হাতে বিরিয়ানী রান্না করার।যেহেতু আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া তাই শম্পা আগেই সব সরঞ্জামাদি বের করে রেখে গেছে।আজকে বিরিয়ানী রান্নাটা তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিয়ে দাঁড়িয়েছে,,মূল কারণ,আজকে সে শাড়ি পড়েছে।ঘিয়ে রঙা শাড়িতে নাকি তাকে বেশ মানিয়েছে পূর্বার মতে।এমনকি সাহিল,সুহা,শম্পা আর দাড়োয়ান করিম চাচারও একি কথা।তাই আর প্রেম শাড়িটি খুলে নি,,এভাবেই রান্না করতে চলে এসেছে।টুকিটাকি সব কিছুই হাতের সামনে পেয়ে গেলেও মেইন যে কড়াই দরকার তা প্রেমের চোখে পড়ছে না।ভালোভাবে খুজে দেখেও পাওয়া যায়নি,,প্রেম এবার কোমড়ে হাত দিয়ে আশে-পাশে নজর দেয়।চোখ যায় উপরের ক্যাবিনেটে!
একদম উপরে দেয়ালের সাথে এট্যাচ থাকায় প্রেম তার ধারে কাছেও যেতে পারবে না।রান্নাঘরের আশেপাশেও কেউ নেই,,যে যার কাজে ব্যস্ত! কোনো উপায় না পেয়ে একটা টুল নিয়ে আসে প্রেম,,বুকে থু থু দিয়ে উঠে যায় টুলের উপর।ভয় একটাই,,টুলের এক পা ভাঙা,,পড়ে গেলে কোমরের একটা হাড্ডিও আস্ত থাকবে না।আল্লাহর নাম নিয়ে আস্তে আস্তে খোলা শুরু করে,,অনেকক্ষন খোজার পর কাঙ্ক্ষিত কড়াইটি পাওয়া যায়।যেই কড়াইয়ের উপর হাত দিতে নিবে ওমনি নড়বড়ে টুলটি নড়ে উঠে।পড়ে যাওয়ার আগেই চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় প্রেম।
কিন্তু নিচে না পড়াতে প্রেম হালকা চোখ মেলে তাকায়,,কেউ একজন তার সুঠাম হাত দিয়ে টুলটা ধরে রেখেছে।প্রেম হাতের মালিকের দিকে নজর দেয়,,প্রাঙ্গণ!
“আর ইউ লস্টেড?যদি পড়ে যেতে?”
প্রাঙ্গণের বাজ গলার ধমকে প্রেম চুপসে যায়।মিনমিনিয়ে বলে উঠে,,
“আমি কি জানতাম নাকি যে এমন হবে?”
“হয়েছে,,নামো এবার!”
প্রেম তড়িঘড়ি করে বলে উঠে,,
“আপনি একটু ধরে রাখুন না প্লিজ,,আমি এই কড়াইটা নামিয়ে নেই।জাস্ট ২ মিনিট,,প্লিজজ!?”
প্রাঙ্গণ আর কিছু না বলে টুল শক্ত করে ধরে রাখে।মৌন সম্মতি পেয়ে প্রেম কড়াইটা বের করার চেষ্টা করে,,একেবার শেষ মাথায় কড়াই যার কারণে সামনের গুলোর জন্য নেওয়া একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
প্রাঙ্গণ অনেক্ক্ষণ প্রেমের ব্যর্থ চেষ্টা লক্ষ্য করে যখনই কিছু বলতে নিবে তখনই চোখ যায় প্রেমের উদাম খোলা কোমরের দিকে।প্রাঙ্গণ পুরুষ মন এবার অন্য ভাবনায় মেতে উঠার আগেই চোখ বন্ধ করে দম নিয়ে নিজেকে নিজেই বলে উঠে
“রিলেক্স প্রাঙ্গণ রিলেক্স!”
চলবে…
[ভুল-ত্রুটি আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আজকের পর্ব সম্পর্কে একলাইনের একটি মন্তব্য ছেড়ে যাবেন।সুস্থ অনুভব করলে নেক্সট পার্ট খুব শীঘ্রই দিব।ধন্যবাদ।]
চলবে…
[ভুল-ত্রুটি আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আজকের পর্ব সম্পর্কে একলাইনের একটি মন্তব্য ছেড়ে যাবেন।ধন্যবাদ।]