#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২০ #প্রতিশোধ
লেখিকা – Zaira Insaan
অনেকদিন পর ভার্সিটি আসলো মিহি। সামনে পরীক্ষা সেজন্য নিয়মিত ভার্সিটি আসা লাগবে। তনু কে খুঁজলো। ও গায়েব, উধাও! বন্নি কে দেখে পাশে বসে বলে,,
“তনু ও নীলয় কই? আজ আসেনি তারা?”
বন্নি বিমর্ষ মুখ করে বলে,,
“তনু ওর মাসির বাসায় গেছে। নীলয় আরো এক সপ্তাহের পর আসবে।”
“অহ্ আচ্ছা।” বলে ঠোঁট গোল করে সুর টানলো।
ক্লাস চলতে থাকলো। ময়ন স্যার এসে ক্লাস করিয়ে গেল। স্নিগ্ধ আসলো ইংরেজি ক্লাস নিতে।
স্নিগ্ধ আসতে না আসতেই অনেক মেয়েদের মুখে কেমনে জানি হাসি ফুটে উঠে। নিজেকে সুন্দর সান্দর করে রাখার অগ্ৰীম চেষ্টা করে। স্নিগ্ধ আসা পর্যন্ত মিহি একবারও তার দিকে তাকালো না। স্নিগ্ধ ওর দিকে একবার বাঁকা চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। গত দু’দিনের পড়া গুলো সবার কাছ থেকে এক এক করে নিতে লাগল স্নিগ্ধ। সবাই ভালো পারলো। সর্বশেষে সময় আসলো মিহির। ভয়ে ঢোক গিললো ও। কিছুই তো পারবে না! পারবে কিভাবে পড়া শিখার সময় তো মিলল না!
প্রথম প্রশ্ন করে দেখল স্নিগ্ধ, মিহি পারছে না। এভাবেই পর পর করে পাঁচটা প্রশ্ন করলো একই চ্যাপ্টার থেকে। তাও কোন উন্নতি হলো না! ফোঁস করে বিরক্ত নিঃশ্বাস ফেলল স্নিগ্ধ। সেই চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে পুরোনো চ্যাপ্টার ধরল। কিন্তু বলে যে না, যেই লাউ সেই কদু! পুরোনো শেখা পড়া গুলো কোনমতে মনে করতে পারছে না মিহি। এক কথায় ভুলে গেছে! স্নিগ্ধ বিরক্ত চোখে তাকালো মিহি উপুড় চোখে তাকিয়ে তার চাহনি দেখে শরম করছে। এর চেয়েও বেশি শরম লাগছে যখন ক্লাসমেটরা মিটমিট করে হাসছে। এক বিব্রত অবস্থায় শিকার হলো মিহি। স্নিগ্ধ গম্ভীর গলায় হালকা শাসিয়ে বলল,,
“কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকো ষ্টুপিড!”
অপমানিত বোধ করল মিহি। রাগে, লজ্জায় গা গিজগিজ করছে। স্নিগ্ধ ওখান থেকে চলে আসলো। বোর্ডের কাছে দাঁড়িয়ে নতুন চ্যাপ্টার পড়ানো শুরু করল। প্রচন্ড মাত্রায় রাগ লাগছে ওর। কতক্ষন যাবত এভাবে দাঁড়িয়ে আছে! আর কত দাঁড়িয়ে থাকবে? সে কি স্নিগ্ধের চোখে পড়ছে না? নাকি কোন এক কারণে প্রতিশোধ নিচ্ছে স্নিগ্ধ!
আধাঘণ্টার ক্লাস শেষ করল। যাওয়ার আগে মিহির দিকে একবার তাকিয়ে বলে,,
“বসো, আর এতোদিনের সমস্ত পড়া শিখে আমাকে আগামীকাল মুখে দিবা। গট ইট?”
মিহি ভয়ে দ্রুত মাথা নাড়ল। স্নিগ্ধ মুখ গম্ভীর ও রাশভারী করে বাহিরে চলে যায়। ধপাস করে বেঞ্চে বসে পড়লো মিহি। হাঁটু ভালোভাবেই ধরেছে। বন্নি আস্তে করে বলে,,
“হুট করে স্যারের আবার কি হলো?”
মিহি রাগে চটে বলে,,
“যা হলো সব ঘি হলো! উনি কি জানেন না যে আমি এতদিন অসুস্থ ছিলাম? শুধু শুধু শাস্তি দেওয়ার মানে কি!”
“স্যারের কাছ থেকে সব ক্লিয়ার আউট করে নিস।”
মিহি দাঁত কিড়মিড় করে বলে,,
“উনার চেহারা দেখতেও এখন আমার রাগ লাগবে।”
___________
ভার্সিটি আসার পর থেকে বই নিয়ে জোরে জোরে শব্দ করে পড়তে লাগল মিহি। টার্গেট করে রাখছে এখনিই সব পড়া মুখস্থ করেই তারপর উঠবে এর আগে নয়। অর্ধেক শেষ করেছে চ্যাপ্টার আর অর্ধেক পড়লেই শান্তি! পড়তে পড়তে মাথা ধরে আসছে। মাথায় হাত দিয়ে রিল্যাক্সিনের জন্য বই বন্ধ করে বারান্দায় অগ্ৰসর হলো। চেয়ারে বসে মাথা হেলিয়ে দিল। আচমকা মনে এক প্রশ্ন জাগলো,,
“আচ্ছা ওই লোকটা আমার সাথে এমন করে কেন? পাগল মানবদের মতন হুটহাট যেটা সেটা করে বসে! He actually need a psychiatrist!”
ক্রদ্বিত হয়ে ইচ্ছামত বকছে স্নিগ্ধ কে। অধিকার নিয়ে যদি হাতের কাছে পায় তাহলে বোধহয় এখনিই হত্যা করবে তাকে!
______________
ভার্সিটি গেটের সামনে এসে থেমেছে যায় মিহি। কাঙ্ক্ষিত মেসেজটি দেখে! ওপেন করে দেখল স্নিগ্ধ পাঠিয়েছে,, “বা পাশের রুমটাতে আসো।”
মিহি ভ্রু কুঁচকালো তারপর রুমটির দিকে তাকালো। রুমের কাছে এসে দরজায় টোকা দিল। স্নিগ্ধ না দেখেই বলে,,
“Come.”
মিহি টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। স্নিগ্ধ অনেক গুলো কাগজ গুছিয়ে নিচ্ছে। ওখানে এতই কাগজ যে সে একা সামলাতে পারছে না। মিহি কে ইঙ্গিত করে বলল,,
“এগুলো গুছাতে আমাকে হেল্প করো।”
মিহি একপলক তাকিয়ে সব কাগজ গুছাতে হাত বাড়াতে লাগল। স্নিগ্ধ ওর দিকে বাঁকানো চোখে তাকিয়ে দেখল মিহি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আছে। মুখশ্রী তার শান্ত, স্বাভাবিক! যেন একফোঁটা রাগ নেই। স্নিগ্ধ কাগজের বান্ডিল থেকে হাত সরিয়ে নিল, আর ওকে আরো কয়েক বান্ডিলের দায়িত্ব দিয়ে দিল যেন! মিহি একবার তাকিয়ে নিঃশব্দে সেগুলো ও গুছাতে লাগল। আসা পর্যন্ত একবারও টু শব্দ করল না। স্নিগ্ধ টেবিলে দু’হাত ভর করে ঝুঁকলো ওকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,
“পড়া শিখছো?”
“জ্বি।”
“নিলে পারবে তো?”
“হ্যা।”
বিমর্ষ মুখ করে বলে মিহি। স্নিগ্ধ প্রশ্ন করল,,
“রেগে আছো?”
হুট করে এই প্রশ্ন করাতে মুহূর্তের মধ্যে তরতর করে রাগ বেড়ে গেল মিহির। অনেক আগের থেকেই তার রাগ লাগছিল কিন্তু প্রকাশ করছিল না। কিন্তু এই প্রশ্নের জন্য প্রচুর রাগ হচ্ছে। মিহি উত্তর দিল না চোয়াল শক্ত করে রেগে দ্রুত কাগজ ভাজ করতে লাগল। স্নিগ্ধ ভ্রু উঁচু করলো ওর মুখমন্ডল দেখে। রাগলে তার গাল দুটো কুমড়োর মতো হয়ে যায়। স্নিগ্ধ নিম্নকন্ঠে বলল,,
“Can I say something?”
“No!” রেগে গরম হয়ে বলে মিহি।
“আপনি কি ভাবছেন? রাগ কি শুধু আপনি দেখাতে পারেন! আমি পারি না? দেখছেন একজন ব্যাক্তি কথা বলতে চাইছে না তাও কেন তাকে কথা বলতে বাধ্য করছেন। তাও এমন বিষয় নিয়ে….।
আপনি কি জানতেন না যে আমি এতদিন অসুস্থ ছিলাম? তাও সবার সামনে ‘ষ্টুপিড’ বলার মানে কী?”
শেষাক্ত কথা বলতে গিয়ে কন্ঠনালি কেঁপে উঠলো মিহির। চোখে নোনাজল চিকচিক করতে লাগল। স্নিগ্ধ থমকে গেল। একটা শব্দ যে ওর এতো গায়ে লাগবে ভাবতেও পারিনি সে। মিহি সবগুলো কাগজ একত্রে করে তার সামনে দিয়ে বলে,,
“Done.”
ওতটুকু বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে মিহি। লোকটির সামনে থাকতে ইচ্ছে করছে না। যতদ্রুত সম্ভব চলে আসায় ভালো।
(চলবে…)